অবাধ্য_বাঁধনে #পলি_আনান [পর্ব সংখ্যা ৩৯ক]

0
699

#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩৯ক]
__________________
“এই মেয়ে নাকি বাড়ির বউ আদব কায়দা কিচ্ছু জানে না ভাইয়া আপনি দেখেছেন আমার দিকে কীভাবে তাকিয়ে ছিল।আমি ফুফু শ্বাশুড়ি হই সালাম তো প্রাপ্য নাকি?”

” তোমায় দেখে আতঙ্কে মেয়েটার মুখ নীল হয়ে গেছে ভয়ে মুখ থেকে সালাম বের হয়নি।”

মাহমুদার কথা শুনে মুখ কুচকালেন লিপি।সব কাজে পুত্র বধূর পক্ষ নেওয়া মাহমুদার মুদ্রাদোষ হয়ে গেছে।আবিদ শাহরিয়ারের দৃষ্টি নিবদ্ধ টিভির দিকে আশেপাশে দুই নারীর তর্কাতর্কি তার কানে এসেও আসছে না।রাত অনেক হয়েছে এবার ডিনারটা সারতে হবে মাহমুদা টেবিলে খাবার গুছিয়ে ডাকলেন ঈশানকে।আবিদ শাহরিয়ার টিভিটা বন্ধ করে বসলেন টেবিলে তার পিছু পিছু গেলেন লিপি এবং লিজা।
.

“আমি যাব না নিচে আজ না খেলে কিছু হবে না।ঈশা তোমার খিদে পেয়েছে?আমি খাবার উপরে পাঠিয়ে দিতে বলবো।”

” ঈশান প্লিজ নিচে চলুন আপনি যদি এখন না যান সব দোষ আমার ঘাড়ে পড়বে সবাই বলবে…”

” কী বলবে?”

” এত কথা বলতে পারবো না আপনি চলুন এক্ষুনি যাবেন।”

ঈশান পাত্তা দিল না ঈশার কথায়।সে নিজের মর্জিতে শুয়ে পড়লো বিছানায়।নিচে গেলে ডাইনিং এ নিশ্চয়ই ফুফু আর বাবা চোখের সামনে পড়বে এদের মুখদর্শন করতে চায় না সে।ঈশা টেনে ধরলো ঈশানের হাত,

” চলুন ও ঈশান চলুন না।”

” আমি যাব না।”

” আমার ভীষণ ক্ষুধার্ত আমার জন্য অন্তত চলুন।”

” বেশি ক্ষিদে লাগলে আমায় খাও।”

” কি!”

” না মানে ওই যে ঝুড়িতে দেখো আমার কিছু বাদাম আর বিস্কুট আছে ওগুলো খাও পেট ভরে যাবে।”

ঈশানের কথার মাঝে দেয়াল ঘড়িতে ঢং ঢং শব্দ হলো ঘড়িটা যে জানান দিচ্ছে রাত বারোটা বেজে গেছে।মাহমুদা বার বার ঈশাকে অনুরোধ করেছে ঈশানকে নিয়ে যেন সে নিচে নামে।তাই তো ঈশানের ত্যাড়ামির কাছে হারলে আজ চলবে না।

” ঈশান শেষ বার বলছি আপনি যদি নিচে আমার সাথে না যান তবে তবে তবে উমমম হ্যাঁ আমি আপনার সাথে ঘুমাবো না অন্য রুমে চলে যাব।”

” তুমি জানো আমায় এসব বলে লাভ নেই।আচ্ছা থাক বউটাকে আর কষ্ট দিয়ে লাভ নাই চলো।”
.

খাবার টেবিলে নেমেছে নিগূঢ় নিরবতা।সকলের মুখে রা নেই মাহমুদা আড় চোখে তাকাচ্ছেন ঈশানের দিকে ছেলেটা মাথা নামিয়ে যে খাচ্ছে খেয়েই যাচ্ছে আশেপাশে কেউ আছে কি না সে যেন বুঝতেও পারছে না।ঈশার অস্বস্তি ভাবটা বুঝতে পারছে ঈশান কিন্তু এখন কিছু বলবে না সে,মেয়েটা তাকে জোর করে নিচে নামিয়েছে এবার থাক বসে।

” ঈশান শ্বশুর বাড়িতে কেমন যত্ন আত্তি করলো তোমায়?”

মাহমুদার প্রশ্নে চোখে হাসলো ঈশান।ওই বাড়ির কথা মাথায় আসতে মনটা ভীষণ পুলকিত হলো।

” এমনি এমনি বলেনি শ্বশুর বাড়ি মধুর হাড়ি বুঝলে আম্মু নিজের ছেলের মতো আদর যত্ন করেছে।”

” তা তো করবেই।বড়লোক বাড়ির ছেলে জামাই হিসেবে পটিয়েছে ওনাদের ভাগ্য বলা চলে।”

শেষোক্ত বাক্যটি বলে তাচ্ছিল্য হাসলেন লিপি।তার কথায় আবিদ শাহরিয়ার ইশারায় চুপ থাকতে বলেন।এত বড় অপবাদ!লজ্জায় মিহিয়ে গেল ঈশা।মাহমুদা ভীষণ বেকায়দায় পড়লেন লিপির কি সব কাজেই নাক গলাতে হবে?ঈশান চুপচাপ মুখে খাবার পুরলো।

” এই মেয়ে কি যেন নাম?ওহ হ্যাঁ ঈশা তা তোমার বাবার কয়টা বাড়ি আছে এই শহরে?”

” তা দিয়ে আপনি কি করবেন?ওদের বাড়ির সামনে ভিক্ষা করবেন?নাকি কাজের লোক হিসেবে নিয়োগ হবেন?”

ঈশানের প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেলেন লিপি।মাহমুদা ঠোঁট কুচকে হাসছিলেন।ছেলের স্পর্ধা দেখে অবাক না হয়ে পারলেন না আবিদ শাহরিয়ার।চোখ রাঙিয়ে তিনি বলেন,

” ঈশান তোমার ফুফুর সাথে এভাবে কথা বলছো কোন সাহসে?”

” কোন সাহসে বলছি তার জবাব দিতে বাধ্য নই।”

” লিপি তো অযৌক্তিক প্রশ্ন করেনি যা বলেছে একদম ঠিকঠাক।”

” আমিও খারাপ কিছু বলিনি যা বলেছি একদম ঠিকঠাক।”

আবিদ শাহরিয়ার চুপ হয়ে গেলেন।এই ছেলের দিন দিন বেয়াদব হয়ে উঠছে।রাসেল আড় চোখে তাকালো ঈশানের দিকে তার পেট ফেটে হাসি আসছে কিন্তু এখন হাসা যাবে না।ছোট থেকে এই লিপির প্রতি কম ক্ষোভ জন্মায়নি তার।অনাথ বলে নানান কথা শুনিয়েছে একটা সময় সবটা চুপ চাপ হজম করেছে রাসেল।

ঈশানের হাতটা আলগোছে ধরলো ঈশা। ঈশান কি বুঝলো কে জানে সে ঈশার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,

” রাত বারোটা বেজেছে ওমনি দুষ্টুমি শুরু তাই না?এত অধৈর্য হচ্ছো কেন?খেতে দাও।”

ঈশার কানটা ঝাঁঝা করে উঠলো।এই ছেলে এমন কেন?সবকিছুতে উলটা পালটা দুই লাইন বেশি বুঝে।
৯৭.
বিষণ্ণ মন নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বের হয়েছে অনু।এতদিন ঈশা তাকে টেনে টুনে নিয়ে যেত কিন্তু এখন নিজেকে বাধ্য মেয়ের মতো যেতে হচ্ছে।একা একা যেতে কি ভালো লাগে?আজ ভুলেও ভার্সিটির দিকে আসতো না সে কিন্তু আসার একমাত্র কারণ গতরাতে ঘরে তুমুল ঝগড়া হয়েছে।ঝগড়ার মূল কারণ তার বিয়ের প্রস্তাব এসেছে ছেলে ভালো সরকারি চাকরি করে।পরিবারের সদস্য সংখ্যা কম শহরে ছেলেদের বাড়ি আছে সব মিলিয়ে গলে গেছেন অনুর মা দোলন।এদিকে অনুর বাবার ইতিবাচক মতামত দিয়েছেনে সব মিলিয়ে গ্যাঁড়াকলে ফেসে গেল মেয়েটা।ঈশার বিয়ে হওয়ার পর থেকে দোলনের ঝোঁক বেড়েছে অনুকে বিয়ে দেওয়ার।

