মিশেছো_আলো_ছায়াতে #Writer_Sintiha_Eva #part : 59

0
777

#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 59

🍁🍁🍁

সারাদিন পর রুমে এসে রুম অগোছালো দেখে সিমথির মাথা গরম হয়ে যায়। রাগান্বিত দৃষ্টিতে রুমের চারপাশে চোখ বুলায়। সোফায় আদি ল্যাপটপ কোলে নিয়ে কিছু করছে। আদির থেকে চোখ সরিয়ে সিমথি বিছানার দু’জনের দিকে তাকায়। বালিশের তুলো দিয়ে পুরো রুম একদম তুলোর গোডাউনের ন্যায় অবস্থা। কাবাডের কাপড় ফ্লোরে এখানে ওখানে পরে আছে। সিমথি ধমকে উঠে।

সিমথি : হৃদ, নিঝুম স্টপ দিজ।

মায়ের রাগান্বিত সুরে হৃদ আর নিঝুম দুজনই ভয় পেয়ে মারামারি থামিয়ে দেয়। আদি সিমথির ধমকে পুরো রুমে চোখ বুলায়। রুমে এ অবস্থা দেখে জিভে কামড় দেয়।

নিঝুম : মাম্মাল হ্রদ বাইয়া আমালে মালতে ( মাম্মাম হৃদ ভাইয়া আমাকে মারছে)

নিঝুমের কথায় সিমথি রাগী দৃষ্টিতে হৃদের দিকে তাকায়। হৃদ মায়ের তাকানো দেখে রাগী চোখে নিজের বোনের দিকে তাকায়।

হৃদ : ওই মিথ্যে বলিস কেনো। মারবো একটা

নিঝুম : বাবাই ( কাঁদো কাঁদো গলায়)

মেয়ের ডাকে আদি ল্যাপটপ রেখে এগিয়ে এসে নিঝুমকে কোলে তুলে নেয়। তিন বছরের নিঝুম ও বাবার গলা জড়িয়ে ধরে।

আদি : কি হয়েছে আমার মা টার।

নিঝুম : মাম্মাল বাইয়া বকতে

আদি : সিয়াজান, হৃদ আমার প্রিন্সেস কে বকছো কেনো।

সিমথি : নেকামি রাখুন। আপনি রুমে থাকা সত্বেও ওরা এমন করার সাহস পায় কিভাবে।

আদি : তোর ছেলে-মেয়ে আমার কথা শুনে কতো। আমি দরকারী কাজ করছিলাম এই ফাঁকে ওরা এমন করেছে।

সিমথি : আপনার আদর পেয়ে দুইটাই এমন হয়েছে। আগে একটা জ্বালাতো এখন তিনটা মিলে জ্বালায়। তিনজন মিলে রুমে গোছান। আমি ফ্রেশ হয়ে এসে যেনো রুমটা পরিষ্কার দেখি। একটুপর মানুষজন আসা শুরু করবে। আয়াশ ভাইয়া রা সবাই নিচে কখন এসে গেছে আর এদের নাম নেই নিচে নামার। বাপ, ভাই, বোন তিনজনই লায়েক হয়ে গেছে। যত্তসব।

সিমথি তিনজনকে বকতে বকতে ওয়াশরুমে চলে যায়। সিমথি যেতেই তিনজন গলা ফাটিয়ে হেঁসে দেয়। অতঃপর দ্রুত রুম গুছিয়ে ফেলে। হৃদ আর নিঝুম দৌড়ে নিচে চলে যায়। সিমথি এসে রুম পরিষ্কার দেখে কিছু বলেনা। শাড়ির আঁচল ঠিক করে আয়নার দিকে এগিয়ে যায়। পেছন থেকে আদি এসে ঝাপটে ধরে।

আদি : সিয়াজান

সিমথি : কি

আদি : ভালোবাসি

সিমথি : হুমম। ওরা কোথায়।

আদি : মায়ের রাগ দেখে আর থাকবে নাকি। বাপকে রেখেই হাপিশ।

সিমথি : আপনার জন্য এমন হয়েছে। আমি মাঝে মাঝে ভাবি এই দুইটা কোনোভাবে হসপিটালে বদল হয়ে যায়নি তো।

সিমথির কথায় আদি হেঁসে উঠে৷

সিমথি : রেডি হও জামাইজান। বাইরে সবাই এসে গেছে।

সিমথির কথায় আদি ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। আদির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সিমথি হাসে। অতঃপর নিচের দিকে পা বাড়ায়।

