মিশেছো_আলো_ছায়াতে #Writer_Sintiha_Eva #part : 30

0
315

#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 30

🍁🍁🍁🍁

জানালার পাশে আদিকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সিমথি অবাক হয়ে আদির দিকে তাকায়। হঠাৎ খোলা দরজার দিকে তাকাতেই সিমথির মাথায় হাত। এই ছেলে এক নাম্বারের উন্মাদ। আদি সিমথির দিকে এগিয়ে আসে। সিমথি শাড়ি সামলে দৌড়ে গিয়ে দরজা দিয়ে মাথা বের করে আশপাশ টা দেখে নেই। কাউকে না দেখতে পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে। দরজার সিটকিনি লাগিয়ে পেছনে ফিরতেই চমকে দরজার সাথে লেপ্টে যায়।

সিমথি : হ্যাভ ইউ গন ম্যাড। এতো রাতে এখানে কি করছেন। আর একটু আগে না বেরিয়ে গেলেন আপনারা।

সিমথির কথায় আদি হেসে দরজার দুপাশে হাত রেখে সিমথিকে আবদ্ধ করে। সিমথির এবার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। গোল গোল চোখে দু দুবার আদির দুইহাতের দিকে তাকিয়ে আদির দিকে তাকায়। লজ্জা অস্বস্তি দুটোই ভর করে।

সিমথি : ক কি করছেন। যে-কোন মুহুর্তে যে কেউ চলে আসবে। প্লিজ যান এখন।

আদি : তো আসুক না। আমি কি পরনারীর রুমে এসেছি। নিজের বউয়ের রুমে এসেছি।

সিমথি : এ এখনো বি বিয়ে হয়নি।

সিমথির কথায় আদি ডান ভ্রু উঁচু করে তাকায়৷ অতঃপর ডান হাতের তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে সিমথি গালে পড়ে চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দেয়।

আদি : পালিয়ে যাওয়ার ধান্দা করিস না সিয়াজান। একবার দূরত্ব গুছিয়েছি অনেক মেহনত করে তোকে নিজের করে পাচ্ছি। চমার থেকে পালিয়ে বাঁচবি না তুই। তোকে কথাটা আবারো মনে করিয়ে দিলাম আমি কিন্তু কোনো এক সময় রাজনীতি করতে চেয়েছিলাম। তাই কুটনৈতিক বুদ্ধি আমার ব্রেনের শিরায় শিরায়। সো বি কেয়ার ফুল।

আদির কথায় সিমথি ভ্রু কুঁচকে তাকায়।

সিমথি : আপনার কেনো মনে হলো আমি পালিয়ে যাবো।

আদি : তাহলে বললি কেনো এখনো বিয়ে হয়নি। কথায় রহস্য রাখবি। আমার সাথে কথা বলবি খোলা মনে। রহস্যের বেড়াজাল আমার পছন্দ নয়।

সিমথি : শাট আপ আদি।

আদি : ছিহ সিয়াজান। এখনো বিয়ে হয়নি তুই তার আগেই বাসর করে ফেলতে চাইছো। এই মাসুম ছেলের উপর এতো নির্দয় তুমি।

আদির কথায় সিমথি বিস্মিত নজরে আদির দিকে তাকায়। ও বাসরের কথা কখনো বললো।

সিমথি : আমি বাসরের কথা কখন বললাম।

আদি : বাহ রে একটু আগেই না বললে শাট আপ। মানে তুমি আমাকে পাঞ্জাবি উপরে তুলতে বলছো।

আদির এহেন কথায় সিমথির এবার মাথা ঘুরে যাওয়ার উপক্রম। ইচ্ছে তো করছে নিজের মাথা ফাটাতে। কেনো এমন একটা নির্লজ্জ ছেলেকে ভালোবাসতে গেলো। নাহলে এই সবের সম্মুখীনই হতো না। সিমথি রাগে লজ্জায় আদির বুকে জোরে ধাক্কা দেয়। আদি দুই পা পিছিয়ে যায়।

সিমথি : সরুন বলছি। বের হোন রুম থেকে। আমি আর এক সেকেন্ড ও আপনাকে দেখতে চাইনা। জিলেপীর গোডাউন একটা। বেশরম, ঠোঁট কাটা লোক আমি জন্মে দেখিনি।

কথাগুলো বলে সিমথি আদিকে ক্রস করে যেতে নিলে হাতে হেচকা টানে আদির বুকে এসে পড়ে। আদির সিমথির কোমড় আঁকড়ে কিছুটা উঁচু করে।

সিমথি : আ আদি প প্লিজ ছা ছাড়ো। কেউ দেখে ফেলবে। মেঘারা আন্দাজ করতে পারলে আমি শেষ।

আদি : এতো তাড়াতাড়ি শেষ হলে হবে সিয়াজান। কালকে রাতের জন্য নিজেকে বাঁচিয়ে রাখো। যাক গে যে কাজটা করতে এসেছি সেটা করতে দাও।

সিমথি : ম ম মানে।

সিমথির অবস্থা দেখে আদি মজার নেওয়ার জন্য দুষ্টু হাসি দেয়।

আদি : এভাবে আমাকে সেজে শাড়ী পড়ে ঘায়েল করলে। তো তার শাস্তি পাবে না। আমি তো চলেই যাচ্ছিলাম কিন্তু আমার অবচেতন মন বললো তোকে যে ঘায়েল করলো তাকে তো চরম শাস্তি দেওয়া দরকার। আমি ও আমার মনের কথা শুনে গাড়ি মাঝপথে থামিয়ে চলে আসলাম।

সিমথি : ক কি শাস্তি

আদি সিমথির কথার উত্তর না দিয়ে সিমথির ঠোঁটের দিকে দৃষ্টিপাত করে। আদির দৃষ্টি অনুসরণ করতেই সিমথির গলা শুকিয়ে আসে। শরীর সমানে কাঁপতে শুরু করে। কি আশ্চর্য সিমথি জাহান সিয়া লজ্জা পাচ্ছে নাকি ভয় পাচ্ছে। সিমথির কাঁপা-কাঁপি তে আদিও মজা থেকে ঘোরে চলে যায়। ধীরে ধীরে সিমথির ঠোঁটের দিকে ঝুঁকে আসে। বেশকিছু ক্ষণ পর সিমথি চোখ বুঁজে নেয়। পুরো শরীরে শীতল হাওয়া বয়ে যায়। শিহরণে আদির পাঞ্জাবির কলার খামচে ধরে।

আদি : এভাবে কাঁপা-কাঁপি শুরু করিস না। আমার নিজেকে কন্ট্রোলে আনতে কষ্ট হচ্ছে। এসেছিলাম তোকে হলুদ লাগাতে কিন্তু তুই তো দেখছি আমার ইজ্জত হরণ করে ছাড়বি।

কানের কাছে আদির বলা কথাগুলো পৌঁছাতে সিমথি আদিকে আবারো ধাক্কা দেয়। পেছন দিক ঘুরে দাঁড়ায়।

সিমথি : হ হলুদ লা লাগানো শশ শেষ। এবার আসুন।

সিমথির কথায় আদি ঠোঁট কামড়ে হাসে।

আদি : বেশ যাচ্ছি। তবে হুমম বিয়ের পর ফাস্ট চুমু টা আমি তোর গলার ওই তিলটায় দেবো। এটা আমাকে বড্ড জ্বালায়।

আদির কথায় সিমথি কিছু বলেনা। সিমথির অবস্থা বুঝতে পেরে আদি নিঃশব্দে হেসে যেভাবে এসেছিলো। সেভাবে বেরিয়ে যায়। আদি বেরিয়ে যেতেই সিমথি মাথা তুলে তাকায়। রুমে কেবল নিজেকে আটকে রাখা শ্বাস টা ছেড়ে দেয়। হঠাৎ হাতটা কোমড়ে রাখতে এক গাদা হলুদ হাতে লেগে যায়। সিমথি হাতের দিকে তাকিয়ে আনমনে হেসে উঠে। অতঃপর ঠাস করে বেডে শুইয়ে বালিশে মুখ চেপে ধরে হেসে উঠে। বিড়বিড়িয়ে বলে উঠে,,,

সিমথি : পা’গ’ল একটা।

__________________

বধূবেশে বসে আছে সিমথি। আশেপাশে মেঘারা একের পর এক ইয়ার্কি করছে। তুহিন, তন্ময়রা কাজপ ব্যস্ত থাকায় বসে আড্ডা দিতে না পারলেও একটু পর পর এসে নিজের বিখ্যাত কুখ্যাত জোকস দিয়ে যাচ্ছে। বেচারী সিমথি দাঁতে দাঁত চেপে এদের সব সহ্য করছে আর মনে মনে আদির গুষ্টি উদ্ধার করছে। কাল রাতে আদি যখন সিমথির রুম থেকে বেরিয়েছিলো তখন এদের সামনে পড়েছিলো আর সেই নিয়েই রাত থেকে শুরু হয়েছে এদের বাঁদরামি। সিমথি মাঝেমধ্যে ভেবে পায়না ওর মতো মেয়ে কিভাবে এই পাঁচ বাঁদর বেস্ট ফ্রেন্ড পেলো। অবশ্য সিমথির রাগ সহ্য করে এরা বলেই বোধহয় এখনো ফ্রেন্ডশিপ টিকে আছে অন্য কেউ হলে হয়তো সহ্য করতো।

মেঘা : ইয়ার সিমথি জান আমার বল না কাল রাতে কি কি করলি।

মেঘার একই কথায় সিমথি এবার বিরক্ত হয়ে হাত উঁচু করে মেঘার পিঠে একটা কি’ল লাগায়। মেঘা পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে সিমথির থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরে রাগী দৃষ্টিতে তাকায়। বাকিরা হেসে দেয়। হঠাৎ বাইরে থেকে চেচামেচির আওয়াজ আসতেই সবাই কৌতুহল নিয়ে দরজার দিকে তাকায়। তখনই তরী আর রোজ লেহেঙ্গা ধরে দৌড়ে ভেতরে আসে।

তরী : বর এসেছে বর এসেছে। মেঘ আপু রোদ আপু চলো গেইট আটকাবো তো চলো চলো।

তরীর কথায় সবাই সায় দিয়ে বেরিয়ে যেতে নিলে ও তরী থেমে যায়। তরীকে থামতে দেখে বাকিরা ও থেমে যায়। তরী দুষ্টু হেসে সিমথির সামনে এসে দাঁড়ায়।

তরী : একখান মা’ল মাইরি তোমার বর আপু। পুরাই সুপারস্টার লাগতাছে। নিচে গিয়া দেহো মাইয়া গুলা চোখ দিয়া গিল্লা খাইতাছে।

তরীর কথার আর ফেসের ভঙ্গিমায় সিমথি না চাইতে হেসে দেয়। তরী হেসে আবারো নিচে দিকে দৌড় লাগায়।

আয়াশ : বললেই হলো বিশ হাজার টাকা এটা কি বিয়ে বাড়ি নাকি ডাকাত বাড়ি।

তরী : বাহ রে এটা আমাদের শ্যালিকাগত অধিকার। আর কি এমন চেয়েছি কেবল মাত্র বিশ হাজার টাকা।

রিক : আহা কেবল মাত্র বিশ হাজার। বিশের পর কয়টা শূন্য বসলে হাজার হয় এটা জানেন।

মেঘা : কেনো জানবো না। আমাদের কি অশিক্ষিত মনে হয় নাকি।

আয়াশ : শিক্ষিত ও মনে হচ্ছে না।

রোদ : কিহহহ। এতো বড় অফমানস। বিয়ে দেবো না এমন ছেলের কাছে আমরা।

ইশান : হ্যাঁ হ্যাঁ এমন ডাকাত ফ্যামিলির মেয়ে আমরা ও নেবো না। আমাদের ছেলে কি সস্তা নাকি।

রোজ : আমাদের মেয়ে বুঝি সস্তা।

তুহিন : আহা ঝগড়া করতাছেন কেনো বিয়াইনসাব। কথা তো হইতাছে টাহা লইয়া। এরমাঝে বিয়া না করার কি আছে। বেচারা দুলাভাই য়ের মুখটা তো দেহেন। বিয়া দিবেন না হুইনা মুখ শুকিয়ে শুঁটকি মাছ হয়ে গেছে।

তিন্নি : আমি কাকিয়া যাবো।

আয়াশ : নাহ তিন্নি। ভেতরে তোমার কোনো কাকিমা টাকিমা নাই আছে সব ডা’কা’তের বংশ।

মেঘা : এই মিস্টার এখন কিন্তু বাড়াবাড়ি করছিস৷

আয়াশ : আহা সুন্দরী রাগ করে না। রাগলে তোমায় পুরাই টমেটো লাগে।

মেঘা : থার্ডক্লাশ মার্কা ফ্লাটিং।

আয়াশ : এতো বড় অফমানস জানেমান।

মেঘা : ওই চুপ। আগে টাকা দেন।

রিক : দেবো না কি করবেন আপনারা।

তরী : বিয়ে ক্যান্সেল করে দেবো। বাড়িতে যে বাসর খাট সাজিয়েছেন ওখানে গিয়ে আপনারাই বাসর করুন।

রিক : চাইলে আপনি ও জয়েন হতে পারেন। উই ডোন্ট মাইন্ড।

তরী : ছ্যা ছ্যা ছ্যা৷ ছেলের বন্ধুদের তো দেখছি জেন্ডারগত সমস্যা।

রিক : মিস আপনি কি ডাউটে আছেন নাকি।

তরী : ইয়াহ ইয়াহ।

রিক : ভেতরে চলুন প্রুভ দিচ্ছি। ( বাঁকা হেসে)

রোদেলা : আরেহ ধ্যাত ভাই থামেন আগে টাকা দেন।

ইশান : কথাটা কেমন টাকা দেন বঐ নেন হয়ে গেলো না।

ছোটদের কীর্তি দেখে ভেতরে আদির বাবা হাসতে শুরু করে। শেষমেশ মেয়েদের কাছে হার স্বীকার করে টাকা মিটিয়ে ভেতরে আসে। আয়াশরা হাঁপ ছেড়ে বাঁচে।

ইশান : মেয়ে তো নয় একেকটা জলন্ত অগ্নিপিন্ড।

সায়ন : তোমরা আগে খেয়ে নাও। পরে বিয়ের কাজ শুরু হবে।

আয়াশ : হ ভাই খাওয়া তো লাগবোই তোগোর বাড়ির মাইয়া পাটি একেকটা যেই চিজ মাগো জীবনডা ত্যানয় ত্যানা বানিয়ে ছাড়লো।

আয়াশের কথায় সায়ন মাথা নাড়িয়ে হেসে উঠে।

সায়ন : তুই আর ঠিক হলি না। যা এবার।

সবাই খেতে চলে গেলে সায়ন দুষ্টু হেসে কনে ভাইয়ের লুক চেঞ্জ করে বরের বন্ধুর লুকে আসে।

সায়ন : কি ব্রে ফিল কেমন।

আদি : পুরাই করল্লা মার্কা।

সায়ন : এমা কেনো।

আদি : কি কেনো। এখনো অবধি সিয়াকে একবারো দেখলাম না।

সায়ন : লজ্জা রাখ আমি সম্পর্কে তোর সমুন্দি হয়।

আদি : আমি লজ্জা রাখলে ইহ জনমে আর মামা ডাক শুনতে পাবি না। তুই কি চাস ভিটামিন মামার অভাব বোধ করতে।

আদির কথায় সায়ন আদির দিকে তাকায় আদিও সায়নের দিকে তাকায়। হঠাৎ দুইজনই উচ্চস্বরে হেসে উঠে। এই মুহুর্ত টা তন্ময় নিজের গলায় ঝুলানো ক্যামেরা ক্যাপচার করে নেই।

__________

পর্দার একপাশে সিমথি একপাশে আদি বসা। দুজনই মাথা নিচু করে বসে আছে। সিমথির পাশে মেয়ে পক্ষের সবাই আর আদির পাশে ছেলেপক্ষের। ওদের পাশেই দাড়িওয়ালা একজন কাজি বসে আছেন। কিছুক্ষণ পর কাজীসাহেব আদিকে কবুল বলতে বললে আদি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে কবুল বলে দেয়। তারপর সিমথি বলতে বললে সিমথি ও কয়েক সেকেন্ড পর কবুল বলে দেয়। দুজন কবুল বলতেই সবাই একত্রে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠে।

কাজীসাহেব : আলহামদুলিল্লাহ আজ থেকে আপনারা স্বামী – স্ত্রী নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন।

সিমথির চোখ থেকে একফোঁটা পানি নিজের অজান্তেই গড়িয়ে পড়ে। সায়ন নিজের পরীটার দিকে তাকায়। ছোট্ট বোনটা কত তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গেলো। আজ অন্য বাড়ির বউ। সায়ন নিজের চোখের পানি লুকাতে ভীড় ঠেলে বেরিয়ে যায়। অন্যদিকে ইফাজ ও সায়নের উল্টোদিকে চলে যায়। তন্ময় আর তুহিন খুশিতে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। মেঘাদের ঠোঁটের কোণায় প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠে। অবশেষে ওদের সবচেয়ে কাছের মানুষটা নিজের প্রিয় মানুষটাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছে এর চেয়ে বেশী খুশির আর কি হতে পারে। আদি আড়চোখে নিজের সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর দিকে তাকায়। এই মেয়েটা একান্তই আজ থেকে আদির ব্যক্তিগত সম্পদ। প্রায় সাড়ে সাত বছরের প্রণয়ের পূর্ণতা পেয়েছে আজ তিন বাক্যের কবুলের মাঝে।

চলবে,,,,,

( বিয়েতে গন্ডগোল করতে মন চাইনি। কারণ পূর্বের গল্পেও গন্ডগোল হয়েছিলো। তাই সবাই কমেন্ট করবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন। ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here