#তুমি-অপরূপা(২৯)
রূপার জ্বর যেনো পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।রূপক নিজ হাতে স্যুপ বানিয়ে আনলো রূপার জন্য। সেই স্যুপ মুখে দিতেই রূপা বমি করে ভাসিয়ে দিলো রত্নার সারা শরীর। হাসিমুখে রত্না রূপাক ধরে রাখলো।
বমি করার পর রূপার শরীর ভীষণ হালকা হয়ে গেলো। মাথার ভেতর বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।
জ্বরের প্রলাপে রূপা বারবার বলতে লাগলো, “মা আমি তোমার অপরূপা গো মা।আমাকে চিনতে পারছো না কেন তুমি মা?আমি কখনো ভুল কাজ করবো না মা।আমাকে একটু বিশ্বাস করো তুমি। ”
রূপার সম্পর্কে রত্না পান্না কেউ-ই কিছু জানে না।তাই তারা বুঝতেই পারলো না রূপার এসব কথার মানে।
রাত যখন ১১ টা বাজে সমুদ্রের ফোনে টেক্সট এলো রূপার ভীষণ জ্বর।
সমুদ্র তখন রূপার স্বপ্নে বিভোর। মনের খুশি খুশি ভাব উড়ে গেলো মুহূর্তে। রূপক উঠে টিশার্ট গায়ে চাপিয়ে বের হতে যেতেই রেখার প্রশ্নের সম্মুখীন হলো। রেখা সবেমাত্র বিছানায় পিঠ লাগিয়েছে। এই অবস্থায় শুনলেন সমুদ্র দরজা খুলে বের হচ্ছে।
উঠে এসে রেখা ছেলের হাত চেপে ধরলেন। সমুদ্র মায়ের এই ব্যবহারে কিছুটা অবাক হলো। রেখা হলেন উদ্বিগ্ন।
সমুদ্র তো কখনো এতো রাতে বের হয় না তাকে না জানিয়ে। অথচ এখন কি হলো তার?
কিছুটা কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “এতো রাতে কোথায় বের হচ্ছো তুমি আমাকে না জানিয়ে? ”
সমুদ্র অবাক হলো। অবাক হয়েই বললো, “আমার একটু কাজ আছে মা।আমাকে যেতে হবে।হয়তো ফিরবো না রাতে।তুমি শুয়ে পড়ো।”
রেখার গলা চড়লো।বিরক্তি প্রকাশ করে বললেন,”তোমার সমস্যা কি সমুদ্র?দিন দিন তুমি দেখছি বাউন্ডুলে হয়ে যাচ্ছ!এতো রাতে কোনো ভদ্র ঘরের ছেলে বাসার বাহির হয় না সমুদ্র।আর বাহিরে রাত কাটানোর কথা তুমি ভাবলে কি করে আমার অনুমতি না নিয়ে? ”
সমুদ্র হতভম্বের সুরে বললো, “মা,আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি।আমার একটা প্রাইভেসি আছে।অভিভাবক হিসেবে তোমার দেখা উচিত আমি ভুল কিছু করছি কি-না। আমি তোমাকে হলফ করে বলতে পারি আমি ভুল কিছু করছি না।আমাকে যেতেই হবে মা।”
রেখা ও রেগে বললো, “কি কাজে বের হবে আমাকে বলো তুমি আগে,তারপর আমি ভেবে দেখবো তোমাকে অনুমতি দেওয়া যায় কি-না। ”
“যথাযথ সময় এলে আমি সবার আগে তোমাকেই জানাবো মা।এখন আপাতত বলতে পারবো না। আমাকে যেতে হবে মা।”
“না তুমি কিছুতেই যাবে না।ভেতরে আসো।”
সমুদ্র আরেকটু পিছিয়ে গিয়ে বললো, “আমি সরি মা।তবে আজ আমি তোমার কথা রাখতে পারবো না।আমার যাওয়াটা ভীষণ জরুরি। আমার দম বন্ধ হয়ে যাবে যদি না যেতে পারি এই মুহূর্তে। ”
রেখা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। সমুদ্র কিছুদূর গিয়ে ফিরে তাকিয়ে বললো, “ঘুমিয়ে যাও মা।আমার আজ রাতে আর ফেরা হবে না। ”
সমুদ্র চলে যেতেই রেখা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। এই তার ছেলে!
তার সমুদ্র!
যে ছেলে মায়ের অনুমতি ছাড়া কিছু করে না,কিসের জন্য সে এরকম করে আজ মা’কে উপেক্ষা করে চলে গেলো!
সত্যি কি তবে তিনি যা ভাবছেন তা?
ছেলে ও কি তার চাচার পথের পথিক হবে?
নিজের হাতের মুঠোয় যার লাগাম ছিলো এবার কি লাগাম ছিড়ে সে বের হয়ে যাবে!
রেখা কিছুতেই তা হতে দিবে না।সমুদ্র তাই করবে যা তার মা চাইবে।এর বাহিরে সমুদ্রের কোনো চাওয়া পাওয়া থাকতে পারে না কিছুতেই।রেখা কিছুতেই এটা সহ্য করতে পারবে না।
সমুদ্র রূপার বারান্দার সামনে দাঁড়িয়ে বারবার টহল দিচ্ছে।আস্তে আস্তে রাস্তা নির্জন হয়ে গেলো। সমুদ্র সেই নাম্বারে টেক্সট দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কি অবস্থা রূপার এখন?কোনো কিছু দরকার হলে আমাকে সাথে সাথে জানাবেন প্লিজ।আমি আপনাদের বাসার নিচে আছি।ঔষধ, মেডিসিন যাই লাগুক আমাকে জানাবেন।রূপাকে একটু লেবু সিদ্ধ করে খাওয়ান,মালটা খাওয়ানো দরকার ওকে। আমি এনে দিবো?”
ওপাশ থেকে টেক্সট এলো, “না দরকার নেই।আপনি চলে যান বাসায়।ওর বন্ধুরা ওর দেখাশোনা করছে।”
সমুদ্র টেক্সট দিলো, “আমার প্রাণ এখানে রেখে আমি বাসায় গিয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে পারবো না।আমি এখানেই থাকবো।”
ল্যাম্পপোস্টের নিচে একা দাঁড়িয়ে রইলো সমুদ্র।বুকের ভেতর ভীষণ চাপ অনুভব হচ্ছে। রূপা সেরে যাবে তো!
একটা বার যদি রূপাকে দেখতে পেতো।
ওর উত্তপ্ত কপালে একটা বার যদি নিজের হাত রাখা যেতো!
আকাশের দিকে তাকিয়ে সমুদ্র বললো, “আল্লাহ,আজ রূপা অসুস্থ,অথচ আমাদের মাঝে কতো দূরত্ব। আমার রূপাকে আমার করে দাও যাতে এরপর আর ওর অসুস্থতায় অন্য কেউ নয় বরং আমি নিজে ওর সেবা করতে পারি।আজ আমরা যত দূরে তখন যেনো ঠিক ততটাই কাছাকাছি যেতে পারি।”
রূপক বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে চারদিকে তাকাতে তাকাতে দেখলো সমুদ্রকে।
বারবার মশা মারছে আর রূপার বারান্দার দিকে তাকাচ্ছে।
রূপকের ভীষণ হাসি পেলো। রেখা আন্টি আজ কিভাবে ছেলেকে ছেড়ে দিলো এভাবে?আজ তো রূপক ওর সাথে কথা বলে না তবে এবারও কার ঘাড়ে বন্দুক রেখে বলবেন যে “অমুকের জন্য আমার ছেলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে! ”
রূপার জ্বর ছাড়লো সকাল দশটার দিকে। রূপক বারান্দায় গিয়ে দেখলো তখনও সমুদ্র দাঁড়িয়ে আছে একই জায়গায়, একই ভাবে।
আজকে আর রূপার কলেজে যাওয়া হবে না।রত্না পান্না কেউ-ই গেলো না। পান্না নিজে গেলো আজ নাশতা বানাতে। রূপার ঝাল ঝাল করে নুডলস করলো। রূপা তার কিছুই মুখে দিতে পারলো না।
রূপা খাচ্ছে না দেখে রূপক বের হলো বাহিরে।রূপার জন্য কলা আর রুটি কিনতে গেলো। কিছুটা দূরে ফলের দোকান আছে সেখান থেকে ফল কিনতে হবে।
অন্যমনস্ক হয়ে বাইক চালাতে গিয়ে এক্সিডেন্ট ঘটিয়ে ফেললো। বাম পায়ের হাটুর চামড়া অনেকখানি উঠে গেছে। টপটপ করে রক্ত পড়ছে।ডান হাত মুচকে গেছে।নাড়াতে পারছে না।
রূপক বহু কষ্টে কলা,পাউরুটি, মালটা,আঙ্গুর কিনে বাসার সামনে গিয়ে দারোয়ানকে দিলো।তারপর নিজে ডাক্তার দেখাতে গেলো।
কলা আর এক পিস রুটি খেয়ে রূপা ঔষধ খেয়ে নিলো।
রূপক বাসায় ফিরলো প্রায় দুই ঘন্টা পরে।রত্না আৎকে উঠলো এই অবস্থা দেখে। হাতে প্ল্যাসটার, পায়ে ব্যান্ডেজ,কপালে ব্যান্ডেজ।
রূপক রত্নাকে চুপ থাকতে বলে রুমে গেলো।
একটু শরীর ভালো লাগতেই রূপা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। বাহিরে তাকিয়ে দেখে সমুদ্র বাহিরে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে তাদের বারান্দার দিকে তাকিয়ে।
রূপা রুমে চলে এলো। মনটা ভীষণ অস্থির হয়ে আছে।এরকম হচ্ছে কেনো তার সাথে!
সমুদ্র তো কোনো পাশ ছাড়ছে না তার।
বিছানায় বসে রূপা উপরের দিকে তাকিয়ে রইলো। মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে।সেই সাথে ঘুরছে রূপার মন। কেনো এরকম লাগছে!
একবার রাগ হচ্ছে ভীষণ সবার উপর। ইচ্ছে করছে নিজেও ভুল পথে পা বাড়ায়।যদি দোষ না করেও দোষী হতে হয় তবে এবার দোষ করবে সে ও।পরক্ষণেই মন বলছে, না এই পথে যাওয়া যাবে না।
রত্না রূপার পাশে বসে বললো, “কি ভাবছিস এতো?
কি হয়েছে তোর আমাকে বলবি একটু?গেলি আবার চলে এলি,আবার এরকম জ্বর বাঁধালি কিভাবে?কিছু হয়েছে বাড়িতে? ”
রূপা থম মেরে রইলো। রত্না বললো, “কাল রাতে অনেক প্রলাপ বকেছিস।আমার কাছে একটু বল কিসের এতো কষ্ট তোর?”
রূপার মনে হলো এই মেয়েটা তার ভীষণ আপন। একে বলে সে কিছুটা হালকা হতে পারে।
রত্নার কাছে সবটা খুলে বললো রূপা।অন্তরার কথা, অনামিকার কথা, মায়ের অসুস্থতার কথা।
রত্না সব শুনে বললো, “জানিস, আমার বড় ফুফুও এরকম করেছিলো। তারপর ফুফু আর ফিরে আসে নি।এই দেখ।”
রত্না উঠে গিয়ে কয়েকটা পেপার নিয়ে এলো এই মাসের।রত্না রূপার পাশে বসে বললো, “এখনো আমার দাদা ফুফুকে খোঁজাখুঁজি করে যাচ্ছে। প্রতি মাসে ৪ টা দৈনিক পত্রিকায় নিখোঁজ সংবাদ ছাপানো হয়।”
রূপা এক নজর তাকিয়ে দেখলো। পর মুহূর্তে চমকে উঠলো রূপা। রত্নার হাত থেকে টান দিয়ে পত্রিকা নিয়ে এক নিশ্বাসে পড়তে লাগলো।
মায়ের একটা অল্প বয়সী কালের ছবি।রূপা জানে এটা তার মা।
দুই চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো রূপার।কাঁদতে কাঁদতে বললো, “আমি চিনি,ওনাকে আমি চিনি রত্না।”
চমকে উঠলো রত্না।তারপর চিৎকার দিয়ে দাদাকে ডেকে বললো, “দাদা,জলদি আয়।ফুফুর খোঁজ পাওয়া গেছে দাদা।”
রূপক বিছানায় হেলান দিয়ে বসে ছিলো । রত্নার কথা কানে যেতেই রূপকের সারা শরীর কেঁপে উঠলো। ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে গিয়ে বললো, “কই,আমার ফুফু কই।কই পেলি খবর?”
রত্না বললো, “রূপা না-কি চেনে ফুফুকে? ”
রূপা গুমরে কাঁদতে কাঁদতে বললো, “আমি চিনি ওনাকে রূপকদা,আমি ওনাকে ভীষণ ভালো করে চিনি।উনি আমার অনেক আপন।”
রূপক কাছে গিয়ে বললো, “উনি কে হয় তোমার রূপা?আমার ফুফু এখন কোথায় আছে?আমাকে একবার বলো।আমি এখনই যাবো।”
পরক্ষণেই রূপার মনে হলো, বাবার অনুমতি না নিয়ে মায়ের পরিচয় এদের দিলে বাবা যদি রাগ করে?
একবার বাবাকে জিজ্ঞেস করে নেওয়া উচিত নয় কি?
চলবে…….
রাজিয়া রহমান
টাইপিং মিস্টেক থাকতে পারে। একটু কনসিডার কইরেন।১৫ তারিখ থেকে এক্সাম।অনার্স ফোর্থ ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা আমার। একাউন্টিং সাবজেক্ট নিয়ে যারা পড়েন তারা জানেন এটা কেমন সাবজেক্ট। যদিও সব সাবজেক্টই কঠিন।তবুও ম্যাথ একটু বেশি-ই।
কি করবো বুঝতেছি না।পুরো এলোমেলো হয়ে আছি।