মেঘা : হৃদি সাবধানে হাঁটাচলা কর পড়ে যাবি তো।

মেঘার বলতে দেরী কিন্তু হৃদির পড়তে দেরী হয়নি। হৃদি কোমড়ে হাত দিয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে সামনে থাকা ব্যক্তির দিকে তাকায়। হৃদির দৃষ্টি দেখে হৃদ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে হৃদিকে ক্রস করে মেঘাদের কাছে চলে যায়।

হৃদি : পাষাণ একটা। আমাকে ফেলে না উঠিয়েই চলে গেলো।

হৃদ : হাঁটতে গিয়ে একশবার উস্টা খেয়ে পড়িস যখন তখন কি তোকে রাস্তা উঠিয়ে দেয় যে আমি উঠাবো।

হৃদি : তুমি কি রাস্তা নাকি।

হৃদ : শাট আপ। আম হৃদান খান চৌধুরী। এভাবে বসে না থেকে উঠ। নয়তো লোকে ভিখিরি ভেবে পয়সা দিয়ে যাবে তোকে।

হৃদি : আজব তো। লাস্তার কি হাত পা আছে। আমি উঠবো কিভাবে।

হৃদ : র উচ্চারণ করতে শিখ। নয়তো র ঘটিত ওয়ার্ড উচ্চারণ করা বাদ দে। গবেট একটা।

হৃদি : ইইই মামণিইইইই।

হৃদির কথার পাত্তা না দিয়ে হৃদান মেঘাদের কাছে যায়।
মেঘারা এতোক্ষণ এদের দু’জনের কথায় মশগুল ছিলো। এটা নতুন না। দুইজনই এক হলে বোম ব্লাস্ট হবে এটা সবার জানা।

হৃদ : ভালো মা কেমন আছো তোমরা সবাই।

মেঘা : ভালো। তুই কেমন আছিস।

হৃদ : ভালো। আহাদ কোথায়।

আয়াশ : ওদিকে রিদ দের সাথে।

হৃদ : তোমরা কথা বলো আমি যায়। মাম্মাম, বাবাই আসছে।

হৃদ যাওয়ার সময় দেখে হৃদি গাল ফুলিয়ে এখনো বসে আছে। হৃদ ফোঁস করে একটা শ্বাস ছাড়ে অতঃপর হৃদির হাত ধরে একটানে উপরে তুলে।

হৃদ : আমার ভালো মা, ভালো বাবার যথেষ্ট টাকা আছে। তাই তোর ভিক্ষা করতে হবে না।

হৃদি কিছু বলার আগেই হৃদ চোখের চশমা ঠিক করে রিদদের দিকে হাঁটা দেয়। হৃদি বিড়বিড়িয়ে পেছন ফিরে সিমথিকে দেখে সিমথিকে ঝাপটে ধরে।

হৃদি : মামণি। তোমাল ছেলে আজকে ও আমাকে ল ( র) বলতে পালি না দেখে খোঁটা দিয়েছে।

সিমথি : ওর সাথে কথা বলবে না। মামণি বকে দেবো।

হৃদ : পরী পড়ে যাবি তো। আস্তে দৌড়া।

হৃদের ধমকে নিঝুম থেমে যায়। অতঃপর গুটিগুটি পায়ে হেঁটে এসে সায়নের কোলে চড়ে।

সায়ন : ছেলেটাকে পুরো তোর কার্বন কপি বানিয়েছিস পরী। সাত বছরের ছেলের এতো রাগ, জেদ, এটিটিউড বাপরে।

সায়নের কথায় সিমথি হাসে।

সময়ের বালিঝড়ায় কেটে গেছে আটটা বছর। সবাই সবার লাইফে স্যাটেল। হাসি-আনন্দ মিলিয়ে সবার দিন বেশ ভালোই কাটছে। কিছু সম্পর্ক যোগ হয়েছে আবার কিছু সম্পর্ক বিয়োগ হয়েছে। রহিমা বেগম ছয় বছর আগে পরলোকগমন করেছেন। সিমথি আর আদির এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলের নাম হৃদান খান চৌধুরী। মেয়ে নিঝুম খান চৌধুরী। হৃদানের বয়স সাত বছর। নিঝুম হৃদানের থেকে চার বছরের ছোট। আজ নিঝুমের তিন বছরের জন্মদিনের সেলিব্রেশন। সায়ন মিমের দুই ছেলে আদ্র – আঁধার। আদ্রর বয়স দশ বছর আর আধারের পাঁচ। তন্ময়ের দুই ছেলে। বড়জন তুরান ছোটজন শান্ত। তুরানের বয়স নয় বছর আর শান্তর বয়স ছয়। মেঘার এক ছেলে এক মেয়ে। বড় মেয়ে হৃদিতা চৌধুরী হৃদি। হৃদান আর হৃদিতা পনেরো দিনের ছোট বড়। হৃদান পনেরো দিনের বড় আর হৃদি ছোট। মেঘার ছোট ছেলে আহাদ। আহাদের বয়স চার বছর। ছোট্ট তিন্নি এখন ষোড়শী বছরের কিশোরী। রোদেলা-ইফাজের এক ছেলে নাম রিদ। তুহিন – রোজের এক মেয়ে তুহি। আদিবার এক মেয়ে নাম আরোহী। তুহার এক ছেলে ঈয়াস। (বাকিদের ও ছেলে-মেয়ে আছে। বাট এতো নাম লিখতে কষ্ট হচ্ছে 😒)

আদি : কি ভাই আমাকে ছাড়াই তোদের আড্ডা শুরু।

আয়াশ : তুমি রোমান্স কইরা লেট করবা আমরা কি বসে থাকবো নাকি।

আদি : রোমান্স হাহ। এটা আমার কপালে নাই।

রিক : এমনি এমনি নিঝুম আর হৃদ আসলো নাকি।

সিমথি : শাট আপ। তোমরা বাচ্চার বাপ হয়েও শুধরাওনি।

আয়াশ : বোন বলিস না আর। আমার তো ক্রিকেট টিম বানানোর ইচ্ছা। কিন্তু তোর বান্ধবী তো হাহ।

শাওন : আহো ভাই বুকে আহো।

মেহের : নে এনারই অভাব ছিলো। এতোক্ষণে আসার সময় হলো আপনার।

শাওন : তোমার মেয়ের কোচিং মাস্টার না ছাড়লে আমি কি করবো।

তিন্নি : মা জানো আজ আব্বু কি করেছে।

তিন্নির কথায় শাওন চমকে মেয়ের দিকে তাকায়। নিজের বাবার এমন লুক দেখে তিন্নি মুখ চেপে হাসে।

শায়লা : আবার কি করেছিস মেয়েটার সামনে।

শাওন : আমি কি করলাম। তিন্নি রুমে যাও। ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো।

তিন্নি হাসতে হাসতে উপরে চলে যায়। মেহের রাগী দৃষ্টিতে শাওনের দিকে তাকিয়ে আছে। শাওন সেদিকে তাকিয়ে মা মা চেঁচিয়ে রান্নাঘরের দিকে যায়। শাওনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠে। রান্নাঘর থেকে শাওন, আদির মায়েরা ওদের বাচ্চামো দেখে হেসে উঠে।

শাওনের মা : দেখতে দেখতে কতগুলো বছর চলে গেলো তাই না রে মেঝো

আদির মা : হুম বড় ভাবী।

আদির মা আদি আর সিমথির দিকে তাকায়।

আদির মা : সেদিন এই মেয়েটাকে আমার ছেলেকে বিয়ে করাবো না বলে কত সংগ্রাম করলাম। আর দেখো এই সিমথি আর মেহেরের জন্যই আমার সংসার টা ভরে উঠেছে। এদের সাথে ছোট্ট তুহা টা ও যোগ হয়েছে।

আদির মায়ের কথায় ইশান-শাওনের মা হাসে। আদির মা মনে মনে ভাবে সেদিন হসপিটালে না গেলে হয়তো নিজের ভুল ধারনা থেকে বেরই হতো পারতো না। ভাগ্যিস সেদিন সিমথির হসপিটালে গিয়েছিলো সিমথিকে কিছু কড়া কথা শুনাতে কিন্তু সিমথির কথাগুলো শুনে নিজের ভুল বুঝতে পারে তারজন্য ই তো সেদিন রাতেই বিয়ের কথা বলেছিলো আদিদের।

মেঘা : তবে যায় বল তোর মেয়েটা ভীষণ দুষ্টু হবে দেখিস সিমথি।

সিমথি : সে আর বলতে। গোছানো জিনিস কিভাবে অগোছালো করতে হয় সেটার ট্রেনিং এর কাছ থেকে নেওয়া উচিত।

রোদেলা : ভাবা যায় আমাদের সিমথির মেয়ে এতো দুষ্টু।

তন্ময় : তোর মেয়ে কে আমার ছেলের বউ বানাবো। দেখিস।

তন্ময়ের কথায় সবাই হেঁসে দেয়। তন্ময়ের এই কথা নিঝুম পেটে থাকাকালীন থেকেই সবাই কে বলে বেড়ায়।

তিন্নি : টাডা আম কামিং

নিঝুম : তিনু আপ্পি

তিন্নি : ওরেহ আমার পরী টাকে তো আজ প্রিন্সেস লাগছে।

তিন্নির প্রশংসায় নিঝুম হাত তালি দিয়ে হেঁসে দৌড়াতে শুরু করে।

অনুষ্ঠান শেষে সবাই চলে যায়। থেকে যায় কেবল সিমথি আর আদির বন্ধুমহল আর আদিবা – সূর্য। বাচ্চারা সবাই ঘুমিয়ে গেছে। বন্ধুমহলের প্রত্যেকে আজ অনেক দিন পর এক হয়েছে। সবাই এখন সংসারী হওয়ায় আগের মতো আড্ডা টা পাওয়া দুষ্কর। তাই তো সবাই আজ ছাঁদে আড্ডা দেওয়ার তোড়জোড় করছে।

তুহিন : দিনগুলো কত তাড়াতাড়ি চলে যায়। মনে হচ্ছে এই তো সেদিন আমরা কলেজে উঠলাম কিন্তু দেখ এখন আমাদের বাচ্চা কাচ্চা ও হয়ে গেছে। কিছুদিন পর বুড়ো ও হয়ে যাবো।

তুহিনের কথায় সবাই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। সত্যিই সুখের দিন তাড়াতাড়ি চলে যায়। সবাই আড্ডায় মশগুল হয়। আড্ডার মাঝে হুটহাট একেকজনের হাসিতে পুরো ছাঁদ মেতে উঠছে। দূর থেকে ভেসে আসছে হুহাট যানবাহনের শব্দ আবার হুটহাট কুকুরের ডাক। চাঁদের আলোয় শুনশান নীরবতায় একঝাঁক বন্ধু মহল, একঝাঁক জোড়া আজ নিজেদের গন্তব্য খুঁজে পেয়েছে। পেয়েছে ভালোবাসার মানুষটার চিরস্থায়ী হাত। সময় যেভাবে এগুচ্ছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভালোবাসার গভীরতা। বাড়ছে বন্ধুত্বের গভীরতা। বেঁচে থাকুক চিরকাল এদের এমন ভালোবাসা, বন্ধুত্ব। আমরা না হয় বিদায় নিলাম। ওদের বাকি সংসার টা আপনারা কল্পনায় সাজিয়ে নেন। বন্ধুত্বের বন্ধন টা কল্পনায় সাজিয়ে নেন। আদি-সিমথির ভালোবাসা, তুহিন, আয়াশ, তন্ময়, রিকের ফাজলামি সবই এই মুহূর্ত থেকে অতীত হোক। সিয়াজান-জামাইজান হোক অতীতের কোনো এক সোনালী অধ্যায়ের এক জোড়া চড়ুই। হাসি-কান্নার মাঝে অটুট থাকুন মনমাতানো ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব।

_____________The End__________

( গল্পটার The End লিখতে গিয়ে হাত কেঁপেছে। বুকের ভেতর শূন্যতা অনুভূত হয়েছে। মনে হচ্ছে আগামী কাল থেকে আর এই চরিত্রগুলো কে নিয়ে নিজের মনের আবেগ প্রকাশ করতে পারবো না। চাপা কষ্ট হচ্ছে। তবে ওই যে কথায় আছে কোনো কিছু শুরু হলে তার সমাপ্তি একদিন হবেই। দীর্ঘ দিনের জার্নি শেষ হয়েছে আজ। শেষ হলো হলো করে যেনো গল্পটা শেষ হয়নি। আশা করি গল্পটা সম্পূর্ণ ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেয়েছি আবার হয়তো বা পারিনি। তবে যায় হোক আপনাদের ভালোবাসায় আমি সিক্ত। গল্পটাও আপনাদের অনেক ভালোবাসা পেয়েছে। এই বিদায় মুহূর্তে এসে একটা কথায় বলবো সবাই ভালো থাকবেন। অবশ্যই আজ মন্তব্য করবেন। ধন্যবাদ ❤️🖤)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here