ভালোবাসার_ফোড়ন_২ #মিমি_মুসকান #পর্ব_৩৯

0
406

#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৩৯

এটা তো কাঠবিড়ালী! আমি নিচ থেকে এটাকে তুলে কোলে নিলাম। মনে হচ্ছে এই কাঠবিড়ালী টা সেই কাঠবিড়ালী যাকে সেদিন উনি নিয়ে এসেছিলেন। বাহ কাঠবিড়ালী টা দেখতে এখন বেশ মিষ্টি লাগছে। হঠাৎ করেই কেউ একজন এসে আমার বলল,

“এই তুমি আমার পিকু কে নিয়ে কি করছো! [ একটা বাচ্চার আওয়াজ ]

আমি সেই বাচ্চাটার দিকে তাকালাম। বাচ্চাটার সাথে আহিয়ানের ফোনের স্ক্রিনে তাকা বাচ্চাটার মিল আছে। ভুল না করলে একাই ইয়ান। তার মুখেও কিছুটা আহিয়ান ভাব আছে। আসলে এটা আহিয়ান ভাব না আয়ানা আপুর ভাব। আহিয়ান আর আয়ানা আপু কিছুটা মিল আছে বলে তাকেও দেখতে তার মতো লাগে।

“এটার নাম পিকু।

“হ্যাঁ , ও আমার পিকু! আহি আমার জন্য এনে দিয়েছে। তুমি কেন ওকে ধরলে।

“সরি আমি তো জানতাম না এটা তোমার, এটা আমার পায়ের কাছে এসেছিল বলে ধরলাম। নাও তুমি!

ইয়ান চট করেই আমার কোল থেকে পিকু কে তুলে নিল। পিকু নামটা এটার সাথে মানানসই মনে হচ্ছে না কিন্তু মনে হচ্ছে নামটা ইয়ান’ই রেখেছে। ইয়ান পিকু কে কোলে তুলে আদর করতে লাগল। আমি ইয়ানের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলি,

“ইয়ান! তুমি এখনো জেগে আছো কেন?

ইয়ান ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
“তুমি আমার নাম কি করে জানো?

“আমি তো আরো অনেক কিছু জানি।

“কি জানো?

“এই যে তোমার এত্তো গুলা আইসক্রিম, চকলেট এগুলো খুব পছন্দ।

“তাহলে আইসক্রিম দাও।

“আমার কাছে তো আইসক্রিম নেই

“কেন? তুমি তো জানো আমার কি পছন্দ তাহলে আনলে না কেন?

“সরি বড্ড ভুল হয়ে গেছে। পরেরবার মনে করে নিয়ে আসবো।

“তুমি আবার আসবে।

আমি ইয়ানের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলাম। দূর থেকে আয়ানা আপু বলে,

“ইয়ান তুমি এখানে!

“আম্মু!

বলেই সে আপুর কাছে চলে যায়। আপু তার কপালে চুমু খেয়ে বলে,
“কি করছিলে!

“কথা বলছিলাম তার সাথে।

“তুমি জানো সে কে?

ইয়ান মাথা নেড়ে না বলল। আমি হেঁটে তাঁদের কাছে গেলাম। আপু ইয়ানের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে,
“এটা তোমার ছোট আম্মু! তোমার আহির বউ!

ইয়ান বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
“তুমি আহির বউ!

আমি হেসে দিই। সে কাছে আসলেই আমি বসে পরি। সে আমার গালে হাত রেখে বলে,

“ছোট আম্মু তোমার গাল গুলো কি নরম। আমি একটা কিসি দিই।

“দাও!

সে আমার গালে একটা চুমু খেল। অতঃপর আপু তাকে ঘুমানোর জন্য নিয়ে গেল। তবে যাবার আগে আমার ঘর কোনদিকে সেটা বলে দিল।

ঘরে এসে নক করতেই ভেতর থেকে আওয়াজ এলো,
“ভূতনি এসো!

আমি ঘর ঢুকে দেখি উনি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। উনার ঘরটা দেখতে খুব সুন্দর, সাজানো গোছানো। ঘরের একদিকে দেওয়ালে উনার আর ইয়ানের ছবি দিয়ে ভরপুর! বাকি সবাইও আছে। দুজন মামা ভাগিনা একরকম পোশাক পড়ে এক স্টাইলে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছে। উনি বেলকনি থেকে এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বলে,

“দেখেছো আমি কতো হ্যান্ডসাম।

“হতে পারে আপনি হ্যান্ডসাম তবে আপনার থেকেও ইয়ান বেশি হ্যান্ডসাম!

