ভালোবাসার_ফোড়ন_২ #মিমি_মুসকান #পর্ব_৪০

0
401

#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৪০

আহিয়ান ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“সি! সি ইজ মাই ওয়াইফ! আই মিন ভূতনি!

নিতি পিছনে ঘুরল। আমি আর নিতি মুখোমুখি। নিতি বলে উঠে,

“তুমি…

নিতির মুখে তুমি ডাকটা শুনে আমার শরীর শিউরে উঠল। নিতি হেটে আমার সামনে দাঁড়াল।‌ তাকে দেখে মনে হচ্ছে না সে বিশ্বাস করছে আহিয়ানের কথা। কারন সে বারবার দেখছে আমায়।
আমি নিজেও চোখ সরাতে পারছি না। নিতির দিকেই তাকিয়ে আছি,‌ কি করবে ও জানতে ইচ্ছে করছে। হঠাৎ করেই নিতি হেসে বলে,

“তুমি, তুমি আহির বউ। আহি সিরিয়াসলি এই মেয়েটা তোর ওয়াইফ! এতো গর্ব করে বলছিস তুই ওর কথা!

আহি ভ্রু কুঁচকে তাকাল ওর দিকে। নিতি আমার থিতুনি তে হাত রেখে বলল,
“তুমি! কোনদিক দিয়ে তোমাকে আহির বউ এর মতো লাগে বলো। যোগ্যতা কি তোমার, স্ট্যান্ডার কি?
বলেই চেঁচিয়ে উঠে। ইয়ান ভয়ে আমার পিছনে এসে লুকায়। আমিও কেঁপে উঠি। আহিয়ান সামনে এগিয়ে আসছে।
নিতি এবার কিছু বলতে গেলে তার আগেই আহিয়ান বলে,

“ও আহিয়ান চৌধুরী’র বউ! ব্যস এতোটুকু কথাই যথেষ্ট।

নিতি হেসে পিছনে তাকিয়ে বলে,

“ওহ্ আচ্ছা! তাই নাকি, ( আমাকে উদ্দেশ্য করে ) কি দিয়ে বস করলে ওকে। হুম বলো, তোমার পরিবার কি তোমায় এইসব শিখিয়েছে‌। এটাই শিখিয়েছে নাহ কিভাবে বড়লোকের ছেলেদেরকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করা যায়। আর তুমিও তো সেটাই করেছো। যেই দেখলে আহি কে আর হাতছাড়া করলে না। তাই না!

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি‌। নিতি রাগে ফুঁসছে। আহিয়ান আমার পাশেই দাঁড়ানো। হঠাৎ করেই নিতি হাত উঠালো আমাকে মারার জন্য। আমি চমকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি। পাশেই আহিয়ান দাঁড়ানো ভেবেছিলাম উনি আটকাবেন না তা হলো না। ওপাশ থেকে মা’র আওয়াজ এলো। মা’র আওয়াজ পেয়ে নিতি থেমে গেলো। মা আমাদের দিকে এগিয়ে এসছেন। আমি এতোক্ষণে বুঝলাম আহিয়ান কেন চুপ ছিল।

নিতি মা কে দেখে চুপ হয়ে গেল। মা আমার পাশে দাঁড়িয়ে বলেন,

“তোমার সাহস দেখে অবাক হচ্ছি, চৌধুরী বাড়িতে দাঁড়িয়ে এই বাড়ির বউ”র যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছো।

নিতি মাথা নিচু করে নেয়। কিছুক্ষণ’র মাঝেই তাকে কাঁদতে দেখা যায়। নিতি কাঁদতে কাঁদতে বলে,

“আন্টি, আপনি এখন এই ভাবে কথা বলছেন আমার সাথে। এতোটাই পর আমি।

মা এবার রুদ্ধ স্বরে বলে,
“তোমাকে আমি নিজের মেয়ের চেয়ে কম ভালোবাসি না। কিন্তু তুমি আজ যা করছিলে তা আমার মেয়ে করলে এতোক্ষণে তাকে আমি বাড়ি থেকে বের করে দিতাম। ভুলে যাবে নিহা আমার আহির বিবাহিতা স্ত্রী! আহি নিজে বিয়ে করেছে ওকে। এটা নিয়ে তুমি প্রশ্ন তোলার কে?

নিতি নিঃশব্দে কাঁদছে। আমি মা কে দেখছি, উনার রূপ যে এমন হতে পারে এ সম্পর্কে আমার কোন ধারনা ছিল না। মা আবারো বলেন,

“তুমি আজ যা করতে চাইছিলে তা আহির বাবা জানতে পারলে কি হবে জানো? আমি এটাই বুঝতে পারছি না তোমার এতো সাহস হয় কি করে নিতি? তুমি নিহা’র গায়ে হাত তুলতে চাইছিলে। নিজেকে এতোটা নিচ প্রমাণ করলে তুমি!

নিতি মা’র সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
“আই’ম সরি আন্টি, রেগে ছিলাম বুঝতে পারি নি। কিন্তু আন্টি আপনিও তো জানতেন আমি আহি কে কতোটা ভালোবাসি!

মা’র গলা এবার শীতল হলো। শীতল গলায় বলেন,
“এটা কারো অজানা নয়, কিন্তু এক তরফা ভালোবাসা কখনো দীর্ঘস্থায়ী হয় না নিতি। আমার আহি তোমাকে ভালোবাসে না। সে নিহা কে ভালোবাসে আর তাকেই বিয়ে করেছে। এই নিয়ে তাকে আমি কিছু বলতে পারি না।

মা’র কথা শুনে আমি আহিয়ানের দিকে তাকালাম। আহিয়ান ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। দু’জনের চোখেই বিস্ময়!

নিতি এবার কাঁদতে কাঁদতে মা কে জড়িয়ে ধরল। মা ওকে সান্ত্বনা দেবার জন্য মাথায় হাত বোলাচ্ছেন। বুঝলাম আমার শাশুড়ি যেমন রসিক আর নরম মানুষ তেমন কঠোর ও। যখন যেটার দরকার হয় তখন সেটাই করে। মা আমাকে বলেন নিতির জন্য পানি নিয়ে আসতে। অতঃপর নিতি কে নিয়ে সোফায় বসেন। আমি রান্না ঘরে যাচ্ছি আহিয়ান আসছে আমার পিছু পিছু! ইয়ান এখনো আমার পিছনে শাড়ির আঁচল ধরে আছে।

আহিয়ান ইয়ান কে কোলে তুলে নিল। আহিয়ান তার সাথে কথা বলছে, ইয়ান হয়তো ভয় পেয়ে গেছে। আমি পানি’র গ্লাস নিয়ে আবারো মা’র কাছে গেলাম। মা আমার থেকে পানির গ্লাস নিয়ে নিতি কে খাইয়ে দিল।‌সে এখানো কাঁদছে। মা তাকে থামাচ্ছেন। আমি তাদের পাশেই বসে আছি। আহিয়ান ইয়ান কে কোলে নিয়ে ঘুরাঘুরি করছে।

“আর কেঁদো না শান্ত হও।

“আন্টি কি করে শান্ত হবো।

“না চাইলেও হতে হবে, এখন আর কিছু করার নেই।

“আহিয়ান কি করে পারলো এমনটা করতে। গতকাল’ই তো মা বাবা এসে বিয়ের কথা বলল আর তখন’ই সে বিয়ে করে নিল।

“না আহিয়ান তখন বিয়ে করে নি।

নিতি কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে গেল। অতঃপর বলল,
“তাহলে..!

“বিয়ে হয়েছে আজ তো প্রায় ১৫ দিন হয়ে গেল।

নিতি অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। আমি ঠিক কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না। মা বলেন,
“নিতি যা হয়েছে ভুলে যাও। এখন আর কিছু করার নেই।

নিতি’র কান্না এখন থেমে গেল। আমি পাশেই বসে ছিলাম। নিতি এখন ঠিক কি ভাবছে আমি তা চিন্তা করছিলাম। এটাই তো, “কেন এতোদিন সবসময় আহিয়ান আমার সাথে থাকত। শুধু আমার জন্য তাদের সবার সাথে কেন ঝগড়া করল!” সে হয়তো দুইয়ে দুইয়ে চার করার চেষ্টা করছে। ভেবেছিলো এমন চলতে থাকলে সে আর আহিয়ান কে পাবে না তাই বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। এমনটা কি হতে পারে না। হুম পারে! আমার ধারনা এটাই হয়েছিলো।

হঠাৎ করেই হাতে কারো ছোঁয়া পেয়ে ঘোর কাটল। তাকিয়ে দেখি ইয়ান। আমি ওর গালে হাত রেখে বলি,

“কিছু বলবে।

ইয়ান মাথা নাড়ল। আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলি,
“ক্ষিদে পেয়েছে।

ইয়ান আবারো মাথা নাড়ল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি দুটো বাজে। এসময় ওর ক্ষিদে পাওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার। বাবা হয়তো একটু পরেই চলে আসবে। তার সাথে নিতি’র মা আর বাবাও। তাদের দুপুরের খাবারের জন্য বাবা ইনভাইট করেছিল। নিতি হয়তো আহিয়ানের বিয়ের কথা শুনে রেগে আগেই চলে এসেছে।

বাইরে গাড়ি থামার আওয়াজ পেলাম। মা উঠে দরজার সামনে গেলেন। নিতি’র মা আর বাবা এসেছে। নিতি কে সোফায় বসে থাকতে দেখে তিনি দৌড়ে এলেন। আমি উঠে দাঁড়ালাম। তারা দুজনেই তাদের মেয়েকে নিয়ে খুব চিন্তিত। তার সাথে মা ও। চিন্তা আমারো হচ্ছে শুধু একজন’ই চিন্তা মুক্ত আর সে হলো আহিয়ান। রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আপেল খাচ্ছে আর এখানকার কান্ডকারখানা দেখছে। অদ্ভূত এক লোক বটে!

গাড়ির আওয়াজ আবারো এলো, বাবা এসেছেন! মা আমাকে বললেন ঘরে যেতে। আমি ইয়ান কে নিয়ে চলে গেলাম রান্না ঘরে। তার জন্য খাবার বেড়ে ঘরে নিয়ে এলাম। আহিয়ান সেখানেই ছিল। ইয়ান কে খাইয়ে দিলাম। অতঃপর প্লেট রান্না ঘরে রেখে আবারো তার রুমে এসে দেখি ইয়ান বিছানায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। তাকে ভালোমতো শুইয়ে দিয়ে পিকু কে দেখলাম। সেও তার পাশেই ঘুমিয়ে আছে।

সার্ভেন্ট এসে বলল, খাবারের জন্য ডাকছে। আমি উঠে বসার ঘরে গেলাম। মা আমাকে ধরে সোফায় আহিয়ানের পাশে বসালেন। নিতির মা আর বাবা কে পরিচয় করিয়ে দিলেন আমার সাথে। নিতি চুপচাপ বসে আছে।
নিতির মা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,

“তোমার নাম কি?

“নিহারিকা নিহা!

“তোমার বাবা কি করেন নিহা!

“আমার বাবা অসুস্থ, তাই কোন কাজ করেন না।

আমার প্রশ্নের জবাবে তিনি খুব অবাক হলেন। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন। বাবা বলে উঠেন,

“আচ্ছা আপনারা আগে খাওয়া দাওয়া করুন। কথাবার্তা পরেও করা যাবে।

নিতির মা উঠে চলে গেলেন। কেন জানি মনে হচ্ছিল তিনি আমাকে ছোট্ট করতে চান। একে একে সবাই উঠে টেবিলে বসলেন। আহিয়ান আমাকে ফিসফিসিয়ে বলল,

“দারুন জবাব দিয়েছ! নিতির মা হলো আরেক নিতি, বুঝলে।

আমি উনার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। মা আমাকে আর আহিয়ান কে ডাকলেন। সবাই খাবার খেতে বসেছে আমি খাবার সার্ভ করে দিচ্ছি। নিতির মা খাবার খেতে খেতে বেশ প্রশংসা করলেন। হঠাৎ তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

“তা নিহা! পড়ালেখা ছাড়া তুমি আর কি করেছ!

“কিছু না আন্টি!

“আমাদের নিতি কিন্তু পড়ালেখা ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ে বেশ ভালো।

আহিয়ান খেতে খেতে বলে,
“আমার বউ কিন্তু খুব ভালো রান্না করে আন্টি! আপনি একটু আগে খেয়ে যে প্রশংসা করলেন সেটা ওর হাতের রান্না!

নিতির মা আবারো মুখ কালো করে চুপ হয়ে গেলেন। মা কোন মতে হাসি সামলে আহিয়ানের দিকে তাকাল। আহিয়ান চুপ হয়ে খেতে লাগল। নিতির বাবা একটু চিন্তিত , তাই তিনি কোন কথা বলছেন না। নিতি খাবারের প্লেট নিয়ে বসে আছে। হঠাৎ বাবা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,

“নিহা! ইয়ান কোথাও?

“ঘুমাচ্ছে বাবা! একটু আগেই খাইয়ে এসেছি।

মা বলে উঠেন,
“অনেক হয়েছে তুমিও এবার খেতে বসো।

“জ্বি!

আমি আহিয়ানের পাশে বসলাম। নিতি তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আমার উপর রেখেছে। দু’জনের চোখাচোখি হলো আহিয়ানের কোন ধ্যান নেই। সে খাওয়াতে ব্যস্ত! খানিকক্ষণ বাদে আয়ানা আপুও চলে এলো।
.
খাওয়া দাওয়া শেষে নিতিরা সবাই চলে গেল। মা আহিয়ানের তখনকার কথার কারনে হাসতে হাসতে শেষ। বাবা পাশে বসেই চা খাচ্ছেন। তার চেহারায় কোন ভাবনা নেই। মা আর বাবা’র জুটিটা সুন্দর। একজন গম্ভীর আরেকজন চঞ্চল! আয়ানা আপু ইয়ানের কাছে। সন্ধ্যায় তার বর আসবে।

একবার দাদি’র ফোন এসেছিল। আমার সাথে বেশ অনেকক্ষণ কথা বলল, খোঁজ খবর নিল। দাদি জানাল আমার সব স্টুডেনর কাছে তিনি বলে এসেছেন যে আমি আর পড়াতে আসবো না। বিয়ের কথা শুনে সবাই নাকি বেশ খুশি হয়েছে।

বিকেলে পুরো বাড়ি হইচই। সবাই এসেছে বাড়িতে শুধু নিতি বাদে। বিয়ের ব্যাপারটা প্রথমে সবাই গম্ভীর ভাবে নিলেও পরিবেশ এখন শান্ত। নাহান আর আনাফ ব্যাপারটা সহজ ভাবে নিলেও টিনা আর আনিকা কিভাবে নিল বলা মুশকিল! ইতিও এসেছে, সে আমার আর মা’র সাথে রান্না ঘরে কাজে হাত লাগাচ্ছে। মা আমাদের দুজনের হাতে খাবার পাঠিয়ে দিয়ে বলেন আর যেন না আসি!

আমি আর ইতি খাবার নিয়ে সবার মাঝে রাখলাম। টিনা আর আনিকা অদ্ভুত ভাবে দেখছে আমায়। মনে হচ্ছে তারা এই প্রথমবার আমাকে দেখছে। আমি এসব রেখে উঠে চলে যেতে নিলাম এর মাঝেই আহিয়ান আমার হাত ধরে ওর পাশে বসতে বলল। সবাই গোল হয়ে বসে আছি গল্প করার জন্য। এর মাঝেই হঠাৎ টিনা জিজ্ঞেস করল,

“নিহার মাঝে এমন কি ছিল আহি যে তুই ওকে বিয়ে করলি!

আহিয়ান হেসে আমার শাড়ির আঁচল ধরল। উনি এটা একবার গিট্টু দিচ্ছি আবার খুলছে। নাহান ভাইয়া জিজ্ঞেস করল এমন কেন করছে। আনিকা বলে উঠে,
“আহি প্রশ্নের উওর খুঁজছে কারন সে নিজেও কনফিউজড!

“আহিয়ান হেসে বলল,
“ঠিক বলেছিস! কারন ওর মাঝে কি আছে তা আমি নিজেও জানি না তবে নিশ্চিত কিছু আছে তাই তো আজ ও আমার পাশে!

উনার কথায় পুরো পরিবেশ থমকে গেল। আকাশ ভাইয়া প্রশ্নের উত্তরে বেশ খুশি! কিন্তু আমি এটাই বুঝলাম না উনি কি কথাটা বানিয়ে বলেছেন শুধু ওদের জবাব দেওয়ার জন্য নাকি…

সিফাত আসে নি বলে অবাক হলাম না। ভালোই হয়েছে ও আসে নি। তবে সেদিনের সেই ঘটনা আমার মাথা থেকে বের হয়ে গেছিল। আবারো এসেছে! মনে হচ্ছে এখানকার ঝামেলার কারনে আবারো চলে যাবে!
.
সন্ধ্যার দিকে আয়ানা আপুর বর এলো। কালো রঙের স্যুট তার পড়নে হয়তো অফিস থেকেই এসেছে। তিনি দেখতে বেশ সুর্দশন। শরীরের গঠন ও ভালো। ইয়ান এতোদিন পর তাকে দেখে দৌড়ে তার কোলে চড়ে গেল। দীর্ঘদিন পর ছেলে আর বাবার সাক্ষাৎ দেখে ভালোই লাগলো। মা আমার সাথে তার পরিচয় করিয়ে দিল। নতুন বউকে দেখে সে যেমন অবাক তেমনি হতভম্বিত হয়ে গেল। শেষমেষ কিছু না পেয়ে ইয়ানের জন্য আনা চকলেট আমার হাতে দিয়ে বলল,

“নতুন বউ দেখবো এটা আশা করি নি। পুরোই অপ্রস্তুত আমি। নতুন বউ কে দেখে কিছু দিব না এটা হয় না। তাই এটাই দিলাম। কিছু মনে করো না।

তার কথায় আমি হেসে মাথা নাড়লাম। তাকে এখন লাজুক মনে হচ্ছে কিন্তু তিনি রসিক মানুষ। আহিয়ানের বিপরীত মুখী বলা যেতে পারে। সে পুরোপুরি’ই গম্ভীর! তবুও তার সারে উনার খুব ভাব। দুলাভাইয়ের সাথে যেমন হওয়া দরকার ঠিক তেমন।
সবাই একসাথে বসে গল্প করছি। দুলাভাই হাসতে হাসতে বলেন,

“কখনো ভাবি নি আহি বিয়ে করবে। এটা একদম অবাস্তব বলে মনে হচ্ছে!

আয়ানা আপু হেসে বলল,
“চুপ করুন, এভাবে বলবেন না।

ইয়ান বলে উঠে,
“আমার ভূতনি আম্মু কে তুমি কি বলছো।

অবাক হয়ে,
“ভূতনি আম্মু!

আপু হেসে বলে,
“এটা তোমার শ্যালকের দেওয়া নাম। নিহা কে সে ভূতনি বলে ডাকে তার সাথে এখন তোমার ছেলেও যুক্ত হয়েছে।

দুলাভাই আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“Such a unique name !

আহিয়ান একটু ভাব নিয়ে,
“আমি মানুষ টাই ইউনিক দুলাভাই!

দুলাভাই আপু আর ইয়ান কে নিয়ে চলে গেলেন। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। ইয়ান ছিল বলে সময় চলে যেত কিন্তু এখন সে নেই। কিন্তু ইয়ান তার পিকু টা কে আমার কাছে দিয়ে গেল। যাক সময় কাটানোর জন্য একটা ভালো বন্ধু পেলাম।
.
আহিয়ান গতকাল’ই লোক পাঠিয়েছিল আম্মু আর আব্বু কে আনার জন্য। সকালের দিকেই তারা চলে এসেছে। তাদের সাথে চাচাও এসেছে। মা তাদের খুব ভালোভাবেই অ্যাপায়ন করেছেন। দেখে খুব ভালো লেগেছে উনি তাদের সাথে মিশে গেছেন।
সন্ধ্যা বেলা বাবাও তাদের সাথে খুব ভালো ব্যবহার করলেন। তাদের যত্নের কোন ত্রুটি হতে দিলেন না। যথাসম্ভব অ্যাপায়ন করলেন। আব্বু’র‌ চিকিৎসার জন্য একজন ডাক্তার’র সাথে কথাও বললেন। রাতে আম্মু এসে আমার পাশে বসলেন। অনেকদিন পর মা আর মেয়ে একসাথে বসেছি। গল্প করলাম বেশ অনেকক্ষণ। মা গল্প করতে করতে কেঁদে দিলেন। আব্বুর সাথে দেখা করতে রুমে গিয়ে দেখি তার বিছানার পাশে আহিয়ান বসে আছে।‌ তারা গল্প করছিল। আমি আব্বুর পাশে বসে গল্প করলাম খানিকক্ষণ!

দেখতে দেখতে একসপ্তাহ পার হয়ে গেল। গতকাল’ই আম্মু আর আব্বু চলে গেছেন। মা তাদের যেতে দিতে চাইলেন না তবুও তারা চলে গেলেন। এর মাঝে গতকাল’ই‌ আয়ানা আপুর শশুড় শাশুড়ি এসেছিলেন। তাদের সাথেও পরিচয় হলো আমার। তাদের বর্ণনা দুলাভাইয়ের ন্যায়। তারাও আমাকে বেশ সহজ ভাবেই মেনে নিয়েছে। সবার এতো ভালোবাসা পেয়ে এখন মনে হচ্ছে পৃথিবীতে একমাত্র সুখী মানুষ শুধু’ই আমি যে কি না এতো ভালো একটা পরিবার পেয়েছি!

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here