প্রিয়_তুমি #পর্ব_৭ #লেখিকা_N_K_Orni

0
618

#প্রিয়_তুমি
#পর্ব_৭
#লেখিকা_N_K_Orni

— নাতাশা বাইরে আয়। তোর বাবা তোকে ডেকেছেন।

— কেন?

— তোর ফুফির ছেলে এসেছে। তোর বাবা তোকে তার সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য ডেকেছেন।

— ওহ। আচ্ছা তুমি যাও আমি একটু পরে আসছি।

— আচ্ছা।

বলেই মিসেস রাহা রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। একটু পর নাতাশাও রুম থেকে বের হলো। ওখানে গিয়ে বাবার সাথে বলতে বলতে নাতাশার চোখ পাশের দিকে পড়লো। সে খেয়াল করল ওখানে থাকা ছেলেটাই একটু আগের ছেলেটা। সে বুঝলো এটাই তার ফুফাতো ভাই। তার বাবা তাকে ওর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে গেলে সে এক প্রকার অজুহাত দিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে এলো। নিহাদ বিপরীতে কিছুই বলার সুযোগ পেলেন না। এখন আর ওনার সাথে ওনার মেয়ের আগের মতো সম্পর্ক নেই। আশহাবের সাথে এঙ্গেজমেন্ট ঠিক হওয়ার পর থেকে নাতাশা ওনাকে সবসময় এড়িয়ে চলে। তাই নিহাদ আর ওকে কিছু বললেন না। নাতাশা রুমে এসে বসে পড়ল। তারপর মনে মনে বলতে লাগল,

— তার মানে এটাই ফুফির ছেলে। তার মানে ছেলেটা ওই সময় আমাদের বাসায় আসছিল। আচ্ছা তাহলে আমাদের বাসায় আসার সময় লিফট দিয়ে না এসে সিড়ি দিয়ে এলো কেন?

একটু পর রুমে মিসেস রাহা ওর রুমে এলেন।

— তুই ওখান থেকে চলে এলি যে? নিহরাফের সাথে কথা বললি না?

— না আমার অস্বস্তি লাগছিল।

— কিন্তু কেন? ও তো ফুফাতো ভাই। হয়তো আগে কখনো দেখা হয়নি কিন্তু তোর কাজিনই তো। তাহলে ওর সাথে কথা বলতে অস্বস্তি কেন হবে? আচ্ছা যাইহোক খেতে আয়।

— আচ্ছা।

বলেই সে তার মায়ের সাথে বেরিয়ে গেল। খাওয়ার পর রুমে সে তুবাকে কল দিল। কিন্তু অনেকবার কল দেওয়ার পরও তুবা ধরল না। সে ভাবল হয়তো তুবা ঘুমিয়ে আছে। তাই সে আর কল দিল না। দুপুরের পর নাতাশা ছাদে গেল। প্রতিদিন সে এই সময় তুবার সাথে থাকে। কিন্তু তুবা তাকে বলেছে সে আজকে বাসা থেকে বের হতে পারবে না। তাই সে একাই ছাদে এসেছে। ওখানে দাঁড়িয়ে সে এসব কথাই ভাবছিল। ওখানের বাতাসে তার চুল উড়ে বারবার মুখের সামনে চলে আসছে। আর সে বারবার সেগুলোকে সরিয়ে দিচ্ছে। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ এসে তার পাশে এসে দাঁড়ালো। সে প্রথমে তাকে তুবা ভাবলেও সে তাকিয়ে দেখল তার ফুফাতো ভাই। সে তার দিকে একবার তাকিয়ে সামনে তাকালো। তারপর মনে মনে ভাবতে লাগল,

— এ এখানে কি করছে? আচ্ছা আমি কি এর সাথে কথা বলে দেখব? এখন তো বাবাও নেই। না থাক। না কথা বলেই দেখি। কাজিনই তো, কথা বললে কি সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু কি বলবো?

এসব ভেবেই সে বারবার তার দিকে তাকাতে লাগল। কিন্তু কিছু বলল না। তাকে এমন করতে দেখে সে বলে উঠল,

— কিছু বলবে?

কথাটা শুনে নাতাশা মাথা নাড়িয়ে একবার হ্যাঁ বোঝালো আরেকবার না বোঝালো। তারপর আবার হ্যাঁ বোঝালো। নাতাশাকে এসব করতে দেখে সে মুচকি হাসল। তারপর সামনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

— তোমার নাম নাতাশা, তাই না?

— হ্যাঁ। আমার নাম নাতাশা। তোমার সরি আপনার ছোট মামার একমাত্র মেয়ে। আর আপনার নাম কি?

— তুমি চাইলে তুমি বলতে পারো। আমি কিছু মনে করব না এতে। এছাড়া আমাদের সম্পর্কে আপনি খুব একটা মানায় না। আর আমার নাম নিহরাফ।

নামটা শুনে তার মনে পড়লো সেই সময় তার মা তাকে এই নামটা বলেছিল। কিন্তু সে অন্য কথায় মনোযোগ দেওয়ায় নামটা খেয়াল করেনি। এখন নামটা শোনার পর হঠাৎ তার তখনের কথা মনে পড়লো।

— ওহ আচ্ছা। আসলে আমি অন্য কাজিনদের সাথে সবসময় বন্ধুর মতো ব্যবহার করি। কিন্তু তোমার সাথে আমার আজকেই প্রথম দেখা হয়েছে। তাই…

বলতে বলতে সে থেমে গেল। তখন নিহরাফ বলে উঠল,

— তাই কিছুটা অস্বস্তি বোঝ করছো তাই তো?

নাতাশা আবার মুখে কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝালো। তাকে আবার এমন করতে দেখে নিহরাফ আবার হেসে ফেলল।

— আমার মনে হয়েছিল তোমার আমাকে পছন্দ না।

— মানে?

— তখন আমার সাথে কথা বলেই চলে এলে যে? এজন্য মনে হয়েছিল হয়তো তোমার আমাকে পছন্দ না।

কথাটা শুনে নাতাশা কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। আসলে সে নিজেও জানে না সে কেন তখন চলে এসেছিল।

— এভাবে চুল খুলে ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা ঠিক নয়। বাতাসে বারবার চুল মুখের উপরে এসে তোমাকে বিরক্ত করছে। তোমার চুল বেধে এখানে আসা উচিত ছিল।

কথাটা শুনে নাতাশা হালকা হেসে বলে উঠল,

— এতে কোনো সমস্যা নেই। আমি এতে বিরক্ত হচ্ছি না বরং মজা পাচ্ছি।

— ওহহ।

তারপর ওরা দুজন আরও কিছুক্ষণ কথা বলল। একটা সময় ওরা দুজন ওখান থেকে নেমে বাসায় চলে গেল। নাতাশা বাসায় ফিরে প্রথমেই রুমে চলে গেল। সন্ধ্যার পর নিহরাফ বাসায় চলে গেল। যাওয়ার আগে সে নাতাশাকে তার ফোন নম্বর দিয়ে গেল। সেই সাথে সে তার ফোন নম্বরও নিয়ে গেছে। রাতে নাতাশা তার মা বাবার রুমের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল তখন তার কিছু কথা কানে এলো। না চাইতেও সে সেগুলো শোনের চেষ্টা করল।

— তুমি নিহরাফের আসার কথা ভাইয়াকে তো বলতে পারতে।

— আমি আজকে সকালেই বলেছিলাম। কিন্তু ভাইয়া বলেছে ভাইয়া নাকি ওই পরিবারের কোনো সদস্যের দেখা করতে চায় না সে যেই হোক।

নাতাশা আর না শুনে ওর রুমে চলে এলো। রুমে এসে এসব নিয়ে ভাবতে লাগল। তখন তার মনে পড়ল তুবার কথা। তুবা বলেছিল তার বাবা তাকে আজকে বের হতে নিষেধ করেছে। এখন তার মনে হতে লাগল তিনি নিশ্চয়ই নিহরাফের কারণে তুবাকে আজকে বের হতে নিষেধ করেছেন। সে মনে মনে বলল,

— তাহলে নিহরাফ ভাইয়ার জন্য তুবা আজকে বের হয়নি? হ্যাঁ তাই হবে হয়তো। নাহলে এমন কিছু করার কোনো কারণ তো আমার দেখি না।

তখনই ওখানে মিসেস রাহা এলেন। উনি মেয়ের পাশে এসে বসলেন। তারপর মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,

— কয়েকদিন ধরে দেখছি তুই তোর বাবাকে খুবই এড়িয়ে চলছিস?

— তুমিও তো জানোই যে ওই বিয়েটা নিয়ে আমি কতো চিন্তায় আছি।

— চিন্তা করার কোনো দরকার নেই। তুই ওসব নিয়ে ভেবে আর মন খারাপ করিস না। মনে কর তোর এঙ্গেজমেন্ট কখনো হয়ইনি। দেখবি কিছু একটা হয়ে ঠিকই বিয়েটা ভেঙে যাবে।

— তোমার কথাটা যদি সত্যি হতো! এই বিয়ের কোনো মানেই হয় না। আমরা কেউই বিয়েতে রাজি নই। তাহলে বিয়েটা হয়ে কি লাভ?

— কেউই রাজি নই মানে?

— আশহাব ভাইয়াও বিয়েটা করতে রাজি নয়। সে এখনো লামিয়া আপুকে ভালোবাসে।

— সেটাই স্বাভাবিক। তাকে পছন্দ না করলে ওই রকম খুশি খুশি মনে এঙ্গেজমেন্টে রাজি হতো না। কিন্তু সে বলছে না কেন যে সে বিয়েটা করতে চায় না?

— জানিনা। ফালতু লোক একটা।

— আচ্ছা আমি যাই। তোর সাথে পরে কথা বলব। আর ওসব নিয়ে কোনো চিন্তা করিস না।

বলেই তিনি রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। আর নাতাশা সেদিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। পরদিন সকালে তুবা আর নাতাশা কলেজে গেল। ক্লাসে যাওয়ার সময় ওরা ওদের সামনে আশহাবকে দেখতে পেল।

চলবে,,,

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here