উনি হেসে বলেন,
“দেখা করেছিলে।

“একটু আগেই করেছি। আমাকে একটা কিসিও দিয়েছে।

“বাহ ভালো তো! ইয়ানের কাউকে বিশেষ ভাবে পছন্দ না হলে কিসি সে দেয় না।

“কাঠবিড়ালী! আচ্ছা এটা ওই কাঠবিড়ালী টা না।

“হ্যাঁ! ইয়ানের খুব পছন্দ হয়েছিল তাই সে রেখে দিয়েছে।

“ওহ আচ্ছা!

“হুম! ইয়ান হলো আমাদের চৌধুরী বাড়ির একমাত্র চোখের মনি।

“ওর আব্বু….

“ভাইয়া আছে, কাল আসবে তখন দেখতে পারবে। আসলে ইয়ানের এখানে থাকতে বেশি ভালো লাগে। তাই সে দু মাস অন্তর অন্তর এখানে এসে থাকে। দু মাস থেকে আবারো চলে যায় তার দাদু বাড়ি।

“বাহ বেশ তো!

এর মাঝেই ঘর নক করল। ওপাশ থেকে ইয়ানের আওয়াজ পাওয়া গেল। আহিয়ানের আওয়াজ পেতেই সে দৌড়ে চলে এলো। তার পিছন পিছন কাঠবিড়ালী ও এলো। ইয়ানের মুখ পুরো কাপড়ের মধ্যে ঢেকে গেছে। তার হাতে একগাদা কাপড়ের বোঝা। সে এর মাঝে থেকেই বলল,

“ছোট আম্মু দেখো আমি তোমার জন্য কত্তো শাড়ি এনেছি।

আমি হেসে ওর মুখ থেকে কাপড়গুলো নিয়ে বিছানায় রেখে বলি,
“তোমার পছন্দ সব।

“হুম হুম এগুলো সব আমার পছন্দ! আর আম্মুর গুলো আম্মুর কাছে।

আমি ওর গাল টেনে ধরি। সে “আহি” বলে তার কোলে চড়ে যায়। আহি তার গালে একটা চুমু খেয়ে বলে,

“এখনো ঘুমাও নি কেন।

“এই তো ঘুমোতে যাবে। আহি জানো তো এটা কে?

“কে?

“তুমি জানো না এটা আমার ছোট্ট আম্মু আর তোমার বউ।

“তাই নাকি।

“কিন্তু আহি বউরা তো লালশাড়ি পড়ে কিন্তু ও কেন পড়ে নি বলো তো ‌

“ভূতনি বউ তো তাই!

সে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
“ভূতনি! তুমি ভূতের দেশ থেকে এসেছো!

আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি। আপু হেসে একাকার। সে শাড়ি গুলো বিছানায় রেখে বলে,
“কি সব বলছিস?

আহিয়ান বলে উঠে,
“ঠিক’ই বলছি! ইয়ান তুমি আজ থেকে ওকে ভূতনি আম্মু বলে ডাকবে ঠিক তো।

“ডান! ভূতনি আম্মু, কি মজা।

আমি মনে মনে বলি,
“বাচ্চা টাকেও ছাড়লেন না উনি।

অতঃপর মুখ ফিরিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখি কাঠবিড়ালী টা বিছানায় বসে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। এটা দেখেই হেসে উঠি!

ইয়ান কে ঘুম পাড়াবে বলে আপু ওকে নিয়ে চলে গেল। কিন্তু আমি জানি ইয়ান এখন আবারো বের হবে।‌ছোটাছোটি করবে। খুব চঞ্চল ও। আপু আমাকে এখান থেকে একটা শাড়ি পড়তে বলল। কাল ভার্সিটিতে যেতে না করেছে। আমি মাথা নেড়ে শাড়ি গুলো নিয়ে আলমারির কাছে গেলাম। দেখি সেখানে আগে থেকেই জায়গা করা। সেখানে শাড়ি গুলো রেখে পেছনে ফিরে দেখি উনি নেই।

গেলো কোথায়? একটু আগেও তো এখানেই ছিল। হয়তো বাইরে গেছে‌। অতঃপর আমি ওয়াশরুমে গেলাম ফ্রেস হবার জন্য। বের হবার পর দেখি উনি ঘরে।

“কোথায় গিয়েছিলেন!

“খাবার আনতে, খাও নি তো। নাও খেয়ে নাও।

আমি তাকিয়ে দেখি বিছানায় খাবার। বলে উঠি,

“আপনি খাবেন না।

“হুম খাবো। ক্ষিদে পেয়েছে, বসো তুমি!

