#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 54
🍁🍁🍁
সেদিন আদি জ্ঞান হারানোর পর ডক্টর চেক করে জানায় অতিরিক্ত মানসিক প্রেশারে জ্ঞান হারিয়েছে। আদিকে ঘুমের ইনজেকশন পুষ করে কেবিনে শিফট করে দেওয়া হয়। বাইরের পরিবেশ তখনও কান্নারত। আচমকায় সিমথি জোড়ে শ্বাস নিয়ে উঠে। হাত-পা কাপতে শুরু করে। সবাই চমকে সিমথির দিকে তাকায়। ডক্টর নিহা দ্রুত সিমথির পালস চেক করে।
ড.নিহা : ইট’স এ্যা মিরাকেল সিমথি ম্যামের পালস চলছে। একটু আগেও উনার পালস পাওয়া যাচ্ছিলো না। নার্স আপনারা দ্রুত উনাকে ওটিতে নিয়ে যান।
ড.নিহার কথায় সবার মাঝেই আশার আলো দেখা যায়। এবার হয়তো সিমথি বেঁচে যাবে। সব ঠিকঠাক হবে। সবাই মনে প্রাণে উপরওয়ালা কে ডাকতে আরম্ভ করে। উপরওয়ালা ওদের কথা শুনে। সিমথির জীবন তো বাঁচিয়ে দেয় কিন্তু বাহ্যিক কার্যাবলি বন্ধ হয়ে যায়। টানা আড়াই ঘন্টা পর যখন ওটির দরজা খোলা হয় তখন সবাই একবুক আশার আলো নিয়ে ড.নিহারসহ রোদেলার দিকে তাকায়। দুজনের চোখ-মুখ দেখেই সবাই ভয় পেয়ে যায়৷ রোদেলা সবাই কে পাশ কাটিয়ে চেয়ারে গিয়ে বসে দুহাতে মুখ গুঁজে কেঁদে ওঠে। ড.নিহা রোদেলার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে নিজেই সবটা ক্লিয়ার করে।
ড.নিহা : দেখুন উনার তিনটে গুলি হার্টের থেকে ইঞ্চি খানেক নিচে লেগেছিলল। আপাত দৃষ্টিতে যা দেখে সবাই ভাববে গুলিট হার্টে লেগেছে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। হার্টে কিছুটা নিচে লাগায় উনি প্রাণে তো বেচে গেলেন কিন্তু অতিরিক্ত ব্লিডিং এর জন্য উনি কোমায় চলে গেছেন। উনি যখন গু/লি খেয়ে নিচে পড়ে তখন উনার মাথায় আঘাত লাগে ফলে ব্যাড ইফেক্ট হয়ে ব্রেন আপাতত অচল হয়ে পড়েছে। ফলস্বরূপ বাহ্যিক কার্যাবলি উনার বন্ধ হয়ে গেছে। এখন উনি কোমা থেকে কবে ফিরবে সেটা ঠিক বলা যাচ্ছে না। কারণ এমন প্রেশেন্টরা সাধারণত কোমা থেকে ফিরে না। তবে আমরা বাইরের ডক্টরদের সাথে কন্টাক্ট করার চেষ্টা করছি। ভেঙে পড়বেন না। কিছুক্ষণ পরই উনাকে কেবিনে শিফট করা হবে। এক্সকিউজ মি।
ড.নিহার কথায় সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। প্রায় ঘন্টা খানেক পর আদির জ্ঞান ফিরলে সিমথিকে না দেখে পা/গ/লামি করলে শাওন আদিকে সিমথির ব্যাপারে জানায়। সবটা শুনে আদি থম মেরে যায়। আদিকে হঠাৎ চুপ হয়ে যেতে সবাই ঘাবড়ে যায়। আচমকা আদি ওর মায়ের কোলে মুখ গুঁজে কেঁদে ওঠে।
আদি : ও মা তোমার মেয়ে আমার সাথে সবসময় অবিচার করে কেনো। ওকে তুমি বকে দেবে। ও সবসময় আমার সাথে এমন করে। এখন দেখো কিভাবে ঘুমাচ্ছে অথচ আমার ঘুম আসবে না মা। ও মা ও এমন কেনো। কি হতো সবটা পুলিশের হাতে ছেড়ে দিলে। কতগুলো র/ক্ত গেলো। ওর রক্ত এখনো আমার শরীরে মা। ও মা আমার না শ্বাস নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। ওকে বলো না যেনো তাড়াতাড়ি ফিরে আসে। ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না মা। মা গো ওকে এনে দাও না মা। ও মা দাও না।
