#রোদহীন_বিকালে_তুমি✨
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৩
৩৮.
আজ সাতদিন হলো আনিশা তার বাড়িতে আছে।আলভি খুব মিস করছে আনিশাকে।আলভি আনিশার সব কান্ডগুলো মনে করে একা একাই হেসেছে।আনিশার ভ*য় পাওয়া মুখ খিলখিলিয়ে হাসির আওয়াজ সবই মিস করেছে।রুহানা তো তার মেয়েকে পেয়ে তাকে ছাড়তেই চাইছে না।আলভি বি*র*ক্তই হয়েছে যখন তারা আনিশাকে রেখে দিতে চেয়েছে।
আলভি আপাতত ফোন নিয়ে বসে আছে।আনিশাকে ফোন দিবে কি দিবে ভাবছে।কিছু না ভেবে কল দিয়েই দিলো।আনিশা বেলকনিতে বসে আলভির কথায় ভাবছিলো।ফোনের শব্দে ধ্যা’ন ভা’ঙে।ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই আলভির নাম দেখে মনটা খুশি হয়ে গেলো।হৃদয়ে খুশির ঢেউ বয়ে যায়।ও খুশি মনে কলটা রিসিভ করে।
রিসিভ করে হ্যালো বলতেই আলভি বলে,,,,”কবে আসছো”
আনিশা আলভির ক*ন্ঠস্বর শুনে হার্টবিট লাফাতে থাকে।ও কাঁ’পা কাঁ’পা কন্ঠে বলে,,,”জানি না মম আর বাবাই মনে হয় এখন যেতে দিবে না।”
আলভি কিছু বলল না।ফোনটা না কে*টে বসে রইলো।আনিশা আলভির নিশ্বাসের শব্দ শুনতে লাগলো।বেশ কিছু সময় পর আনিশা কাঁপা কাঁপা ক’ন্ঠে বলল,,,”শু…নুন আ..পনি কি আ..মাকে কা..লকে নিতে আসবেন”
আলভি কিছু সময় চুপ করে থেকে বলে,,,,”দেখি আমি সিয়র বলতে পারছি না”
আনিশার মন খা’রা’প হলো।ও নিজেকে সামলিয়ে বলল,,,”আপনি ঠিলমতো ঔষধ খাচ্ছেন তো”
আলভি হুম বলে ব্যস্ততা দেখিয়ে কল কে’টে দিলো।আনিশা ফোনের দিকে তাকিয়ে দী’র্ঘশ্বাস ফেলল।লোকটা ফোন দিলো আজ সাতদিন পর তাও দুই একটা কথা বলে ফোনটা কে’টে দিলো।আনিশা আলভির ভাবনায় আবার ম’গ্ন হয়ে যায়।তার সব কিছু বি*র*ক্ত লাগছে আলভিকে ছাড়া।
রোদ এসে পেছন থেকে আনিশাকে বলে,,,,”রোদুবুড়ি তুই এই বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছিস চল রুমে চল”
আনিশা রোদের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,”ভাইয়া আমার ভালো লাগছে না আমাকে একটু একা থাকতে দেবে”
রোদ বুঝলো আনিশার ম’ন খারাপ।ও আনিশার পাশে বসলো।তারপর আনিশাকে বলল,,,”আমি জানি তোর আলভির কাছে যেতে ইচ্ছা করছে কিন্তু রোদুবুড়ি ও তোকে অনেক ক*ষ্ট দিয়েছে এখন ওকেও একটু বোঝানোর পা’লা।আর ও যে তোকে ভালোবাসতে শুরু করেছে তা ওকেও বুঝতে হবে”
আনিশা বি’ষ্ম’য়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,,,”আলভি আমায় ভালোবাসে তুমি কীভাবে জানলে ভাইয়া”
রোদ হেসে বলে,,,,”আমি ওর বেস্টফ্রেন্ড চিনি ওকে।তোকে মম যেদিন এখানে থাকার কথা বলল তখন আমি ওর চোখে বি*র*ক্তি দিখেছি।ও যাওয়ার সময়ও তোর দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো তুই খেয়াল না করলেও আমি করেছি”
আনিশা বলে,,,”তো আমি এখন কি করবো ভাইয়া”
রোদ বাঁ’কা হেসে বলে,,,,”আমি এখন যা বলবো তুই শুধু তাই করবি বুঝলি বুড়ি আর কাল সকালে আলভি আসলে আমার কথায় শুধু হ্যা বলবি”
আনিশা মা*থা নাড়ায়।রোদ আনিশাকে ঘুমাতে বলে চলে যায়।আনিশা ভাবতে থাকে তার ভাইয়া কি করবে কাল।
৩৯.
আলভি সকাল সকালই আনিশাকে নিতে বেরিয়ে পরে।আজকে ও ড্রাইভার আনেনি।বি*র*ক্ত লাগে আলভির।তাই নিজেই কাউকে কিছু না বলে একাই আনিশাকে নিতে চলে আসে।আনিশার বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়ে নামে।অস্থির লাগছে একটু ওর।তাও নিজেকে স্বাভাবিক করে কলিংবেল বাজায়।রোদদের সার্ভেন্ট এসে দরজা খুলে দেয়।
আলভি সার্ভেন্টকে বলে,,,,”সবাই কি ঘুম?”
সার্ভেন্ট মা*থা নাড়াতেই আলভি আবার বলে,,,”আনিশার রুমটা কোথায়”
সার্ভেন্ট দেখিয়ে দিতেই আলভি উপরে আনিশার রুমে সামনে চলে আসে।দরজা খোলা দেখে অবাক হয়।ভেতরে ঢু’কে পরে ও।ভিতরে ঢু’কে দরজা আ’টকে দেয়।বিছানায় চোখ যেতেই চোখ আটকে যায় ওর।আনিশা টেডিবিয়ার জড়িয়ে এ’লোমে’লো ভাবে শুয়ে আছে।চুলগুলো আনিশার মুখের উপর পরে আছে।আলভি সোফায় বসে আনিশাকে খুঁ’টিয়ে খুঁ’টিয়ে দেখতে থাকে আনিশাকে।
আনিশা নড়েচড়ে উঠে।আলভি আনিশার পাশে বসে।আনিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।আলভি বুঝতে পেরেছে আনিশা আগে কতো কষ্ট করেছে।এখন তার সুখ সবদিক দিয়ে।আচ্ছে সে কি সত্যি এই মেয়েটার মা’য়া’য় জড়িয়ে পরেছে।এই সাতদিন কেনো মিস করেছ সে।বলতে গেলো ছ’টফট করেছে।ঠিকমতো ঘুমাইনি,খেতেও পারেনি।
৪০.
ফারিহা সবই দেখেছে।ফারিহা নিজের জন্য চা বানাতে নিচে নামছিলো তখনই আলভিকে দেখেছে।ওর কষ্ট লাগলেও একদিক দিয়ে প্রশান্তি পাচ্ছে। কারণ তার আনি আজ তার পরিবার তার ভালোবাসার মানুষকে পেয়েছে।কিন্তু তার আগের মতো ক*ষ্ট হচ্ছে হালকা ক*ষ্ট হচ্ছে।হয়তো সেও রোদের উপর দুর্বল হয়ে পরছে।
পরারই কথা ছেলেটা প্রচন্ড ভালোবাসে যে তাকে।ও রুমে চলে আসে।রোদ ঘুমাচ্ছে, রোদের দিকে ঝুঁ’কে বলে,,,”আমি আপনাকে ভালোবাসি কি না জানি কিন্তু ভী’ষন ভালোবাসতে চাই!জানি আপনি ভালোবাসেন ভী’ষণ তাই তো এখন আর আলভিকে সেভাবে মনে পরে না।”
রোদ হুট করে ফারিহাকে টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।ফারিহা হ’ত’ভ’ম্ব হয়ে থাকে।ঘোর ফিরতেই ফারিহা নিজেকে ছাড়ানোর চে’ষ্টা করতে লাগে।রোদ ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে,,,,”তুমি কি আমার প্রেমে পড়ে গেলে নাকি ফারুপরি”
ফারিহার কাছে রোদের কন্ঠটা নে’শার মতো লাগছে।ও নিজেকে সামলে বলল,,,,”মোটেও না আমি আপনার প্রেমে কেনো পরবো আপনি তো শাঁ’কচু’ন্নির বর”
কথাটা বলেই ফারিহা হাসলো।রোদ ফারিহাকে আরো শ’ক্ত করে জড়িয়ে ধরে হেসে বলে বলে,,,,”আমি শাঁ’কচু’ন্নির বর হলে শাঁ’ক’চু’ন্নিটা তো তুমিই”
ফারিহা নিজেই নিজের কথায় ফেঁসে গেলো।রোদ হেসে বলল,,,”ন’ড়া’চ’ড়া করবে না আমি ঘুমাবো ঘুমাতে দেও আমায়”
৪১.
১০টার দিকে সবাই উঠেছে।আনিশা আলভিকে নিজের রুমে দেখে প্রথমে চমকালেও নিজেকে সামলে নিয়েছে।কিন্তু নিজের দিকে তাকিয়ে চিৎকার দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।সে কখনো আলভির সামনে ওড়না ছাড়া যাইনি কিন্তু আজকে!ইস ল*জ্জার কথা আনিশার ল*জ্জায় মা*থা কা*টা যাচ্ছে।কিন্তু আনিশা কখনোই ভাবেইনি আলভি আসবে।প্রচুর খুশি হয় ও।আলভিকে দেখে প্রথমে রুহানা আর রুহান চৌধুরী অবাক হলেও বুঝতে পারলো আলভি তাদের মেয়েকে ভালোবাসতে শুরু করেছে।
রুহান আর আলভি সোফায় বসে গল্প করছে।রুহানা আর আনিশা রান্নাঘরে।রুহানা পা*গ*ল হয়ে গেছেন।জামাই প্রথম বাড়িতে এসেছে আর আদর যত্ন না করলে হয়।আনিশাও মাকে সাহায্য করছে।রোদ সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলল,,,,
“তা আলভি হঠাৎ আমার বাড়িতে যে কি ম’নে করে আসলি”
আলভি রোদের কথায় পা’ত্তা না দিয়ে বলল,,,,”আঙ্কেল আমি আনিশাকে নিয়ে যেতে চাই অনেক দিনতো হলো এখানে”
রুহান হেসে বলল,,,,”তোমার বউ তুমি নিতে পারো কিন্তু বাবা আমাদের কাছে কিছু দিন থাকলে ভালো হতো মেয়েটাকে অনেকদিন পর পেলাম তো”
রোদ সোফায় বসতে বসতে বলল,,,,”বাবাই কি বলছো কি রোদসী এই বাড়ি থেকে কোথাও যাবে না।এটা ওর বাড়ি আর ও এখানেই থাকবে।আর আলভির বউ মানে কি ও কি মানে রোদসীকে নিজের বউ হিসাবে। ও নিজেই বলেছে মানে না।তাই আমিও আমার বোনকে ওর কাছে দিবো না।এতোদিন ওর কোনো যাওয়ার জায়গা ছিলো না এখন ওর বাবা ভই দু’জনেই বেঁচে আছে। আর আলভি তো কম ক*ষ্ট দেয়নি ওকে।তাই আমি ভেবেছি ওদের ডি’ভো’র্স করাবো”
রুহান অবাক হয় রোদের কথা শুনে ফারিহাও প্রচুর অবাক হয়।আলভি রা*গে নিজের হাত মুঠ করে।রাগ ক’ন্ট্রো’ল করার চে’ষ্টা করতে থাকে।ও নিজেকে ক’ন্ট্রো’ল করে বলে,,,,
“আমি ওকে মানি আর না মানি এটা কোনো কথা না কথা হচ্ছে ও আমার বউ আর আমাদের বাড়িতে ডি’ভো’র্স দেওয়ার রীতি নেই তাই আমি আমার বউকে ছা’ড়’ছি না”
রোদ মনে মনে হেসে মনে মনে ভাবে,,,,”এই ছেলে ভা’ঙ্গ’বে তবু মচকাবে না।আমিও রোদ তোর মুখ থেকে আমার বুড়িকে ভালোবাসার কথা বের করেই ছাড়বো তা না হলে আমার নাম ও রোদ চৌধুরী নয় হুহ”
রোদ বলে,,,,”যেখানে ভালোবাসা নেই সেই সম্পর্ক রাখার কোনো প্রয়োজন নেই।আমি তোর থেকেও ভালো ছেলে দেখে আমার রোদসীকে বিয়ে দেবো!”
আলভি কিছু না বলে হনহন করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।আলভি বেরতেই রুাহন রে*গে বলল,,,”কি শুরু করেছো তুমি রোদ আমার মেয়েটার সং’সা’র ভা’ঙতে চাইছো কেনো তুমি”
ফারিহাও বলে,,,,”আপনি কি করছেন টা কি আমার ম’নে হয় আলভিও আনিকে ভালোবাসতে শুরু করেছে তারপরও আপনি ডি’ভো’র্সের কথা বললেন কেনো?”
রোদ হুট করে জো’রে জো’রে হাসতে লাগলো।হাসি থামিয়ে বলে,,,,,”বুদ্ধুটা যে আনিশাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে তা আমি জানি কিন্তু ব্যাটা শি’কা’র করবে না আর নিজেও মা’নতে চায় না।তাই একটু না’ট’ক করছি আর কি বাবই তুমি এর পরের বার ও এখানে আসলে ওকে বলবা ডি’ভো’র্সের কথা।”
চলবে,,,,,,!