#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩২ক]
______________________
ঈশানের ঘ্যানঘ্যানানিতে বিরক্ত মাহমুদা।আজ সন্ধ্যার পর ঈশান অবসর আছে তাই সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঈশাকে নিয়ে বের হবে কিন্তু এত রাতে ঈশা কি করে বের হবে?তাই সে ফন্দি আটলো শেষ ভরসা মাহমুদা।মায়ের আঁচল ছাড়ছে না ঈশান যে করে মাহমুদা ঈশার বাবাকে ফোন করে রাজি করাবে আজ ঈশানের সাথে যেন বের হতে অনুমতি দেয়।ছেলের এত তোড়জোড়ের কাছে বাধ্য হলেন মাহমুদা।বুঝিয়ে বলায় ঈশার বাবা রাজিও হলেন বিয়ের আগে তাদের দুজনকে জানা শোনার দরকার আছে।অনুমতি পেয়ে ঈশাদের বাড়ি গেলো ঈশান।সুলতানা জানালেন ঈশা তার কক্ষে আছে অনুমতি নিয়ে ঈশার কক্ষে গেলো ঈশান।
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ঈশা হাতে একটুআধটু টান পড়তে নড়ে চড়ে উঠে আড়মোড়া কাটিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ে।এভাবে কেটে গেলো কিছুটা সময়।ঈশান অপলক তাকিয়ে আছে ঈশার দিকে।এভাবে চলতে থাকলে সারাটা রাত লেগে যাবে কিন্তু ঈশার ঘুমন্ত মুখ দেখার লোভটাও সামলাতে পারছে না ঈশান।না চাইতেও আস্তেধীরে ঈশাকে ঘুম থেকে জাগ্রত করার চেষ্টা করলো ঈশান কিন্তু এই মেয়ে যে ঘুমিয়ে তো ঘুমিয়েই যাচ্ছে।না চাইতেও ঈশাকে জোরে ধাক্কা দিলো ঈশান যার ফলে পিটপিট চোখে তাকালো ঈশা।শিয়রে ঈশানকে দেখে বিড়বিড় করে বলে,
“ঘুমের মাঝেও জ্বালায় কি এক যন্ত্রণা!”
” আর কত ঘুমাবে?এবার তোমার ঘুম আমার যন্ত্রণা বাড়াচ্ছে।”
ঈশানের কণ্ঠে চোখ মেলে তাকায় ঈশা।ঈশানকে দেখে কয়েক মিনিট স্তব্ধ হয়ে আকস্মিক উঠে বসে।দ্রুত ঈশানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে অসংলগ্ন ভাবে পড়ে যায় ঈশান।
” এ..এখানে কেন এসেছেন?এখান থেকে জান আপনি আল্লাহ কেউ দেখে ফেললে কেয়ামত হয়ে যাবে।”
” কে দেখবে?এত অস্থির হচ্ছো কেন?”
” আপনি যান প্লিজ চলে যান আমি…”
” ছেলেটা সবে এলো আর এখনি যাবে তোমার কি বুদ্ধিসুদ্ধি লোপ পেয়েছে ঈশা?”
শেষোক্ত বাক্যটি কপট রাগ দেখিয়ে বললেন সুলতানা।মায়ের আগমনে কলিজায় মোচড় দিলো ঈশার।মেয়ের দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙালেন সুলতানা।
” যাও এক্ষুনি তৈরি হয়ে নাও ঈশান বাবা তোমাকে নিয়ে বের হবে।”
মায়ের আদেশে মাথা দুলালো ঈশা।সুলতানা ঈশানকে নিয়ে যায় বসার ঘরে জামাইয়ের জন্য স্পেশাল চা,কফি দুটোই করেছেন তিনি।ঈশান শ্বশুরের মন গলিয়েছে কিন্তু শ্বাশুড়ির মন গলাতে এখনো সুযোগ পায়নি তাই মিষ্টি হেসে বলে,
” দুর্দান্ত কফি এরপর থেকে যতবার আসবো আপনি কিন্তু আমায় কফি করে খাওয়াবেন আন্টি।”
” তোমার সত্যি ভালো লেগেছে?”
” মিথ্যা বলবো কেন?”
ঈশানের প্রশংসা পেয়ে সুলতানা ভীষণ খুশি আনন্দে পুলকিত তার মন।
.
প্রথমত কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় ভীষণ বিরক্ত ঈশা।দ্বিতীয়ত এই রাতে ঈশান তাকে শাড়ি পরতে বাধ্য করছে মুড অফ থাকলে শাড়ি পরার মন থাকে?এই কথা বোঝাবে কে এই ছেলেকে।মুখটা ভার করে ঈশানের পাশাপাশি হাটছে সে।ঈশান শাহরিয়ার আজ একেরপর এক চমক দেখাচ্ছে ঈশাকে নিয়ে তিনি ঘুরতে এসেছেন কিন্তু কোন গাড়ি আনেননি।কেন আনেননি?কারন তিনি নাকি আজ পায়ে হেটে ভ্রমণ করবেন।সেদিন হাসিনের দেওয়া বেগুনি রঙের শাড়িটি পরেছে ঈশা।ডান হাতটা যে ঈশান ধরেছে এই হাত ছাড়ার আর নাম নেই।ঈশানের পাশাপাশি হাটছে সে কোথায় যাচ্ছে,কেন যাচ্ছে সে নিজেও জানে না।তার মন খারাপের সঙ্গ দিচ্ছে দূর আকাশের সরু বাঁকানো চাঁদটা।সে যতটুকু যাচ্ছে মনে হচ্ছে চাঁদটাও তার পাশাপাশি হাটছে।ঈশা কিছুক্ষণ পর পর আকাশের দিকে চোখ বুলায় তার হাভ ভাব বুঝতে পেরে ঈশান বলে,
” ছোট বেলার অভ্যাস এখনো আছে?চাঁদ পাশাপাশি হাটে এই ভ্রান্ত ধারণা মাথায় নিয়ে ঘুরার?”
” ভ্রান্ত ধারণা হলেও এটা ভাবতে তো মন্দ লাগে না।”
” তা বেশ বলেছো।”
” আজ হঠাৎ আমাকে নিয়ে বের হলেন?”
” ভাবলাম কিছু স্মৃতি তৈরি করি।”
” স্মৃতি কিন্তু পুড়ায় জানেন তো?”
” সেটা অবস্থান বুঝে।”
প্রত্যুত্তর করলো না ঈশা।দুজনে হাটতে থাকলো উদ্দেশ্যহীন পথে।আশেপাশে হাটছে পথচারীরা তারা নিশ্চয়ই তাদের গন্তব্যে হাটছে কিন্তু ঈশানের আজ কোন গন্তব্য নেই যতটা পারা যায় আজ হাটবে সে।
” ঈশান বোবা হয়ে হাটলে কি মজা আছে?আপানি কোন কথাই বলছেন না।”
” আমি কথা খুঁজে পাচ্ছি না ঈশা।আমার আজ নিরব থাকতে বেশি ভালো লাগছে।”
“চলুন মেলায় যাই।সামনে একটা মেলা আছে।”
” মেলা আমার মোটেও ভালো লাগে না ঈশা।কেমন গিজগিজে অবস্থা।”
” এসব বলে তো লাভ নেই।চলুন চলুন মেলায় যাই।”
ঈশার জেদের কাছে হারলো ঈশান দুজন মিলে অবশেষে প্রবেশ করলো মেলায়।চারিদিকে গিজগিজে অবস্থা দেখে ভীষণ বিরক্ত প্রকাশ করলো ছেলেটা কিন্তু তার এসব হাভ ভাবে পাত্তা দিলো না ঈশা।সে পুরো মেলায় আনন্দের সাথে ঘুরছিলো।হাওয়াই মিঠাই দেখে চেচিয়ে বলে,
” ঈশান ঈশান চলুন আমরা পিংকি খাই।”
” পিংকি?”
