অবাধ্য_বাঁধনে #পলি_আনান [পর্ব সংখ্যা ১৪]

0
1013

#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ১৪]
______________________
২৮.
পা দুটো জলে ভিজিয়ে বসে আছে ঈশা।মৃদু বাতাসে তোলা স্রোত তার পায়ে এসে বারি লাগছে।ডান হাতটা জলে চুবিয়ে ঘাড় ঘুরালো সে।বেশ কয়েকটা সিড়ি দূরে বসে আছে অনু।মেয়েটা পুকুর,দেখলে বড্ড ভয় পায়।তাই নিজেকে যতটা দূরে রাখা যায় রেখেছে সে।ঈশার পেছনে বসে রিয়াদ নারিকেল পাতার ঘড়ি বানিয়ে ঈশার হাতে পরিয়ে দিল।সেই ঘড়ি উলটে পালটে দেখছে মেয়েটা।সেই ছোট্ট বেলার স্মৃতি স্মরণে এলো এই মুহুর্তে।নারিকেল পাতার ঘড়ি একটা সময় সে নিজেও তৈরি করেছে এখন তো এসব করা ভুলেও গেছে।অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া রিয়াদ তাড়া দিলো ঈশাকে।

” এবার উঠে পড়ো আপু।বেশিক্ষণ থাকলে তোমার ঠান্ডা লাগবে।”

ঈশা মিষ্টি হাসলো।মাথা দুলিয়ে বলে,

” লাগবে না।”

” তুমি বললে তো হবে না।আন্টি জানলে আমায় বকবে।হাসিন ভাই শুনলে তো কান মলা খাবো।ওরে বাবা রে আপনি উঠেন আপু।”

” হাসিন ভাইকে ভয় পাও?”

” পাই মানে একটু বেশি পাই।উনি যখন ছুটিতে আসেন তখন আমি বাসা থেকেও বের হই না। রাস্তায় দেখলেই পড়া ধরেন এটা ওটার কৈফিয়ত চান।উনি একটু বেশি রাগী।”

ঈশা হাসলো।হাসিনদের তৃতীয় তলায় রিয়াদ’রা ভাড়া থাকেন।বেশ কয়েক বছর যাবৎ রিয়াদরা এখানে আছেন যার ফলে হাসিনদের সাথে তাদের সম্পর্কটা একটু বেশি ভালো।ফুফুদের বাড়ি এসে শুয়ে বসে থাকার কোন মানে নেই।তাই আশপাশটা ঘুরতে বের হয়েছে ঈশা অনু।তাদের সৈন্য হিসেবে উপস্থিত রিয়াদ।ছেলেটাকে হাসিন বারবার করে বলে দিয়েছে সে যেন তাদের খেয়াল রাখে বেশি দূরে না যায় সেই দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট সে।

ঈশা উঠে দাঁড়ালো মাথায় উড়না টেনে হাটা ধরলো কংকর ঢালা রাস্তায়।এদিকটা একটু বেশি নিরিবিলি।আশেপাশে কিছু মহিলাকে দেখা যাচ্ছে তারা বাড়ির গেট থেকে সন্দিহান দৃষ্টিতে ঈশা অনুর দিকে তাকিয়ে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে।

” রিয়াদ আমরা কি এভাবে হাঁটতেই থাকবো?আমাদের আর কোথাও নিয়ে যাও।”

অনুর কথায় রিয়াদ উৎসুক চোখে তাকালো তার দিকে।বেশ আগ্রহ নিয়ে অনুকে বলে,

” আপু ,মনির মামার ফুসকা খাবে?আমাদের এলাকার বেস্ট ফুসকা।”

” সেটা কোথায়?”

” এই তো সামনে।”

ঈশা অনু বেশ আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে গেল।ফুসকা দোকানে বেশকিছুটা ভিড় ছিল।ফুসকা খাওয়া শেষ করে রিয়াদ কে নিয়ে তারা বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।রাস্তার পাশে থাকা আট তলা ভবনটা দিক তাকিয়ে রিয়াদ ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলে

” আপু এখানে যাবে?”

ঈশা মাথা তুলে ভবনটা পরখ করলো।

” এখানে তো কন্সট্রাকশন কাজ চলছে।”

” হুম তবে একমাস যাবৎ বন্ধ আছে।শুনেছি মালিক কাজ বন্ধ রেখেছেন।তুমি যাবে?এখান থেকে সূর্য ডোবা বেশ ভালো ভাবে দেখা যায়।”

” এখানে যাওয়া কি ঠিক হবে?বাজে ছেলেদের আড্ডা থাকতে পারে।”

“এখন থাকবে না আপু।এখানে সিকিউরিটি গার্ড আছে।”

” তারপরেও আমার ভয় লাগছে।ভেবে দেখো রিয়াদ আমরা একা দুজন মেয়ে।”

রিয়াদ মাথা নাড়ালো।সন্ধ্যা নামতে এখনো দেরি আছে।উচু ভবন থেকে সূর্য ডোবার মনোরঞ্জন দৃশ্য তাদের না দেখাতে পারলে বেচারা রিয়াদের শান্তি হবে না তাই চিন্তা ভাবনা মিলিয়ে একটা ফন্দি আঁটলো সে।

” আমার বন্ধুদের ডাকি?তারা থাকলে তোমাদের ভয় করবে না।”

” তারা কোথায় আছে?”

” পাশের মাঠে খেলছে।”

” কিন্তু আমরা যাবো কিভাবে?যদি সিকিউরিটি গার্ড দেখে ফেলে?”

” পেছনে জানলা আছে তবে জানলার গ্রিল নেই।জানলা বেয়ে লাফিয়ে নামবো পারবে না?”

” পারবো।”

ঈশা অনু দুজনে সম্মতি জানালো।রিয়াদ তার দুইজন বন্ধুকে ডেকে আনলো।অবাক করা বিষয় হলো আজ ভবনের নিচ তলায় কোন সিকিউরিটি গার্ড দেখা যায়নি।রিয়াদ প্রতিদিনের ন্যায় জানলা টপকে ভেতরে প্রবেশ করে।সব তালায় কাঠ,বাশ,তারকাঁটা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল ঈশা অনু সাবধানে পা ফেলে এগিয়ে গেলো উপরের দিকে।ছাদে পৌঁছে একটা ইটের উপর দ্রুত বসে পড়ে ঈশা।তার পাশে বসে যায় অনু।

” উফফ অল্পের জন্য জান বেরিয়ে যায়নি।”

ঈশার কথায় হাঁপাতে হাঁপাতে হাসে অনু।

” পানি পেলে ভালো হতো।”

” এখানে পানি পাওয়া যাবে না।”

ক্লান্ত শরীরটা টেনে সামনে এগিয়ে গেলো দুজনে।যতটুকু দেখা যাচ্ছে চারিদিকে ঘন সবুজ।পাখিরা উড়ছে চারদিকে।সাদা সাদা বক ঝাকে ঝাকে ছুটে চলছে।সূর্যটার তেজ লোপ পেয়েছে।লাল কমলা রঙ ধারণ করে সে প্রস্তুত আড়াল হতে।ঈশা মুগ্ধ চোখে আকাশ দেখে।

” সূর্যটা কুসুমের মতো লাগছে।”

ছবি তোলার উদ্দেশ্যে অনু ব্যাগ থেকে ফোন বের করে।ঠিক সেই মুহুর্তে রিয়াদ এবং তার বন্ধুরা ভয়ার্ত চোখে ছুটে আসে ঈশার কাছে।

” আপু চলো এখানে থাকতে হবে না।”

” কেন?কি হয়েছে রিয়াদ?”

“এখানে খু ন হয়েছে আপু লোকটারে কেউ মারছে।”

” কোন লোক?”

আতঙ্কে রিয়াদ ঘামছে তার বন্ধুরা ইতোমধ্যে ছাদ ছেড়ে নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছে।অনু ঈশার হাত ধরে এগিয়ে গেলো কিন্তু অনুর হাত ছাড়িয়ে দাঁড়ালো ঈশা।

” কিরে চল।”

” না এখানে কি হয়েছে দেখা দরকার।”

” এসব করার কোন প্রয়োজন নেই।তোকে যেতে বলছি চল।”

অনুর হাত ছাড়িয়ে নিলো ঈশা। রিয়াদের দেখানো পথে এগিয়ে গেলো সে।ছাদে শান বাঁধানো ট্যাংকের পেছনে একটি লোক উপড় হয়ে পড়ে আছে।লোকটার গায়ে সাদা শার্ট র ক্তে মাখামাখি।প্যান্ট এবং শার্ট কিছু অংশে ছেঁড়া।ঈশা এগিয়ে যেতে চাইলে অনু বাঁধা দিলো কিন্তু তার বাঁধা অগ্রাহ্য করে এগিয়ে গেলো ঈশা।লোকটার বাহুতে ধাক্কা দিতে কোন সাড়া শব্দ মিললো না।ঈশা ধীরে ধীরে অজ্ঞাত ব্যাক্তির মাথা উপর করলো।অজ্ঞাত ব্যক্তিকে চিনতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো ঈশা এবং অনুর।

” অনু এটা ঈশান।”

” উনি এখানে কি করছেন?এই অবস্থা কেন?”

অনুর তার প্রশ্নের জবাব পেলো না।ঈশা ঈশানের গালে হাত রেখে বার বার ডেকে চলেছে।রিয়াদ বুদ্ধি খাটিয়ে ছাদের কোনায় ভাঙা বালতিতে জমে থাকা পানি এনে দিলো ঈশাকে।সেই পানি ঈশানের মুখ ছিটিয়ে দিতে জ্ঞান ফিরলো তার।

রক্তাক্ত মুখে পিটপিট চোখে ঈশার দিকে তাকালো ঈশান।বিষাক্ত ব্যথায় শরীরটা অবশ হয়ে আছে। ঈশান উপর হতে চাইলে ঈশানের মাথা ঈশা তার কোলে নিয়ে নেয়।

” উট…কো ঝা ঝামেলা এখানে কি ক করছো?”

” আপনার এ হাল কেন সেটা বলুন?”

রক্তাক্ত দাঁতে হাসলো ঈশান।সেই হাসি দেখে গা গুলিয়ে এলো ঈশার।

অনু ঈশানের কাছ থেকে সরে দাঁড়ালো দ্রুত রাসেলকে ফোন করে জানিয়ে দিলো ঈশানের অবস্থান।রিয়াদ ছেলেটা ড্যাব ড্যাব চোখে তাকিয়ে রইলো ঈশানের দিকে।ঈশান ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ।হঠাৎ কিছু মাথায় আসতে আতঙ্কে চোখ তুলে তাকালো ঈশান।দ্রুত হাতে আঁকড়ে ধরলো ঈশার দুই হাত।

” তুমি যাবে না, তোমাকে যেতে দিব না।ওরা মে রে ফেলবে তোমায়।”

” কে মা র বে?”

” ওরা।”

ঈশান এলোমেলো হাতে ঈশাকে আগলে নিতে চাইলো ঈশানের এতটা আগলে নেওয়া পছন্দ হলো না ঈশার।সে বার বার হাত ঠেলে সরিয়ে দিলো ঈশানকে।ঈশান রক্তাক্ত দাঁতে হাসলো।ঈশাকে ঈশারা করে বলে,

” তোমার সাথে কথা আছে কানে কানে।”

ঈশা ভাবলো হয়তো গুরুত্বপূর্ণ কিছু।ঈশানের মুখের কাছে কান বাড়াতে ঈশান তার ডান হাতের সাহায্যে চেপে ধরলো ঈশার মাথা এবং রক্তাক্ত ঠোঁটে ছুঁইয়ে দিলো ঈশার গাল।ঈশা অবাক হলো এমন সিরিয়াস মুহুর্তে ঈশান ফায়দা তুলছে।বড্ড রাগ লাগলো ঈশার, ত্বরান্বিত হাত তুলে ঈশানের গালে বসিয়ে দিলো এক চড়।চড়ের শব্দে পিছনে ফিরে তাকায় অনু অবাক চোখে চেয়ে থাকে ঈশানের দিকে।
ঈশানে গালে হাত বুলিয়ে হাসতে থাকে।ঈশা উঠে যেতে চাইলেও ঈশান তার হাত টেনে ধরে ঈশার হাতে ক্রমাগত ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়।ঈশার এই মুহুর্তে মনে হলো ঈশান উন্মাদ হয়ে গেছে এমন অদ্ভুত ব্যবহার সে কেন করছে?অনু দ্রুত ঈশাকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলো কিন্তু ঈশান ছাড়লো না।সে ঈশার কোলে মাথা রেখে রাগি চোখে তাকালো অনুর দিকে।

” উটকো ঝামেলা নাম্বার ২ সরে যাও সামনে থেকে।”

অনু অবাক হলো এই ছেলে ম রার মাঝেও ত্যাড়ামি ছাড়ছে না।রিয়াদের সামনে লজ্জায় নুইয়ে গেল ঈশা।রিয়াদ নিশ্চয়ই বাড়ি ফিরে সব বলবে।ঈশা ঈশানকে ছাড়িয়ে উঠার চেষ্টা করলো তবে ঈশান বাঁধা দেওয়ায় খুব সুবিধা করতে পারলো না।তবুও নিজের জেদে অটল রইলো সে ঈশানের মাথা নামিয়ে উঠে দাঁড়াতে বাঁধলো আরেক বিপত্তি ঈশান উগরে ফেলে পেটের খাদ্যকণা।মাথায় হাত রেখে পাগলের মতো গোঙারাতে শুরু করে।ঈশান ঈশার কোল থেকে নিজের মাথা নামিয়ে মেঝেতে তড়পাতে থাকলো। ঈশা নিজের কোলের দিকে তাকাতে সারা শরীরে তার ঝলকানি দিয়ে যায়।সম্পূর্ব জামা রক্তে ভিজে আছে ঈশানের কি তবে মাথাও ফেটে গেছে।এই মুহুর্তে নিজেকে বড্ড একা লাগলো ঈশার।ঈশানকে ছুঁয়ে কেঁদে ফেললো মুহুর্তে।তীব্র যন্ত্রণায় মানুষটা কেমন ছটফট করছে।

২৯.

” বাড়ি ফিরে কী জবাব দিবি ঈশা?”

” জানি না।”

ঈশার শরীর কাঁপছে গলদেশ শুকিয়ে কাঠ।আতঙ্কে রিয়াদের মুখ পাংশুটে বর্ণ ধারণ করেছে।ইতিউতি ভেবে শব্দ করে শ্বাস ছাড়লো অনু।বাসার সামনে রিক্সা থামতে দম বন্ধ হয়ে এলো ঈশার।জামায় রক্তের দাগ দেখে নিশ্চয়ই ফুফু আতিয়া হাজার খানেক প্রশ্ন তুলে ধরবেন তার সামনে।কিন্তু এর উত্তর কী হবে?উড়নার সাহায্যে যতটুকু পারা যায় গা ঢেকে দিল ঈশা তবুও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রক্তের দাগ আড়াল করার উপায় রইলো না।গেটের ভেতর দাঁড়িয়ে আছেন ফুফু আতিয়া।তাকে দেখে আড় চোখে ঈশার দিকে তাকালো অনু।আতিয়া তাদের দেখতে পেয়ে হাত ইশারায় দ্রুত আসতে বলেন।

” তোরা কোথায় ছিলি?হাসিন ফোন করে আমাকে বকছে।বাপ ছেলে আমার বিরুদ্ধে অল্পের জন্য যু দ্ধ ঘোষণা করেনি।”

” আন্টি রিক্সা পাইনি।আমরা ইচ্ছে করে দেরি করিনি।”

অনু আর আতিয়ার কথার মাঝে ঈশা দ্রুত ছুটে ঘরে চলে যায়।আতিয়া অবাক চোখে তাকায় অনুর দিকে।

” ঈশা দৌড়ে গেল কেন?”

” আ… আসলে আন্টি ওর গায়ে চটপটির বাটি উলটে পড়েছে তাই পুরো গায়ের যাচ্ছে তাই অবস্থা।”

আতিয়াকে অন্য কথা না বলার সুযোগ দিয়ে তার হাত টেনে নিয়ে গেলো অনু।রিয়াদ পেছন পেছন বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে আজ যা হয়ে গেলো তার রেশ মন থেকে কবে কাটবে কে জানে।
.

বাড়ি ফিরে দ্রুত গোসল সারলো ঈশা। ভেজা চুলে তোয়ালে পেচিয়ে ঈশানের কথা ভাবছিলো সে।ছেলেটা তখন গালে ঠোঁট ছোঁয়ালো কেন?ঈশানের অদ্ভুত আচরণ তার মনে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।সবচেয়ে বড় কথা ঈশানকে আঘাত করলো কে?তাও আবার আট তলা বিল্ডিং এর ছাদে ফেলে এসেছে।বিষয়টা অদ্ভুত ঠেকলো ঈশার কাছে।অনু রুমে ফিরতে নড়ে চড়ে বসে ঈশা।অনুকে উদ্দেশ্য করে বলে,

” রাসেল ভাইয়াকে ফোন করেছিস?”

” না।করা কি ঠিক হবে?”

” অবশ্যই মানুষটার কি অবস্থা জানা দরকার।”

” আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমরা ফেসে যাবো ঈশা।যদি পুলিশকে জানানো হয় তবে পদে পদে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে।”

” জবাবদিহিতার কি আছে?আমরা শুধু ঈশানকে পেয়েছি এইটুকুই।”

“তুই বুঝতে পারছিস না ঈশা।ঈশানের সাথে তোর শত্রুতা আছে যদি সে তোকে ফাসিয়ে দেয় ব্যপারটা ভেবে দেখ।”

ভয়ে কুঁকড়ে উঠলো ঈশা।এসব ঝামেলায় তাকে যদি পড়তে হয় তবে ঈশান শাহরিয়ারকে খু ন করে ফাসবে সে এর আগে নয়।

” এত কথা বলিস না অনু। ফোন কর রাসেলকে।”

বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ রাসেলকে ফোন করেও পেলো না অনু।ছেলেটা নিশ্চয়ই চরম ব্যস্ত তাই তো এতবার ফোন করেও পাওয়া গেলো না।কিছুক্ষণ পর ফোন ধরলো রাসেল,

” অনু বলো তোমরা বাড়ি পৌঁছে গেছো?”

” হুম।ঈশান ভাইয়া কেমন আছে?”

” ভালো নয়।মাথা ফেটেছে,বাম হাত ভেঙ্গেছে পায়ের একটা আঙুল ফেটেছে।এখন ঘুমের ওষুধের কারণে ঘুমাচ্ছে।”

” ওহ। ইনশাআল্লাহ ভাইয়া খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে তুমি চিন্তা করো না।”

” চিন্তা ছাড়া এই মুহূর্তে করার মতো কোন উপায় নেই আমার কাছে।”

ফোন লাউডে থাকায় ঈশা অনু দুজন দুজনকে ঈশারায় এটাওটা ইঙ্গিত দিচ্ছে।অনু খানিকটা নরম গলায় রাসেলকে বলে,

” পুলিশকে জানিয়েছো? ”

” না প্রয়োজন মনে করছি না।”

” কেন?’

” কথায় আছে ঘরের শত্রু বিভীষণ।এসব মামলা তুমি বুঝবে না।কাল তোমাদের এখানে একবার আসতে হবে।”

” কেন আসতে হবে?”

” কথা আছে।সকাল সকাল চলে এসো।”

ঈশা অনু দুজন দুজনের দিকে হতাশ চোখে তাকালো খাল কেটে কু মি র এনেছে তারা অক্টোপাস আনলে কি হতো?
.

ঈশানের জ্ঞান ফিরলো মধ্যরাতে বিষাক্ত যন্ত্রণায় একটুখানি নড়তেও পারলো না সে।ঠোঁট নাড়িয়ে কথা বলার চেষ্টা চালালো বেশ কিছুক্ষণ।ঠোঁটের কোনে থাকা মৃদু ব্যথাটা ধীরে ধীরে যেন সয়ে এলো।রাসেল নির্ঘুম রাত্রিটা পার করার জন্য প্রস্তুত ছিল। সে সারাটা রাত ঈশানের পাশে জেগে ছিল ঈশানের ঘুম ভাঙ্গতে দেখে বুকের কষ্ট চেপে রেখে প্রসন্ন হাসলো।রাসেলের চিন্তিত মুখখানি দেখে খারাপ লাগলো ঈশানের।ঈশার কথা মাথায় ঘুরলেও তার কথা জানতে চাইলো না।বরং ঈশানকে নিয়ে রাসেলের যে চিন্তা সেই চিন্তার মেঘ সরাতে রাসেলের ভাবনা ঘুরিয়ে দিলো অন্যদিকে।

” রাসেল এই যে আমার ভাঙ্গচুর অবস্থা তুই কি একা সব সামলাতে পারবি?”

” পারবো না কেন?আমি পারবো।”

” না তুই পারবি না সেটা আমি জানি।আমার একটা বউয়ের দরকার।যদি একটা বউ থাকতো তাহলে এতক্ষণে তার ভালোবাসার জোরে আমি সুস্থ হয়ে যেতাম।”

” হ তোরে বলছে,তুই আসলেও বেশি বুঝস।”

” আরে আমি সিরিয়াস।”

” তুই বিয়ে করবি?এখন মেয়ে পাবো কই?”

” আমি বিয়ে করবো তাকে।”

” কাকে?”

” অনুকে।”

শেষ কথাটা স্বগোতক্তি স্বরে বললো ঈশান।তবে খুব সহজে কথাটা হজম হলো না রাসেলের।মাথার উপরে ঘুরতে থাকা ফ্যানটা তার মাথায় যেন এক্ষুনি পড়েছে।সবকিছু ঝাপসা ঝাপসা লাগছে।রাসেল ঘাবড়ে গেলো সন্দিহান কণ্ঠে ঈশানকে বলে,

” তুই কি বলছিস?”

” আমি সিরিয়াস রাসেল।”

রাসেল নাক ফুলিয়ে সরে দাঁড়ালো ঈশানের পাশ থেকে।পাশে থাকা বেডে সটান হয়ে শুয়ে পড়লো দ্রুত।ঈশান আড় চোখে দেখছিলো রাসেলের কান্ড।বেচারাকে আরেকটু খোচাতে বলে,

” অনুর দেওর আমায় একটু পানি দে।”

#চলবে__
পর্বটা খাপছাড়া লাগলে দুঃখিত।প্রচন্ড মাথা ব্যথা নিয়ে লিখে শেষ করেছি🥀

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here