হৃদয়_জুড়ে_তার_ছায়া #পর্বঃ৮ #আদওয়া_ইবশার

0
176

#হৃদয়_জুড়ে_তার_ছায়া
#পর্বঃ৮
#আদওয়া_ইবশার

আমাদের মানুষের জীবনের পথচলাটা সর্বদা মসৃণ হয়না। চলার পথে কখনো আঁকাবাঁকা পথে চলতে হয় আবার কখনো সরলপথে। জীবনটা যদি আজীবন সরলরেখার মতো সোজা হতো তাহলে হয়তো বেঁচে থাকার আসল মহত্বটা খোঁজে পেতনা মানুষ। দুখের পর সুখ আসে বলেই মানুষ সুখের মুহূর্তটা মন থেকে অনুভব করতে পারে। পূণরায় সুখের পর দুঃখ আসে বলেই মানুষ বুঝতে পারে সুখ কতটা মূল্যবান। আর দুঃখ মানুষকে জীবনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কতটা অনুপ্রাণিত করে। দেখতে দেখতে জীবন থেকে হারিয়ে গেছে আরও কয়েকটা মাস। নাহিদ বাড়িতে থাকতেই তাদের রেজাল্ট প্রকাশ হয়েছে। চার বন্ধুই সর্বোচ্চ সিজিপিএ নিয়ে সফল ভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে পরীক্ষায়। পরপরই শুরু হয়ে গেছে তাদের ইন্টার্নশীপ এর ব্যস্ত জীবন। জীবনের তাগিদে পূণরায় নাহিদ ছুটে এসেছে নিজের প্রিয় মানুষ গুলোকে ছেড়ে ব্যস্ত নগরী ঢাকা শহরে। গাজীপুর কালিয়াকৈর এলাকাতেই একটা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে ইন্টার্নশীপ করার সুযোগ হয়েছে তার। লাবিবকে যেতে হয়েছে কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলায়। নাজিম পরেছে নাটোরে আর রাফিন সিরাজগঞ্জ একই অফিসের ভিন্ন ভিন্ন শাখায়। কর্ম জীবনে চারজনের পথচলা ভিন্ন হলেও একটুও ক্ষিণ হয়নি তাদের বন্ধুত্বের বন্ধন। বরং সময়ের সাথে সাথে দূরে থেকেও গাঢ় হচ্ছে তাদের বন্ধুত্বটা। দূরে গিয়েই যেন মন থেকে অনুভব করতে পারছে তারা একে অপরের সাথে কতটা জড়িয়ে গেছে। হয়ে উঠেছে একে অপরের প্রাণের থেকেও প্রিয় বন্ধু। সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে ফোনের মাধ্যমে আড্ডা হয় তাদের ঘন্টার পর ঘন্টা। একে অপরের সাথে ফাজলামি- দুষ্টুমি ঠিক সেই আগের মতোই বহাল আছে দূরে গিয়েও। কেউ একজন বলেছিল মাঝে মাঝে দূরত্ব’ও গুরুত্ব বোঝায় সম্পর্কের। কথাটা কতটুকু যৌক্তিক তা সময়েই বুঝিয়ে দেয় আমাদের।যেমনটা এখন বুঝিয়ে দিচ্ছে নাহিদ, লাবিব, রাফিন, নাজিমকে।