অতঃপর দুজনেই একসাথে খেতে বসলাম। আমি প্লেট গুলো নিয়ে নিচে রেখে এলাম। উনি বিছানা ঠিক করছে। আমি দরজার দিকে তাকিয়ে বলি,

“আপনি কি সত্যি এতো কাজের!

উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
“না! আজ করছি তুমি সব শিখে নাও, কাল থেকে এসব তুমি করবে। বুঝলে!

আমি মুখ ভেংচি দিয়ে খাটে এসে বসি। বিছানার ওদিকে তাকিয়ে বলি,

“আপনি এখানে ঘুমাবেন।

“না ছাদে গিয়ে ঘুমাব।

“কি ছাদে কেন? রুম তো আরো আছে।

“ভূতনি! এটা আমার রুম।

“আপনি বলতে চান আমি আর আপনি এক খাটে এক বিছানায়!

উনি খানিকক্ষণ চুপ থেকে বলে,
“আচ্ছা চলো টস করি!

“কেমন টস!

“দুটো ছোট কাগজের টুকরে তোমার আর আমার নাম লিখবো। যার নাম উঠবে সেই রুমে ঘুমাবে।

“আর আরেকজন!

“গেস্ট রুমে।

“তাহলে টস করার কি আছে, আমি চলে যাচ্ছি গেস্ট রুমে।

“কিন্তু হিসেবে তো এই রুম টাও তোমার, সমান অধিকার আছে আমাদের।

“এতো ভালো মানুষ কবে হলেন আপনি।

“আমি বরাবর ভাল মানুষ! আচ্ছা ওয়েট আমি কাগজ আনছি!

অতঃপর টস করে দেখা গেল আমার নাম উঠেছে। তাই হিসেব মতো আমি এই রুমে ঘুমাব। আমি হেসে উনার দিকে তাকিয়ে বলি,

“বালিশ লাগবে নাকি, দেবো।

“ঘুমাও তুমি তোমার বালিশ নিয়ে!

“আরে রাগ করছেন কেন? আইডিয়া তো আপনার। এখন হেরে গেলে আমি কি করতে পারো।

উনি রেগে বাইরে চলে গেলেন। আবার ফিরেও এলেন। আমি উনার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি। উনি বলেন,

“বাইরে বাবা আছেন!

“এখন কি করবেন? দেখলেই তো জিজ্ঞেস করবে।
বলেই ভ্রু নাচালাম। উনি হেঁটে আলমারির কাছে গেলেন। কিছু বালিশ আনলেন সেখান থেকে। অতঃপর বিছানার মাঝখানে দেওয়ালের মতো কিছু একটা করে ওপাশে বসে বলেন,

“ওটা তোমার রাজত্ব আর এটা আমার।

“আপনাকে বিশ্বাস কি?

উনি আমার থেকে মুখ ঘুরিয়ে ওপাশে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে বলেন,

“গুড নাইট! লাইট নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো!

অতঃপর লাইট নিভিয়ে আমি এপাশে শুয়ে পড়ি। শীতের একদম শেষের দিক এটা। তবুও কেমন জানি শীত শীত লাগছে। কম্বল টা ভালোমতো জরিয়ে শুয়ে আছি অথচ ঘুম আসছে না। কেমন একটা নিস্তব্ধতা। নতুন ঘর, নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষজন। এসবের সাথে আমাকেই মিলেমিশে থাকতে হবে। মেয়েদের জীবনটাই এমন সবার সাথে তাকেই মিলেমিশে থাকতে হবে। এসবের জন্য সেই বাধ্য! তবুও সেদিক দিয়ে আমি ভাগ্যবতী! আমার নতুন পরিবার খুব ভালো!
.
ভোরে কিছু খুঁটিনাটি আওয়াজে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘুম ঘুম চোখে সামনে তাকিয়ে দেখি উনি জুতার ফিতে বাধছে। আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,

“গুড মর্নিং!

আমি চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে বলি,
“আপনি এতো সকালে!

“জগিং করতে যাচ্ছি! তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।

বলেই উনি চলে গেলেন। ভাবতে অবাক লাগে এই ছেলে এতো তাড়াতাড়ি উঠে ঘুম থেকে। কিন্তু আমি আর শুয়ে থাকলাম না। উঠে গেলাম! বিছানা গুছিয়ে, গোসল করে ইয়ানের পছন্দ করা একটা শাড়ি থেকে শাড়ি বার করে পড়লাম। শাড়িটা বেশ সুন্দর, খয়েরি রঙের শাড়ির মাঝে হাতের কিছু কারুকাজ। শাড়িটা কোন ধরনের কাপড় তা জানি না। এসব জ্ঞান আমার নেই বললেই চলে!

আমি সবে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছে আয়নার সামনে বসেছি, অনেকদিন পর দেখছি নিজেকে আয়নাতে। নিজেকে কেমন অচেনা অচেনা লাগছে। এর মাঝেই দরজায় নক পড়ল। আমি উঠে দরজার কাছে যেতেই দেখি মা দাঁড়িয়ে আছেন। তার হাতের ট্রেতে দু কাপ চা। তিনি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে আমাকে বলেন,

“তুমি উঠে গেছো ঘুম থেকে!

“জ্বি মা!

“ভালোই, চা এনেছি দুজনে বসে খেতে খেতে গল্প করবো।

আমি তার হাত থেকে ট্রে নিয়ে বলি,

“আপনি কেন চা করলেন, আমি করে দিতাম..

“ঠিক আছে, একদিন করলে কিছু হবে না।‌

বলেই উনি বেলকনিতে চলে গেলেন। আমি ট্রে নিয়ে বেলকনিতে গেলাম। বেলকনিতে কিছু বেতের চেয়ার আর একটা টি টেবিল আছে। আমি ট্রে রেখে মা’র হাতে চায়ের কাপ দিলাম। উনি নিচে তাকিয়ে আছেন। এতোক্ষণে এই বাড়ির বাগান চোখে পড়ল আমার। শীতকাল বলে বাগানে তেমন কোন ফুল নেই তবে দেখে মনে হচ্ছে ফুলের সিজনে বাগান পুরো ফুলে নিমজ্জিত থাকে। বাবা বাগানে দাঁড়িয়ে ব্যায়াম করছেন। মা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে কথা বলতে শুরু করলেন। বাবা যতক্ষন ব্যায়াম করছিলেন ততোক্ষণ’ই গল্প করলেন। অতঃপর বাবা ঘরে ফিরতেই তিনিও চলে গেলেন।
তার আর আমার গল্প বেশিরভাগ’ই আহিয়ান আর আয়ানা আপু কে নিয়ে। তাদের ছেলেবেলার কাহিনী।

আমি বেলকনিতে’ই দাঁড়িয়ে ছিলাম। সময়টা উপভোগ করছি, তবে মনে হচ্ছে আমার এখন নিচে যাওয়া উচিত। তাই’ই করলাম। নিচে নেমে এলাম। সার্ভেন্ট সবাই সকালের খাবার বানাতে ব্যস্ত! আমিও তাঁদের সাথে হাত লাগলাম।

কাজ করতে শুরু করেছি বেশিক্ষণ হয় নি এর মাঝেই মা চলে চলেন। আমাকে টেনে বসার ঘরে এনে বলেন,

“তোমার কোন কাজ করা লাগবে না, এর জন্য মানুষ আছে বাড়িতে।

“কিন্তু মা..

“রাখো তো!

অতঃপর তিনি আমার হাত টেনে একটা বক্স থেকে চুড়ি বের করলেন। চুড়ি গুলো আমার হাতে পড়িয়ে দিয়ে বলেন,

“এটা আহির দাদির। আহির বউ আর আয়ানার জন্য বানিয়েছিল। আয়ানার টা সে পড়ছে তবে এটা তোমার বুঝলে।

আমি চুড়ি গুলোর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লাম। চুড়ি গুলো দেখতে বেশ সুন্দর! মা জিজ্ঞেস করলেন চুড়ি গুলো পছন্দ হয়েছে কি না। আমি বলে উঠি,

“খুব সুন্দর, খুব পছন্দ হয়েছে।

মা হেসে আমার মাথায় হাত রাখেন। এর মাঝেই আহিয়ান চলে আসে। মা তাকে বলেন,‌ ফ্রেস হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে আসতে। উনি মাথা নেড়ে উপরে চলে যান। মা আমাকে উপরে যেতে বলে চলে যায়।

আমি উপরে এসে দেখি উনি ঘরে নেই। মনে হচ্ছে শাওয়ার নিতে গেছে। কিন্তু আমার এখন করণীয় কি? কি করবো! ভাবতে লাগলাম! ভাবতে ভাবতে উনার টেবিলের দিকে গেলাম। সারি সারি বই সাজানো। বই ধরছেন বলে মনে হচ্ছে না। শুধু সাজানোর জন্য’ই এনে রেখেছেন। একটা বই হঠাৎ চোখে পড়ল আমার! বইটা হাতে নিয়ে দেখি তাতে লেখা, “কৃষ্ণপক্ষ” কবি হলেন হুমায়ূন আহমেদ! হুমায়ূন আহমেদ, হ্যাঁ উনার লেখা একটা বই পড়েছিলাম। “দিনের শেষে”! গল্প টা বেশ সুন্দর ছিল। এটাও হয়তো অনেক সুন্দর হবে।

