#প্রিয়_তুমি
#পর্ব_১২
#লেখিকা_N_K_Orni
— আমার মনে হয় আপনার লামিয়া আপুর কথা ভাবা বন্ধ করা উচিত। আপনিও চাইলে নতুন কাউকে পেতে পারেন যে আপনাকে অনেক ভালোবাসবে। তাই লামিয়া আপুর আশায় না থেকে ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করে ফেলুন। আচ্ছা আমি আসি দেরি হয়ে যাচ্ছে।
বলেই নাতাশা চলে গেল। আর আশহাব তার যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। সে এখনো একটা ঘোরের মধ্যে আছে। নাতাশা যে আজকে ডেকে তাকে এমন কিছু বলবে সেটা সে আশাই করেনি। সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বলল,
— নাতাশা আমি যে তোমাকেই ভালোবাসি। আমি লামিয়াকে নয় বরং তোমাকেই ভালোবাসি। আমি মুখে স্বীকার না করলেও আমি তোমাকেই ভালোবাসি।
নাতাশা ওখান থেকে বাসায় চলে এলো। সে বাসায় ফিরে ভাবতে শুরু করল তার বিয়ের আর কতদিন বাকি আছে। তার মনে হলো খুব বেশি সময় বাকি নেই। তাই তার যা করার এর মধ্যেই করতে হবে। সে ঠিক করল খুব দ্রুতই সে তার বাবা মাকে তার আর নিহরাফের সম্পর্কের কথা বলবে। পরদিন নাতাশা আর তুবা একসাথে কলেজে গেল। অন্য সবকিছু কিছুটা এলোমেলো হয়ে গেলেও তাদের একসাথে কলেজে যাওয়া আশায় কোনো পরিবর্তন হয়নি। কলেজে যাওয়ার পর নাতাশা ফোনে নিহরাফের সাথে ম্যাসেজে কথা বলা শুরু করল। তুবা ওর পাশেই বসে ছিল। সে নাতাশাকে ফোনের দিকে তাকিয়ে এভাবে মুচকি মুচকি হাসতে দেখে কিছুটা সন্দেহ করল। তবে তার সন্দেহ একদিনের নয়। প্রায়ই নাতাশা এমন করে যার কারণে তার অনেক সন্দেহ হচ্ছে।
— কিরে ফোনের দিকে তাকিয়ে ওভাবে কি দেখছিস? আমিও একটু দেখি।
বলেই সে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাতে নিল। তখনই নাতাশা ফোন বন্ধ করে ব্যাগের ভেতরে রেখে দিল। তারপর তুবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
— তেমন কিছুই না।
তার এসব কাজে তুবা তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইল। কলেজ শেষে নাতাশা আর তুবা যাচ্ছিল। তখন আশহাব ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো। সে নাতাশার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
— নাতাশা আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে।
কথাটা শুনে নাতাশা তুবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
— তুবা তুই কলেজের বাইরে অপেক্ষা কর। আমি ওনার সাথে কথা বলেই আসছি।
তুবা নাতাশাকে এতো শান্ত ব্যবহার করতে দেখে খুবই অবাক হয়ে গেল। সে সেই সাথে বেশ সন্দেহও করল। নাতাশার ফোনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসা, নিয়মিত অভ্যাসের পরিবর্তন, আশহাবের সাথে স্বাভাবিক ব্যবহার এসব দেখে সে সন্দেহ করতে থাকে তাদের দুজনকে নিয়ে। সে ভাবতে থাকে নাতাশা আর আশহাব মনে হয় একে অপরকে পছন্দ করা শুরু করেছে।
— আচ্ছা।
বলেই সে হাঁটতে শুরু করল। যেতে যেতে সে মনে মনে ভাবল,
— নাতাশা কি তাহলে আশহাব ভাইয়ার সাথে সম্পর্কে আছে? কি চলছে ওদের দুজনের মধ্যে? ওইদিনের ম্যাসেজটা সত্যি নয় তো? না এবার নাতাশার থেকে সবটা শুনতে হবে।
তুবা চলে যেতেই আশহাব নাতাশাকে টেনে একপাশে নিয়ে এলো। তারপর তাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,
— নাতাশা তুমি কার সাথে রিলেশনে আছো? এভাবে অচেনা অজানা কারো সাথে হুট করে রিলেশনে যাওয়া ঠিক নয়। শুধুমাত্র বিয়েটা ভা*ঙার জন্য যার তার সাথে সম্পর্কে জড়ানো উচিত হবে না।
— আমি যার তার সাথে সম্পর্কে জড়ায়নি। আমি যাকে ভালোবাসি, যার সাথে সারাজীবন থাকতে চাই তাকেই আমার বয়ফ্রেন্ড করেছি। আর আপনার এসব নিয়ে এতো চিন্তা করা লাগবে। সময় আসলে ঠিক বিয়েটা ভে*ঙে যাবে। তাই এসব নিয়ে চিন্তা না করে আপনি নিজের কথা ভাবেন।
