প্রিয়_তুমি #পর্ব_১৫ #লেখিকা_N_K_Orni

0
490

#প্রিয়_তুমি
#পর্ব_১৫
#লেখিকা_N_K_Orni

রুম থেকে বের হতেই নিহরাফের নাতাশার বাবার সাথে দেখা হলো। তিনি নিহরাফকে এই সময়ে এখানে দেখে খুবই অবাক হয়ে গেলেন। তারপর নাতাশার রুমের দরজা খোলা দেখে তিনি সবটা বুঝতে পারলেন। তিনি নিহরাফকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,

— নিহরাফ আমার মেয়ের এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেছে। দুইমাস পর ওর বিয়ে। তাই তুমি ওর থেকে দূরে থাকো। আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই।

বলেই তিনি চলে যেতে নিলেন। তখন নিহরাফ পেছন থেকে বলে উঠল,

— আমি আর নাতাশা একে অপরকে ভালোবাসি। তাই ওকে পাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা আমি করব।

বলেই সে বেরিয়ে গেল। নিহাদ ওর যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর তিনি পেছনে ফিরলে মিসেস রাহাকে দেখতে পেলেন। তিনি ওনাকে দেখে বলে উঠলেন,

— নিহরাফকে তুমিই ডেকেছিলে তাই না?

মিসেস রাহা কিছু না বলেই দাঁড়িয়ে রইলেন। ওনার কোনো উত্তর না পেয়ে নিহাদ ওনার দিকে একবার তাকিয়ে চলে গেলেন। ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মিসেস রাহা একবার দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। অনেকক্ষণ পর মিসেস রাহা নাতাশার রুমে গিয়ে দেখলেন ও ঘুমিয়ে গেছে। তিনি বের হতেই ওনার ফোনে একটা কল এলো। তিনি দেখলেন নিহরাফ কল দিয়েছে। তিনি আশেপাশে তাকিয়ে ফোনটা নিয়ে কিছুটা দূরত্বে চলে গেলেন।

— হ্যাঁ নিহরাফ বলো।

— বাসা থেকে বের হওয়ার মামার সাথে দেখা হয়েছিল। উনি এখনো আমাদের সম্পর্কে রাজি না। ওনাকে কি কোনো উপায়েই রাজি করা যাবে না? কিন্তু আমাকে নিয়ে ওনার সমস্যা কোথায়? আমি যেই সমস্যার কথা ভাবছি ওইটা না তো?

— হুম ওইটাই। কিন্তু সেটার সাথে আমাদের সম্পর্ক না মানার কি দরকার? সমস্যা তো বড়ো মামার তাইনা?

— ওই জন্যই তোমাকে উনি মানতে পারছেন না। আমি প্রথম থেকেই ভেবেছিলাম এমন কোনো সমস্যা হতে পারে। আর এখন এটাই একমাত্র সমস্যা।

মিসেস রাহা নিহরাফের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে কল কেটে দিলেন। আসলে নিহরাফ ছোট থেকেই নাতাশাকে পছন্দ করত। আর মিসেস রাহা সেটা জানতেনও। তাই যখন নাতাশার বিয়ে আশহাবের সাথে ঠিক হয় তখন তিনি নিহরাফকে কল দিয়ে এসব কথা বলেন। ওনার কথা শুনেই নিহরাফ এখানে এসেছে। তবে ওনার শর্ত ছিল যে নাতাশা ওকে না ভালোবাসলে সে কখনোই নাতাশাকে পাবে না। নিহরাফ শর্ত মেনেই এখানে এসেছিল। কারণ সে চেয়েছিল তার ভালোবাসাকে পাওয়ার একটা চেষ্টা করে দেখতে।

পরদিন থেকে নাতাশা তার বাবার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিল। সেই সাথে সকাল আর রাতে ওনার সাথে খাওয়াও বন্ধ করে দিল। এসব দেখে নাতাশার বাবার খুবই খারাপ লাগছিল। ওনার সবথেকে বেশি এজন্য খারাপ লাগছিল যে তিনি ওনার মেয়েকে কথা দিয়েও সেটা রাখতে পারেননি। এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর নাতাশার বাবা আর সহ্য করতে না পেরে আশহাবের সাথে নাতাশার বিয়েটা ভে*ঙে দিলেন। তারপর তিনি নিজে থেকেই নাতাশার কাছে গিয়ে বলে উঠলেন,

— আমি তোমার আর আশহাবের বিয়েটা ভে*ঙে দিয়েছি। তোমাদের আর বিয়েটা হচ্ছে না। তবে তারপরও আমি নিহরাফকে মেনে নিব না। আপাতত তোমার কোনো বিয়েই হবে না।

— বিয়েটা যেহেতু ভে*ঙেই দিয়েছো তাহলে নিহরাফকে মেনে নিতে কি সমস্যা?

— সমস্যার সম্পর্কে তুমি ভালো করেই জানো। তাই আমি ওকে মেনে নিব না। দরকার হলে অন্য কাউকে দেখো।

বলেই তিনি বেরিয়ে গেলেন। যদিও নাতাশার বাবা নিহরাফকে মেনে নেননি, তারপরও বিয়ে ভা*ঙার কথা শুনে সে খুবই খুশি হয়ে গেল। সে নিহরাফকে কল দিয়ে এই কথাটা বলে দিল। তারপর সে তার মায়ের কাছে দৌড়ে গেল এই কথাটা বলতে। এরপর থেকে নাতাশা বিভিন্ন উপায়ে তার বাবাকে তার আর নিহরাফের সম্পর্কে রাজি করাতে শুরু করল। কিন্তু তার বাবা কোনো ভাবেই রাজি হলেন না। নিহরাফও বেশ কয়েকবার নাতাশার বাবার কথা বলে ওনাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু তিনি রাজি হননি।

দেখতে দেখতে সময় চলে যেতে লাগল। নাতাশাদের পরিবারে লামিয়ার বিয়ের আয়োজন চলছে। লামিয়ার বিয়ের আর মাত্র দুইদিন বাকি। নাতাশার আর তুবার আর এক মাস পর পরীক্ষা। তাই ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও ওদেরকে কলেজে যেতে হয়েছে। ওরা দুজন প্রায়ই দিয়ার আগে কলেজে আছে। দিয়া কলেজে আসতেই তুবা ওকে দেখে বলে উঠল,

— শোন তুই কালকেই আমাদের বাসায় চলে আয়। আমার একমাত্র আপুর বিয়ে। আর তাছাড়া ওখানে আমাদের বয়সী তেমন কেউই আসবে। তুই না গেলে ভালো লাগবে না।

— কালকে হবে না। আমি বরং পরশু তাড়াতাড়ি চলে যাব। ওহ লামিয়া আপুর বিয়ের কথা শুনে একটা কথা মনে পড়ল। আদিব ওর পরিবার নিয়ে আমাদের বাসায় এসেছিল। বাবা আমাদের বিয়ে দিতে রাজি হয়ে গেছেন।

কথাটা শুনে নাতাশা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠল,

— সবার বাবাই রাজি হয়। শুধু আমার বাবাই রাজি হচ্ছেন না।

— রাজি হচ্ছেন না মানে? তোর সাথে তো আশহাব ভাইয়ার বিয়েটা ভেঙে গেছে। তাহলে কিসের রাজি হওয়ার কথা বলছিস তুই? তোর আবার কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে নাকি?

কথাটা শুনে নাতাশা আর তুবা একে অপরের দিকে তাকালো। তারপর তুবা নাতাশার কানে মুখ নিয়ে বলে উঠল,

— এবার তোর ওকে বলে দেওয়া উচিত।

তুবার কথা শুনে নাতাশা এবার বলতে শুরু করল,

— আসলে দিয়া আমার না বয়ফ্রেন্ড আছে। এজন্যই তো বাবা আমার আর আশহাবের বিয়েরটা ভেঙে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি আমাদের দুজনের বিয়ে দিতে রাজি না।

— কিন্তু কেন?

কথাটা শুনে এবার তুবা বলে উঠল,

— পরিবারের কিছু সমস্যার কারণে না করে দিয়েছেন। তবে আমার মনে হয় একটা সময় রাজি হয়ে যাবেন।

— ওহহ। আচ্ছা নাতাশা তোর বয়ফ্রেন্ড কি করে? আমি কি তাকে কখনো দেখেছি?

কথাটা শুনে তুবা কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই পাশ থেকে নাতাশা বলে উঠল,

— সে আমার কাজিন হয়। আমার আর তুবার ফুফাতো ভাই।

— ওহহ। এবার বুঝেছি। আমি তো ভাবছিলাম তুই বয়ফ্রেন্ড কীভাবে পেলি? তুই তো সেভাবে কলেজেও কারো সাথে কথা বলিস না। এবার বুঝেছি তুই কীভাবে বয়ফ্রেন্ড পেলি। বয়ফ্রেন্ড খুঁজতে আর বাইরে যাওয়া লাগেনি। বাসায়ই পেয়ে গেছিস।

— একদম ঠিক।

কলেজ শেষে ওরা দুজন বাসায় চলে এলো। লামিয়ার বিয়ের দিন নিহাদ খেয়াল করলেন লামিয়ার বাবা খুশি মনে সবদিকে নজর রাখছেন। এসব দেখে ওনার মনের ভেতরে অস্বস্তি হতে লাগল। উনি চাইলেও মেয়ের বিয়ে তার পছন্দের মানুষের সাথে দিতে পারছেন না এটা ভেবেই ওনার খারাপ লাগতে শুরু করল। লামিয়ার বিয়েতে আশহাব এসেছিল। সে নাতাশার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও নাতাশা তাকে এড়িয়ে গেল। বিদায়ের পর নাতাশার বাবা ওনার ভাইয়ের সাথে কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলছিলেন। একটা সময় ওনার ভাই বলে উঠল,

— তুই হঠাৎ নাতাশার সাথে আশহাবের বিয়েটা ভে*ঙে দিলি যে?

— আসলে নাতাশা অন্য কাউকে ভালোবাসে। তাই বিয়েটা ভে*ঙে দিয়েছি।

— ওহহ। তাহলে ওই ছেলের পরিবারের সাথে কথা বলে বিয়ে ঠিক করছিস না কেন? তুই ওর বিয়েটা ভে*ঙে ঠিকই করেছিস। আমি এখন বুঝতে পেরেছি যে যাকে ভালোবাসে তার সাথেই তার থাকা উচিত। এজন্যই আমি লামিয়ার এই বিয়েতে না করিনি। প্রথমে একটু খারাপ লেগেছিল। পরে আমি অনেক ভেবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নাতাশা যাকে পছন্দ করে তার সম্পর্কে কিছু জানিস?

— হুম আমি তাকে ভালো করেই চিনি। সে খুবই ভালো ছেলে। কিন্তু তার পরিবার নিয়ে একটু সমস্যা আছে।

— খুব বড়ো কোনো সমস্যা? আমাকে বলতে পারিস। আমি আর তুই মিলে আলোচনা করে ঠিক করার চেষ্টা করতে পারি। আসলে আমার মনের দিকে অনেক খারাপ লাগে। নিরার সাথে যেটা করেছি তার জন্য পরে আমার অনেক আফসোস হয়েছিল। কিন্তু লজ্জায় আর তার সাথে আমি কথা বলতে পারিনি। লামিয়ার বিয়ে দিতে গিয়ে আমি বিষয়টা আরও ভালো করে বুঝতে পেরেছি।

কথাটা শুনে নিহাদ চুপ করে রইলেন। এরপর ওনার মাথায় এই কথাগুলোই ঘুরতে লাগল। সারারাত এসব নিয়ে চিন্তা করতে করতে তিনি আর ঘুমাতে পারলেন। পরদিন তিনি ঠিক করলেন নাতাশা আর নিহরাফের সম্পর্কে তিনি রাজি হয়ে যাবেন আর নিহরাফের সাথে এই বিষয়ে কথা বলবেন। তিনি নিহরাফকে কল দিয়ে বিকালে দেখা করতে বললেন। তারপর নিহরাফের সাথে দেখা করে ওর সাথে তার আর নাতাশার সম্পর্কে বিষয়ে কিছু কথা বললেন। সবশেষ তিনি নিহরাফের পরিবারের সাথেও কথা বলতে চাইলেন। যাওয়ার আগে নিহরাফকে নাতাশাকে এসব বিষয় নিয়ে কিছু বলতে নিষেধ করলেন। নিহরাফও ওনার কথায় রাজি হয়ে গেল। পরদিন নাতাশার বাবা তার বোনের সাথে দেখা করা উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলেন। তারপর তাদের সম্পর্কের বিষয়ে কথা বলে তিনি নাতাশা আর নিহরাফের বিয়ের তারিখ ঠিক করলেন। নিহরাফও ওখানে উপস্থিত ছিল। কিন্তু ওনার মেয়ে বা স্ত্রী কেউই এসব বিষয়ে জানে না। যাওয়ার সময় তিনি নিহরাফকে আলাদা ডেকে বললেন,

— আপাতত নাতাশাকে এসব বিষয়ে কিছুই বলার দরকার নেই। সবটা যেমন চলছে সেভাবেই চলতে। আমিও ওদের দুজনকে এসব জানাতে চাই না। নাতাশার পরীক্ষা ঠিকঠাক ভাবে হোক তারপর ওকে এই বিষয়ে বলা যাবে।

— আচ্ছা।

আরও কিছু কথা বলে তিনি চলে গেলেন। দেখতে দেখতে নাতাশার পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল। নাতাশা এখনো তার বিয়ে ঠিক হওয়ার বিষয়ে কিছুই জানে না। তার পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরদিন তার মা তাকে তৈরি হতে বললেন। আসলে নাতাশার বাবা গত রাতেই ওনাকে সবটা বলে দিয়েছিলেন। নাতাশা কিছু বুঝতে না পেরে মন খারাপ করে তৈরি হয়ে নিল। সে নিহরাফকে কল দিতে যাবে তখনই তার রুমের দরজায় কেউ নক করল। সে পেছনে ফিরে দেখল নিহরাফ দাঁড়িয়ে আছে। সে নিহরাফের কাছে গিয়ে বলে উঠল,

— নিহরাফ এসব কি হচ্ছে?

— আজকে আমাদের বিয়ে। যেটার জন্য তুমি এতোদিন অপেক্ষা করে ছিলে আজকে সেটাই হতে যাচ্ছে।

কথাটা শুনে নাতাশা খুবই অবাক হয়ে গেল।

— কি? আজকেই! এভাবে হঠাৎ করে বিয়ে!

— হুম। আজকে সাধারণ ভাবেই বিয়েটা হবে। পরে নাহয় অনুষ্ঠান করা যাবে। তোমারই অপেক্ষা করতে ইচ্ছা করছিল না।

— কিন্তু তাই বলে এভাবে? আমি তো এসবের কিছুই জানতাম না।

— আচ্ছা। তুমি না চাইলে আজকে বিয়েটা হবে না। তাহলে আমি কি চলে যাব? ওদেরকে বলব আজকে চলে যেতে।

— না। কিন্তু বাবা…

— তোমার বাবা অনেক আগেই রাজি হয়ে গেছেন। আমরা দুজনে মিলেই আজকের এইটা ভেবে রেখেছিলাম।

— আর তুমি আমাকে বলোনি?

— হুম। তোমাকে চমকে দিতে চেয়েছিলাম তাই বলিনি।

এদিকে নাতাশার বাবা তার ভাইকে ডেকে নিয়ে এলেন। এতো বছর পর বোনের সাথে দেখা করে তিনি আর তার উপর রাগ করে থাকতে পারলেন না। ওনাদের মধ্যকার সমস্যার সমাধান হয়ে গেল। এরপর চলে এলো নাতাশার জীবনের সেই বিশেষ মূহুর্ত যা সে এতোদিন ধরে চেয়ে এসেছিল। অবশেষে নাতাশা আর নিহরাফের বিয়েটা হয়েই গেল। নাতাশাকে আর অন্য কাউকে বিয়ে করতে হলো না। সে নিজের ভালোবাসার মানুষকেই বিয়ে করতে পারল।

সমাপ্ত

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কারো ভালো না লাগলে ইগনোর করবেন। কিন্তু কোনো বাজে মন্তব্য করবেন না। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here