#প্রিয়_তুমি
#পর্ব_৮
#লেখিকা_N_K_Orni
পরদিন সকালে তুবা আর নাতাশা কলেজে গেল। ক্লাসে যাওয়ার সময় ওরা ওদের সামনে আশহাবকে দেখতে পেল। কিন্তু আশহাব ওদের দেখেও না দেখার অভিনয় করে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। ওকে যেতে দেখে তুবা একবার পেছনে তাকালো। তারপর সামনে তাকিয়ে বলে উঠল,
— এই ছেলেটা আসলেই ফালতু। তুই ঠিকই বলেছিস। এই ছেলেটা কেমন যেন খারুশ! আমাদের দেখার পরও এমন ভাবে চলে গেল যেন আমাদের চেনেই না, কখনো দেখেইনি। অথচ এর তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে।
কথাটা শুনে নাতাশা বিরক্ত হয়ে বলে উঠল,
— বাদ দে এর কথা, চল ক্লাসে যাই।
— হুম চল।
বলেই ওরা দুজন ক্লাসে চলে গেল। যাওয়ার সময় নাতাশা তুবাকে বলে উঠল,
— তুই কালকে সারাদিন বাসার ভেতরে কেন ছিলি? একবারও আমার সাথে দেখা করতে গেলি না?
— সরি। বাবা নিষেধ করছিলেন কালকে বের হতে। কিন্তু সকালে তো আমরা দেখা করেছি। তুই সারাদিন বলছিস কেন? এটা একদমই ঠিক না।
— ওটা তো কলেজে, বাসায় তো না। এজন্য এই কথা বলেছি। এছাড়া তুই আমাকে কলেজে একা রেখে বাসায় চলে গেছিস। আমার সাথে একটু অপেক্ষাও করলি না। আমাকে একা একা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।
— আচ্ছা আবারও সরি। আর হবে না। আর কখনো তোকে এভাবে একা রেখে যাব না।
— আচ্ছা। এবারের মতো ক্ষমা করলাম। এরপর আর এসব করবি না।
বলতে বলতে ওরা দুজন ক্লাসে চলে এলো। একটু পরে দিয়াও ওদের কাছে এলো। সে এসেই ওদেরকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,
— তুবা তোর আর অ*জ্ঞান হওয়ার কথা চিন্তা করা লাগবে না।
ওর কথার মানে বুঝতে না পেরে নাতাশা বলে উঠল,
— মানে?
— মানে রায়ান স্যার আমাদের ক্লাস নিবেন না। তাহলে তুবার আর ক্লাসে ক্রা*শকে দেখে অজ্ঞান হওয়া লাগবে না। আমার বয়ফ্রেন্ড বলেছে নতুন স্যার এসেছেন। তিনিই এখন থেকে আমাদের ক্লাস নিবেন।
— ওহহ। তোর বয়ফ্রেন্ড দেখছি অনেক কিছু জানে। কিন্তু কথাটা যদি মিথ্যা হয়?
— ও তো নিশ্চিত না হলে আমাকে কিছু বলে না। যেহেতু আমাকে এই কথাটা বলেছে তাহলে ও নিশ্চিত। কিন্তু তারপরও যদি এটা সত্যি না হয় তাহলে আর কি হবে? তুবাকে অ*জ্ঞান হতে হবে।
বলেই সে হেসে দিল। ওর কথা শুনে ওর সাথে নাতাশাও হাসতে লাগল। আর তুবা এসব শুনে মুখ ফুলিয়ে বসে রইল। ওদের হাসি থামলে সে বলে উঠল,
— তোরা আমাকে নিয়ে এমন মজা করছিস কেন? আমি কি করেছি?
— তুই তো সেইদিন বলেছিলি যে রায়ান স্যার ক্লাস নিলে তুই অ*জ্ঞান হয়ে যাবি। আর এখন আমরা বললেই দোষ।
এসব বলতে বলতেই ক্লাসে স্যার চলে এলেন। নতুন স্যারকে দেখে নাতাশা খুবই অবাক হয়ে গেল। তাকে দেখে তার চোখের সামনে একটা শব্দই ভেসে উঠল। সে মনে মনে বলে উঠল,
— নিহরাফ ভাইয়া! তারমানে নিহরাফ ভাইয়া আমাদের নতুন স্যার।
নাতাশা নিহরাফকে এখানে একদমই আশা করেনি। সে ভাবতে পারেনি নিহরাফই তার নতুন স্যার হবে। সে খুবই অবাক হলেও মুখে সেটা প্রকাশ করল না। সে সবার সামনে স্বাভাবিকই থাকার চেষ্টা করল। ক্লাস শেষে দিয়া ওদের দুজনকে বলল,
— এই নতুন স্যারকে দেখে তো আমি ক্রা*শ খেয়েছি।
কথাটা শুনে নাতাশা বলে উঠল,
— তোর না বয়ফ্রেন্ড আছে। তারপরও অন্য ছেলেকে দেখে কীভাবে ক্রা*শ খেতে পারিস?