— তুমি বুঝতে পারছ না।
— আমি বুঝতে চাইও না।
বলেই সে ওখান থেকে চলে এলো। আশহাব ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে উঠল,
— কীভাবে বোঝাবো তোমাকে যে আমি তোমাকে ভালোবাসি? আমি যে সেই শুরু থেকেই তোমাকে ভালোবাসি। আমি চাই না তুমি আমাকে ছেড়ে অন্য কারো কাছে যাও।
বলেই সে পুরো কথা মনে করতে লাগল।
ফ্লাসব্যাক
আশহাবের পরিবার নাতাশাদের বাসায় এসেছিল। তখন নাতাশা তার রুমে ঘুমিয়ে ছিল। আশহাব ফোনে কথা বলতে বলতে নাতাশার রুমের সামনে চলে এলো। দরজা খোলা থাকায় সে রুমের ভেতরেও চলে যায়। কথা শেষ করে পেছনে ফিরতেই তার সামনে নাতাশার ঘুমন্ত মুখটা ভেসে উঠল। সে এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর তার মা তাকে ডাকতে ডাকতে এদিকে আসতে নিলে সে ওখান থেকে বেরিয়ে গেল। রাতে একটা সময় সুযোগ পেয়ে সেই তুবাকে নাতাশার ফোন থেকে ম্যাসেজে ওসব কথা বলল। তারপর ডিলিটও করে দিল ফোন থেকে। যাতে তুবা নাতাশার সাথে এই বিষয় নিয়ে সরাসরি কথা না বলতে পারে তাই সে তাকে নিষেধ করে দিল সরাসরি এসব নিয়ে কখনো কথা বলতে। যার কারণে নাতাশা কখনো এই বিষয়ে জানতেই পারেনি।
বর্তমান
আশহাব পুরোনো কথা ভেবে মন খারাপ করে ওখান থেকে চলে গেল। নাতাশা তুবার কাছে আসতেই সে বলে উঠল,
— কিরে এখনই এতো আলাদা কথা বলতে হচ্ছে? বিয়ের পর কি করবি তাহলে?
— এসব উল্টাপাল্টা কথা বন্ধ কর।
— আচ্ছা সত্যি করে বলতো তোদের দুজনের মধ্যে কি চলছে? আমি না তোর বেস্টফ্রেন্ড। আমাকে বলবি না।
নাতাশা এবার ওকে আশহাবের সাথে হওয়া কথা, তার বাবার তাকে দেওয়া কথা এসব বিষয়ে খুলে বলল। সব শুনে তুবা তার দিকে হা করে তাকিয়ে রইল।
— এতো কিছু হয়ে গেল আর তুই আমাকে এখন বলছিস? ওই আশহাব কতো খারাপ যে তোকে হু*মকি দেয়? যাইহোক, এখন তো তোকে বিয়ে ভা*ঙতে গেলে নতুন কাউকে খুঁজতে হবে।
— সেটা নিয়ে চিন্তা নেই। আমি আমার ভালোবাসার মানুষ আগেই পেয়ে গেছি।
কথাটা শুনে তুবা অবাক হয়ে বলে উঠল,
— কিইই! এটা পেয়ে গেছিস আর আমাকে এখন বলছিস? তো কে সে?
— আমাদের ফুফির ছেলে।
— ফুফির ছেলে? মানে আমাদের কাজিন। তাকে কোথায় পেলি? আমি তো তাকে চিনিও না।
— হুম তুই তাকে চিনিস না। তবে পুরোপুরি চিনিস না এটাও বলা যায় না। তুই তাকে দেখেছিস তবে ফুফাতো ভাই হিসাবে না।
— তাই? তা কে সে?
নাতাশা এবার তুবার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে উঠল,
— নিহরাফ স্যার। আমাদের ডিপার্টমেন্টের নিহরাফ স্যারই আমার বয়ফ্রেন্ড।
— কিইইইই!
— এই ধীরে কথা বল। আশেপাশের সবাই হা করে তাকিয়ে থাকবে।
কথাটা শুনে তুবা ফিসফিস করে বলে উঠল,
— আচ্ছা। তুই সত্যি বলছিস? নিহরাফ স্যার তোর বয়ফ্রেন্ড।
— হ্যাঁ। আচ্ছা তোকে আমাদের একসাথের ছবি দেখাচ্ছি।
তারপর নাতাশা তাকে তার আর নিহরাফের ছবি দেখালো। সেই সাথে সে তার আর নিহরাফের সব কথা খুলে বলল। সব শুনে তুবা বলে উঠল,
— আমার মন হয় তোর আর অপেক্ষা করা উচিত হবে না। তোর এখনই বাসায় বলে দেওয়া উচিত। নাহলে বেশি দেরি হয়ে যাবে।
— তুই ঠিকই বলেছিস। আমি আজকেই নিহরাফের সাথে কথা বলছি। সেই সাথে আম্মুকেও আজকেই বলে দিব।
— সেটাই ভালো হবে। চল এবার বাসায় যাই।
তারপর ওরা দুজন বাসায় চলে গেল। দুপুরে খাওয়ার পর নাতাশা তার মায়ের রুমে চলে গেল। তারপর তার মায়ের কোলে মাথা রেখে বলে উঠল,
— আম্মু আমি এমন কাউকে বিয়ে করতে চাই না যাকে আমি ভালোবাসি না।
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )