ফিরে_আসা ২১ লেখা : অতন্দ্রিলা আইচ

0
409

#ফিরে_আসা
২১
লেখা : অতন্দ্রিলা আইচ

দুদিন হয়ে গেল কথা পাড়ি দিয়েছে পৃথিবীর আরেক প্রান্তে। এই দুদিন ধরে আরশাদের মনের অবস্থা কেমন কে জানে? নির্ঘাত তার মনের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলে যাচ্ছে প্রবল কালবৈশাখীর ঝড়। অবশ্য তা নাও হতে পারে। এই ছয়টা মাস যে সে একেবারেই মেয়েকে দেখে থাকবে তা নয়। আরশাদ কানাডার ভিসার জন্য আবেদন করেছে। সময় সুযোগ পেলে সে ছুটে যাবে মেয়ের কাছে। নওশীনের সঙ্গে কথাবার্তা বলে ঠিক করা হয়েছে কথা বাংলাদেশে থাকতে যেমন বাবার কাছে এসে থাকতো, এখনও তাই করবে। অরা গিয়ে নিয়ে আসবে তাকে। চিন্তার বিষয় এখন একটাই, এতটা পথ একা একা কী করে যাবে অরা? এর আগে অনেকবার বিদেশে যাওয়া হয়েছে তার। প্রতিবারই আরশাদের শুটিংয়ের কাজে। একা একা যাওয়া হয়নি। এবার কী করে যাবে কে জানে?

আপাতত সেসব নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলবে। অরার আজ ব্যস্ততার শেষ নেই। আজ আরশাদের নতুন সিনেমা ‘কানামাছি’র শুটিং। কথা চলে যাওয়ার পর অশান্ত মনটাকে ব্যস্ত রাখতেই হয়তো আরশাদ হন্তদন্ত হয়ে শুটিংয়ে ফিরেছে। কোনো সিনেমার শুটিংয়ের প্রথম দিনটা সবসময়ই ভয়ে ভয়ে কাটে অরার। আরশাদকে তার বিন্দুমাত্র ভরসা নেই। দেখা গেল যেকোনো মুহূর্তে সে রেগেমেগে সেট থেকে বেরিয়ে গেল। এর আগের সিনেমার শুটিংয়ের প্রথম দিন তার রাগের ঝাঁঝে নায়িকাই বদলে গেল। অবশ্য নায়িকা বদলে যাওয়ার যথাযথ কারণও ছিল।

আজ সেটের অবস্থা অতটা উত্তপ্ত নয়। আরশাদ যথারীতি চুপচাপ নিজের গ্রীন রুমে বসে থাকলেও, শট দিতে আসার সময় স্বাভাবিক থেকেছে। তার থেকেও বড় কথা এই সিনেমার নায়িকার চরিত্রে কোনো দোষ নেই।

নতুন এই সিনেমাটা থ্রিলার ধাঁচের। যদিও ভক্তরা রোমান্টিক চরিত্রে আরশাদকে দেখে অভ্যস্ত, কিন্তু থ্রিলার গল্পেই তাকে সবথেকে বেশি মানায়। এই সিনেমার গল্পটাও দারুন। গল্পে আরশাদ তার কয়েকজন কাছের বন্ধুদের নিয়ে সিলেটে বেড়াতে যায়। রাতের বেলা সবাই মিলে যখন আড্ডা দিচ্ছিল, তখনই আরশাদের সঙ্গে তার এক বন্ধুর বেঁধে যায় তুমুল ঝগড়া। ঝগড়ার প্রবলতা এতটাই বেশি ছিল যে শেষমেশ তা ধাক্কাধাক্কিতে গিয়ে গড়ায়।

ওই রাতে তাদের ঝগড়া থেমে গেলেও, পরদিন সকালে ঘটে যায় এক ভয়ঙ্কর ঘটনা। সকল বন্ধুরা হতবিহ্বল হয়ে খুঁজে পায় আরশাদের সঙ্গে যার ঝগড়া হয়েছিল তার রক্তাক্ত লাশ। সিনেমার স্ক্রিপ্টটা এমন, আরশাদের চরিত্রকে কখনো মনে হবে ভালো আবার কখনো খারাপ। এ ধরনের চরিত্রে আরশাদ ছাড়া কাউকে মানাবে বলে মনে হয় না।

আজ তাদের শুটিং গাজীপুরের এক রিসোর্ট। সিনেমায় নায়ক-নায়িকাদের বাড়ি বলতে আমরা যা দেখি, তা মূলত সুন্দর সুন্দর এসব রিসোর্ট। রিসোর্ট আর ঢাকার খানিক শুটিংপর্ব শেষে, শুটিংয়ের মূলপর্ব শুরু হবে সিলেটে। সিলেটে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তেমন একটা চাপ নেই। এই যেমন আজকে, ধারণ করা হয়েছে মাত্র তিনটি দৃশ্য। অন্যান্য সময় একদিন ধারণ করা হয় পাঁচ থেকে সাতটি দৃশ্য।

এই রিসোর্টের ছাদটা অনিন্দ্য সুন্দর। ছাদের একপাশ জুড়ে দেশি-বিদেশি নানা ফুলের গাছ। প্রায় সবগুলো গাছেই ফুটে আছে রং-বেরংয়ের ফুল। এতসব ফুল একসঙ্গে দেখে মনটাই ভালো হয়ে যায়। ফুল গাছগুলোর পাশে প্রকান্ড এক দোলনা। আজ পূর্ণিমা। অরা ঠিক করে রেখেছিল আজ শুটিং শেষে ছাদে গিয়ে দোলনায় বসে চাঁদ দেখবে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ছাদে প্রবেশ করলো অরা। অন্যমনস্ক থাকার কারণে খেয়াল করেনি রেলিংয়ের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে। আরশাদ সিগারেট ধরিয়ে রেলিংয়ের কাছে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে খেয়াল করার সঙ্গে সঙ্গে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো অরার। একা একা নিজের মতো সময় কাটাচ্ছিল আরশাদ। এমন সময়ে তাকে বিরক্ত করার কোনো মানে হয় না। কিন্তু অরা তো আর ইচ্ছা করে বিরক্ত করেনি। ছাদে আসার পরিকল্পনা তারই আগে ছিল। অরা ভয়ে আছে এক্ষুনি প্রচন্ড এক ধমক খাবে আরশাদের। যদিও আরশাদ চোখমুখ দেখে মনে হচ্ছে না সে রেগে গেছে।

অরা ব্যস্ত ভঙ্গিমায় বলল, “I’m sorry sir.”

আরশাদ স্বাভাবিক গলায় বলল, “সমস্যা নেই অরা, ভালোই হয়েছে এসেছ। তোমার সাথে জরুরি কথা আছে।”

আরশাদের ভাবসাব মোটেই ভালো ঠেকছে না। তাকে বিরক্ত করার মতো গুরুতর অপরাধ করা সত্ত্বেও অরাকে কোনপ্রকার ধমক দিলো না আরশাদ? ব্যাপারটা কী?

অরা আরশাদের কাছে গিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়ে বলল, “কী কথা স্যার?”

আরশাদ সিগারেটে টান দিয়ে বলল, “তুমি না-কি নতুন জবের জন্য ট্রাই করছো?”

অরা আঁতকে উঠে বলল, “না স্যার, কখনোই না। কে বলেছে আপনাকে এমন কথা?”

“মেহেদী। ও বলল, তুমি না-কি বেটার স্যালারির জন্য অন্য জব খুঁজছো?”

“স্যার মেহেদী এক নম্বরের একটা ফাজিল, ওর কোনো কথা বিশ্বাস করবেন না। সেই কবে থেকে একটা হেডফোন চাচ্ছে, আমি এখনো দিইনি বলে ভেবেছে স্যালারি কম পড়ে যাচ্ছে। আসলে সেরকম কিছুই না স্যার। সময় করে উঠতে পারছি না বলে ওর হেডফোন কেনা হয়নি।”

“আমিও এরকমটাই ধারণা করেছিলাম। মেহেদী সারাক্ষণ তোমার নামে এ ধরনের উল্টাপাল্টা কথা বলতেই থাকে।”

অরা ব্যস্ত-উদ্বিগ্ন গলায় বলল, “কী সর্বনাশ! I’m so sorry sir, আমি জানতামই না ও এভাবে আপনাকে বিরক্ত করে।”

আরশাদ শান্ত গলায় বলল, “আমার তো ভালোই লাগে। তোমাদের দুজনের এই বন্ড অনেক স্পেশাল।”

অরা হাসিমুখে বলল, “ওকে দেখলেই আমার ভাইদের কথা মনে পড়ে।”

“তোমার ভাই আছে?”

“সৎ ভাই।”

“ওহ!”

“ওই ছোট ছোট তিনজনকে আমিই সমলাতাম। ছোটবেলা নিয়ে আমার কোনো সুখকর স্মৃতি নেই, কিন্তু যতটুকু আছে সবটাই ওদের ঘিরে। বাবা আর সৎ মা যদিও আমাকে ভালোবাসতো না, কিন্তু ওরা বাসতো খুব।”

“তোমার কষ্টটা আমি বুঝি। It’s not easy to live with childhood trauma.”

অরা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বলল, “চাইল্ডহুড ট্রমা এখন আর আমার নেই স্যার। একটা সময়ে ছিল, কিন্তু এখন কাজে এতটাই ব্যস্ত হয়ে গেছি যে ওসব কথা আর মনে পড়ে না।”

অনেকটা সময় চুপ করে থেকে আরশাদ বলল, “আমার ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছিল। একটা সময় আমার ছোটবেলাটা খুব ভাবাতো আমাকে। মনে হতো আমার কারণেই বাবা আমাদের ফেলে চলে গেছে। ইন ফ্যাক্ট, বাবা চলে যাওয়ার কয়েক বছর পরও এই চিন্তা আমার মধ্যে স্থির হয়েছিল।”

“নিজেকে সামলালেন কী করে স্যার?”

“কাজের মধ্যে ডুব দিয়ে। আমার জীবনের প্রথম সিনেমাটা পাওয়ার জন্য কম কষ্ট করতে হয়নি আমাকে। একটার পর একটা অডিশন দিতাম, ডিরেক্টরদের সঙ্গে দেখা করতাম। এতসব কাজের ভীড়ে ওই স্মৃতিগুলো মন থেকে একেবারেই মুছে গেছে।”

মন খুলে কথা বলার চেষ্টা করলেও শেষমেশ দুজনেই একটা সত্য গোপন করে গেল একে অপরের কাছ থেকে। ছোটবেলার ওই বিস্মৃতিগুলো এখনো একেবারে অদৃশ্য হয়ে যায়নি তাদের মন থেকে। অরা মাঝেমধ্যেই দুঃস্বপ্নে দেখে, তার নতুন মা হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই দিয়ে অনবরত মেরে যাচ্ছে তাকে। সে হাত-পা ছুঁড়ে ছুটে পালানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।

আরশাদের ক্ষেত্রেও তাই। সারাজীবন বাবার চলে যাওয়ার জন্যে যেমন নিজেকে দুষেছে, তেমনই আজ ছোট-বড় যেকোনো সমস্যায় নিজেকে দোষী মনে করে সে। এজন্যেই হয়তো ডিভোর্সের সেই ভয়ানক স্মৃতিগুলো মনে পড়লে সব দোষ নিজের ঘাড়েই এনে ফেলে আরশাদ।

শৈশবে মানুষের মন নরম কাদামাটির মতো থাকে। তাকে যে আকৃতি দেওয়া হোক না কেন, সে সারাজীবনের জন্যে সেই আকৃতি ধারণ করে। শৈশবে সেই নরম মন যদি কোনপ্রকার আঘাত পায়, তবে তাকে সারাজীবনের জন্যে এই আঘাত বয়ে বেড়াতে হয়।

কানাডার ঘড়িটা বাংলাদেশের থেকে দশ ঘন্টা পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশে এখন রাত এগারোটার কাছাকাছি, আর ওখানে বেলা একটা। হালকা বেগুনি রঙের জ্যাকেট গায়ে জড়িয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল নওশীন। এই বাড়িটা তার বাবার করা। নওশীনের অভিনয়জীবন নিয়ে তার আপত্তির শেষ ছিল না। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে কেউ মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করলেই তিনি অস্বস্তিতে পড়ে যেতেন। মনে হতো যেন, এখনই মেয়ের কারণে তাকে হেও-প্রতিপন্ন হতে হবে।

নওশীনের প্রতি একপ্রকার রাগ নিয়েই তিনি মেয়ের থেকে দূরে সরে যান। চলে আসেন কানাডায়। যদিও শেষমেশ বাবা-মেয়ের মধ্যকার শীতলতা উবে যায়। বাবার জীবনের শেষ দিনগুলো নওশীন তার পাশেই ছিল। বাবার চলে যাওয়ায় পর নওশীনের মা এই বাড়িটা নিয়েই একাই থাকেন। নওশীন যদিও অনেকবার বলেছে দেশে গিয়ে তার কাছে থাকাতে, তিনি শোনেনি।

এতদিন পর নওশীন কানাডায় এসেছে মূলত মায়ের সেবা করতে। বহুদিন হলো তার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। একটা বয়সের পর নিজের শরীর নিজের কাছেই কেমন অচেনা হয়ে ওঠে। সামান্য সর্দি-কাশি হলেও সেরে উঠতে অনেক সময় লাগে। সেখানে তার মায়ের একটার পর একটা অসুস্থতা লেগেই রয়েছে।

