#এক_টুকরো_সুখ
#পর্ব_১১
#লেখনীতে_শুভ্রতা_প্রাণ
“রাফিদ মানে সেদিনের ওই ছেলেটা না যে কসমেটিকস এর দোকানে এসেছিলো?”
“হুম।”
“ও তোমাকে কেনো কল করবে? তোমার সাথে ওর কি দরকার? নাম্বার দিয়েছো কেনো ওকে?”
দুপুরের প্রশ্নে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। অতঃপর ছোট করে বললাম
“আমি নাম্বার দিইনি তাকে। মুহিন দিয়েছে। আর কি দরকার তা আপনার জানার দরকার আছে বলে মনে করছি না। আপনি যেতে পারেন।”
আর কোনো কথা না বলেই দুপুর ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। তাতে কেমন যেন লাগলো আমার। ওনার মনে হয় কিছু বলার ছিলো বললেন না কেনো? যাই হোক। এত ভাবা ভাবির কিছু নেই। এরপরে যতটা সময় দুপুর মিনা আপাদের বাড়িতে রইলো আমার সাথে একটাও কথা বললো না। আমিও যেচে বলতে গেলাম না কিছু। তার সাথে কথা না বললে আমার বয়েই যাবে। আমি বরং সব কিছু ঠিকঠাক গুছিয়েছি কি না একবার দেখে নিই। কাল সকাল সকাল বেরিয়ে যেতে হবে। ভুল হলে ভালো হবে না।
মিনা আপা, ফুপু, মিনাল সবার সাথে কথা বলে রাতে ঘুমুতে গেলাম। কিছুক্ষণ মোবাইল স্ক্রল করার পর যখন ঘুমাবো বলে চোখ বুজে নিয়েছি তখনই হঠাৎ একটা ম্যাসেজ আসলো। সিম কোম্পানির ম্যাসেজ হবে জেনেও কি মনে করে যেন ওপেন করলাম। কিন্তু না এটা সিম কোম্পানির ম্যাসেজ না। আননোন একটা নাম্বার এর ম্যাসেজ। ম্যাসেজের কথা গুলোও ভারী অদ্ভুত।
★এত রাতে জেগে কেনো তুমি? কোন রাজকার্য করছো জেগে জেগে? নাকি কারো সাথে প্রেমালাপে ব্যাস্ত? খুব বেশি সাহস হয়ে গেছে তোমার তাই না? একবার বাড়িতে ফেরো তারপর তোমাকে দেখছি।
আমি কিছু বললে ভালো লাগে না আর এখন রাত জেগে জেগে লোকজনের সাথে গল্প করছো? কি দোষ আমার বলো।
তুমি তো মেয়ে আগুন নও তবু কেনো আমায় এভাবে পুড়িয়ে মারছো?★
আজ্জব তো। আমি আবার কাকে কি করলাম? এসব কথার মানে কি? কার সাথে প্রেমালাপ করছি আমি? ধুর ভাবতে গেলেই জট পাকিয়ে যাচ্ছে। কে যে পাঠালো কে জানে। সম্ভবত কোনো পাগল টাগল হবে। নইলে সুস্থ কেউ কেনো আমাকে এরকম ম্যাসেজ করবে? ভাবনা চিন্তা সব পাশে রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম। এত ভেবে কাজ নেই আমার।
পরদিন সকালে উঠে কোনোমতে নাস্তা সেরেই রওনা হলাম বাড়ির দিকে। অনেক দিন পর নিজেদের বাড়িতে ফিরে কেমন আবেগ আবেগ জাগছে। আসলে আমরা নিজের ঠিকানা ছেড়ে যত বিলাসবহুল জায়গাতেই যাই না কেনো ছোট থেকে যেখানে বেড়ে ওঠা সেখানকার প্রতি একটা আলাদা টান থাকেই। সেটাই বোধহয় মাথা চাড়া দিচ্ছে এত দিন পর এসেছি বলে।
বাড়ি ফিরে আব্বার সাথে অনেক অনেক কথা বললাম। যত গুলো দিন কথা বলিনি আব্বার সাথে সেসব দিনের কথা গুলো বলে উসুল করে নিতে হবে তো! আম্মার সাথে যদিও আমার কোনো দিনই অত মাখামাখির সম্পর্ক ছিলো না তাও কম কথা হলো না। ব্যবহারও বেশ ভালোই লাগলো। একটু অবাক তো হলামই বটে। কিন্তু অবাক হওয়ার যে আরো অনেক বাকি তা ঠিক জানতাম না। যখন জানলাম একপ্রকার বাকরুদ্ধ আমি!
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে আম্মা আমাকে সব ঠিক করে রাখতে বলে চলে গেলেন। মুহিনও চলে গেলো কিন্তু আব্বা বসে রইলেন। বুঝলাম কিছু বলতে চান আমাকে।
“আব্বা ঘুমুতে যাবা না? রাত তো অনেক হইছে। কিছু লাগলে বলো আমি দিয়ে দিই। তারপর ঘুমুতে যাও।”
আব্বা একটু আমতা আমতা করতে লাগলেন।
“আসলে তোর সাথে একটু কথা ছিলো আয়ু।”
“বলো শুনছি তো।”
সব কিছু জায়গায় রাখতে রাখতেই বললাম।
“বাড়ি থেকে যাওয়া আসা করলে তো তোর অনেক কষ্ট হয়ে যাবে তাই ভাবছি কলেজে ভর্তি করে দিয়ে তার আশেপাশেই কোথাও থাকার জায়গা ঠিক করে দেবো।”
“ঠিক আছে। এর জন্য এখানে বসে থাকতে হবে নাকি। যাও ঘুমিয়ে পড়ো।”
“আসলে আরো একটা কথা বলার আছে।”
“হ্যাঁ তো বলো। আমি কি বারণ করেছি নাকি বলতে। আর এত আমতা আমতা করছো কেনো বলো তো? হয়েছে টা কি?”
“আসলে আয়ু তোর কি কাউকে পছন্দ আছে? মানে আমি বলতে চাইছি যে একদিন না একদিন তো তোকে বিয়ে দিতেই হবে তোকে তাই না। তাই বলছি যে তোর কি কোনো পছন্দ আছে? থাকলে আব্বার কাছে বল। আমি খোঁজ খবর নিয়ে ছেলে ভালো হলে তোর কলমাটা দিয়ে রাখবো। আর যদি আমার মনে হয় ছেলে তোর জন্য ঠিক না তাহলে তোকে আমার কথা মেনে নিতে হবে।”
অবাক হয়ে শুনলাম আব্বার কথা গুলো। এগুলো কি বলছে আব্বা? আমাকে কি উনি চেনেন না! পরে ভাবলাম হয়তো আশেপাশের ছেলে মেয়েদের অবস্থা, চালচলন দেখে ভয় হয়েছে।
“আসলে তুমি ঠিক কি বলতে চাইছো বলো তো আব্বা।”
“দেখ মা এখন তোর বয়স কম। বিবেকের থেকে আবেগ চলে বেশি মাথার মধ্যে। ভুল ত্রুটি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। এখনকার ছেলেপুলে অত ভালো না রে মা। কখন কীভাবে তোর ক্ষতি করে দেবে বুঝতেও পারবি না। তুই বড্ড বেশি ভালো রে আয়ু। কেউ ক্ষতি করলেও তার ভালো চেয়ে যাস, কিছু বলিস না তাকে। আমি বাপ হয়ে কীভাবে তোর ক্ষতি হতে দিই? তাই সব খোঁজ খবর নিয়ে রাখছি যাতে ভবিষ্যতে খারাপ কিছু না হয়। কিছু মনে করিস না রে মা।”
আব্বা আসলে ভুল কিছু বলেনি। দেখি তো চারদিকের অবস্থা। ছেলে মেয়েরা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে কিছু দিন যেতে না যেতে আবার নানা ঝামেলা করছে নিজেদের মধ্যে। আবার কিছু ছেলে মেয়েদের ক্ষতি করে ছেড়ে দিচ্ছে। কিছু মেয়ে ছেলেদের ঠকিয়ে যাচ্ছে। আরো কত কি। সেই দিক থেকে দেখলে আব্বার ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক। আরো তো আব্বা আমাকে একটু বেশি ভালোবাসেন। চিন্তা তো হবেই। তবু যাই হোক এত বড় বোকামি বা ভুল কখনো আমি করবো না যার জন্য আমার আব্বাকে কষ্ট পেতে হয় বা লোকের কথা শুনতে হয়।
“আমার জীবনে ওরকম কেউ নেই আব্বা। তোমার মেয়ের ওপর ভরসা রাখতে পারো তুমি। বিশ্বাস করো কখনো এরকম কিছু করবো না যার জন্য তোমার কষ্ট হবে।”
আব্বা আমার মাথায় হাত রাখলেন।
“বাঁচালি রে আয়ু মা। তাহলে যদি আমি আমার পছন্দের কারো সাথে তোর কলমা করিয়ে দিই তোর আপত্তি নেই তো?”
চমকে উঠলাম। এখনই কলমা। তবে কি আমার মনের মাঝে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা সুপ্ত বাসনা গুলো মনের মধ্যেই চেপে রাখতে হবে? প্রকাশ করতে পারবো না? তাহলে এরকম পরিস্থিতি এলো কেনো আমার জীবনে? চেয়ে দেখলাম আব্বা ঝলমলে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে আমি কখন হ্যাঁ বলবো সেটা শোনার জন্য। তবে কি আমি মনের অজান্তেই আব্বাকে কষ্ট দেওয়ার মতো কোনো কিছু মনের মাঝে পোষণ করে ফেলেছি?
চলবে…?