হৃদয়_জুড়ে_তার_ছায়া #পর্বঃ২০ #আদওয়া_ইবশার

0
190

#হৃদয়_জুড়ে_তার_ছায়া
#পর্বঃ২০
#আদওয়া_ইবশার

অলস বিষন্ন দুপুর। শীতের আগমনে প্রকৃতি জীর্ণশীর্ণ। অর্ধ দিনেও সূর্যের দেখা নেই। মনে হয় ধরণীর সাথে প্রজ্জল রবির বড়সর কোনো দন্দ চলছে। যার কারণে হিংসাপরায়ন রবির ধরণীকূলে কিরণ ছড়াতে ভিষণ অনিহা। অলস দিনে পাপড়ির দেহ-মনেও আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে অলসতা। ভার্সিটিতে না গিয়ে চুপচাপ বসেছিল নিজের রুমে। দিনকে দিন বোনের প্রতি হাজারো অভিযোগ জমা হচ্ছে ছোট্ট পালকের। সেই সকাল থেকে কত করে অনুরোধ করল তার সাথে একটু ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য। কিন্তু পালক নিরুত্তাপ। বোনের সারা না পেয়ে অভিমানে গাল ফুলিয়ে পাপড়ির থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বসে আছে পালক। ছোট বোনের অভিমানের পাহাড় ভাঙার কোনো তোড়জোড় নেই পাপড়ির। দেখেও না দেখার ভান ধরে বসে আছে। তার একারই কেন এতো ঠ্যাকা সবার অভিমান ভাঙানোর? তার মনেও যে অভিমানের আস্তরণ জমতে জমতে বিষন্নতার বেড়াজাল ঘিরে ধরেছে। কই কেউ তো তার অভিমান গায়েও মাখলনা! কেন তার মতো এতো কোমলমতি একটা মেয়ের সাথে নাহিদ নামক পাষণ্ড পুরুষটা এমন করছে? তাহলে কি ভালোবাসা ফুরিয়ে গেছে এই অল্প দিনেই না কি মোহঘোর কেটে গেছে? পাপড়ির জন্য কি নাহিদের মনে আদও কোনো ভালোবাসা ছিল না কি যা ছিল তা স্রেফ ক্ষণিকের মোহ? ভালোবাসা থাকলে কি এতো নিষ্ঠুরতম আচরণ করতে পারত তার সাথে! কথা গুলো মনে আসতেই না চাইতেও বারবার কান্নার লহর এসে গলায় দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। চোখের কোলে টলমল জলটুকু বিদ্রোহ করছে বাইরে বেরিয়ে আসতে। হঠাৎ পাশে অবহেলায় পরে থাকা ফোনটা ব্রাইভ হতেই কিন্চিৎ কেঁপে ওঠে পাপড়ি। হাত বাড়িয়ে ফোনটা কাছে টেনে নেয়। পরিচিত নাম্বার থেকে আসা ছোট্ট একটা বার্তা দেখে অবাক নেত্রে তাকিয়ে থাকে ফোনের স্ক্রীনে। অবশেষে! দুদিন পর অবশেষে কাঙ্ক্ষিত নাম্বার থেকে ছোট্ট একটা বার্তা পেল পাপড়ি। পাষন্ডের মনে একটু সহানুভূতি উদয় হলো তাহলে পাপড়ির জন্য!বহু প্রতিক্ষার পর যেন তৃষ্ণার্ত পথিক উত্তপ্ত মরুভূমির বুকে এক বিন্দু জলের সন্ধান পেল। নাহিদের নাম্বার থেকে আসা অতি ক্ষুদ্র একটা বার্তা,

“গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি। এই অধমের প্রতি দয়া দেখাইয়া অনুগ্রহপূর্বক যদি একটু আসতেন খুবই উপকৃত হইতাম।”

বিষন্নতা দূর হয়ে ঠোঁটের কোণে এক টুকরো হাসির দেখা মিলে পাপড়ির। সাথে হাসে মায়াবী চোখ দুটো। বুকের ভিতর ছলকে ওঠে আনন্দের ঝিরি। তরিৎ বেগে ছুটে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। ড্রয়িং রুমে পৌঁছনোর পরই হঠাৎ মনে পরে ছোট বোনের মলিন মুখটা। কিছু একটা ভেবে আবারও ছুটে যায় রুমে। গোল গোল নেত্রে ঠোঁট ফুলিয়ে বোনের যাবার পানেই তাকিয়ে ছিল পালক। পূণরায় তাকে রুমে ফিরে আসতে দেখে ভ্রুদ্বয় কিন্চৎ কুঁচকে যায়। পালকের মুখের ভঙ্গিমা দেখে ঠোঁট দুটো অল্প বিস্তর ফাঁক করে ঝরঝরে হাসে পাপড়ি। হাত ধরে ছুট লাগিয়ে বলে,

“আর মুখ ফুলিয়ে থাকতে হবেনা। চল বাইরে নিয়ে যাচ্ছি। তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”

পালকের জবাবের অপেক্ষায় থাকেনা পাপড়ি। শক্ত মুঠোই পালকের নরম হাতটা ধরে এক ছুটে বেরিয়ে যেতে যেতে মা’কে হাক ছেড়ে বলে যায় বাইরে থেকে একটু হেঁটে আসছে। হতবুদ্ধি পালক এখনো কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা হঠাৎ বোনের হলো টা কি! পালকের অবাকের মাত্রা বাড়িয়ে দিতেই বুঝি পাপড়ি এক ছুটে সব কিছু পিছনে ফেলে একেবারে গলির মোড়ে এসে থামে। এতটুকু পথ দ্রুত গতিতে এসেই হাপিয়ে গেছে দুজন। নিঃশ্বাসের সাথে বুক উঠানামা করছে সমান তালে। হাঁসফাঁস লাগছে শ্বাস টানতে। রাগ হয় পালকের। ঝারি মেরে বোনের মুঠো থেকে হাতটা সরিয়ে কন্ঠে তেজ মিশিয়ে বলে,

“কি শুরু করেছো এসব? এতোক্ষন যে বললাম একটু ব্যাডমিন্টল খেলতে তখন তো আমার কথা শুনলেনা। মুখটাকে একেবারে চুলায় রান্না করা পাতিলের হাড়ির মতো কালো করে রেখেছিলে। এখন কেন এখানে টেনে আনলে টর্নেডো গতিতে?”

পালকের কথায় পূণরায় ঝলমলে হাসির ঝিলিক দেখা দেয় পাপড়ির ঠোঁটে। বোনকে তখন থেকে কারণে অকারণে হাসতে দেখে যথাপরনায় অবাক পালক। কেমন যেন অদ্ভুত ঠেকছে সব কিছু ছোট্ট পালকের কাছে। হাত দুটো বুকের কাছে ভাজ করে গম্ভীর হয়ে বলে,

“কি চলছে তোমার মনে বলো তো! প্রেমে-টেমে পরেছো না কি? তোমার এই আচরণ গুলো কিন্তু প্রেমে পরার প্রথম লক্ষণ। দেখো, ভালোই ভালোই বলছি যদি প্রেম-টেম হয়ে থাকে তাহলে ঝটপট বলে দাও আমাকে। নইলে কিন্তু পরবর্তীতে তোমার প্রেমের ভিলেন হয়ে দাঁড়াব আমি। তখন একদম দোষ দিতে পারবেনা আমাকে। ”

এবার শব্দ করেই হেসে দিল পাপড়ি। প্রাণখোলা হেসে সরল চোখে বোনের দিকে তাকিয়ে বলল,

“কিছুদিন আগে তুই আমাকে অভিশাপ দিয়েছিলি মনে আছে? যেদিন ভুলবসত নাহিদের টাকা আমার একাউন্টে চলে আসে এরপরদিন! মনে নেই বলেছিলি, “তোমার জন্য আজকে আমাকে এই বকা গুলো শুনতে হল না! দেখবে আমার মনের অভিশাপে ঐ ছেলের সাথেই তোমার প্রেম হবে। এরপর ব্রেকআপ। সেই দুঃখে তুমি নার্গিস পাগলির মতো বনেবাদরে ঘুরে বেড়াবে। ছোট ছোট বাচ্চারা তোমার পিছনে ছুটতে ছুটতে পাগল বলে খ্যাঁপাবে।ছোট বোনের মনে কষ্ট দিয়ে কেউ কখনো ভালো থাকেনা।”, তোর ঐ অভিশাপ ফলে গেছে রে। ঐ অ’ভ’দ্র,অ’স’ভ্য, ই’ত’র ছেলেটার প্রেমে তোর বোন পাগল প্রায়। ভালোবাসার অনলে প্রতিনিয়ত পুড়ছে আমার এই মন। দ’গ্ধ হচ্ছে মনের আনাচকানাচ। তোর অভিশাপের বাণী সত্যি হয়ে প্রেম তো হলো ঠিকই। কিন্তু দোয়া কর কভু যেন বিচ্ছেদ না হয়। প্রেমের দহনেই আমি পু’ড়ে অঙ্গার। বিচ্ছের অনলে পোড়ার ক্ষমতা একদম নেই আমার। জীবন্ত লাশ হয়ে যাব তোর শেষের কথা গুলো ফলে গেলে। নাহয় একেবারেই ম’রে যাব।”

পালকের চোখ দুটো কোঠার থেকে বেরিয়ে আসার জোগাড়। কিছু বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে যেন একেবারে। কি শুনলো এগুলো সে! তার বোন প্রেমে পরেছে! তাও আবার ঐ নাহিদের! এটা আদও বিশ্বাসযোগ্য? পালকের অবাকের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে তখনই চোখের সামনে উপস্থিত হলো নাহিদ। হাত দিয়ে সিল্কি চুল গুলো পিছনে ঠেলে দিতে দিতে শান্ত ভঙ্গিতে এসে দাঁড়ায় তাদের পাশে। পাপড়ির সাথে পালককে দেখে নাহিদ একটু থমকায়। মনে মনে ভাবে, এই বেয়াক্কলের কি আর কোনোদিন আক্কেল হবেনা! প্রেমিকের সাথে দেখা করতে আসলে কেউ ছোট বোনকে নিয়ে আসে সাথে!,হতাশ হয় নাহিদ। বুক ফুলিয়ে একটা নিশ্বাস ছেড়ে পালকের বিস্ময়ে স্তম্ভিত মুখের দিকে তাকিয়ে পাপড়িকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“এই তিড়িং বিড়িংকে কোন আক্কেলে সাথে নিয়ে এসেছেন?তরকারির অভাবে কি দিন দিন আক্কেল জ্ঞান সব ভাতের সাথে গিলে খাচ্ছেন?”

সাথে সাথেই পাপড়ির প্রফুল্ল বদনটা মলিন হয়ে যায়। বিস্ময় ছুটে যায় পালকের। পাপড়ি কিছু বলার আগেই পালক তেড়ে যায় নাহিদের দিকে। আঙ্গুল উচিয়ে নাক ফুলিয়ে বলে,

“আর একটা কথা বলবেন তো গুতো দিয়ে আপনার পেট কানা করে ফেলব নয়া কুটুম। সাহস কত আপনার ! আমার বোনের সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে টাং’কি মেরে আবার আমাকেই এভাবে অপমান করছেন!”

পালকের এমন কথায় ভিষম খায় নাহিদ। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে পালকের দিকে। অন্যদিকে পাপড়ি অদৃশ্য হাতে নিজেই নিজের কপাল চাপড়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে আসলেই নাহিদ ভুল কিছু বলেনা। সত্য সত্যিই তার আক্কেল, জ্ঞান কম। নইলে এমন স্ফুলিঙ্গকে কি আর সাথে নিয়ে আসে? খুশির চোটে বোনের আচরণ যে কতটা মার্জিত ভুলেই গিয়েছিল। এখন যদি নাহিদের সাথে এটা নিয়ে ঝগড়া বেধে যায় তাহলে শেষ সব। এই মেয়েকে কেউ আটকে রাখতে পারবেনা। ঠিক ঠিক বাড়ি গিয়ে মায়ের কানে সব লাগিয়ে দিবে। দুজনের এই যুদ্ধের মাঝখানে বলি হবে বেচারি পাপড়ির সদ্য জন্মানো ভালোবাসাটুকু। পালকের দাপুটে কথার তোড়ে যথাপরনায় অবাক নাহিদ। চোখে মুখে অবাকের রেশটুকু ধরে রেখেই কন্ঠে বিস্ময় নিয়ে বলে,

“কি দিন আসলো রে নাহিদ তোর! এই দেড় ইঞ্চির একটা লিলিপুট কি না আমাকে হুমকি দিচ্ছে!”

আবারও অপমানজনক কথায় ফুসে উঠে পালক। ফুস ফুস শব্দ করে নিঃশ্বাস ছাড়ে। দাঁত কিড়মিড় করে বলে ওঠে,

“একেতো আমার মন ভেঙেছেন। তার উপর আবার আমাকেই এভাবে কথা শুনাচ্ছেন। লজ্জা করছেনা আপনার? আপনাকে আমি ভালো ভেবেছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি আপনার থেকে সিনেমার ভিলেনরাও যথেষ্ট ভালো হয়। ওরা আন্তত কোনো নাইকার মন ভেঙে তার বড় বোনের সাথে লাইন মা’রে না। আপনার থেকেও অনেক ভালো মনুষত্ববোধ আছে ওদের।”

বোনের মুখের এমন কথা শুনে পাপড়ির জ্ঞান হারাবার যোগাড়। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে পালকের দিকে। নাহিদ’ও এর ব্যতিক্রম নই। দুজনের বিস্ফোরিত নেত্র যোগল একসাথেই তাক হয়ে আছে পালকের দিকে। জড়িভূত কন্ঠে পাপড়ি বলে ওঠে,

“এসব কি বলছিস তুই? কে মন ভাঙলো তোর?”

“কে আবার? তোমার ঐ আলাভোলা খ্যাচর মার্কা প্রেমিক। কত সাদ ছিল আমার মনে তার সাথে প্রেম করব। আমার সেই সাদে বালি ঢেলে এমন করতে পারলে তোমরা? এতো বড় দুঃখ দিতে পারলে আমার এই ছোট্ট মনে?”

পালকের কাঁদো কাঁদো কন্ঠের এমন অদ্ভুত কথা শুনে বুঝতে আর বাকি নেই পাপড়ির বোন তার চিরচারিত স্বভাবের ধারাতেই ফাজলামি করছে। বিষয়টা একদম পছন্দ হলনা পাপড়ির। চোখ পাকিয়ে বোনের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে ওমনি নাহিদ আফসোস টেনে বলে,

“ইশ! এই কথাটা আগে বলবেনা সুইটহার্ট! তোমার মতো একটা মিষ্টি, বুদ্ধিমতি, পাকা ডালিম রেখে কি না আমি বুড়ো কোমড়োর সাথে প্রেম করতে গেছি! হতাশ, হতাশ! আমি নিজেঈ নিজের প্রতি বড়ই হতাশ।”

মুখ বাঁকায় পালক। ঝামটা মেরে বলে,

“এখন আর কপাল চাপড়েও কোনো লাভ নেই। ভুল ডিজিটে যখন ডায়াল করেই ফেলেছেন তখন এর খেসারত তো আজীবন দিতেই হবে। আমি আর আপনার ধারেকাছে নেই। অন্যের জিনিসের প্রতি ছুক ছুক করার অব্যাস এই পালকের কখনো ছিল না আর ভবিষ্যতেও হবেনা। যাচ্ছি আমি। আপনাদের লুতুপুতু প্রেম দেখার একদম আগ্রহ নেই আমার।”

কথাটা বলে আর এক মুহুর্ত দাঁড়ায় না। হাওয়ার বেগে ছুটে যেতে থাকে একটু দূরেই সবুজ মাঠে খেলতে থাকা বাচ্চা গুলোর দিকে। পিছন থেকে চেঁচিয়ে ওঠে পাপড়ি।,

“অ্যাই! তুই আমাকে রেখে কোথায় যাচ্ছিস?”

“ভয় নেই। আম্মুকে কিছুই বলবনা। ইচ্ছেমতো প্রেম করতে থাকো। শুধু বাড়ি যাবার সময় আমার জন্য ঘুষ হিসেবে রফিক মামার ফুচকা নিয়ে আসলেই হবে।”

ছুটতে ছুটতেই পিছন ঘুরে এক পলক বোনের দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয় পালক। হেসে ফেলে পাপড়ি নাহিদ দুজনেই। বোনের দুরন্তপনায় হাসি মুখেই মৃদু স্বরে উচ্চারণ করে পাপড়ি, “পাগল একটা!’ পাপড়ির দৃষ্টি নিজের দিকে ঘুরাতে খুক খুক করে কেশে ওঠে নাহিদ। সাথে সাথেই দৃষ্টি তাক করে নাহিদের দিকে।,

“পাগল বোনকে তো দিন-রায় চব্বিশ ঘন্টায় দেখুন। এবার একটু দয়া করে এই অধমের দিকে দৃষ্টি ফেরান।”

কোথা থেকে যেন আবারও অভিমানী ভিজে বাতাস এসে ছুঁয়ে দেয় পাপড়িকে। হাসি মুখের আদল পাল্টে ভাসে অভিমানের ছাপ। দিপ্ত আক্ষিকুঠোর পরিপূর্ণ হয় জলে। ঘোলাটে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয় প্রণয় পুরুষের দিক থেকে। প্রিয়তমার অভিমান বুঝতে আর বাকি রইল না নাহিদের। ঠোঁট কামড়ে অল্প হাসে এই ভেবে, একটু আগেই কি সুন্দর সব অভিমান ভুলে তার এক ডাকেই ছুটে এলো। এখন আবার বাচ্চাদের মতো মিছে অভিমানে গাল ফোলালো! নারী জাতির মন বোঝা আসলেই বড্ড কঠিন। তাদের মনের ঘরে কখন কি চলে কেউ বলতে পারেনা।

নিরব পদচারনায় পাপড়ির নিকট এগিয়ে আসে নাহিদ। দুজনের মাঝে অল্প বিস্তর দূরত্ব রেখে শক্ত হাতের মুঠোয় পুরে নেই পাপড়ি তুলতুলে নরম একটা হাত। আঙ্গুলে আঙ্গুল গুজে মৃদু চাপ প্রয়োগ করে। সহসা কেঁপে ওঠে পাপড়ি। সেই মৃদু কম্পন টের পায় নাহিদ। ঠোঁটের কোণে হাসিটুকু ধরে রেখেই ফিসফিসিয়ে জানতে চায়,

“অভিমানের পাল্লাটা কি খুব বেশিই ভারী হয়ে গেছে? তা কি করলে প্রিয়তমার অভিমান গলে জল হবে?”

নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত, স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে পাপড়ি। প্রসঙ্গ পাল্টে প্রশ্ন করে,

“রাজশাহী থেকে কখন এসেছেন?”

“সকালেই।”

“ডেকেছেন কিজন্য?”

এই প্রশ্ন টুকু করার মাঝে আর অভিমান টুকু লুকিয়ে রাখতে পারলনা। ঠিক কথার ভাজে লুকিয়ে থাকা অভিমানের পারদ টুকু প্রকাশ পেয়ে গেল। দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে পাল্টা প্রশ্ন করে,

“ডাকতে বুঝি মানা?”
উত্তরে মৌনতা পালন করে পাপড়ি। বল প্রয়োগ করে হাতে টান লাগায় নাহিদ। মৃদু স্বরে বলে,

“চলো।” ঝটপট মৌনতা ভেঙ্গে উদ্বিগ্ন স্বরে জানতে চায় পাপড়ি,

“কোথায় যাব।”

“বেচে দেব আপনাকে ম্যাডাম। আপনাকে বেচে যে টাকা পাব সেই টাকা দিয়ে আমার ডালিম সুন্দরীর জন্য ফুচকা কিনব।”

এতোদিনের চেপে রাখা একটা প্রশ্ন মুখ্যম সুযোগ বুঝে করে ফেলে পাপড়ি,

“আপনি আমাকে একেক সময় একেক ভাবে সম্বোধন করেন কেন? এই ডাকেন তুমি আবার এই আপনি। যেকোন একটা ডাকবেন। হয় তুমি না হয় আপনি।”

“পারবনা। আমার যখন যেটা ইচ্ছে সেটাই ডাকব।”

নাহিদের সোজা উত্তর। একটু বিরক্ত হয় পাপড়ি। কিন্তু ফের আর কিছু বলতে পারেনা এই প্রসঙ্গে।

চলবে……

( প্রিয় পাঠক, আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত এতো দেরিতে গল্প দেওয়ার জন্য। পারিবারিক ঝামেলা, ব্যক্তিগত জীবনে মানসিক প্রেসারে গল্প লেখার মানসিকতা পাচ্ছিলাম না। এই পর্বটাও অনেক কষ্টে লিখেছি। এখন থেকে ছোট করে হলেও প্রতিদিন গল্প দিব ইন শা আল্লাহ )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here