অবাধ্য_বাঁধনে #পলি_আনান [পর্ব সংখ্যা ৯]

0
648

#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৯]
__________________
” সমস্যা তৈরি করতে নয় বরং সমাধান করতে এসেছেন!আপনার কথাটা ঠিক বুঝলাম না ঈশান স্যার।”

ঈশানের নজর সরে এলো মুজাহিদ হাসানের দিকে তাকালেন নরম চোখে।

” আপনার ভাইকে আমরা পেয়েছি।”

মুজাহিদ হাসান সহ ঈশা সুলতানা চমকে তাকান।এতদিন যাবৎ নিখোঁজ থাকা ব্যক্তিতে খুঁজে পাওয়া গেছে!

“তাকে টেকনাফে পাওয়া গেছে। আমার লোক সব বন্দোবস্ত করে তাকে এখানে নিয়ে এসেছে।”

” সে এখন কোথায়?আমাদের আগে খবর দেননি কেন?”

মুজাহিদ হাসান উত্তেজিত হয়ে পড়লেন ঈশা দ্রুত এসে তার পাশে দাঁড়ালো এবং ইশারা করলো শান্ত হতে।

” আমরা তাকে এনে জিজ্ঞেসাবাদ করি আমার টাকার ব্যপারে।তিনি সাতষট্টি লক্ষ টাকা ফিরিয়ে দেন বাকি টাকাটা খরচ ফেলেছেন।”

” বাকিটাকা নেই।”

স্বল্প স্বরে আওড়ালেন মুজাহিদ হাসান।তার বুক থেকে যেন ভারি পাথরটা সরে গেছে।দু -দন্ড শান্তিতে বাঁচা যাবে এবার।

” বাকি টাকা তিনি ফিরিয়ে দেবেন আর আমরাই ফিরিয়ে নেব সেটা যে করে হোক।তবে আপনি এসব বিষয়ে চিন্তা করবেন না টাকা পয়সার ব্যপারে আপনার সাথে আমাদের আর কোন সম্পর্ক নেই,আপনাকে আর হয়রানো করা হবে না।”

মুজাহিদ হাসানের বুক থেকে ভারী পাথরটা আজ সরে গেল,সুলতানার দুচোখ চকচক করে উঠে।সন্তুষ্টর চোখে চাইলো ঈশার দিকে তবে ঈশার কোন প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না মেয়েটা শক্ত চোখে তাকিয়ে আছে ঈশানের দিকে।

” এ বিষয় নিয়ে আপনার সাথে আমার লোক খারাপ ব্যবহার করেছে আমি করেছি।আসলে ভাবতেই পারছেন এতগুলো টাকা..”

” জ্বি আমি বুঝতে পারছি আপনার অবস্থা।”

” আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি আঙ্কেল।যেহেতু অন্যয়টা আমি করেছি সেহেতু ক্ষমা চাইছি। আপনি কী আমাকে ক্ষমা করবেন না?”

” ছিহ ছিহ এসব বলে আমায় লজ্জায় ফেলবেন না স্যার।দোষ আমার ভাইয়ের সাক্ষি হিসেবে তার দায় আমারো ছিল।”

ঈশানের পাশে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ইসমাইল।সেদিনের সেই ত্যাজ,সাহস আজ যেন কোথায় গায়েব হয়ে গেছে।ঈশান তাকালো তার দিকে এবং আদেশ সুরে বলে,

” সেদিনের ব্যবহারের জন্য আঙ্কেলের কাছে ক্ষমা চাও। ”

ঈশানের আদেশ দিতে হয়তো দেরি হলো কিন্তু ইসমাইলের ক্ষমা চাইতে দেরি হলো না।নরম স্বরে হাত তুলে ক্ষমা চাইলো ইসমাইল।ঈশান আড় চোখে একবার তাকালো ঈশার দিকে মেয়েটার চোখমুখ দেখে মনে হচ্ছে না ঈশা খুশি কিংবা সন্তুষ্ট।ঈশানের ভাবনার মাঝে ফোড়ন কাটলো ঈশা।

” এভাবে হয় না মিস্টার ঈশান।সেদিন যে অপমানটা আমাদের করা হয়েছে তার ক্ষত এভাবে তো যাবে না।উনাকে বলুন আমার বাবার পা জড়িয়ে মাফ চাইতে।”

ঈশার কথায় প্রতিক্রিয়া জানালেন মুজাহিদ হাসান।কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঈশাকে বলেন,

” তুমি ভিতরে যাও।তর্ক করো না ঈশা।”

” আমি তর্ক করছি না বাবা আমি আমার মন্তব্য জানিয়ে দিলাম।এবার ঈশান শাহরিয়ার কি করবেন তিনি নিজে ভেবে দেখবেন।”

ঈশান কিঞ্চিৎ হাসলো,ঈশা যে গড়বড় করবে এটা তার ধারণায় ছিল তাই তো ইসমাইলকে ইশারা করা হলো মাফ চাইতে। ঈশানের নির্দেশ মানতে বাধ্য সে তাই তো মুজাহিদ হাসানের পা জড়িয়ে মাফ চাইলেন।

” আঙ্কেল আমরা আসছি আপনার সাথে আমাদের আর কোন বৈরিতা নেই।যেকোন সমস্যায় আপনি আমাকে স্মরণ করতে পারেন আমি অবশ্যই সাহায্য করবো।”

ঈশান বেরিয়ে গেল ঈশা দরজা বন্ধ করার উদ্দেশ্য দরজার কাছে যেতে সিড়ি বেয়ে পুণরায় উঠে এলো ঈশান।ঈশার চোখে চোখ রেখে ক্রূর হেসে বলে,

” মামলা-মোকদ্দমা আপনার বাবার সাথে সমাপ্ত হয়েছে তবে আপনার সাথে নয় মিস ঈশা।মনে রাখবেন,এই ভালো ঈশানের রূপটা আপনার জন্য নয়।”

” ঈশান শাহরিয়ারের ধমকে আমি ভয়ে কান্না করে দিব।এই কেউ আমার চোখের নিচে একটা বালতি ধর আমি কান্না করি।”

ঈশার ব্যঙ্গার্থে শান্ত মেজাজটা অশান্ত হয়ে পড়লো ঈশানের।ঈশানের চোখে মুখে রাগের আভাস ফুটে উঠতে থেকে তাকে টেনে হিঁচড়ে নিচে নামালো রাসেল।

১৯.

একটা সময় বড্ড দুরন্ত স্বভাবের ছিল রাসেল।জীবনে বন্ধু বলতে শুধুমাত্র ঈশান নামক মানুষটাই তার জীবনে ছিল।ঈশান ছোট থেকে বড্ড জেদি আপসহীন ছিল।তার জেদ,প্রখর রাগের সাথে সখ্যতা কেউ করতে চাইতো না তাই তো ঈশানের বন্ধু সংখ্যা শূণ্যর কৌটায়।অপরদিকে রাসেল ঈশানের সাথে মানিয়ে যেত,রাসেলের সিক্রেট বাক্স ছিল ঈশান অপরদিকে ঈশানের ছিল রাসেল।কেউ যদি রাসেলের সাথে বন্ধুত্ব করতে চাইতো কিংবা রাসেল অন্যদের সাথে একটু বেশি সময় কাটাতো বিষয়টা মোটেও হজম হতো না ঈশানের।তার জেদ এতটাই বাড়তো অন্যদের আঘাত করতেও দ্বিধাবোধ করতো না।ঈশানের এসব দুঃসাহসের জন্য অনেকবার প্রধান শিক্ষক তার অভিভাবক ডেকে পাঠায়।সময়টা তাদের এভাবেই কেটে গেল পাঁচ বছর।
স্কুল জীবনের শেষ সময় আকস্মিক অসুস্থতায় রাসেলের মা মারা যান।অপরদিকে মায়ের মৃত্যুর এক মাসের মাথায় তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন।সৎ মায়ের সংসারে ঠাই হলো না তার।রাসেলকে রেখে আসা হলো তার নানার বাড়ি।প্রথম কয়েকদিন ভালো চললেও মামিদের অবহেলায় জীবনটা বিষিয়ে উঠলো তার।একটা সময় তার জীবন ছিল রাজপুত্রের ন্যায় অথচ মায়ের মৃত্যুর পর হয়ে গেল চাকরের মতো।মায়ের অবর্তমান জীবনটা যে এতটা কষ্টের, যন্ত্রণার,অবহেলার,ছোট্ট রাসেল তখন একটু একটু করে বুঝতে শেখে।তার কাছে মনে হয় এই পৃথিবীর আলো,বাতাসে বিষাক্ততা ছড়িয়ে আছে যা তাকে ক্রমশ গ্রাস করছে।

রাসেলের চলে যাওয়ার পর ঈশানের জীবন কঠিন হয়ে পড়লো তার পাগলামি ক্রমশ বাড়তে থাকলো।ঈশানের মা মাহমুদা নিজের ছেলের মতো দেখেছিলেন রাসেলকে।নানার বাড়িতে রাসেলের দুদর্শার কথা জানতে পেরে ছেলেটাকে দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।ভবিষ্য চিন্তা করে রাসেলের পরিবারকে জানিয়ে দেওয়া হয় রাসেলের উপর কোন অধিকার তাদের থাকবে না ভবিষ্যতে।

ঈশানের বাবা থাকতেন দেশের বাইরে।কলেজ জীবনের মাঝামাঝি সময়ে ঈশানের বাবার কাছে তারা চলে যায় এরপরের জীবনটা অন্যরকম ছিল রাসেল কিংবা ঈশানের কাছে।ঈশানের মা বাবা কখনো পর চোখে দেখেননি রাসেলকে তারা সর্বদা নিজের ছেলের মতো আদর করেছেন।তাই তো রাসেলের জীবনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তাদের ছিল এবং আছে।

