#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ১৫]
___________________
” রাসেল তোর জন্য আমার চিন্তা হচ্ছে একটু ঘুম দে।”
” ঘুম কেড়ে নিয়ে এখন বলছিস ঘুম দে?এটা হাস্যকর।”
ঈশান ভ্রু কুচকে তাকালো রাসেলের দিকে।কপালে হাত ঠেকিয়ে শুয়ে আছে রাসেল।ঈশানের কথা শোনার পর থেকে তার মাথা ঘুরছে নাকে মুখে ধোঁয়া উঠার মতো পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি হয়েছে।ঈশান অনুকে বিয়ে করবে!অনুকে সে ভাবী ডাকবে!অসম্ভব এই দিন দেখার আগে বাংলাদেশ ছাড়বে সে তবুও এই দিনের সম্মুখিন সে হবে না।হঠাৎ অনুকে ভালো লাগার কারণ কী ঈশানের?তার জানা মতে অনুর সাথে বিশেষ ভাবে কখনো দেখা হয়নি ঈশানের।
” কিরে কি ভাবছিস?”
ঈশানের প্রশ্ন শুনে কপাল থেকে হাত সরালো রাসেল।দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বলে,
” কিছু না।আমার মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরছে ঈশান।”
” কি প্রশ্ন?”
” ঈশা অনু সেই বিল্ডিং এ কি করছিলো?”
” তা তো আমিও ভাবছি।তাদের সাহস দেখেছিস?পুরো ভবনটা ফাঁকা ছিল যদি লোকগুলো ওখানে থাকতো তবে.. ওদের সাথে দেখা করা দরকার।দুজনকে এখানে আসতে বলিস।”
” বলেছি।কিন্তু গার্ড ছাড়া তুই সেদিকে গেলি কেন?আমি আগেই বলেছিলাম ইসমাইলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন কর তুই শেষবার তাকে যে অপমান করেছিস সে যে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠবে এটা আমার ধারণায় ছিল।”
” যা ঠিক আমি তাই করেছি।মুজাহিদ হাসানের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল আর সেটাই করেছি।”
“যখন একটা মানুষের স্বার্থে আঘাত লাগে তখন সে উচিত অনুচিত ভুলে যায়।ঈশার গলায় আঘাত লাগায় রাজিবের গায়ে হাত তুলেছিস তুই ভেবে দেখ রাজিব তোর এত বিশ্বস্ত লোক কখন যে সে তোর পিঠে ছুরি বসিয়ে দেয় বিশ্বাস নেই।সাবধান ঈশান ইসমাইল পুরানো লোক হয়েও বেইমানি করেছে তাই বিশ্বাস অন্তত সবাইকে করিস না।”
” কন্সট্রাকশন কাজ বন্ধ ছিল একমাস ভেবেছিলাম সব ঝামেলা মিটিয়ে পুণরায় কাজ শুরু করবো তাই তো গেলাম।আমার সাথে গার্ড ছিল ইসমাইলের লোক ছিল কিন্তু ইসমাইল যে ছলচাতুরী করবে আমি কস্মিনকালেও ভাবিনি।এমন মা র মে রেছে মেরে আবার ছাদেও রেখে এসেছে যদি ভর দুপুরে রেখে আসতো তবে নির্ঘাত নতুন শুটকি আবিষ্কার হতো।চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তো এই নিউজ ঈশান শুটকি, ঈশান শুটকি।”
” ফা জলামো করা বন্ধ কর।এখন ঘুম দে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে।”
” আমার ঘুম আসবে না তুই ঘুমা।”
রাসেল ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলো।ঈশান চোখ বন্ধ করে ভাবছে ঈশার কথা।মেয়েটার সামনে বড় বিপদ ইসমাইল তাকেও ছাড়বে না।
৩০.
সকাল সকাল নিজের বাড়ি ফিরে আসে ঈশা এবং অনু।তাদের অবশ্য ফিরিয়ে দিয়ে যান ঈশার ফুফা আবসার।সকালে ঈশানের সাথে দেখা করতে যাওয়ার কথা থাকলেও ঈশা এবং অনু যেতে যেতে বিকাল হয়ে যায়।ঈশানের কেবিনের পাশে আসতে মনে মনে তাচ্ছিল্য হাসলো ঈশা দরজার বাইরে দুইজন সিকিউরিটি গার্ড দাঁড়িয়ে আছে।অথচ তারা কোথায় ছিল যখন তাদের স্যার মার খেয়ে আট তলার ছাদে পড়েছিলো।রাসেল কেবিনের দরজা খুলে ইশারা করে অনুকে প্রবেশ করতে।অনুর পেছন পেছন প্রবেশ করে ঈশা।
কেভিনে প্রবেশ করে টিভির দিকে তাকিয়ে আশেপাশে চোখ বুলালো ঈশা।তার চোরা চাহনি দেখে রাসেল বলে,
” কিছু খুঁজছো ঈশা?”
” রুদবা এসেছে?”
” না রুমা আপু তো জানেই না ঈশান হসপিটালে।”
” তাহলে ডোরেমন কে দেখছে?”
বেডে শুয়ে ঈশান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে টিভির দিকে।সে খুব মনোযোগ সহকারে ডোরেমন দেখছে।তার আশেপাশে কি ঘটছে কে এসেছে এসব যেন তার মাথায় ঢুকছে না।রাসেল হেসে ফেললো ঈশার কথায়।
” ঈশান দেখছে।”
” এত বড় ছেলে ডোরেমন দেখছে!”
অবাক পানে তাকালো অনু।তার কথায় চোখ ইশারায় চুপ থাকতে বলে রাসেল।ঈশা আহাম্মক বনে তাকালো ঈশানের দিকে। সখ আহ্লাদের যে কোন বয়স নেই তা ঈশানকে দেখে বোঝা যায়।
রাসেল এগিয়ে গেলো ঈশানের কাছে,
” ঈশান কে এসেছে দেখ।”
” কে এসেছে তোর ভাবী?”
রাসেল কিড়মিড় করে তাকালো ঈশানের দিকে।ঈশান ঠোঁট বাকিয়ে হাসার চেষ্টা করেও পারলো না।ঠোঁটের কোনে আকস্মিক ব্যথা লাগায় চুপ হয়ে গেল।
” এরা এখানে কেন এসেছে রাসেল?”
” তোকে, মানে রোগী দেখতে এসেছে।”
” রোগী দেখতে আসলে কেউ খালি হাতে আসে?এদের হাতে ফলমূল,জুস কই?অদ্ভুত!”
ঈশানের ব্যবহার বোধগাম্য হলো না রাসেলের।এই ছেলের মনে কি চলছে।
ঈশা গিয়ে ঈশানের মুখোমুখি অন্য বেডে বসলো।অনু ভদ্রতার খাতিরে মুখ ফুটে বলে,
” ভালো আছেন ভাইয়া?”
” হ্যা।তোমায় দেখে একটু বেশি ভালো লাগছে।”
ঈশান এত আদুরে ভাব নিয়ে কথা কেন বলছে অনুর সাথে?শরীর’টা জ্বলে উঠলো রাসেলের।নিজেকে সংযত রেখে বলে,
” রোগী দেখা হয়েছে এবার কি বাসায় ফিরবে?”
রাসেল তাড়া দিতে দমক দিলো ঈশান,
” রাসেল তুই ওদের তাড়িয়ে দিচ্ছিস কেন?ওরা তোকে নয় আমাকে দেখতে এসেছে।তাছাড়া ওদের সাথে আমার কথা আছে।”
ঈশান আড় চোখে তাকালো ঈশার দিকে।মেয়েটা কপাল কুচকে তাকিয়ে আছে।ঈশা সোজাসাপটা ঈশানকে বলে,
” গতকাল আমায় বলেছেন কেউ নাকি আমায় মা র বে।আমার জানা মতে কারো পাকা ধানে মই আমি দি নাই তাহলে কে মারবে আমায়?”
” কে মা র বে সেটা তোমার না জানলে চলবে তবে তোমার সাবধানে থাকা জরুরি।সবচেয়ে বড় কথা কাল একা একা ওই ভবনে কি করছিলে?এত সাহস পেলে কই?”
” আমার সাহসের তারিফ করছেন?আমার সাহস একটু বেশি।”
” অগ্রীম অভিনন্দন অতি সাহসের কারণে আমার পরিবর্তে তোমায় হয়তো খুব শীঘ্রই এই বেডে দেখবো।”
ঈশা কথা বাড়ালো না। নিজেকে চুপচাপ রেখে পরিস্থিতি সামলালো।
” রুমা আপু আসেনি?”
ঈশান ডোরেমন দেখতে দেখতে বললো।
” না।”
” আপুকে জানানো হয়নি?”
” না।খবরদার তুমিও বলবে না।”
” কিন্তু কেন?এত বড় একটা বিষয় এভাবে আড়াল করবেন কেন?আপনাকে একা সামলাতে পারবে না রাসেল ভাই। ”
” এইজন্যই বলেছি আমি বিয়ে করবো।কিন্তু আমার বিয়ের কথা শুনে মনে হচ্ছে রাসেল খুশি নয়।”
রাসেল ত্যারচা তাকালো।অনুর বিষয় আসতেই তার বুকের ভেতর কেঁপে উঠে।ঈশান কি সিরিয়াস নাকি মজা করছে তা বুঝে এলো না রাসেলের।
ঈশান টিভিটা অফ করলো।পূর্ণ দৃষ্টি রাখলো ঈশার চোখে।নরম হয়ে এলো তার কন্ঠ স্বর।
” গতকাল তোমরা না থাকলে আমার যে কি হতো।পাশের ডোবায় আমার ফোন ছুড়ে ফেলেছিলো দুর্বৃত্ত’রা।যোগাযোগ করার কোন পথ খোলা ছিল না।”
” দুর্বৃত্তরা এতটা সাহস করলো কি করে? নিশ্চয়ই আপনার সাথে তাদের বৈরিতা আছে।আর ওই বিল্ডিংটা কার?”
” ওটা আমার বিল্ডিং গত একমাস কাজ বন্ধ রেখেছি।পুণরায় কাজ চালু করতে আলাপ আলোচনার উদ্দেশ্যে গেছিলাম কিন্তু… ”
দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো ঈশান।রাসেল অনুকে আড়ালে ইশারা করলো ফলে দুজনে বেরিয়ে গেল কেভিন থেকে।রইলো বাকি ঈশান ঈশা।ঈশান চোখ বন্ধ করে রাখলো কয়েক সেকেন্ড তখন আর ঈশা কোন কথা খুঁজে পেলো না।ঈশানের হাতের ব্যান্ডেজ দেখে মন খারাপ লাগলো তার।
” আমার মনে হয় আপনার রুমা আপুকে জানানো উচিত বিষয়টা।”
” রুমা এখানে নেই।ওরা ঘুরতে গেছে।”
” দুলাভাইয়ের সাথে?”
” তো কার সাথে যাবে?অদ্ভুত প্রশ্ন করো তুমি।”
ঈশা থতমত খেয়ে গেলো।তীর্যক চাহনিতে ঈশানের দিকে তাকাতে দেখতে পেলো ঈশান পলকহীন তার দিকে তাকিয়ে আছে।ঈশা ঘাবড়ালো দ্বিধাদ্বন্দে আশেপাশে পরখ করলো কিন্তু না ঈশানের দৃষ্টি সরেনি ছেলেটা তার দিকে তাকিয়ে আছে।ঈশা উঠে দাঁড়ালো বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো।রুমে ফিরতে চোখাচোখি হলো ঈশানের সাথে।বেহায়া ছেলে এখনো তাকিয়ে আছে তার দিকে।না পারতে ঈশা বলেই দিলো,
” সমস্যা কোথায় আপনার?”
” তোমাতে।”
” অদ্ভুত লোক আপনি।গতকাল বাঁচালাম একটি বার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন না।”
” কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কি মুখেই করতে হবে?অন্য ভাবে করা যায় না।”
” অন্যভাবে?”
” এই ধরো এমন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো যে কৃতজ্ঞতা সারাজীবন লেপ্টে থাকবে তোমার জীবনে।”
” বুঝলাম না।”
ঈশান আগ্রহ দেখালো।ঈশাকে হাতের ইশারায় কাছে আসতে বললো,
” আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই।সেই হিসেবে আমি তোমায় বিয়ে করবো মোটামুটি এক দেড় বছর আমাদের জম্পেশ সুখের সংসার হবে এরপর আমাদের ঘরে কিছু বাচ্চাকাচ্চা আসবে অবশ্য আমার ভালোবাসার দরুনে তুমি বাঁঁচবে কি না কে যানে।”
ঈশা অবাক হলো এই লোকটা কথা টেনে ঠিক কোন পর্যায়ে নিয়েছে হয়তো তার নিজেরো ধারণা নাই।
“যে আপনাকে বিয়ে করবে তার কপালের মতো দুর্ভাগা কপাল দুনিয়াতে আর একটিও নেই।”
” আমার বউয়ের কপাল যদি আমাকে বিয়ে করে দুর্ভাগা কপাল হয় তবে দুর্ভাগা কপালি ভালো।আর সেই কপালটা যেন তোমারি হয়।”
#চলবে___
❌কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ❌