মিশেছো_আলো_ছায়াতে #Writer_Sintiha_Eva #part : 43

0
376

#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 43

🍁🍁🍁

শহর জুড়ে উত্তেজনার ঝড় উঠেছে। দুদিন পর এমপি পদের নির্বাচন। অথচ আজই টিভির প্রতিটি চ্যানেলে উঠেছে ঝড়। বর্তমান এমপি নিজামুল হক মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। পার্টি অফিসের সামনে পুলিশের গাড়িসহ আছে জার্নালিস্ট রা। টিভির ভেতর এক মেয়েলি কন্ঠস্বর শুনে নিজামুল হক পুনরায় টিভির দিকে দৃষ্টিপাত করে।

_ দুদিন পরই শুরু হবে প্রতিটি কেন্দ্রে ভোট গণনা। অথচ তার আগেই বর্তমান এমপি মিস্টার নিজামুল হকের কালো ব্যবসার প্রতিটা খবর এসে পৌঁছেছে জার্নালিস্ট দের কাছে। একজন জননেতার এহেন ঘৃণ্য রূপ সাধারণ জনগণের মাঝে সৃষ্টি করেছে ক্ষোভের। সাধারণ জনগণের এখন একটায় দাবি এমপি পদে পুনরায় দাঁড়ানোর অধিকার উনার থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হোক। সবার এখন একটাই প্রত্যাশা মিস্টার নিজামুল হক তাঁর প্রাপ্য শাস্তিটুকু যেনো পাই। আন্ডারগ্রাউন্ডের বড়ো মাফিয়া এন.কে এর সাথে জড়িত বিষয়ে মিস্টার নিজামুল হকের উপর জনগণের আক্রোশের সীমা আকাশ ছোঁয়া। এদিকে মিস্টার নিজামুল হক পার্টি অফিসে মুখ লুকিয়ে বসে আছে। তাহলে,,,

বাকিটুকু না শুনেই নিজামুল হক রেগে টিভির দিকে ফ্লাওয়ার ভার্স ছুঁড়ে মারে। ফলস্বরূপ টিভি ভেঙ্গে যায়। নিজামুল হক রেগে কিড়মিড় করে ফোন হাতে নেয়। ফোন লাগায় কারোর কাছে।

অনিল : ম্যাম কাজ হয়ে গেছে।

সিমথি : গুড জব অনিল। এবার বাকিটা আমি সামলে নেবো আমার কাকা শ্বশুর কে দিয়ে

অনিল : ওকে ম্যাম।

সিমথি : কিছুক্ষণের মধ্যেই ফোন আসবে। অপেক্ষা করো।

সিমথি হেসে অনিলের দিকে তাকিয়ে পুনরায় টিভির দিকে দৃষ্টিপাত করে। ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে পৈশাচিক হাসি। আচমকা সিমথির ফোন বেজে উঠায় অনিল হেঁসে মাথা নাড়িয়ে। সিমথি ঠোঁট চেপে হাসি আটকে ফোন কানে ধরে।

সিমথি : শেইম অন ইউ এমপি আঙ্কেল। আপনার এই নৃশংস রূপ টা আমাকে ভয়ানক ভাবে আঘাত করেছে। কিভাবে পারলেন এটা করতে। ছিহ আঙ্কেল ছিহ।

নিজামুল হক : নাটক করো না সিমথি। আই নো ইট ভেরি ওয়েল। সব কিছু তোমার কারসাজি। নির্বাচনের দুদিন আগে ইচ্ছে করে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করেছো তাই না। ( রেগে চিল্লিয়ে)

সিমথি : হুশশশ। চেঁচাবেন না। আপনি বুদ্ধিমান ব্যক্তি। ঠিক জায়গায় ফোন করেছেন। ইয়েস মিস্টার হক এসব কিছু আমি করেছি। বলেছিলাম না এমন সময় আঘাত করবো ঔষধ লাগানোর সুযোগ পাবেন না।

নিজামুল হক : কাজ টা ঠিক করো নি। পস্তাতে হবে

সিমথি : আরেহ আপনাদের সবার দেখি একই ডায়লগ পস্তাবে হবে। তা কি করবেন। আর কিছুক্ষণের মধ্যে পার্টি অফিসে পুলিশ এসে হিড়হিড় করে টানতে টানতে নিয়ে যাবে। নিজেকে বাঁচাতে চেষ্টা করবেন নাকি আমার জীবনের দিকে নজর দেবেন।

সিমথির তাচ্ছিল্য বাণীতে নিজামুল হক রেগে পায়চারি শুরু করে। চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে। একটা চার্জ আসেনি ওর উপর। এতোবছরের সব চার্জ এসেছে। এসবই উনার ক্যারিয়ার নষ্টের জন্য যথেষ্ট। তারমধ্যে এন.কে নামক আন্ডারগ্রাউন্ডের বড় কালো ব্যবসায়ীর সাথে হাত রয়েছে। এতে করে ছাড় পাবার কোনো উপায় নেই। সিমথি যখন একবার এই সময় আঘাত করেছে তারমানে সিমথির কানে প্ল্যান বি এবং সি দুটোই রেডি। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনোভাবে বাঁচার চান্স নেই। নিজামুল হককে চুপচাপ দেখে সিমথি শব্দ করে হাসে। সিটি বাজাতে বাজাতে ফোন কেটে দেয়। আঘাত জায়গা মতো দিয়েছে বাকিটা উপরমহলের দায়িত্ব।

সিমথি : অনিল বাড়ি যাও। আমি ও যায়।

অনিল : চলুন ম্যাম আপনাকে ড্রপ করে দেয়। গাড়ি আনেননি তো

সিমথি : না অনিল। আমি রিকশা করে চলে যাবো। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। তুমি বাড়ি যাও। আমাকে তোমাদের স্যারের অফিসে যেতে হবে। তোমার স্যার ম্যামের উপর গাল ফুলিয়ে বসে আছে। এখন আমাকে তো খসরত করতেই হবে। বাই বাই। বাড়ি গিয়ে চিল করো।

অনিল হেসে উঠে। সিমথি ও হেসে বেরিয়ে যায়। মেজাজ ফুড়ফুড়ে হলেও মনটা একটু খারাপ। কারণ টা হচ্ছে আদি। সকালে সামান্য একটা কথা নিয়ে কথা কাটাকাটি হওয়ার এক পর্যায় আদি রেগে মেগে সিমথিকে ধমক মারে। রাগের মাথায় সিমথি আদিকে কিছু না বলেই হসপিটালে চলে আসে সকাল সকাল। অন্যদিন দশটায় আসলেও আজ এসেছে আটটায়। এতে বাড়ির সবাই জিজ্ঞেস করলেও এড়িয়ে এসেছে। কিন্তু হসপিটালে এসেই তুহিনদের কাছে ধরা পড়ে গেছে। সারাদিনে আদিও ফোন বা টেক্সট করেনি। রাগে সিমথিও আগ বাড়িয়ে কিছু করেনি। কিন্তু এখন আর মনে রাগ নেই। তাই আগ বাড়িয়ে কিছু করলেও প্রবলেম নেই। মেজাজ ভালো তো দুনিয়ার সব ভালো। সিমথির রিকশা এসে আদিদের অফিসের সামনে থামে। ভাড়া মিটিয়ে ভেতরের দিকে হাঁটা লাগায়। ফোর্থ ফ্লোরের লিফটের বাটনে চাপ দিয়ে গুন-গুন করে। লিফট থামতেই সিমথি লিফট থেকে বেরুতেই শাওনের মুখোমুখি হয়। শাওন একজন এমপ্লয়ির ডেক্সের সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকজনের সাথে কথা বলছে। হঠাৎ শাওনের চোখ সিমথির দিকে পড়তেই শাওনের কথা কন্ঠনালিতেই আটকে যায়। ভ্রু কুঁচকে উচ্চস্বরে সিমথিকে ডেকে ওঠে।

শাওন : সিমথি। এদিকে আয়।

শাওনের ডাকে সিমথি আলতো হেসে শাওনের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। আশেপাশে সবার চোখ সিমথির দিকে পড়তেই টাস্কি খায়। সিমথির কপালের ঘামটুকু এসির হাওয়ায় গায়ের সাথে মিলিয়ে যায়।

শাওন : তুই এখানে কি করছিস। হঠাৎ এনি প্রবলেম।

সিমথি : সমস্যা তো আছেই।

শাওন : কি হয়েছে বল আমায়। কেউ কিছু বলেছে। ( চিন্তিত স্বরে)

শাওনের কথায় সিমথির হাসি পায়। ছোট বাচ্চাকে মানুষ যেমন জিজ্ঞেস করে কেউ কিছু বলেছে কিনা শাওনের প্রশ্ন করা ভঙ্গিমা টা তো তেমনই ছিলো। সিমথি হাসিটা ভেতরে দমিয়ে নিচু স্বরে শাওনের কানের কাছে গিয়ে বলে,,,

সিমথি : সমস্যা তো আপনার ভাই করেছে।

সিমথির কথায় শাওন ভ্রু কুঁচকায়। কথার মানে না বুঝতে পেরে বোকার মতো তাকায়। সিমথি আড়চোখে সবার দিকে তাকিয়ে দেখে সবাই ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। সিমথি হাল্কা কেশে সবার দিকে দৃষ্টিপাত করে শাওনের কানেকানে বলে,,,

সিমথি : আমি কি এলিয়েন ভাইয়া৷

শাওন : কেনো ( হতভম্ব হয়ে)

সিমথি : সবাই এভাবে দেখছে কেনো।

সিমথির কথায় শাওন হাসে। সবার উদ্দেশ্য সিমথিকে ইঙ্গিত করে বলে,,,,

শাওন : এটেনশন গাইস আপনারা সবাই ওকে চিনেন । তবে কেউ কেউ ওর সাথে আমার সম্পর্ক টা ও জানেন। যারা জানেনা তাদের উদ্দেশ্য বলছি। ও হচ্ছে আপনাদের আদি স্যারের ওয়াইফ সিমথি জাহান সিয়া। আমার বোন।

শাওনের কথায় সবাই সিমথির দিকে তাকিয়ে হেসে কৌশল বিনিময় করে। সিমথি মিষ্টি হেসে সবার সাথে কথা বলে। সিমথির এমন মিষ্টি স্বভাবে সবাই হকচকায়। কারণ সিমথির পরিচয় পুরো শহরেই একজন কি/লা/র কুইন।

সিমথি : ভাইয়া আপনার ভাই কোথায়।

শাওন : ও তো মিটিং রুমে।

সিমথি : এ্যাঁ এখন আবার কিসের মিটিং।

শাওন : আর বলিস না ক্লায়েন্ট রা এসেছে। বাবা-চাচা সবাই ওখানে।

সিমথি : তো তুমি এখানে মেয়েদের সাথে কি করো। মেহের আপুকে জানাবো ( ভ্রু উঁচিয়ে)

শাওন হকচকিয়ে সিমথির হাত টেনে আদির কেবিনের দিকে অগ্রসর হয়।

শাওন : মা/র/তে চাস নাকি। আমি মোটেও মেয়েদের সাথে কথা বলছিলাম না। দরকারি কথা বলছিলাম।

সিমথি : হুম হুম বুঝি আমি।

শাওন : মেঝো মা ঠিকই বলে তুই আসলেই ফা/জি/ল হয়ে গেছিস আদির পাল্লায় পড়ে।

সিমথি : তোমার ভাই কি শুধু আমাকে ফাজিল বানিয়েছে আরো কত কি বানালো ভবিষ্যতে কত কি বানাবে গড নোজ ( মনে মনে)

শাওন : নে তোর বরের কেবিন। তুই বোস আমি ওকে ডেকে দিচ্ছি।

সিমথি : না থাক। উনার শেষ হলে নিজেই আসবে তো। তুমি বলো না।

শাওন : ওক্কেহ।

প্রায় আধঘন্টার পর আদি নিজের কেবিনে আসে। মিটিং টা ফাইনালি সাকসেস হয়েছে। আদি কেবিনে এসে নিজের ফোনের দিকে তাকায়। নো ফোন নো ম্যাসেজ। বাহহ।

আদি : একটু ধমকালাম আর ম্যাডামের গাল ভরে গেছে। সারাদিন রাত যখন আদর করি তখন কিছু না। পাষাণ মহিলা একটা।

সিমথি : সারাদিন কি আপনার কাছে থাকি নাকি আদর খাওয়ার জন্য।

আদি : তুই থাকলেই হয়।

সিমথি : যাহ নির্লজ্জ।

আদি : হ্যাঁ আমি নির্লজ্জ আর তুই ভা,,,,

আচমকা আদির হুশ ফিরে একা একা কার সাথে বকবক করছে। কেবিনে তো ও একা। তাহলে। কথাটা মনে মনে আওড়িয়ে পেছনে তাকাতেই বড়সড় একটা ধাক্কা খায়। সিমথি দুই বাহুতে হাত গুঁজে আদির দিকে তাকিয়ে আছে। আদি নিজের ভ্রম ভেবে জোরে জোরে মাথা ঝাকায়৷ অতঃপর চোখ খুলে আবারো তাকায়। নাহ এটা তো ভ্রম না তার মানে সত্যি সিমথি এসেছে।

সিমথি : কি ঝটকা খেলেন নাকি।

আদি : তুমি এখানে কেনো।

সিমথি : তো কি আপনার দ্বিতীয় পক্ষের আসার কথা।

সিমথির কথায় আদি ভ্যাবাচ্যাকা খায়। আদির অবস্থা দেখে সিমথি ঠোঁট চেপে হাসে।

আদি : ওয়াট রা/বি/স

সিমথি : বাহ আজকাল আমি রা/বি/স। তা আমিষ টা কি আপনার দ্বিতীয় পক্ষ।

আদি : কি বাচ্চামো করছিস।

সিমথি : বাচ্চামো কোথায় করছি। আমি কি আপনার গাল টানছি নাকি পাপ্পি দিচ্ছি।

আদি : এটা না চাইলে জীবনেও দিবি না। ( বিড়বিড় করে)

সিমথি চোখ বুঁজে হাসে। জোরে একটা শ্বাস নিয়ে আদির কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। দূরত্ব টুকু গুছিয়ে পা উঁচু করে আদির গালে হাত রাখে। অতঃপর ডান গালে নিজের অধরজোড়া চেপে ধরে। পর পর বাম গালেও তাই করে। একে একে পুরো মুখে নিজের অধরজোড়া ছুঁইয়ে সরে দাঁড়ায়। আদিকে থমকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সিমথি হাসে।

সিমথি : আমি কাছে আসলেই তো থমকে যান আর রোমান্টিক থাকলে তো আপনাকে হসপিটালাইজড করতে হবে।

সিমথির কথায় আদির হুশ ফিরে হাত আপনাআপনি গালে চলে যায়। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথিকে হাসতে দেখে আদি মাথা চুলকে অন্যদিকে তাকায়।

সিমথি : আপনি জিতে গেছেন আমাকে পেয়ে । নিজে রাগ দেখিয়ে নিজেই আমাকে বাধ্য করলেন রাগ ভাঙাতে। হায় রে কপাল আমার। আজকাল রাগ করেও শান্তি নেয়। কেউ কেউ দুর্বলতা বুঝে মুখ বুঁজে থাকে। তারজন্যই বলে কাউকে নিজের দুর্বলতা বুঝতে দিতে নেই। তাহলে,,,,

সিমথি থমকায়। আদির অপ্রত্যাশিত ছোঁয়ায় সারাদেহে কাঁপন ধরে যায়। আবেশে চোখ বুঁজে আদির শার্টের কলার খামছে ধরে। ফলে আদির হাতের বন্ধন চুলের ভাঁজে আরো জোড়ালো হয়।

___________________

ইশানের বাবা : তুই একে একে যেই আগুন চাল চালছিস পুলিশ ডিপার্টমেন্ট হতভম্ব হয়ে যাচ্ছে।

ইশানের বাবার কথায় খাওয়ার মাঝেই সিমথি হেসে উঠে। ইশানের বাবা হেসে বলে,,,,

ইশানের বাবা : ওই নিজামুল হক কিন্তু বড় ফাঁসান ফেঁসেছে।

সিমথি : ফাঁসার মতো কাজ করলে ফাঁসবে। শুনলাম তোমাদের থানাতেই নাকি ওনাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ইশানের বাবা : হুমম। বেচারা জনগণের হাতে মা/র খেয়েছে দারুণ।

সিমথি : যার যেটা প্রাপ্য।

ইশানের বাবা : তুই ডাক্তার না হয়ে সিআইডি বা আর্মিতে জয়েন করতে পারতি।

সিমথি : ইইই না। চো/র মা/স্তা/নের পেছনে দৌড়ানোর থেকে হার্টের অপারেশন করা ভালো।

ইশানের মা : ইটিং করতে সিটিং করেও ওয়ার্কের টকিংটুকিং। আহ হটিং

ইশানের মায়ের বাংলিশ কথায় সিমথি আর ইশানের বাবা শব্দ করে হেঁসে দেয়। বাকিরা মুচকি হাসে।

ইশানের মা চোখ মুখ কুঁচকে বলে,,,

_ ডোন্ট হাসাহাসি মি

চলবে,,,,,,

( গল্প দ্রুত এগুবে এখন। ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here