রাস্তার পাশে অনুর গা ঘেষে একটি গাড়ি থামতে চমকে গেল অনু।গাড়ির জানলা দিয়ে মাথা বের করে অনুকে ডাকলো রাসেল।

” বলেছিনা আজ নিয়ে যাব চলে এলে যে?উঠে এসো।”

অনু আশেপাশে পরখ করে দ্রুত চড়ে বসলো গাড়িতে।প্রথম সাক্ষাৎকারে মিহি হাসলো দুজনে।

” গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে রাসেল।আজ ভার্সিটি যাব না অন্য কোথাও চলো ”

” ঠিক আছে।এবার বলো বাসায় কি হয়েছে।”

” বাবা মা আমার বিয়ে ঠিক করেছে।আমি এবার কি করবো।”

” মজা করছো?এর আগেও এমন মজা করেছো।”

” আমি সিরিয়াস রাসেল।আমি মজা করছি না।”

” হুম ঈশার বিয়ে হয়ে গেছে তো তাই এখন মনটা আকুপাকু করছে তাই না?”

” রাসেল আমি মজা করছি না।তুমি কি করবে তাড়াতাড়ি করো।”

” আমি এখন কী করবো?বাড়িতে আঙ্কেল এসেছে তারা ঈশার আর ঈশাকে আলাদা করতে উঠে পড়ে লেগেছে তার মাঝে আমি আমার বিয়ের কথা বলবো পাগল নাকি।”

” তাহলে আমি কি করবো?”

” যদি এটা মজা না হয়ে থাকে যদি সিরিয়াস ইস্যু হয় তবে আমি বলি যেভাবে হোক ওনাদের ম্যানেজ করো।”

অনু রুষ্ট হলো।তার ভীষণ কান্না পাচ্ছে গলাটা ধরে এসেছে কীভাবে কি করবে সে?বাবা যখন একবার মতামত দিয়েছেন তখন কোন মতেই টলানো যাবে না তাকে।অপরদিকে ঈশানদের পরিবারকে মোটাও পছন্দ করে না অনুর পরিবার।ঈশার মায়ের এত ভর্ৎসনা শুনে ঈশানদের প্রতি তাদের জন্ম নিয়েছে নেতিবাচক ধারণা।
.
ঈশানের শার্টের কলার ঠিক করে মিহি হাসলো ঈশা।তাকে নিগূঢ় চোখে পরখ করছে ঈশান।কখনো কখনো হুট হাট গালে ছুঁয়ে দিচ্ছে ঠোঁট।ঈশার চুলে হাত বুলিয়ে মেয়েটাকে আরো কাছে টানলো ঈশান।দুজনের মাঝে যে স্বল্প দুরত্ব ছিল সেটাও ঘুচে গেছে।ঈশা গলা জড়িয়ে ধরলো ঈশানের তবে এতে মাটিতে পা ছুঁতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।দু’হাতের আলিঙ্গনে ঈশাকে উপরে তুললো ঈশান।

” আজ ভার্সিটি যাবে না কেন?”

” আমার ইচ্ছে করছে না ঈশান।আরো কিছুদিন পর যাব।”

” গেলে ভালো হতো।যাও রেডি হয়ে আসো তোমায় নিয়ে যাব।”

” নিয়ে যাবেন?কোথায় নিয়ে যাবেন?”

” অফিসে নিয়ে যাব।এখানে তোমাকে রেখে গেলে আমি এক দন্ড শান্তি পাব না।”

” এ হয় না ঈশান।আমি এখানেই থাকবো।”

” জেদ করে লাভ নেই চলো আমার সাথে।মা নিজে বলেছে তোমায় নিয়ে যেতে।”

” আমি তো জেদ করছি না।আমি থাকতে চাই সবার সাথে মিশতে চাই।”

” এরা তোমার মনে আঘাত দিয়ে কথা বলবে ঈশা প্লিজ আমি এসব সহ্য করতে পারবো না।”

” আমাকে আমার মতো মানিয়ে চলার স্বাধীনতা দিন।আমি…”

ঈশান ঈশার ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ালো।কয়েক সেকেন্ডে নিজেকে ছেড়ে সংযত করলো সে।ঈশা যখন যেতে চাইছে না কি আর করার তখন একাই অফিসে যাবে সে।

৯৮.
গতকাল থেকে লিপির ভাবনায় ছিল কখন ঈশান বাড়ির বাইরে বের হবে।
ঈশান বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল আর এই সুযোগটা কাজে লাগালো লিপি।ঈশাকে নিচে আসতে দেখে মাহমুদাকে বলে,

” কি দিন কাল এলো শ্বাশুড়ি রান্না করে খাওয়াবে আর বাড়ির বউরা দুপুরে উঠে নাচতে নাচতে হাজির হবে।”

প্রতিটা কথা ঈশার কানে এলো তবে সে প্রত্যুত্তর করলো না।মেয়েটা চুপচাপ দাঁড়ালো মাহমুদার পাশে।ঈশাকে দেখলেই লিপির গায়ে জ্বলন ধরে ঈশানের ভয়ে কিছু বলার সাহস করে না।তবুও যতটুকু পারা যায় এই মেয়েকে অপদস্থ করতে ছাড়েন না।

“এই ঈশা নাকি ফিশা যাই হোক শুনো তোমার বাবা মা কি শিক্ষা দেননি শ্বশুর বাড়িতে কিভাবে চলতে হয়?”

” আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে শ্বশুর বাড়ি হলো পরিক্ষা কেন্দ্র যেখানে শিখে পড়ে আসতে হবে।যাই হোক শিখে পড়ে আসার আগে আপনাদের বাড়ির ছেলে আমাকে জোরজারি করে পরিক্ষার কেন্দ্রে ঢুকিয়ে দিয়েছে তাই তো পরিক্ষার কোন প্রস্তুতি নিতে পারিনি।এখন আশেপাশে মানুষগুলো থেকে দেখে শেখা ছাড়া আর উপায় নেই।”

ঈশার প্রত্যুত্তর শুনে হেসে ফেললেন মাহমুদা।ঈশার হাত টেনে বসালেন তার পাশে।অপমানে গাটা জ্বলে উঠলো লিপির।

” লজ্জা শরম নেই তোমার?ফুফু শ্বাশুড়ির মুখে মুখে তর্ক করো।”

” যদি ভুল হয়ে থাকে মাফ করবেন।”

” মাফ করার প্রশ্নই আসে না।তোমার মতো…”

” খবরদার লিপি আমার ছেলের বউকে নিয়ে তোমার কোন মতামত শুনতে চাই না।তাকে তুমি গ্রহণ করার কেউ না যে বিয়ে করেছে তার ভালো লাগলেই চলবে।”

মাহমুদার কড়া জবাবে থমকে গেলেন লিপি।একটা বাইরের মেয়ের জন্য এত দরদ।
.

” আসবো বাবা?”

অপরিচিত কণ্ঠে চমকে গেলেন আবিদ শাহরিয়ার।ঈশাকে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা সন্দিহান হলেন।আগাগোড়া একবার পরখ করে ঈশাকে আসতে ঈশারা করেন।হাতে জুসের গ্লাসটা টি-টেবিলে রেখে এক কোনে দাঁড়িয়ে রয় ঈশা।

” তোমাকে আমার রুমে পাঠিয়েছে কে মাহমুদা?”

” জ্বি।”

” এসেছো যখন ওখানে বসো।”

ঈশা মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো চুপচাপ বসলো একটি চেয়ারে।বুকের ভেতরটা কেমন ধুকপুক ধুকপুক করছে।

“এঙ্গেইজমেন্টের পরেও তোমাদের বিয়ে ভাঙার চেষ্টা করেছি তবে আমি সফল হইনি।এই নিয়ে আমার আফসোস নেই।আফসোসটা হচ্ছে আমার নিজের কাছে নিজের।যে মানুষটা নিজের কথার খেলাপ করে না আজ সেই মানুষটা হেরে যাচ্ছে কথা দিয়ে কথা রাখতে পারছে না।”

“এমন কোন কথায় আমাদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া উচিত নয় যে কথায় অন্যের ব্যক্তি স্বাধীনতায় বাধাগ্রস্ত হয়।আমার ভুল হয়ে থাকলে মাফ করবেন আমায়।”

আবিদ শাহরিয়ার চোখের চশমাটা ঠেলে দিলেন।ভ্রু যুগল কুচকে তাকালেন ঈশার দিকে।

” কথাটা ভালো বলেছো তবে ঈশানের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণটা নিশ্চয়ই জানো?”

” আপনি নিজেও জানেন আপনার ছেলে কখনো এমনটা কারতে পারে না।সে কিন্তু প্রমাণ করেছিল তার দোষ নেই সে সম্পূর্ণ নির্দোষ তবুও আপনি নিজের জেদে অটল রইলেন এর কারণ নিশ্চয়ই একটাই সেটা হলো লিজাকে এই বাড়িতে রাখার ব্যবস্থা করা।আপনি মেয়েটাকে অত্যন্ত ভালোবাসেন কিন্তু তাই বলে তার সাত খু ন মাফ করা উচিত নয়।আপনি কি সত্যটা উদঘাটন করেছিলেন?”

” প্রয়োজন বোধ করিনি আমি জানি লিজা এমনটা কখনোই করেনি।ঈশান যেসব প্রমাণ দিয়েছে আমি বিশ্বাস করেও করলাম না।একটা মেয়ে কখনো তার সর্বস্ব বিলিয়ে দেবে না তাই না?তবে একটা ছেলে ঝোঁকের মাথায় ভুল করতে পারে।”

” সবাইকে এক পাল্লায় মেপে কী সত্যটা প্রমান হবে?ঈশান আমার রক্তের কেউ না তবুও তাকে বিশ্বাস করি।”

” তোমার কি ধারণা এই বাড়িতে তোমার স্থায়িত্ব কতদিন?”

” শেষ নিশ্বাস অবধি।”

” এতটা আত্মবিশ্বাস।”

তাচ্ছিল্য হাসলেন তিনি।ঈশা মাথা ঝুঁকলো।আবিদের সাথে এতটা কাট কাট জবাবে কথা বলা কি ঠিক হচ্ছে?হয়তো না তবে ভুল কিছু তো বলছে না সে।

” আপনাদের ষড়যন্ত্রে আমি লিপ্ত হয়েছি।ঈশানকে অবিশ্বাস করে বাড়ি ছেড়েছি।ঘাপটি মেরে ছিলাম এক বদ্ধ রুমে লাভ কী হলো?আমার নিস্তার হয়েছে?ঠিকি তো আপনার ছেলে খুঁজে বের করল।”

“এত বিশ্বাস রেখে লাভ নেই।পুরুষ মানুষের মন বলা তো যায় না।”

” বিয়ের এত বছরেও আপনি পালটেছেন?মা বলেন ঈশান আপনার মতো হয়েছে।”

আনমনে হেসে ফেললেন আবিদ।অতীতে ফিরলেন আরো একবার।মাহমুদাকে বিয়ে করতে কম কসরত করতে হয়নি তাকে।জেদি,অবাধ্য আবিদ নুইয়ে গেলেন মাহমুদার নিকট।
৯৯.
অফিসে গিয়ে ঈশান আদৌ কাজ করছে কি না সন্দেহ হচ্ছে ঈশার।দশ মিনিট বাদে ফোন করে জানতে চায় কোথায় আছে সে।বিয়ের প্রথম প্রথম এত রঙ সবাই দেখায়।হেঁয়ালির কারণে যখন ব্যবসায় লোকশান হবে তখন ঠিকি ভালোবাসা জানলা দিয়ে পালাবে।
দুপুরে ঈশান অফিসে খেলেও আজ যে সে বাড়িতে আসবে তা খুব ভালো ভাবে জানে ঈশা।পুরো রুমটায় পাইচারি করে বারান্দায় যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো সে।তখনি কানে এলো লিজার গলা।

” আসবো?”

” হ..হ্যাঁ আপু আসুন।”

” একা কি করছিলে?”

” কিছু না।কি আর করবো।”

” এই বাড়িতে আমার মোটেও ভালো লাগছে না।আগে গ্রুপ স্টাডির কথা বলে বাড়ি থেকে বের হতাম সারা রাত-দিন চিল আর চিল কেউ কিচ্ছু বুঝতো না।”

” তাই নাকি ক্লাবে যেতেন?”

“হুম। সারা রাত পার্টি দিনে ঘুম।”

“বন্ধুদের সাথে যেতেন নাকি বয়ফ্রেন্ড নিয়ে যেতেন।”

” উভয়।আমার বন্ধুরা আমার স্বভাবের।যে ছেলেটাকে ভালো লাগে সর্বোচ্চ দুইমাস আর যার টাকা দেখে মন গলে তাকে সর্বোচ্চ দশ বারোদিন রেখে ছেড়ে দি।এর মাঝে লিভ ইন তো আছেই।”

ঈশা ঢোক গিললো।এতটুকুতে ঈশা বেশ ভালো ভাবেই বুঝেছে এই লিজা মেয়েটা মোটেও বুদ্ধিমান না সে সাধাসিধে নিজের জীবন নিয়ে তার কোন লজ্জা নেই,অপরাধবোধ নেই।যদি লজ্জিত হতো চালাক মেয়ে হতো কোনদিন ঈশার কাছে এসব সেয়ার করতো না।সত্যি কি লিজা ঈশানকে পেতে চায়?যদি ঈশানকে পাওয়া তার বাসনায় থাকতো তবে মেয়েটা ঈশাকে সহ্য করতেছেই বা কি করে!ঈশাকে চুপ থাকতে দেখে লিজা বলে,

” আচ্ছা একটা কথা বলতো এই পর্যন্ত কয়টা ছেলের সাথে রিলেশন ছিল তোমার?লিভ ইন করেছো?ঈশান তোমার জীবনে কত তম?”

” প্রথম এবং শেষ।”

ঈশা প্রত্যুত্তর করার আগেই ঈশান লিজার প্রশ্নের জবাব দিলো।তৎক্ষনাৎ ঈশা চোখ বুঝলো এই রে কাজ সেরেছে।ঈশান যে এই সময় আসবে তার ধারণায় ছিল তবে এত তাড়াতাড়ি যে আসবে ভাবতে পারেনি।অপরদিকে লিজা ঈশানের চোখে চোখ রাখলো।

” তুই কি ভেবেছিলি ঈশা তোর মত নোংরা?কাকে কি প্রশ্ন করছিস বোকা মেয়ে, ঈশা তো আমাকেই সামলাতে পারে না দশ পুরুষের সাথে আর করবে প্রেম?”

ঈশা চোখ বড় করে তাকালো ঈশানের দিকে।গলায় বেধে থাকা টাই খুলে ঈশার পাশে দাঁড়ালো ঈশান।

” এই রুমে আর আসবি না।তোকে দেখলে আমার সহ্য হয় না বের হ।”

” ঈশান তুমি আমার সাথে এমন বাজে ব্যবহার করো না প্লিজ।”

” বাজে ব্যবহার?আমার জীবনটা নরক করে দিয়েছিস তোকে মেরে চামড়া তুলে দি নাই এটাই তোর ভাগ্য নিজের ধৈর্য্যের তারিফ করছি।”

” আমি তোমার কাছে ক্ষমা চেয়েছি।যা হয়েছে প্লিজ ছোট বেলার ভুল ভেবে নাও।”

” স্বভাব চরিত্র কিচ্ছু পালটায়নি তোর।এখনো সেই একি আছে।আমি জানি লিজা এবার বাবার হাতে সব প্রমান দিতে পারি।”

” মামা আমায় অন্ধ বিশ্বাস করে।তুমি সব প্রমান দিলে উনি ভেঙে পড়বেন।মানসিক ভাবে শেষ হয়ে যাবেন নিজের বাবার ক্ষতি তুমি করবে না আমি জানি।”

” এখান থেকে যা আর কোনদিন আসবি না এই রুমে।আমার রুমে যার তার আসার অনুমতি নেই।”

” বউ নি একটু বেশি গর্ব তাই না মাটিতে তো পাও পড়ছে না দেখছি।”

” পা আমার মাটিতে থাকবে তবে বউয়ের পা থাকবে না কেন জানিস?”

ঈশান ঝটপট কোলে তুলে নিলো ঈশাকে।আচমকা টানে ঈশা ঈশানের শার্টের কলার খামছে ধরলো।

” দেখেছিস বউয়ের পা মাটিতে নেই।নতুন বিয়ে করেছি বউ নিয়ে একটু রোমান্স করবো তোদের জ্বালায় শান্তি নেই আসলে আসতি আরো সাত আট মাস পর এখন আসলি কেন?যা এক্ষুনি বের হ।আমার ভেতরের সত্তা জানান দিচ্ছে বউয়ের আদর না পেলে এখন তিনি রুষ্ট হবেন।”
এদের এত আদর সোহাগ দেখে লিজা কিঞ্চিৎ হাসে।তার মন বলছে ঈশানের সংসার ভাঙার জন্য লিপির একটা চাল যথেষ্ট।
#চলবে__

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here