#প্রিয়_তুমি
#পর্ব_১১
#লেখিকা_N_K_Orni
— আমি হয়তো আমার মনের মানুষকে পেয়ে গেছি। এখন আর আমাকে আমার মনের মানুষের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। আমি নিজের অজান্তেই নিহরাফকে আমার মনে জায়গা দিয়ে দিয়েছি। কিন্তু ও কি আমাকে ভালোবাসে? আচ্ছা ওর যদি গার্লফ্রেন্ড থাকে? তাহলে তখন আমার কি হবে?
শেষের কথাগুলো ভেবেই তার মন আবারও খারাপ হয়ে গেল। পরক্ষণেই সে ভাবল,
— না জেনেই আগে থেকে এসব ভাবা ঠিক না। ওর তো গার্লফ্রেন্ড নাও থাকতে পারে। গার্লফ্রেন্ড থাকলে নিশ্চয়ই কেউ এভাবে অন্য মেয়ে নিয়ে ঘুরে না? আর যদি থাকেই তাহলে তখনেরটা তখন দেখা যাবে। কিন্তু তার আগে আমাকে বিষয়টা খুঁজে বের করতে হবে যে ওর গার্লফ্রেন্ড আছে নাকি নেই।
এসব বলেই সে নিজেকে মনে মনে সান্ত্বনা দিল। পরদিন রাতে কথা বলার সময় এক পর্যায়ে সে নিহরাফকে তার গার্লফ্রেন্ডের কথা জিজ্ঞাসা করল। নিহরাফ বলল যে তার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই। তার উত্তর শুনে তো নাতাশা অনেক খুশি হয়ে গেল। সে তো মনে মনে এটাই চাচ্ছিল। পরের সপ্তাহে আশহাবের বাবা নাতাশার বাসায় এলেন। তিনি আর নাতাশার বাবা মিলে নাতাশা আর আশহাবের বিয়ের তারিখ ঠিক করলেন। চার মাস পর নাতাশার বিয়ের তারিখ ঠিক হয়েছে। তারপরও নাতাশা বেশ খুশি। তার বিশ্বাস সে এই সময়ের মধ্যেই কোনো না কোনো একটা ব্যবস্থা ঠিক করতে পারবে। দেখতে দেখতে আরও দুই সপ্তাহ কেটে গেল। এই কয়েকদিনে নাতাশা আর নিহরাফ আরও কাছাকাছি এসেছে। তারা ফোনে প্রায়ই কথা বলত। এছাড়া কলেজে তো তাদের দেখা হতোই। কিন্তু নাতাশা এখনো নিহরাফকে তার বিয়ের তারিখ ঠিক হওয়ার কথা জানাতে পারেনি। একদিন নাতাশা আর নিহরাফ আবার একসাথে ঘুরতে গেল। এক পর্যায়ে নাতাশা নিহরাফের দিকে তাকিয়ে মন খারাপ করে বলে উঠল,
— আমার বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে গেছে। আমার বিয়ের আর মাত্র সাড়ে তিনমাস বাকি।
বলেই নাতাশা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এদিকে তার এই কথাটা শুনে নিহরাফের মন খারাপ হয়ে গেল। সে মুখে হাসি আনার চেষ্টা করে বলে উঠল,
— অভিনন্দন।
কথাটা শুনে নাতাশা রেগে মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। তাকে এমন করতে দেখে নিহরাফ বলে উঠল,
— কি হলো?
— কিছুই না। আমি তোমার মুখ থেকে অভিনন্দন শুনতে চাই না।
— কারও বিয়ে ঠিক হলে তো অভিনন্দনই বলতে হয়। এছাড়া আর কি বলতে হয় আমার জানা নেই? আচ্ছা তাহলে তুমিই বলো যে তুমি কি শুনতে চাও?
কথাটা শুনে নাতাশা আরও রেগে গেল। সে রেগে বলে উঠল,
— তুমি বোঝোনা আমি কি শুনতে চাই? তুমি বোঝোনা আমি কি চাই? আমি তোমাকে ভালোবাসি। তাই আমি তোমার মুখ থেকে এই বিয়ের জন্য কিছুতেই অভিনন্দন শব্দটা শুনতে চাই না। বুঝেছো তুমি? আমি তোমাকে ভালোবাসি।
— কিন্তু তোমার তো বিয়ে ঠিক হয়েছে।
— তুমি ভালো করেই জানো যে আমি এই বিয়েতে রাজি না। তারপরও তুমি বারবার আমার সামনে এসব কথা বলে কেন আমাকে কষ্ট দিচ্ছো? আমাকে কষ্ট দিতে তোমার ভালো লাগছে? আমাকে ভালো না লাগলে বলে দেও। কিন্তু আমার অনুভূতি নিয়ে মজা করবে না।
এক নিঃশ্বাসে সবগুলো কথা বলল নাতাশা। একবারে কথা বলায় সে হাপিয়ে গেছে। তার এই অবস্থা দেখে নিহরাফ খুবই মজা পেল। সে ঠোঁট চেপে হাসতে লাগল। নাতাশা চোখের দুই কোণে অশ্রু ভেসে উঠল। নিহরাফ এবার আর চুপ করে না থেকে তাকে জড়িয়ে ধরল। তাকে জড়িয়ে ধরা অবস্থাতেই সে বলে উঠল,
— সত্যিই ভালোবাসো আমায়?
— হ্যাঁ। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমি শুধু তোমাকেই চাই। আমি ওই আশহাবকে বিয়ে করতে চাই না। আমি শুধু তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
বলতে বলতেই সে নিহরাফকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কেঁদে দিল। নিহরাফ এবার তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে উঠল,
— আমিও তোমাকে ভালোবাসি। অনেক বেশি ভালোবাসি। সত্যি বলতে আমি প্রথমদিন থেকেই তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু তোমার বলার মতো কোনো পরিস্থিতি ছিলই না। আসলে তোমার বিয়ে ঠিক ছিল তো। তাই আমি ওসব ভেবে কিছুই বলতে পারিনি।
— তাতে কি? তুমি তো জানতে আমি এই বিয়েতে রাজি না। তাহলে কেন বলোনি এতোদিন? আমি চাইলেই যখন তখন তোমাকে নিয়ে বিয়েটা ভা*ঙতে পারি।
— জানি। কিন্তু এখনই তোমার বাবাকে বলা যাবে না। আমরা যদি এখনই বলে দেই তাহলে সবকিছু স্বাভাবিক হবে না। আমাকে সম্পর্কটাকে আরেকটু মজবুত করতে হবে। তারপরেই আমরা ওনার সামনে যাব। নাহলে উনি বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে না করে দিবেন।
— আচ্ছা।
নিহরাফ এবার নাতাশাকে ছেড়ে দিল। তারপর সে নাতাশার চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বলল,
— আমি তো বলেছি তোমাকে ভালোবাসি। তাহলে এতো কান্না করার কি আছে? এবার কান্না থামাও। নাহলে চোখ ফুলে পান্ডার চোখের মতো হয়ে যাবে। তখন তোমার বাসার লোক সন্দেহ করবে।
— আচ্ছা আর কান্না করছি না। কিন্তু তুমি তার আগে বলো আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না? আমাকে বিয়ে করবে?
— আচ্ছা বিয়ে করব আর ছেড়েও যাব না।
— হুম।
এরপর থেকে নিহরাফ আর নাতাশার সম্পর্ক শুরু হয়। প্রতিদিন ম্যাসেজ করা, ফোনে কথা বলা, মাঝে মাঝে দেখা করা এসব চলতে থাকে। নাতাশা তার আর নিহরাফের সম্পর্কের কথা কাউকেই এখনো পযর্ন্ত বলেনি। এমনকি সে তুবাকেও বলেনি। তুবা যদিও তার মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ করেছে। নাতাশা এখন আর বাসায় খুব তুবার সাথে দেখা করে না। তুবার বাসায়ও খুব কম যায়। বিকালে তুবার সাথে ছাদে গিয়ে গল্প করে না। তুবা এসব লক্ষ করলেও সে তেমন কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারেনি। সে ভেবেছে হয়তো নাতাশা বিয়ে নিয়ে মন খারাপ করে আছে।
দেখতে দেখতে একমাস কেটে যায়। নাতাশার এবার মনে হলো আশহাবের সাথে এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করা উচিত। তারপর তার সাথে কথা বলে বিয়েটা ভেঙে ফেলা উচিত। আশহাবকে জানানো উচিত যে সে একটা উপায় পেয়ে গেছে। তাই সে পরদিন আশহাবকে কল দিয়ে দেখা করতে বলল। আগের বারের মতো এবারও আশহাব নাতাশার জন্য আগে থেকে অপেক্ষা করছিল। সে যেতেই আশহাব বলে উঠল,
— তো হঠাৎ এভাবে ডেকে আনলে যে? জরুরি কিছু?
— হ্যাঁ। আপনার জন্য একটা খুশির খবর আছে। এবার আমাদের বিয়েটা অবশ্যই ভে*ঙে যাব।
— আরে সেটা কীভাবে?
— আমি তো প্রথম থেকেই বিয়েতে রাজি ছিলাম না। বাবা তখন বলেছিলেন আমি যদি বিয়ের আগে কাউকে পছন্দ করতে পারি তাহলে এই বিয়েটা ভেঙে দিবেন। আর আমাকে তার সাথে বিয়ে দিবেন। এজন্য একথা বলছি। আসলে আমি আমার ভালোবাসার মানুষকে পেয়ে গেছি। আমি খুব তাড়াতাড়ি বাবার সাথে তার পরিচয় করিয়ে দিব। তখন এই বিয়েটাও ভে*ঙে যাবে।
কথাটা শুনে আশহাবের মুখটা কালো হয়ে গেল। সে কিছু না বলে চুপ করে রইল। নাতাশা আবারও বলে উঠল,
— আমার মনে হয় আপনার লামিয়া আপুর কথা ভাবা বন্ধ করা উচিত। আপনিও চাইলে নতুন কাউকে পেতে পারেন যে আপনাকে অনেক ভালোবাসবে। তাই লামিয়া আপুর আশায় না থেকে ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করে ফেলুন। আচ্ছা আমি আসি দেরি হয়ে যাচ্ছে।
বলেই সে চলে গেল। আর আশহাব তার যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )