#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ২৬ক]
____________________
৫৭.
ঈশানের সাথে আগের মতো জলচল নেই ব্যপারটা খুব বেশি ভালো লাগছে না আবার মন্দ লাগছে না।সময় তো কেটে যাচ্ছে।নিজেকে ভীষণ ব্যস্ত করে তুলেছে ঈশা পরিবারের সাথে সময় কাটানো,ফাঁকে ফাঁকে ফুফুর বাড়ি থেকে ঘুরে আসা সবটাই ঈশানকে ভুলে থাকার চেষ্টা।তবে ভুলে কী থাকা যায়?এই তো সেদিনের কথা মাধবীলতা গাছটাত ঝুলে থাকা মাধবীলতা ফুল দেখে পুলকিত হয় ঈশার মন কয়েক সেকেন্ডে স্মৃতি রোমন্থে ঈশানের কথা মাথায় আসতে মনটা ভালো হওয়ার চেয়ে দ্বিগুণ খারাপ হয়।ছেলেটার ব্যকুল দৃষ্টি ঈশার হাতে ছড়িয়ে দেওয়া ফুল সবটা মনে আসতে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে এলো ঈশার।
দেয়াল ঘড়িতে রাত সাড়ে এগারোটা ইদানীং শরীরটা বড্ড খারাপ যাচ্ছে।হুট করে মাথা ব্যথা বেড়ে গেলো।কক্ষের লাইটটা অফ করে শুয়ে রইলো চুপচাপ, উদ্দেশ্য ঘুমানোর চেষ্টা।কিয়ৎক্ষণ বাদে হঠাৎ কক্ষের লাইট জ্বলে উঠে বিরক্তে মুখ কুচকে দরজায় তাকাতে দেখতে পায় অনুকে।ইদানীং অনু এক ছলচাতুরী পেয়েছে ঈশার সাথে ঘুমাবে বলে হাজির হয় যদিও ঈশা এতে বারণ করে না কিন্তু টানা চার পাঁচদিন একই কান্ড চলতে থাকলে ঈশার মনে সন্দেহ তো আসবেই।
” তুই?”
” ঘুমাবো আপত্তি আছে নাকি?”
” না।কিন্তু সন্দেহ আছে।”
” কেন?”
” ইদানীং আমার সাথে ঘুমানোর বাহানার কারণ?”
অনু থতমত চোখে তাকালো সে।কি করে বলবে এটা ঈশানের রিকুয়েষ্ট বললে তো আজ রণক্ষেত্র সৃষ্টি হবে।
” আগামী বছর আমরা কে কোথায় থাকবো বলতো তোর বিয়ে হয়ে যাবে হয়তো আমার এসব ভেবে খারাপ লাগে।”
ঈশা আনমনে হাসলো আগামী তিন বছরেও সে বিয়ে করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিজেকে আগে ঘুছিয়ে নিতে হবে,চাকরি করার স্বপ্নের পথ একটু একটু করে পরিষ্কার করতে হবে অথচ অনু ফাঁকিবাজ এই মেয়ে বোধহয় এই বছরেই বিয়ে সারবে।পড়াশোনার নাম শুনলে তো তার জ্বর হয়।
“এসেছিস যখন মাথাটা একটু মালিশ করে দে ভীষণ যন্ত্রণা করছে।”
” সে কি হঠাৎ? ”
” জানি না।ড্রয়ারে মলম আছে নিয়ে আয়।”
অনু দ্রুত বেগে ছুটলো মলম লাগিয়ে মালিশ করলো ঈশার কপালে।কিছুটা মুহূর্ত পর ঘুমে কাবু ঈশা।মেয়েটার ঘুম গাঢ় হতে কক্ষের দরজা রুদ্ধ করে বিছানায় ফেরে অনু।তার হাতে দুটি ফোন নিয়ে অপেক্ষা করে ঈশানের ফোনের কিয়ৎক্ষণ বাদে ফোন করলো ঈশান অডিও নয় ভিডিও কল।পেছনের ক্যামেরা ঈশার দিকে দিয়ে বালিশের সাথে ফোনটা সেটিং করে নিজের কাজে ব্যস্ত হলো অনু এখন তার কাজ রাসেলের সাথে কথা বলা।অপর দিকে সোফায় বসে একগাদা কাজ সারছে ঈশান,দ্রুত বাড়ি ফেরার লোভে যত পারা যায় কাজ করছে সে কতদিন যে ঠিক ঠাক ঘুমায় না তবুও নিজেকে একটুও ভিড়ায় না।রাসেল কয়েকটা ফাইল নিয়ে তার রুমে চলে গেছে।কাজের ফাঁকে ফাঁকে ঈশানের দৃষ্টি ল্যাপটপের স্কিনে যেখানে ভেসে আছে ঘুমন্ত এক রমণী।সারাদিনের ক্লান্তি ভুলতে ঈশানের এই মেয়েটাকে প্রয়োজন।ঈশা তাকে উপেক্ষা করছে করুক যতটা পারা যায় করতে থাকুক কিন্তু এই ছল কৌশল বেশি দিন নয়।ঈশান ফিরবে নিজের অধিকারের নাম দিতে ফিরবে।
ঈশানের শেষ ভরসা অনু মেয়েটাকে সারাদিন জ্বালিয়ে মা রছে ঈশান ঈশার প্রতিটা আপডেট সে তার কাছ থেকেই পায়।
কাগজ পত্র ঘুছিয়ে গাঢ় শ্বাস ছাড়লো ঈশান স্কিনে তাকিয়ে স্মিত হাসলো।ঈশার এলোমেলো চুল ছুঁয়ে দিতে হাত রাখলো কিন্তু আফসোস তাদের মাঝে এখন অনেকটা দূরত্ব।রাত দুইটা ছুঁই ছুঁই কাজ শেষ করে বিছানায় ফিরলো ঈশান ল্যাপটপ তখন তার হাতে ছিল ঈশাকে আর কিছুক্ষণ দেখে ফোন রাখলো অনু পাগলটা নিশ্চয়ই এখনো রাসেলের সাথে কথায় ব্যস্ত।
দেরি না করে ঘুমানোর চেষ্ট চালালো ঈশান তবে ঘুমটা তার চোখে ধরা দিলো না।মাঝরাতের যে মন খারাপ হতাশা সবটা এখন ঘিরে রেখেছে তাকে।মাথায় কিলবিল করছে হাজার খানেক প্রশ্ন।ঈশার প্রতি এত মায়া বাড়িয়ে লাভ কি হলো?সেই তো দূরত্ব তৈরি হয়েছে।তাকে ভালোবাসা ঈশানের ভুল নয় কী?ঈশা যদি ছেড়ে চলে যায়!বুকের ভেতর মুষড়ে উঠলো ঈশানের তার কিচ্ছু ভালো লাগছে না রুমের প্রতিটি ড্রয়ারে সিগারেটের প্যাকে খুঁজলো এ ছাড়া এখন আর চিন্তার হাত থেকে বাঁচা যাবে না।হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো ঈশানের এত রাতে কে ফোন করেছে ভাবতে ভাবতে ফোন তুললো সে।চট্রগ্রামে যাওয়ার আগে হৃদয়কে বলে গেছিলো ঈশার উপর নজর রাখতে হঠাৎ হৃদয়ের ফোনে কিছুটা বিচলিত হলো ঈশান।
” এত রাতে কোন সমস্যা হৃদয়।”
” ঈশা ম্যাডামের সাথে তিয়াশ নামের ছেলেটা একান্ত দেখা করবে দুইদিন পর আজ ভার্সিটির সামনে ম্যাডামের সাথে উনার দেখা হয়।উনি ব্যস্ত ছিলেন বলে অল্প কথা বলেই চলে যান।”
” এত বড় সাহস,তোমার এই কথা জানাতে এত দেরি হলো কেন?”
” স্যার তিয়াশের সম্পর্কে বিশদ খোঁজ খবর নিয়েছিলাম।”
” কি কি জানলে?”
“উনার গার্লফ্রেন্ড আছে তিনি বর্তমানে ইন্ডিয়া থাকছেন।এর কারণ উনার বাবা মায়ের ডিভোর্স হয়েছে মা ইন্ডিয়া থাকেন সেখানেই চাকরি করেন নিজের বসত গড়েছেন।আর বাবা দেশে থাকেন।উনার গার্লফ্রেন্ড দুইদিক ম্যানেজ করে চলেন।”
ঈশান ভীষণ অবাক হলো।তিয়াশের গার্লফ্রেন্ড আছে তাহলে ঈশার সম্পর্কে সে এত ব্যাকুল কেন?অবশ্য ঘরে স্ত্রী থেকেও তো পরনারীতে আসক্ত হয় আর তিয়াশের কেস তো গার্লফ্রেন্ড নিয়ে আজ বাদে কাল ছেড়ে দিলে মেয়েটার কিচ্ছু করার থাকবে না।নড়ে চড়ে উঠলো ঈশান ঈশাকে হারানোর ভয়টা বেড়ে গেলো শতগুন।
” ঠিক আছে সেদিন আমি ফিরবো ওদের একান্ত সাক্ষাৎ করাচ্ছি আমি।”
৫৮.
তিয়াশের সাথে ঈশার দেখা হয়নি বেশ কয়েকদিন হলো।সেদিন হঠাৎ তিয়াশ আবদার করে বসলো ঈশার সাথে দেখা করবে।ঈশাও আর দ্বিমত পোষণ করতে পারলো না ভার্সিটির দুটো ক্লাস মিস দিয়ে দেখা করতে এলো তিয়াশের সাথে।অনুকে রেখে এলো ক্লাসে।ঈশাকে অনেকদিন পর দেখে হাস্যজ্বল হয়ে উঠলো ছেলেটার মুখ।ভার্সিটির কাছে ক্যাফেতে এলো দুজন একসাথে।
” তোমায় অনেকদিন পর দেখলাম ঈশা অনেক প্রিটি হয়ে গেছো।”
লাজুক হাসলো সে।তিয়াশকে খুশি করতে মুচকি হেসে বলে,
” আপনিও বেশ হয়েছেন।”
” সত্যি বলছো?”
শব্দ করে হাসলো ঈশা।তিয়াশ দুইটা ক্যাপাচিনো অর্ডার করলো।তিয়াশের চোখে আচমকা দেখা গেলো লাজুকতার ছাপ।
” আমি মাকে তোমার কথা বলেছি।মা ভীষণ খুশি হয়েছে।”
” তাই?”
” হুম।একদিন তোমায় নিয়ে যেতে বলেছে যাবে ঈশা?”
ঈশা দ্বিধায় পড়লো একটা ছেলের সাথে তার বাসায় যাওয়াটা ভালো ঠেকলো না তার কাছে।ঈশার দ্বিধা দেখে তিয়াশ বলে,
” অনুকেও নিয়ে যাবে প্রয়োজনে রুদবাকে নিয়ে যাবো তুমি কি সন্দিহান ঈশা?”
” একদমি নয় আমি যাব।ওদের সবাইকে নিয়ে যাব।”
তিয়াশ মিষ্টি হাসলো।টুকটাক কথার ফাঁকে ক্যাপাচিনো নিয়ে আসে ওয়েটার।
ভর দুপুর সময়টাতে সূর্য তার প্রখরতা দেখাতে কার্পন্য করেনি।প্রচন্ড গরমে বাইরে চৌচির অবস্থা।একই চৌচিরতা দেখা গেলো ঈশানের মুখচ্ছবিতে।ছেলেটা কঠিন মুখ নিয়ে কাঁচের দরজা ঠেলে ঢুকলো ক্যাফেতে।তার পিছু পিছু প্রবেশ করলো রাসেল তার মুখটাও কঠিন হয়ে আছে।দুজনে অফিস থেকে ফিরেছে বোঝাই যাচ্ছে।ক্যাফেতে প্রবেশ করতে মাঝখানের একটি সিটে দেখা গেলো ঈশাকে তার মুখোমুখি তিয়াশ।রাসেল ঈশান দুজন গিয়ে বসলো তার পাশের টেবিলে।দুজনের মুখে গম্ভীরতা এঁটে আছে।তিয়াশ কিংবা ঈশা কেউ খেয়াল করেনি তাদের।রাসেল কেমন হাঁশফাঁশ করছে তাকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে তার মাঝে বড্ড জেদ কাজ করছে।
” ঈশান, ঈশার সাহস হলো কি করে তিয়াশের সাথে একা দেখা করার।”
” সাহস থাকা ভালো।ভীতুদের আমি পছন্দ করি না।”
” যদি আমার অনু হতো তাহলে আজ যে কি হতো।তুই সত্যি করে বল ঈশান ঈশার কী সত্যি তোর প্রতি ফিলিংস আছে?যদি না থাকে তবে সে যা ইচ্ছা করুক আমরা বাড়াবাড়ি করার কেউ না।”
” মাঠে যখন নেমেছি গোল দেওয়া ছাড়া মাঠ থেকে ফেরার খেলোয়াড় আমি নই।ঈশার মনে ফিলিংস সে তো সামান্য ব্যপার।ঈশা আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে।”
” তাহলে তুই সহ্য করছিস কি করে তিয়াশের পাশে ওঁকে দেখে?”
” কে সহ্য করছে?আমি যাকে ভালোবাসবো আমি ব্যতীত তার আশেপাশে কোন পুরুষকে সহ্য করবো না।যেখানে তুই ফ্রেন্ড হওয়া সত্ত্বেও তোকে রেহাই দি না সেখানে নিজের মনের মানুষকে কি করে রেহাই দিবো?এসব ব্যপারে আমি বড্ড কৃপন।”
রাসেল দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো দ্রুত পাশে উঠে গেলো এবং বসলো তিয়াশের পাশের চেয়ারে।তিয়াশ রাসেলের চোখে চোখ রাখতে দাঁত কিড়মিড় করে তাকালো সে।ঈশান বসলো ঈশার পাশে।ঈশা সবে ক্যাপাচিনো মুখে তুলেছে ঈশানকে দেখে বিষম খেলো সে।ঠোঁটের কোণে লেগে গেলো খানিকটা ক্যাপাচিনো।ঈশান কিঞ্চিৎ হেসে বৃদ্ধা আঙুলের সাহায্যে ধীরে ধীরে ঈশার ঠোঁট মুছে দিলো।
” জান ধীরে ধীরে খাও।”
” হু!”
” ভয় পায় না জান।আমি খাইয়ে দি?”
তিয়াশ অবাক হলো।তিয়াশ কিছু বলার আগে রাসেল বলে,
” আপনার সাথে আমার কথা আছে ভাই, একটু সাইডে আসুন।”
তিয়াশ উঠতে চাইলো না।তবুও রাসেল তার হাত টেনে সরিয়ে আনলো।ঈশান ঈশার বাহু টেনে কাছে আনলো।
” মুখটা এমন করেছো কেন জান?ক্যাপাচিনোটা স্বাদ হয়নি?স্বাদ বাড়াতে আমি আমার থুথু মিশিয়ে দেবো?”
ঈশানকে এখানে দেখতে পাবে মোটেও আশা করেনি ঈশা।রাসেল তিয়াশকে নিয়ে কোথায় গেল?বড্ড ভাবনায় পড়লো সে।ঈশানের কথার ভিঙ্গিমাও ভিন্ন কি চলছে এই ছেলের মনে?
“আপনি এখানে কি করছেন ঈশান?”
” তোমাদের একান্ত সাক্ষাৎকারের জোয়ারে ভাটা ফেলতে এসেছি জান।”
” মানে?”
” বুঝতে পারছো না জান?তিয়াশের সাথে তোমার কী সম্পর্ক?”
” তিয়াশের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই ঈশান। আমরা জাস্ট ফ্রেন্ড বিশ্বাস করুন আমায় বেশি না একটুখানি বিশ্বাস।”
” অয়ন আমার ভাইয়ের মতো যেহেতু আমার কোন আপন ভাই নেই তাই আমার সব কাজিন আমার ভাই।তারাও আমাকে বোন মানে আপনি শুধু শুধু সন্দেহ করছেন ঈশান।..এই ডায়ালগ গুলো তোমার ছিল মনে পড়ে?অয়ন তোমার ভাই তাহলে ভাই কি করে এমন করলো আর এবার তিয়াশ জাস্ট ফ্রেন্ড,তিয়াশ আমার বড় হয় সে রুমার সমবয়সী তাহলে তোমার থেকে দ্বিগুণ বেশি বয়সের মানুষের সাথে কিসের বন্ধুত্ব?”
” বন্ধুত্ব বয়স দেখে হয়?মন থেকে হয় ঈশান।”
” তো এই মন দেওয়া নেওয়া যে একদিন অন্যদিকে মোড় নেবে এসব কি আমি বুঝিনা?তিয়াশ বেশি বাড় বেড়েছে।”
” তখন থেকে তর্ক করে যাচ্ছেন তিয়াশ আমাকে কখনো সেচ্ছায় ছুঁয়ে দেখেননি আর অয়ন ভাইয়ের চাহনি ছোঁয়া সবটা নোংরা ছিল।”
ঈশান চুপ করে রইলো চোখে চোখ রাখলো ঈশার।বাম হাতটা বাড়িয়ে ধরলো ঈশার ডান গাল।নরম স্বরে ঈশাকে বলে,
” অয়ন ভালো ছিল না সেটা তুমি স্বীকার করলে।তাহলে অয়নের সাথে আমি যা করেছি সেটা নিয়ে আমার সাথে এতটা মন কষাকষি কেন?তুমি আমায় কতটা ভোগালে জানো?”
” কেন করছি জানেন?আমি আপনাকে ভয় পাই ঈশান এই যে আজ ওর সাথে কাল তার সাথে এভাবে আমি যার সাথে সখ্যতা গড়বো তাকেই আপনি গুম করবেন আর না হয় ক্ষতি।দোষ তো আমি করছি তাহলে আমাকে শাস্তি দিন।”
” যেদিন তোমার ভুল দেখবো সেদিন তোমারো নিস্তার নেই ঈশা।”
–
আলাদা কথা বলার উদ্দেশ্যে তিয়াশের মুখোমুখি রাসেল।তিয়াশ বড্ড অবাক হলো আজ ঈশানের ব্যবহারে ঈশা ঈশানের মাঝে কি চলছে তা যে জানা ছাড়া স্বস্তি নেই।
” ভালো আছেন মিস্টার তিয়াশ?”
” ভালো ছিলাম তবে আপনাদের কার্যকলাপে এখন কিছুটা বিচলিত আছি।”
“তাহলে সরাসরি আসল কথায় আসা যাক।”
” অবশ্যই।”
” আপনার ঈশার সম্পর্কটা কেমন মানে আমি মিন করছি আপনি কী ঈশাকে পছন্দ করেন?”
” হ্যা অবশ্যই পছন্দ করি।তবে আপনারা যা মিন করতে চাইছেন তেমনটা না আমি ঈশাকে ফ্রেন্ডের চোখে দেখি আমরা ফ্রেন্ডলি ব্যস এইটুকুই।”
” শুনে খুশি হলাম।”
রাসেলের কথায় ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো তিয়াশ কিছুটা রসিয়ে বলে,
” আরেকটা কথা শুনলে খুশি হবেন চার বছর ধরে আমার একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে আর আমরা খুব শীঘ্রই বিয়ে করতে চলেছি।”
চোখ মুখ ঝলকে উঠলো রাসেলের এই কথা শুনে সে ভীষণ খুশি নিশ্চয়ই ঈশান শুনলেও খুশি হবে।
” তবে মেয়েটা ব্রোকেন ফ্যামিলির আমার মা কিছুতেই এই সম্পর্ক মেনে নেবে না তাই আমি ঈশার সাহায্য চাইতে এসেছি আজ।”
” শুধু ঈশা না আমরাও আপনাকে সাহায্য করবো যে করে হোক আপনার সম্পর্কের পূর্ণতা দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। শুধু আপনি ঈশার থেকে একটু দূরে থাকবেন।”
শব্দ করে হেসে ফেললো তিয়াশ।চেয়ারে গা এলিয়ে বলে,
” জেলাস?”
” উহ আমি নই যার জেলাস করার কথা সে।”
” ওদের সম্পর্ক কত দিনের?রুমার বাড়িতে যতগুলো পার্টি ছিল একটাতেও ওদের একসাথে দেখলাম না বরং মনে হয়েছে একে অপরের চক্ষু শূল।সেদিন রেস্টুরেন্টে দেখলাম ঈশান চলে যাওয়ায় ঈশাও গেল ঠিক তখনি আমার খটকা লেগেছিল।”
“খুব শীঘ্রই ওরা এক হবে।”
.
” তোমার প্রত্যাখ্যান মেনে নিতে পারবো না আমি কোন দিক দিয়ে অযোগ্য বলবে?”
” যোগ্য অযোগ্যের বিষয় এটা নয়।আমি যাকে সারাজীবনের জন্য পছন্দ করবো সে অবশ্যই নরম মনের মানুষ হবে আমাকে এবং আমার পছন্দকে সম্মান করবে কেয়ার করবে।
” এতদিন আমার সাথে থেকে তোমার কি মনে হয়েছে?আমি তোমার কেয়ার করিনি?”
” আমাকে আপনি সবার মাঝে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন আর এই গুরুত্ব আপনার কাছে কেয়ারিং লাগতে পারে তবে আপনার এই কেয়ারিং এর যে সাইড এফেক্ট আছে সেটা আমি আজ বুঝতে পারছি।”
” তুমি বেশি বুঝো ঈশা তোমার সাথে আমার এই সম্পর্কে কোন কথা নেই যা হবে তোমার পরিবারের সাথে।”
৫৯.
রৌদ্রময় শহরটায় আচমকা মেঘের দেখা মিলেছে এই বুঝি আকাশের কোল বেয়ে বর্ষণ নামবে সিক্ত হবে তপ্ত ধরণি।বৃষ্টি আসবে বলে রান্না ঘরের দিকে ছুটলেন মাহমুদা ছেলে এসেছে গতকাল কতদিন পর ছেলেকে কাছে পেলেন এই নিয়ে তার আনন্দের শেষ নেই।রাসেল হঠাৎ আবদার করলো বেগুনি আর আলুরচপ খাবে তাই তিনি দেরি করলেন না।দ্রুত হাতে আলুর চপ আর বেগুনি তৈরি করতে লেগে গেলেন।ঈশান আর রাসেল তখন কিচেন রুমে ছিলো দুইটা চেয়ার টেনে বসেছে তারা।মাহমুদা গরম গরম বেগুনি ভেজে ঝুড়িতে তুলতে দুই ছেলে গবগবে সবটা সাবাড় করছে।এতদিন ঈশানদের রান্নার কাজ করতেন একজন অর্ধ বয়সী মহিলা যার নাম নূরা।মাহমুদা আসার পর থেকে টুকটাক কাজে সাহায্য করতে হয় তাকে এই ছাড়া বাকি কাজ মাহমুদা নিজের হাতে করেন।নূরা মন দিয়ে টিভি দেখছিলেন মাহমুদা গলা ছেড়ে ডাকলেন তাকে,
” নূরা আপা এদিকে আসেন।”
আদেশ পেয়ে চটজলদি এগিয়ে গেলো কিচেনে।মাহমুদার মুখোমুখি হতে স্মিত হাসলেন।
” এই চপগুলো নিয়ে যান।টিভি দেখুন আর খান।”
” দুই মানিক রতনকে আগে দেন আপা ওনারা তো ভাজাপোড়া খায় না তেমন আজ দেখে অবাক না হয়ে পারলাম না।”
নূরার কথা শুনে এক গাল হাসে রাসেল।হাতের চপ দেখিয়ে বলে,
” আন্টি আবার কখন দেশে আসবেন তার ঠিক নেই।তাই যতটুকু পারা যায় খেয়ে নিতে হবে।”
ঈশান হাত ইশারায় ডাকলো নূরাকে এবং মিহি স্বরে বলে ।
” আন্টি দারোয়ান আঙ্কেল আর কাশেম চাচাকে দিয়ে আসতে ভুলবেন না।আমার মায়ের হাতের স্পেশাল কেউ মিস করবেন না কিন্তু।”
সন্ধ্যার চায়ের আড্ডা শেষে টিভি দেখতে বসলো সবাই।ঈশান ঈশার ব্যপারে তার মাকে জানাতে চায় কিন্তু কোথা থেকে শুরু করবে বুঝতে পারছে না।রাসেল পাশ থেকে তাকে অভয় দিয়ে যাচ্ছে।
” আম্মু একটা কথা ছিল।”
” বল।”
” তুমি বিয়ের কথা বলছিলে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তুমি দেশে থাকতে থাকতে…।”
” চট্রগ্রাম গিয়ে কি তোমার মাথার জট খুলেছে?”
” না অনেক আগে খুলেছে তবে তোমায় এখন বলছি।”
” মেয়ে কি পছন্দ করা আছে নাকি আমায় খুঁজতে হবে?”
” আমার পছন্দ করা আছে আম্মু।”
মাহমুদা অবাক হলেন ঘুরে বসে চোখে চোখ রাখলেন ঈশানের।অবাক হয়ে বলেন,
” সে কে?”
” ঈশা।”
” অসম্ভব!”
#চলবে___
–