অবাধ্য_বাধনে #পলি_আনান [পর্ব সংখ্যা ১০]

0
746

#অবাধ্য_বাধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ১০]
____________________
রাসেলের আরামের ঘুম হারাম করার জন্য ঈশানের জেদটাই যথেষ্ট।বালিশের পাশে থাকা ফোনটা দেদারসে বেজে চলেছে।ঘুমের ঘোরে বিরক্ত হয়ে বেশ কয়েকবার কেটে দিয়েছিলো রাসেল।কিন্তু এতবার ফোন আসায় ঘুমটা ছাড়তেই হলো তাকে।স্কিনে অনুর নাম্বারটা দেখে বেশ বিচলিত হয়ে পড়লো ছেলেটা।ঘড়িতে তিনটার কাছাকাছি।ঈশানের সাথে মুভি দেখার কথা থাকলেও মাঝ পথে সব পণ্ড হয়ে যায়।

” হ্যালো অনু এত রাতে?কোন সমস্যা? ”

” সমস্যা তো তোমরা দুই বন্ধু।”

” মানে?কি হয়েছে?”

” ঈশান একটু আগে ঈশাকে ফোন করেছে মেয়েটা হুমকি দিয়েছে তাকে নাকি এই শহর ছাড়া করবে তার পরিবারের ক্ষতি করবে।এসব কোন ধরনের ফাজলামো বলতো?”

” ঈশানের রাগ উঠেছে তাই বলেছে বাদ দাও অনু।”

” বাদ দেওয়ার বিষয় এটা নয় রাসেল।ঈশা কাঁদছে। ”

” তুমি কোথায়?”

” আমি ঈশার বাসায় দিহানের জন্মদিন তাই দুজনে টুকটাক হাতের কাজ করছিলাম।তার পরেই তো ঈশানের ফোন আসে।আমি আমার ফ্রেন্ডের ক্ষতি কখনোই চাইবো না রাসেল। তুমি যদি আমায় বন্ধু ভাবো তবে ঈশাকে এই আপদ্’টার হাত থেকে বাঁচাও।”

” আমি আছি তুমি একদম চিন্তা করবে না।”

” এই ঈশা আসছে আমি রাখছি, পরে কথা হবে। ”

রাসেল ফোন রাখলো।ঈশান কি করছে একবার দেখা দরকার ভেবে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো।উদ্দেশ্যে ঈশানের খোঁজ করা।ঈশানের কক্ষের দ্বার ভেতর থেকে বন্ধ ।রাসেল দরজায় কান লাগিয়ে ভেতরে কি হচ্ছে বেশ কয়েকবার শোনার চেষ্টা করে কিন্তু ফলাফল বৃথা।
.

করাঘাতের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় রাসেলের।গতরাতে ভালো ঘুম হয়নি তাই তো সকালেও ঘুমটা পরিপূর্ণ হলো না।হেলেদুলে দ্বার খুলে ঈশানকে দেখে ভ্রু তুলে তাকায় সে,

” কি হয়েছে?”

” ঘড়ি দেখ দশটা বাজতে চলেছে অফিসে যাবি না?”

” উপ্সস বড্ড দেরি করে ফেলেছি।তার আগে আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে।”

” কী কথা?”

ঈশান সন্দিহান চোখে তাকালো রাসেলের দিকে।রাসেল তার হাত টেনে রুমের ভেতরে নিয়ে যায়।

” তোর চাওয়া পাওয়ার মূল্য আমি যেমন দি তেমনি আমার চাওয়া পাওয়ার মূল্য নিশ্চয়ই তুই দিবি ঈশান।”

” হঠাৎ এই প্রশ্ন?”

” আমি ঈশাকে পেতে চাই ঈশান।!

রাসেলের একটা বাক্যে ঈশানের মাঝে যেন বিস্ফোরণ ঘটেছে।স্থির চোখে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিল সে। রাসেল ঈশাকে বিয়ে করতে চাইবে এটা কখনো ভাবেনি ঈশান।

” তোর মাথা ঠিক আছে রাসেল?কি বলছিস তুই।”

” ভেবে চিনতে বলছিরে আমি ঈশাকে বিয়ে করতে চাই তবে তার আগে ঈশাকে ভালোভাবে বুঝতে চাই।যদি এর মাঝে তোর আর ঈশার ঝামেলা লেগে থাকে তবে কোনদিন আমার প্রতি ঈশার পজেটিভ ধারণা আসবে না।”

” তার মানে তুই বলতে চাইছিস তোর আর ঈশার মাঝে আমি বাঁধা?”

” আমি সেটা বলিনি তবে..”

” যা বোঝার আমি বুঝতে পেরেছি তোর বিয়ে তুই কর,যা ইচ্ছা তাই কর আমি আর এসবে নেই।আর রইলো বাকি ঈশা, আজ থেকে আমি ভুলে গেলাম ঈশা নামের কোন মেয়েকে আমি চিনি বা চিনতাম।”

ঈশান বড় বড় পা ফেলে বেরিয়ে গেল কক্ষ ছেড়ে।বেচারা রাসেল যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।বিছানায় গা এলিয়ে দিল নিশ্চিন্ত মনে।

২০.
দিহানের জন্মদিনটা একটা রেস্টুরেন্টে করা হবে।ঈশা,অনু,মীরা তিনজনে মিলে সম্পূর্ণ পরিকল্পনা সাজিয়েছে।দিহান ইতোমধ্যে উপস্থিত হয়ে গেছে রেস্টুরেন্টে, মীরা তার সাথেই আছে।আজ ঈশা নিজের হাতে দিহানের জন্য কেক তৈরি করে এনেছে।বড্ড বেশি দেরি হওয়ায় দ্রুত পায়ে হাটছে ঈশা।পুরো বিল্ডিংটা সাত তলা।ছয়তলায় রেস্টুরেন্টে বাকি নিচের ফ্লোরে শপিং মল।লিফট থেকে নেমে এপাশওপাশ ছোটাছুটি করে দিহানকে খুঁজতে খুঁজতে আকস্মিক একটি ছেলের সাথে ধাক্কা লাগে তার।যার দরুণে সম্পূর্ণ কেকটা উলটে পড়ে নষ্ট হয়ে যায়।ঈশা হতবাক চোখে পাশে তাকাতে দেখতে পায় ঈশানকে।ঈশানের কানে ফোন নিশ্চয়ই কারো সাথে কথা বলছিল। বেচারা ঈশান নিজেও হতবিহ্বল এটা কী করে হলো!

মেঝেতে পড়ে থাকা কেকটার দিকে তাকিয়ে দু’চোখ ঝাপসা হয়ে এলো ঈশার।এই কেকটা অনেক সময় নিয়ে প্রস্তুত করেছিল সে কতটা আবেগ,ভালোবাসা,যত্ন মিশেছিল তাতে।

” আপনি এটা কি করলেন!”

ঈশান ঘাবড়ে গেল।সে মনে মনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে কিছুতেই ঈশার সাথে ঝগড়া করবে না।

“আমি দুঃখিত ঈশা।তোমার জন্য আমি আরেকটা কেকের ব্যবস্থা করছি।”

” এটা আমার তৈরি কেক হাজার খানেক কেক এনে দিলেও এই কেকের ঘাটতি পূরণ করতে পারবেন না।”

কথাটা চিৎকার দিয়ে বললো ঈশা।রেস্টুরেন্টের আশেপাশে থাকা লোকেদের ভীড় জমেছে। ঈশাকে কাঁদতে দেখে অনু তার হাত টেনে নিয়ে যেতে চাইলো কিন্তু ঈশা গোঁ ধরেছে।সে কিছুতেই যাবে না।

” আপনি এটা ইচ্ছে করে করেছেন তাই না ঈশান?”

” একদমি না তুমি আমাকে ভুল বুঝো না ঈশা।”

“ভুল বুঝবো না?রাতেও আপনি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছেন এখন আবার….”

ঈশা দিশাহীন হয়ে পড়লো।রাগে জেদে মাথাটা যেন ফেটে যাচ্ছে।মাটিতে থাকা কেকটা তুলে ছুড়ে দিল ঈশানের গায়ে।আশেপাশে সবাই অবাক চোখে দেখছে কেউ কেউ ফোন ক্যামেরা অন করে দিয়েছে।

” আমার গায়ে কেক ছোড়ার সাহস কে দিল তোমায়?”

