#প্রিয়_তুমি
#পর্ব_৯
#লেখিকা_N_K_Orni
নাতাশার মনে পড়ল নিহরাফ যাওয়ার আগে তাকে একটা কাগজে তার ফোন নম্বর লিখে দিয়ে গেছিল। তাই সে দ্রুত উঠে কাগজটা খুঁজতে শুরু করল। অনেকক্ষণ খোঁজার পরে সে কাগজটা খুঁজে পেল। সে কাগজটা হাতে নিয়ে বসে পড়ল। তারপর সে কাগজটার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে লাগল,
— আমার কি কল দেওয়া উচিত? কিছুই বুঝতে পারছি না। দিব নাকি দিব না? উফফ! আমি খুবই কনফিউসড।
বলেই সে আরও কিছুক্ষণ ভাবতে লাগল। বেশ কিছুক্ষণ ভাবার পর সে ওই নম্বরে কল দিয়েই দিল। একটু পর ফোনের ওপাশ থেকে নিহরাফের কন্ঠস্বর ভেসে উঠলো,
— হ্যাঁ নাতাশা বলো।
কথাটা শুনে নাতাশা অবাক হয়ে গেল। সে ফোনটা সামনে এনে স্ক্রিনের দিকে তাকালো। সে দেখল সে নিহরাফের নম্বরেই কল দিয়েছে। তারপর সে ফোনটা আবার কানের কাছে নিয়ে বলে উঠল,
— তুমি বুঝলে কীভাবে এটা আমি? তুমি জানো এটা আমার নম্বর?
— হ্যাঁ জানি তো। আমার ফোনে তো তোমার নম্বর সেভ করা। আগের দিন তোমার কাছ থেকেই তো তোমার ফোন নম্বরটা নিলাম। তোমার মনে নেই?
— হ্যাঁ মনে আছে। কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি ফোনে নম্বরটা সেভ করে ফেলবে বুঝতে পারিনি।
— কেন? এমনটা মনে হওয়ার কারণ। তার মানে তুমি নিশ্চয়ই আমার ফোন নম্বরটা তোমার ফোনে সেভ করোনি। কি আমি সত্যি বলছি তো?
কথাটা শুনে নাতাশা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। নিহরাফের কথাটাই তো সত্যি। সে তো নিহরাফের নম্বর ফোনে সেভ করেনি। কিন্তু সে এখন এটা নিহরাফকে কীভাবে বলবে। তখন সে কথা ঘুরিয়ে বলে উঠল,
— তাহলে আমি তোমাকে কল দিলাম কীভাবে? আমি তো প্রথম তোমাকে কল দিলাম।
— আচ্ছা বুঝেছি। এখন বলো কোনো জরুরি কাজে কল দিয়েছো? নাকি এমনিই কথা বলার জন্য। কোনটা?
— আসলে আমি সকালে তোমাকে কলেজে আমাদের স্যার হিসাবে দেখে খুবই অবাক হয়ে গেছিলাম। তাই কিছুটা কৌতূহলী হয়ে তোমাকে কল দিলাম।
— ওহ। সত্যি কথা বলতে আমিও তোমাকে ওখানে দেখব এটা আশা করিনি। আমি জানি তুমি কলেজে পড়ো। কিন্তু সেটা যে এই কলেজই সেটা জানতাম না।
— ওহহ। তো তুমি স্যার হিসাবে কেমন? আমাকে একটু বলো। অনেক কড়া নাকি?
— সেটা তো ক্লাস করলেই জানতে পারবে। আগে ঠিকমতো ক্লাস তো করো। তারপর তো তুমি ঠিক করবে আমি কেমন?
— আচ্ছা দেখা যাবে।
তারপর ওরা আরও কিছুক্ষণ কথা বলল। কথা শেষ করে নাতাশা ফোনটা পাশে রেখে দিল। দেখতে দেখতে বেশ কয়েকদিন কেটে গেল। ওইদিনের পর থেকে নিহরাফের সাথে নাতাশার প্রায়ই ফোনে কথা হতো। একদিন রাতে খাওয়ার সময় নাতাশা বাবা বলে উঠলেন,
— ভাবছি সামনের সপ্তাহে আশরাফকে আসতে বলব। আশহাব আর নাতাশার বিয়ের তারিখ ঠিক করতে হবে তো। এজন্য ভাবছি ওকে আসতে বলে দুজনে আলোচনা করে একটা দিন ঠিক করব।
কথাটা শুনে নাতাশা স্তব্ধ হয়ে গেল। সে নিজেকে সামলে তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,
— কিন্তু তুমি তো বলেছিলে বিয়ের অনেক দেরী আছে। এখন তো শুধু এঙ্গেজমেন্টটা হবে। বিয়ে আরও অনেক পরে হবে। তাহলে এখন কেন বিয়ের তারিখ ঠিক করার চিন্তা করছ? তুমি তো আমাকে কথা দিয়েছিলে।
— আমি কি বলেছি যে বিয়ে এখনই হয়ে যাচ্ছে? আমি তো শুধু বলেছি সামনের সপ্তাহে বিয়ের তারিখ ঠিক করব। আর বিয়েটা তো এখনই দিব না। শুধু বিয়েটা কবে হবে আমরা ওইদিন সেটা নিয়ে আলোচনা করব। আগে থেকে আলোচনা না করলে কীভাবে হবে? বিয়েটা এক মাস পরে হবে নাকি আরও পরে সেটা ঠিক করতে হবে তো। এজন্যই তারিখটা ঠিক করে রাখা ভালো।
— আচ্ছা। কিন্তু একমাস পরে বিয়ের তারিখ একদমই ঠিক করবে না। তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে এঙ্গেজমেন্টের অনেক পরে বিয়ের তারিখ ঠিক করবে। তাহলে একমাসের মধ্যে ঠিক করার কথা বলছ কেন?
— ওটা তো আমি এমনিই বলেছি। তুমি চিন্তা করো না বিয়ের তারিখ দেরি করেই ঠিক করব। আমি তো তোমাকে বলেইছি।
— আচ্ছা। আর এটা মনে রাখবে যে আমি যদি অন্য কাউকে পছন্দ করে ফেলি তাহলে কিন্তু তুমি এই বিয়েটা ভে*ঙে দিবে।
— আচ্ছা। তখন কিন্তু তোমাকে তাকে বিয়ে করতে হবে।
— আচ্ছা। আমার তাতে কোনো সমস্যা নেই।
কথাটা শুনে নাতাশার বাবা মুচকি হাসলেন। তারপর মনে মনে বললেন,
— তুমি যতই এসব ভেবে খুশি থাকো বিয়ে তো ঠিকই হবে আর সেটাও আশহাবের সাথেই। আমি ইচ্ছা করেই তোমার এই শর্তে রাজি হয়েছি কারণ আমি খুব ভালো করেই জানি তুমি তোমার মনের মতো কাউকেই খুঁজে পাবে। আমি নির্দিষ্ট সময় ঠিকই দিব। কিন্তু তুমি ওই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাউকেই খুঁজে পাবে না। আমি তোমাকে খুব ভালো করেই চিনি। তোমার এতো সহজে কাউকেই পছন্দ হবে না। তখন তোমার আশহাবকেই বিয়ে করতে হবে আর তুমি নাও করতে পারবে না। এজন্য এখন যা ইচ্ছা তাই ভেবে নেও।
বলেই তিনি হালকা হাসলেন। নাতাশা চলে যাওয়ার পর মিসেস রাহা ওনার কাছে এলেন। তারপর ওনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলে উঠলেন,
— একটা কথা ভুলে যাবে না তুমি কিন্তু নাতাশাকে কথা দিয়েছো। তাই যেকোনো অবস্থাতেই সেই কথা রাখার চেষ্টা করবে। নিজের ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে এমন কিছু করে ফেলো না যাতে তোমার সাথে তোমার মেয়ের সম্পর্ক পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়, তুমি তোমার মেয়ের চোখে একজন খারাপ বাবা হয়ে যাও। তাই ভালো করে চিন্তা করে কোনো সিদ্ধান্ত নিও।
বলেই মিসেস রাহা এক মূহুর্তও অপেক্ষা না করে ওখান থেকে চলে গেলেন। আর নিহাদ ওনার যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। নাতাশা রুমে এসে মন খারাপ করে বসে রইল। তার বাবা যতই তাকে আশ্বস্ত করুক তার মন থেকে এই বিষয় নিয়ে কোনো চিন্তাই যাচ্ছে না। সে কিছুতেই নিজের মনকে সান্ত্বনা দিতে পারছে না। পরদিন সকালে ফোনের আওয়াজে নাতাশার ঘুম ভে*ঙে গেল। সে চোখ ডলতে ডলতে উঠে ফোনের দিকে তাকাতেই দেখল অচেনা নম্বর থেকে কল এসেছে। সে একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফোনটা ধরে কানে দিল। ফোনটা ধরতেই অপর পাশ থেকে কেউ বলে উঠল,
— ফোন ধরতে এতো সময় লাগে কেন?
কথাটা শুনে সে ফোনের স্ক্রিনে একবার চোখ বুলিয়ে নিল। না সে এই ব্যক্তিকে চিনে না।
— কে আপনি? এতো সকাল সকাল কল দিয়ে বিরক্ত করছেন কেন? আবার বলছেন আমার ধরতে সময় লাগে কেন?
— আমি আশহাব। তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
— কথা আছে ভালো কথা। তা এতো সকাল সকাল কল দিয়েছেন কেন? একটু দেরি করে দিলে কি হতো? আমি ঘুমিয়ে ছিলাম।
— এদিকে আমি চিন্তায় আছি আর তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে।
— তো আপনিও ঘুমিয়ে থাকেন। নিষেধ করেছে কে?
— এই তুমি জানো না আমাদের বিয়ের তারিখ ঠিক করার কথা চলছে? যখন তখন বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে যেতে পারে।
কথাটা শুনে নাতাশার ঘুম ঘুম ভাব উড়ে গেল। সে শান্ত স্বরে উত্তর দিল,
— জানি।
— শোনো ফোনে এতো কিছু বলা যাবে না। চলো আজকে বিকালে দেখা করে ভালো করে কথা বলি। আমি তোমাকে সময় আর জায়গা ম্যাসেজ করে দিয়ে দিব।
— আচ্ছা।
— আর হ্যাঁ আমার নম্বর তোমার ফোনে সেভ করে নিও।
কথাটা শুনে নাতাশা বিরক্তি নিয়ে বলে উঠল,
— আচ্ছা।
বলেই সে সাথে সাথে কলটা কে*টে দিল। সে ফোনটা এক পাশে রেখে দিয়ে বলল,
— ফালতু লোক একটা। সকাল সকাল এসব বলার জন্য কল দিয়েছে।
তারপর নাতাশা ঘড়ির দিকে একবার দেখে আবার ঘুমিয়ে পড়ল। বিকালে সে আশহাবের বলা জায়গায় সময়মতো চলে গেল।
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )