#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৪১ ক]
______________________
“এখানে কেন ফোন করেছো?কাকে বাবা বলছো তুমি?তোমার কোন বাবা নেই।”
” বাবা এভাবে রাগ করে থেকো না।আমি অন্যায় করেছি বকো তাই বলে..”
” অযথা বকবকের সময় আমার কাছে নেই ফোন রাখো।ও হ্যাঁ এই বাড়িতে আসার দরকার নেই,না আসলে বেশি খুশি হব।”
একরাশ অভিমান নিয়ে ফোন কাটলেন অনুর বাবা বেলায়েত।অপর প্রান্তে অনু ঝাপসা চোখে চেয়ে রইলো দূর আকাশের পানে।কানে এখনো ফোনটা ধরে আছে।গলাটা কেমন ধরে এসেছে।বিয়ের দিন সকালে তাকে কাঁদতে হলো এতটাই হতভাগিনি সে।তবে কি নিজের পছন্দের মানুষকে বিয়ে করা এই জগৎ এর সবচেয়ে বড় ভুলের মধ্যে একটি?বাবা আমাকে পর করে দিল।অনু কান্নায় ভেঙে পড়লো।হাতের ফোনটা একটা আছাড় দিয়ে নিজের রাগ কিছুটা সংযত করলো তবে লাভ কী হলো?এখন ফোনটার জন্য বড্ড মায়া হচ্ছে।
” কাঁদছো কেন?”
রাসেলের কণ্ঠে নড়েচড়ে উঠলো অনু।কান্না লুকানোর বৃথা চেষ্টা করে অকপটে বলে,
” কই কাঁদছি।”
রাসেল মুখোমুখি হলো মেয়েটার।চোখের পানি মুছে বলে,
” নতুন বউ সাত সকালে কান্নাটা তার বেমানান।যে কারণেই হোক কাঁদতে পারবে না।”
” আব্বু আমাকে ওই বাড়ি যেতে বারণ করেছে।আমি তাদের পর হয়ে গেলাম।”
” বেশ তুমি যাবে না।যেতে চাইলেও আমি যেতে দেব না।তুমি সুখে থাকবে এতটাই সুখে থাকবে যে তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে ভালোবেসে ভুল করোনি।”
অনু প্রত্যুত্তর করলো না।নিশ্চুপ তাকিয়ে রইলো রাসেলের পানে।অনু রাসেলের ভেজা চুলে হাত বুলিয়ে স্বল্প স্বরে বলে,
” তুমি চুল শুকাওনি কেন?ঈশান ভাই এবার কিন্তু মজা নেবে।গতকালের চমকটা কেমন ছিল?”
” আমার ইমোশন নিয়ে খেলেছো তোমরা।জানো কতটা এক্সাইটেড হয়ে ঘোমটা তুলেছিলাম নাজমুলকে দেখে আমার কলিজাটা ছি ড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেছিলো।”
” এসব ঈশান ভাইয়ার পরিকল্পনা আমরা শুধু তার আদেশ মোতাবেক কাজ করেছি।”
” উনি তো আসল নাটের গুরু।সুযোগ পেলে মশাইকে বাদর নাচ নাচিয়ে ছাড়বো হুহ।”
.
বিয়ের আনন্দের রেশ এবার কিছুটা হলেও ফিকে হয়েছে।আগের ন্যায় পড়াশোনায় মন বসিয়েছে ঈশা।অনু আর ঈশা মিলে ক্লাস শেষে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কেনাকাটার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে।যদিও রাসেল আজ তাদের বাসায় পৌঁছে দেবে বলেছিলো তবে তা নাকচ করেছে ঈশা।কেক তৈরির কিছু সরঞ্জাম কিনতে একটি দোকানে প্রবেশ করে তারা।ঈশা অনু সাথে টুকটাক আলোচনা করে একে একে প্রয়োজনীয় পন্য ক্রয় করছিল হঠাৎ কানে আসে চিরচেনা কণ্ঠ।অবিশ্বাস্য চোখে পাশে তাকাতে চোখাচোখি হয়ে যায় দুজনের।
” এই ঈশা!”
” ভাবি!”
অয়নের প্রাক্তন স্ত্রী এগিয়ে এলো ঈশার কাছে।তাকে খুশিতে জড়িতে ধরে কিয়ৎক্ষণ নিশ্চুপ রইলেন। তিনি ভাবতে পারেননি ঈশার দেখা পাবে।
” তুমি এখানে কেন ভাবি?তোমার তো কোন খোঁজ খবরি ছিল না।তোমার সম্পর্কে খোঁজ জানতে চেয়েও পাইনি ”
” ডিভোর্সের পর আমি আমার বাড়ি ফিরে গেছিলাম।ভাগ্যিস সেলাই জানতাম আর তার মাধ্যমেই যা রোজগার হতো নিজের খরচ চালাতাম।আমার পোড়া কপাল এই পোড়া কপালির ভাগ্যে কি আর সুখ জুটে?তবে আমি এখন ভালো আছি বেশ ভালো আছি।”
“এভাবে বলো না।দুঃখের পর সুখে মিলবে।তুমি এখানে যে?”
” কিছু দরকারে এসেছি।তুমি তো ভীষণ সুখে আছো তাই না?ঈশান ভাইয়া তোমায় চোখে হারায়।”
ঈশা চমকে গেলো।উনি কি করে জানলেন ঈশানের কথা?
” তুমি কী করে জানলে ভাবি?”
” তোমার বর আমাকে দোকান নিয়ে দিয়েছে।সেই দোকানের সেলাইর কাজ চলে, কারিগর তিনি নিজেই জোগাড় করে দিয়েছেন।কেন তুমি এসব জানো না?”
” কই না তো।ঈশান আমায় কখনো কিছু জানায়নি।তোমাকে সে কীভাবে চেনে?”
“অয়ন নাকি তোমার সাথে কী কী করেছে?তুমি নাকি আমার কথা তাকে বলেছো ঈশান চিরুনি তল্লাশি চালিয়ে আমায় খুঁজে বের করেছে।অয়নকে যে কি ড ন্যা প করেছে সেসব তো আমি জানতাম।বারণ করেনি ইতরটাকে আরো বেশি চটকালে খুশি হতাম।বাদ দাও ছ্যা চ ড়াটার কথা। তোমার বাবা মা ভালো আছেন?”
“ভালো আছে ভাবি।চলো আমাদের বাসায় খেয়ে দেয়ে তারপর যাবে।”
” এই নানা সময় নেই।ভালো থেকো আমার জন্য দোয়া করো যেন এবার অন্তত জীবনটা মন মত হয়।”
.
বাড়ির বউদের নিয়ে এত আহ্লাদ চোখে সয়না লিপির।এত কিসের আহ্লাদ?মাহমুদা অনুর সাথে তার অতীতের গল্প করছিলো মেয়েটা ধ্যান জ্ঞান সবটা ঢেলে দিয়েছে তার কথায়।অপদিকে লিপি তাদের দিকে তাকিয়ে আছে আক্রোশ নিয়ে লিজাটা কোথায় গেল?তাকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।এই মেয়েটা কি এখানে এসেও বয়ফ্রেন্ড পাতিয়ে ফেলেছে!ভাবতেই বড্ড রাগ লাগলো লিপির।সন্ধ্যার পর নাস্তা শেষে যে যার কক্ষে ফিরেছে।ঈশান সবে মাত্র বাড়ি ফিরলো মাহমুদার সাথে আলাপ সেরে নিজের কক্ষের দিকে গেলো।অনু বসে বসে শুনছিলো মাহমুদার একেরপর এক অতীতের কথা।আবিদ শাহরিয়ার অদূরে দাঁড়িয়ে দেখলেন বাড়ির ছোট বউ আর শ্বাশুড়িকে।এদের মেলবন্ধনটা একটু আহ্লাদের অপরদিকে ঈশা হলো দায়িত্ববান গোছগাছ স্বভাবের মেয়ে।অনুর কাজ চারদিকে ছোটাছুটি করা এটা ওটা বলে সবাইকে হাসাতে থাকা। রাসেল মাঝে মাঝে অনুকে চোখ রাঙায় বউদের মতো একটু থাকো না।কিন্তু কে শুনে কার কথা।
” আন্টি তুমি এই বাদরটার সাথে কী করছো?তুমি জানো সে এখন এখানে কেন বসে আছে?”
মাহমুদা পিটপিট চোখে তাকালেন রাসেলের দিকে।অনু দ্রুত উঠে গিয়ে বসলো মাহমুদার পেছনে।
” কি হয়েছে রেগে গেলি কেন?”
” আমি বললাম সন্ধার পর পড়তে বসাবো এইজন্য এখানে এসে পালিয়েছে।কত্ত বড় ফাঁকিবাজ ভাবা যায়।”
রাসেল চোখ রাঙিয়ে তাকালো অনুর পানে।মাহমুদা এবার ভীষণ চটে গেলেন রাসেলকে ধমক দিয়ে বলেন,
” তুমি আমার সামনে ওঁকে চোখ রাঙাও এত সাহস তোমার!পড়বে না অনু, যাও এখান থেকে।”
” আন্টি আশকারা দিও না প্লিজ ত…”
” আমি যতদিন দেশে আছি পড়তে হবে না ওঁর।তুমি তোমার রুমে যাও কথায় কথায় বউকে শাসন দেখানো মনে হচ্ছে লায়েক হয়ে গেছো।বিয়ের হাওয়া এখনো কেটেছে?কাটেনি এখনি পড়াশোনা।”
” কিচ্ছু বলবো না আমি,যাওয়ার সময় এই বাদরকে নিয়ে যাবে তোমার সাথে।”
” কাল রাতে তুমি বলেছো আমায় ছাড়া থাকতে পারবে না।আম্মু আমায় নিতে আসবে তুমি তাদের বারণ করেছো আমায় ছাড়া নাকি তোমার চলে না,আর এখন বলছো আমায় নিয়ে যেতে!”
শেষোক্ত বাক্যটি বলে ভ্রু নাচালো অনু।তার কথায় ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো রাসেল।মাহমুদা গলা ঝেরে কেশে উঠলেন।মনে মনে অনুকে গা ধা উপাধি দিয়ে দ্রুত উক্ত স্থান ত্যাগ করলো রাসেল।
.
” একটা মানুষের জীবনে পড়াশোনা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?তার স্বামীর থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ?”
ঈশান আড় চোখে তাকালো ঈশার পানে।মেয়েটা অঙ্কের সমাধনে ব্যস্ত ঈশানের কোন কথা এই মুহূর্তে কানে ঢোকানোর ইচ্ছে নেই তার।ঈশা ভাবে এই ছোঁচা লোকটা সারাদিন পেছনে পড়ে থাকে অফিসে গিয়েও তার দুইদন্ড শান্তি নেই।
” ও ঈশা।”
” আপনি আপনার কাজ করুন আমাকে আর এক ঘন্টা সময় দিন।”
” এক মিনিটো দেব না।বই বন্ধ করো ভালো লাগছে না দূর।”
ঈশান ঈশার হাত টেনে ধরতে ভীষণ রেগে গেল ঈশা।দাঁতে দাঁত চেপে ঈশানকে ধমক দিয়ে বলে,
” আমার কিন্তু ভাল্লাগছে না বলে দিলাম।বললাম তো এক ঘন্টা।”
” তুমি আমায় রাগ দেখাও।থাক তোমার পড়াশোনা গেলাম আমি।”
ঈশান বেশ রাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম ছেড়ে।মনে মনে ভয় লাগলো ঈশার এই ছেলের বিশ্বাস নাই যদি সত্যি সত্যি রেগে যায় তবে কী হবে!
১১০.
ঈশাকে রেখে ঈশার বাবার সঙ্গে আড্ডায় মেতেছে ঈশান।রাত প্রায় এগারোটা বেজে গেলো এখনো কেউ বাড়ি ফিরলো না।দুজনে মেতেছে দাবার খেলায়।ক্লাবে তাদের হৈচৈ দেখে আশেপাশের মানুষজন দেদারসে কানাকানি করছে এরা নাকি শ্বশুর জামাই ভাবা যায়!তাদের দেখে তো মনে হয় এরা বন্ধু।
” ফাদার ইন ল আমি যদি জিতে যাই আপনাকে জম্পেশ একটা ডেয়ার দেবো।”
” তুমি জিতবে?এত সহজ নয়। মুজাহিদ হাসানকে দাবায় টক্কর দেওয়ার মতো খেলোয়াড় তুমি হওনি বাছা।”
” দেখা যাক কি হয়।”
দুজেনের মাঝে টান টান উত্তেজনা চলতে থাকে।ঈশান আজ কোমড় বেঁধে যেন মাঠে নেমেছে কিছুতেই তাকে হারাতে পারছেন না মুজাহিদ হাসান।নিজের সর্বোচ্চটা দিয়েও ঈশানের কাছে অবশেষে হেরে গেলেন তিনি।ঈশান দাঁত কেলিয়ে তাকালো তার দিকে,
” কি বললাম না হারিয়ে ছাড়বো।এবার আমার ডেয়ার নিন।”
” তোমায় আমি বিশ্বাস করি না।উল্টা পালটা ডেয়ার দিলে আর কোনদিন খেলবো না তোমার সাথে।”
” এত ভয় পাচ্ছেন কেন?আমি বলি শুনুন আপনার ডেয়ার হলো, মাদার ইন ল’কে ফোন করবেন এবং বলবেন, ওগো সুলু আই লাভ ইউ।”
থমকে গেলেন মুজাহিদ হাসান।লজ্জায় গলা ঝারলেন তিনি।কিন্তু এই ঈশান তো নাছোড়বান্দা সে মুজাহিদ হাসানকে ফোন করিয়েই ছাড়লো।সুলতানা ফোন ধরেই একটা ধমক দিলেন মুজাহিদ হাসানকে,
“এত রাত হয়ে যাচ্ছে বাড়ির বাইরে কেন তুমি?ইদানীং আড্ডা জমিয়েছো বাইরে ঘর সংসার তো ভুলেই যাচ্ছো।”
” আসছি, আসছি আমি।একটা কথা বলতে ফোন করেছি।”
” কি কথা?”
” স..ইয়ে মানে সু..”
কণ্ঠ রোধ হলো তার।ঈশান মুখোমুখি বসে একের পর এক ইশারা করেই যাচ্ছে কিন্তু লজ্জায় মুখ থেকে কথা বের হলো না মুজাহিদ হাসানের।ঈশান পাশ থেকে স্বল্প সরে বলে,
” ফাদার যা বলছি তাই করুন না হলে আমি কিন্তু এখন মাদারকে ফোন করে বলবো আপনি অফিসের এক সুন্দরী কলিগের সাথে রেস্টুরেন্টে আছেন।”
” টেনে একটা চড় দেবো বেয়াদব ছেলে।আমাকে নাকানিচুবানি খাওয়ানো হচ্ছে তো?ঠিকাছে আমিও দেখবো।”
ঈশান পুনরায় হাসলো।ফোনের অপরপাশ থেকে পুনরায় ধমক দিলেন সুলতানা।মুজাহিদ হাসান লজ্জায় মরি মরি অবস্থায় বলেই ফেললেন,
“এত বছরেও বলবো বলে বলা হয়নি, সুলু আই লাভ ইউ।”
তৎক্ষণাৎ ফোন কাটলেন মুজাহিদ হাসান।বুকটা তার ধড়ফড় ধড়ফড় করছে আচ্ছা এখনি কি তার স্ট্রোক হবে?নাকি শ্বাস রুদ্ধ হয়ে মা রা যাবেন।প্রিয়তমাকে ভালোবাসি বলা কি এতই দুঃসাহসিক কাজ!
.
ঈশানকে বেশ কয়েকবার ফোন করেছে ঈশা কিন্তু এই ছেলে একবারো ফোন তুলেনি।ঈশার আজ বুঝতে বাকি নেই ঈশান ভীষণ রেগে গেছে এই ছেলের রাগ ভাঙাবে কী করে?মনে মনে ফন্দি আটলো সে।রাত এগারোটার পরে দ্রুত শাড়ি পরে সেজেগুজে ঘুমের ভান করে শুয়ে পড়লো।ঈশান বাড়ি ফিরলো রাত একটার আগে।রুমের লাইন জ্বালাতে তৎক্ষণাৎ নজর যায় বিছানায় ঈশার পানে।এই মেয়েটা এখন সেজেছে কেন?শাড়ি পরলো কেন?খোলা চুল এলোমেলো বিছানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিছুটা ঈশার মুখে এসে হুটোপুটি খাচ্ছে।
এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল ঈশান তবে নিজের অনুভূতিকে প্রশ্রয় দিল না সে।দ্রুত ফ্রেশ হয়ে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো ঈশার থেকে দুরত্ব নিয়ে।মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছে আজ সে মেয়েটাকে ছুঁয়েও দেখবে না থাকুক সে তার পড়াশোনা নিয়ে।রাত বাড়লো ধীরে ধীরে ঈশানের চোখে ঘুম নেই ঘুম থাকবে কী করে?চোখের সামনে ফুটন্ত ফুল তার নজর কাড়ছে তার গায়ের সুবাস তাকে মাতাল করছে এসব তো মানা যায় না।নিজেকে সংযত করলো ঈশান।আরেকটু চেপে শুতে ঈশা নড়ে চড়ে এগিয়ে এলো তার কাছে।ঈশানের এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে সে রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতিতে আছে নিজের প্রতিজ্ঞা আজ তার সাথে ছলনা করছে।বার বার মন বলছে প্রতিজ্ঞা ভেঙ্গে দে,কিন্তু ঈশান নিজের জেদের কাছে হার মানবে না।ঈশা পুনরায় নড়ে চড়ে শুলো ঘুমের ঘোরে অতিদ্রুত ঈশানের বুকে মাথা রেখে তাকে জড়িয়ে ধরলো।ব্যস ঈশান তছনছ হয়ে গেল।ভেঙ্গে গেল তার সেই প্রতিজ্ঞা।দু’হাত আপনা আপনি চলে গেলো ঈশার মাথায়।মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে নিজের ভেতরের সত্তাকে ধমকালো সে।
” এত দেরিতে এলেন কেন?”
ঈশার প্রশ্নে চমকে গেল ঈশান।মেয়েটা মিটিমিটি হাসছে।
” তুমি ঘুমাওনি?”
” হুহ।”
” উঠলে যে?”
” আমায় কেমন লাগছে?”
” আমার ধৈর্য্যর বাঁধ ভেঙ্গে দিয়েছো আর কী বলবো?”
খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো ঈশা।ঈশানের গাল টেনে বলে,
” আমি কি করেছি?”
” ভদ্র হতে চেয়েছিলাম ঠিক আগের মতো অভদ্র করে দিয়েছো।”
” যদি বলি আমার অভদ্র ঈশানকেই লাগবে।”
” সত্যি?”
ঈশা প্রত্যুত্তর করার আগেই তার ওষ্ঠে হামলে পড়লো ঈশান।ঈশার নিজের গালে এবার নিজে দুটো চড় মারতে মন চাইলো, কে বলেছে পাকনামি করতে?
১১১.