উনি বের হলেন। একটা কালো রঙের টি – শার্ট আর কালো রঙের জিন্স পড়া। তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বের হয়েছেন। আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,

“এই উপন্যাস টা খুব সুন্দর পড়ে দেখ।

“আপনি পড়েছেন এটা।

“হুম।

বলেই উনি বিছনায় এসে বসলেন। বইটা পড়ার জন্য খুলতেই সার্ভেন্ট এসে জানাল নিচে আমাদের ডাকছে।
.
আমরা সবাই খাবার টেবিলে বসে আছি। আহিয়ানের এক পাশে আমি আরেকপাশে ইয়ান। সে ইয়ান কে খাওয়াচ্ছে। আমার পাশেই আয়ানা আপু। মা আর বাবা বসেছে একসাথে! খাবার খেতে খেতে বাবা কিছু কথা জিজ্ঞেস করেন আহিয়ান কে।‌ আহিয়ান ও উওর দিতে থাকে। কথা গুলো এমন ছিল,

“আমি নিতি’র বাবা কে গতকাল কল করে না জানিয়ে দিয়েছে।

“হুম।

“তারা কারন জানতে চেয়েছে?

“আমি কথা বলবো?

“না দরকার নেই আমি বলেছি, তাদের দুপুরের খাবারের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছি।

“বিয়ের কথা বলো নি।

“বলেছি! কিন্তু খোলাসা করে কিছুই বলি নি। বাসায় আসলে তখন বলবো। তুমি আর নিহা দু’জনেই এই দুদিন বাসায় থাকবে।

“আচ্ছা!

“নিহার পড়ালেখা চলবে কিন্তু!

“হুম।

“নিহার মা আর বাবা কে আজ’ই আনার ব্যবস্থা করো।

“আচ্ছা!

“নিহা!

“জ্বি বাবা!

“এখন এই বাড়ির বউ তুমি, তোমার মা বাবা এখানে থাকলে তাদের যেন কোন অসুবিধা না হয় এটা তুমিই খেয়াল রাখবে।

“জ্বি আচ্ছা!

অতঃপর আপুর সাথে অফিসের ব্যাপারে কিছু কথা বলে। খাবার শেষে উঠে চলে গেলেন। আমি বুঝতেই পারলাম না তিনি রেগে আছেন না খুশি আছেন। আয়ান আপুও অফিসের জন্য চলে গেলেন। ইয়ান কে এখনো স্কুলে ভর্তি করানো হয় নি। তাই সে ঘরেই থেকে গেল। আহিয়ান আমাকে বলল আজ বিকালে তার সব বন্ধুদের বলবে আসতে বাড়িতে। আমি বেশ বুঝতে পারছি একটা ঝড় আসতে চলেছে এই বাড়ির উপর!
.
সারাদিন ইয়ানের পিছনেই দৌড়েই কেটে গেল আমার। দুপুরে সে আর আমি বাগানে দৌড়াদৌড়ি করছি আর আমাদের সাথে পিকুও। এর মাঝে একটা গাড়ি ঢুকল বাড়িতে। গাড়িটা এতো জোরে এলো সে ইয়ান ভয় পেয়ে আমার কাছে চলে গেল। বলা হয় নি ইয়ানের বয়স সবে ৪ বছর।

আমরা দু’জনেই ঘরের ভেতর এলাম। কি হয়েছে এটা দেখার জন্য। ইয়ান কোলে পিকু কে নিয়ে আমার হাত ধরে আসছে। ভেতর এসে দেখি আহিয়ানের সামনে একটা মেয়ে দাঁড়ানো। তাকে পেছন থেকে দেখেছি আমি, আমার মনে হচ্ছে এটা নিতি। অতঃপর গলার স্বর পেয়ে নিশ্চিন্ত হলাম। নিতি বলছে,

“আহি কি শুনছি এসব, তুমি বিয়ে করে ফেলেছ? কিভাবে করতে পারো তুমি এটা।

“নিতি শান্ত হ!

“কি করে শান্ত হবো আমি। তুমি বুঝতে পারছো তুমি বিয়ে করেছো। কাকে করেছ তুমি বিয়ে? কাকে? কে সে যে আমার জায়গা নিতে চাইছে।

আহিয়ান ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“সি! সি ইজ মাই ওয়াইফ! আই মিন ভূতনি!

নিতি পিছনে ঘুরল। আমি আর নিতি মুখোমুখি। নিতি বলে উঠে,

“তুমি…

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here