ভ্রু কুচকালো ঈশান।ঈশা এক গাল হেসে ঈশানের হাত টেনে বলে,
” হাওয়াই মিঠাইকে আমরা পিংকি বলি।তার রঙটা দেখুন কি সুন্দর!”
” এই নাম নিশ্চয়ই অনু দিয়েছে?”
” আপনি কি করে বুঝলেন।”
” মেয়েটাকে আমি ভালোভাবে চিনেছি ওর সাথে আমার অতি জরুরি বৈঠক আছে।”
” বৈঠক!”
” বুঝবে না তুমি চলো।”
হাওয়াই মিঠাই হাতে দাঁড়িয়ে ছিল ছোট্ট একটি ছেলে।এই বয়সে তার ঘাড়ে হয়তো সংসারের চাপ পড়েছে।ছেলেটাকে দেখে ভীষণ মায়া লাগলো ঈশার।ঈশান বুঝতে পারলো ঈশার চাহনি ছেলেটিকে বললো বিশটা হাওয়াই মিঠাই দিতে।ঈশানের নির্দেশ শুনে ঈশা বিচলিত কণ্ঠে বলে,
” এতগুলো দিয়ে আমি কি করবো?”
” যাকে ভালো লাগবে তাকে দিবে নিতে বলেছি নাও।”
ঈশা বিশটা হাওয়াই মিঠাই নিয়ে হাটা শুরু করে আশেপাশে যেখানে বাচ্চা পেয়েছে একটা একটা করে তাদের হাতে দিয়েছে।সব শেষে তার হাতে রইলো একটি।চুড়ির দোকানে গিয়ে ঈশা বললো সে চুড়ি কিনবে তাতে অবশ্য বারণ করলো না ঈশান।এক মুঠ চুড়ি হাতে নিতে তার হাত আঁকড়ে ধরলো ছেলেটা।
” দাও আমি পরিয়ে দি।”
ঈশা বাঁধা দিলো না ছেলেটা কি সুন্দর যত্ন করে ঈশার হাতে চুড়ি পরিয়ে দিচ্ছে।ঈশার চুড়ি কেনা শেষ হতে একে একে পাঁচ ডজন চুড়ি কিনলো ঈশা। প্রতিট ডজনের আলাদা আলাদা সাইজ দেখে সন্দিজান কণ্ঠে ঈশান বলে,
” এসব কার?”
“আন্টি,রুমাপু,রুদবা,অনু,আর আম্মুর জন্য সুন্দর হয়েছে না?
” আম্মু আর আন্টি এই বয়সে কাঁচের চুড়ি পরবে!”
” আমার জন্য পরবে।আপনার কোন সমস্যা?”
” ম্যাডাম হুকুম করেছে আমি আর কি বলতে পারি?”
ঈশা পছন্দ করে রুদবার জন্য আরো কয়েকটা ক্লিপ কিনলো।পুরোটা মেলা ঘুরলো ঈশা।শেষে তার জেদ চাপলো সে নাগর দোলায় উঠবে ঈশান বেশ কয়েকবার বারণ করলো মেয়েটাকে কিন্তু ঈশা তার বারন শুনেনি।কি আর করার শেষ পর্যন্ত নাগর দোলায় চড়ে বসলো দুজনে।প্রথম প্রথম সবটা ঠিক ছিল কিন্তু যখনি নাগর দোলা জোরে জোরে ওঠা নামা শুরু করলো তখন ঈশার চিৎকারে কানের পর্দা ফাটার জোগাড় হলো ঈশানের।মেয়েটা খুবলে ধরেছে ঈশানের হাত বড় বড় নখের কারনে ঈশানের হাতের চামড়ায় দেবে গেছে নখ।ঈশার গলা ফাটানো চিৎকারে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে ঈশান।
” এত চিৎকার দিচ্ছ কেন?আস্তে আস্তে প্লিজ মুখে তালা দাও।”
” ভ.. ভয় লাগছে আমাকে নামাই দেন।”
” উঠবে বলছিলে এখন নামবে কেন?”
” না না আনি নামবো আমার ভয় লাগছে।”
নাগর দোলার গতি বাড়লো ঈশা পুনরায় চিৎকার দিতে এবার ঈশান নিজেও চিৎকার দিতে শুরু করে ঈশানের চিৎকারে চুপসে যায় ঈশা।
” আপনি চেচাচ্ছেন কেন?”
” আমি ফিল করতে চাইছি তুমি চেচিয়ে কি মজা পাচ্ছো।”
” আসুন তবে একসাথে করি।”
ঈশান ঈশা দুজনে একসাথে চিৎকার দিতে তাদের কান্ডে আশেপাশে থাকা অন্যরা ভুত দেখার মতো তাকিয়ে রইলো।ঘুরানো শেষে হেলেদুলে নামলো ঈশা প্রচন্ড মাথা ঘুরানোর ফলে তার শরীরে একটু শক্তিও নেই।
ঈশান ঈশার হাত টেনে বসালো পাশে থাকা ফুসকার দোকানের একটি চেয়ারে।
” ফুফা ফুফুর গর্বের কারণ নাকি তাদের মেয়ে হবে বাহ এখন তো দেখছি সেই মেয়ে আসলেও গর্বের কারণ হবে।রাত বিরাতে ছেলে নিয়ে মেলায়।”
চিরপরিচিত কণ্ঠে কেঁপে উঠলো ঈশা।পাশে তাকাতে অয়নকে দেখে কলিজাটা মুচড়ে উঠলো।অয়নকে দেখে মেজাজটা বিগড়ে গেলো ঈশানের কিন্তু ঈশার সামনে কোন ঝামেলা চায় না সে।
” অয়ন ভাই।”
” আশা করনি তাই না?চিন্তা করো না ফুফা ফুফিকে কিছু বলবো না।”
” বলা বলির তো কিছু নেই মা বাবার অনুমতিতে এখানে এসেছি।”
” ওও বড়লোক ছেলে দেখে তোমার মা বাবার কান্ডজ্ঞান লোপ পেয়েছে।টাকার লোভ সবারি থাকে।”
” ঈশানের সাথে আমার বিয়ে ঠিক আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন?”
” বিয়ে তো আর হয়নি।”
” তো?ভালোবাসি আমরা একে অপরকে।এই যে ঈশান আমার হাত ছুঁয়েছে তাতে আপনার গায়ে লাগছে তাই না?আপনার মতো নোংরা ছোঁয়া তো তার নয়।”
” ঈশা মুখ সামলে কথা বলো।”
” মুখ আপনারো সামলানো উচিত ছিল।”
” এইটুকুনি মেয়ে কোলে পিঠে মানুষ করেছি এখন মুখেমুখে তর্ক করছো?এক চড়ে…”
” চুপ একটা কথাও আর শুনতে চাই না।”
শেষোক্ত বাক্যে ঈশানের কথায় চুপ হয় যায় অয়ন।ঈশানের দিকে তাকিয়ে তার রাগ বাড়লো বহুগুন।
” আপনি কে? আমি আমার কাজিনের সাথে কথা বলছি সরে দাঁড়ান।”
” আপনার কাজিন আমার হবু স্ত্রী।”
” এই যে মিস্টার বেশি বাড় বেড়েছেন।”
“কে বেশি বাড় বেড়েছে প্রকাশ করবো কী?হোটেল রুম নাম্বার একশ চার কি ঠিক বলছি তো মিস্টার অয়ন?”
ঈশানের কথায় চুপসে যায় অয়নের মুখ।তার চোখে মুখে ছেঁয়ে গেছে আতঙ্ক সেই চাহনি সন্দিহান চোখে পরখ করলো ঈশা।অয়ন কথা বাড়ালো না সে উলটা পথে আবার হাটা শুরু করলো।অয়নের ব্যবহারে খটকা লাগলো ঈশার।
” হোটেল রুম নাম্বার একশ চার কি ঈশান?এই কথা বলায় অয়ন ভাই ভয় পেল কেন?”
” তুমি বুঝে নিও ঠান্ডা মাথায় আপাতত আমি কিচ্ছু বলবো না।”
.
অয়নের আগমনে ঈশার মনটা খারাপ হলেও ঈশান সেই মন খারাপের সময়টা দীর্ঘ হতে দিলো না।
এটা ওটা বলে মেয়েটাকে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা চালালো ঈশান।রাত প্রায় নয়টা বেজে গেছে অদ্ভুত এত অল্প সময় কাটালো অথচ নয়টা বেজে গেলো।
” কি খাবে ঈশা ডিনার করে বাসায় ফিরবো।”
” চলেন ঝালমুড়ি খাই।”
” এসব খেয়ে কি পেট ভরবে?”
” আমার চলবে।”
ঈশান বারণ করলো না।ঈশাকে ঝালমুড়ি কিনে দিয়ে সে দাঁড়ালো ঈশার পাশে।মেলায় ভিড় বেড়েছে আশেপাশের ধাক্কাধাক্কারি ফলে একজনের গা ঘেষে আরেকজন যাচ্ছে।এসব মোটেও ভালো লাগে না ঈশানের।তার দুই হাত প্রশস্ত করে যতটা পারা যায় ঈশাকে আগলে রাখলো ঈশান।ঈশানের কান্ডে পাশের দোকানে থাকা একটি লোক বলে,
” নোয়া বিয়া নাকি?”
ঈশান প্রত্যুত্তর করলো না কপট হেসে তাকালো লোকটার দিকে।
” পথম পথম এমন হজ্ঞলের আদর সোহাগ থাহে বিয়ার একবছরে দেহা যায় আসল মুখ।”
বুকের ভেতর ধক করে উঠলো ঈশার।ঈশানের পরিবর্তন সে মানতে পারবে না কিছুতেই না।ঈশানের ভালোবাসা পাওয়ার লোভ তার সর্বদা থাকবে।লোকটার কথায় স্মিথ হাসে ঈশান।নম্র স্বরে লোকটিকে বলে,
” দোয়া করবেন মামা এই আদর সোহাগ যেন আমার শেষ নিশ্বাস অবধি থাকে।”
মেলায় ঘুরাঘুরি শেষে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো তারা।ঈশাদের বাড়ির রাস্তাটা একটু বেশি নির্জন যার কারনে ঈশার হাতে থাকা কাঁচের চুড়ির টুংটাং আওয়াজ কানে আসছিলো ঈশানের।মেয়েটার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে ঈশান আশেপাশে কয়েকটি কুকুর দেখে ভয়ে কুঁকড়ে উঠলো ঈশা।তাদের দেখে কেমন ঘেউ ঘেউ করছে।ঈশান বুঝতে পেরে হাসতে শুরু করলো।
” সেদিনের কথা মনে আছে ঈশা?”
” জীবনেও ভুলবো না।কুকুর গুলোর চেয়ে আপনি সাংঘাতিক ছিলেন।দৌড়ের মাঝে আমাকে প্রস্তাব দিয়েছেন ভাবা যায়।”
” ঈশান শাহরিয়ার সু্যোগের সৎ ব্যবহার করতে কখনো ভুলে না।”
ঈশাদের ফ্লাটের কাছাকাছি আসতে পা থেমে গেলো ঈশানের।এখন বিদায়ের পালা এই বিদায় না দিলে কি হয়?ঈশাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলেই তো পারে।ঈশানের মনটা বড্ড বেশি খারাপ হলো।
” এখন তবে যাই?”
” চলে যাবে?”
” আমার তো দেরি হয়ে গেছে ঈশান।অন্য একদিন আবার ঘুরবো।”
” তবে যাও।”
ঈশান ঈশার হাত ছাড়লো না ধরে রাখলো এখনো।যাওয়ার অনুমতি দিয়েও মেয়েটাকে ছাড়ছে না সে।
” ঈশান ছাড়ুন এবার।”
” না ছাড়লে?”
” এখানে দাঁড়িয়ে দূর আকাশের চাঁদ দেখবো।”
” আমার অদূরের চাঁদ তো তুমি,আমি না হয় বিভোর চোখে তোমায় দেখবো।”
ঈশা লাজুক হাসে ঈশান তার হাত ছেড়ে দিলো বিদায় জানিয়ে ঈশা চলে গেলো গেটের ভিতর অপরদিকে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো ঈশান।
ঈশা যাওয়ার পর বড় বড় পা ফেলে হেটে এগিয়ে যাচ্ছে ঈশান।হঠাৎ আবছায়ায় আলোয় নজরে এলো একটি ছেলে কানে ধরে উঠবস করছে ভালোভাবে পরখ করতে ঈশান বুঝলো এই ছেলেটি রাসেল।দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে রাসেলের কান টেনে দাঁড়া করালো ঈশান।
” কানে ধরে উঠবস করছিস কেন?মাথা কি ঠিক আছে?”
” অনুর সাথে ঝামেলা হয়েছে আমার সাথে রাগ করে হারপিক খাবে বলছে তাই…”
” তোর বুদ্ধি কি দিন দিন হাটুতে নামছে?অনুর সাহস আছে এসব করার।তুইও না একটা গাঁধা।”
” ওই দেখ তুই হারপিকের বোতল হাতে দাঁড়িয়ে আছে।”
ঈশান উপরে তাকালো বারান্দায় অস্পষ্ট একটি মেয়েকে দেখা যাচ্ছে।ঈশান ফোন করলো অনুকে মেয়েটাও ভাবলো হয়তো তাকে বোঝাতে ফোন করেছে তাই ভাব দেখাতে ফোন ধরলো অনু।কিছুটা রাগী ভাব নিয়ে বলে,
” বলুন ভাইয়া।”
” তুমি নাকি হারপিক খাবে?এক্ষুনি খাও তোমার হসপিটালের যাবতীয় সব খরচ আমি দিব।তাই কোন চিন্তা নাই এক্ষুনি হারপিক খাও।”
” ভাই…”
” এত কথা কিসের এক্ষুনি খাবে তুমি।আমি দেখতে চাই অনুর কতখানি সাহস আছে।”
” ভাইয়া আমি তো.. ”
” তুমি হারপিক খাবে অনু যদি না খাও এখনি তোমার বাসায় গিয়ে…”
” সরি ভাইয়া সরি।রাসেলকে একটু জ্বালাচ্ছিলাম আসলে ঝগড়া না করলে মজা নাই।আপনার ভয়ে আমি এখন ফোন বন্ধ করে রাখবো তাই দয়া করে আমায় আর ফোন দিয়ে টেনশনে রাখবেন না।ভালো থাকবেন দুলাভাই।”
.
” ঈশান নাকি আজ ঈশার সাথে বেরিয়েছে?”
” জি ঠিক শুনেছেন।”
“সম্পর্ক কত দূর?”
” অনেকটা গভীর।আমি মাঝে মাঝে ভাবি নওশীন ঈশা মানে মিসেস শাহরিয়ার যখন জানতে পারবেন তার হাজবেন্ড ঈশান একজন রেপিস্ট তখন এত আবেগ,এত প্রেম কোথায় যাবে?”
শেষোক্ত বাক্যটি বলে হাসতে শুরু করলেন আগন্তুক।তার হাসিতে তাল মেলালো অপর ব্যক্তিটি।
#চলবে___