#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৫]
_________________
এতক্ষণ যাবৎ যে হাঁসফাঁস ঈশাকে ঘিরে রেখেছিলো তা আর নেই বললেই চলে।তার সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি তাকে আনন্দ দেওয়ার জন্য এই সেই বলে বারবার হাসানোর চেষ্টা করছে।ঈশাও চুপচাপ থাকতে পারে না তিয়াশের বলা খুনশুটি ময় কথাগুলোতে কখনো চাপা স্বরে কিংবা গলা ছেড়ে হেসে উঠে ঈশা।তিয়াশ নামক দারুন ব্যক্তিত্বের ছেলেটি হলো রুমার বন্ধু।রুদবার জন্মদিন অনুষ্ঠানে পরিবার থেকে শুরু করে পরিচিত নানান জনের ভীড় জমেছে।ঈশার একাকিত্ব বুঝতে পেরে রুমা তিয়াশকে জানিয়ে দেয় ঈশার পাশাপাশি থাকতে এখানে অবশ্য তিয়াশও একা বলা চলে।
তাদের এই আনন্দ সহ্য হচ্ছে কারো কাছে। যার সারা শরীরে বিদ্যুতের ন্যায় খানিক বাদে বাদে জেদরা লাগামগীন ঝলকে উঠছে।হাতের মুঠোয় থাকা গ্রিপ বলটা দুমড়ে মুচড়ে নিজের রাগ সংযত করতে ব্যস্ত।চোখের দৃষ্টি সীমাবদ্ধ ঈশার মাঝে।মেয়েটার প্রতি তার সীমাহীন জেদের পরিণাম কী হবে জানা নেই তার নিজেরো।
“ঈশান মেয়েটাকে আর নজর দিস না, মেয়েটার গায়ে ফোসকা পড়ে যাবে।।”
রাসেলের আফসোস সুরের কথায় মনোযোগ ক্ষুণ্ণ হলো ঈশানের।চোখ সরিয়ে বেশ আগ্রহ নিয়ে তাকালো রাসেলের পানে।
” ফোসকা পড়বে কেন?”
” কুদৃষ্টির প্রভাবে।”
রাসেলের মজা নেওয়াটা মোটেও পছন্দ হলো না তার।বরং তীব্র রাগে জ্বলে পুড়ে ছারখার অবস্থা।
” কিসব ফা;লতু কথা বলছিস?”
” সিরিয়াস হচ্ছিস কেন?আমি তো মজা করছিলাম।”
” তোর মজাটাই ফালতু ছিল।”
ঈশানের রাগটা প্রবল হলো।তিয়াশ ছেলেটাকে এই মুহূর্তে তার বিষের ন্যায় লাগছে।ভেবেছিল ঈশাকে একা পেয়ে শায়েস্তা করবে কিন্তু তিয়াশ যে তার সঙ্গী হবে কে জানতো?
রাত নয়টা নাগাদ কেক কাটা শেষ হলে বাচ্চাদের আনন্দ শেষে রাতের খাওয়ার পরিবেশন করা হয়।ঈশা এবং তিয়াশ এক সাথে এক টেবিলে বসে খাওয়ার শুরু করে।ঈশার খাওয়ার মাঝে তিয়াশ এটাসেটা এগিয়ে দিচ্ছিল ঈশান দূর থেকে সবটা পরখ করছিল।ভেতরে ভেতরে জেদটা তার বাড়তে লাগলো এখন শুধু অপেক্ষা ঈশাকে কখন একা পাওয়া যাবে।
খাবার শেষে হাসিন ফোন করায় ছাদের দিকে রওনা হলো ঈশা।ভেতরের ঘরে কোলাহলে শান্তিতে দু’দন্ড কথা বলার সুযোগ নেই।ছাদটা অল্প সল্প ফেইরি লাইটে বেশ সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে।হালকা আলোয় আলোকিত ছাদে কারো অস্তিত্বের দেখা মিললো না।তাই নিশ্চিন্ত মনে ঈশা একা একাই ছাদে কথা বলতে থাকলো হাসিনের সাথে। এত রাতে বাড়ির বাইরে থাকায় ভীষণ রেগে আছে হাসিন।আদুরে ভাইটাকে বোঝাতে বোঝাতে কেটে গেল বেশ খানিকটা সময়।হঠাৎ ওপাশ থেকে সাড়া শব্দ মেলে না।চক্ষুদ্বয়ের সামনে ফোন তুলতে বিরক্তে মুখ কুচকে গেল ঈশার।
” দূর চার্জ এখনি শেষ হতে হলো।”
ঈশার পেছনে এসে নিশ্চুপ দাঁড়ায় ঈশান।সুযোগ এখনি এমন সুযোগ হয়তো আজকের দিনে সে পাবে না।তাই যে ভাবা সে কাজ।ছাদে থাকা চিলেকোঠার ঘরের দুয়ার তখন খোলা ছিল।অন্ধকার আচ্ছাদিত চিলেকোঠার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসলো ঈশান।এই মুহুর্তে তাকে কী করতে হবে সবটা পরিকল্পনা করা শেষ।মোবাইল বন্ধ হওয়ায় আপনাআপনি বকতে বকতে ঈশা যখনি ঘুরে তাকাবে তখনি তাকে কেউ ধ্বাক্কা দিয়ে চিলেকোঠার ঘরে প্রবেশ করায়।
ঈশান বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে নিশ্চিন্ত মনে ছাদ থেকে নিচে নেমে যায়।
অতিথিরা চলে যেতে শুরু করেছে ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে এলো ঘরটা।বিশেষ পরিচিত কাছের আত্মীয় ছাড়া কাউকে আর উপস্থিত দেখা গেল না।তিয়াশ এতক্ষণ যাবৎ রুদবাকে নিয়ে গেমস খেলছিল ঈশার কথা মাথায় আসলেও রুমার সাথে আছে ভেবে নিশ্চিন্ত ছিল।সোফায় বসে চাপা কণ্ঠে সুরে সুরে গান গাইছিল ঈশান।হাতে থাকা ফোনটা বেহুদা স্ক্রুল করে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছে।রাসেল তিয়াশের সাথে টুকটাক কথা বলে বসে যায় ঈশানের পাশে।
” কিরে ঈশা মেয়েটাকে দেখছি না কেন?”
রাসেলের প্রশ্নে ক্ষীণ হাসে ঈশান।
” তার দায়িত্ব কী আমার কাছে?আমি জানবো কী করে?”
” তুই আবার কিছু বলেছিস তাকে?মেয়েটা হঠাৎ কোথায় গায়েব হলো।”
” চুপ কর এই মেয়ের ব্যপারে কথা বলতে আমার রুচিতে বাধে।”
রাসেল আর কথা বাড়ালো না।সেন্টার টেবিলে থাকা পপকর্নের ঝুড়ি থেকে মুঠো ভরতি পপকর্ন নিয়ে মুখে ছুড়লো।ঈশানকে দেখে মনে হচ্ছে সে বেশ খুশি।হঠাৎ ঈশানের এত কিসের আনন্দ?বড্ড চিন্তায় ডুবে গেল রাসেল।
রান্না ঘরের দিকটা সামলাতে সামলাতে ঈশার কথা বেমালুম ভুলে বসে আছে রুমা।পাশে থাকা ফোনটা বেজে উঠতে ঈশার বাবার নাম্বার দেখে দ্রুত ফোন রিসিভ করেন রুমা।
” আঙ্কেল বলুন।”
” ঈশা মা কোথায়?ফোন বন্ধ বলছে।”
” রুদবার সাথে আছে আঙ্কেল আপনি চিন্তা করবেন না।”
” রাত বারোটা বেজে গেছে আমি আসছি তাকে এসে নিয়ে যাব।”
” এতদূর আপনাকে কষ্ট করে আসতে হবে না আঙ্কেল, আমাদের ড্রাইভার তাকে পৌঁছে দেবে।আমি বরং এক্ষুনি তাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
” ঠিক আছে মা নিশ্চিন্ত হলাম।”
ফোন রেখে বসার ঘরে উপস্থিত হলেন রুমা।ঈশাকে না দেখতে পেয়ে খানিকটা বিচলিত হয়ে পড়েন।তিয়াশের কাছে জানতে চায় ঈশার কথা তিয়াশ জানেনা বলে নিজেও চমকে যায়।রুমা দ্রুত সারা বাড়ি ঈশাকে খুঁজতে থাকে ঘরের কোথাও ঈশা নেই তিয়াশ একবার ছাদেও চেক করে আসে কিন্তু ঈশা নেই।যে কেউ দেখলে ভাববে ঈশান এতক্ষণ গেমস খেলায় মগ্ন ছিল কিন্তু কেউ তো জানে না ঈশান সবার হাঁসফাঁস দেখে আনন্দ পাচ্ছে বিশেষ করে তিয়াশের।হাতে থাকা গেমসের মোবাইলটা পাশে রেখে চিন্তিত সুরে বলে,
” রুমা তোমার চেহারা এত চিন্তিত লাগছে কেন?”
ঈশানের প্রশ্নে ভ্রু কুচায় তিয়াশ এই ছেলেটা কি এতক্ষণ কিছুই পরখ করেনি?আবার প্রশ্নের থালি নিয়ে বসেছে।
” ঈশাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ভাই।”
” খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না?কী বলো তাকে তো দেখলাম কানে ফোন নিয়ে গেট দিয়ে বেরিয়ে যেতে।”
” তুমি শিউর ভাই?”
” হ্যা আমি স্পষ্ট দেখেছি।”
রুমা সন্দিহান চোখে তাকিয়ে রইলো মেঝেতে।তাকে না বলে ঈশা এখান থেকে কেন যাবে?তাছাড়া ঈশার পার্স তার আলমারিতে।মেয়েটা যেতে নিশ্চই ভাড়ার প্রয়োজন হবে কিন্তু পার্স তো তার কাছে।
” না ঈশা যায়নি ঈশার পার্স আমার কাছে।”
চমকে উঠলো তিয়াশ।রুমা ঈশার দায়িত্ব তার কাছে দিয়েছিল অথচ মেয়েটা লাপাত্তা মনে মনে অপরাধবোধ হলো তার।
” রুমা তোর বাড়ির আশেপাশে ঈশাকে খোঁজা উচিত।”
তিয়াশের কথায় সম্মতি জানান রুমা। তৎক্ষণাৎ সবাই মিলে ঈশাকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে।একমাত্র ঈশান পায়ের উপর পা তুলে পুণরায় গেমস খেলতে থাকে।রাসেলের সন্দেহ অবশেষে সত্যি হয়েছে ঈশান নিশ্চই ঈশার কিছু করেছে।
” ঈশান সত্যি করে বল ঈশা কোথায় রাত হয়ে গেছে মেয়েটার বাড়ি ফেরা উচিত।”
” তুই আমাকে এসব জিজ্ঞেস করছিস কেন?”
” আমি জানতে চাই ঈশা কোথায়?”
” ঈশা জীবন কইরা দিলো আঁধার দুনিয়া,
ঈশা ঈশা কইরা একদিন যাবো মরিয়া। ”
ঈশানের গানে রাগান্বিত চোখে তাকালো রাসেল।রাসেলের হাহুতাশে ঈশান বেশ মজা পাচ্ছে।ঈশান তার বেসুরা গলায় গানের সুর তুলে। তার কর্মকান্ডে প্রচন্ড বিরক্ত হয় রাসেল।এই মুহুর্তে এই আধা পা/গলের সাথে ঝগড়া করার চেয়ে ঈশাকে খোঁজা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
১১.
চিলেকোঠার ঘরটায় এতটাই অন্ধকার ভয়ের চোটে ঈশার দম বন্ধ হওয়ার অবস্থা।বেশ কয়েক মাস এই ঘরটি বন্ধ ছিল তাইতো অপরিষ্কার কক্ষে বাসা বেধেছে মাকড়াসা,তেলাপোকা সহ অনন্য ছোট পোকা। উড়ন্ত তেলাপোকা গুলো কিছুক্ষণ পরপর উড়ে উড়ে এপাশ থেকে ওপাশে ফিরছে।কয়েকটা তেলাপোকা আটকে গেছে ঈশার চুলে।এই কক্ষের বিদঘুটে পরিস্থিতি থেকে নিজেকে বাঁচাতে বেশ কয়েকবার চ্যাঁচামেচি করেছে সে, কিন্তু লাভটা হলো কী?বাড়ির ব্যস্ত সদস্যরা কেউ শুনতে পেলনা ঈশার চিৎকার।জন্মদিনের আয়োজন যেখানে করা হয়েছে সেখানে বেশ জোরে গান চলছিল হয়তো তাই কেউ শুনেনি।ঈশান যখন চিলেকোঠার দরজা বন্ধ করছিল সেখানে চিলেকোঠার ঘরে একটি বিড়াল ছিল।ঈশানের ফাঁদে পড়ে বেচারা বিড়াল মশাই কক্ষে বন্দি হয়ে যায়।বিড়ালটি অন্ধকার কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে বেশ কিছুক্ষণ লাফালাফি করেছি।কিন্তু লাভ হলো কী?ঈশার চিৎকারে বিড়ালটি আরো দ্বিগুণ ভয় পেয়ে যায়। যার ফলে বিড়ালটি ঈশাকে আক্রমণ করতেও দ্বিরুক্তি করেনি।বিড়ালের আঁচড় থেকে নিজেকে বাঁচাতে চেষ্টা করেছিল ঈশা কিন্তু লাভ হলো না।হাতে পায়ে বিড়ালের আঁচড়ে শরীরের জ্বালা ক্রমশ বাড়ছে।সবাইকে ডাকতে ডাকতে ক্লান্ত দেহটা ছেড়ে দিল দরজার পাশে।অতিরিক্ত আতঙ্কে কাপুনি ধরে গেল তার শরীরে তৎক্ষণাৎ উগরে ফেললো পেটের সকল খাদ্য কণা।
#চলবে___
❌কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ❌