মিশেছো_আলো_ছায়াতে #Writer_Sintiha_Eva #part : 23

0
500

#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 23

🍁🍁🍁

_ ভ ভা ভাইয়া

আচমকা সিমথির কন্ঠ শুনে সায়নরা পেছনে তাকায়। সিমথিকে দেখে সবাই আঁতকে উঠে। মাথা থেকে
র/ক্ত/পা/ত হচ্ছে। হাত কেটে গেছে অনেকখানি। গায়ের সাদা ট্রি-শার্ট র/ক্তে ভিজে গেছে অনেকটা। ফর্সা মুখ টা র/ক্তে লাল হয়ে আছে।

সায়ন : প পরী।

সিমথি আলতো হেসে এলোমেলো পায়ে সায়নের দিকে এগিয়ে আসে। হঠাৎ পড়ে যেতে নিলে সায়ন দৌড়ে সিমথিকে বুকের সাথে চেপে ধরে। চোখে অশ্রু এবার হার মেনেছে। প্রাণপ্রিয় বোনের এ অবস্থা দেখে সায়নের কলিজায় ক্রমাগত কেউ ছুড়ি চালাচ্ছে। ইফাজরা ও ছুটে এসে সিমথির পাশে দাঁড়ায়।

সায়ন : প পরী বোন আমার চোখ খোল। কিচ্ছু হবে না তোর। ভাইয়া এসে গেছে। সোনা বোন আমার চোখ খোল।

সায়নের গলার স্বর শুনে সিমথি বহু কষ্টে চোখ মেলে তাকায়। র/ক্তা/ক্ত হাত সায়নের গালে রাখে। ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটিয়ে তুলে বহুকষ্টে।

সিমথি : আ আমি ঠি ঠিক আ আছি ভা ভাইয়া। একটু ক কেটে গেছে। আ আমার খুব ঘ ঘুম পা পাচ্ছে।

কথাগুলো বলে সিমথি পুনরায় চোখ বুঁজে নেয়। চাইলে চোখ খোলা রাখতে পারছে না। মাথার পেছন টা ভারি জাতীয় কিছুতে লাগায় পুরো মাথা জিম ধরে আছে। চোখ দুটোতে মনে হচ্ছে কেউ আঠা লাগিয়ে রেখেছে। চোখ বুজার আগে সায়নের ক্রন্দনরত মুখশ্রী টা কেবল আবছা আবছা ভেসে আসে।

সায়ন সিমথির জ্ঞান শূন্য অবচেতন দেহটা জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেঁদে ওঠে। ইফাজ দের চোখ ও ভিজে গেছে। ইফাজ সিমথির মাথায় হাত রাখে। তুহিন পকেট থেকে ফোন বের করে দ্রুত মেঘাদের ফোন করে। মেঘাদের সব জানিয়ে পুনরায় ফোন লাগায় হসপিটালের দারোয়ান আঙ্কেলের কাছে।

ইফাজ : সায়ন সিমথি কে নিয়ে হসপিটালে যেতে হবে। প্রচন্ড ব্লিডিং হচ্ছে।

ইফাজের কথা সায়নের কর্ণপাত হবা মাত্রই সায়ন সিমথিকে কোলে তুলে নেয়। হাটা লাগায় গাড়ির দিকে। সায়নের পেছন পেছন তুহিনরা ও যায়।

জাফর : আমার মন বলছিলো সিমথি ম্যাম গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে।

ইকবাল : কিন্তু বের হলো কিভাবে?

জাফর : এটা তো উনার জ্ঞান ফিরলেই বলা যাবে।

জাফরের কথায় ইকবাল সহমত হয়। সম্পূর্ণ এক্সিডেন্ট স্পটের দিকে দৃষ্টিপাত করে গাড়িতে উঠে বসে। আজকের কেসের ফাইল করতে হবে। প্রচুর চাপ আছে। আবার এর মধ্যে কারা যেনো সাংবাদিক দের কাছে ও এ খবর লিক করে দিয়েছে। এই নিয়ে অনেক সাংবাদিক কল করেছে। সাংবাদিক রা কাল সকালেই পুলিশ স্টেশন ঘেরাও করবে। তবে সবকিছু অজানাই রয়ে যাবে যতক্ষণ না সিমথির জ্ঞান ফিরছে।

_______________

পৃথিবীতে সূর্যের আগমন ঘটেছে অনেকক্ষণ আগে। ঘড়ির কাটায় নয়টা বেজে পয়তাল্লিশ মিনিট। আদি গাল ফুলিয়ে সোফায় বসে আছে। সামনেই বন্ধ ফোন টা পড়ে আছে। আদির মা, চাচিরা কাজের ফাঁকে ফাঁকে আদির দিকে তাকাচ্ছে তো নিজেদের মধ্যে দৃষ্টি বিনিময় করছে। আদির বাবারা কাজে বেরিয়ে গেছে। ইশান, আদিবা, শাওন পাখির মতো কুটুর কুটুর করে আদিকে দেখছে তো নিজেদের মধ্যে কিছু বলাবলি করছে। মেহের টেবিলে ব্রেকফাস্ট রেখে আদির কাছে আসে।

মেহের : ভাইয়া কি হয়েছে।

_____

ইশান : সকাল থেকে গাল ফুলিয়ে বসে আছিস কেনো।

_____

আদিবা : আজব তো সুপার গ্লো দিয়ে ঠোঁট আঁটকে দেওয়া হয়েছে নাকি।

____

আচমকা তুহা হন্তদন্ত হয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে। প্রায় মাস খানেক পর তুহাকে দেখে সবার ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটে উঠে। কিন্তু তুহার ফেস রিয়াকশন দেখে সবাই ভ্রু কুঁচকায়।

আদির মা : কিরে তুই আবার প্যাঁচার মতো মুখ করে রাখলি কেনো।

তুহা : তোমরা এভাবে কিভাবে বসে থাকতে পারো। বাইরের অবস্থা জানো কিছু।

শাওনের মা : কেনো রে কি হলো।

তুহা : নিউজ চ্যানেলে যাও। তাহলেই দেখতে পাবে। শহরের অবস্থা গরম হয়ে আছে।

শাওন : আগে বসে নে। দেখে তো মনে হচ্ছে কোচিং থেকে এদিকে এসেছিস।

তুহা : মেহের ভাবী একটু পানি দাও না।

তুহার কথায় মেহের পানি আনতে যায়। তুহা আদিবার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকায়।

তুহা : টিভি অন কর গবেট।

আদিবা থতমত খেয়ে রিমোট হাতে নেয়। তখনই আয়াশ আর রিক ঢুকে ওদের বাড়িতে।

আয়াশ : আদি তুই এখনো এভাবে বসে আছিস।

আচমকা আয়াশের কন্ঠস্বর শুনে সবাই দরজার দিকে তাকায়। আয়াশ, রিক কে দেখে সবাই আরো অবাক হয় ।

মেহের : কি হয়েছে ক্লিয়ারলি বলবে তোমরা।

রিক : কি হয়েছে মানে। তোমরা জানো না কিছু।

ইশান : কি জানবো।

তুহা : তোরা দেশে কেনো আছিস বুঝি না। আদিবা টিভি অন করবি নাকি রিমোট নিতে সংসার পাতাবি।

তুহার ধমকে আদিবা দ্রুত টিভি অন করে। মটুপাতলু র চ্যানেলে চেঞ্জ করে তুহা নিজেই নিউজ চ্যানেল দেয়। আদির মা – চাচীরা ইতোমধ্যে ড্রয়িংরুমে এসে হাজির হয়।। নিউজ চ্যানেলে যেতেই টিভির পর্দায় ভেসে ওঠে মেজর আহনাফ খানের একটা হাস্যজ্জ্বল ছবি। আহনাফ খানের ছবির পাশে সিমথির ও একটা হাস্যজ্জ্বল ছবি পর্দার স্কিনে ভেসে আসে।

” রাত যখন নিঝুম। সবাই যখন সারাদিনের ক্লান্তি শেষে বিছানায় মাথা ঠেকায় একটু শান্তির আশায়। তখনই কিছু মানুষ পৃথিবী থেকে চিরতরে আরেকটা প্রাণ কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। রাত তখন এগারো টা ছাড়িয়ে। আর্মি অফিসার মেজর আহনাফ খানের মতো তার মেয়ে সিমথি জাহান সিয়ার উপর ঠিক একই ভাবে আ্যটাক করা হয়। উদ্দেশ্য সিমথি জাহান সিয়ার মৃত্যু। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী সিমথি জাহান সিয়ার গাড়ি প্রথমে ব্রেক ফেইল করানো হয়। কিন্তু তাতেও যদি সিমথি জাহান সিয়া বেঁচে যায়। তারজন্য ঘৃণিত ষড়যন্ত্র করে সিমথি জাহান সিয়ার গাড়ির বোম ফিট করা হয়। উনার বাঁচার কোনো সম্ভাবনা রাখতে চায়নি প্রতিপক্ষ। গাড়ি টা যখন টিসি ক্লাব ছাড়িয়ে যায় তখনই গাড়িটার সামনে এসে একটা মালবাহী ট্রাক হাজির হয়। এবং কয়েক মুহুর্তের ব্যবধানে ট্রাক&গাড়ির সংঘর্ষ হয়। ট্রাকের ড্রাইভার এক্সিডেন্টের কিছু মুহুর্ত আগে ট্রাক থেকে ঝাপ দেওয়ায় প্রাণে বেঁচে যায়। যদিও উনার ট্রাক সম্পূর্ণ দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিলো। পুলিশের সন্দেহ সিমথি জাহান সিয়ার গাড়ি মালবাহী ট্রাক কে ক্রস করতে গিয়ে গাছের সাথে বারি খায় আর সঙ্গে সঙ্গে বোম ব্লাস্ট হয়। বেশিকিছুক্ষণ খোজাখুজির পর ও সিমথি জাহান সিয়াকে কোথাও পাওয়া না গেলে পুলিশ অফিসার ইকবাল হোসেন ঘোষণা দেয় ব্লাস্টে সিমথি জাহান সিয়া হয়তো পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। কিন্তু কিন্তু হুমম এখানে ও কিন্তু আছে। আহনাফ খানের রক্ত কখনো দুর্বল হয় না এটার প্রমাণ দিয়েছেন সিমথি জাহান সিয়া। টিসি ক্লাবের থেকে একটু দূরে দোকানের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে সেই ভয়াবহ মুহুর্তের কিছু দৃশ্য দেখে নিন এক পলকে। আমি তন্ময় এহমাদ আছি আপনাদের সাথে। ”

আদি শুকনো ঢোক গিলে। বুকের ভেতর টা কেমন করছে। মেহেররা স্তব্ধ হয়ে গেছে নিউজ টা শুনে। সবার দৃষ্টি এখনো টিভি তে নিবন্ধ। টিভি তে ভেসে ওঠে রাতে এক্সিডেন্টের কিছু মুহুর্ত। সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সিমথির গাড়ি ট্রাককে ক্রস করতে গিয়ে তাল হারিয়ে ফেলে। তবে ট্রাকের একসাইডে কিছুটা লাগায় ট্রাকের মালিক প্রাণ বাঁচানোর জন্য রোড সাইডে লাফিয়ে পড়ে৷ ট্রাক গিয়ে সামনে দুমড়ে যায়। কয়েক সেকেন্ড পরই সিমথির গাড়ি গাছের সাথে জোরে ধাক্কা লাগে আর সঙ্গে সঙ্গে ব্লাস্ট হয়ে যায়। তবে গাড়িটা গাছের সাথে ধাক্কা লাগার আগেই সিমথি ও গাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়ে। অন্ধকার জায়গায় আবছা আলোতে সিমথি লাফিয়ে পড়ার সময় এক সাইড ফেস টাই দেখা গেছে। ব্যস তারপরই আবারো ভেসে ওঠে তন্ময়ের মুখ।

” রাত প্রায় দুইটার পর সিমথি জাহান সিয়ার খোজ পাওয়া যায় র/ক্তা/ক্ত অবস্থায়। সকালেই ডাক্তাররা জানান সিমথি জাহান সিয়া এখন অনেকটায় সুস্থ আছেন। তবে উনি এখনো সেন্সলেস। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে উনার সেন্স ফিরবে বলে ডাক্তাররা আমাদের জানিয়েছেন। আজকের আপডেট এতোটুকুই পরবতী আপডেট নিয়ে আবারো হাজির হবো আপনাদের মাঝে। আমি তন্ময় এহমাদ। ততক্ষণে সবাই সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেজ “।

সম্পূর্ণ নিউজ শুনে মেহেররা রিয়াকশন দিতেই ভুলে যায়। আদিবার হাত থেকে রিমোট ঠাস করে পড়ে যায়। রিমোট পড়ার শব্দে আদির হুশ ফিরে। মেহেররা আদির মনে অবস্থা বুঝতে পেরে আয়াশকে ইশারা করে।

আয়াশ : আদি যাবি নাকি হসপিটালে।

আয়াশের কথায় আদি দ্রুত ওঠে দাঁড়ায়।

আদি : পাঁচ মিনিট ওয়েট কর আমি আসছি।

আদির মা : প্রথমে বাচ্চা ছেলে-মেয়ে দুটোর মা-বাবা কে এমন নির্মম ভাবে মে/রে এক্সিডেন্ট বলে চালিয়ে দিলো। এখন আবার এতো বছর পর মেয়েটার পেছনে লাগলো। এরা কি মানুষ।

শাওনের মা : আমার তো নিউজে দেখেই হাত-পা কাঁপছে। এতোটুকু মেয়ে কিভাবে এতো বড় বিপদ টা সামলালো।

আদির মা : যা বললে ভাবী। আল্লাহ মেয়েটাকে সুস্থ করে দিক। মেয়েটার কিছু হলে সায়ন টা শেষ হয়ে যেতো। ছোট থেকে দেখছি তো ভাই-বোন দুইজনই দুজনকে অসম্ভব ভালোবাসে।

ইশানের মা : এদের নো ডেঞ্জারসের ইন্ড।

মেহের : ভাগ্যিস তিন্নি এখন স্কুলে নিউজ টা দেখে কেঁদে কেটে হয়রান হয়ে যেতো।

আদি : চল আয়াশ।

আদির কন্ঠে সবাই আদির দিকে তাকায়।

মেহের : আমাদের খবর জানিও। এতোজন তো আর যাওয়া যাবে না হসপিটালে।

মেহেরের কথায় আদি মাথা নাড়িয়ে ফোন হাতে নিয়ে বেরিয়ে যায়। যেতে ফোন টা অন করে। ফোন অন করতেই ২০+ মিসড কল দেখে আদির মাথা ঘুরে যায়। কল লিস্ট চেক করে দেখে তন্ময়, তুহিন, মেঘা, রোদেলা, আয়াশ, রিক, তুহা অনেকগুলো মিসড কল দিয়েছে। আদির এখন নিজের উপর রাগ লাগছে। কেনো সিমথির কথায় অভিমান করে ফোন অফ করে দিলো।

মেঘারা নিজেদের কেবিনে প্রেশেন্ট নিয়ে ব্যস্ত। সিমথি না থাকায় সিমথির প্রেশেন্ট গুলো ওদের কেই দেখতে হচ্ছে সেই সাথে নিজেদের ও আছে। সারারাত না ঘুমানোর ফলে আবার কান্নাকাটির ফলে কারোর চোখ-মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। সায়ন আর মিম করিডোরে বসে আছে। সাথে সিনহা ও আছে। ইফাজ একটু আগেই অফিস থেকে ফোন আসায় ওখানে গেছে। রোজের আজ এক্সাম থাকায় সায়ন ধমকে ভার্সিটি পাঠিয়েছে। মিমের মা-বাবা সকালে এসেছিলো সব শুনে।

কিছুক্ষণ পরই তন্ময় ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে হসপিটালে আসে। সিনহা করিডোরে তন্ময়কে আসতে দেখে উঠে দাঁড়ায়। এক রাতের মধ্যে চোখ-মুখের কি হাল। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। মুখটা শুকিয়ে গেছে। তন্ময় সিনহার পাশে এসে সিনহার দিকে তাকিয়ে হালকা হাসে। সিনহা মুখ ফুলিয়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে তন্ময়ের কপালের ঘাম মুছে দেয়।

তন্ময় : খেয়েছো কিছু।

সিনহা : তুমি খাওনি আর আমি খেয়ে নেবো।

তন্ময় : পা’গ’লি একটা। চলো কিছু খেয়ে নেবে। সামনে ফাইনাল এক্সাম। অসুস্থ হয়ে যাবে।

সিনহা : ভাইয়া আপুরা ও তো কিছু খায়নি আর আমি খেয়ে নেবো।

সিনহার কথায় তন্ময় সায়নদের দিকে তাকায়।

তন্ময় : আপু এখানে বসে না থেকে বাড়ি যা। সিমথি এখন সুস্থ আছে৷

তন্ময়ের কথায় সায়ন রা তন্ময়ের দিকে তাকায়।

মিম : কোথায় গিয়েছিলি তুই।

তন্ময় : অফিস থেকে বস ডেকেছিলো। কালকে রাতের ঘটনা নিয়েই প্রচার করে আসলাম।

সায়ন : মিম এখানে বসে না থেকে বাড়ি চলে যাও। এই অবস্থায় না খেয়ে না ঘুমিয়ে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবে।

মিম : চুপ করো তুমি। নিজের দিকে তাকিয়েছো একবার।

সায়ন : তন্ময় তোর বোনকে বুঝাও। তোর বোন প্রেগন্যান্ট আমি নয়।

এমন পরিস্থিতিতে ও সায়নের কথায় তন্ময়রা হেসে দেয়।

তন্ময় : আপু ভাইয়া কিন্তু ঠিক বলেছে। চল তোকে গাড়িতে দিয়ে আসি।

অতঃপর তিনজনের জেদের কাছে পরাস্ত হয়ে মিম মুখ ফুলিয়ে উঠে চলে যায়। প্রেগন্যান্ট তো কি হয়েছে। চার মাসের প্রেগন্যান্সি এমন ভাবে ট্রিট করছে যেনো আট-নয়মাসের পেট হুহহ। কথাগুলো মনে মনে আওড়িয়ে গাড়িতে উঠে বসে। তন্ময় ড্রাইভার কে বুঝিয়ে আবারো হসপিটালে আসে। মেঘার কেবিনে ঢুকে পড়ে। হঠাৎ তন্ময়কে কেবিনে দেখে মেঘা চমকে যায়। প্রেশেন্ট রেখে উঠে দাঁড়ায়।

মেঘা : তন্ময় তুই। সি সিমথি সিমথির কিছু হয়েছে। কিন্তু ডাক্তার তো বললো সিমথি আউট অব ডেঞ্জারস। কিরে কিছু বল।

তন্ময় : আমাকে বলতে দিয়েছিস কিছু। সিমথির কিছু হয়নি। ঘুমের ইনজেকশন দেওয়ায় এখনো সেন্স লেস হয়ে আছে।

তন্ময়ের কথায় মেঘা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে

মেঘা : তাহলে কেনো আসলি।

তন্ময় : কাল রাত থেকে জেগে আছিস। এখনো খাসনি কিছু। নিজের খেয়াল না রাখলে প্রেশেন্ট দেখবি কিভাবে।

মেঘা : খেতে ইচ্ছে করছে না। আগে সিমথি সেনৃস আসুক পরে খেয়ে নেবো। তোরা খেয়ে নে। রোদেলা, তুহিন ওদের খাইয়ে নিয়ে আয়।

তন্ময় : তুই বললেই যেনো আমি শুনবো। হুহ

মেঘার কথায় তন্ময় ভেংচি কেটে বেরিয়ে যায়। কেবিনে থাকা প্যাশেন্ট ওদের বন্ধুত্ব দেখে অবাক হয়।

আদি : সায়ন।

আচমকা আদির কন্ঠস্বর শুনে সায়ন মাথা উঁচু করে উপরে তাকায়। আদিকে দেখে শুকনো হেসে উঠে দাঁড়ায়।

সায়ন : তুই৷

আদি : সিয়া কেমন আছে।

সায়ন : এখন আগের থেকে বেটার। ঘুমের ইনজেকশন দেওয়ায় ঘুমাচ্ছে।

আয়াশ : তুই এখন বাড়ি যা সায়ন। হসপিটালে কতক্ষণ থাকবি।

সায়ন : না রে বাড়ি গিয়ে শান্তি পাবো না।

রিক : বেশি কথা বলিস না। গায়ে রক্তে মাখামাখি শার্ট পড়ে কতক্ষণ থাকবি। সিমথির জ্ঞান ফিরলে তোকে এভাবে দেখে কি করবে জানিস।

সায়ন : ও তো ঘুমাচ্ছে। ( কেবিনের দিকে তাকিয়ে)

আয়াশ : ভাই আমার সাথে বাড়ি আয়। চেঞ্জ করে শাওয়ার নিয়ে আবার আসিস।

তরী : সায়ন ভাইয়া বাড়ি যাও। আমরা আছি তো।

তরীর কথায় সায়ন তরীর দিকে তাকায়।

সায়ন : কিন্তু

তরী : আমি অতটা খারাপ নয় ভাইয়া। যাও তুমি নিশ্চিতে। সিমথিকে দেখার জন্য এখানে অনেকে আছে।

সায়ন : ঠিক আছে। আমি আবার আসবো। একটা লম্বা শাওয়ার নিতে হবে।

সায়নের কথায় আয়াশরা সায়ন দেয়। আয়াশ সায়নকে নিয়ে চলে যায়। তরী ও চলে যায়।

সাদা বেডে শুয়ে আছে সিমথি। চোখ বন্ধ। মাথায় ব্যান্ডেজ করা। বাম হাতেও ব্যান্ডেজ করা। মুখটা শুকিয়ে গেছে। মুখে অক্সিজেন মাক্স লাগানো। আদি পা টিপে টিপে সিমথির পাশে এসে দাঁড়ায়। সিমথি কে এভাবে দেখে আদির বুকের ভেতর অসহনীয় পীড়া আরম্ভ হয়। কাল দুপুরেও মেয়েটা ঠিক ছিলো। আর এখন শুয়ে আছে। আদির সিমথি ব্যাডেন্জ আবৃত কপালে একটা চুমু খায়।

আদি : জলদি সুস্থ হয়ে যাও। তোমাকে এভাবে দেখতে আমার একদম ভালো লাগছে না। তোমাকে একটা গুড নিউজ দেওয়ার আছে। না উঠলে জানবে কিভাবে।

আদি সিমথির পাশে হাত ধরে বসে থাকে। অনেকক্ষণ পর বাইরে থেকে রিকের আওয়াজ আসতেই আদি উঠে দাঁড়ায়। হাতের উল্টোপিঠে একটা চুমু খেয়ে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে।

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here