অবাধ্য_বাঁধনে #পলি_আনান [পর্ব সংখ্যা ৭]

0
1109

#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৭]
__________________
১৩.
হাতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাগজপত্র উলটে পালটে যাচাই-বাছাই করছিলো ঈশা।বিছানায় থাকা চাকরির সিভিটা বাতাসের দরুনে উড়ে গিয়ে ফ্লোরে পড়তে তা কুঁড়িয়ে নেন মুজাহিদ হাসান।কাগজটার দিকে মনোযোগ বাড়াতে সাদৃশ্য হয় ঈশার জীবন বৃত্তান্ত এখানে উল্লেখ আছে সে কোন চাকরির জন্য এপ্লাই করতে চাইছে।

” ঈশা মা এসব কী?”

” ওটা দাও বাবা।”

” তুমি সিভি তৈরি করছো কেন?”

মুজাহিদ হাসানের তীর্যক চাহনিতে কাচুমাচু চোখে তাকালো ঈশা।

“বাবা আমি চাকরি করতে চাই।”

” কি চাকরি!”

” হ্যাঁ বাবা।”

ঈশার দিকে সরু চোখে তাকালেন মুজাহিদ হাসান।তার মাথাটা ধীরে ধীরে গরম হলেও কোন প্রতিক্রিয়া দেখালেন না এই মুহুর্তে।

“কি চাকরি করবে তুমি?”

” হোক সেটা যেকোন চাকরি।”

” তোমাকে অনুমতি দিয়েছে কে?”

” মা।”

মুজাহিদ হাসান রাগান্বিত হলেন।গলা উচিয়ে ডাকলেন সুলতানাকে।স্বামীর রুক্ষ স্বরে তিনি চপল পায়ে এগিয়ে এলেন ঈশার কক্ষে।

” মেয়ে কি তোমার একার আমার না?”

সন্দিহান চোখে মুজাহিদের দিকে তাকালেন সুলতানা।এমন অদ্ভুত প্রশ্ন তিনি তো এর আগে করেননি।বাবার হঠাৎ রেগে যাওয়া কারণ বুঝে এলো না ঈশার।

” এমন প্রশ্ন করছো কেন মেয়ে আমাদের দুজনের।”

” তাহলে তার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমায় জানানো হলো না কেন?”

” সিদ্ধান্ত! ”

দ্বিধাদ্বন্দে চোখ বুলালেন সুলতানা।মুজাহিদ হাসান ক্রমশ উত্তেজিত হয়ে পড়ছেন হাতে থাকা সিভিটা ছুড়ে ফেললেন ঈশার বিছানায়।

” ঈশা চাকরি করবে আর তুমি অনুমতি দিয়েছো?”

” আসলে বুঝতে পারছেন আমাদের উপর দিয়ে কি বিপদ যাচ্ছে তাই….”

” তাই বলে আমি আমার মেয়েকে চাকরিতে পাঠাবো?সে টিউশনি করতে চেয়েছে আমি দিয়েছি কারণ সেখানে এক দুই ঘণ্টার ব্যপার।মেহেদী নিয়ে আমি কোন দ্বিমত পোষণ করিনি।কিন্তু চাকরিতে করছি কারণ সারাটা দিন তাকে খাটতে হবে আমি চাই না ঈশা এতটাও কষ্ট করুক।”

ঈশা শ্বাস ছাড়লো আটকে থাকা দমটা যেন এবার বেরিয়েছে।

” বাবা তুমি এসব কেন বলছো আমি চাকরি করলে টাকা অতিদ্রুত পরিশোধ হবে।”

” প্রয়োজনে আমি জমি বিক্রি করবো,লোন নিব তাও তোমাকে কষ্ট দিতে পারবো না।”

” বাবা প্লিজ…”

” এই বিষয়ে আমি কোন কথা বলতে চাইছিনা ঈশা।”

মুজাহিদ হাসান বেরিয়ে গেলেন। ঈশার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে বাবার একগুঁয়েমি জেদ দেখে।

১৪.
আটতলা বিল্ডিং এর উপর থেকে স্বচ্ছ কাঁচ ভেদ করে ব্যস্ত শহরটা দেখছে ঈশা।তার মুখোমুখি বসে আছে তিয়াশ।রেস্টুরেন্টটা নিরিবিলি মনোরম পরিবেশে।

” ঈশা খাবারটা মুখে তুলছো না যে?”

তিয়াশের প্রশ্নের প্রত্যুত্তরে মিষ্টি হাসে সে।আকাশটা আজ স্বচ্ছ নীল এত সুন্দর পরিবেশেও ঈশার আজ মন খারাপ ভাবা যায়!

” তুমি কী আমার সাথে ফ্রী হতে পারছো না?সেদিন….”

তিয়াশকে ইশারায় থামিয়ে দেয় ঈশা।

” আমি ঠিক আছি তিয়াশ।আসলে আজ আমার মনটা ভালো নেই।”

” সেকি কথা কেন?”

” বাবার সাথে একটু তর্ক হয়েছে এইটুকুই।”

দুজনের মাঝে ভীড় জমালো নিরবতার।তিয়াশ খাওয়ার মাঝে মাঝে ঈশার খেয়াল রাখছে ঈশাও চুপচাপ খাবার খাওয়ায় ব্যস্ত।ঈশাকে আজকে দুপুরের খাওয়ারটা তিয়াশের সাথে করার অনুরোধ করা হয়।না চাইতেও তিয়াশের বারবার অনুরোধে এখানে আসতেই হলো তার।

” সেদিন চিলেকোঠার ঘরে বন্দি হলে কী করে বললে না তো।”

” আমি তো বলেছিলাম আমাকে কে বন্দি করেছে আমি দেখিনি।”

” বিষয়টা আমার কাছে অদ্ভুত লাগলো ঈশা।”

” আমার কাছে নয়।”

বলেই হেঁসে ফেললো মেয়েটা।তার হাসিতে হাসলো তিয়াশ।দুজনের কথা চললো দীর্ঘক্ষণ।তিয়াশের কথার আড়ালে কোথায় যেন হারিয়ে গেল ঈশার মন খারাপেরা।

দুপুরের খাওয়ারটা বাইরে খাবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় ঈশান এবং রাসেল।দুই বন্ধু মিলে যথারীতি তাদের পছন্দের রেস্টুরেন্টে চলে আসে।আশেপাশে পরখ করতে ঈশানের চোখে পড়ে তিয়াশের মুখ।তার মুখোমুখি একটি মেয়ে।বেশ কিছুক্ষণ পর ঈশান বুঝতে পারলো মেয়েটা ঈশা।মনে মনে তাচ্ছিল্য হাসলো ঈশান। রাসেলের দিকে তাকিয়ে অবজ্ঞার সুরে বলে,

” দেখছিস বড়লোক ছেলে পেয়েছে আর ওমনি পা চাটতে শুরু করেছে।”

” ঈশান এভাবে বলছিস কেন?তিয়াশ আর ঈশার সম্পর্ক বেশ ভালো ওরা বন্ধুর মতো।”

” তুই ঈশার নামে এত সাফাই গাইছিস কেন?”

” আমি যেটা ঠিক সেটাই বলি পক্ষপাত করার স্বভাব আমার নেই।”

” ওহ আচ্ছা।তবে এবার সময় এসেছে।”

” কিসের সময়?”

রাসেলের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না ঈশান।পরিপূর্ণ খাওয়ারে মনোযোগ দিয়ে রাসেলকে উপেক্ষা করে গেল।ঈশানের জেদ সম্পর্কে রাসেলের ভালোই ধারণা আছে তাই দ্বিধাদ্বন্দে হাঁসফাঁস করছে সে।

.
শার্টে চাটনি পড়ায় ওয়াশরুমের দিকে দ্রুত চলে যায় তিয়াশ।ঈশা একা বসে তিয়াশের অপেক্ষা করছিলো সামনে থাকা খাবার একটু একটু মুখে তুলে আশেপাশে তাকিয়ে পরখ করছে।কয়েক হাত দূরে ঈশানকে দেখে দিনের আকাশে চাঁদ দেখার মতো আশ্চর্যন্বিত চোখে তাকায়।ঈশান মুচকি হেসে এগিয়ে আসে ঈশার পাশে।

” কেমন আছেন ম্যাডাম দিন কাল ভালো যাচ্ছে?”

” ভালো যাচ্ছিল তবে আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে না দিনটা আর ভালো যাবে।”

” তাই নাকি?এভাবে বলবেন না যার পাশে হ্যান্ডসাম টাকা ওয়ালা ছেলে বসা থাকে তার দিন খারাপ যায়?এরপর নিশ্চয়ই শপিং এ যাবেন?”

তিয়াশকে উদ্দেশ্য করে ঈশাকে ফোড়ন কেটে কথাটি বলে থামলো ঈশান।

” মানে কী বলতে চাইছেন?”

” যা দেখছি তাই বললাম।তিয়াশের সাথে প্রেম প্রেম সম্পর্ক চলছে নাকি?তা মুজাহিদ হাসান জানেন তার মেয়ে বড়লোক ছেলে পটিয়েছে।এবার নিশ্চয়ই আমার টাকা পেতে বেশি দেরি হবে না।”

” কি যা তা বলছেন।মুখে লাগাম দিয়ে কথা বলুন।”

” মুখে লাগাম আমার আছে বরং আপনার নেই বেহাইয়া মেয়ে।”

” মুখ সামলে কথা বলুন একদম আটতলা বিল্ডিং থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবো।”

” ওহ আচ্ছা তাই?আমি কি চেয়ে চেয়ে দেখবো?আমার গাড়িতে হাত দিয়েছো কাল কোন সাহসে?”

ঈশান দু-কদম এগিয়ে এলো ঈশার মুখোমুখি ঈশানের কাছে আসায় দ্রুত সরে গেল ঈশা।

” আপনি কি ভেবেছেন সেদিন চিলেকোঠার ঘরে আমাকে বন্দি করেছেন আমি জানি না?মানুষটা আপনি ছিলেন।আর আমিও প্রতিশোধ নিয়ে নিলাম।আঘাতের বদলা আঘাত।”

” সবার সামনে বলার তো সাহস পাওনি প্রমাণ করে দাও আমি সেদিন দরজা বন্ধ করেছিলাম।”

” প্রমাণের প্রয়োজন নেই আমি আমার বদলা নিয়েছি আপনার গাড়ির বেহাল দশা করেছি।”

” আমি কি ছাড়ছি নাকি?আমিও তোমার বেহাল দশা করেই ছাড়বো।বেহায়া মেয়ে।”

” একটা জেদি বাজে লোক।”

” কি বললে?”

ঈশান চিৎকার করলো তার চিৎকারে আশেপাশে থাকা সবাই ঘুরে তাকালো তাদের দিকে।ঈশা এই সুযোগ পেল ঈশানকে অপমান করার।টেবিলে থাকা টম্যাটো সসটা ছুড়ে ফেললো ঈশানের মুখে।হঠাৎ আক্রমণে ঈশান অবাক হতবাক! রাসেল চোখ বড় করে তাকালো ঈশার দিকে মেয়েটা বড্ড দুঃসাহসিক কাজ করে ফেলেছে।রেস্টুরেন্টে থাকা সবাই থ বনে ঈশানের দিকে তাকিয়ে আছে, কেউ কেউ মুখ টিপে হাসছে তিয়াশকে আসতে দেখে তার দিকে ছুটে পালালো ঈশা।

.

ড্রাইভিং সিটে বসে আড় চোখে ঈশার দিকে বারবার তাকাচ্ছে তিয়াশ।মেয়েটা কেমন ঘামছে।এলোমেলো চুল লেপ্টে আছে গালের পাশে লম্বা শ্বাস টেনে তিয়াশের চোখে চোখ রাখলো ঈশা।

” গাড়ি থামালেন কেন?”

” তুমি ঠিক আছো ঈশা?তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি ঠিক নেই।”

” আমি ঠিক আছি তিয়াশ।”

” ওকে ফাইন।”

ঈশার সম্মতি পেয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো তিয়াশ।হাঁসফাঁস থেকে মুক্তি পেতে জানলার বাইরে দৃষ্টি সরিয়ে নেয় ঈশা।তবে তিয়াশসের সংশয় এখনো কাটলো না ঈশানের সাথে ঈশার কি নিয়ে ঝামেলাটা হলো সেটা জানা জরুরি হয়ে পড়েছে।

” ঈশা ঈশানকে সসটা ছুড়ে মা।র।লে কেন?তোমাদের মাঝে কি নিয়ে বিবাদ চলছে বলা যাবে কী?”

এই ভয়টাই পাচ্ছিল ঈশা।তিয়াশকে সে কিছুতেই বলতে চায় না ঈশানের সাথে তার দা-কুমড়া সম্পর্কের কথা।টাকা ধার নেওয়ার বিষয়টা তো আরো না।

” তিয়াশ কিছু মনে করো না এই কথা অন্যদিন তোমায় বলবো তবে এখন বলতে পারবো না।”

” সমস্যা নেই।আমরা তো বন্ধু যখন ইচ্ছে তুমি আমায় বলতে পারো।”

” আরেকটা উপকার করবে?”

” বলে ফেলো।”

” রুমা আপুকে এসব সম্পর্কে কিছু বলবে না প্লিজ এটা আমার অনুরোধ। ”

” যথা আজ্ঞা, আমি কাউকে কিছু বলবো না।”

১৫.
একের পর এক কল করে যাচ্ছে রাসেল তার কল ধরার মতো ইচ্ছে নেই অনুর কাছে।তাই তো বিরক্ত হয়ে সাইলেন্ট মুডে রেখেছিল আঁধা ঘণ্টা কিন্তু লাভ হলো কি এই বান্দা তো দেদারসে ফোন করে যাচ্ছে।চরম বিরক্ত হয়ে ফোন তুললো অনু।

” কি সমস্যা আপনার?”

” তোমাদের কি সমস্যা সেটা বলো।গতকাল কোন সাহসে ঈশানের গাড়িতে গোবর লাগিয়েছিলে?”

” কোন সাহসে ঈশান ঈশাকে বন্দি করেছিলো?”

” দুই ফ্রেন্ডের একই উত্তর বাহ!”

” তা আপনি কী অন্য কিছু আশা করেছিলেন মিস্টার রাসেল?”

” শুনো তর্ক করবে না ঈশা আজ ঈশানের গায়ে সস ছুড়ে দিয়েছিল আর এটা নিয়ে ঈশান ভীষণ রেগে আছে তাকে আমি সামলাতে পারবো কী না জানি না।যে কোন সময় ঈশার উপর হা।ম।লা হতে পারে।”

” ঈশান শাহরিয়ার এই দুঃসাহস করুক তাহলে আমার একদিন আর তার একদিন।আমার ফ্রেন্ডের গায়ে যদি একটা টোকাও লাগে তাহলে কিন্তু সুনামি বয়ে যাবে।”

” ওহ তাই আগে নিজেকে বাঁচান মিস অনু।”

#চলবে___
❌কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।❌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here