প্রিয়_তুমি #পর্ব_১৩

0
220

#প্রিয়_তুমি
#পর্ব_১৩
#লেখিকা_N_K_Orni

নাতাশা মায়ের কোলে মাথা রেখে বলে উঠল,

— আম্মু আমি এমন কাউকে বিয়ে করতে চাই না যাকে আমি ভালোবাসি না।

— আমি বুঝেছি। কিন্তু তোমার বাবা তো বলেই দিয়েছেন যে তুমি যদি বিয়ের আগে তোমার পছন্দের কাউকে নিয়ে আসতে পারো তবেই বিয়েটা হবে না। নাহলে তোমার আশহাবকেই বিয়ে করতে হবে। আর তুমিও এতে রাজি হয়ে গেছো। সত্যি বলতে এখানে আমার কিছুই করার নেই। এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে তোমার ভাগ্যের উপর।

— এই কথাটাই আমি তোমাকে বলতে চাচ্ছি। আসলে আমি আমার পছন্দের কাউকে পেয়ে গেছি। আমি একজনকে ভালোবাসি। সে সবদিক দিয়ে আমার যোগ্য। আমি তাকে কিছুতেই হারাতে চাই না।

— কে সে?

— আমাদের কলেজের একজন টিচার।

— কিই! টিচার! শেষে টিচারের সাথে?

— তবে এছাড়াও তার একটা পরিচয় আছে। আর তুমি তাকে চেনোও।

— কি? আমি তাকে চিনি। আচ্ছা কে তিনি?

— নিহরাফ ভাইয়া।

— নিহরাফ! তোর ফুফির ছেলে?

কথাটা শুনে নাতাশা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো।

— ছেলেটা খারাপ না। কিন্তু তোর বাবা কি মানবে?

— মানবে না কেন? বাবা তো আমাকে কথা দিয়েছিল যে আমি যদি আমার মনের মতো কাউকে খুঁজে পাই তাহলে এই বিয়েটা ভেঙে দিবে। আর আমাকে তার সাথে বিয়ে দিবে।

— সেটা তো জানি। কিন্তু তোর বাবা যে অজুহাত দেখাবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর নিহরাফের ক্ষেত্রে দেওয়ার মতো অনেক অজুহাতই আছে। তাই নিশ্চিত করে কিছুই বলা যাচ্ছে না।

— বাবাকে আমাদের বিষয়ে কবে বলব?

— যত দ্রুত পারিস বলে ফেল। দেরি করলে ঠিক হবে না। সময় হাতে বেশি নেই। যদি না করে দেয় তাহলে তাকে রাজি করানোর জন্য সময় দরকার হবে। তাই দ্রুতই বলতে হবে।

— তাহলে আজকে অথবা কালকে বলব।

— হুম তাই কর।

নাতাশা তার বাবা ফিরলে তাকে পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করল। সে দেখল তার বাবার মন আজকে ভালোই আছে। সবকিছু যেহেতু স্বাভাবিক তাই সে ঠিক করল যে সে আজকেই তার বাবাকে তার আর নিহরাফের কথা বলে দিবে। কারণ কালকে ওনার মন ভালো নাও থাকতে পারে। রাতে খাওয়ার পর নাতাশা তার বাবার রুমে গেল। তারপর ওনার সামনে বসে বলে উঠল,

— বাবা তুমি তো বলেছিলে আমি যদি কাউকে পছন্দ করতে পারি তাহলে তুমি এই বিয়েটা ভে*ঙে দিবে।

— হ্যাঁ বলেছিলাম।

— আমি কাউকে পেয়ে গেছি। এখন আমারও বয়ফ্রেন্ড আছে। এখন তুমি এই বিয়েটা ভে*ঙে দেও। আমি তাকে বিয়ে করতে চাই।

কথাটা শুনে নাতাশার বাবা চুপ হয়ে গেলেন। তিনি ভাবতে পারেননি যে নাতাশা কাউকে নিজে থেকে পছন্দ করতে পারবে। তারপরও তিনি স্বাভাবিক রেখে বলে উঠলেন,

— কে সে?

— আমার কলেজের টিচার। তবে তার আরও একটা পরিচয় আছে। আর তুমি তাকে চেনোও।

কথাটা শুনে তিনি নাতাশার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। ওনাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নাতাশা নিজেই বলতে শুরু করল। সে ওনাকে তার আর নিহরাফের কথা বলল। সব শুনে নিহাদ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর বলে উঠলেন,

— নিহরাফের সাথে আমি তোমাকে বিয়ে দিতে পারব না। অন্য কেউ হলে ভেবে দেখা যেত। তাই তোমাকে আশহাবকেই বিয়ে করতে হবে।

কথাটা শুনে নাতাশা স্তব্ধ হয়ে গেল। সে সাথে সাথে বলে উঠল,

— কিন্তু কেন বাবা? নিহরাফকে নিয়ে কি সমস্যা? অন্য কাউকে নিয়ে ভেবে দেখতে পারলে নিহরাফকে নিয়ে কেন নয়? আমি ওকে ভালোবাসি।

— আমি তো বলেই দিয়েছি ওর সাথে বিয়েটা হবে না। তার থেকে বরং তুমি আশহাবকে বিয়ে করে নেও। ও অনেক ভালো ছেলে আর তোমাকে ভালো রাখবে।

— কিন্তু তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে। তুমি বলেছিলে আমি যদি কাউকে পছন্দ করতে পারি তাহলে তাকেই বিয়ে করব। তুমি নির্দিষ্ট করে কাউকে নিষেধ করোনি। তাহলে এখন কেন না করছো?

— আমি তখন বুঝতে পারিনি তুমি ওকে পছন্দ করে ফেলবে। ভালো এটাই হবে তুমি ওকে ভুলে যাও।

— একদমই না। আমি ওকেই বিয়ে করব।

— আচ্ছা তুমি এখন যাও। আমরা এসব নিয়ে পরে কথা বলব।

নাতাশা তার বাবার দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বেরিয়ে গেল। যাওয়ার সময় তার মায়ের সাথে দেখা হলো। কিন্তু সে ওনার সাথে কোনো কথা না বলেই রুমে চলে গেল। মিসেস রাহা মেয়ের অবস্থা দেখে বুঝতে পারলেন বিষয়টা কি হয়েছে। তিনি ভেতরে গিয়ে ওনার স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,

— আমি তোমাকে আগেই বলেছিলাম মেয়েকে মিথ্যা কথা বলো না। এমন কিছু করে না যাতে তোমার সাথে তোমার মেয়ের সম্পর্ক নষ্ট হয়। কথা যখন দিয়েছো তখন তোমাকে রাখতেই হবে।

— তুমি আমার দিকটা বুঝতে পারছ না।

— কি বুঝবো আমি? নিহরাফকে নিয়ে তোমার কি সমস্যা? ও তো সবদিক থেকেই ভালো। আমার তো মনে হয় ও আশহাবের থেকেও ভালো। আমাদের নাতাশার জন্য নিহরাফ একদম উপযুক্ত।

— সেটা তো আমিও জানি। কিন্তু নিহরাফের সাথে নাতাশার বিয়ে সম্ভব না। তুমি জানো না ভাইয়ার বিষয়টা। ওর সাথে নাতাশার বিয়ে দিলে ভাইয়ার সাথে আমার সম্পর্ক পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে।

— কিছুই হবে না। তুমি একটু বেশি বেশিই ভাবছো। উনিও তো ওনার মেয়ের পছন্দের মানুষের সাথেই তার বিয়ে দিচ্ছেন। তাহলে তুমি সেই একই কাজটা করতে দোষ কোথায়? তুমি একটু বেশিই ভাবছো।

— তুমি বুঝতে পারছো না। অন্য কারো সাথে বিয়ে দিলে সমস্যা হতো না। কিন্তু নিহরাফের সাথে দেওয়ার জন্য সমস্যা হতেই পারে।

— আমি আবারও বলছি কিছুই হবে না। তুমিও তো তোমার বোনের সাথে এখনো যোগাযোগ রেখেছো। তোমার সাথে তো উনি সম্পর্ক শেষ করেননি। তাহলে এই বিষয় নিয়ে কেন চিন্তা করছো? তুমি মেয়েকে কথা দিয়েছো। এভাবে এমন একটা কারণের জন্য মেয়ের চোখে নিজেকে ছোট করো না।

— আচ্ছা এসব বিষয়ে কথা বলা এখন বন্ধ করো। আমি পরে এসব নিয়ে ভেবে দেখব।

বলেই তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। নাতাশা রুমে এসেই দরজা বন্ধ করে বসে পড়ল। এমন কিছু হবে সে কিছুটা ভাবলেও পুরোপুরি নিশ্চিত ছিল না। এখন সে যেটা ভেবেছিল তাই সত্যি হয়ে গেল। সে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। সে সাথে সাথে নিহরাফকে কল দিল। নিহরাফ ধরতেই সে বলে উঠল,

— নিহরাফ আমি বাবাকে আমাদের কথা বলেছিলাম। কিন্তু বাবা রাজি হচ্ছে না।

— চিন্তা করো না। উনি ঠিক রাজি হয়ে যাবেন। দরকার হলে আমি ওনার সাথে কথা বলব।

— সেটার দরকার নেই। আমিই কিছু একটা করব। আমি ওনাকে রাজি করেই ছাড়ব। আচ্ছা তুমি তোমার পরিবারকে আমার কথা কবে বলবে? ওনারাও যদি রাজি না হন তাহলে কি হবে?

— চিন্তা নেই। আমি প্রথম থেকেই আমার মা বাবাকে তোমার কথা বলে দিয়েছিলাম। ওনাদের আমাদের সম্পর্ক নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। এখন শুধু মামা মামিকে রাজি করাতে হবে। তাহলেই হবে।

— মা তো রাজি হয়ে গেছে কিন্তু বাবা কিছুতেই হচ্ছে না। আচ্ছা বাবা যদি রাজি না হন?

বলেই সে কান্না করে দিল। তার কান্না শুনে অপর পাশ থেকে নিহরাফ অস্থির হয়ে পড়ল।

— কান্না করো না। আমি শুধু তোমাকেই বিয়ে করব। তার জন্য যা যা করতে হয় তাই করব। আমি কোনো না কোনো ব্যবস্থা ঠিকই করব।

— আচ্ছা।

বলেই নাতাশা ফোনটা কেটে দিল। পরদিন রাস্তায় আশহাবের সাথে লামিয়ার হঠাৎ করে দেখা হয়ে গেল।

চলবে,,,

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here