” সাহস আমার বরাবরি বেশি।”

ঈশা এগিয়ে এলো ঈশানের গায়ে থাকা কোটে মাখিয়ে দিল কেকের ক্রিম।মুখে লাগানোর আগেই তার হাতটা শক্ত ভাবে ধরে নেয় ঈশান।

” বলেছিনা ইচ্ছে করে ধাক্কা লাগেনি এমন করছো কেন?”

জোর গলায় কেঁদে উঠলো ঈশা।ঈশানের হাত থেকে ছাড়া পেতে হাত টানতে হুঁশ ফিরলো ঈশানের।আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো মানুষের কীর্তি।এখান থেকে যাওয়া উচিত ভেবে লিফটের দিকে পা বাড়ালো সে তবে ছাড়লো না ঈশার হাত।ত্বরান্বিত লিফটে উঠে দ্রুত হাতে বাটন প্রেস করলো, তৎক্ষণাৎ বন্ধ হয়ে গেল লিফটের দরজা।অনু পড়লো বিপাকে ঈশাকে নিয়ে ঈশান কোথায় গেল প্রশ্নরা উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে তার মনে।উপায়ন্তর না পেয়ে রাসেলকে ফোন করলো সে।

নিচ তালায় নেমে ঈশার হাত টেনে পার্কিং জোনে এসে থামলো ঈশান।আশেপাশের মানুষজন তার দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।অপরদিকে ঈশার ফ্যাচফ্যাচ কান্নার আওয়াজ বিরক্ত বাড়িয়ে দিচ্ছে বহুগুণ।পরিস্থিতি বেগতিক ঈশান বুঝতে পেরে ঈশাকে বলে,

” গাড়িতে উঠো।”

” আমি কেন যাব আপনার সাথে?”

” উঠতে বলেছি।”

” উঠবো না।”

ঈশান পুণরায় ঈশার হাত ধরে নেয়।
গাড়িতে উঠতে বললে ঈশা হাত ছাড়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠে।
তাদের কান্ড তিনজন ছেলে পরখ করছিল একটু সাহসিকতার পরিচয় দিতে এগিয়ে আসলো তারা।তাদের মাঝে একজন ঈশানের কাধে হাত দিয়ে বলে,

” মেয়েটার সাথে জবরদস্তি করছিস কেন?”

ঈশান অবাক হলো কোথা থেকে কে এসে তাকে ধমকি দিচ্ছে অদ্ভুত।

” কাঁধ থেকে হাত সরা।”

ঈশানের কথায় ছেলেগুলো আরো বাড়াবাড়ি করলো।ওদের মাঝে একজন ঈশার কাঁধে হাত রেখে বলে,

” আপনি চিন্তা করবেন না আমরা আছি।”

ঈশান তীক্ষ্ণ নজরে চেয়েছিল ঈশার দিকে।ছেলেটার উদ্দেশ্য যে খারাপ বুঝতে সময় লাগলো না তার।ঈশান দ্রুত হাতে টেনে ঈশাকে তার পাশে আনলো।

” বাবু গিরি করছিস?মেয়েটাকে ছেড়ে দে।”

” মেয়েটাকে তোরা চিনিস?কোথা থেকে উড়ে এসে তর্ক করছিস এখান থেকে যা।”

ঈশানের শান্ত স্বরটা হজম হলো না ঈশার মনে হচ্ছে ঝড় আসার আগ মুহূর্তে।এতক্ষণ যাবৎ ঈশানের কাঁধ থেকে হাত সরালো না ছেলেটি বরং এবার করে বসলো আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ।ঈশানের ঘাড় ছেড়ে দুহাত বাড়িয়ে দিল তার কলারে শান্ত মেজাজটা ভীষণ ভাবে তেঁতে উঠলো ঈশানের।আশেপাশে সিকিউরিটি গার্ডরা ছিলনা বলেই জল এতদূর গড়ালো।ঈশার প্রতি জমানো ক্ষোভ ছেলেগুলোর বাড়াবাড়ি সব মিলিয়ে ক্রোধ বাড়লো প্রবল ভাবে।তিনটা ছেলের সাথে লেগে গেলো তার ধস্তাধস্তি।তিনটে ছেলেকে মারতে মারতে একজনের কপাল ফেটে রক্ত পড়ছে।বাকিরাও কম যায় না তারাও পালটা মারতে থাকে ঈশানকে।তিনজনের অবস্থা তখন ক্রমশ খারাপ হয়ে যায়।আশেপাশে মানুষের ভীড় জমে গেল কিন্তু কেউ এগিয়ে এলো না।ঈশানকে এবার থামানো উচিত ভেবে ঈশা এগিয়ে এলো।ঈশার ছোট্ট দুইহাতে ঈশানকে বাঁধা দিতে বড্ড কষ্টসাধ্য ছিল।না পেরে ঈশানের পা জড়িয়ে বসলো ঈশা তৎক্ষণাৎ ঈশার দিকে তাকিয়ে থেমে গেল ছেলেটা।ঈশাকে তুলে নিল শক্ত হাতে।

