বুকে_যে_শ্রাবণ_তার #পর্ব_১৫

0
161

#বুকে_যে_শ্রাবণ_তার
#পর্ব_১৫
#নিশাত_জাহান_নিশি

“কেমন লাগল আমার চায়ের রেসিপি? থুরি! এটা তো শুধু চায়ের রেসিপি নয়। তেলাপোকার চায়ের রেসিপি!”

ভড়কে উঠল মিশাল! কঠিন ও তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলল অট্ট হাসতে থাকা সামান্তার দিকে। রীতিমতো ভেতর থেকে সব গুলিয়ে আসার উপক্রম হলো তার। বমি করার ন্যায় ভাব নিয়ে সে ঘিন ঘিন গলায় বলল,

“ওয়াক থু! চায়ের সাথে তুই তেলাপোকা মিক্স করেছিস? আমি জানতাম তুই এমন কিছু একটা করবি।”

মিশালের এহেন ধরাশায়ী অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে প্রায় ফিট হয়ে যাচ্ছিল সামান্তা। বহুদিন হলো মিশালকে এসব উল্টো পাল্টা রেসিপির নাম শুনিয়ে জ্বালায়না সে! বুদ্ধি গুনে মিশালের থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে দাড়ালো সে। বিশ্বাস নেই কখন মিশাল তাকে আক্রমন করে! আগুনে আজ ঘি ঢেলে দিয়েছে যে সে। নিজের আত্ন-সুরক্ষার জন্য তো এতটুকু করাই লাগে! ব্যঙ্গ করে সামান্তা প্রত্যত্তুরে মিশালকে বলল,

“আই হোপ সো তুমি এই চায়ের স্বাদ তোমার জীবদ্দশায় ভুলতে পারবেনা মিশাল ভাই! অনেক টেস্ট ছিল তাইনা? তেলাপোকার চা?”

রাগে গাঁ রি রি করে উঠল মিশালের। সামান্তাকে কাঁচা চিবিয়ে খাওয়ার ইচ্ছে হলো তার। তবে সব ইচ্ছে তো আর পূরণ হবার নয়। প্রকৃতি প্রদত্ত সব কিছুরই সীমাবদ্ধতা রয়েছে। হাতের কাছে একটি শলামোঠা পেতেই মিশাল তা নিয়ে আক্রমনাত্নক হয়ে তেড়ে গেল সামান্তার কাছে! দাঁতে দাঁত চেপে যেতে যেতে বলল,

“আজ যদি তোকে দু’ঘা না মেরেছি তো আমার নাম মিশাল নয়! এসব খা’টা’শ রেসিপি তুই কোথায় পাস? ইডিয়ট কোথাকার।”

ভয়ে সামান্তা জান নিয়ে দৌঁড়ানোর পূর্বেই মিশাল দৌড়ে গিয়ে রুমের দরোজা আটকে দিলো! আজ বুঝি তার রেহাই নেই। জেনেশুনে বাঘের লেজে পা দিয়েছে সে। ভীতিকর দৃষ্টিতে সামান্তা রুদ্রাক্ষ মিশালের দিকে তাকালো। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এলো তার। দৌড়ে পালাবারও জায়গা নেই। সামান্তার ভয়কে তোয়াক্কা না করে মিশাল শলা মোঠার গোঁড়া দিয়ে সামান্তার মাথায় এক গুঁতো দিলো! দেয়ালের সাথে সঙ্গে সঙ্গেই ফিট হয়ে গেল সামান্তা। মিশালের আক্রোশভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে সে ছলনার আশ্রয় নিলো! নাক ফুলিয়ে কান্না করার মতো ভাব নিয়ে বলল,

“আমিতো জাস্ট মজা করছিলাম মিশাল ভাই! চায়ের সাথে কিছু মিশাইনি আমি।”
“মার থেকে বাঁচার জন্য এখন ছলনার আশ্রয় নিচ্ছিস আ’ম ডেম শিওর। কী ভেবেছিস আমি তোকে চিনিনা?”
“সত্যিই মিশাইনি। তোমার কসম!”

টলমল দৃষ্টি সামান্তার। হাত বাড়িয়ে সে মিশালকে ছুঁয়ে কসম খেলো! তাৎক্ষণিক মিশাল রেগে ওঠে সামান্তার হাতটি ঝেড়ে ফেলে দিলো। রুক্ষ গলায় বলল,

“একদম না। এসব কসম টসম কেটে তুই একদম আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করবিনা!”
“কিন্তু আমিতো সত্যি বলছি। মিথ্যে বললে তোমার ক্ষতি হতো।”
“তোর মধ্যে ছলনার পরিমাণ এতোই বেশী যে, কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যা আমি আজও অবধি বুঝে ওঠতে পারিনা! চায়ের সাথে ওসব না মিশালে তখন বললি কেন যে তুই চায়ের সাথে ওসব মিশিয়েছিস?”
“সে তো তোমাকে রাগানোর জন্য বলেছিলাম! গড প্রমিস আমি কিছু মিশাইনি! প্লিজ ট্রাস্ট মি।”

না চাইতেও সামান্তাকে পুনরায় বিশ্বাস করতে বাধ্য হলো মিশাল! এমন মায়াবি, ভোলাভালা, নাজুক চাহনি দেখলে কে-ই বা কাকে অবিশ্বাস না করে থাকতে পারে? অন্তত এই পরিস্থিতিতে দাড়িয়ে তো মিশালের পক্ষে সামান্তাকে অবিশ্বাস করা মোটেও সম্ভব নয়! কাউকে খু’ন করে এসেও যদি সামান্তা তার কাছে এভাবে ভোলাভালা মুখভঙ্গি নিয়ে দাড়ায় মিশাল অনায়াসে তাকে বিশ্বাস করে নিবে! গলা ঝাড়ল মিশাল। সামান্তাকে যাচাই করার জন্য কঠিন গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“ওকে। ছেড়ে দেওয়ার পর যদি তোকে বলতে শুনি যে তুই সত্যিই চায়ের সাথে ওসব মিশিয়েছিস তখন তোকে কী করব বল?”
“তখন না হয় আমাকে তুলোধুনো করো!”
“শিওর তো?”
“হান্ড্রেড পার্সেন্ট।”
“ওকে বিশ্বাস করলাম যা।”

ছাড়া পেয়ে সামান্তা দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। যেতে যেতে বাঁকা হেসে মিশালকে ভেঙচি কেটে বলল,

“পারলে ধরে দেখাও আমায়! সত্যিই আমি চায়ের সাথে তেলাপোকা মিক্স করেছি! তুমি সত্যিই আজও আমার ছলনা বুঝতে পারলেনা!”

সামান্তার উদ্দেশ্য সফল হলোনা! রেগে যাওয়ার বদলে মিশাল আচমকা ক্রুর হেসে ওঠল। থেমে গেল সামান্তা। নির্বোধ দৃষ্টিতে মিশালের দিকে তাকালো। শার্টের হাতা গুটিয়ে মিশাল ভ্রু নাচিয়ে বলল,

“তুই নিজেই প্রমাণ করে দিলি যে চায়ের সাথে তুই সত্যিই কিছু মিশাসনি!”

উজবুক গলায় সামান্তা প্রশ্ন ছুড়ল,

“কীভাবে?”
“সিম্পল। তুই যা করিসনা তা-ই বেশী বেশী করে বলতে পছন্দ করিস! আর যা তুই করিস তা চেপে রাখতে পছন্দ করিস। এসব বলে আমাকে রাগানো যাবেনা ওকে? তোর এই আইডিয়া ও ফ্লপ। অন্যকিছু ভাব।”

শার্টের কলার ঝাড়তে ঝাড়তে সামান্তার সামনে দিয়ে হেঁটে চলে গেল মিশাল। বেশ ভাবসাব তার। তীব্র দৃষ্টিতে মিশালের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইল সামান্তা। পরক্ষণে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আক্ষেপভরা গলায় বলল,

“আমার আমিকে এতোটা বুঝো তুমি মিশাল ভাই? শুধু আমার মনটাকেই বুঝলেনা! আমি কী চাই তা কখনও জানতে চাইলেনা।আমাকে কখনও শুনতে চাইলেনা। তুমি যদি সত্যিই আমাকে বুঝতে, তবে কী আমার অন্য কাউকে বিয়ে করার কথা ভাবতে হতো? আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছিল জেনেও তো তুমি কোনো প্রতিবাদ করলেনা! মনে মনে তো আমি তোমার রিয়েকশনই দেখতে চেয়েছিলাম মিশাল ভাইয়া। না, তখনও তুমি নীরব ছিলে। দাড়িয়ে দাড়িয়ে আমার বিয়ে দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলে। ভেতরটা একবারও কেঁপে ওঠলনা তোমার! যখন বিয়ে ভেঙে গেল তখনও আমাকে বিয়ে করতে চাইলেনা। তাহলে তুমি আমাকে বুঝলেটা কী মিশাল ভাই? সত্যিকার অর্থে তুমি কী চাও? তুমি আমাকে বুঝতে পারছনা, না-কি আমি তোমাকে বুঝতে পারছিনা?”

_______________________________

বিকেলের দিকে শাহনাজ বেগম পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠলেন। একা একাই তিনি হাঁটাচলা করতে পারছিলেন। খাওয়াদাওয়া ও ঠিকমতো করতে পারছিলেন। ঘরের টুকটাক কাজও করছিলেন। ইতোমধ্যেই জেনিয়া হঠাৎ জেদ ধরল বাড়ির সবাইকে নিয়ে সে শপিংয়ে যাবে। বাইরে থেকে একটু ঘুরেটুরে আসবে। যেহেতু শাহনাজ বেগম এখন সুস্থ আছেন। মিশালকে অনেক অনুরোধ করেও জেনিয়া তাদের সাথে যাওয়ার জন্য রাজি করাতে পারেনি! এদিকে সামান্তা তো তক্কে তক্কে ছিল জেনিয়ার অনুরোধকে মিশাল কতটা গুরুত্ব দেয় তা যাচাই করার জন্য! এতক্ষণে সাইফা ও সামিয়াও রেডি হয়ে চলে এলো সবাই একসাথে ঘুরতে যাবে বলে। সামান্তা রেডি হওয়ার জন্য তার রুমের দিকে এগিয়ে যেতেই মিশাল হঠাৎ তার রুম থেকে জোরে হাঁকডাক ছেড়ে সামান্তাকে ডাকল। কৌতূহল নিয়ে সামান্তা মিশালের রুমে প্রবেশ করল। শোয়া থেকে ওঠল মিশাল। গাঁয়ে শার্ট জড়িয়ে সামান্তার মুখোমুখি দাড়ালো। ধীর গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“কখন বের হচ্ছিস তোরা?”
“এখনি। কেন?”
“একটা দরকার ছিল।”
“কি দরকার?”
“লাস্ট টাইম সাইফার বার্থডেতে তুই যে রেড ড্রেসটা পরেছিলে সেটার প্রাইস কতো হতে পারে?”
“কেন? কাকে গিফট করবে তুমি? গফ টফ জুটিয়েছ না-কি?”
“শাট আপ। যা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দে?”
“ছয় হাজার প্লাস। এবার তো বলো কেন?”

প্যান্টের পকেট থেকে মিশাল কিছু টাকা সামান্তার হাতে ধরিয়ে দিলো। পেছন ফিরে শার্টের হাতা গুটিয়ে মলিন স্বরে সামান্তাকে বলল,

“এখানে সাত হাজার আছে। তোর ঐ ড্রেসটার মতো সেইম টু সেইম ড্রেস তুই রুমকিকে কিনে দিবি। আমিতো ঐসব ড্রেস সম্পর্কে তেমন বুঝিনা তাই তোকে দায়িত্বটা দিলাম।”

মুগ্ধ হলো সামান্তা। এমন একজন ভাইয়ের অভাব অনুরোধ করল সে। বিনা শব্দে রুম থেকে বের হয়ে গেল সে। মিশালও তার কিছু কাজের উদ্দেশ্য বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।

বন্ধুদের সাথে আড্ডায় ব্যস্ত ছিল লাবিব। বাড়ির কাছাকাছি একটি টঙ দোকানে প্রতিদিন বিকেল বেলায় তাদের চায়ের আড্ডা বসে। চার পাঁচজন বন্ধুর মাঝে থেকেও মিশালকে আচমকা দেখে ভয়ে উল্টোদিকে দৌড়াতে লাগল লাবিব! তাজ্জব হয়ে গেল মিশাল! চোখ থেকে সানগ্লাসটা খুলল সে। লাবিবের বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে আচম্বিত গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“কী হলো? লাবিব এভাবে দৌড়োলো কেন?”

লাবিবের সব বন্ধুরা জায়গা থেকে ওঠে গেল! মাথা নুইয়ে তারা সম্মান প্রদর্শণ করল মিশালকে। তাদের মধ্য থেকে একজন নিচু গলায় জবাবে মিশালকে বলল,

“আপনি সাইফার কাজিন হোন তো। তাই হয়ত ভয়ে পালিয়েছে!”

বিষয়টা বুঝতে পেরে লাবিবের পিছু পিছু দৌড়াতে লাগল মিশাল। পেছন থেকে লাবিবকে ডেকে শান্ত স্বরে বলল,

“হেই স্টপ লাবিব। আমি তোমার সাথে জরুরি কথা বলতে এসেছি! তোমাকে মারধর করতে নয়। প্লিজ ট্রাস্ট মি।”

থেমে গেল লাবিব। রুদ্ধশ্বাস ফেলে পিছু ফিরে তাকালো। রীতিমতো হাঁপাতে লাগল সে। মিশালের কথা তার বিশ্বাসযোগ্য মনে হলো! মিশাল ততক্ষণে লাবিবের কাছাকাছি চলে এলো। লাবিবের মুখোমুখি দাড়াতেই পুনরায় ভয় চেপে বসল লাবিবের! ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে সে মিশালের হাত চেপে ধরল! করুন গলায় বলল,

“প্লিজ আমাকে মারবেননা ভাইয়া৷ আমি সত্যিই সাইফাকে বিয়ে করতে চাই। কিন্তু আমার ঐ সময় সুযোগটা এখনও তৈরি হয়ে ওঠেনি যে তাকে বিয়ে করব! সাইফা ভাবছে আমি তার সাথে ফ্লার্ট করছি। তাকে আমি বিয়ে করবনা। আসলে ব্যাপারটা কিন্তু পুরোপুরি এমন নয় ভাইয়া। প্লিজ ট্রাস্ট মি।”

লাবিবকে অভয় দিলো মিশাল। তার কাঁধে হাতে রাখল। হাঁটতে হাঁটতে লাবিবকে নিয়ে মিশাল একটি ছোটো খাটো রেস্টুরেন্টে বসল। লাবিবের দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো মিশাল। লাবিবকে শান্ত করার প্রয়োজন তার। ঢকঢক করে গ্লাসভর্তি পানি গিলে খেলো লাবিব। গ্লাসটি টেবিলের উপর রাখল। স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করল মিশাল। যেহেতু এই মুহূর্তে লাবিব তাকে ভয় পাচ্ছে তাই লাবিবের সাথে এখন নরম গলায় কথা বলাটাই উচিত তার। ধীরস্থির গলায় মিশাল লাবিবের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,

“তো বলো? কী খবর তোমার? দিনকাল কেমন যাচ্ছে? বাড়ির সবাই কেমন আছে?”
“জি ভাইয়া সব ঠিকঠাক আছে। সবাই ভালো আছে।”
“এখনও ভয় পাচ্ছ আমায়?”

খানিক ভীতসন্ত্রস্ততা নিয়ে লাবিব বলল,

“থোরা থোরা!”
“সাইফা এসব নাটক করা শিখিয়েছে তাইনা? বাই দ্য ওয়ে! পড়াশোনা তো শেষ তোমার। এখন কী করছ তুমি?”
“চাকরীর খোঁজে আছি ভাইয়া। কয়েকটা জায়গায় ইন্টারভিউও দিয়ে এসেছি। তবে ভাইভাতে গিয়ে আটকে যাচ্ছি। তবুও আমি চেষ্টা করছি।”
“প্রতিষ্ঠিত হতে তোমার কতটুকু সময় লাগবে?”
“অনেক সময় লাগবে ভাইয়া! আপনি তো জানেন ভাইয়া আমি একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। আমার বাবা যদিও এক সময় উকিল ছিলেন তবে এখন শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি কাজকর্ম ছেড়ে দিয়েছেন। যদিও উনার এখন বয়স হয়েছে। আমার ছোটো দুটো বোন এখনও বিয়ের বাকী। বড়ো আপুর হাসবেন্ড বাহিরে থাকেন সেই সুবাদে মাসে মাসে আমাদের পরিবারে কিছু টাকা দেন। আমিও কিছু টিউশনি করি আর এভাবেই কোনো রকমে আমাদের সংসার চলছে। ভাগ্যের ফেরে যদিও কোনো চাকরী পেয়ে যাই, প্রতিষ্ঠিত হতে আমার কমপক্ষে বছর দুয়েক সময় তো লাগবেই! কারণ, আমার পরিবারের প্রতিও আমার অনেক দায়িত্ব রয়েছে।”

লাবিবের মাঝে যেনো মিশাল তার ছায়া দেখতে পেল! জীবন সংগ্রাম কতটা ভয়ঙ্কর তা মিশালের চেয়ে ভালো কে-ই বা জানে? এতো অনিশ্চয়তার মাঝে থেকে কী আদো সাইফাকে পাওয়া হবে লাবিবের? দিনশেষে হয়তো ছেলেটা কষ্ট পাবে! এজন্যই মিশালের মনে হয় মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত ছেলেদের ভালোবাসা পাওয়া বা চাওয়ার কোনো অধিকার নেই! যেখানে পরিবারকে নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য তাদের প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হয় সেখানে অন্য কাউকে ভালোবাসা তো বিলাসিতা! তাদের মন বলতে কিছু হয়না। তারা মনপ্রাণ থেকে যা চায়, সবসময় তার উল্টো হয়। মিশাল তার জীবন থেকে এসব উপলব্ধি করেছে। লাবিবের অসহায় ও নির্মম মুখের পানে তাকিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে গেল মিশাল। তবে নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে সে গলা ঝেরে কঠোর গলায় বলল,

“তার মানে তুমি আমার কাছে আরও দু-বছর সময় চাইছ? তুমি জানো এই দুই বছরে সাইফার বিয়ে শাদি হয়ো বাচ্চা কাচ্চার মা ও হয়ে যাবে?”

মাথা নুইয়ে নিলো লাবিব। ভেজা গলায় বলল,

“জানি ভাইয়া!”
“কষ্ট হবেনা তোমার?”
“আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে ভাইয়া। প্রতিদিন এমন অনেক কষ্ট ফেইস করতে হয় আমাদের। তাই ঐ কষ্টটা খুব বেশী ভারী মনে হবেনা! তবে আমি সময় পেলে কিছু একটা করতে পারি।”
“আমরা যদি তোমাকে সেই সুযোগ না দিই তো?”

মাথা উঁচিয়ে লাবিব টলমল চোখে মিশালের দিকে তাকালো। ভরাট গলায় বলল,

“আমি আপনার পায়ে ধরতে পারি ভাইয়া? লাথ মেরে সরিয়ে দিলেও আমি পুনরায় আপনার পায়ে ধরতে রাজি!”

বুকটা ভারী হয়ে এলো মিশালের। জায়গা থেকে ওঠে দাড়ালো সে। ঘুরে গিয়ে আচমকা লাবিবকে বলল জায়গা থেকে ওঠে দাড়াতে। তৎক্ষণাৎ দাড়িয়ে গেল লাবিব। কোনোদিকে কালক্ষেপণ না করে মিশাল জড়িয়ে ধরল লাবিবকে! গলায় বিষণ্নতা এনে মিহি স্বরে বলল,

“দিলাম দুইবছর সময় তোমাকে! তবে একটা কন্ডিশন! এই দুই বছরে তুমি সাইফার সাথে কোনো রকম যোগাযোগ করতে পারবেনা! দুই বছর পর ঠিক এইদিনে আমি নিজে এসে তোমার হাতে সাইফাকে তুলে দিয়ে যাব!”

লাবিবকে বাকরুদ্ধ করে দিয়ে মিশাল রেস্টুরেন্ট থেকে প্রস্থান নিলো। সম্বিত ফিরে পেয়ে লাবিব জোরে চিৎকার করে পেছন থেকে মিশালকে ডাকল। সন্তোষজনক গলায় বলল,

“থ্যাংকস ভাইয়া! আমাকে আর একটা সুযোগ দেওয়ার জন্য, আমাকে জড়িয়ে ধরার জন্য! একটা কথা বলা হয়নি আপনাকে ভাইয়া। আপনি হলেন আমার ইন্সপিরেশন ভাইয়া! আমি সাইফার মুখে আপনার নামে অনেক প্রশংসা শুনেছি! সেই থেকে আমি আপনার ফ্যান।”

#চলবে…?

[গঠনমূলক মন্তব্য করবেন প্লিজ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here