তখন পাশ থেকে তুবাও বলে উঠল,
— আমিও ওনাকে দেখে ছোটখাটো ক্রা*শ খেয়েছি। কিন্তু আমার আসল ক্রা*শ এখনো রায়ান স্যারই।
কথাটা শুনে নাতাশা মুখে কিছু না বলে শুধু হাসল। তারপর মনে মনে বলে উঠল,
— তোর নিহরাফ ভাইয়ার উপর ক্রা*শ না খাওয়াই ভালো। তাকে পছন্দ করা তোর জন্য ঠিক হবে না। বড় আব্বু ওদের একদমই পছন্দ করতে পারেন না। তাই ওনার থেকে তুই যত দূরে থাকবি ততই তোর জন্য ভালো।
বলেই সে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। কলেজ শেষে নাতাশা আর তুবা কলেজ থেকে বের হচ্ছিল। তখন হঠাৎ ওদের সামনে আশহাব এসে দাঁড়ালো। ওকে এখানে দেখে ওরা দুজন খুবই অবাক হয়ে গেল। ওরা কি বলবে বুঝতে পারল না। ওরা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আশহাব বলে উঠল,
— নাতাশা আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে। আমি তোমার সাথে একা কথা বলতে চাই।
বলেই সে একবার নাতাশার দিকে তাকিয়ে তারপর তুবার দিকে তাকালো। নাতাশা কি বলবে বুঝে উঠতে পারল না। আশহাবকে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে তখন তুবা আমতা আমতা করে বলে উঠল,
— নাতাশা তোরা কথা বল। আমি আসছি। আমি তোর জন্য বাইরে অপেক্ষা করছি। তুই বরং ভাইয়ার সাথে কথা শেষ করে বাইরে আয়।
বলেই সে দ্রুত ওখান থেকে চলে গেল। নাতাশা ওকে আটকানোর আগেই সে চলে গেল। আশহাবের এসব কাজে সে খুবই বিরক্ত হলো। সে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলে উঠল,
— কি বলবেন? প্লিজ দ্রুত বলেন। আমাকে বাসায় যেতে হবে।
— বিয়ের ভা*ঙার কি কোনো চেষ্টা করলে?
— আমি চেষ্টা করছি। কোনো না কোনো একটা উপায় ঠিক বের হয়ে যাবে।
— এভাবে বললে হবে না। যা করার দ্রুত করো। নাহলে দেখা যাবে বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে গেছে অথচ তুমি চেষ্টা করেই যাচ্ছো। বিয়ের তারিখ যখন তখন ঠিক হয়ে যেতে পারে।
কথাটা শুনে নাতাশার বেশ রাগ হলো। সে কিছুটা রেগে বলে উঠল,
— আপনার যদি বিয়েটা ভা*ঙার এতোই তাড়া থাকে তাহলে আপনি নিজেই কেন বিয়েটা ভা*ঙছেন না? সত্যিই আপনি কেন বিয়েটা ভাঙছেন না? বলতে পারছেন না আপনি এই বিয়েটা করতে চাননা।
— আমি সম্ভব হলে আমি নিজেই করতাম। কিন্তু তোমার পক্ষে তো সম্ভব। নাকি তুমি আমাকে পছন্দ করো বলে বিয়েটা ভাঙতে চাও না?
— নিজেকে এতটাও গুরুত্ব দিবেন না। আমি আপনাকে একদমই পছন্দ করিনা আর না তো আমি এই বিয়েটা করতে চাই। আমি আমার দিক থেকে সম্পূর্ণ চেষ্টা করছি বিয়েটা আটকানোর।
— আচ্ছা। আর আমার কাছে তোমার নম্বর নেই। বাবা বলেছেন তোমার থেকে তোমার ফোন নম্বর নিতে। না নিলে আমাকে রাগ করবেন। তাই ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও আমাকে এটা নিতে হবে।
বলেই সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। নাতাশা না চাইতেও এক প্রকার বাধ্য হয়ে তাকে নিজের ফোন নম্বরটা দিল।
— আপনার কি আর কোনো কথা আছে? যদি থেকে থাকে তাহলে দ্রুত বলুন। আর যদি না থাকে তাহলে আমি বাসায় যেতে চাই।
আশহাব ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল,
— না। তুমি যেতে পারো।
কথাটা শুনে নাতাশা আর কোনো কথা না বলেই চলে গেল। আর আশহাব তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিল। কলেজ থেকে বের হয়ে নাতাশা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর আশেপাশে তাকিয়ে তুবাকে খুঁজতে লাগল। কিছুটা দূরে তুবাকে দেখতে পেয়ে সে তার কাছে গেল। তুবা ওকে দেখেই বলে উঠল,
— কিরে কি বলল আশহাব ভাইয়া?
— ওসব বিষয়ে পরে কথা বলব। এখন চল বাসায় যাই।
তারপর ওরা দুজন বাসায় চলে গেল। রাতে নাতাশা রুমে শুয়ে শুয়ে সকালের কথা ভাবছিল। তখন তার মনে পড়ল নিহরাফ যাওয়ার আগে তাকে একটা কাগজে তার ফোন নম্বর লিখে দিয়ে গেছিল। তাই সে দ্রুত উঠে কাগজটা খুঁজতে শুরু করল।
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )