অবাধ্য_বাঁধনে #পলি_আনান [পর্ব সংখ্যা ২৬ খ]

0
836

#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ২৬ খ]
____________________
ধীরে ধীরে বৃষ্টির গতিক বাড়লো চারদিকে উজাড় করে নামলো বর্ষন।ঘর জুড়ে পিনপিনে নিরবতা।এক বুক আশা নিয়ে ঈশান তাকিয়ে আছে মাহমুদার দিকে।রাসেল দুজনের কান্ড দেখছে কী চলছে এখন মাহমুদার মনে?কিছুক্ষণ আগের কথা মাহমুদা যেন বেমালুম ভুলে বসে আছে তিনি বেশ মনোযোগ দিয়ে টিভি দেখছেন।তার এই বেখেয়ালি হাভ ভাব মোটেও পছন্দ হলো না ঈশানের।

” আম্মু অসম্ভব কেন?তা বললে না তো।”

” এসব বিষয়ে আমার এখন কথা বলতে ভালো লাগছে না ঈশান।রাসেলের জন্য যখন আমি ঈশাকে পছন্দ করলাম তখন বললে আমার রুচির ঘাটতি এই সেই আর এখন এই মেয়েকে তুমি বিয়ে করবে?হাস্যকর লাগলো।”

ঈশান ঢোক গিললো ঈশাকে ভীষণ পছন্দ করেন মাহমুদা।বিয়েতে তিনি রাজি হবেন নিশ্চয়ই তবে এই নিয়ে অনেকটা কষরত করতে হবে তাকে এই যা।

” আমি যখন বলেছিলাম কথাটা তখন আমার ঈশার সাথে ঝামেলা চলছিলো শুধু তার সাথে নয় তার পরিবারের সাথেও।”

” মানে?কি হয়েছিলো?

ঈশান শুরু থেকে সবটা খুলে বললো।ঈশানের কথা যত শুনছিলেন ততই অবাক হচ্ছেন মাহমুদা।যদিও ঈশান অয়নের বিষয়টা এবং ঈশার সাথে বদলা নেওয়ার বিষয়টা এড়িয়ে যায়।রাসেলের চোখে চোখ রাখতে দেখতে পায় রাসেলের হাস্যকর মুখ।ছেলেটা হাসছে কেন?নিশ্চয়ই বাঘ বিড়াল হয়ে সবটা স্বীকার করার জন্য।

” কিরে রাসেল তুই আমাকে এসব কথা কখনো বলেছিস?আমার ছেলেটা এসব করে বেড়ায়।”

” তাই তো হাসছি আন্টি আসামী সব নিজের মুখে স্বীকার করছে ভাবতে পারছেন সে কতটা অসহায়?”

” হুম আমাদের রুচির দুর্ভিক্ষের ছিল তাই আমরা ঈশাকে পছন্দ করেছি। হঠাৎ এনার রুচির দুর্ভিক্ষ হলো কেন?”

রাসেল আর মাহমুদা যে তার অসহায়ত্বের সুযোগ নিচ্ছে তা বেশ ভালো ভাবে বুঝতে পারছে ঈশান।ভেতরটা ঝড় বইলেও সম্মুখে সে নিরব।

” জেদের কারণে বলেছি তুমি কি বুঝতে পারছো না আম্মু?”

” হ্যাঁ পারছি।তবে ঈশার মতো মেয়ে তুমি ডিজার্ভ করো না।”

চমকালো ভড়কালো ঈশান।হতবাক সে চাহনি।ঈশান কোন দিক থেকে অযোগ্য?

” এ কথা তুমি কেন বললে আম্মু?”

” নিজের উগ্র আচরণ আগে বশে আনো এই মেজাজে তোমার সংসার চলবে না।তুমি আমার ছেলে আমি তোমাকে ভালোভাবে চিনি ঈশান।”

মাহমুদার কথায় ফিঁক করে ফেললো রাসেল।তার হাসিতে গা জ্বলে উঠলো ঈশানের।ঈশানের কড়া দৃষ্টি উপেক্ষা করলো সে।

” আন্টি বিয়ে করিয়ে দেন দুইটাই এক ধাঁচের।বিয়ে পর দেখবেন আপনার ছেলে সোজা হয়ে গেছে।”

রাসেলের কথায় মাহমুদা হাসলেন।বাইরে থেকে চুপচাপ থাকলেও মনে মনে তিনি ভীষণ খুশি।তবে ঈশানের বাবার কথা মাথায় আসতে চমকে যান মাহমুদা মুহূর্তে চোখে মুখে নেমে আসে হতাশার ছাপ।

” তোমার বাবা শুনলে…”

” খবরদার এই বিয়ের কথা বাবা যেন না জানে।”

” এ কি করে হয়?তোমার জন্মদাতা পিতা সে।”

“পিতা হয়েও আমাকে বুঝলেন না।আগে বিয়ে হবে তারপর যা হবার হবে।”

” ঈশার বাবা নিশ্চয়ই তোমার বাবার সাথে আলোচনা করতে চাইবে তখন?”

” আমি ম্যানেজ করে নেবো কোন চিন্তা নাই।”

” বিয়ের পর যদি ঈশা সব জানতে পারে?ঈশা কোনদিন সুখি হবে না মনের কাটা তার থেকে যাবে।”

” কী জানবে ঈশা? হ্যাঁ কী জানবে?এসব কথা আমার সামনে তুলবে না খবরদার বলছি মা।যা আমি করিনি তা নিয়ে অপবাদ দেওয়া এবার বন্ধ করো।আমি আমার সুখ খুঁজে পেয়েছি এই সুখের যে দেয়াল তুলবে তাকে আমি ছিন্নভিন্ন করে ছাড়বো।”

ঈশান রেগে গেলো।বাজখাঁই গলায় কথাটা শেষ করে দ্রুত নিজের রুমের দিকে হাটা ধরলো।এসব কথা তার শুনতে ভালোলাগে না একটু না।পরবর্তী জীবনটা সে সুখের চায় শুধু ঈশাকে নিয়ে সুখে থাকতে চায় ব্যস।যদি এই সুখের বাঁধা হয়ে কেউ আসে তবে অতিত বর্তমান ভবিষ্যৎ সবটা ভুলে যাবে ঈশান।

ছেলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলেন মাহমুদা।হতাশার শ্বাস বেরিয়ে এলো তার বুক থেকে।রাসেলকে উদ্দেশ্য করে সন্দিহান স্বরে বলে,

” ঈশা কি ওর ভালোবাসা নাকি জেদ?”

” ভালোবাসা।”

৬০.
ক্লাসের বাইরে অনেকদিন পর সব বন্ধুরা এক হয়েছে।মীরা, দিহান, ঈশা, অনু আজ একসাথে কিছুটা সময় কাটানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তাই তারা সবাই মিলে তাদের পছন্দের রেস্টুরেন্টে পিৎজা খেতে আসে।পিৎজার সাথে টুকটাক কিছু খাবার অর্ডার করে পুনরায় আড্ডায় মশগুল হয়।মীরা আর দিহানের সম্পর্কের বেশ উন্নতি হয়েছে তাদের সম্পর্কটা, আর সেই উপলক্ষ্যে আজকের ট্রিট দিচ্ছে দিহান ।

দুপুরের পরে হওয়ায় রেস্টুরেন্টে ভীড় কিছুটা কম যখন বিকেল গড়িয়ে আসবে তখন নিশ্চয়ই ভীড় হবে।নিরিবিলি পরিবেশে হঠাৎ স্টাফদের কানাঘুষা চলতে শুরু করে।নিরিবিলি পরিবেশটা আচমকা যেন ব্যস্ত হয়ে উঠে।দলের মাঝে একজন বলে, “তোমরা টেবিলটা আবার চেক করো ঈশান স্যার কোন ভুল পছন্দ করেন না।” ঈশান স্যার নামটা শুনতে খটকা লাগলো ঈশার অবশ্য এই দুনিয়াতে ঈশান বলে কি একটাই মানুষ আছে?নিজের ভাবনার প্রতি হাসি পেলো ঈশার।বন্ধুদের মাঝে যখন আড্ডা চলছিলো তার মাঝে মীরার চোখ পড়ে দরজায়।গোলাপি ন্যুড ব্লেজার গায়ে ছেলেটা যে ঈশান চিনতে একটুও ভুল হয়নি তার।পাশে ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরাহিত একটি মেয়ে।যার হাই হিলের ঠকঠক শব্দে সবার নজর কাড়তে বাধ্য।মেয়েটার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে হাস্যজ্বল রাসেল।তাদের মাঝে মেয়েটা কে তা জানার প্রবল আগ্রহ দেখা দিলো মীরার মাঝে।সে ঈশার হাত ধরে ফিসফিস শব্দে বলে,

” এই দেখো ওরা ঈশান আর রাসেল না?”

ঈশা চমকে ঘুরে তাকালো ঈশানের পাশে মেয়েটিকে দেখে তার আনন্দেরা পাখা মেলে দূর আকাশে উড়ে গেলো।
.
ঈশানের বেশ অনেকটা বছরের পথ চলা নন্দিতার সঙ্গে।নন্দিতার গ্রুপ আর তার গ্রুপের মাঝে বেশ সখ্যতা।নন্দিতার জন্মস্থান মালেশিয়ার কুয়ালালামপুরে।নন্দিতার বাবার যখন বয়সের ভারে উঠে দাঁড়াতে হিমশিম খান তখন এত বড় ব্যবসার দায়িত্ব দেন বড় মেয়ে নন্দিতাকে।মেয়েটাও বাবার ভরসার মান রেখেছে এতটা বছর একা হাতে সামলে গেছে সবটা।প্রতিবছর একবার বাংলাদেশে আসে সে।এই মেয়েটার প্রতি ঈশানের রয়েছে বেশ শ্রদ্ধাবোধ এবং সম্মান।এই রেস্টুরেন্ট’টা বেশ পছন্দ ঈশানের মাঝে মাঝে এখানে আসা হয় আর প্রতিটা স্টাফ ঈশানকে ভালোভাবেই চেনে।মেন্যু কার্ড হাতে তুলে নন্দিতার দিকে বাড়িয়ে দিলো ঈশান।স্লিম ফিগারের মেয়েটি বয়সে ঈশানের বড় অথচ কে মানবে এই কথা?তার হাসিতে যেন বলে দেয় একজন অষ্টাদশী নারী সে।

” এখানকার কোন খাবার টা ভালো পছন্দ করে তুমি অর্ডার দাও ঈশান।”

” ভেবেছিলাম তোমায় বাঙালি রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাবো কিন্তু আম্মু শুনে বারণ করলো।আম্মু চায় নিজ হাতে রান্না করে তোমায় খাওয়াবে।”

” আন্টির সাথে কথা বলে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে ঈশান।উনি খুব মিষ্টি ভাষী,এবং চমৎকার ব্যক্তি।তাই আন্টির ইনভাইট না রেখে পারলাম না।”

ঈশান স্মিত হাসলো টুকটাক খাবার অর্ডার করে বিজনেস সম্পর্কে আলোচনা করছিলো তাদের সাথে টুকটাক কথা বলছিলো রাসেল।হঠাৎ ফোন বেজে উঠতে অনুর নাম্বার দেখে দ্রুত কেটে দিলো।রাসেল ফোন কাটতে দ্রুত মেসেজ পাঠায় অনু।সেখানে লেখা ছিল “পাশে তাকাও।” রাসেল তৎক্ষণাৎ পাশে তাকালো অনু আর ঈশাকে দেখে বেশ অবাক হলো।কথার মাঝে ঈশানকে হাত ইশারায় পেছনে তাকাতে বলে রাসেল।ঈশান পেছনে ঈশার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রয় এরপর পুণরায় নন্দিতার সাথে কথায় মশগুল হয়।ঈশানের এড়িয়ে যাওয়ার ভাবটা দেখে সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে রাসেল।এটা কি হওয়ার ছিলো?

অপরদিকে অনু আর ঈশা দুজনের চোখাচোখি হয় ঈশানের এড়িয়ে যাওয়াটা কি স্বাভাবিক?অর্ডার দেওয়া খাবার একে একে আসতে শুরু করেছে দিহান সবাইকে খাওয়ারে মনোযোগ দিতে বলে সবাই ঈশানের টপিক বাদ দিয়ে নিজেদের মাঝে কথা বলতে থাকে।কিন্তু স্বাভাবিক হতে পারলো না ঈশা একে একে কেটে গেলো বেশ কিছুটা সময় ঈশান একবারেও ঘুরে তাকায়নি ঈশার দিকে।বরং পাশে থাকা মেয়েটার সাথে হাসিমুখে কথা বলছে তবে এই মেয়েটা কি ঈশানের নতুন গার্লফ্রেন্ড।ভেতরটা নড়ে উঠলো ঈশার গলা ধরে এলো মুহূর্তে কিন্তু নিজের এই আবেগকে প্রশ্রয় দিলো না।সে তো এটাই চেয়েছিলো ঈশান চলে যাক ঈশান নিজের মতো থাকুক তবে আজ এত কষ্ট কেন?নিজের মনকে শক্ত করলো ঈশা মনের কোনে অসীম জেদ কাজ করলো ঈশান যদি নতুন কাউকে পেয়ে তাকে এড়িয়ে যেতে পারে তবে সে কেন পারবে না? সে নিজেও পারবে।এই জেদটাই কাজে লাগলো ঈশার পুরো সময়টায় একটি বারেও ঈশানের দিকে তাকালো না ভুলেও।

.
আজ যেন আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমেছে বৃষ্টির বড় বড় ফোটা ধুয়ে নিয়ে যাচ্ছে সবকিছু।রাস্তায় যে যেভাবে ছিলো সবাই দৌড়ে পালালো অথচ একদল সেচ্ছায় নামলো রাস্তায়।আশেপাশে সবটা নিরিবিলি দিহান মীরা দুজনে এক সাথে ভিজছে ঈশা নিজেও নেমে গেছে রাস্তায়।অনু দাঁডিয়ে রইলো এক কোনে উদ্দেশ্য মীরা আর দিহানের কিছু ছবি তুলবে।ধীরে ধীরে বৃষ্টির প্রকপ আরো বাড়লো চার জনে ভিজে টইম্বুর।চারজন বন্ধু উদ্দেশ্যহীন হাটতে শুরু করে আজ বুঝি তাদের দুঃখ নেই,থাকলেও ধুয়ে মুছে সাফ হয়েছে এই বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটায় আনন্দ ঝরছে।

বৃষ্টি দেখে উচ্ছ্বসিত নন্দিতা হঠাৎ বায়না করে বসলো সে ভিজবে কিন্তু ঈশান এই রিক্স নিতে চায় না এখানে ভেজার কোন দরকার নেই তাই ড্রাইভারকে দিয়ে নন্দিতাকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো মাহমুদার কাছে বাড়ি ফিরে যত ইচ্ছা ভিজতে পারবে।রেস্টুরেন্টের সামনে পকেটে হাত গুটিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ঈশান রাসেল তার পাশে ছিল।

” ঈশাকে ইগ্নোর করলি কেন?”

” নন্দিতার সামনে কোন সিক্রিয়েট চাইনি তাই।”

” বাড়ি ফিরলি না যে?এখন গাড়ি পাবো কোথায় এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি মাছি তাড়া করবি?”

” চল ভিজি।”

” কি!মনে কি রঙ লেগেছে?”

” হুম ঈশা লাগিয়ে দিয়েছে।”

” মজা করিস না ঈশান।”

” আমি মজা করছি না।চল ঈশাকে খুঁজতে হবে আশা করি বেশি দূর যায়নি।”

বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হাটা ধরলো ঈশান।তার পিছু পিছু চললো রাসেল।কিছুক্ষণ বাদে সন্ধ্যা নামবে কিন্তু এখনি মনে হচ্ছে সন্ধ্যা হয়ে গেছে মেঘের কারণে কী না।

দিহান মীরাকে বাসায় পৌঁছে দেবে বলে আগে বিদায় জানিয়েছে।অনু আর ঈশা একলা একা হাটছে রাস্তায় অনেক্ষণ যাবৎ রিক্সার সন্ধান করেও খালি রিক্সা পায়নি।আর যে দু’একটা পেয়েছে সেগুলো তিনগুন দাম চেয়ে বসলো।বিরক্ত হয়ে হাটা ধরলো ঈশা।বৃষ্টি এখনো থামেনি মাগরিবের আযান শেষ হয়েছে নিশ্চয়ই এখন গাঢ় অন্ধকার নামবে কিন্তু ভয় নেই ঈশার মনে নিজেকে আজ মুক্ত পাখি লাগছে।

হাটতে হাটতে অনেকটা পথ পেরিয়ে এলো ঈশা, সে একাই বকবক করছে অনুর কোন সাড়া নেই সন্দিহান চোখে পাশে তাকাতে থমকে গেলো সে। অনু কোথাও নেই!কিছুটা দূর একটা ছেলেকে দেখা যাচ্ছে ভিজতে ভিজতে এদিকেই আসছে।অজানা আতঙ্কে বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো ঈশার।আশেপাশে তাকিয়ে এলোমেলো পায়ে অনুকে খুঁজতে থাকে হঠাৎ কেউ ঈশার হাত টেনে ধরে সম্মুখে ঈশানকে দেখতে পেয়ে কিছুটা বিচলিত হয়।

” ভয় পাচ্ছো কেন ঈশা?”

” অনু কোথায়?নিশ্চয়ই আপনি সরিয়ে দিয়েছেন।”

” রাসেলের সাথে ওই যে ওই দোকানটায় গেছে ওরা আসবে তুমি চলো।”

” চলো মানে কি হ্যাঁ?আমি আপনার সাথে যাব না।”

“তাহলে কার সাথে যাবে?”

ঈশা অনুর অপেক্ষা করলো না দ্রুত পায়ে হাটতে শুরু করলো সামনে।ঈশান ছুটলো তার পিছু পিছু।

” আমার পাশে একদম হাটবেন না।”

” যার পাশে হাটলে মানায় তার পাশেই হাটছি।”

কিছু ভেবে গায়ের ব্লেজার খুলে ঈশার গায়ে পরিয়ে দিলো ঈশান সঙ্গে সঙ্গে তা ছাড়িয়ে নিলো ঈশা।

” আদিখ্যেতা দেখাবেন না সহ্য লাগে আমার।”

” আমি এখন যা বলবো তা সহ্য করতে পারবে?”

” মানে?”

” প্রতিটি ভাজে ভাজে সদ্য ফোটা ফুল….”

ঈশানের কথা শেষ হওয়ার আগে তার হাত থেকে ব্লেজার ছিনিয়ে নিলো ঈশা।ঈশার কান্ড দেখে ঠোঁট কুচকে হাসলো ঈশান।আগা গোড়া ঈশানকে একবার দেখে বিড়বিড় করে বলে, ” অসভ্য ছেলে।”

” সভ্য হয়ে লাভ কী হলো?তাই অসভ্য হতে বাধ্য হলাম।”

” আমার কাছে কেন এসেছেন?বলেছিনা দূরে দূরে থাকবেন।”

” কাছে আসার ব্যবস্থা করছি আর তুমি দূরে সরিয়ে দিচ্ছো।”

ধীরে ধীরে বৃষ্টি কমলো তবে বিদ্যুৎ চমকানো বাড়লো।আকাশের ডাক বাড়ছে ধীরে ধীরে।ঈশার সাথে সাথে এবার ভয় বাড়লো ঈশানের যত দ্রুত সম্ভব ঈশাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে হবে।অনু রাসেলের দেখা নেই এই পাগল গাড়ি নিয়ে কোথায় গেছে কে জানে।ঈশা বেসামাল পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে যে করে হোক তাকে বাসায় ফিরতে হবে।ঈশার কান্ড দেখে ঈশান বলে,

” সাবধান পড়ে যাবে।”

ঈশা ঈশানের কথা শুনলো না নিজের বেপরোয়া স্বভাবটা প্রশ্রয় দিতে গিয়ে বাধলো বিপত্তি রাস্তায় থাকা ইটের সঙ্গে হুমড়ি খেয়ে পড়লো রাস্তায়।

” বলেছিনা সাবধানে চলবে সব কাজে জেদ।”

ঈশানের ধমকে চুপসে গেলো ঈশা ডান পায়ের বৃদ্ধা আঙুলের যন্ত্রণায় চাপা আর্তনাদ করলো।আবছা আলোতে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারলো নখ উলটে গেছে বেগতিক রক্ত ঝরছে।ঈশার ব্যগে রুমাল ছিলো দ্রুত রুমাল দিয়ে পা বাধলো তার।পুনরায় আকাশ ঝাপিয়ে বৃষ্টি নেমেছে ঈশান দ্রুত হাতে পাজাকোলে তুলে নিলো ঈশাকে।ঈশানের কান্ডে চমকে গেলো ঈশা।

” আরে ছাড়ুন আমি হাটতে পারবো।”

” পারবে না।”

” নামিয়ে দেন সেদিন কি বলেছেন আমি কি ভুলে গেছি?আপনি বলেছেন আমায় কোলে তুলে আপনার হাতে চোট লেগেছে আর এখন…”

“চুপ করো।এত বকবক করো কেন?কি সুন্দর মুহূর্ত একটু ফিল নাও।”

” ফিল টিল নেওয়ার ইচ্ছে আমার নেই আমাকে নামান ঈশান।”

ঈশান হাটতে থাকলো সামনের দিকে।ঈশা তাকিয়ে রইলো নির্ণিমেষ। ছেলেটার চোখের পাপড়ি চুইয়ে জল ঝরছে গাল বেয়ে সে পানি এসে ঠেকছে গলায় কিছুটা ঠোটে।ঈশার চাহনি বেসামাল করলো ঈশানকে তার ধারা ভুল সংঘটিত হওয়ার আগে ঈশার মনোযোগ ভঙ্গ করলো দ্রুত।

” তুমি ইচ্ছে করে পড়েছিলে তাই না?যাতে আমি তোমায় কোলে তুলি আর রোমান্টিক মোমেন্ট ক্রিয়েট হয়।উমম তোমার মনে মনে এতটা।”

৬০.
আজ শুক্রবার ছুটির দিন।ঘুমটা একটু দেরিতে ভাঙলো ঈশার।বাবা নিশ্চয়ই বাজারে চলে গেছেন বাজার নিয়ে ফিরেছেন কি?ঘুমঘুম চোখে ঢুলতে ঢুলতে কিচেনে গেলো ঈশা।পুরোটা কিচেনে বাজারের ব্যাগে ভরতি কাজের খালাও এসেছেন দেখছি।

” আম্মু এত বাজার আনলো যে?”

” আজ আমাদের মেহমান আসবে মা যা যা দ্রুত মুখ ধুয়ে আয় অনেক কাজ আছে।”

” কে আসবে?”

” ঈশানরা।”

” কিন্তু কেন?”

” তোকে বিয়ে করতে অসভ্য মেয়ে এত কথা না বলে এখান থেকে যা।”

ঈশা চমকে গেলো মায়ের কথায় লহমায় তার ঘুম উবে গেলো।সুলতানা বিরক্ত হয়ে মেয়েকে বিয়ের কথা বলেছেন অথচ তিনি আদৌ জানলেন না ঈশানের মায়ের এই বাড়িতে আসার উদ্দেশ্যে একটাই আর সেটা হলো, বিয়ে।
#চলবে___

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here