#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩৯খ]
___________________
” আসার সময় আমাকে ফোন করে দিও আমি নিয়ে যাব তোমায়।”
” আমি একা যেতে পারবো আপনি আপনার কাজে মন দিন।”
” তা বললে তো হয় না।আমি যখন বলেছি নিয়ে যাব তখন যাবই।”
ঈশা কথা বাড়ালো না।ঈশানের ঝাকড়া চুলে এলোমেলো হাত বুলিয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লো অনেকদিন পর ভার্সিটি এসেছে সে।সবকিছু কেমন কেমন লাগছে।অনু অদূরে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে তাদের পানে।আচ্ছা মেয়েটার কী মন খারাপ?চঞ্চল অনুর মাঝে কোন ভাবাবেগে নেই অদ্ভুত!
” নাও এই আঙুল দুটো।”
ঈশান অতি সত্বর দু’আঙুল ছুঁয়ে দিল ঈশার ঠোঁটে।মেয়েটা ভ্রু কুচকে তাকাতে ঈশান লাজুক হাসে।
” কিসি দিয়ে দিলাম।”
” মানে?”
” ওসব বুঝবে না এবার যাও।”
ঈশা হাসলো ঈশানকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো অনুর কাছে।মেয়েটার শুকিয়ে যাওয়া মলিন মুখ দেখে শুধালো সে,
” তোর বিয়ে ঠিক হচ্ছে বিয়ে তো আর হয়ে যাচ্ছে না।তুই তো এখনি চিন্তায় ম রে যাবি দেখছি।”
” আমি চিন্তা করবো না তো কে করবে?রাসেল এই সম্পর্কে সিরিয়াস না আমি জীবনে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি।”
” রাসেল ভাইয়া সিরিয়াস না?তুই এই কথা ধারণায় আনলি কেন?”
” সে ভাবছে আমি মজা করছি কিন্তু এবার আব্বু বিয়ে নিয়ে পড়েছে আব্বুর সম্মতি মানে বুঝতে পারছিস?রাসেলকে যতবার বলেছি তার সেই এককথা বিয়ে আটকাও নিজে চেষ্টা করো আমি এখন বাড়িতে কিছু বলত পারবো না কয়েকদিন আগে ঈশানের বিয়ে গেলো তা নিয়ে ঝামেলা এখনো চলমান।আমি কি করি বলতো? ”
” এত চিন্তা করিস না আমি আছি তো চল ক্লাসে যাই।”
ঈশা ক্লাসে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো তখনি গেট দিয়ে দৌড়ে প্রবেশ করলো দিহান।পেছন থেকে ঈশার চুল টেনে তাদের মুখোমুখি দাঁড়ায় সে।
” এই চুন্নি বিয়ে করে ভুলেই গেছিস আমি তো ভেবে নিয়েছিলা আর আসবি না।”
” কেন আসবো না?তোর কি অবস্থা?মীরা কেমন আছে?”
” মীরা ওর আন্টির বাড়ি গেছে আমি ভালো আছি।আজ চল ক্লাস না করে একটু ঘুরে আসি অনেকদিন হলো তিনজনের আড্ডা দেওয়া হচ্ছে না।”
” না না আজ যাওয়া যাবে না।ঈশান বলেছিল তার অফিস যেতে আমি যাইনি বলেছি আজ গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস আছে এখন যদি সে জানে আমি বাইরে গেছি নির্ঘাত ঝামেলা পাকিয়ে দেবে।সবচেয়ে বড় কথা আমায় নিতে আসবে।”
” ছুটির আগে চলে আসবি চল তো এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই।অনুকে দেখছিস না মেয়েটার মুখ শুকিয়ে এইটুকুনি হয়ে গেছে এখন আমাদের চিল করা প্রয়োজন।তুই যদি এখন বারণ করিস তবে ভেবেই নিব বিয়ের পর সত্যি সবাই পর হয়ে যায়।”
ঈশা দ্বিতীয় বার বারণ করার সুযোগ পেল না মনে ভয় নিয়ে চললো সে।
১০০.
মুজাহিদ হাসান অফিসে বেরিয়ে গেছেন।এদিকে বাড়িতে ঈশাও নেই সম্পূর্ণ বাড়িটা ফাঁকা।এই মুহূর্তে হাতে কোন কাজও নেই তাই তো টিভি নিয়ে বসলেন সুলতানা।কিয়ৎক্ষণ বাদে বেজে উঠলো ডোর বেল।তড়িঘড়ি করে দরজা খুলতে দেখতে পেলেন একজন অর্ধ বয়স্ক মহিলাকে যার পাশে দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে।
” আপনারা?”
” আমি ঈশানের ফুফু আর এ হলো আমার মেয়ে লিজা ঈশানের কাজিন।”
সুলতানা দ্রুত দরজা থেকে সরে গেলেন হাসি মুখে বললেন তাদের ভেতরে প্রবেশ করতে।লিজা মনমরা হয়ে প্রবেশ করলো লিপির পিছু পিছু।মায়ের এসব কূটকর্ম তার মোটেও ভালোলাগে না একবার যদি ঈশানের সাথে সত্যি সত্যি তার বিয়ে হয়ে যায় তবে কী হবে?
” আপনারা দাঁড়িয়ে কেন বসুন।”
সুলতানা দ্রুত গেলেন রান্না ঘরে টুকটাক নাস্তা নিয়ে ফিরলেন বসার ঘরে।
” এত আয়োজন করবেন না।দয়া করে আমরা যে এসেছি এই কথা করে কাউকে বলবেন না।”
লিপির কথায় ভ্রু যুগল কুচকে যায় সুলতানার।তিনি জহুরি চোখে একবার পরখ করলেন লিপি এবং লিজাকে।
” বলবো না কেন?”
” আমরা এসেছি আপনাকে সতর্ক করতে আপনার যেমন একটা মাত্র মেয়ে আমারো একটাই মেয়ে।মেয়েটাকে ছোট রেখে আমার স্বামী মারা যান তার পর থেকে আমার জীবন যুদ্ধ শুরু।”
আবেগে আপ্লুত হলেন সুলতানা।লিজার দিকে তাকালেন সহানুভূতি দৃষ্টিতে।তবে মস্তিষ্কে হানা দিলো একটি প্রশ্ন,’ঈশানের ফুফু কি সতর্ক করতে এসেছেন?’চিন্তা না বাড়িয়ে লিপিকে ঝটপট প্রশ্ন করলেন তিনি।
” সতর্ক করার ব্যপারটা ঠিক বুঝলাম না।”
” আমাকে আপনি বিশ্বাস করবেন না হয়তো।আজ থেকে কয়েক বছর আগে ঈশান যখন দেশের বাইরে ছিল পরিবার সহ তখন আমরাও তাদের সাথেই ছিলাম।ঈশান আর লিজা একই ক্লাসে পড়ে তাই তাদের বনিবনা খুব ভালো।কিন্তু ঈশান একদিন সুযোগ বুঝে আমার মেয়েকে….”
চোখের পলকে কেঁদে ফেললেন লিপি।তার ন্যাকা কান্না দেখে লিজা আহাম্মক বনে গেল তার মা এত ভালো অভিনয় পারে,বাহ!সুলতানা ঢোক গিললেন ঈশানের বাবা রাজীবকে একই কথা বলেছে কিন্তু এসব তো অস্বীকার করেছে ঈশান আর তাকে ঠিক কোন কথার ভিত্তিতে মুজাহিদ হাসান এবং ঈশা বিশ্বাস করেছে তার জানা নেই।কিন্তু এখন কলিজাটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।নিজ হাতে মেয়ের বলিদান দিয়ে দিলেন না তো?
” যা ছিল তা অতীত এখন কি আর করবেন।”
” আপনিও এই কথা বলছেন ঈশান সুবিধার না দেখবেন একবছর না যেতে আপনার মেয়েকে অত্যাচার করে বাড়ি থেকে বের করে দেবে।ওর ভালো মানুষের লেবাস ধরে থাকা রূপটা তখন আপনারা বুঝতে পারবেন।”
” আমরা আমাদের মেয়েকে সেচ্ছায় ওবাড়ি পাঠায়নি ঈশান বাধ্য করেছে এখন আমার মেয়েকে নিয়ে আমি কি করবো?”
“লিজার সাথে ঈশানের বাবা সেদিনের পর বিয়ে ঠিক করেছিলেন কিন্তু এই ছেলে দেশে এসে সবটা অস্বীকার করলো আমার মেয়ের জীবনটা ধ্বংস করে ছেড়েছে।আপনি আপনার মেয়ের জীবন এভাবে শেষ করে দেবেন না।”
” তবে এবার আমি কী করবো?”
১০১.
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল ঈশানের কথা বেমালুম ভুলে বসেছিল ঈশা।তাকে নেওয়ার জন্য ঈশানের আজ আসার কথা থাকলেও সে আসতে পারবেনা বলে জানিয়ে দেয়।এতে অবশ্য বেঁচে গেল ঈশা সে আরো কিছুটা সময় বন্ধুদের সাথে থাকতে পারবে বলে খুশি হয়।সবার আড্ডার মাঝে অনুর বাড়ি থেকে তার মা ফোন করেন এবং দ্রুত বাড়ি আসতে বলেন।অনু রিক্সা নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে চলে যায় দিহান সিদ্ধান্ত নেয় ঈশাকে তার শ্বশুর বাড়িতে ছেড়ে আসবে কিন্তু মেয়েটা নাছোড়বান্দা সে একাই যাবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়।বাধ্য হয়ে দিহান তার রাস্তায় চলে যায়।ঈশা রিক্সা না নিয়ে হাটতে শুরু করে কিয়ৎক্ষণ পর রিক্সা নেবে এখন তার হাটতে মন্দ লাগছে না।
” ঈশা।”
পেছন থেকে পরিচিত কণ্ঠে থমকে গেলো মেয়েটা।পেছনে ঘুরতে অয়নকে দেখতে পেয়ে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।
” অয়ন ভাই।”
” এই রাস্তায় কি করছিলে?”
” বন্ধুদের সাথে এসেছিলাম ওই রেস্টুরেন্টটাতে।”
” তা তো দেখেছিলাম।আমিও ওখানেই ছিলাম।”
” ওহ।”
” সুখে আছো তাই না?”
” আপনারা বিয়েতে আসলেন না যে?”
” আসার মত কোন মুখ রেখেছো?ঈশানের কাছে তবে বেশ ভালো আছে সুখে আছো।”
অয়নের কথায় প্রত্যুত্তর করার প্রয়োজন বোধ করলো না ঈশা।সে কথা ঘুরিয়ে বলে,
” আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে আমি বরং যাই।”
ঈশা বড় বড় পা ফেলে হাটতে শুরু করে।নিরিবিলি রাস্তায় ঈশাকে একা পেয়ে মনের ভেতরে ক্ষোভটা ক্রমশ বাড়তে থাকে অয়নের।দ্রুত এগিয়ে ঈশার হাত ছুঁয়ে দিলো অয়ন।জোর কসরত করেও তার বন্ধনী থেকে মুক্তি পেল না ঈশা।
” অয়ন ভাই কি হচ্ছে কি ছাড়ুন।”
” আমার বাড়ি চলো।”
” আমি কেন আপনার বাড়ি যাব ছাড়ুন হাত।ঈশান দেখলে আপনার… ”
” ওই পা গ লটার ভয় আমায় দেখাও?পাইনা আমি ওঁকে ভয়।খুব তো বেশি ভালোবাসে তোমায় তাই না?আজকের পর এই ভালোবাসা কোথায় যায় আমিও দেখতে চাই।”
অয়ন কি বোঝাতে চাইছে তা ঈশার বুঝতে বেশি সময় নিলো না।মন বলছে নিজেকে বাঁচানো প্রয়োজন আর তাই তো অয়নের পায়ে আঘাত করে ঈশা সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে দৌড়াতে থাকে।তার পিছু পিছু ছুটতে থাকে অয়ন।মোড় কাটানো রাস্তায় ছুটতে হঠাৎ একটি সিএনজির মুখে পড়ে ঈশা।কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে সে দাঁড়িয়ে পড়ে ড্রাইভার ব্রেক কষার সাথে সাথে রাস্তায় উলটে পড়ে ঈশা।অয়ন পৈশাচিক হাসি দিয়ে ঈশার কাছে আসতে হঠাৎ সিএনজি থেকে নেমে আসে একটি ছেলে।
” ভাবী আপনি ঠিক আছেন?”
পিচ ঢালা রাস্তায় ঈশার হাত পায়ের বেশকিছুটা অংশ ছিলে গেছে।হৃদয়ের গোচরে রক্তের দেখা মিললে ঢোক গিললো সে ঈশান জানলে কি হবে!
” ওই ছেলেটা আপনাকে তাড়া করছিলো?”
” হ..হ্যা।”
শ্বাস আটকে আসছিলো ঈশার এতক্ষণ যাবৎ দৌড়ানোর ফলে হাঁপিয়ে উঠেছে।তার সাথে সাথে ভয়ে আড়ষ্ট সে, অপরদিকে কেটে যাওয়ার ফলে হাতে পায়ের জ্বালা ক্রমশ বাড়ছে।
অয়ন হৃদয়কে দেখে এক ছুটে পালিয়ে যায়।যদিও সে চিনতে পারেনি হৃদয়কে তবে ঈশাকে ভাবি ডাকতে বুঝতে বাকি নেই ছেলেটা ঈশানের লোক।হৃদয় অয়নকে কিছুটা তাড়া করে থেমে যায় বিশ্রি কয়েকটা গালি দিয়ে বলে,” স্যারকে সেদিন বলেছি শেষ করে দিতে শুনলই না আমার কথা।”
ঈশার চোখের কোনে জল জমেছে।হৃদয় ঈশাকে গাড়িতে উঠতে অনুরোধ করে কিন্তু ঈশা চেনে না,জানে না অপরিচিত একটি ছেলের গাড়িতে কখনোই সে উঠবে না।বাধ্য হয়ে হৃদয় ফোন করলো ঈশানকে।ঈশানের নির্দেশে হৃদয়ের সঙ্গে সিএনজি করে হসপিটাল অবধি এলো ঈশা।
.
ঈশার হাতে পায়ের কিছুটা অংশে ব্যান্ডেজ করা হসপিটাল থেকে কিছুক্ষণ আগে ফিরেছে তারা।ঈশান গোসল সেরে বসলো ঈশার পাশে তার চেহারা দেখে ঈশা বুঝে নিয়েছে ছেলেটা বেজায় রেগে আছে।কিন্তু ঈশার মনের কোণে ভয় জমেছে যদি ঈশান জানতে চায় সে ওই রাস্তায় কি করছে বিকাল বেলায় তবে কী জবাব দেবে?ঈশান তো জানে সে ভার্সিটি থেকে বাড়ি ফিরেছে।অনাবৃত দেহে টি-শার্ট জড়ালো ঈশান।ভেজা চুলে হাত বুলিয়ে তাকালো ঈশার মুখোমুখি।ঈশার ভয়ার্ত চাহনিতে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো সে।ঈশার ঠোঁটের কোনে চুমু খেয়ে সন্দিহান স্বরে বলে,
” ভয় পাচ্ছো কেন জান?আমি ছাড়া এখন তো কেউ নেই।”
” ভ..ভয় পাব কেন।আমি ভয় পাচ্ছি না।”
“তাই নাকি?তুমি বুঝতে পারছো আমি ভীষণ রেগে আছি?”
” হ্যাঁ বুঝতে পারছি।”
” কেন রেগে আছি বলতো।”
” অয়ন ভাইয়ের কাজে।”
” আমি সেই কারণে এতটা রেগে নেই।ব্যপারটা অন্য কিছু।”
ঈশান পুনরায় ঈশার ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ালো।ঈশানের এমন রহস্যপূর্ণ কথার ভাজে ভয়ে জমে যাচ্ছে ঈশা।ঈশানের অবাধ্য ছোঁয়া ঠেকলো ঈশার গ্রীবায় হঠাৎ ব্যথার চিলিক দিতে ঈশানকে দু’হাতের সাহায্যে সরিয়ে দিলো সে তাতে অবশ্য ঈশান মিহি হাসে।ঈশার খোলা চুলে হাত বুলিয়ে হঠাৎ জোরে চেপে ধরে ঈশান ছেলেটার কান্ডে ঘাবড়ে যায় ঈশা। কিছু বুঝে উঠার আগে তার থেকে দূরত্ব নিয়ে বসে পড়লো ঈশান।
” আমার রাগ, আমার রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না ঈশা।তুমি আমায় মিথ্যা বলেছো অন্ধের মতো বিশ্বাস করি তোমায়।আমি দুপুর পর্যন্ত ভেবে নিয়েছি তুমি ক্লাসে ছিলে বলেছিলাম গাড়ি পাঠিয়ে দি ড্রাইভার বাসায় পৌঁছে দেবে তোমায়।তুমি বললে যেতে পারবে, ছুটির পর একটু দিহান অনুর সাথে সময় কাটাবে আমি বারণ করিনি ভেবেছিলাম ঠিকঠাক ভাবে বাসায় চলে যাবে।তিনটায় তোমায় ফোন দিলাম তুমি বললে বাসায় ফিরেছো,আম্মুকে ফোন দিলাম আম্মুও মিথ্যা বললো কেন বললো আমি তো জানি তুমি শিখিয়ে দিয়েছো।আর হৃদয় যখন ফোন করলো তুমি রাস্তায় তখন আমার কেমন লেগেছে জানো?এখন খোঁজ নিয়ে জানলাম মহারানী আজ ক্লাসেই জাননি।আমার সাথে এত মিথ্যা নাটক করার কী দরকার ছিল ঈশা?আমি বিশ্বাস করি তোমায় আমার বিশ্বাসের এই দাম দিলে?”
ঈশা থমকে গেলো পিটপিট চোখে তাকালো ঈশানের দিকে।চোখে চোখ রাখতে অপরাধবোধে নিংড়ে যাচ্ছে সে।তার চাহনি দেখে ঈশানের ভেতরের জ্বালা বাড়লো।হাত টেনে দাঁড় করালো মেঝেতে।ঈশার হাতে পায়ের ব্যান্ডেজে চোখ বুলিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
” কতখানি আঘাত লাগলো আজ যদি হৃদয় না থাকতো তবে কী হতো?এই উত্তর দাও কী হতো?”
” ঈশান সরি আমি আর…”
” চুপ।একদম চুপ সরি দিয়ে কোন সমাধান হয়েছে আর না হবে।অয়ন ছুঁয়েছে তোমায় তাই না?বলো কোথায় ছুঁয়েছে,বলো কোথায় কোথায়?কথা বলছো না কেন?”
ঈশান বেসামাল হয়ে উঠলো ঈশার হাতে পায়ে জহুরি চোখে দেখতে নিলে ঈশা ঈশানের হাত চেপে ধরে।
” আমি তোমার কথায় নিজেকে স্থির রেখেছি কিন্তু অয়ন যা করেছে তার মূল্য তাকেই চুকাতে হবে।”
“ক.. কি করবেন আপনি?”
” এই ব্যপারে তোমার সাথে কোন আলোচনা করতে আমি ইন্টারেস্ট নই।আগে বলো অয়ন তোমায় কি বলেছে?”
” আমি ভুলে গেছি।”
” কি আরেকবার বলো।”
” আ…আমি ভুলে…”
ঈশান ঈশাকে ছেড়ে দাঁড়ালো।মেঝেতে রাখা আর্টিফিশিয়াল গাছের বড় টবটা হাতে তুলে ছুড়ে ফেললো মেঝেতে।ঈশা ভয়ে ছিটকে দাঁড়ালো দেয়ালের কাছে।ঈশানের রাগি চাহনিতে এতদিনের আদুরে ঈশানকে খুঁজে পেলনা ঈশা।ছেলেটার রাগটা প্রবল ভাবে বেড়েছে।ঈশাকে গলা তুলে বলে,
” এই তুমি দূরে কেন?কাছে আসো আমার রাগটা বেড়েছে।তোমায় না পেলে আরো বাড়বে।কাছে আসো।”
” না না।”
” আসবে না?”
” না।”
ঈশান একে একে হাতের কাছে যা পেয়েছে ভেঙেছে।এই ছেলেকে এবার অন্তত থামানো দরকার তড়িঘড়ি করে ঈশা এগিয়ে আসতে ঈশান একটি শোপিস ছুড়ে মা রে অসাবধানে শোপিসটি পড়ে যায় ঈশার পায়ে।তৎক্ষণাৎ চামড়া ফেটে বেশ অনেকটা দেবে কেটে যায় ঈশার পা।ঈশার পায়ে রক্ত দেখে ঈশান ঘাবড়ে গেলো ঈশার কাছে যাওয়ার আগে দরজায় করাঘাতের শব্দে ধ্যান ফিরলো।দরজা খুলতে ঈশানকে বকতে বকতে কক্ষে আসেন মাহমুদা।সেই সাথে রাসেল তো আছেই।ঈশা তাজ্জব বনে তাকিয়ে আছে সবার দিকে তার পা কেটে রক্ত বের হচ্ছে এখন তার কী করা উচিত?কিংকর্তব্যবিমূঢ় সে।
” ঈশারে তোর পায়ে..”
মাহমুদা থেমে গেলেন ঈশানের দিকে নজর বুলাতে চেচিয়ে বলেন,
“জা নো য়ার তুই এমন করেছিস তাই না?আমি বলেছিলাম ফুলের মতো মেয়েটাকে তুই ভালো রাখবি না।আমি ভুল করেছিলান জেনে শুনে তোর মতো দজ্জালের হাতে এই মেয়ের জীবন বেঁধে দিয়ে।”
সম্পূর্ণ মেঝে কাঁচে ভরতি বিধায় ঈশান বিছানার উপরে উঠে ঈশার কাছে গেলো।একদিনে ঈশার এতগুলো আঘাত ঠিক হজম হচ্ছে না কি করবে কি বলবে তার মাথায় আসছে না।রাসেল জহুরি চোখে ঈশার পা দেখে বলে,
” বাসায় রেখে কাজ নেই পায়ের কাটা অংশ সেলাই করতে হবে।”
” বেশি বউ বউ করেছিস তোর বউ বউ করা দেখছি আমি দাঁড়া।”
মাহমুদা ভীষণ ক্ষেপে গেলেন ঈশান কি করবে ভেবে পেল না। দ্রুত হাতে ঈশাকে কোলে তুলে নেয় যাওয়ার জন্য উদ্যত হলে তার আগে বাঁধা দিলেন মাহমুদা।
” ঈশার মায়ের অসুখটা বেড়েছে এক্ষুনি ঈশাকে নিয়ে যেতে বলেছে ঈশান।আমি তো সেই কথা বলতেই এলাম তারপরে শুনলাম ভাঙাচুরের শব্দ।”
ঈশা আঁতকে উঠলো ঈশানের কলার টেনে বলে,
” পায়ে কিচ্ছু করতে হবে না আমি হসপিটাল যাব না। আমাকে আমার বাসায় রেখে আসুন ঈশান।”
.
রাত প্রায় দশটার কাছাকাছি হসপিটাল থেকে ঈশাদের বাড়িতে এসেছে ঈশান।মেয়েটার পায়ে তিনটে সেলাই লেগেছে।ঈশার হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ দেখে বুকটা ধক করে উঠলো মুজাহিদ হাসানের।আগের মতো ঈশানের ঠোঁটের কোণে হাসি নেই কেমন মলিন চেহারা।ঈশার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে বড্ড দেরি হয়ে যাচ্ছিলো তাই সময় মতো সুলতানাকে ওষুধ খাইয়ে দিলেন মুজাহিদ হাসান।সুলতানা গভীর ঘুমে মগ্ন ঈশা তার মায়ের কাছে যাওয়ার আগে ঈশাকে পরখ করলো তার বাবা।
” তোমার কি হয়েছে ঈশা?হাতে পায়ে এত আঘাত লাগলো কী করে?”
” আমি একটা ভু….”
ঈশান সত্যিটা প্রকাশ করতে চেয়েছিলো কিন্তু ঈশানের কথা শেষ হওয়ার আগে ঈশা দ্রুত বলে,
” বাবা এক্সিডেন্ট করেছিলাম।ভার্সিটি থেকে আসার পথে রিক্সা থেকে উল্টে পড়ে যাই।”
ঈশান অবাক চোখে তাকালো ঈশার দিকে।আর সেই চাহনি দেখে সন্দেহের বাতি জ্বললো মুজাহিদ হাসানের মনে।নিশ্চিয়ই মেয়েটা কিছু আড়াল করছে।ঈশানের প্রতি বড্ড রাগ রাগলো মুজাহিদ হাসানের তিনি ঈশানের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলেন,
” সত্য মিথ্যা আমি জানি না।আমার মেয়ে আদৌ এক্সিডেন্ট করেছে কি না আমার সন্দেহ হচ্ছে।তবে ঈশান তোমায় বলছি আমার মেয়ের উপর কোন কারণে বিরক্ত হলে,রাগ হলে,তার প্রতি ভালোবাসা উবে গেলে আমার ঘরের মেয়েকে আমার ঘরে ফিরিয়ে দিও।তবুও তাকে কখনো আঘাত দেবে না,একটা কটুবাক্য শোনাবে না।আমরা যেকোন সময় যেকোন সিদ্ধান্ত গ্রহনে প্রস্তুত আছি।”
বুকের ভেতরটা খা খা করে উঠলো ঈশানের।মুজাহিদ হাসানের প্রতিটা শব্দে ছিলো পরিপূর্ণ রাগ জেদ এবং দৃঢ়তা।তিনি কি ইনিয়েবিনিয়ে ডিভোর্সের কথা তুলেছেন?
#চলবে__