” আজকে একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছো ঈশা।”

ঈশানের একটা বাক্যে স্থির হয়ে গেল মেয়েটা।ঈশানের এই একটা বাক্যে ছিল প্রবল ধিক্কার,জেদ,বিতৃষ্ণা।ঈশাকে ছেড়ে সরে দাঁড়ালো সে।গায়ে থেকে কোট’টা খুলে ছুড়ে ফেললো ঈশার গায়ে।দ্রুত গাড়ির দরজা খুলে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল লহমা’য়।ঈশানের গাড়ি যাওয়ার দিকে শুধু তাকিয়ে রইলো।তাকে ফেলে ঈশান চলে গেল!

২১.

হাতের ব্যান্ডেজটায় চোখ রাখতে ঈশার কথা স্মরণে এলো ঈশানের।মেয়েটা নিজেকে যতটা চালাক ভাবে ততটা চালাক সে নয়।ছেলেগুলোর অসৎ ছোঁয়া সে বুঝেও চুপচাপ ছিল।চাইলেই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে পারতো ছেলেটার হাত, অথচ মেয়েটা নিরব ছিল।ঘাড়ের ব্যথায় বসা থেকে শুয়ে পড়লো ঈশান।দরজা খোলার শব্দে রাসেল চোখে চোখ পড়লো তার।

” এসব আমি কি শুনছি তার হাতে চোট লেগেছে।”

” তোকে কে বলেছে এসব?”

” কে বলছে জেনে তোর কী?”

রাসেলের রাগান্বিত স্বরে হেসে ফেললো ঈশান।সন্দিহান চোখে বলে,

” দারোয়ান আঙ্কেল বলেছে তাই না?আমি বারণ করেছিলাম তাকে।”

” কেন বারণ করেছিস?গার্ড নিয়ে গেলি না কেন?”

” রুমার বাসায় যাবো ভাবছিলাম তাই রুদবার জন্য কিছু কিনতে গেলাম আর এতকিছু যে হয়ে যাবে স্বপ্নেও ভাবিনি।”

রাসেল পাশে বসলো ঈশানের হাতটা ধরে বলে,

” হাতটা মোচড়ে গেছে,এই হাতে আমায় কবে শাসন করবি ঈশান।”

” আরে তুই এত ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছিস কেন?আমি ঠিক আছি।”

রাসেলের গলা ধরে এলো চোখটা কেমন জ্বালাপোড়া করছে।চোখ ফেটে জল পড়তে চাইছে কিন্তু ঈশানের সামনে কাঁদা যাবে না।ঈশানের কিছু হয়ে গেলে রাসেল অন্তত স্বাভাবিক ভাবে বাঁচতে পারবে না।বট বৃক্ষের ন্যায় ঈশানের ছায়া তার মাথায় যে আগলে আছে এই কথা অস্বীকার করা যায় না যে।

” রাসেল একটা হেল্প কর।দিহানের জন্মদিনটা ভেস্তে গেছে।তুই নিজের হাতে সব আয়োজন করে তাদের সারপ্রাইজ দে।”

ঈশানের কথা শুনে বিস্মিত হলো রাসেল।

” তুই ওদের নিয়ে ভাবছিস?”

” আমার জন্য এমনটা হয়েছে ভুলে যাস না।যা বেরিয়ে পড়।”

রাসেল বেরিয়ে যাওয়ার আগে তাকে ডেকে উঠলো ঈশান।রাসেল ঘাড় বাঁকাতে সে বলে,

” আজ আমি ঈশার সাথে একটুও খারাপ ব্যবহার করতে চাইনি।যেটা হয়েছে তার জন্য আমি সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত ছিলাম।
#চলবে___
❌কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ❌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here