মাকে দেখতে আসার পাশাপাশি তার আগমনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য রয়েছে। নওশীন বহুকাল পর দেখা করতে এসেছে একজনের সঙ্গে। যে মানুষটা তার জীবনে না এলে হয়তো আজ অন্য এক মোড়ে থাকতো তার জীবন। যে মানুষটার কারণেই তার জীবনে এসেছে ভয়ঙ্কর প্রলয়। কবির।

কবির কানাডায় স্থায়ী হয়েছে দু বছর হলো। নওশীনের ধারণা, একপ্রকার পালিয়ে এসেছে সে। কবিরের সঙ্গে তার হিসাব-নিকাশ বাকি আছে এখনো। সেই অপূর্ণ হিসাব পূরণ করার ভয়েই হয়তো পালিয়ে এসেছে সে। নওশীনও এর মাঝে আর যোগাযোগ করেনি তার সঙ্গে। যে মানুষটা তার এত বড় ক্ষতি করে দিলো, তার সঙ্গে আবার যোগাযোগ কীসের?

কফি শপে প্রবেশ করতেই নওশীন দেখা পেল কাঙ্ক্ষিত মানুষটার। কবিরকে এক পলক দেখেই বিষিয়ে গেল তার মনটা। মনে পড়ে গেল তার সঙ্গে কাটানো প্রতিটা মুহূর্তের কথা।

নওশীন টেবিলের কাছে এগিয়ে যেতেই কবির উঠে দাঁড়িয়ে আহ্লাদী গলায় বলল, “নওশীন হক! কতদিন পর তোমাকে দেখার সৌভাগ্য হলো।”

নওশীন কোনো জবাব দিলো না তার কথার। চুপচাপ গিয়ে বসলো কবিরের মুখোমুখি থাকা চেয়ারটায়।

কবির বসতে বসতে কৌতূহলী গলায় বলল, “আচ্ছা? ডিভোর্সের পরেও নামের সাথে হকটা রেখে দিয়েছ কেন?”

নওশীন কঠিন গলায় বলল, “That’s none of your business.”

নওশীন মোটেও হাসির কোনো কথা বলেনি। তবুও সশব্দে হেসে উঠলো কবির। হাসি প্রখরতা এতটাই বেশি যে আশেপাশের টেবিল থেকে সকলে ঘাড় ঘুরিয়ে বিরক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।

নওশীন ভ্রু কুঁচকে বলল, “হাসছো কেন?”

“তুমি আসলেও তুখর অভিনেত্রী। তোমার মতো ভালো অভিনেত্রী বাংলাদেশে দ্বিতীয়টা আছে কিনা সন্দেহ।”

“মানে কী?”

“তোমার ইন্টারভিউ দেখি আমি। সবসময় শাড়ি পড়বে, চুলগুলো পরিপাটি করে রাখবে, ঠোঁটে সর্বক্ষণ একটা হাসি লেগে থাকবে – যাকে বলে আদর্শ ভদ্র মেয়ে। অথচ ভদ্রতার আড়ালে যে কী ভয়ঙ্কর একটা মানুষ পুষে রেখেছ তুমি, সেটা যদি কেউ জানতো!”

নওশীন বিরক্ত গলায় বলল, “কবির দেখো, তোমার ফালতু কথা শোনার মতো সময় বা ইচ্ছা কোনোটাই আমার নেই। আমি একটা জরুরি কথা বলতে এসেছি।”

“তাই তো দেখছি। আমার প্রতি তোমার টান এখনো কমলো না। সেই টানেই তো বাংলাদেশ থেকে কানাডায় চলে এলে!”

নওশীন দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “তোমার সাথে আমার যা ছিল তা শুধুই একটা ভুল।”

কবির শীতল গলায় বলল, “ভুল? তাই না-কি? কিন্তু ভুলটা করার সময় তো একবারের জন্য মনে হয়নি ভুল করছো।”

“চুপ করো কবির।”

“তুমি ঠিক আগের মতোই আছ নওশীন। সেই একই তেজ, একই চোখ, একই ঠোঁট।”

“তুমি কিন্তু এবার লিমিট ক্রস করছো কবির।”

কবির অদ্ভুত হাসি হেসে বলল, “লিমিট তো সেই কবেই ক্রস করেছি। ভুলে গেছ?”

নওশীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “দেখো আমি আবারও বলছি, তোমার সাথে আমার যা ছিল তা কেবলই ভুল। মানুষ ইচ্ছা করে ভুল করে না, আমিও করিনি।”

“আচ্ছা, মানলাম। কই? তোমার জরুরি কথাটা বলো শুনি।”

নওশীন পরিষ্কার গলায় বলল, “আমি আমার শাদকে ফিরে পেতে চাই, যেকোনো মূল্যে হোক। যেহেতু তুমি আমার সংসারটা ভেঙেছো, তাই জোড়া লাগাতে আমার তোমার হেল্প চাই।”

কবির কৃত্রিম হাসি হেসে কঠিন স্বরে বলল, “আমি তোমার সংসার ভাঙ্গিনি সুইটহার্ট! তুমি নিজেই নিজের সংসার ভেঙেছো।”

নওশীন তেজী গলায় বলল, “আচ্ছা? যে কথাটা শাদ কোনোদিনও জানতে পারতো না, সেটা তো তোমার কারণেই জেনেছিল।”

“আমার কাছে যা ঠিক মনে হয়েছিল আমি তাই করেছি। আফটার অল, আমিও আরশাদ হকের অনেক বড় ফ্যান। আমার চোখের সামনে, আমার সুপারস্টারকে কেউ ঠকাবে আর আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবো তা তো হয় না।”

নওশীন তীক্ষ্ণ গলায় বলল, “সবই তোমার বাজে কথা। তুমি চেয়েছিলে আমি যেন আমার সংসার ছেড়ে তোমার কাছে চলে যাই, তোমাকে বিয়ে করি। যখন দেখলে আমি কিছুতেই তোমাকে বিয়ে করবো না, তখনই সব বলে দিলে শাদকে।”

“তোমার যা ইচ্ছা তাই ভাবতে পারো, আমার কিছুই যায় আসে না।”

“আমারও যায় আসে না। কাজের কথায় আসি। আমাকে ছোট্ট একটা হেল্প করে দাও, জীবনে কোনদিন আর তোমাকে বিরক্ত করবো না।”

“কী হেল্প?”

“তুমি আমার সাথে বাংলাদেশে ফিরে যাবে। শাদকে গিয়ে বলবে যখন আমি তোমার সাথে ইনভলভড ছিলাম, তখন আমি স্বাভাবিক ছিলাম না। I was on drugs. আর আমাকে ড্রাগ নিতে বাধ্য করেছিলে তুমি।”

কিছুটা সময় চুপ করে থেকে কবির অবাক গলায় বলল, “আর কত একটা মানুষের ভালো মানুষীর সুযোগ নেবে নওশীন? তোমার ধারণা আমি গিয়ে আরশাদের কাছে সত্যের মতো করে কতগুলো মিথ্যা কথা বলে দিলেই ও মন গলতে শুরু করবে। হয়তো করবেও।”

চুপ করে রইল নওশীন। কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যা সে নিজেও বুঝতে পারছে না। কঠিন সত্যির মুখোমুখি হওয়ার সাহস নেই বলেই হয়তো সবসময় মিথ্যাকে আপন করে নিয়েছে সে।

“খালার কাছে শুনেছি তুমিই না-কি আগ বাড়িয়ে ডিভোর্সের কথা বলেছো? তাহলে এখন আবার এক হতে চাইছো কেন?”

নওশীন বলল, “ওই সময়ে আমার মাথা কাজ করছিল না। ভেবেছিলাম শাদকে আমার একটু স্পেস দেওয়া দরকার। কিন্তু আমার মন থেকে ওর নাম কখনোই মুছে যায়। আমি আজও ওকে প্রথম দিনের মতো ভালোবাসি।”

“ভালোবাসার মানুষকে স্পেস দিতে হলে ডিভোর্স নিতে হয় না-কি? আমার ধারণা তুমি কোনোদিন তাকে ভালোই বাসনি। আরশাদ তোমার সিঁড়ি। যে সিঁড়ি ব্যবহার করে তুমি ক্যারিয়ারে উপরে উঠতে চাও। তাই না?”

“তুমি কি আমাকে হেল্পটা করবে?”

কবির নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল, “আমার বাচ্চা নষ্ট করে আবার আমারই হেল্প পাবার আশা কী করে করো তুমি?”

“আমি তোমাকে এর আগেও বলেছি, বাচ্চাটা আমি নষ্ট করিনি। আমার মিসক্যারেজ হয়েছিল।”

“তোমার একটা কথাও আমি বিশ্বাস করি না, নওশীন হক। সারাজীবন তুমি কেবল নিজের স্বার্থের কথা ভেবে গেছ। অন্য কাউকে খুঁজে নাও যে তোমাকে হেল্প করতে পারবে। যদিও
আরশাদকে তুমি এ জীবনে ফিরে পাবে না।”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here