বুকে_যে_শ্রাবণ_তার #পর্ব_১৬

0
159

#বুকে_যে_শ্রাবণ_তার
#পর্ব_১৬
#নিশাত_জাহান_নিশি

“থ্যাংকস ভাইয়া! আমাকে আর একটা সুযোগ দেওয়ার জন্য, আমাকে জড়িয়ে ধরার জন্য! একটা কথা বলা হয়নি আপনাকে ভাইয়া। আপনি হলেন আমার ইন্সপিরেশন! আমি সাইফার মুখে আপনার নামে অনেক প্রশংসা শুনেছি! সেই থেকে আমি আপনার ফ্যান।”

মিশালের প্রতি লাবিবের ভক্তি, শ্রদ্ধা ও প্রতিটি প্রশংসাময় অভিব্যক্তি মিশালের কর্ণকুহর অবধি পৌছালেও মিশাল থামলনা। এমনকি পিছু ফিরেও একবার লাবিবের দিকে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করলনা। এই মুহূর্তে কেন যেনো তার মধ্যে কোনো অনুভূতিই কাজ করছিলনা। অনুভূতিরা হয়ে গেল নিথর। তবে বুকে এক ধরণের চিনচিনে ব্যথার সৃষ্টি হলো,তার। বলা বাহুল্য, লাবিবের কাছ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস শিক্ষা পেল মিশাল। জীবনে যতই খারাপ পরিস্থিতি আসুক না কেন ভালোবাসার মানুষটিকে কোনোভাবেই হাতছাড়া করা যাবেনা! মৃত্যুর আগ অবধি তাকে পাওয়ার জন্য লড়াই করে যেতে হবে।

তবে এক্ষেত্রে মিশালের জীবনে আরও একটি প্রতিবন্ধকতা হলো, মিশালের জীবনটা লাবিবের জীবনের চেয়েও অতি করুন ও ভয়াবহ! ঘরে তার সৎ মা রয়েছে, বাবা নামক ছায়াটিও তার মাথার উপরে নেই, যে কাজের সঙ্গে সে সম্পৃক্ত সেখানেও তার জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই, ক্যারিয়ার বলতেও কিছু নেই। এতো অনিশ্চয়তার মাঝে থেকে কী আদো ভালোবাসার মানুষটিকে আপন করার কোনো সম্ভাবনা আছে তার? একতরফা ভালোবাসায় ক্ষণিকের সুখ খুঁজতে গিয়ে তার ভালোবাসার মানুষটির জীবন থেকে সুখ জিনিসটি কেড়ে নেওয়া কী তার জন্য পাপ হবেনা?

বাসের জন্য দীর্ঘ দশমিনিট দাড়িয়ে থাকার পর অবশেষে বাসে উঠল মিশাল। বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হলো সে। তার সাথে কয়েকজন যাত্রীও বাসে উঠল। তবে কারো দিকে তাকানোর খেয়াল ছিলনা তার। বাড়ির মুদি খরচ ও কাঁচা বাজার করতে তাকে বাজারে যেতে হচ্ছে। বাড়ির বাজার খরচ সে একাই করে। বাসে একটি সিটও ফাঁকা নেই। তাই বাসের দরোজায় হেলান দিয়ে দাড়ালো মিশাল। বুকের উপর দু-হাত গুটিয়ে চোখজোড়া বুজল। ভেতর থেকে দীর্ঘ একটি শ্বাস বের হয়ে এলো তার। উড়নচণ্ডী বাতাস এসে উড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছিল তার অগোছালো চুলগুলোকে। নিমিষেই যেনো প্রকৃতি তার মনকে একটুখানি স্বস্তি দিলো।

তখনি মিশালের কানে এলো একটি অল্পবয়সী ছেলের কান্নার আওয়াজ। রীতিমতো আহাজারি করছে সে! তড়াক করে চোখ খুলল মিশাল। পাশে তাকিয়ে দেখল বারো থেকে তেরো বছরের একটি ছেলে তার পাশে দাড়িয়ে মাথা নুইয়ে অঝরে কাঁদছে। তার পিঠে রয়েছে খইয়ের একটি বিশাল বস্তা। দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে খই বিক্রি করে। গাঁয়ে যে গেঞ্জি ও হাফ প্যান্টটি রয়েছে সেটিও ফুটো ফাটা ও অপরিষ্কার। লেবেজ দেখেই বুঝা যাচ্ছে কোনো গরীব ঘরের ছেলে হবে। তাই পেটের দায়ে এই অল্প বয়সে খই বিক্রি করছে। ছেলেটিকে দেখে মায়া হলো মিশালের। বুকটা ধক করে কেঁপে উঠল। ছেলেটির হাত ধরে সে ঝুকে এলো ছেলেটির কাছে। কোমল গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“হেই সুইট বয়। তুমি এভাবে কাঁদছ কেন? কী হয়েছে তোমার?”

মিশালের দিকে চোখ তুলে তাকালো ছেলেটি। কিয়ৎক্ষণ কিছু একটা ভাবল। আশ্বস্ত হয়ে ছলছল চোখে নাক টেনে কেঁদেকেটে বলল,

“আমার মায় অনেক অসুস্ত ভাইজান। হাশপাতালে বর্তি। হেই সকাল থেইকা আমি খই বেচতে রাস্তায় বের অইছি। কেউ আমার থেইকা খই কিনতে চায়না ভাইজান। মায়ের ঔষদের টেহা এহন আমি কোত্থাইকা জোগামু?”

দুনিয়ায় কী তবে কেউ ভালো নেই? সবার জীবনেই অভাব-অনটন, দারিদ্রতা, দুঃখ-কষ্ট, আক্ষেপ লেগেই আছে? দরিদ্রতা গ্রাস করছে সমাজে বসবাস করা বৃহৎ অংশের মানুষদের? এই অভিশাপ থেকে কবে এই দেশের মানুষ রক্ষা পাবে? আদো কী দরিদ্রতা খুঁচবে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের? এই ছোট্টো এবং অবুঝ প্রাণ ছেলেটির দায়িত্বপরায়ণতা দেখে মিশাল শুধু আবেগাপ্লুত নয় বরং মুগ্ধও হলো। ছেলেটির প্রতি মিশালের দয়া নয় বরং সহানুভূতির সৃষ্টি হলো। সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্যের হাত বাড়াতে চাইল। মিশালের পকেটে বাজারের টাকা ব্যতীত বাড়তি কোনো টাকা না থাকলেও সে ছেলেটির কাঁধে হাত রেখে মিহি স্বরে শুধালো,

“তোমার মা কোন হসপিটালে ভর্তি আছে বলা যাবে চ্যাম্প? আমি তোমার মায়ের ঔষধের খরচ বহন করতে চাই!”

মিশালের কথা শুনে ছেলেটি যেনো আকাশ থেকে টুপ করে জমিনে পরল! চোখেমুখে আনন্দ চকচক করে উঠল তার। অবিশ্বাস্য গলায় সে মিশালের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,

“আফনি হাচা কইতাছেন ভাইজান? আফনি আমার মায়ের ঔষদের খরচ দিবেন?”

“হ্যা আমি সত্যিই বলছি ছোটো ভাই। তুমি আমাকে হসপিটালের নামটা বলো। আজ রাতের মধ্যেই আমি তোমার মায়ের ঔষধের বিল দিয়ে আসব। আর বি স্ট্রং ওকে? জীবনের সমস্ত ঝড় ঝাপটা পেরিয়ে জয়ী হও তুমি দোয়া রইল।”

চোখে জল মুখে হাসি নিয়ে ছেলেটি হসপিটালের নাম ও ছেলেটির মা যে কেবিনে রয়েছে সে কেবিন নাম্বারটি বলল। ততক্ষণে বাস এসে বাজারের সামনে থামল। মিশাল বাস থেকে নেমে গেল। ছেলেটিকে বিদায় জানিয়ে কাঁচা বাজারের দিকে রওনা হলো। তখনি পেছন থেকে সাহিলের কণ্ঠস্বর ভেসে এলো! গাড়ির জানালা খুলে সাহিল তার গাড়ি থেকে বাঁকা হেসে মিশালকে কাছে ডাকল। পিছু ঘুরে তাকালো মিশাল। সাহিলকে দেখে তার দিকে এগিয়ে এলো। চোখ থেকে সানগ্লাসটি খুলল সাহিল। অকপট গলায় মিশালকে বলল,

“আমারতো বিশ্বাসই হচ্ছেনা রে। আমার কাজিন হয়ে তুই এই দুর্গন্ধযুক্ত, নোংরা বাজারে এসেছিস তাও আবার কাঁচা বাজার করতে! আমাকে দেখ? আমি কীভাবে রাজার হালে চলছি!”

হেয়ো হাসল মিশাল। পাত্তা দিলোনা সাহিল এবং তার দাম্ভিকপূর্ণ কথাবার্তাকে। বরং ঠাট্টার স্বরে সে বলল,

“সত্যিকারের রাজারা কখনও নিজের গন্ডির মধ্যে থেকে, নিজের আলিশান বাড়ি-গাড়ির মধ্যে থেকে, নিজের টাকা-পয়সার অহংকার দেখিয়ে নিজের রাজত্ব জাহির করেনা সাহিল ভাই! মাঝেমধ্যে তাদেরও রাস্তায় নামতে হয়। রাজ্যের মানুষদের সুবিধা অসুবিধা দেখতে হয়। সাধারণ মানুষদের মতো জীবনযাপন করতে হয়। অসহায় মানুষদের জীবনকে খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করতে হয়। নিজের রাজত্ব ঠিক রাখার জন্য এতটুকু তো রাজাকে করাই লাগে। তবেই না একজন রাজা হয়ে ওঠে সত্যিকারের রাজা! আই থিংক তুমি বুঝতে পেরেছ এখানে আসলে সত্যিকারের রাজাটা কে?”

মিশালের কোনো কথাই যেনো গাঁয়ে মাখলনা সাহিল! বরং শান্তশিষ্ট এবং স্থির রইল। যা তার থেকে মোটেও প্রত্যাশিত নয়। বিনিময়ে শুধু পৈশাচিক হাসি ফুটিয়ে তুলল ঠোঁটের কোণে। শ্লেষভরা গলায় বলল,

“হা হা হা। একটু পরেই টের পাবি রাজার পকেটে টাকা না থাকলে কী হয়! সিংহ কেমন নেকড়েতে পরিণত হয়! এতে আমার কী? আমিতো যাচ্ছি রাণীর মন জয় করতে! ধীরে ধীরে তুই রাণীও হারাবি এমনকি তোর দুই টাকার রাজত্বও হারাবি।”

মিশালকে বিদ্রুপ করে প্রস্থান নিলো সাহিল। গাড়ি ছেড়ে দিলো উর্ধ্বগতিতে। মনে যেনো তার রঙ লেগেছে! খুশি আর ধরছেনা। মিশালের বুঝতে বেশী বেগ পেতে হলোনা সাহিল তার সাথে কোনো চালাকি করছে! তাকে হেনস্তা করার কোনো উটকো প্ল্যান করেছে। প্যান্টের পকেটে হাত দিতেই মিশাল হতভম্ব হয়ে গেল। পকেটে তার ওয়ালেট নেই! মাসিক বাজার খরচের পাক্কা পনেরো হাজার টাকা ছিল তার ওয়ালেটে! মাথায় হাত চলে গেল মিশালের। ঘাম ছুটে গেল। পকেট কাটল কে তার? তখনি অপ্রত্যাশিতভাবে বাসে পরিচয় হওয়া ছেলেটি তার পাশে এসে দাড়ালো। বেশ নম্র স্বরে মিশালকে ডেকে বলল,

“ভাইজান। আফনি কি এই মানিব্যাগটা খুঁজতাছিলেন?”

তাৎক্ষণিক মিশাল তার পাশ ফিরে তাকালো। ছেলেটির হাতে থাকা মানিব্যাগটির দিকে প্রকাণ্ড দৃষ্টিতে তাকালো। হতবাক গলায় বলল,

“হ্যা এটাইতো আমার মানিব্যাগ! কিন্তু এই মানিব্যাগটা তোমার কাছে গেল কীভাবে?”

ছেলেটি তৎক্ষনাৎ মাথা নুইয়ে নিলো! উৎকন্ঠিত হয়ে অপরাধী গলায় বলল,

“আমি আফনের পকেট কাটছিলাম ভাইজান। কিন্তু নিজের ইচ্ছাতে কাটি নাই বিশ্বাস করেন। একটু আগে যেই লোকটা আফনের লগে গাড়ি থামাইয়া কথা কইয়া গেল না? হেই লোকটাই আমারে দিয়া এই কাজ করাইছিল! কিন্তু আমি পরে ভাইবা দেখলাম আমি যার ক্ষতি করতে আইলাম হেই লোকটাই তো আমার সাহায্য করতে আইল আমি কেমনে তার ক্ষতি করি? তাই টাহাডা লইয়া আফনার কাছে আবার আইলাম! আমারে খমা কইরা দেন ভাইজান।”

একটুও রাগারাগি করলনা মিশাল। কেবল মলিন হাসল! ছেলেটির হাত থেকে মানিব্যাগটি নিলো। হাঁটু মুড়ে ছেলেটির মুখোমুখি বসল। ছেলেটির মাথায় হাত রেখে মোলায়েম সুরে বলল,

“তোমার বিচার-বিবেচনাবোধ দেখে আমি ভীষণ খুশি হয়েছি ছোটো ভাই। তুমি খুবই সৎ একটি ছেলে। আমি যদি তোমাকে একটা চাকরী দিই তুমি করবে?”

খুশি হয়ে গেল ছেলেটি। হাসোজ্জল গলায় বলল,

“কী চাকরী ভাইজান?”
“চলো আমার সাথে।”

ছেলেটিকে নিয়ে মিশাল তার পরিচিত একটি পাইকারি মুদি দোকানে গেল। দোকানদার প্রায় অনেক দিন যাবত একজন কর্মচারী খুঁজছিলেন। দোকানের মালপত্র আনা নেওয়ার জন্য। কাছের ভেবে মিশালকে তিনি এই ব্যাপারে বলেও ছিলেন। তাই মিশাল এই কাজটিই ছেলেটিকে দেওয়ার জন্য বলল দোকানদারকে। মিশালের এক কথায় তিনি কাজটি দিয়ে দিলেন ছেলেটিকে! সততার জন্য রাস্তার ছেলেটিরও আজ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়ে গেল। এসবের মাঝে সাহিল নিজেকে ছোটো করল!

_______________________________

রাত তখন আটটা প্রায়। বেশ ব্যস্ত ভঙ্গিতে মিশাল আলমারির ড্রয়ার খুলে টাকা বের করছে। মূলত বাইক কেনার জন্য সে একটু একটু করে যে টাকা গুলো সঞ্চয় করেছিল সেই টাকা থেকেই ছেলেটির মায়ের ঔষধের টাকা মিটাতে যাচ্ছে সে! এছাড়া আর কোনো উপায়ও নেই। টাকাগুলো গুনতে গুনতে মিশাল দীর্ঘশ্বাস ফেলল। দুঃখ বিজরিত গলায় বলল,

“মাই ব্যাড লাক। বাইক যেহেতু কেনাই হচ্ছেনা আর, টাকাগুলো বরং দুঃখী মানুষদের সেবায় কাজে লাগানোটাই বেস্ট হবে।”

মুখ দিয়ে কথাগুলো বললেও ভেতরটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছিল মিশালের! বাইক কেনাটা যে তার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্ন হয়ে দাড়িয়েছে। তার স্বপ্ন পূরণের পথে বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে তার আপনজন, তার সৎ মা! প্রেশার কুকার কেনার বায়না ধরেছেন তিনি! একটু আগেই এই নিয়ে দুজনের মধ্যে বেশ কথা কাটাকাটি হয়েছিল। ইতোমধ্যেই উৎফু়ল্লিত হয়ে রুমকি দৌড়ে এলো মিশালের কাছে। হাত তার লাল গাউন! মিশালকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে সে প্রফুল্ল গলায় বলল,

“থ্যাংকস ভাইয়া। এতো সুন্দর ড্রেসটা আমাকে গিফট করার জন্য! আমি ভাবতেও পারিনি জানো? সেদিন আমি সামান্তা আপুর ড্রেসটা পছন্দ করব বলে তুমি ঠিক সেই ড্রেসটাই আমাকে গিফট করবে।”

ম্লান হাসল মিশাল। পিছু ঘুরে রুমকির দিকে তাকালো। কিয়ৎক্ষণ রুমকির দিকে নিরবিচ্ছিন্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। রুমকির খুশি দেখছিল। আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো খুশি রুমকি। মিশালের যাবতীয় দুঃখ, বেদনা, গ্লানি যেনো নিমিষেই থমকে গেল বোনের হাসিমুখ দেখে। ড্রেসটা রুমকির গাঁয়ে তখনও ধরা ছিল। দেখতে বেশ মিষ্টি দেখাচ্ছিল তাকে। আদুরে হয়ে রুমকির মাথায় হাত বুলালো মিশাল। গাল টেনে বলল,

“মাশাআল্লাহ্। টুকটুকে লাল পরী দেখাচ্ছে তোকে। এবার শুধু রাজকুমার খোঁজার পালা!”
“ধ্যাত ভাইয়া! থামো তো। আমার এখনি কোনো রাজকুমার লাগবেনা।”
“ইশ কী লজ্জা! যা, আগে মাকে ড্রেসটা দেখিয়ে আয়।”
“এক্ষুণি যাচ্ছি ভাইয়া।”

খুশিতে উচ্ছ্বল হয়ে রুম থেকে প্রস্থান নিলো রুমকি। তার পিছু পিছু জেনিয়া এসে মিশালের রুমে প্রবেশ করল! আচমকা জেনিয়াকে দেখে অবাক হলো মিশাল। ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন ছুড়ল,

“তুমি হঠাৎ?”
“কেন আসতে পারিনা?”
“পারবেনা কেন? এমনি জাস্ট আস্ক করলাম।”
“তোমার জন্য একটা গিফট এনেছি মিশাল ভাইয়া! আশা করছি তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিবেনা!”

হাতে থাকা শপিং ব্যাগটি জেনিয়া বেশ উৎসাহ ও আশা নিয়ে মিশালের দিকে এগিয়ে দিলো! ঠোঁটের কোণে হাসির ঝলক লেগে আছে তার। ইচ্ছে বুঝি পূরণ হলো তার। তবে এই পুরো ব্যাপারটিতে মিশাল বেশ ইতস্ততবোধ করল। বিব্রতকর গলায় বলল,

“সরি টু সে জেনিয়া। তোমার এই কাজটা আমার একটু বেশিই বাড়াবাড়ি মনে হলো! কারো কাছ থেকে অকারণে গিফটস নেওয়াটা আমার পছন্দ নয়। প্লিজ তুমি এটা নিয়ে যাও!”

মনোক্ষুণ্ণ হলো জেনিয়ার। মিশালের থেকে এমন ব্যবহার প্রত্যাশা করেনি সে। জোরপূর্বক হাসল জেনিয়া। উদগ্রীব গলায় পুনরায় মিশালকে শুধালো,

“তুমি কী সত্যিই আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছ মিশাল ভাই?”
“আ’ম সো সরি জেনিয়া। জানি আমার আচরণে তুমি কষ্ট পেয়েছে, বাট আমি তোমার কাছ থেকে এটা নিতে পারছিনা। উইদাউট অ্যানি রিজন আমি কারো কাছ থেকে কিছু নিতে পারিনা।”

বড়ো সড়ো আঘাত পেল জেনিয়া! শপিং ব্যগাটি নিয়ে একছুটে রুম থেকে বের হয়ে গেল। সামান্তা দরোজার বাহিরে দাড়িয়ে সব দেখছিল এবং শুনছিল। মুখ টিপে হাসল সে। বিষয়টায় ভীষণ আনন্দ পেলো সে! মিশালের গাল দুটো টেনে দিতে ইচ্ছে হলো! দ্রুত পায়ে হেঁটে সামান্তা এবার মিশালের রুমে প্রবেশ করল। ক্রুর হেসে মিশালের মুখোমুখি দাড়ালো। আচমকা কপাল চাপরাতে লাগল মিশাল! রাগে রি রি করে বলল,

“তোরা কী আজ আমার রুমে লাইন লাগিয়েছিস? একের পর এক শুধু আসা যাওয়া করছিস! একটা কাজ ঠিকমতো করতে দিচ্ছিসনা।”
“ও বাবা। তোমার কী আবার পার্সোনাল স্পেস ও দরকার? মেয়েদের মতো দরোজা বন্ধ করে চেঞ্জ করবে না-কি?”

সামান্তার আচরণে ভীষণ আশ্চর্য হলো মিশাল। কারণ, সামান্তা এই প্রথম মিশালের হাত ছুঁলো! ছোঁ মেরে টেনে নিয়ে গেল মিশালের বাঁ হাতটি। একটি ব্র্যান্ডেড ওয়াচ পরিয়ে দিলো মিশালের হাতে! ঘটনার আকস্মিকতায় ‘থ’ হয়ে গেল মিশাল। সামান্তা কী সত্যিই তাকে ছুঁলো?

#চলবে…?

[আসসালামু আলাইকুম। আমার পোষা বিড়ালটা খুবই অসুস্থ। আমার অসাবধানতার জন্য কাল রাতে সে বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। রাস্তার জঙলি বিড়ালরা তাকে পেয়ে খুব মারধর করে। বিভিন্ন জায়গায় জখম করে ফেলে। কোনোরকমে সে বাড়ি ফিরে আসে। আজ শনিবার বিধায় তাকে ব্যাটে নিয়ে যেতে পারিনি। বাসায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছি। আপনারা তার জন্য একটু দোয়া করবেন প্লিজ! যেনো আমার বিড়ালটা অতি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। আল্লাহ্’ দয়ায় যেনো কোনো ক্ষতি না হয় তার। বলতে গেলে তার টেনশনে কিছুই ভালো লাগছেনা আমার।🙂]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here