#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩১খ]
_____________________
ঈশানের কর্কশ কণ্ঠে বলা প্রতিটা কথা কানে আসছে ঈশার।অদূরে দাঁড়িয়ে কানে ফোন রেখে কাউকে দেদারসে গালি ছুড়ছে ঈশান।বাংলার মাঝে ইংরেজি ঢুকিয়ে যেভাবে পারছে গালি দিয়ে মন শান্ত করছে।ঈশা চুপচাপ বসে আছে চেয়ারে হাতের অল্প একটু জায়গায় ব্যান্ডেজ করা।অনুর হাতের কনুইয়ে জামার কারনে বেশি ক্ষত হয়নি তবুও কেমন জ্বালাপোড়া করছে।মেয়েটার হাতে ওয়ানটাইম ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিলো ফার্মেসীর লোকটি।রাসেল একটি পানির বোতল এগিয়ে দিলো অনুকে।
” নাও গলা ভিজাও ঈশাকেও দিও।”
অর্ধেকটা পানি শেষ করে অনু বোতল এগিয়ে দিলো ঈশার কাছে বাকি পানিটুকু শেষ করলো ঈশা।অনুর মনটা ভীষণ খারাপ হলো এত সুখের মাঝে দুঃখ কেন আসে?এতক্ষণ তারা কত আনন্দে ছিল আর এখন!
” এই গলিতে তোমাদের কাজ কি?”
” হাত ভাঙ্গতে এসেছিলাম হাত তো ভাঙ্গেনি তাই আফসোস হচ্ছে।”
অনুর ত্যাড়া কথায় চুপসে যায় রাসেল।এই মেয়েটা তাকে জ্বালিয়ে মা র বে।ফার্মেসীর লোকটি ড্যাব ড্যাব চোখে তাকিয়ে রইলো অনুর দিকে।রাসেল বিল মিটিয়ে অন্য দোকানের দিকে গেল সঙ্গে করে দুটো আইস্ত্রিম নিয়ে ফিরলো সে।ঈশার দিকে বাড়িতে দিতে হাত ইশারায় বারণ করলো ঈশা।
” কি হলো নাও ঈশা।”
” না আমার এখন ইচ্ছে করছে না।”
” কিন্তু কেন?ভালো লাগবে নাও।”
ঈশা তবুও নিলো না তার মন মেজাজের অবস্থা ভালো নেই ঈশানের প্রতি বিরক্ত চলে এসেছে।ফোন পকেটে পুরে ফিরলো ঈশান চোখে মুখে রাগী ভাব এখনো বৃদ্ধমান।অনু হাতে আইসক্রিম নিয়ে খাওয়া শুরু করলো ঈশানকে আসতে দেখে সবার অগোচরে ঈশার হাতে ধাক্কা দিলো।ঈশা বিরক্ত হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে তাকালো অনুর দিকে।
” এদিকের কাজ শেষ?”
” হ্যা শেষ।ঈশা অনুকে সিএনজি নিয়ে দি ওরা চলে যাবে।”
রাসেলের কথায় মাথা দুলালো ঈশান।একটি চেয়ার নিয়ে ঈশান বসলো ঈশার দিকে মুখ করে।
” তোমরা এই রাস্তায় কেন?”
” এই জায়গাটা কি আপনার দখল করা?আসতে মানা?”
” সাধারণ প্রশ্নটা এভাবে ঘুরিয়ে বলছো কেন ঈশা?”
” আমার এখন কোন কথা বলতে ভালো লাগছে না বাড়ি যাব আমি।”
“রেগে আছো কেন?”
ঈশা প্রত্যুত্তর করলো না।অনু আইসক্রিম মুখে নিয়ে একবার ঈশা আরেকবার ঈশানকে পরখ করছে।অপরদিকে রাসেল সিএনজি খুঁজতে কোন গ্রহে গেছে কে জানে।ঈশান আলগোছে ঈশার হাত টেনে নিলো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলো কতখানি আঘাত লেগেছে।
” আমি কি টর্নেডো নাকি ঈশা?নাকি কালবৈশাখী?”
ঈশানের প্রশ্নে ভ্রু কুচকে যায় ঈশার।সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকাতে হতাশার শ্বাস ছাড়লো ছেলেটা।
” প্রথম দিন রাজীবের মাধ্যমে আঘাত পেলে।এরপর সেদিন আমি ছুঁতে গেলে হুমড়ি খেয়ে পড়ে নখ উল্টে ফেললে আজ আবার হাতের চামড়ে ছিড়ে গেছে।”
“আপনাকে দেখে ঈশার হুশ থাকে না দুলাভাই।এত সুন্দর হট ড্যাশিং মন ভুলানো প্রেমিক যার থাকে তার কি আর বিশ্বভুবন মাথায় থাকে?”
অনুর প্রত্যুত্তরে কপট রাগ দেখালো ঈশা।চোখের পলকে ধুমধাম কয়েকটা কিল পিঠে পড়লো অনুর।মাগো বলে চিৎকার দিয়ে উঠে দাঁড়ালো অনু।
” আমি মিথ্যা বলেছি নাকি ঈশা?আমায় মা র লি কেন?দুলাভাই আপনি আপনার তেজিকে সামনাল আমি আমার জনকে খুঁজে আসি।”
অনু গটগট পায়ে চলে গেলো।ঈশান আর কথা বাড়ালো না একটু একটু করে হাত বুলিয়ে দিল ঈশার হাতে।ঈশার রাগ এখনো কমেনি বরং ঈশানকে দেখার পর বাড়ছে।
” কি হলো চুপ কেন তুমি?আর কোথায় ব্যথা পেয়েছো?”
” আপনি আমায় মিথ্যা বলেছেন ঈশান এখনো আপনি গুন্ডাদের মতো আচরণ করেন।”
” ছেলেটাকে মারায় তোমার জেদ হচ্ছে?মুখের আগে হাত চলা আমার ছোট বেলার অভ্যাস এত সহজে কি যাবে?ওই ছেলেটা রাসেলের গায়ে হাত দিয়েছে ভেবে দেখ কত বড় কলিজা।”
” আমার বাবার চোখে এসব পড়লে তার মনের অবস্থা কি হবে বুঝতে পারছেন?”
” তোমার বাবা আমার সম্পর্কে ভালো করে জানেন আশা করি মনে আছে আমাদের সেদিনের আলাপটা কিন্তু ভালো ছিল না।”
” তার মানে আপনি এসব ছাড়বেন না তাই তো?”
” জানি না আমি।”
” এসব ছাড়তে পারবেন না তবে আমাকে ছেড়ে দিন।”
ঈশার জবাবে কিঞ্চিৎ অবাক হলো ঈশান।কয়েক সেকেন্ডের নিজের ভাব গম্ভীরতা পালটে হাসলো শব্দ করে।সেই হাসিতে গা জ্বলে উঠলো ঈশার
” তুমি আমার সাথে পাল্লা দিয়ে পারবে?আমি কি বলেছি ভুলে গেছ?এখানে কি করছিলে সেটা বলো।”
” মীরা নাকি অসুস্থ তাকে দেখতে এলাম।”
” নিজেরা এসেছিলে নাকি দিহান পাঠালো হুম?”
” যা ভাবছেন তাই।”
” জানতাম।”
ঈশান মিহি হাসলো।তাদের কথার মাঝে এসে উপস্থিত হয় রাজীব।ছেলেটাকে দেখে আনমনে গলায় হাত চলে যায় ঈশার।এই ছেলের হাতে এন্টিকাটার ছিল বলেই ঈশার গলায় সেদিন আঘাত লাগে।এরা কতটা সাংঘাতিক।ঈশার ভাবমূর্তি বুঝতে পারলো ঈশান।রাজীব ঈশাকে দেখে একগাল হাসে।
” আসসালামু আলাইকুম ভাবী ভালো আছেন?সেদিনের ভুলের জন্য ক্ষমা চাইবার সুযোগ হয়ে উঠেনি আজ যখন পেয়েছি তখন আপনার কাছ থেকে মাফ না নিয়ে যাচ্ছি না।”
ঈশা বিব্রতবোধ করলো আড় চোখে তাকালো ঈশানের দিকে।ছেলেটা নিশ্চুপ ফোনে ধ্যান বসিয়েছে।
” আ..আমি মাফ করার কেউ না।যা হয়েছে সেটা এক্সিডেন্টলি।”
” না তার পরেও…”
রাজীবের কথা শেষ হওয়ার আগে মুখ খুললো ঈশান।
” রাজীব ওরা কোথায়?”
” ওনাদের ছেড়ে দিয়েছি এই ঝামেলা সমাধান হবে না শুধু শুধু বাড়বে তাই রাসেল ভাই যা বললো তাই করেছি।”
” গাড়ি কোথায়?”
” সামনে পার্কিং করার জায়গা আছে সেখানে রেখে এসেছি এই নিন চাবি।”
ঈশান চাবি হাতে নিলো ঈশাকে ইশারা করলো উঠতে মেয়েটার হাত ধরে ঈশান এগিয়ে গেলো রাস্তায়।রাসেল আর অনু দুজনকে একসাথে দেখে এগিয়ে গেল ঈশান।
” কিরে সিএনজি পেয়েছিস?”
” হ্যা লোকটা দোকানে গেছে পান কিনতে অপেক্ষা কর আসছে।”
৭৩.
ঈশান বাড়িতে ফিরলো রাত আটটায়।গোসল সেরে ফোন করলো ঈশাকে একবার দুইবার তিনবার দিয়েও যখন ফোনে পেলো না তখন হোয়াটসঅ্যাপে একটা মেসেজ দিলও, “কই তুমি?” ।অপরদিকে ঈশা কিচেনে ছিলো অনুর জন্য আলুরচপ ভাজতে।ঈশার ফোন আসায় অনু দ্রুত রুমে আসে ফোনে ঈশানের মেসেজ দেখে মাথায় তার শয়তানি বুদ্ধি চাপে।ফোন আনলক করে ঈশানকে মেসেজ পাঠায়।
“আমি তো আপনার মনে মাঝে আছি।আপনি কোথায় আছেন?”
ঈশার মেসেজটা দেখে ভ্রু কুচকে গেলো ঈশানের মেয়েটা কি আজ রোমান্টিক মুডে আছে?বিকালে তো একদফা কথা কাটাকাটি হলো।
” বাসায় আছি ঈশা।তোমার হাতের কি অবস্থা?”
” এটা কেমন কথা ঈশান আপনার উত্তরটা হতো, আপনি আমার মনে আছেন।একটুও ভালোবাসেন না আমায়।”
” রাগ করে না আমি তোমায় কতটা ভালোবাসি এটা বলতে হবে?আজ কি মুড ভালো তোমার?”
ঈশানের মেসেজ পড়ে মুখ চেপে হেসে ফেললো অনু।ঈশানের কি সন্দেহ হচ্ছে একটু বুঝে শুনে কথা বলতে হবে তবে।
“হুম আজকে আমার মন ভালো।শুনেন না ঈশান।”
” বলো।”
” আমাদের বিয়েটা আর দেরি করা ঠিক হবে না।যত দ্রুত সম্ভব বিয়ের দিন ক্ষণ ঠিক করুন।”
ঈশান মেসেজটা পড়ে কয়েক মিনিট চুপ থাকলো ঈশা কখনো এমন মেসেজ দেবে না।তবুও কথা চালিয়ে গেলো সে।
” আমার কাছে আসতে এত তাড়া?চলে আসো বারণ করলো কে?”
” এভাবে কি যাওয়া যায়?সম্পর্কের নাম না দিয়ে যাব না।তাই বলছি কি বিয়ের তারিখটা এবার ঠিক করা দরকার।”
” হুম বিয়ের তারিখ ঠিক হলে তো তোমার লাভ।আমি আর ঈশা বিয়ে করে ফেললে তোমার আর রাসেলের লাইন ক্লিয়ার।কানের নিচে দুইটা দিয়ে সব ভূত নামিয়ে দেবো।অনু ভালো মেয়ের মতো দ্রুত ফোন নিয়ে ঈশাকে দাও।”
ঈশান বুঝতে পারলো!হায় আল্লাহ এই ছেলের সাথে পারা দায়।ঈশানের মেসেজ পড়ে দ্রুত ফোন রেখে দিলো অনু।এই ছেলে কি করে বুঝলো দূর মজা করেও শান্তি নেই।
অনু কিছুটা সাহস নিয়ে পুনরায় মেসেজ করে,
” দুলাভাই একটা টিপস দেওয়ার ছিল।”
” কি টিপস?”
” আপনি মুভি দেখেন?”
” হুম কিন্তু কেন?”
” একশন মুভি নিশ্চয়ই?”
” হ্যাঁ।”
” এসব একশন মুভি দেখে কি হয়?সারাদিন মারপিট করা ছাড়া আর কি করেন?দেখা গেলো বিয়ের পর তর্কতর্কি লাগলে ঈশাকে একটা চেয়ার তুলে তাড়া করবেন অপরদিকে ঈশা হাতে খুনতি নিয়ে আপনাকে তাড়া করবে।তাই বলছি কি এবার থেকে রোমান্টিক মুভি দেখবেন আপনাদের প্রেম এত পানসে কেন বলুন তো?ঈশা এক পানসে আপনি আরেক পানসে।”
” এই মেয়ে তুমি কি আমার সাথে প্রেম করছো?তুমি কি করে বুঝলে আমি পানসে?”
” ইয়ে না মানে বললাম আরকি।যা বলেছি মাথায় রাখবেন কিন্তু।”
” তুমি এসব ট্রিকস গিয়ে তোমার গাধাকে খাটাও আমাকে এসব বলতে হবে না।এক্ষুনি ফোন রাখো না হলে কিন্তু খবর আছে অনু।”
অনু তরান্বিত ফোনটা ছুড়ে ফেললো।ঈশান মানে আতঙ্ক এসব আতঙ্কের সাথে যত কথা হবে ততই হার্টের সমস্যা দেখা দেবে।
.
অনুকে দু’একটা ঝারি দিলেও মনে মনে অনুর কথা গুলো নোট করলো ঈশান।আজ রাতে তার মিশন রোমান্টিক মুভি দেখা তাই তো ডিনার সেরে রাসেলের রুমের দিকে যায়।ঈশানকে দেখে শোয়া থেকে উঠে বসে রাসেল ভ্রু কুচকে বলে,
” হঠাৎ কিছু কি হয়েছে?”
” মুভি দেখবো।”
” ওকে বস অন করছি কোনটা দেখবি সিলেক্ট করে এসেছিস?”
” উমম না।রোমান্টিক মুভি দেখবো।”
বিস্ফোরিত চোখে তাকালো রাসেল।দু’কানে বার বার প্রতিধ্বনি তুলছে ঈশানের বলা কথা।অবিশ্বাস্য চোখে ঈশানের দিকে তাকিয়ে রইলো রাসেল।
” এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?”
” তোর কি হয়েছে শরীর ঠিক আছে?”
” হ্যা কেন?”
” না মানে…”
” বুঝতে পারছি তোর এমন রিয়েকশন কেন।অনু বললো আমি নাকি পানসে প্রেম করি তাই সাজেস্ট করলো রোমান্টিক মুভি দেখতে।দেখি চালাতো একটা।”
রাসেল দু’ঠোঁট কুচকে হাসে।রাসেল মুভি অন করে বসে পড়ে ঈশানের পেছনে।মুভির প্রতিটা সিন বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখছিলো ঈশান রাসেল আড় চোখে পরখ করছিলো তাকে।কিছুটা সময় পর মুভির কিছু সিন দেখে চোখ বড় হয়ে গেলো ঈশানের।কান দিয়ে তার ধোঁয়া উঠছে আড় চোখে রাসেলের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো ছেলেটা ড্যাব ড্যাব চোখে সবটা হজম করছে।ঈশান দ্রুত রিমোট নিয়ে টিভি অফ করলো।কোলে থাকা বালিশটা ছুড়ে দিলো রাসেলের মাথায়।
” শালা ডার্টি।রোমান্টিক দিতে বলেছি আর তুই…”
” দোস্ত মুভিটার হিরো ডার্টি বাট লয়াল।”
” এক চড় দেব তোর কান ভনভন শুরু হয়ে যাবে।তুই আর অনু এক ধরনের তোদের মিল হওয়ারি ছিল।”
” আ..অনুকে টানিস না ওর দোষ নাই আমি ইচ্ছে করে এই মুভি দিয়েছি তোর রিয়েকশন দেখার আশায়।দাড়া অন্যটা চালাই।”
” আমার মুডের উপর ঠাডা পড়ছে আর কোন মুভি দেখার স্বাদ আমার নাই।”
ঈশান পপকর্নের বাটিটা রাসেলের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে চলে গেলো নিজের রুমে।অপরদিকে রাসেল বিষণ্ণ মনে তাকিয়ে রইলো টিভির দিকে।সে ভেবেছিল ঈশানটা খুশি হবে উলটো তাকে ধুয়ে দিয়ে চলে গেলো।অদ্ভুত!
#চলবে___