মিশেছো_আলো_ছায়াতে #Writer_Sintiha_Eva #part : 24

0
472

#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 24

🍁🍁🍁🍁

সিমথি সুস্থ হয়েছে আজ সাত দিন হলো। এখন কেবল মাথায় ব্যান্ডেক করা। মাথার আঘাত টা গুরুতর হওয়ায় আঘাত শুকাতে সময় নেবে। এই সাতদিন সায়ন সিমথিকে হসপিটালে থাকতে দেয়নি। জ্ঞান ফিরার পর দিনই বাড়ি নিয়ে এসেছে। সেদিন টা রেস্ট নিয়ে আবারো কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়। তবে এক্সিডেন্ট কেস হওয়ায় হুটহাট পুলিশের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

সায়ন : পরী তুই আদিকে ভালোবাসিস।

সিমথি আজ হাফ টাইম হসপিটালে কাজ করায় রাতে বাড়ি বসে কাজ করছিলো তখনই হঠাৎ সায়নের কথায় সিমথি ল্যাপটব থেকে চোখ সরিয়ে সায়নের দিকে তাকায়। সায়নের দৃষ্টি এখনো সিমথির দিকে। সিমথি একটা ঢোক গিলে। আচমকা এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হবার জন্য সিমথি প্রস্তুত ছিলো না। সিমথিকে চুপ থাকতে দেখে সায়ন এসে সিমথির পাশে বসে। সিমথির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে

সায়ন : কি রে বল।

সিমথি : ত তোকে এ এসব কে বললো।

সায়ন : যা জিজ্ঞেস করেছিস সেটার এন্সার দে।

সিমথি : এসবের মানে কি। হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেনো করছিস।

সায়ন : এন্সার টা দে।

সিমথি ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে। সায়ন যে উত্তর না নিয়ে ওকে ছাড়বে এটা সিমথি ভালোই জানে। কোল থেকে ল্যাপটপ টা নামিয়ে উঠে দাঁড়ায়। কিভাবে বলবে ভাবতে শুরু করে।

সায়ন : এতো কি ভাবছিস। সোজা প্রশ্নের উত্তর টা দিতে এতোক্ষণ লাগে। উত্তর তো তোর জানার।

সায়নের কথায় সিমথি কিছুক্ষণ চুপ থাকে।

সিমথি : হ্যাঁ ভালোবাসতাম।

সিমথির কথায় সায়ন শান্ত দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়।

সায়ন : এখন বাসিস না।

______

সায়ন : কি হলো বল।

সিমথি : কি শুনতে চাস। হ্যাঁ নাকি না।

সায়ন : সত্যি টা।

সিমথি : তুই ভাবীপু কে কত বছর ধরে ভালোবাসিস ভাইয়া৷

সায়ন : কেনো।

সিমথি : আহা বল না।

সায়ন : প্রায় দশ বছর।

সিমথি : স্কুল লাইফ থেকে তাই তো৷

সায়ন : হুমমম।

সিমথি : হুট করে ভাবীপু তোর থেকে দূরে চলে গেলে কি ভাবীপু কে ভুলে যাবি।

সায়ন : নাহ।

সিমথি : কেনো

সায়ন : কারণ ওকে আমি ভালোবাসি। প্রতি মুহূর্তে অনুভব করি। দূরত্ব ভালোবাসা কমায় না বরং
বাড়ায়। আর যে ভালোবাসা সামান্য দূরত্বে শেষ হয়ে যায় সেটা মোহ ভালোবাসা নয়।

সিমথি : লজ্জা রাখ ইয়ার আমি তোর ছোট বোন।

সায়ন : আমি তোকে সবসময় নিজের একান্ত কাছের একজন বন্ধু ভাবি যাকে নির্দ্বিধায় সব বলা যায়। এবার আমার উত্তর টা দে।

সায়নের কথায় সিমথি হাসে। এক পা এক পা করে বারান্দায় গিয়ে দাড়ায়। বাইরে বাতাস বইছে তবে সেটা খুবই অল্প। আজকে গরমের মাত্রা অনেক ছিলো। সিমথি আকাশের মেঘের আড়ালে লুকোচুরি খেলায় মত্ত চাঁদের দিকে তাকায়। সায়ন সিমথির পাশে এসে দাঁড়ায়।

সিমথি : আদি কে আমি প্রথম যখন দেখেছিলাম তখন ক্লাস টেনে পড়ি। আমাদের স্কুলের সামনে আয়াশ ভাইয়ার সাথে প্রথম দেখেছিলাম। সেদিন উনি ওয়াইট কালার শার্ট আর কালো জিন্স পড়ে ছিলো। চুলগুলো বাতাসে উড়ছিলো। উনি আয়াশ ভাইয়া কে কিছু বলছিলো হাত নাড়িয়ে। সেদিন স্কুল ছুটির পর আমরা ফুসকা খাওয়ার জন্য বাইরে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু আদিকে দেখার পর আমার কেমন যেনো লেগেছিলো। নতুন একটা অনুভূতির সাথে পরিচিত হয়ে ছিলাম সেদিন৷ যতক্ষণ উনি ওখানে ছিলো ততক্ষণ আমি আড়চোখে উনাকে দেখেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই উনি কোথায় যেনো চলে গিয়েছিলো। প্রায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়েছিলাম কিন্তু উনার দেখা পায়নি। তখন মন খারাপ করে বাড়ি চলে এসেছিলাম। হঠাৎ নিজের মন খারাপের কারণ আমি নিজেই বুঝতে পারিনি। সারাদিন শুধু উনার কথা ভেবেছিলাম। উনার হাসির মায়ায় পড়ে গিয়েছিলাম। তারপর আর মাসে খানেক উনার সাথে আমার কোনো রকম দেখা হয়নি। তবে আমি প্রতিদিন উনাকে খুঁজতাম। তখন এসবকে নিজের আবেগ ভেবে দমিয়ে রেখে পড়াশোনায় মন দিয়েছিলাম। কিন্তু সেটা ও বেশিদিন টিকাতে পারিনি। হঠাৎ একদিন তুই আদি, আয়াশ ভাইয়া, রিক ভাইয়া আর মিম আপুকে নিয়ে বাড়ি হাজির হয়েছিলি। ওইদিন আদি কে আবারো দেখেছিলাম। তারপর প্রায়ই দেখা হতো কারণ উনারা আমাদের বাড়ি আসতো। আগে তেমন একটা না আসলে ও সেদিনের পর থেকে আসতো। বেশ কিছুদিন যাবার পর অনুভব করলাম আমি উনাকে ভালোবেসে ফেলেছি। আমি আমার মনকে অনেক কন্ট্রোলে রেখেছিলাম কিন্তু পারিনি। তারপর আমি আদি ভাইয়া কে জানায় ও। কিন্তু উনি না করে দেয়। কিন্তু তুই তো জানিস আমি বরাবরই নাছোড়বান্দা ছিলাম। সিরিয়াল সিনেমার মতো ভাবতাম হয়তো উনিও কোনোদিন আমাকেও ভালোবাসবে। কিন্তু আমি বার বার ভুল প্রমাণিত হতাম। তারপর কিছু কারণে ই উনাকে আমি মুক্তি দিয়েছিলাম এসব থেকে।

সায়ন : কারণ টা কি আমি

সায়নের কথায় সিমথি সায়নের দিকে তাকায়। অতঃপর মুচকি হাসে।

সিমথি : পৃথিবীতে আমি সবচেয়ে বেশি তোকে ভালোবাসি ভাইয়া। উনার প্রতি যখন আমি ধীরে ধীরে দুর্বল হচ্ছিলাম তখন ও যদি জানতাম তুই তোর কোনো বন্ধুর সাথে তোর বোনের সম্পর্ক মানবি না আমি নিজেকে তখনই দমিয়ে নিতাম। কিন্তু তোর এই কথাটা আমি তিন মাস আগে শুনেছি। কিন্তু উনাকে আমি মুক্তি দিয়েছি আজ প্রায় সাত বছর। তাই কারণ টা কোনো ভাবেই তুই হতে পারিস না।

সায়ন : এখন যদি ও তোর লাইফে ফিরতে চাই তুই মানবি।

সায়নের কথায় সিমথি পুনরায় হাসে।

সিমথি : উনি বন্ধুত্ব আর ভালোবাসার মধ্যে বন্ধুত্ব বেছে নিয়েছে ভাইয়া। আমি তোর আর আদির মধ্যে তোকে বেছে নিয়েছি। অতীত নিয়ে আর ভাবতে চাই না। যা হওয়ার হয়েছে। এখন বড় হয়েছি বুঝতে শিখেছি।

সায়ন : ভালোবাসিস আদিকে এখনো। এই এন্সার টা পায়নি এখনো।

সিমথি : ভাইয়া প্লিজ। কেনো এসব টানছিস। এসব তোকে কে বলেছে।

সায়ন : এটা তোর না জানলে ও চলবে। আমার এন্সার টা দে।

সিমথি : দূরত্ব কখনো ভালোবাসা কমায় না বরং বাড়ায় কথাটা তুই একটু আগে বলেছিলি তাই না।

সিমথির কথায় সায়ন বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। আচমকা বুকের মাঝে চাপা আর্তনাদ ভেসে ওঠে। নিজের করা মজার ছলে নিজের প্রিয় বোনটা এতো কষ্ট পাবে এটা সায়ন ভাবেনি। সায়ন সিমথিকে টেনে নিজের দিকে ফেরায়। সিমথি হেসে উঠে। সায়ন সিমথির দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকায়।

সায়ন : বড় হয়ে গেছিস পরী। কষ্ট লুকিয়ে হাসতে শিখে গেছিস।

সিমথি : দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে ভাইয়া। এতো এতো ঠকবাজের আড়ালে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি রে। বিশ্বাস কর আমাদের চারপাশটায় মুখোশধারী মানুষের অভাব নেই। তাই নিজের কষ্ট টা নিজের মাঝে চেপে রাখতে হয়। তুই বড্ড সরল রে ভাইয়া। বাবাই কি বলতো মনে আছে তোর। আমি বাবাইয়ের মতো শক্ত মনের হয়েছি আর তুই মায়ের মতো সরল। ভাইয়া মা- বাবাই নেই তাই বলে কি তুই আমাকে ছেড়ে দিয়েছিস। মায়ের সরলতা মা’কে আমাদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। আর বাবাইয়ের কঠোরতা বাবাই কে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। ভাইয়া নিজেকে একটু কঠোর কর। আমি সবসময় থাকবো না। নিজের দুর্বলতা গুলো নিজের মাঝে রাখ। কি দরকার নিজের দুর্বলতা কে নিজের মৃ’ত্যু’র অস্ত্র বানানো।

আচমকা সায়ন সিমথিকে জড়িয়ে ধরে।

সায়ন : সরি রে বোন। আমি বন্ধুর সাথে বোনের সম্পর্ক মানবো না এটা মজা করে বলেছিলাম। আমি কখনো ভাবিনি একটা মজায় এতোকিছু হয়ে যাবে।

সিমথি : ভাইয়া বাদ দে না এসব।

সায়ন : নাহ। আমি নিজে আদির সাথে কথা বলবো। আমার সামনে আমার সবচেয়ে কাছের দুজন মানুষ কষ্ট পাবে আমার কারণে এটা আমি মানতে পারবো না। তুই শুধু সব ভুলে যা নতুন করে সব শুরু করার চেষ্টা কর। আদিকে ভুল বুঝিস না। আদি ভীষণ ভালো ছেলে।

সিমথি : আমি জানি ভাইয়া। আমার উনার উপর রাগ নেই। সত্যি বলতে এতোদিন রাগ ছিলো কিন্তু এখন আর নেই। তবে আমার লাইফে কাউকে জড়াতে চাই না।

সায়ন : কিন্তু পরী।

সিমথি : ব্যস ভাইয়া। আমার একটু মানসিক শান্তির প্রয়োজন। এতোসবে আমি হাঁপিয়ে উঠেছি। আমার মাথায় প্রচুর পেইন হচ্ছে। ঘুমা গিয়ে আমিও ঘুমাবো।

সায়ন : মেডিসিন নিয়েছিস।

মেডিসিনের কথা শুনে সিমথি নাক-মুখ কুঁচকে ফেলে। সিমথির রিয়াকশন দেখে সায়ন যা বুঝার বুঝে যায়। সিমথির হাত টেনে বেডে বসিয়ে মেডিসিন খাইয়ে চলে যায়। সিমথি বেডে শুইয়ে চোখ বুঁজে নেয়। ঠোঁটের কোণায় ফুটে উঠে এক চিলতে হাসি।

সিমথি : সব সম্পর্কে পূর্ণতা মানায় না। আদির মা কখনো আমাকে মানবে না এটা আমি জানি।

মনে মনে কথাগুলো আওড়িয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে চোখ মেলে তাকায়। সঙ্গে সঙ্গে চোখের কার্নিশ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।

____________

শাওন : কেনো মেঝো মা সিমথি কি মেয়ে হিসেবে খারাপ।

আদির মা : আমি তা বলছি না। সিমথি যথেষ্ট ভালো মেয়ে। কিন্তু ও সারাদিন মা’রা’মা’রি গু’লাগু’লি তে থাকে। আমি আমার ছেলেকে এমন বিপদে ফেলতে পারিনা।

আদির বাবা : মেয়েটা তো আর খারাপ কাজের জন্য এসব করে না।

আদির মা : তুমি কোনো কথা বলবে না। আমি যখন বলেছি আদির সাথে আমি সিমথির বিয়ে দেবো না। তার মানে দেবোই না।

আদির মায়ের কথায় শাওন রা পুনরায় আশাহত হয়। শাওনরা একে অপরের দিকে হতাশ দৃষ্টিতে তাকায়। আদি রেগে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ায়।

আদি : কেবল এতোটুকুতেই তোমার সমস্যা।

আদির মা : হ্যাঁ। আর ওই মেয়ে কি পারবে এসব ছাড়তে। জানি পারবে না। আমি কোনো ভাবে সিমথিকে ছোট করছি না কিন্তু ওর কাজটা আমার অপছন্দের।

মেহের : মেঝো মা

আদির মা : নাহ মেহের। তোমার ভাইয়ার যদি একান্তই বিয়ের শখ এতোবছর পর জেগে থাকে তাহলে আমি নিজে মেয়ে পছন্দ করবো। তোমার মতো ঘরনী মেয়ে নিয়ে আসবো। সিমথি সবসময় পড়াশোনা আর খু’না’খু’নি নিয়ে ব্যস্ত ছিলো ওর পক্ষে কখনো সংসারের কাজ জানা সম্ভব না। তারপর বিয়ের পর কি এসব ড্রেস পড়বে। আমার মনে হয়না ও কখনো শাড়ি পড়েছে বলে।

আদিবা : মা তুমি তো নিজেই সব জেনে বসে আছো। এভাবে না জেনে একজনকে জাজ করাটা ঠিক না।

আদির মা : তুই আমার পেটে হয়েছিস নাকি আমি তোর পেটে। বড়দের মাঝে কথা বলবি না। আমি কাল থেকেই মেয়ে দেখা শুরু করছি।

আদি : এনাফ ইজ এনাফ। লাইফ টা আমার মা। আমি যাকে তাকে বিয়ে করবো এটা ভাবলে কিভাবে। আর সিয়াকে নিয়ে তোমার মনে সব ভুল ধারণা আছে। কতটুকু জানো ওকে।

আদির মা : আদি চুপ কর নয়তো এখন হাত উঠে যাবে। ( রেগে)

ইশানের মা : আহ মেঝো ভাবী কি বলছো এসব।

আদি : আমি সিমথি ব্যতিত কাউকে বিয়ে করবো না।

আদির মা : এটাই তোর শেষ কথা।

আদি : হ্যাঁ

আদির মা : আমার থেকে এখন ওই মেয়েটা বড় হয়ে গেলো।

শাওন : মেঝো মা প্লিজ ইমোশনাল কথা বলবে না। তুমি কেনো শুধু শুধু ওদের ভালোবাসার মাঝে ব্যাঘাত আনছো।

আদির মা : আমার সিদ্ধান্ত আমি জানিয়ে দিয়েছি বাকিটা তোমাদের ইচ্ছে। যদি ওই মেয়েকে তুই বিয়ে করতে চাস করতেই পারিস কিন্তু আমাকে আর কখনো মা বলে ডাকতে পারবি না। আমি জানবো আমার কেবল একটাই মেয়ে।

আদির বাবা : তাহমিনা ( ধমকে)

আদির মা রেগে মেগে চলে যায়। পেছন পেছন আদির বাবা ও যায়। শাওনের মা-বাবা ও চলে যায়। আদি রেগে সোফায় লাথি দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। পেছনে মেহেররা এখনো স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের বিশ্বাসই হচ্ছে না আদির মায়ের মনে সিমথির সম্পর্কে এতোটা ভুল ধারণা আছে।

চলবে,,,,,

( নাও এদের আর হইলো মিল 😒 )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here