পাপড়ি পালক দুই মেয়েকে নিয়ে রওশন আরার ছোট্ট সংসারটাও নিজ নিয়মেই এগিয়ে যাচ্ছিল ভবিষ্যতের দিকে। ছোট মেয়ের দুরন্তপণা আর বড় মেয়ের নিরব পদচারনার মধ্যে দিয়েই কাটছিল দিন গুলো। এর মাঝেই একদিন খবর আসে রওশন আরার বৃদ্ধ বাবা মৃত্যু পথযাত্রী। খবর পেয়ে পাগলের মতোই দুই মেয়ে নিয়ে ছুটে যায় গাজীপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে সেই যাত্রাতেও বেঁচে যান বয়স আশি পেরিয়ে যাওয়া নিয়াজ উদ্দিন। তবে হারিয়ে ফেলেন হাঁটাচলার শক্তি। বৃদ্ধ শরীরে শত রোগ নিয়ে বয়সের ভারে হয়ে যান শয্যাশায়ী। নিজের সংসার সন্তান ফেলে রেখে সর্বক্ষন শয্যাশায়ী বাবার পাশে থাকতে না পারলেও কিছুদিন পর পরই ছুটে যান রওশন আরা এক নজর বাবার রোগাক্রান্ত বিছানার সাথে লুটিয়ে যাওয়া দেহটা দেখে আসার জন্য। পালকের স্কুলে পরীক্ষা চলছে। এ যাত্রায় তাই ছোট মেয়েকে রেখে শুধু বড় মেয়েকে সাথে নিয়েই রওশন আরা একদিনের জন্য ছুটেছিলেন নারায়ণগঞ্জ। পালককে বলে গিয়েছিলেন দিনটা বাবার সাথে কাটিয়ে সন্ধ্যার আগেই চলে আসবে বাড়িতে।সে যেন স্কুল থেকে এসে কোথাও না গিয়ে চুপচাপ লক্ষি মেয়ের মতো নিজের ঘরেই থাকে। উত্তরে মাথা নেড়ে মা’কে সম্মতি জানালেও বাবার বাড়ি গিয়ে চঞ্চল মেয়েটার চিন্তায় স্থির থাকতে পারেনি রওশন আরা। দুপুর হতেই পাপড়িকে নিয়ে বেরিয়ে পরেন গাজীপুরের উদ্দেশ্যে। প্রায় গাজীপুরের কাছাকাছি চলে এসেছে তারা। এর মাঝেই পাপড়ির ফোনে কল আসে এক অচেনা নাম্বার থেকে। রিসিভ করে ফোনটা কানে নিতেই ঐপাশ থেকে ধেয়ে আসে এক অপ্রত্যাশিত কথা।,

‘ আপনাদের বাড়ির লোক এক্সিডেন্ট করেছে। হাসপাতালের ঠিকানা টেক্সট করে দিয়েছি। যত দ্রুত সম্ভব চলে আসুন।’

মুহূর্তের মাঝেই কেঁপে ওঠে পাপড়ির পুরো শরীর। চোখের সামনে ভেসে ওঠে ছোট বোনের নিষ্পাপ মুখটা। পরপরই হাসি হাসি মুখের আদলটা দৃষ্টি থেকে সরে গিয়ে ভেসে উঠে রক্তমাখা বোনের বেদনামিশ্রীত অসহায় মুখ। কাঁপা হাত ফসকে ফোনটা পরে যায় চলন্ত গাড়ির মেঝেতে। হঠাৎ মেয়ের এমন অবস্থা দেখে ঘাবড়ে যান রওশন আরা নিজেও। পাপড়ির কাঁপা হাতটা নিজের দুই হাতের মাঝে নিয়ে জানতে চায়,

‘কি হয়েছে পাপড়ি? এমন করছিস কেন? কার ফোন এসেছিল? তোর নানু বাড়ি থেকে না তো! আব্বার কোনো খারাপ খবর এসেছে না কি? চুপ করে না থেকে বল আমায়!’

কয়েক মুহূর্ত সময় নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে পাপড়ি। নিচ থেকে ফোনটা উঠিয়ে কান্নায় রোধ হয়ে আসা কন্ঠে মা’কে বলে,

‘ অপরিচিত একটা নাম্বার থেকে ফোন এসেছে মা। লোকটার কন্ঠও চিনতে পারিনি আমি। বলল আমার বাড়ির লোক কে না কি এক্সিডেন্ট করেছে। মা পালক! পালক ঠিক আছে তো! ওর কিছু হয়নি তো আবার?’

সাথে সাথেই স্থির হয়ে যায় রওশন আরা। অজানা এক আতঙ্কে নীল হয়ে ওঠে মুখটা। মেয়ের করুণ দশা চিন্তা করেই মাথা ঘুরে ওঠে। আচমকা এ কোন বিপদের সম্মুখিন হতে চলেছে ভেবে পায়না কিছুই। শ্বাস রোধ হয়ে আসে ধেয়ে আসা বিপদের কথা ভেবেই। সকালে সুস্থ্য সুন্দর রেখে যাওয়া মেয়েটার না জানি কেমন বিধ্বস্ত দশা হয়েছে ভাবতেই ছটফট করে ওঠছে মায়ের মনটা। দুই চোখ গলে অশ্রু ঝরে পরছে অজান্তেই। আচমকা ধাক্কাটা সামলে উঠতে পারছেনা রওশন আরা পাপড়ি দুজনের একজনও। এই মুহূর্তে কি করা উচিৎ কিছুই ভেবে পাচ্ছেনা। মস্তিষ্কটা যেন ফাঁকা হয়ে গেছে দুজনেরই। দুজনের বিমূঢ়তা কাটিয়ে ওঠার আগেই গাড়িটা এসে থামে নিজেদের বাড়ির সামনে। পাপড়ি নিজেকে ধাতস্থ করে মায়ের হাত ধরে নেমে পরে গাড়ি থেকে। মা’কে আশ্বাস দিয়ে বলে,

‘আগে বাড়ির ভিতরে চলো মা। এমনও তো হতে পারে পালক সুস্থ্যভাবে বাড়িতেই আছে। আমাদের কেউ হয়তো ভুল খবর দিয়েছে। পালককে ঘরে না পেলে তারপর না হয় লোকটার দেওয়া ঠিকানায় যাব। আগেই সত্যি না জেনে নেগেটিভ কিছু ভেবে এভাবে ভেঙ্গে পরা ঠিক হবেনা।’

কোনো জবাব দিতে পারেনি রওশন আরা। এখনো যেন একটা ঘোরের মাঝে আছেন তিনি। নিজেকে কিছুতেই ধাতস্থ করে উঠতে পারছেনা। পাপড়ির হাতের টানেই পিছন পিছন বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সদর দরজার কাছে গিয়ে কলিংবেল দিতেই কিছুক্ষণের মাঝেই দরজাটা খুলে যায় ভিতর থেকে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে পালকের হাসি মুখটা। মা-বোনকে এতো তাড়াতাড়ি চলে আসতে দেখে কিছুটা অবাক হয় পালক। কন্ঠে বিষ্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করে,

‘এতো তাড়াতাড়ি চলে এলে কেন তোমরা? আমাকে না বলে গিয়েছিলে বিকেলে আসবে! সকালে গিয়ে এখন দুপুর হতেই চলে এসেছো!’

এতো বড় একটা দুর্ঘটনার খবর শোনার পর চোখের সামনে মেয়েকে স্বাভাবিক অবস্থায় দেখে কিছুক্ষণ বিহ্বত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রওশন আরা। মায়ের বিহ্বত মুখের দিকে এক নজর তাকিয়ে বোনের দিকে দৃষ্টি ঘুরায় পাপড়ি। ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে থেকে প্রশ্ন করে,

‘তুই ঠিক আছিস?’

ভ্রুদ্বয় কুঁচকে ফেলে পালক। অবাক কন্ঠে বলে,

‘এ মা! আমার আবার কি হবে? ঠিক থাকবনা কেন আমি?’

‘তোর এক্সিডেন্ট হয়নি? স্কুল থেকে আসার সময় কোনো অঘটন ঘটেনি তো? সত্যি করে বলবি।’

পূণরায় জানতে চায় পাপড়ি। এবার যেন একটু বিরক্ত হয় পালক। কন্ঠে বিরক্তি ভাবটা ধরে রেখেই বলে,

‘সেই কখন থেকে দরজার সামনে দাঁড়িয়েই কি সব বলে যাচ্ছো? আমার আবার কখন এক্সিডেন্ট হয়েছে? যদি হয়েও থাকতো তাহলে কি এখন তোমাদের সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতাম? পরীক্ষা শেষে সেই কখন স্কুল থেকে চলে এসেছি। বিশ্বাস না হলে ভাড়াটিয়া আন্টিকে জিজ্ঞেস করে দেখো।’

সাথে সাথেই যেন পাপড়ি রওশন আরা দুজনের বুক চিরে বেরিয়ে আসে স্বস্থির নিশ্বাস । অনুভব হয় বুকের ওপর থেকে ভারি এক পাথর সরে গেছে। স্বস্থি ভরে স্বাস নিয়ে মেয়েকে আচমকা বুকে জড়িয়ে নেয় রওশন আরা। অশান্ত মনটাকে শান্ত করে বলে,

‘কাছে থেকেও তোর চিন্তায় শান্তিতে থাকতে পারিনা দূরে গিয়েও পারি না। সবসময় টেনশনে জ্বালিয়ে মারিস। আমাকে এতো জ্বালিয়ে কি শান্তি পাস তুই? লোকটা যখন বলল বাড়ির লোক এক্সিডেন্ট করেছে জানিস আমার ভিতরে কি চলছিল? মনে হচ্ছিলো এই বুঝি দম আটকে মরে যাচ্ছি।’

মায়ের কথা কিছুই বোধগম্য হচ্ছেনা পালকের। সে আবার কখন কি করল! অযথা এসব কেন বলছে মা? সে তো বাধ্য মেয়ের মতোই স্কুল থেকে এসে চুপচাপ ঘরেই বসেছিল। তাহলে এসব কি বলছে এখন তারা! কিছুই বুঝে ওঠতে পারছেনা পালক। মায়ের বুকে মিশে থেকেই বোনের দিকে তাকায় পালক। ইশারায় জানতে চায় ‘কি বলছে এসব মা?’ মুখ ফুলিয়ে একটা নিশ্বাস ছাড়ে পাপড়ি। অচেনা নাম্বার থেকে আসা বার্তার কথা জানায় ছোট বোনকে। সবটা শুনে চোখ ছোট ছোট করে জানতে চায় পালক,

‘দুনিয়ার যত অদ্ভুত খবর আছে সব কিছুই তোমার ফোনেই কেন আসে? ঘটনা কি বলো তো! এতো অচেনা নাম্বার থেকে কল আসে কেন তোমার ফোনে? মায়ের ফোনে তো এতো আজাইরা কল আসেনা।’

পালকের কথা শেষ হতেই পূণরায় তার-স্বরে বেজে ওঠে পাপড়ির ফোনটা। এবার মেয়ের থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নেন রওশন আরা। রিসিভ করে কানে ঠেকাতেই বলে ওঠে আগুন্তক,

‘ আপনারা কেমন মানুষ ভাই? নিজেদের একটা মানুষ এক্সিডেন্ট করেছে। সেই কখন থেকে অচেনা হয়েই আমি এখনো হাসপাতালে পরে আছি। আর আপনাদের কোনো হেলদুল নেই। মানুষটার প্রতি কি কোনো টান নেই আপনাদের? একজনকে ফোন করলে বলে দূরে আছে আসতে সময় লাগবে। আরেকজন বলে মানবতার খাতিরে একটু সময় পাশে থাকার জন্য। আর আপনাদের কোনো খবরেই নেই। আপনাদেরই যদি মানুষটার প্রতি কোনো মায়া না থাকে তাহলে অপরিচিত হয়ে আমার কেন এতো মায়া দেখানোর দরকার পরেছে? রোগী ম’রো’ক বা বাচুক আমি আর এসব দেখতে পারবনা। নিজের কাজ ফেলে এখানে আর এক মুহূর্ত থাকতে পারবনা। একজন মানুষ হিসেবে যতটুকু করার দায়িত্ব ছিল আমি ততটুকুই করেছি। আমার পক্ষে আর সম্ভব না কিছু করা।’

লোকটার ক্ষিপ্ত কথার জবাবে রওশন আরা বুঝানোর স্বরে শান্ত ভাবে উত্তর দিলেন,

‘দেখুন ভাই আমরা এখনো এটাও শিওর হতে পারছিনা আপনি যার কথা বলছেন ওনি আসলেই আমাদের পরিচিত কেউ কি না। আমার পরিবারের লোক সুস্থ্যভাবে বাড়িতেই আছে। আপনার হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে। এক্সিডেন্ট করা লোকটা আমাদের আত্মীয় কেউ না।’

‘আপনাদের আত্মীয় কেউ না হলে ওনার ফোনে আপনাদের নাম্বার সেইভ করা কেন?’

এবার একটু ভাবনায় পরে যায় রওশন আরা। কয়েক মুহূর্ত সময় নিয়ে কিছু একটা ভেবে জানায়,

‘আর একটু থাকুন আপনি। আসছি আমরা।’

ফোন কাটতেই পাপড়ি রওশন আরাকে অস্থির হয়ে বলে,

‘আমরা যাব মানে কি মা? লোকটাকে চিনিনা জানিনা অযথা কার বিপদ আমরা নিজেদের মাথায় নিব? পালক তো ঠিক আছে। তাহলে কেন যাব শুধু শুধু? আর এমনও তো হতে পারে লোকটা ফ্রট। মিথ্যে বলে নিয়ে গিয়ে আমাদের ফাঁসিয়ে টাকা আদায় করতে চাচ্ছে।’

বিরক্ত হয় রওশন আরা।ধমকের সাথে জবাব দেয়,

‘সবসময় বেয়াক্কেলের মতো কথা বলিস না তো। আমাদের ফাঁসিয়ে টাকা আদায় করার মতো ধান্দা থাকলে হাসপাতালের ঠিকানা কেন দিবে? জনবহুল জায়গায় কিভাবে এতো মানুষের ভীড়ে ফাঁসাবে আমাদের? পালক ছাড়া কি আমাদের আত্মীয় কেউ নেই? এমনও তো হতে পারে তোর কাকা’রা কেউ বা অন্য কোনো আত্মীয়। গিয়ে দেখে আসলে তো কোনো ক্ষতি নেই।’

আর কোনো জবাব দেয়নি পাপড়ি। সময় নষ্ট না করে রওশন আরা দুই মেয়েকে নিয়েই ছুটলেন লোকটার দেওয়া ঠিকানায়। হাসপাতালের সামনে গিয়ে আবারও লোকটাকে ফোন করে ঠিক কোথায় আছে জেনে ছুটলেন সেদিকে। মায়ের পিছন পিছন দুই বোন’ও এসে দাঁড়ায় জরুরী বিভাগের সামনে। তাদের খবর দেওয়া লোকটাকে চিহ্নিত করে সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই লোকটা রওশন আরার হাতে দুইটা ফোন মানিব্যাগ দিয়ে তাড়াহুড়ো করে নার্সের কাছে তাদের রোগীর বাড়ির লোক হিসেবে পরিচয় দিয়ে চলে গেলেন নিজ গন্তব্যে। রওশন আরা’কে আর কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগটাও দিলেন না। মাঝ বয়সী একজন ডাক্তার জানালেন রোগীর অবস্থা খুবই শোচনীয়। অপারেশন লাগবে। যত দ্রুত সম্ভব রিসিপশনে গিয়ে টাকা জমা দিয়ে ফর্মালিটি পূরণ করতে। কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছেনা রওশন আরা। রোগীকে এক নজর দেখে যতটুকু বুঝল একদম অপরিচিত। চেনা নেই জানা নেই এমন একজন মানুষের চিকিৎসার দায়িত্ব কিভাবে নিবেন তিনি? ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থেকে মায়ের আশ্চর্যন্বিত চেহারা পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে পাপড়ি। ডাক্তার যেতেই উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল,

‘আগেই বলেছিলাম মা, এমন ঝামেলা মাথায় নেওয়ার কোনো মানেই হয় না। তবুও তুমি এসেছো এখানে। এবার ঠ্যালা সামলাও।’

শান্ত দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকায় রওশন আরা। কঠোর কন্ঠে জবাব দেয়,

‘হোক অপরিচিত। তাই বলে কি একটা মানুষকে এমন মৃত্যু পথে দেখেও একটু মায়া হচ্ছেনা তোর? আজকে যদি সত্যি সত্যি এই ছেলেটার জায়গায় আমার পালক থাকতো তখন কি হতো? ছেলেটাও তো আমার মতো কোনো এক মায়ের সন্তান । একটু আগেই আমার মনটা যেমন মেয়ের বিপদের কথা ভেবে ছটফট করছিল তেমন তো এই ছেলের মায়ের মনটাও করছে। সন্তানের বিপদের কথা শুনে হয়তো আকাশ ভেঙ্গে পরেছে ছেলেটার মায়ের মাথায়। এক মা হয়ে আমি আরেক মায়ের সন্তানের এমন বিপদে চুপ থাকতে পারবনা। ছেলেটার ফোন থেকে ওর বাড়ির নাম্বার খোঁজে কল দে তাড়াতাড়ি। দেখ ওনারা কোথায় আছে।’

এবারও কোনো জবাব দিতে পারেনি পাপড়ি। চুপচাপ মায়ের হাত থেকে ছেলেটার ফোন নিয়ে নেয়। স্মার্ট ফোনে লক দেওয়া। এটা থেকে নাম্বার বের করা সম্ভব হয় নি। সাথে আর একটা বাটন ফোন ছিল। সেটা ঘেঁটে নাম্বার খুঁজতে গিয়েই চোখে পরল অদ্ভূত এক নাম দিয়ে সেইভ করা একটা নাম্বার। ডায়াল লিস্টে জ্বলজ্বল করছে একদম শুদ্ধ বাংলায় লেখা “বেয়াক্কল” দিয়ে কারো নাম্বার সেইভ করা। ঝটপট নাম্বারটার দিকে দৃষ্টি দিতেই স্তব্ধ হয়ে যায় পাপড়ি।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here