বাচ্চাদের মতো আদিকে কাঁদতে দেখে সবাই সেদিন কেঁদে ছিলো। একপর্যায় আদি চুপচাপ হয়ে যায়। কান্না ও থেমে যায়। সিমথিকে কেবিনে শিফট করা হলে আদি সিমথির কেবিনে যায়। সিমথি নির্জীব শরীরটার দিকে তাকিয়ে শুকনো হাসে। পেটের উপর রাখা হাত টা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ভালোবাসার পরশ বুলায়। হাতটা গালের সাথে লাগিয়ে সিমথির দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায়।
আদি : তুই ফিজিক্যালি আমার সাথে নেই তো কি হয়েছে। তুই বলেছিলি না আমরা মেন্টালি এক। মনের দিক দিয়ে আমরা দুজন মিলে একজন। আমি জানি সিয়াজান তুই ফিরবি। আমার জন্য তোকে ফিরতে হবে। আমরা এক ছাঁদের নিচে থাকতে না পারি এক আকাশের নিচে তো শ্বাস নিচ্ছি। এটাই আমার জন্য অনেক। আমি তোর জন্য অপেক্ষা করবো জান। ফাঁকি দিস না প্লিজ। তাহলে সেদিন আমিও চলে আসবো তোর কাছে এটা তোর জামাইজানের প্রমিস।
আচমকা পেছন থেকে দুটো হাত জড়িয়ে ধরায় আদির ধ্যান ভাঙ্গে। হাত দুটো ধরে নিজের সামনে নিয়ে আসে। সিমথি হেসে আদির দিকে তাকায়। কিন্তু মুহূর্তেই আদি চোখে পানি দেখে হাসি ঘায়েব হয়ে যায়। ব্যস্ত স্বরে বলে উঠে,,,,
সিমথি : জামাই জান কি হয়েছে। কাঁদছো কেনো।
আদি : কাঁদছি না তো চোখে ধুলো পড়েছে।
সিমথি : আমাকে বুঝাতে আসো। কি হয়ে বলো।
আদি : কিছু না।
সিমথি : বলবে না তো। ঠিক আছে। বলতে হবে না।
সিমথি রাগ দেখিয়ে চলে যেতে নিলে আদি সিমথির হাত টেনে ধরে। সিমথিকে নিজের সাথে মিশিয়ে বলে,,,,
আদি : এতো রাগ দেখাস কেনো আমার সাথে।
সিমথি : তো কি পাশের বাড়ির রফিকের সাথে দেখাবো।
আদি : এই রফিক টা আবার কে।
সিমথি : জানিনা। কথার কথা।
আদি : ওহ। তোকে আজ সুন্দর লাগছে।
সিমথি : আগের থেকে কালো হয়ে গেছি, চুল অর্ধেকই নেই আর আপনি বলছেন আমাকে সুন্দর লাগছে। ফ্লাটবাজ
সিমথির কথায় আদি সিমথির দিকে তাকায়। কথা ঠিক। ফর্সা মুখ আগের থেকে কিছুটা উজ্জ্বলতা হারিয়ে গেছে। সিল্কি চুলগুলোও কেমন হয়ে গেছে। আদি সিমথির কপালে নিজের কপাল ঠেকায়।
আদি : আমার কাছে তুমি সব সময় সুন্দর সিয়াজান। আমি তোর রূপের প্রেমে পড়িনি পাগলামির প্রেমে পড়েছি। তোর কথার প্রেমে পড়েছি। রূপ সারাজীবন থাকে না সোনা। কিন্তু তোমার পাগলামি, কথাগুলো সারাজীবন থাকবে। আর আমি প্রতিবারই তোমার প্রেমে পড়বো।
সিমথি : কাব্যিক কথা রাখেন। আমার উত্তর তো দিলেনই না। সমস্যা নেই। আমি তোমার চোখের ভাষা বুঝি। তাই লুকিয়ে লাভ নেই। আপনি সেদিনে ক,,
আদি : হুশশশ। এসব কথা মনে রাখতে চাইনা সিয়াজান। তুই ব্যতিত দিনগুলো আমার কাছে কেমন তা কেবল আমি জানি। এতোকিছুর পর তোকে ফিরে পেয়েছি আবার হারালে আমি সত্যি ম,,
সিমথি : বাজে কথা বলবে না আদি। সাত মাসে কেমন সন্ন্যাস হয়ে গেছেন দেখেছো। মনে হচ্ছে প্রেমে ছেঁকা খেয়ে বেকা হয়ে গেছেন।
আদি : প্রেম করতে দিলে কই।
সিমথি : করার শখ আছে।
আদি : ছিলো বাট এখন
সিমথি : এখন
আদি : এখন মন চাইছে তোর সাথে একটু রোমান্স করতে।
সিমথি : ধ্যাত ছাড়ুন। সবসময় এসবই মাথায় ঘুরে তাই না।
আদি : আরে ফাজলামো না সত্যি।
আদি সিমথির ঠোঁটের দিকে এগোয়। সিমথি মাথা নাড়িয়ে বলে উঠে,,,
সিমথি : আ আদি একদম না। যখন তখন ধ্যাতত।
আদি : আমাকে সিডিউস করতে পারবা আর আমি এগুলেই দোষ।
সিমথি : আমি কখন করলাম।
আদি : একটু আগে জড়িয়ে ধরলি যে।
সিমথি : এএএটা আমার দোষ। ফাজিল আপনার দোষ। সামান্য জড়িয়ে ধরেছি আর আপনি। ধ্যাতত,, উহুমমম
সিমথি চোখ বড় বড় করে আদির দিকে তাকায়। আড়চোখে দরজার দিকে তাকায়। দরজা খোলা দেখে সিমথি আদিকে গুতাতে শুরু করে। আদি সিমথির এক হাত চেপে ধরে। আচমকা রুমের কাছে কয়েক জোড়া পায়ের শব্দ আসায় আদি সিমথিকে ছেড়ে দেয়। সিমথি ঠোঁট মুছে রাগী দৃষ্টিতে আদির দিকে তাকায়। আদি ঠোঁট মুছতে মুছতে সিমথিকে চোখ টিপ দেয়। তখনই দরজার সামনে এসে সায়নরা দাঁড়ায়।
সায়ন : কি রে নিচে আয়।
সায়নের গলার আওয়াজ শুনে সিমথি পেছন ফিরে তাকায়। সায়নের সাথে আয়াশ, রিক, ইশান, রাদিফ সবাই কে দেখে বেচারি লজ্জায় পড়ে যায়। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে হাতের বাম পাশ থেকে সোফার কুশন নিয়ে আদির দিকে ছুঁড়ে মারে। অতঃপর দৌড়ে বেরিয়ে যায়। আদি কুশন হাতে নিয়ে হাসতে হাসতে বিছানা শুয়ে পড়ে। বাকিরা বেক্কল বনে যায়। তবে আদিকে প্রাণ খোলা ভাবে হাসতে দেখে সবার ভালো লাগে।
রোদেলা : আচ্ছা মেঘা কাল তো গায়ে হলুদ। কাল আমরা কোন থিমের শাড়ী পড়বো।
মেঘা : আমাকে বলছিস কেনো। এসব তো তোরা ঠিক করবি।
তুহিন : ছেলেরা এক থিম আর মেয়েরা এক থিম নাকি।
তন্ময় : ভাই এই মেয়েদের সাজগোছের মাঝে কথা বলিস না। মান ইজ্জত থাকবে না।
তন্ময়ের কথায় সব ছেলেরা হেসে দেয়। মেয়েরা গাল ফুলিয়ে তাকায়৷
মেঘা : এই সিমথির বাচ্চা কথা বল
মেঘার কথায় সিমথি ভ্রু কুঁচকে তাকায়। অতঃপর চারপাশে কিছু খোঁজার চেষ্টা করে।
তুহিন : কি খুঁজিস
সিমথি : আমার বাচ্চা।
সিমথির কথায় সবাই আকাশ থেকে পড়ে।
মেহের : বাচ্চা মানে কিসের বাচ্চা
সিমথি : এই যে একটু আগে মেঘা বললো সিমথির বাচ্চা কথা বল। তো আমার বাচ্চা কোথায়
সিমথির কথায় সবাই হতভম্ব হয়ে যায়। অতঃপর মেঘা ব্যতিত সবাই হেসে উঠে।
মেঘা : তুই এ জীবনে শুধরাবি না
সিমথি : পরের জন্মে শুধরে যাবো। আর তোকে আমি অভিয়াসলি তোর না হওয়া ইন্জিনিয়ার ছেলের এক বাচ্চার মা বানাবো নিজ দায়িত্বে। পাক্কা
মেঘা : এই ওকে কে বলেছে রে ওই ইন্জিনিয়ারের কথা।
সিমথি : ওদের দিকে তাকাস কেনো। আমার দিকে তাকা।
মেঘা : দেখ সিম,,,
সিমথি : সেসব বাদ দে। যা বলছিলি তা বল। এক কথার মাঝে বাংলাদেশ ছেড়ে ইন্ডিয়ার রাস্তা ধরিস না।
রোদেলা : হ হুম হুম। আচ্ছা সবাই কমলা পড়লে কেমন হয়।
সিমথি : তোর বিয়েতে কমলা পড়িস। চয়েজ এতো বাজে তোর ছিহ।
রোদেলা : আসলেই আমার চয়েজ বাজে নয়তো তোর মতো হা/রা/মি কে বেস্টফ্রেন্ড বানাই।
সিমথি ভ্রু কুঁচকে তাকায়। অতঃপর মাছি তাড়ানোর মতো বলে,,,,
সিমথি : দেবর জ্বি মা – বাবারা আসবে না।
ইশান : না তো। কাল আসবে।
সিমথি : ওদের জানিয়েছো আমার ব্যাপারে।
ইশান : ফোন দিয়েছিলাম। ধরেনি। দাঁড়াও এখন দেখি।
সিমথি : না থাক।
ইশান : কেনো
সিমথি : সামনা সামনি দেখুক। এখন জানাতে হবে না।
সিমথির কথায় সবাই সায় দেয়। বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে সবাই রাতে ডিনার করতে নিচে নেমে যায়।
চলবে,,,,,
( আশা করি সবাই সবার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন। সিমথির প্রতি আপনাদের ভালোবাসায় সত্যিই আমি মুগ্ধ। ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)