রাতটা তখন গভীর রাসেল এবং ঈশান দুজনে মুভি দেখার সিদ্ধান্ত নেয়।বেশ মনোযোগ সহকারে দুজনে মুভি দেখছিল এমন সময় ভিডিও কল করলেন মাহমুদা।রাসেলের ফোনে কল করায় ফোনটা রাসেল ধরে।দুজনের মাঝে বেশ কিছুক্ষণ কথা চলে ঈশান পাশেই বসেছিল টুকটাক কথায় সায় জানিয়ে মুভির দিকে মন দেয়।মাহমুদা যে বিশেষ উদ্দেশ্যে ফোন করেন সেই উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে রাসেলকে বলেন,

” রাসেল আন্টি তোমার জীবনের একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আমার সিদ্ধান্তে আশা করি তোমার মত থাকবে।”

“কেন নয় আন্টি?আপনি আমার জীবনের সব সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।”

” আমার একটা মেয়েকে ভীষণ পছন্দ হয়েছে।ঈশান তো বিয়ে শাদি করবে না মনে হয়।সে বিয়ে করুক আর না করুক তাতে আমার কী?তাকে নিয়ে আমি ভাবতে চাই না।তোমার জন্য আমি একটা মেয়ে দেখে রেখেছি।”

” সত্যি?কিন্তু আমি বিয়ে করে নিলে ঈশান একা হয়ে যাবে আন্টি।”

ঈশানের দিকে তাকিয়ে আফসোস সুরে বললো রাসেল।রাসেলের কথা না শোনার ভান ধরে মুভিতে মন দিল ঈশান।

” হোক একা তাতে তোমার কী?তুমি তোমার জীবন নিয়ে ভাববে।মেয়েটাকে আমার ভীষন পছন্দ হয়েছে আমি তোমাকে ছবি পাঠাচ্ছি চেক করো।”

দ্রুত হাতে ল্যাপটপ অন করলো রাসেল।মাহমুদার পাঠানো ছবিটি চেক করতে হঠাৎ জেন আকাশ থেকে পড়লো রাসেল।

” আন্টি তুমি এই মেয়েটাকে পছন্দ করেছো?”

” হুম।সুন্দর না?মেয়েটার নাম ঈশা।”

চকিতে কেঁপে উঠলো ঈশান।সন্দিহান চোখে ল্যাপটপে নজর রাখতে অবিশ্বাস্য চোখে চেয়ে রইলো ঈশার ছবির দিকে।এক হাতে দ্রুত ল্যাপটপ নিয়ে অন্য হাতে মোবাইল ছিনিয়ে নিল সে।

” তোমার রুচির এত অধঃপতন!তুমি এই মেয়েটাকে রাসেলের জন্য পছন্দ করেছো।এটা আমি কিছুতেই মানবো না মা”

রেগে গেলেন মাহমুদা ছেলের প্রতি জমানো রাগের রেশ নিয়ে বলেন,

” তোর কাছে আমি জানতে চাইনি মেয়েটা কেমন,আর জানতে চাইও না। আমি আমার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।রাসেল তোর পছন্দ হয়েছে মেয়েটাকে?”

রাসেল ঘাবড়ে গেল, ঈশান তার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে।বেচারা যেন গ্যাঁড়াকলে ফেসে গেছে একদিকে মাহমুদার সিদ্ধান্ত অপরদিকে ঈশানের চাহনি সব মিলিয়ে যাচ্ছে তাই অবস্থা।

” কিরে কথা বলছিস না কেন রাসেল?তুই ঈশানের দিকে তাকাচ্ছিস কেন?বল মেয়েটাকে পছন্দ হয়নি?”

” হ হ্যাঁ কি ন…”

” ব্যস এটাই শুনতে চেয়েছিলাম।তুই রাজি উফফ আমি আজ ভীষণ খুশিরে।আমি দেশে এসে বাকি সিদ্ধান্ত নিব।”

মাহমুদা ফোনটা কেটে দিল।ঈশান রাসেলের ফোনটা তার কোলে ছুড়ে বলে,

” তুই ঈশাকে বিয়ে করবি?ওঁই উটকো ঝামেলাকে ঘরে তুলবি?আর মেয়ে পেলিনা আমার শত্রুকেই বিয়ে করতে হবে এত সাহস তোর।তুই বিয়ে করিস কীভাবে আমিও দেখবো।”

” ক..কবুল বলে বিয়ে করবো দোস্ত।”

” ফাজলামি করছিস আমার সাথে।”

” ঈশান রেগে যাস না প্লিজ।আন্টি শুধু আমাকে জানালো এখনো কোথায় কি।”

ঈশান বড্ড রেগে গেল।টিভিটা অফ করে রিমোট ছুড়েলো দেয়ালে।আলমারিতে কিছু খুঁজতে খুঁজতে বলে,

“তুই দেখিস মেয়েটাকে শহর ছাড়া করে ছাড়বো যে করে হোক।”
#চলবে__
❌কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ ❌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here