#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩৪]
_________________
ঈশার কাছে কোন ফোন নেই বাবা মায়ের খোঁজ নেওয়া হলো না নিশ্চিয়ই তারা চিন্তা করছেন?জীবনের এই গোলকধাঁধা থেকে কবে নিস্তার পাবে জানা নেই তার।কালো মেঘে ঘেরা আকাশটা মৃদ্যু ঢাকছে শন শন বাতাস সানন্দে ঘরে প্রবেশ করছে মন প্রাণ সতেজ হলো ঈশার।সে আড় চোখে তাকালো জানলার বাইরে আলিশান এই কক্ষে তার একটুও মন টিকছে না ঈশানের সাথে একা থাকাটাই কি সবচেয়ে বড় ভয়?বদ্ধ ঘর,শীতল পরিবেশ একা দুজন কপোতকপতি যদি উনিশ থেকে বিশ হয়ে যায়?ভাবতেই গায়ে কাটা দিলো ঈশার।
” এই ঈশা..”
ঈশানের কণ্ঠে ঘাড় ঘুরালো ঈশা ছেলেটা হন্তদন্ত পায়ে দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে।
” দুপুরে কী খাবে?”
” বিষ আছে?একটু বিষ দেন।”
ঈশান পুনরায় হন্তদন্ত পায়ে পুরো ঘর পাইচারি করলো সে যেন কিছু খুঁজছে।ঈশার কক্ষে ফিরে এসে দ্রুর প্রবেশ করলো ওয়াশরুমে এবং বের হলো টয়লেট ক্লিনার হারপিক হাতে।ঈশানের কান্ডে ভ্রু যুগল কুচকে গেলো ঈশার।
” সলিড বিষ তো নেই হারপিক আছে আশা করি এটাতে তোমার কাজ হবে।নাও।”
সে তো কথার কথা বলেছে আর ঈশান সিরিয়াসলি ভেবে নিলো?আহাম্মক বনে ঈশানের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো ঈশা।মুখ ঘুরিয়ে বলে,
” না হারপিকে চলবে না।ঘুমের ওষুধ আছে?”
” কি দরকার?”
” মানুষ ঘুমের ওষুধ দিয়ে কি করে?”
” তোমার মনে কি চলছে বলতো?এমন আবহাওয়া দেখে কি মাথা টাথা উল্টে গেছে?আমাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে কি করতে চাও তুমি?যা করার সামনা সামনি করো বাঁধা দিব না ফাজিল মেয়ে।”
ঈশান বকতে বকতে চলে গেলো পাশের রুমে।অপর দিকে ঈশা তাকিয়ে রইলো তার যাওয়ার পানে। এই ছেলে কি দুই লাইন কম বুঝতে পারে না?বেশি বুঝে কোন আক্কেলে?
বাতাসের গতি বেড়েছে এলোমেলো উড়ন্ত পর্দাগুলোর দিকে ঈশা তাকিয়ে ছিল আপন মনে।তখন কক্ষে আসে ঈশান হাতে তার এক প্লেট ভাত আর মাংস।ঈশার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
” এটা খেয়ে নাও।”
” খাব না।আগে আমাকে বাবার সাথে কথা বলতে দিন।”
” না খেলে না খাবে তবুও কথা বলতে দিব না।”
” আপনার কি মনে হচ্ছে না আপনি একটু বেশি বাড়াবাড়ি করছে?”
“বাড়াবাড়ি আমি নয় তুমি করছো যদি কোন সমস্যা থাকে সামনা সামনি আলোচনা করো,সবটা খুলে বলো।এভাবে সবার চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে বেড়ানোর কোন মানে নেই।”
” মানে আছে ঈশান।”
” তোমার কোন কথাই আমি শুনতে চাই না এখন খাবে।দ্রুত খাবারটা শেষ করো।”
ঈশা কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে ছিলো ঈশানো বসে ছিল কিছুটা দূরে।সে দেখতে চায় ঈশা কতটা বাড় বেড়েছে আজ যদি খাবার না খায় তবে একটা হেস্তনেস্ত হয়ে যাবে।ঈশা ঘুরে তাকালো পেছনে ঈশান তাকে সূক্ষ্মভাবে পরখ করছে ছেলেটার চাহনি মোটেও স্বাভাবিক লাগছে না।ঈশা খাবারের থালটা এগিয়ে নিল ছোট ছোট লোকমা তুলে শেষ করলো পুরো খাবারটা।
কথায় আছে যত গর্জে তত বর্ষে না হলোও তাই কালো মেঘে গম্ভীরভাব এঁটে থাকা আকাশটা কয়েক মুহূর্তে ঝকঝকে সাদা মেঘে ঢেকে গেছে।দূরে থাকা সূর্য্যি মামাটা ফিক করে হাসছে তার রোদের ফালি এসে নামলো ঈশার জানলায়।দেয়ালে থাকা মস্ত বড় টিভিটা অন করলো ঈশান সবটা দেখে শুনে বুঝে রিমোট ছুড়লো ঈশার দিকে।
” আমি বাইরে যাব ভালো না লাগলে টিভি দেখবে।খিদে পেলে কিচেনে চেক করবে পেয়ে যাবে।আরেকটা কথা, ছাড়া পাওয়ার জন্য চিৎকার চ্যাঁচামেচি করে কোন লাভ নেই এটা ব্যস্তময় এলাকা এখানে কারো সময় নেই তোমার দিকে ঘুরে তাকানোর।আর তুমি তো আছো নয়তলার উপরে এত কোলাহলের মাঝে তোমায় তাদের নজরে আসে কী না সন্দেহ।আর যদি চিৎকার করার চেষ্টাও করো লাভ নেই আমার লোক বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।”
ঈশানের কথাগুলো মন দিয়ে শুনলো ঈশা।টিভির রিমোটটা সাইডে রেখে বলে,
” আমায় ছাড়বেন কবে ঈশান?”
” যেদিন তুমি সত্যিটা বলবে।”
” আপনার সত্যি আপনি নিজেও জানেন।”
” এখন তুমি আমার মাথা গরম করো না।যা কথা হবার রাতে হবে এর মাঝে নিজেকে প্রস্তুত করো।”
৮০.
ঈশান বাড়ি ফিরলো সন্ধ্যায় মাহমুদা এতক্ষণ যাবৎ ছেলের অপেক্ষায় ছিলেন।ঘুম থেকে উঠে দেখেন ঈশান নেই দারোয়ানের কাছে জানতে চাইলে সেও মিথ্যা বলে কাটিয়ে দিয়েছে যে ঈশান সকাল সাতটায় বাসা থেকে বের হয়েছে।সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে হাতে অনেক কাজ বাকি অপরদিকে ঈশাকে নিয়ে এতটা ঝামেলা সব মিলিয়ে ভীষণ চিন্তায় পড়েছে ঈশান।এক চাটিয়া ঈশানের সব কাজের ভার পড়েছে রাসেলের উপর।মনে মনে ভীষণ খারাপ লাগছে ঈশানের।অফিস থেকে রাসেলকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছে ঈশান।
মাহমুদাকে দেখে কিঞ্চিৎ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো সে।ঈশাকে পালিয়ে যাওয়ায় সাহায্য করেছিলেন মাহমুদা আর তাই তো ছেলের চোখে চোখ রাখতে লজ্জায় ডুবে ম র ছেন তিনি।
” ঈশান ঈশার কোন খোঁজ জানো?”
“না।”
” ওহ।”
মাহমুদা নিশ্চিন্ত হলেন ঈশান মেয়েটাকে পায়নি।তবুও জেরা করতে বলেন,
” তুমি খুঁজি দেখোনি ভালো ভাবে?কোথায়…”
” প্লিজ আম্মু অভিনয়ে কাঁচা তুমি।তাই এবার অফ যাও।”
” কি বল..”
” ঈশাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য তুমি করেছিলে তাই না?তুমি এতদিন দেখোছো তোমার ছেলে কতটা মরিয়া হয়ে ওই মেয়েটাকে খুঁজে বের করেছে আর তুমি ওঁকে পালিয়ে যেতে দিলে!”
” কেন পালিয়ে যেতে দিব না?আমার ছেলে যে এতটা খারাপ হয়েছে সেটা কি আমি জানতাম?তুমি অয়ন নামের ছেলেটার সাথে কি করেছিলে তোমার কি একটুও খারাপ লাগা কাজ করেনি?তুমি অমানুষে রূপান্তরিত হয়েছ।”
” আমি যা করেছি তা নিয়ে আমার কোন আফসোস নেই যা করেছি বেশ করেছি।”
” আমিও যা করেছি বেশ করেছি ঈশাকে যেতে সাহায্য করেছি।”
মা ছেলের তর্কাতর্কির মাঝে নিরব দর্শক হয়ে রইলো রাসেল।সে জানে ঈশান এখন নতুন খেলায় মত্ত এতদিন যে পেরেশানির মাঝে তাকে রাখা হয়েছে এবার বাকিদের বাদর নাচ নাচিয়ে ছাড়বে সে।
.
বাড়ি ফিরে ঈশান অফিসের কাজে লেগে পড়ে।অফিস থেকে দুজন এসেছিলো তাদের দেওয়া প্রতিটি ফাইল বুঝে নিয়ে মাত্র অবসর হলো সে।দেয়াল ঘড়িতে জানান দিচ্ছে সাড়ে আটটা বেজে গেছে।তাই তো আর বেশি দেরি করা ঠিক হবে না এবার ফিরতে হবে ঈশার কাছে।মাহমুদার মাঝে আজ সারাটা দিন অস্থিরতা কাজ করছে ঈশার কোন খোঁজ তিনি পাননি।ঈশা যখন ঘর ছেড়ে বের হচ্ছিল তখন মাহমুদার নাম্বার থেকে মুজাহিদ হাসানকে ফোন করে জানিয়ে দেয় সে আসছে তারপর আর কোন খোঁজ পাওয়া গেল না।
” আজ রাতে কি ফ্লাটে থাকবি?”
” হুম।মাকে বলবি অফিস যাচ্ছি সেখানে কাজ করবো রাত জেগে।”
” আন্টি যদি সন্দেহ করে?”
” করবে না।তুই শুধু নিজেকে দৃঢ় রাখিস তবেই চলবে।”
দুজনের কথার মাঝে মাহমুদা এসে বসেন।হঠাৎ সদর দরজার কাছে মুজাহিদ হাসানকে দেখে কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েন তিনি।
” ভাইজান আপনি?”
” অসময়ে এসে বিরক্ত করে ফেললাম।”
” ছিহ এসব কি বলছেন।আসুন আসুন বসুন।”
ঈশানের মুখোমুখি বসলেন মুজাহিদ হাসান।ছেলেটা গম্ভীর মুখে সালাম জানিয়েছে।মাহমুদা বাড়ির গৃহকর্মীদের ইশারা করলেন নাস্তা পানি ব্যবস্থা করতে।মুজাহিদ হাসানের ক্লান্ত,পরিশ্রান্ত,ভেঙে পড়া মুখখানি দেখে বড্ড মায়া হলো মাহমুদার।
” এখানে আসার আমার মূল উদ্দেশ্যে হলো আমার মেয়ে।তা তো আশা করি বুঝতে পারছেন।”
” আপনার মেয়ের জন্য আমি আমার ছেলের বিরোধীতা করেছি গত রাতেই তাকে চলে যেতে সাহায্য করেছি। এরপর আপনার মেয়ে কোথায় আছে তার দ্বায় তো আমাদের নয়।”
” ঈশান নিশ্চয়ই জানে ঈশা কোথায় আছে।সে যখন ঈশাকে এতটা আড়াল থেকে খুঁজে বের করেছে তখন…”
মুজাহিদ হাসানের কথায় কপট হাসলো ঈশান।কিছুটা রাগ নিয়ে বলে,
” সরি আঙ্কেল ঈশার ব্যপারে আমি আর কিছু জানি না জানতেও চাই না।ক্রিমিনাল মাইন্ড আমার আপনাদের না?এতটা দিন শহরের অলিতে গলিতে কুকুরের মতো ছুটেছি,আমার লোকেরা নিরলস ভাবে ওঁকে খুঁজে গেছে অথচ আপনারা সব জেনেও আমাদের সাথে মিথ্যা নাটক সাজিয়েছেন?আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে সামনাসামনি আসুন,দৃঢ়তা নিয়ে কথা বলুন অথচ আপনারা কি করলেন?আপনাদের ভাষ্যমতে আমি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চলি, হ্যাঁ ঠিক তাই।আমার জেদ,আমার রাগ,আমার একগুঁয়ে স্বভাব সবটা এখন কন্ট্রোল রেখে চলি।অয়নের সাথে যা করেছি তা নিয়ে আমার কোন আফসোস নেই ঠিক করেছি।ওঁকে আমি মেন্টালি টর্চার করতে চেয়েছি যেমনটা সে তার প্রাক্তন স্ত্রীর সাথে করেছে।ভাববেন না অতীত জানি কি করে আপনাদের সাথে আত্মীয়তা করেছি সব না জেনে তো করিনি।আর কার কথার ভিত্তিতে আমাকে রেপিস্ট বানিয়ে দিলেন সেসব আমি দেখছি,এতবড় অপবাদ! যাই হোক ঈশা যাওয়ার সে গেছে তাকে নিয়ে আমি আর ভাবতে চাই না।আমার জীবনে ঈশা একটি লস প্রজেক্ট।”
ঈশান আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না গটগট পায়ে চলে গেলো নিজের কক্ষে।মাহমুদা ভীষণ বিব্রত বোধ করলেন।ঈশানের প্রতিটা বাক্যে মিশে ছিল ক্রোধ এবং ঘৃণা তবে কি সত্যি সে ঈশাকে ছেড়ে দিচ্ছে!
৮১.
ঈশান ফ্লাটে ফিরতে রাত এগারোটা বেজে গেলো।ঈশার রুমে গিয়ে দেখলো মেয়েটা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন দেয়ালে ঝুলে থাকা টিভিটা এখনো চলছে।তবে মেয়েটাকি টিভি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েছে?হয়তো।ঈশান ঝটপট বসলো ঈশার পাশে জ্বর এলো কি না দেখা দরকার।কপালে হাত দিয়ে দুশ্চিন্তা দূর হলো ঈশানের নাহ জ্বর নেই।আসার সময় হোটেল থেকে খাবার এনেছে ঈশান।দ্রুত ডিনার শেষে তাদের এই ঝামেলার নিষ্পত্তি করা দরকার।
” কখন এলেন?”
ঈশার কণ্ঠে চমকে গেলো ঈশান এই মেয়ে তো ঘুমচ্ছিলো তাহলে উঠলো কখন?নাকি নাটক করছিলো?
” তুমি তো ঘুমিয়ে ছিলে।”
” কড়া বডি স্প্রের গন্ধ যার একবার নাকে আসে তার মস্তিষ্কে জট ধরে যায় গা গুলায়।কি লাগিয়েছেন এটা বড্ড বাজে স্মেল আমার সামনে আসবেন না সরুন তো।”
বাজে স্মেল!মুখটা হা হয়ে গেল ঈশানের।নামি দামি ব্র্যান্ডের বডি স্প্রে তার উপর দামটাও নেহাত কম নয়।অথচ এই মেয়ে বলছে বাজে স্মেল!
” নতুন কিনেছি।”
” আগের টা ভালো ছিল।”
ঈশার সরল উত্তর।উঠে বসলো সে ঈশান তার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে।এই চাহনিতে পাত্তা দিল না ঈশা তার মন বলছে ঈশান কোন তালগোল পাকাচ্ছে।
” এই অবেলায় ঘুমালে কেন?ভেবেছিলাম বসে বসে ফ্যাচফ্যাচ কাঁদবে আমাকে তো তুমি পুরো সারপ্রাইজড করে দিলে।”
” এতদিন ভয়ে ঘুমাতে পারিনি কখন আপনার কাছে ধরা পড়ি এখন তো পড়ে গেছি আর তো কোন ভয় নেই।”
“কেন পালাবে না?”
” প্রয়োজন নেই।”
” মনে কি চলছে তোমার?”
” তা জেনে আপনার কাজ নেই।”
ঈশান কথা বাড়ালো না দুজনে একসাথে রাতের খাবারটা সেরে যে যার মতো রইলো।এই ফ্লাটের বারান্দাটা তুলনামূলক বেশ বড় উপর থেকে আশেপাশের পরিবেশটাও নজর কাড়া।অনন্য ভবনে জ্বলতে থাকা লাইট গুলো দূর থেকে মনে হলো যেন তারোকার আস্তরন।বারান্দায় হাটু মুড়ে চুপচাপ বসে রইলো ঈশা তার কাছে এসে উপস্থিত হয় ঈশান।ছেলেটাকি কিছু বলতে চায়?কিন্তু তার বলার আগে মুখ খুললো ঈশা।
” আপনি বাড়ি ফিরে যান ঈশান আমি একাই থাকতে পারবো।”
“ভয় লাগছে নাকি?”
” তা তো অবশ্যই।”
” ভেবো না চুপচাপ আছি।এতদিন যে কুকুরের মতো ছুটিয়েছো তার সাজা ভোগ তোমায় করতেই হবে।কিন্তু তার আগে আমার জবাব যাই ঠিক কি কারণে এতটা স্পর্ধা দেখিয়েছো।”
ঈশা চুপচাপ রইলো।তার দৃষ্টি এখনো বাইরে নিমজ্জিত।ঈশানের কণ্ঠ কিছুটা নরম হয়ে এলো মুখোমুখি বসলো ঈশার।
” ঈশা সত্যিটা বলো প্লিজ।আমাদের এত সুন্দর সম্পর্কে কেন ফাটল ধরাচ্ছো?”
” মা বাবা সেদিন জেনে গেছেন আপনি অয়ন ভাইকে কি ড ন্যা প করেছিলেন।আমি তৈরি হচ্ছিলাম আপনার সাথে বের হবো বলে,কিন্তু এর মাঝে আম্মু আমায় ডেকে নিয়ে গেলো অয়ন ভাইয়ের কিছু ছবি দেখানো হলো যেই ছবিতে আপনিও উপস্থিত ছিলেন।আমি সবাইকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করি কিন্তু কেউ মানতে নারাজ।যে বাবা সবসময় আপনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকতেন তিনিও ঘোর বিরোধীতা শুরু করলেন।অয়ন ভাইয়ের সত্যিটা জানাতে চেয়েছি আম্মু শুনলো না উলটো নানান কথা তুললেন।আমি যখন মানতে চাইনি তখন বাবা একটি কল রেকোর্ড শোনালেন যেটি আপনার বাবার ছিল তিনি অন্য কাউকে ফোনে বলছিলেন আপনার কথা।ওখানে আমার নামো উল্লেখ করা হয় আমি নাকি যখন জানবো আপনি রেপিস্ট তখন আমার রিয়েকশন কি হবে।এসব শোনার পরেও আমি চেয়েছিলাম আপনার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে কিন্তু আম্মু এর ঘোর বিরোধীতা করেন আমি বোঝাতে চাইলে গায়ে হাত তোলে।পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি চিরকুট লিখে আমি বাসা থেকে বেরিয়ে যাই।আর তারা বাকি কাজ করেন।তাদের ধারণা আমরা যদি বিয়ে ভেঙেদি আপনাদের ইগোতে লাগবে আর তাই পরিস্থিতি অনুকূলে যাবে।”
” তুমি আমায় বিশ্বাস করতে পারলে না?অন্তর একবার সবটা জানাতে।”
” আমি ভেবেছি অনেক ভেবেছি আমার মাথায় কিছু প্রশ্ন ঘুরেছে আর তাতেই আমি সমাধান খুঁজে নিয়েছি।আমি জানতাম আপনার বাবার সাথে আপনার কথা নেই,কেন নেই?আপনি এই অঘটন ঘটিয়েছেন বলে?
আপনি বছরের পর বছর এ দেশে পড়ে আছেন কিন্তু আপনার পরিবারের কাছে যাওয়ার কোন তাড়া নেই।আপনি সবসময় আমার কাজিনদের সাথে দেখলে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন এর কারণ কি?আপনি আপনার কাজিনের সাথে খারাপ করেছেন বলে আমাকেও সন্দেহ করছেন।আমি আদৌ জানি না এসব সত্যি কি মিথ্যে।আমি যেন এই গোলকধাঁধার মাঝে চেপে ম র ছি। ”
” আমার দিক থেকে শুনতে হলে তোমায় আমাকে বিশ্বাস করতে হবে তুমি করো তো আমায় বিশ্বাস?”
” বিশ্বাস করি কিন্তু… ”
” না বিশ্বাস করো না তুমি।করলে এতটা দূর আসতে হতো না আমাদের।তবে আমার দিক থেকে শোনো।
দেশ ছাড়ার পর আমাদের জীবনটা এক নিমিষে পালটে গেল।সেখানে প্রতিটা ধাপে ধাপে সময় মেনে চলে সবাই।পড়াশোনার ব্যাপারেও সবাই ভীষণ মনোযোগী।আমার বন্ধু সংখ্যা খুব বেশি ছিল না আমার বন্ধু ছিল রাসেল আর ফুফাতো বোন লিজা।আমরা তিনজন ছিলাম ভীষণ ঘনিষ্ঠ।কিন্তু লিজার বন্ধুর অভাব ছিল না সেখানকার স্থানীয় এবং ফিলিপাইন আফ্রিকার কিছু ছেলের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল।যেহেতু ওরা লিজার বন্ধু তাই আমাদের সাথেও ওদের সাক্ষাৎ বাড়তে থাকে।ওদের সাথে আমাদের ভীষণ ভালো সময় কাটে।বছর পেরিয়ে যায়, যার সাথে সাথে ওদের প্রতি বিশ্বাস,আস্থা,মায়া সবটা বাড়তে থাকে।আমরা প্রত্যকে প্রত্যকের বাড়িতে যেতাম আমাদের সম্পর্ক তখন ভীষণ ভালো ছিল।সময়ের তালে তালে আমরাও বড় হয়ে গেলাম আমাদের চাহিদা বাড়লো,সাহস বাড়লো এক কথায় আমরা আমরাই সেরা।ওখানকার স্থানীয় ‘নিক’ তার মা বাবা সেদিন বাড়ি ছিল না তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সেদিন ওদের বাড়িতে থাকবো রাত জেগে মুভি দেখবো,সন্ধ্যার পর নিজেদের মাঝে একটা পার্টি হবে। লিজা ছাড়াও আমাদের আরো দুইজন মেয়ে ফ্রেন্ড ছিল।আমি রাসেল লিজা ছাড়া বাকি সবাই ছিল খিস্ট্রান ধর্মের। আমরা ছেলে ছিলাম পাঁচজন এবং মেয়ে তিনজন।নিক নামের ছেলেটার বাড়িতে সেদিন পার্টি শেষে মুভি দেখার কোন পরিস্থিতি ছিল না।কারণ আমরা সবাই সেদিন অতিরিক্ত ড্রিংকস করে ফেলি।এতটাই ড্রিংকস করি নিজেদের মাঝে কোন হুঁশ ছিল না।আমাদের বাকি বন্ধুদের কালচার অনুযায়ী ঠোঁটে ঠোঁট ছোয়ানো,মদ্যপান এসব ওদের জন্য স্বাভাবিক।কিন্তু আমরা এসবে অভ্যস্ত ছিলাম না তবে লিজা একটু ওই স্বভাবের ছিল সে নিজের ব্যক্তিত্ব ভুলে বাকিদের মতো চলতে থাকে।মাঝে মাঝে আমাদের অন্য ছেলে বন্ধুদের কিস করতো সে যেটা আমার আর রাসেলের মোটেও পছন্দ ছিল না এসবের কারণে ওর সাথে আমাদের প্রায় সময় ঝামেলা লাগে।ফুফুকে বলতে চেয়েও বলে লাভ নেই ফুফু নিজেও এসবে কেয়ার করতেন না।অনেক বার নালিশ করেছি ফলাফল শূণ্য।সেদিন রাতে পার্টি শেষে রাসেলের ঘুম ভাঙ্গে সকাল প্রায় দশটায়।ঘুম থেকে উঠে সে দেখলো অনন্য ছেলে ফ্রেন্ডরা এখনো ঘুমে মেয়েরা তাদের রুমে সে ভাবলো লিজা বাকি মেয়েদের সাথে আছে।রাসেল নিকের খোঁজে যায় নিকের রুমে গিয়ে সে দন্দ্বে পড়ে যায়।দ্রুত আমাকে ডেকে তুলে তখনো নেশাটা আমাদের মাথা থেকে ঠিক ঠাক ভাবে যায়নি।তবুও রাসেলের তাড়া দেখে আমিও নিকের রুমে গেলাম।
তখন নিকের রুমে গিয়ে আমি স্তব্ধ হ্যাং হয়ে যাই। আমার মাথায় সেদিন আসমানটাই ভেঙ্গে পড়ে।দুজনে সেদিন রাতে ইন্টিমেট হয়েছিল আমার বুঝতে আর বাকি রইলো না।ওদের আপত্তিকর অবস্থায় দেখে আমার চোখে যেন শূল ফুটেছে।রাসেলের রাগে তখন থরথর করে কাঁপছিলো।লিজার অর্ধ ঢাকা অনাবৃত দেহটি আমাদের চোখের সামনে ছিল দ্রুত দুজনে রুম ছাড়ি।এরপর যা হওয়ার তাই হলো বন্ধুদের মাঝে ঝামেলা সৃষ্টি হয়।লিজা আমার আর রাসেলের পা ধরে মাফ চায় এসব কথা বাড়িতে জানা জানি হলে কেলেঙ্কারি ঘটে যাবে।নেশার ভ্রমে করেছে ভেবে বাকি বন্ধুরা এটাকে স্বাভাবিক ভাবে নিলো তারা বললো এটা চেপে যেতে।আমার মনে সেদিন ক্ষোভ ছিল।না চাইতেও লিজাকে সেদিন একটা সুযোগ দিলাম।কাউকে কিছু জানাইনি।পেরিয়ে গেলো আরো বেশ কিছু মাস।নিকের কাছে এসব ছিল সাধারণ ব্যপার তাই সে এরপরেও আমাদের সাথে যোগাযোগ রেখে যায়।তবে আমি ওই বন্ধু মহলটা ছাড়তে শুরু করি ধীরে ধীরে যতটা পারা যায় লিজাকে এড়িয়ে যেতাম তবে কি করছে না করছে খেয়াল রাখতাম।সেদিন রাসেলের জন্মদিন ছিল আমরা সব বন্ধুরা বাইরে রেস্টুরেন্টে খাব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।আমাদের আরেক বন্ধু ডেভিট আর রাসেলের মাঝে কিছু একটা নিয়ে ঝগড়া হয় তাই রাসেলের পক্ষ নিয়ে লিজা ডেভিটের বাড়ি যায় ওঁকে আনতে।আমরাও বারণ করিনি সময় যায় কিন্তু লিজা আর ডেভিট আসেনা অনেকবার ফোন দেওয়ার পর ফোন তুলেনি তারা। ভাবলাম কোন বিপদ আপদ্ হলো কি না।রাসেলকে রেখে আমি একাই গেলাম ডেভিটের বাড়ি।অনেকবার ডোর বেল বাজালাম কেউ দরজা খুললো না মনে মনে সন্দেহ জাগলো পেছন সাইডে ডেভিটের রুমের জানলা খোলা ছিল আর তখন আবার দেখলাম লিজার সেই একই ভুল মাথায় আমার রক্ত উঠে গেছিলো।রাগের দরুনে অকথ্য ভাষায় লিজাকে গালি দিতে থাকি মেয়েটা আমায় দেখে ভয় পেয়ে যায়।আমি বিকাল পেরিয়ে রাত হয় আমি আর বাসায় ফিরিনি ফোন বন্ধ করে ক্লাবে ছিলাম।লিজার একটা হেস্তনেস্ত করা দরকার ভেবে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম।বাড়ি ফিরলাম ভোরে তখনো জানতাম না আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে লিজা বাড়ি ফিরে আমার নামে মিথ্যা অপবাদ রটিয়ে দিয়েছে ততক্ষণে।আমার মা কাঁদছেন বাবা ক্ষেপে আছেন।ফুফা ফুফু তো যা নয় তাই বলছেন।লিজার অভিযোগ আমি মাতাল অবস্থায় ওর সাথে জোরাজোরি করেছি এবং এক পর্যায়ে আমরা অন্তরঙ্গ হয়েছি।আর এসবের সাক্ষি ছিল ওই ডেভিট।সেদিন সবাই আমার বিরুদ্ধে যাওয়ার আরেকটি মূল কারণ আমি মাতাল অবস্থায় বাড়ি ফিরেছিলাম। আর লিজার অভিযোগটাও যেন তার জোরালো প্রমাণ।সবাই আমাকে অনেক ভাবে অপমান করে,বাবা গায়ে হাত পর্যন্ত তুলেন।কেউ আমাকে বিশ্বাস করলো না।রাসেল আর মা তো পা গ ল হয়ে যাচ্ছিলেন তারা জানেন এমন ভুল আমি কখনো করবো না।এর মাঝেও ফুফুর চক্রান্ত ছিল তিনি সব সত্যি জানতেন আর তিনি যে সত্যিটা জানতেন এটা আমি ওদের মা মেয়ের আলাপেই বুঝেছিলাম।ফুফুর টার্গেট আমার আর লিজার বিয়ে দেওয়া।বাবাকে নানান ভাবে বুঝিয়ে কানে বিষ ঢেলে দিলেন।বাবা সিদ্ধান্ত নেন মেয়েটাকে রে প আমি করেছি আর ওঁকে আমি বিয়ে করবো।এত বড় অপবাদ! নিজেকে নির্দোষ অনেক ভাবে প্রমাণ করেছি কিন্তু আমার বাবা জেদি একগুঁয়ে মানুষ তিনি যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমাদের বিয়ে দিয়ে ছাড়বেন তবে তাই হবে।আমি না পেরে রুমার হাজবেন্ডের সাহায্য নিয়ে দেশ ছেড়েছি।নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছি এর পরেও উনি আমাকে ওই দেশে নেওয়ার নানান বাহানা করেন।আমার পেছনে লোক লাগান আরো কত কি।আমি তো শুধু শহর ছাড়িনি আমি আমার বাবাকেও ছেড়েছি।আমার একটাই আফসোস আমার জন্মদাতা পিতা আমাকে বুঝলো না।প্রতিটি পরিবারে এমন একটা বিষের কৌটা থাকে যার কারণে বাকি সদস্যদের বিষদিগ্ধা হতে হয়।আমার পরিবারে সেই বিষটা হলো আমার ফুফু।আমার বাবা একটা চরিত্রহীন মেয়েকে আমার ঘাড়ে তুলে দিতে চাইছেন যার চরিত্র কখনো ঠিক হওয়ার নয়।একটা বিধবা মেয়েকে কোন দ্বিধা ছাড়া মেনে নিতাম কিন্তু চরিত্রহীনকে কখনো মানতে পারবো না।
#চলবে__