#প্রিয়_তুমি
#পর্ব_২
#লেখিকা_N_K_Orni
আশহাব এবার লামিয়ার হাত ধরতে গেলে সে হাত ছাড়িয়ে সবার সামনে উঠে দাঁড়াল। তার এমন কাজে সবাই কিছুটা অবাক হয়ে গেল। নাতাশা সেদিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবল,
— লামিয়া আপু উঠে দাঁড়ালো কেন? আজকে সে খুবই অদ্ভুত আচরণ করছে। কিন্তু কেন?
কথাটা বলে সে লামিয়ার দিকে তাকালো। তখনই লামিয়া সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,
— আমাকে সবাই ক্ষমা করবেন। আমি এই বিয়েটা করতে পারব না।
কথাটা শুনে ওখানে থাকা সবাই খুবই অবাক হয়ে গেল। মিসেস তাহিয়া ওনার মেয়ের কাছে কাছে এসে বললেন,
— লামিয়া তুই এসব কি বলছিস? বিয়ে করতে পারবি না মানে কি? দেখ এখন মজা করার সময় নয়।
— আমি কোনো মজা করছি না মা। আমি এই বিয়েটা করতে পারব না। আমি কখনোই এই বিয়েটা করব না। আর না তো এই এঙ্গেজমেন্টটা আজকে হবে।
কথাটা শুনে আশহাবের বাবা আশরাফ সাহেব বলে উঠল,
— তুমি বিয়েটা করতে চাও না সেটা আগে বলোনি কেন? এঙ্গেজমেন্টের তারিখ ঠিক হয়ে যাওয়ার পরও তুমি চুপ করে ছিলে কেন? এতোদিন কেন কিছু বলোনি? আর আজকে যখন এঙ্গেজমেন্ট হচ্ছে তখন তুমি বলছো বিয়েটা করতে চাও না।
— আমি আপনাদের এভাবে এই পর্যন্ত এনে অ*পমান করতে চাইনি। কিন্তু এছাড়া কোনো উপায়ই ছিল না। আমার মতামত কেউ জানতেই চায়নি। আমার কাছে জিজ্ঞাসাই করেনি যে আমি বিয়েতে রাজি কিনা। এজন্যই আমি আজকে বলছি আমি এই বিয়েতে রাজি নই।
— তাহলে তোমার আমাকে অথবা আশহাবকে বলা উচিত ছিল। আশহাবকে বললে সে নিশ্চয়ই কিছু করত।
কথাটা শুনে লামিয়া একবার আশহাবের দিকে তাকালো। তারপর বলে উঠল,
— আমি আবারও দুঃখিত। কিন্তু যেখানে আমি আমার নিজের বাবা মাকেই বলতে পারিনি। সেখানে এমন একটা কথা আমি কীভাবে অন্য কাউকে বলতাম।
কথাটা শুনে আশহাবের বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলেন,
— আচ্ছা। তুমি যখন এই বিয়েতে রাজি নও তাহলে আমরা কেউ তোমাকে বিয়ের জন্য জো*র করব না। বিয়ে জো*র করে করার জিনিস না। তুমি না চাইলে এই বিয়েটা হবে না।
তখন পাশ থেকে মিসেস তাহিয়া বলে উঠল,
— না এমনটা বলবেন না। এই লামিয়া এসব কি বলছিস? আচ্ছা বিয়েতে মত নেই তাতে কি হয়েছে? এঙ্গেজমেন্টের পর বিয়ের আগে অনেক সময় বাকি আছে। ততদিনে সব ঠিক হয়ে যাবে।
লামিয়া এবার সহ্য করতে না পেরে কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠল,
— চুপ করো তুমি। তুমি আর বাবা সবসময় আমার উপর নিজেদের মত চাপিয়ে দেও। কিন্তু এটা বিয়ে। এতে আমারও মতামত থাকা খুবই জরুরি। বিয়ের প্রস্তাব পাওয়ার পর একবারও আমার কাজে জানতে চেয়েছো যে আমি বিয়েটা করতে চাই কিনা।
কথাটাগুলো শুনে ওখানে সবাই পুরোপুরি চুপ হয়ে গেল। কেউ বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছিল না। তখন লামিয়ার বাবা তার কাছে এসে বলে উঠল,
— আমি বুঝতে পেরেছি যে আমাদের ভুল হয়েছে। কিন্তু তোমার এখন এঙ্গেজমেন্টটা করে নেওয়া উচিত। আশহাব খুবই ভালো ছেলে। তাই ওকে বিয়ে করলে আমার মনে হয় না কোনো সমস্যা হবে।
— অবশ্যই সমস্যা হবে। সমস্যা যদি না হতো তাহলে তো আর আমি বিয়েতে না করতাম না। সমস্যা আছে বলেই আমি না করেছি। আমার বয়ফ্রেন্ড আছে। আর আমি যদি বিয়ে করি তাহলে তাহলে তাকেই করব, অন্য কাউকে নয়। এজন্য আমি এই বিয়েটা করব না।
কথাটা শুনে ওখানে থাকা সবাই খুবই অবাক হয়ে গেল। তারা কেউই আশা করেনি যে লামিয়ার বয়ফ্রেন্ড থাকতে পারে। মিসেস তাহিয়া লামিয়াকে তার কথার জন্য মা*রতে আসতে নিলে ওনার স্বামী ওনাকে চোখের ইশারা দিয়ে থামিয়ে দিলেন। নাতাশা এসব দেখে মনে মনে ভাবতে লাগল,
— এজন্য লামিয়া আপু এতো অদ্ভুত আচরণ করছিল। তারমানে আপুর বয়ফ্রেন্ড আছে। এজন্য আপু এই বিয়েটা করবে না।
এসব ভাবতে ভাবতে সে আশহাবের দিকে তাকালো। তাকে একবার পর্যবেক্ষণ করে মনে মনে বলে উঠল,
— ইশশ! কি ভেবেছিল আর কি হলো? বিয়েটা হচ্ছে না দেখে এর মুখ একদম চুপসে গেছে। বেচারা মনে হয় এখনো ঘোরের মধ্যে আছে।
পুরো রুমে চলছে পিনপিন নীরবতা। কেউ কিছু বলার মতো কথা খুঁজে পাচ্ছে না। কিন্তু সবার মনের নানা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। এদিকে এই অবস্থা দেখে নাতাশার বাবা নিহাদ মনে মনে ভাবলেন,
— আমার জন্যই এই অবস্থা হয়েছে। সবাই না ভাবলেও আমি মনে করি এই অবস্থার জন্য আমিই দায়ী। যতই হোক এই বিয়ের প্রস্তাব তো আমিই নিয়ে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম কি আর হলো কি? কেন যে সেইদিন ভাইয়াকে এসে এই প্রস্তাবটা দিতে গেছিলাম! ওইদিন না দিলে আজকে এসব কিছুই হতো না। এখন তো আমি লজ্জায় আমার বন্ধুর সামনেই যেতে পারব না। আমার জন্য ওকে আজকে এতো অপমানিত হতে হচ্ছে।
হঠাৎ নীরবতা ভেঙে লামিয়ার বাবা লামিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,
— তাহলে এখন তুমি কি চাও?
— এই বিয়ের বিষয় এখানেই বন্ধ করা হোক। কারণ আমি শুধুমাত্র আমার বয়ফ্রেন্ডকে বিয়ে করতে চাই। কিন্তু সেটা এখন নয়। তাই আমি এখন আমার পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে চাই।
— আচ্ছা তাই হবে।
বলেই তিনি আশহাবের পরিবারের দিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,
— আমি খুবই দুঃখিত। আমার আপনাকে এভাবে ডেকে এনে অপমানিত করার কোনো ইচ্ছা ছিল না। আমার মেয়ে এখনো ছোট। তাই ও না বুঝেই এসব করে ফেলেছে। পারলে আপনারা ওকে ক্ষমা করে দিয়েন। আমি এসব আগে জানতে পারলে এমনটা হতো না।
— সমস্যা নেই। আমরা তেমন কিছু মনে করিনি। আপনার এই নিয়ে এতো চিন্তার দরকার নেই। ওর মতের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছুই হবে না।
— আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।
তুবা এবার নাতাশার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠল,
— আপুর এই সাহসটা আরও আগে দেখানো উচিত ছিল। এই সাহসটা আরও আগে দেখালে আজকের এসব ঘটনা হতো না।
— হুম ঠিক বলেছি। এই সাহসিকতার পরিচয় দেরি করে দেখাতে গিয়ে আমার সব আশা শেষ করে দিয়ে গেল। ভেবেছিলাম কতোদিন পর কারো বিয়ে হচ্ছে। আমার বিয়েতে যাওয়ার আশা পুরো নিচে পড়ে গেল।
— থাক কষ্ট পাস না। লামিয়া আপুর এর সাথে বিয়ে না হলেও তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে তো বিয়ে হবেই। বিয়ে তো ঠিকই হবে শুধু বর বদলে যাবে।
তখন নাতাশার বাবা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,
— আমি একটু আশরাফের সাথে কথা বলতে চাই। যেহেতু এখানে আমারও সমান দোষ আছে। তাই এই বিষয়ে আমারও কথা বলাটা জরুরি। তাই আমি ওর সাথে একটু আলাদা কথা বলতে চাই। ভাইয়া তুমি যদি বলো তাহলে…
— হ্যাঁ ওখানে পাশের রুমে নিয়ে যা।
কথাটা শুনে ওনারা দুজন পাশের রুমে চলে গেলেন। তুবা ওনাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নাতাশাকে ফিসফিস করে বলল,
— এনারা আবার এখন কি কথা বলবে?
— আমি কীভাবে জানব? তুইও যেখানে আমিও সেখানে।
— সেটাও ঠিক।
মিসেস তাহিয়া এবার আশহাবের মায়ের কাছে গিয়ে বললেন,
— জানি আজকে যেটা হয়েছে ঠিক হয়নি। তার জন্য আমরা সবাই খুবই দুঃখিত। আপনারা ওসব নিয়ে আর চিন্তা করেন না। আপনারা ভাবেন যে আপনারা আমাদের বাসায় এমনি ঘুরতে এসেছিলেন।
ওনার এমন কথা শুনে নাতাশা মুখ টিপে হাসল। ওনারা দুজন ভেতরে গেছে অনেকক্ষণ হয়ে গেল। কিন্তু কেউই এখনো বের হননি। বেশ কিছুক্ষণ পর ওনারা দুজন বের হলেন। ওনাদের দেখে তুবা নাতাশার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে উঠল,
— আমার মনে হচ্ছে আবার নতুন কিছু ঘটতে চলেছে।
কথাটা শুনে নাতাশার তার মুখের দিকে তাকালো।
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )