আবার_প্রেম_হোক #নুসরাত_জাহান_মিম ১৬.

0
684

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

১৬.
কোলাহলপূর্ণ ব্যস্ত নগরীতে একটুখানি স্বস্তি খোজা মানে অযথাই সময় অপচয়ের অন্যতম মাধ্যম।রাস্তাঘাটে বের হলে যেনো মনে হবে,এর চাইতে বাসায় বসে ঘুমিয়ে সময় অপচয় করাও ঢের!ঘুমালে তাও মস্তিষ্ক ঠান্ডা থাকে কিন্তু রাস্তায় বের হলে বোঝা যায় মস্তিষ্ক ঠিক কীভাবে টগব!গিয়ে ব!লকা!য়!একেতো মানুষের ভিড় সেইসাথে যানবাহনের ব্যস্ততা,তার উপর মাথার উপর অবস্থিত সূর্যের প্রকোপ তাপ!এমতাবস্থায় চাঁদের মেজাজ ধীরে ধীরে বি!গড়ে যাচ্ছে।সে কেবলই হাটার চেষ্টা করছে।কিন্তু আশেপাশের মানুষদের জন্য হাটতে পারছেনা বলে বড্ড বিরক্ত হচ্ছে।তার মনে হচ্ছে এর তুলনায় কচ্ছপও বোধহয় দ্রুতগতিতে হাটে!আশেপাশের মানুষগুলো কচ্ছপের গতিতে হাটছে নাকি সে নিজেই খরগোশের গতিতে হাটছে বুঝার চেষ্টায় মস্তিষ্ককে ব্যস্ত রাখতে মগ্ন চাঁদ।কারণ একটাই,তার মেজাজ হুটহাট ই বিগড়ে যায়।সে চাচ্ছেনা মেজাজ বি!গড়াক।কিন্তু ভাগ্য তার সহায় হলোনা।পেছন থেকে এক লোক চাঁদের কোমড় স্পর্শ করার চেষ্টা করছে।অনেকক্ষণ যাবৎ ই চাঁদ সেটা অনুভব করছিলো। এবং!অবশেষে!অবশেষে মেজাজ তার বি!গড়েই গেলো!আগুনে সেই লোকটা যেনো ঘি ঢেলে দিলো।লোকটার হাত মো!চড়িয়ে তারই পিঠের দিকে নিয়ে আসতেই লোকটা ‘ওমাগো!’ বলে চে!চিয়ে উঠলো।লোকটার চেচানোতে চাঁদ পৈ!শাচিক আনন্দ পেলো যেনো!তার মস্তিষ্ক তার মনকে আরেকটু আনন্দ দিতে চাচ্ছে।তাইতো চাঁদ লোকটার হাত আরেকটু জোরে চে!পে ধরেই বললো,

“এখন মায়ের কথা মনে পড়েছে না?আগে মনে পড়লোনা যে আপনি একজন মায়ের গর্ভ থেকে জন্মেছেন?একজন স্ত্রীকে নিজের সহধর্মিণী করেছেন অথবা করবেন?একটা কন্যা সন্তানকে জন্ম দেবেন?একজন বোনের নিজস্ব রক্ষক আপনি?আরে ভাই!একজন রক্ষক ই যদি ভক্ষক হয় তবে সমাজটা র!সাত!লে যাবে কিনা?”

একজন লোক এসে চাঁদকে বললো,

“কি হয়েছে বোন?”

চাঁদ হেসে বললো,

“এখন বোন বলছেন?তখন চোখদুটো কি আসমানে ছিলো?যখন আপনার ই পাশের লোকটা বারবার একটা মেয়ের আপ!ত্তি!কর স্থানে হাত দেয়ার চেষ্টায় মত্ত ছিলো?তখন কেনো এসে লোকটার হাত দু!মড়ে-মুচ!ড়ে দিয়ে বললেন না?’কি হয়েছে ভাই?বাসায় কি বউ নাই?না থাকলে বাবা-মাকে বলে বিয়ে করে কাম!না বাস!না পূর্ণ করুন!”

শেষের কথাটা তীব্র রাগ নিয়েই বললো চাঁদ।সকলের মুখ বন্ধ হলো যেনো এ কথায়।চাঁদ সেই লোকটার হাত ছেড়ে দিয়ে তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে তার চোখ বরাবর তর্জনী নিয়ে বলতে লাগলো,

“আর আপনি!কোথা থেকে আপনার উৎপত্তি আশা করছি ভুলে যাননি।ভুলার চেষ্টাও কখনো করবেন না।যদি ভুলে যানও আজকের এই দিনটার কথা মনে রাখবেন।মনে রাখবেন সাদা এপ্রোণ গায়ে একটা মেডিকেলে পড়ুয়া মেয়ে আপনার অস্তিত্ব কোথা থেকে কোথা পর্যন্ত তা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে!কখনোই মেয়েদেরকে অস!ম্মান করার উদ্দেশ্য মনে আনবেন না।মনে রাখবেন,যে যেমন কর্ম করে সে তেমন ফল ই পায়।আপনি কোনো মায়ের সন্তান।কোনো স্ত্রীর স্বামী।কোনো বোনের ভা… আচ্ছা ধরলাম নাহয়,যে আপনার কোনো বোন ই নেই।তবে একদিন একটা ফুটফুটে কন্যা সন্তান ঘর আলোকিত করে আসতেও তো পারে?কেমন লাগবে যখন আপনার শরীরের ই অংশ,র*ক্ত মাংস পানি করে যাকে তিলতিল করে বড় করে তুলেছেন সে এসে বলবে ‘বা…বাবা আজ একটা বাজে লো…লোক আমায়!”

লোকটার চোখে পানি টলমল করছে।মাথা নিচু করে কাপা কাপা কন্ঠে সে বললো,

“চুপ করো মা চু….উপ করো!”

চাঁদ লোকটার কথা শুনে বললো,

“নিজের মেয়ের কথা ভেবে লোম দাঁ!ড়িয়ে গেলো নিশ্চয়ই?তাহলে ভাবুন আপনার সামনে যেই মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে সেও তো কোনো না কোনো বাবার আদুরে মেয়ে?এই মেয়েটা কি করে তার বাবার কাছে গিয়ে বলবে ‘আব্বু আমাকে এক লোক….”

চাঁদকে থামিয়ে দিয়ে লোকটা মাথা নিচু করেই হাত জোর করে বলে,

“আমারে মাফ করো মা মাফ করো!বড্ড ভুল হয়ে গেছে আমার”

চাঁদ এবার শান্ত হয়ে লোকটার হাতদুটো এক হাতে ধরে অপর হাত দিয়ে লোকটার নিচু মাথা উচু করে বললো,

“কোনো মেয়েই পছন্দ করবেনা কোনো বাবার মাথা নিচু হওয়া বা হাত জোর করা।আর আপনি কাদবেন না বাবা।”

“তুমি আমারে বাবা বললা?”

“হ্যা বললাম।আপনি আমায় মা বলে সম্মান দিতে পারলে আমি কেনো পারবোনা?”

“মা… মাগো!আমারে তুমি.. ”

“না বাবা।এবার আপনার এই মেয়েকে একটা ওয়াদা করুন”

“কী মা?”

“যে আপনি আজকের পর থেকে কোনো মেয়েকে অস!ম্মান করবেন না আর অসম্মানিত হতে দেখলে তার প্রতিবাদ করবেন।আর আমার মতোই অন্য আরেকজন পুরুষ অথবা মহিলা থেকে ওয়াদা নেবেন সেও যেনো এরূপ ওয়াদা করে এবং সেও যেনো কারো না কারো থেকে এরূপ ওয়াদা নেয়।বলুন করবেন?”

“ওয়াদা করলাম মা”

বলেই সবার উদ্দেশ্যে লোকটা বললেন,

“যারা যারা আমারে শুনতাছেন।আমার এই মেয়েটার কথা শুনতাছেন।ভাই-বোনেরা আপনারাও নিজেই নিজেরে ওয়াদা করেন আজকে থেকে আমরা নারীসমাজের রক্ষক হবো আর এমনিভাবে অন্যদের রক্ষক হওয়ার জন্য আহ্বান জানাবো।পারবোনা?”

সকলে সমস্বরে বলে উঠলো,

“পারবো!”

চাঁদ তৃপ্তির হাসি হাসলো।হেসে বললো,

“একজনের দৃষ্টিভঙ্গিও যদি আমি বদলাতে সক্ষম হই তাতেই আমার অনেক বড় পাওয়া।একজন একজন করেই গড়ে উঠবে গোটা সমাজ।এক পর্যায়ে পুরো ধরণী!”

সবাই চাঁদের জন্য হাততালিতে মেতে উঠলো।একজন লোক জিজ্ঞেস করলেন,

“মা তোমার নাম কী?আর কোন ইয়ারে পড়ো তুমি?”

“নামটা নাহয় অজানাই থাক আংকেল?আমি এম.বি.বি.এস প্রথম বর্ষের ছাত্রী আংকেল”

“এপ্রোণ দেখে ঢাকা মেডিকেলের লাগছে?”

“জ্বি আংকেল ঢাকা মেডিকেল ই।আজ আসি ধন্যবাদ সকলকে”

বলেই হাটা ধরলো সামনের দিকে।কোলাহলপূর্ণ এলাকা পার করে হাইওয়েতে এসে কল দিলো ইপ্সিকে।সাথে সাথেই ইপ্সি কল রিসিভ করে বললো,

“কোথায় তুই?আজই না তোকে জলদি যেতে হবে?দেরি করলি কোথায়?”

“আস্তে ভাই আস্তে!একটা একটা করে বল।দেরি হয়েছে কেনো সেটা দেখা হলেই বলছি।বিরাট লম্বা কাহিনী!তুই কোথায় সেটা বল?হাইওয়ের আশেপাশেও তোকে দেখছিনা আমি।অলরেডি ন’টা পাঁচ বেজে গেছে”

“নিজে যখন দেরি করলি তখন কিছুনা না?”

“তোকে কি আমি কিছু বলেছি?যেখানেই আছিস আয় আমি রিক্সা দেখছি”

“এখনই নিস না।আমরা আসছি”

“আমরা মানে?”

“মানে আমি আর অবু”

“অবনী তোকে পেলো কোথায়?”

“হাইওয়েতে তোর জন্য ওয়েট করছিলাম।অবু রিক্সা দিয়েই যাচ্ছিলো।আমাকে দেখে হুট করেই নেমে যায়।রিক্সা ভাড়া দিয়ে রিক্সাওয়ালাকে তাড়িয়ে সে পণ করেছে আমাদের সাথেই যাবে।তখন থেকে দাড়াতে দাড়াতে গরমে সে!দ্ধ হচ্ছিলাম।ভাইরে এমন সকালবেলা এতো রোদ কি করে উঠতে পারে মগজে ঢুকেনা চু*ল!”

“আমার কাহিনী শুনলে শুধু চু*ল কেনো?বড় চুল,লম্বা চুল,কালো চুল,গোল্ডেন চুল,নাগিন চুল সব চু*লের গোষ্ঠী উ!দ্ধার করে ফেলবি বোইন!জলদি এসে আমাকে উ!দ্ধার কর প্লিজ!”

বলতে না বলতেই পেছন থেকে এসে অবনী চাঁদকে বলে,

“টানটাডা!এসে পড়েছি।উদ্ধারও করে ফেলেছি বল এবার আমাদের কী দিবি?”

“তোমাকে দেয়ার মতো তেমন কিছুই নেই তবে হ্যা একটা উপদেশ দিতে পারি”

“তার আগে এটা নে।যেই গরম বাপরে!আমরা আইসক্রিম খেতেই গিয়েছিলাম।ভাবলাম তোর জন্যও নিয়ে আসি”

বলেই অবনী চাঁদের দিকে আইসক্রিম বাড়িয়ে দিতেই চাঁদ ইতস্তত করছে দেখে অবনী বলে,

“এতো কিসের ফর্মালিটি ভাই?আমরা ফ্রেন্ড না?একদিন আমি খাওয়াবো একদিন তুই।সময়তে পুরো ট্রিটই তোর থেকে নেবো।এটাইতো বন্ধুত্ব তাইনা রে ইপ্সু?”

ইপ্সি আইসক্রিম খেতে খেতে বললো,

“ইমম….হিম ওটাই”

চাঁদ আইসক্রিমটা ছো মেড়ে নিয়ে খেতে খেতে বললো,

“থ্যাংক ইউ সো মাচ অবু!এটারই দরকার ছিলো।বাই দ্যা ওয়ে তুমি জানলে কি করে এই কোণ আমি স্ট্রবেরী,অরেঞ্জ আর চকোলেট মিক্সড টা পছন্দ করি?”

অবনী চাঁদের মাথায় গাট্টা মেরে বললো,

“তুই আমায় থ্যাংক্স কেনো বলছিস?একটু আগেই না বললাম নো ফর্মালিটি?আর কি তুমি তুমি করছিস।কালই না সবার সামনে মাইকে তুই করে বললি?”

গতকালকের কথা মনে করে গম্ভীরভাবে চাঁদ বললো,

“তখন আরকি এমনি বলে ফেলেছিলাম”

“এখনও এমনি ই বলে ফেলুন ম্যাডাম!”

“চেষ্টা করবো।আসলে আমি সহজে আরকি মানে…”

“সবার সাথে সহজ হতে পারিস না তাইতো?ইপ্সু আমায় বলেছে।আর তোর কোণের এই ফেভারিট ফ্লেভারের কথাও ও ই আমায় বলেছে”

ইপ্সি আইসক্রিম শেষ করে বললো,

“এখন তোদের লেট হচ্ছেনা?”

অবনী ইপ্সির মাথায় চা!টি মেরে বললো,

“ওরে চা*ন্দু!নিজের টা সুযোগ বুঝে শেষ করে এখন ঢং করা হচ্ছে না?”

চাঁদ হেসে বললো,

“আমার তরফ থেকেও দুটো লাগিয়ে দিলে মন্দ হবেনা কি বলিস?”

অবনী বললো,

“যো হুকুম মেরে আকা!”

বলেই আরও দুটো দিতেই তিনজনের মধ্যে খুনশুটি লেগে গেলো যেনো!

মিরা আর মির কলেজ গেটের সামনে আসতেই মিরার চোখ যায় গেটে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বই পড়তে ব্যস্ত অরণের দিকে।মির রিক্সা ভাড়া দিতে দিতে মিরাকে বললো,

“সামনে গিয়েও দেখতে পারবি।এখন নাম”

মিরা রিক্সা থেকে নেমে মিরের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেই মির বললো,

“কি হয়েছে?গি!লে ফেলবি নাকি?চোখ পা!কাচ্ছিস কেনো?”

“বেশি চু*ল পাকনামি না করলে পেটের ভাত হজম হয়না না?”

“তোর সাথে ঝগ!ড়ার মুড আপাতত আমার নেই।যে কাজের জন্য এসেছি ঐটা নিয়েই ভাবতে চাই বুঝেছিস?”

“ঐদিকেও যে তুমি তোমার বাম হাত ঢুকিয়ে চু*ল পাকনামি করবানা তার কি গ্যারান্টি?”

“দেখ মিরা… ”

“মিরা আপু”

“রাখ তোর আপু!আমি শুধু আমার চাঁদমামিকে নিয়েই ভাবতে চাই বুঝছিস?”

অরণ মিরের কাধে হাত রেখে বললো,

“তোরা আবারও লেগে গেছিস?আর কি নিয়ে ভাবতে চাস?”

মির অরণের দিকে তাকিয়ে বলে,

“তুই তোর এই ডা*কিনীকে বুঝা প্লিজ!জীবনটা জাস্ট তেজপাতা করে রেখেছে!”

মিরা বললো,

“সেই তেজপাতা দিয়ে আদা-চা করে খেয়ে ফেলে আমায় ধন্য করুন জাহাপনা!আর তুই?তোকে জীবনেও আমি টেক্সট বুক অর পড়া রিলেটেড বই ছাড়া অন্য বই পড়তে দেখিনি।কিসের বই পড়ছিলি তুই?”

“কিই….ইসের বই মানে?”

“তোতলাবি না বলে দিলাম!”

“ঐ আরকি এমনি বই।তোরা বল চাঁদকে নিয়ে কী করলি?আর তুই নাকি ওকে মামি ডেকে অস্থির?কোন মামার সাথে জুড়িয়েছিস আবার?”

মির ভ্রু কুচকে বললো,

“আমার মামা কয়টা?”

“কয়টা আবার?”

“বে!ক্কল কোথাকার!তুই,রবিন আর প্রণয় বাদে আর মামা আছে কয়টা?তুইতো ভুলেও এগুলায় নেই আর রবিনেরও গার্লফ্রেন্ড আছে।তো বাকি কে রইলো?”

“তুই আর প্রণয়?”

মির মেজাজ খারাপ করে বললো,

“তুই বই না পড়ে বইয়ের পাতাগুলো গুলিয়ে পানি দিয়ে খেয়ে ফেলতে পারিস না?আমার যদি ওকে ভালোই লাগতো মামি বলতাম নাকি আজব!ভালো লাগেনি এমন না।তবে সেটা লেগেছে মামি হিসেবে।শি ইজ পার্ফেক্ট ফর মাই গম্ভীর মামা”

“ইউ মিন?”

“ইয়েস!প্রণয় মামার চাঁদ মামি।দেখনা সবার থাকে চাঁদমামা।আর আমাদের গ্যাং এর হবে চাঁদমামি আর প্রণয়ের চাঁদ বউ।ইন্টারেস্টিং না?”

মিরের কথা শুনে অরণ আর মিরা একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে বিরক্তির সুরে একসাথেই বললো,

“ভেরি ইন্টারেস্টিং!”

To be continued….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here