আমার_ভাঙা_ক্যানভাসে #পর্ব_৩ #তানজিলা_খাতুন_তানু

0
305

#আমার_ভাঙা_ক্যানভাসে
#পর্ব_৩
#তানজিলা_খাতুন_তানু

– ‘আপন মানুষদের সাথে এত ফরমালিটি মেনটেন করতে হয় জানা ছিল না।’

জয়ের কথা শুনে রুহির মুখটা গম্ভীর হয়ে উঠল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
– ‘আপনি আমার আপন জন নয় আর না আমি আপনার আপন জন। তাই অযথা কথা বাড়াবেন না আসতে পারেন।’
– ‘এত অভিমান!’

রুহি তাচ্ছিল্যের হেসে বলল,
– ‘অভিমান প্রিয় মানুষদের উপরে করা যায় কিন্তু আপনি তো আমার প্রিয় মানুষ নন তাই আপনার উপরেও আমার কোনো মান-অভিমান নেই। বেকার দাঁড়িয়ে সিনক্রিয়েট করবেন না, প্লিজ আমার রুম থেকে যান।’

জয় আহত হলো রুহির কথাতে, মেয়েটার মনে অভিমানের পাহাড় জমেছে, সেই অভিমান ভাঙাতে ওকে অনেক কাঠ-খড় পো’ড়াতে হবে সেটা ভালো ভাবেই বুঝতে পারল।

– ‘কি হলো দাঁড়িয়ে আছেন কেন, চলে যান।’

জয় রুহির ঘর থেকে বেরিয়ে যায়‌। রুহি ক্যানভাসের দিকে দৃষ্টি রেখে বিরবির করে বলল,
– ‘তোকে আমি কখনোই আগের জায়গায় বসাতে পারব না। তুই না‌ চাইতেও আমাকে অনেকটা দূরে ঠেলে দিয়েছিলিস আর এখন চাইলেও আমাকে আর ফেরাতে পারবি না।’

রুহি আঁকায় মন দিলো, কিন্তু প্রতিবারের মতো বিফল হচ্ছে তখনি জয়ের রঙ সাজেশনটা মাথায় আসলো। কি মনে করে রঙগুলো দিতেই আঁকাটা কিরকম একটা ফুটে উঠল, প্রান ফিরে আসলো। রুহির বিষন্ন মনটা ফুরফুরে হয়ে উঠছে,কোনো একটা কাজ করতে বসলে সেটা সাকসেসফুল হলে মনটা ভীষন ভালো হয়ে যায়। রুহির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।

কিছুক্ষণ আগের ঘটনা সম্পূর্ণ ভুলে আঁকাটাকে আরো সুন্দর করে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। রুহির মনখারাপের ওষুধ হলো এই রঙ তুলি, ক্যানভাস। এই আঁকার মাঝে নিজের কষ্ট, বেদনা, অভিমান সবটা উজার করে দেয় সব মনখারাপ নিমিষেই হারিয়ে যায়। তাই তো জয়ের সাথে সম্পর্ক শেষ করার যন্ত্রনাটা ভুলে থাকার জন্য একটা বছর নষ্ট করে আর্ট কলেজে ভর্তি হয় তারপর থেকে আঁকাটাই সবকিছু।

**

রুহি বসার ঘরে আসতেই ওর মা ডেকে বলল,
– ‘রুহু।’
– ‘কি বলো।’
– ‘জয় আসলো না, ওহ কোথায়?’
– ‘চলে গেছে।’ (গা ছাড়া ভাব নিয়ে)
– ‘কিন্তু কেন?’
– ‘এসেছিল চলে্ গেছে, কেন চলে গেছে আমি জানব কিভাবে! আজব তো।’ (বিরক্ত হয়ে )
– ‘নিশ্চয় তুই ঝগড়া করেছিস! বলি এত বড়ো হয়ে গেছিস এখনো দুজনে বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করবি।’ (ঝাড়ি মেরে)
– ‘মা প্লিজ আমি কারোর সাথে ঝগড়া করিনি। কি বলবে বলো, নাহলে আমি গেলাম।’
– ‘জয়কে ডাকতে যা। রাতের ডিনারটা আমাদের সাথেই করবে।’
– ‘কেন?’
– ‘রুহু এত কথা বলতে আমার ভালো লাগছে না। অনেক দিন পর বাড়ি এসেছিস দুজনে মিলে সময় কাটা তা না করে ঝগড়া করে চলেছিস।’

রুহির রাগ আকাশ ছোঁয়া। জয় সম্পর্কে কিছু কথা বলতে একদম ইচ্ছা করছে না।

– ‘মা জয়ের সম্পর্কে কোনো কথা বাদে অন্য কিছু বলার থাকলে বলতে পারো। নাহলে আমি গেলাম।’
– ‘এই শোন না, যা না জয়কে ডেকে নিয়ে আয়।’
– ‘আমি পারবো না।’
– ‘প্রিয়া এই প্রিয়া।’
– ‘কি হলো ওকে ডাকছো কেন?’
– ‘তুই তো যাবি না, প্রিয়াকে ডেকে আনতে বলি।’
– ‘কেন বাড়িতে অন্য কেউ নেই। আর জয়কে নিয়েই এত আদিক্ষেতার কি আছে সেটাই তো বুঝতে পারছি না।’
– ‘তোর সবকিছুতেই প্রবলেম। তুই নিজের ঘরে যা আমি প্রিয়াকে বলছি ডেকে আনতে।’
– ‘যতসব।’

রুহি রাগে গটগট করে পা ফেলে বাড়ির বাইরে চলে গেল। এখন কিছুতেই প্রিয়াকে জয়ের পাশাপাশি রাখা যাবে না, আগুনের সংস্পর্শে থাকলে বরফ গলবেই। হয়তো জয় অন্যভাবে, অন্য ভেবে প্রিয়ার সাথে মিশবে কিন্তু প্রিয়ার অবাধ্য মন অন্যকিছু ভেবে স্বপ্ন বুনবে আর শেষে কি আঘাতটা সহ্য করতে পারবে না।‌ রুহি চাই না তার আপন মানুষগুলো কষ্ট পাক, প্রিয়া কষ্ট পাক তাই নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়েই জয়কে ডাকতে গেল।

রুহির মা মেয়ের যাবার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
– ‘নিজেদের বাচ্চার ঝগড়া করার বয়সে নিজেরাই ঝগড়া করছে। এরা কি কখনোই বড়ো হবে না!’

– ‘মেজমা ডাকছিলে?’ (প্রিয়া)
– ‘হ্যাঁ। কিন্তু কাজ হয়েছে তুই তোর কাজে যা।’
– ‘কি জন্য ডাকছিলে?’
– ‘ওই জয়কে ডাকতে যাবার জন্য।’
– ‘আমি যায়।’ (খুশি হয়ে)
– ‘না থাক রুহু ডাকতে চলে গেছে। তুই তোর কি করছিলিস কর।’

প্রিয়ার মনটা ভারাক্রা’ন্ত হয়ে উঠল। রুহির কথা শোনার পর নিজেকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও পারছে না। অনেকদিন যাবত জয়ের প্রতি নিজের ভালোলাগা গুলো আঁকড়ে রেখেছিল সেইগুলো এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে। কিশোরী মনে বড্ড আঘাত পেয়েছে। প্রিয়া মনখারাপ করে নিজের ঘরে ফিরে গেল।

**

রুহি বিরক্ত হয়ে কলিং বেল বাজিয়ে চলেছে কিন্তু কারোর দরজা খোলার নাম গন্ধ নেই। রুহির বিরক্তি বাড়ছে, এমনিতেই ইচ্ছার বিরুদ্ধে আসতে হয়েছে তার উপরে আবার এইখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। মনে চাচ্ছে জয়ের নাকটা ফা’টিয়ে দিতে।

দরজা খোলার শব্দ হলো, রুহি তাকিয়ে দেখল জয় ঘুম ঘুম চোখে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। জয়ের ঘুমন্ত চেহারাটা রুহির বড্ড প্রিয় ছিল, প্রতিদিন সকালে জয়কে ঘুম থেকে তুলে কলেজে যাওয়াটা ওর নিত্যদিনের রুটিন ছিল কিন্তু সময়ের সাথে‌ সাথে সব অভ্যাস বদলে গেছে। বদলে গেছে সম্পর্কগুলো।
আজ কতদিন পর আবারো জয়কে এইভাবে দেখল।

জয় দরজা খুলে এক সুন্দরী তরুণীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হলো, ঘুমের তন্দ্রা তখনো ঠিকমতো কাটেনি আর রুহিকে অনেকগুলো দিন না দেখার কারনে ঠিক বুঝে উঠতে পারল না মেয়েটা আসলে কে। তাই সরল মনেই প্রশ্ন করল,

– ‘কে আপনি! কাকে চাই?’

রুহির রাগ তরতর করে বেড়ে উঠছে। রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
– ‘তোর বউ হা’রামী।’

কথাটা বলে রুহি নিজেও থতমত খেয়ে গেল। রাগের চোটে পুরানো অভ্যাসমতো জয়কে কথাটা বলে ফেলেছে। অন্যদিকে, চেনা কন্ঠস্বরে বহু চেনা কথাটা শুনে জয়ের ঘুয গায়েব হয়ে যায়। তখন আর বুঝতে অসুবিধা হলো না সামনের মেয়েটি কে! জয় রুহিকে নতুন রূপে দেখতে ব্যস্ত হলো, সত্যি মায়ের কথাই ঠিক মেয়েটা আগের থেকেও সুন্দরী হয়ে উঠেছে। তখন রুহি একনজর পেছনে ঘুরে পুনরায় ক্যানভাসে নজর দিয়েছিল তাই ওকে দেখতে পাইনি শুধু কন্ঠস্বরটা শুনতে পেয়েছিল। এতদিন না দেখার তৃষ্ণাটা মন মতো মিটিয়ে নিচ্ছে। রুহির বড্ড অস্বস্তি হচ্ছে, তাই কিছু না বলে চলে যেতে গেলে জয়ের ধ্যান ভাঙে। তাড়াতাড়ি করে রুহির পথ আটকে বলে,

– ‘কি হলো চলে যাচ্ছিস।’
– ‘তো কি করবো। এইরকম খাম্বার মতো তাকিয়ে থাকলে কি করবো!’ (রাগ দেখিয়ে)
– ‘আচ্ছা সরি। ভেতরে চল।’
– ‘ভেতরে আসতে আসিনি। মা আপনাকে রাতে খেতে যাবার ইনভাইট করেছে, চলে যাবেন।’ (গম্ভীর কন্ঠে)
– ‘শুধু মা বলেছে নাকি মায়ের মেয়েও চাইছে আমি যায়!’ (দুষ্টুমি করে)

রুহি রাগে কটমট করে তাকিয়ে বলল,
– ‘মায়ের মেয়ের খেয়ে দেয়ে কাজ নেই আপনাকে ইনভাইট করবে। আমাকে বলতে পাঠিয়েছে তাই এসেছি ইচ্ছা হলে আসবেন আর না হলে আস্তে হবে না।’
– ‘এইটা‌ আবার কি ধরনের ইনভাইট! একবার বলছিস যেতে আর একবার বলছিস না যেতে, কারন কি?'(ভ্রু কুঁচকে)
– ‘কারন আমি চাইনা আপনি যান।’ (সরল কন্ঠে)
– ‘ঠিকাছে ভেবে দেখব কি করা যায়।’ (শয়তানি হেসে)

জয়ের হাসিটা রুহির গা জ্বালিয়ে দিলো। ওহ খুব ভালো করেই জানে এই হাসির রহস্য, শয়তানটাকে হাজার বারন করলেও ও আজকে রাতে আসবেই। রুহি খুব ভালো করেই চেনে জয়কে তাই ওর শয়তানি হাসির মানে বুঝতে অসুবিধা হলো না।

– ‘আপনি যাবেন‌ ভালো কথা। কিন্তু আমার পেছনে লাগতে আসবেন না ফলটা ভালো‌হবে না।’ (আঙুল উঁচিয়ে)

রুহির আঙুলটা জয় নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আর একটু এগিয়ে এসে বলল,
– ‘আমি কি করবো আর না করবো সেটা তো তোকে বলে করব না। ইনভাইট করেছিস খাতির যত্ন করার জন্য রেডি হ।’
– ‘হু বয়েই গেছে ওনাকে খাতির যত্ন করার। আপনি কি আমার বর নাকি যে খাতির করবো, যতসব।’
– ‘হতে কতক্ষন।’

রুহি চমকে জয়ের দিকে তাকালো, জয়ের ঠোঁটের কোনে হাসি। রুহি জয়কে দ্বিতীয়বারের মতো বুঝতে অসফল হলো। প্রথমবার হয়েছিল যেদিন ওদের ফ্রেন্ডশিপ নষ্ট হয়েছিল আর আজকে। কি চাইছে জয়!

#চলবে…

হতে কতক্ষন! আপনারা কারা কারা চান রুহি আর জয়ের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা প্রেমের সম্পর্ক হোক? নিজেদের ইচ্ছাটা জানাতে ভুলবেন না।

আসসালামু আলাইকুম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here