সকাল থেকে ভীষণ ব্যস্ত ঈশান অফিসের কাজ সামলে দ্রুত বাড়ি ফিরলো সে।আজ রাতে তাদের দেশের বাইরে থেকে পাঁচজন অতিথি আসবে।ছেলেদের এই দলটা বাংলাদেশ ভ্রমণ করতে চায় বলে জানিয়েছে ঈশানকে আর তাতে একটু ঈশানের সাহায্য চাই তাদের।ঈশান বারণ করেনি তাদের সম্পর্কে টুকটাক খোঁজ নিয়ে আসতে বলেছে।যদিও এই ব্যপারে সবাই জানে কেউ বারণ করেনি ভীনদেশী অতিথিরা যেন এই দেশ থেকে কোন খারাপ অভিজ্ঞতা না নিয়ে ফেরে সেই জন্য সকল ব্যবস্থা করেছে ঈশান।তাদের থাকতে দেওয়া হবে রাসেলের সেই ফ্লাটে।সময় হয়ে এসেছে এয়ারপোর্ট থেকে তাদের রিসিভ করার জন্য রাসেলকে পাঠানো হয়েছে।
ইতোমধ্যে লিপি যা আন্দাজ করেছে লিজা আবিদ শাহরিয়ারকে সত্যটা প্রকাশ করেছে আর লিপি এখন তা শতভাগ নিশ্চিত কিন্তু মেয়েটাকে হাতে নাতে ধরা প্রয়োজন।সন্দেহের ভিত্তিতে ঝামেলা বাড়ালে জল অন্য দিকে গড়িয়ে পড়বে।তার সন্দেহকে সত্যতা দিলো সুলতানা সন্ধ্যায় তিনি ফোন করে লিপিকে একগাদা কথা শুনিয়েছেন।সুলতানার সাথে তর্কে পেরে উঠলেন না লিপি তাই বাঁধ্য হয়ে ফোন কেটে ধরলো লিজাকে।
” তুই কোন সাহসে আমার কাজে বাঁধা দিস?এতদিন যাবৎ কি শিখিয়ে আসছি তোকে?দশ পুরুষের সাথে রাত কাটানোর স্বাদ এখনো মিটেনি?তোর মতো রাস্তার মেয়েকে কে বউ করবে?ঈশানের গলায় ঝুলিয়ে দিলে আমি বাঁচতাম।”
” ওদেরকে ওদের মতো থাকতে দাও আমাকে আমার মতো।”
” এমন মা র মা র বো মুখে বুলি ফোটানোর শক্তি থাকবে না।”
” ঈশানের মাঝে কী আছে হ্যাঁ?কী আছে?আমায় একবার বিশ্বাস করো সিড ছেলেটা ঈশানের থেকেও বড়লোক তাছাড়া ও ঈশানের মতো অতটা চালাক নয় যে ভাবে বলবো সেই ভাবে নাচবে।”
” সারাদিন সিড সিড আর সিড।শুন এসব বিলেতি ছেলেদের আমি বিশ্বাস করি না।”
” একবার তো করে দেখো।তোমার ভাইপোর প্রতি আমার ইন্টারেস্ট জাগে না।বিদেশিতে অভ্যস্ত দেশীটা কেমন কেমন জানি লাগে ত…”
লিপি আচমকা চড় বসিয়ে দিলো লিজার লাগে।মেয়েটার চুল টেনে দেয়ালে বেশ কয়েকবার মাথাটা ঠুকে দিয়ে বলেন,
” অজাতের বংশ তুই রাস্তার মেয়ে বিষ খেয়ে ম র।”
লিপি চলে গেলেন।বসার ঘর থেকে হইচই আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।সেই আওয়াজে নিজেকে দ্রুত সামলে কক্ষের বাইরে গেল লিজা।সুলতানার পাশাপাশি দাঁড়াতে পাঁচজন সুপুরুষকে দেখে তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল।অবিশ্বাস্য চোখে চেয়ে রইলো কিয়ৎক্ষণ।লহমায় থমকে গেছে তার পৃথিবী,এতো হতে পারে না কখনোই না।এই ছেলেগুলো এখানে কী করছে তাও আবার একসাথে!এরা সবাই লিজার বর্তমান বয়ফ্রেন্ড। সিড সহ অনন্যারা লিজার দিকে তাকিয়ে কুটিল হাসলো।ভরা মজলিশে আচমকা জ্ঞান হারালো লিজা।
#চলবে__