শুধু_তুই #পর্বঃ১৭ #Rifat_Amin

0
176

#শুধু_তুই
#পর্বঃ১৭
#Rifat_Amin

– আম্মু বললো, তুই নাকি আমার সাথে ঘুমাবি না। তাহলে এখানে কি করছিস? (প্রহর)

প্রহরভাইয়ের কথা শোনামাত্র আবার কম্বলের নিচে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পরলাম। বাইরে মাথা বের করার সাহস হচ্ছে না। উনি গম্ভীর গলায় আবার বললেন,

– উত্তর না দিয়ে ঢং করছিস কেন? (প্রহর)

আমি আস্তে আস্তে কম্বলের নিচ থেকে মাথাটা বের করে বললাম,

– আমি কি জানি? প্রথমে আম্মি বললো আজকের রাতটা উনার সাথে থাকতে। আবার একটু পর বললো, আচ্ছা বাবুর রুমেই ঘুমা (আমি)

– বাব্বাহ! এত তারাতারি আন্টি থেকে আম্মিতে ট্রান্সফার হলো? রুমটা সাজালো কে? (প্রহর)

আমি বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি। বাসররাতে কেউ এমনভাবে প্রশ্ন করতে পারে তা এই জীবনে ভাবি নি। আমি হতাশ স্বরে বললাম,

– ভাইয়া আমাকে শান্তিতে ঘুমাতে দেন তো। ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। একটা কাজ করেন, এইযে নেন বালিশটা। সোফায় গিয়ে ঘুমিয়ে পরেন। আমি আমার বেড কারো সাথে শেয়ার করিনা। (আমি)

কথাটা বলতেই প্রহরভাইয়ের হাতে একটা বালিশ ধরিয়ে দিলাম। উনি রক্তিম দৃষ্টিতে তাকালেন। তীব্র কন্ঠে বললেন,

– এক্সাক্টলি। আমিও এই কথাটাই বলতে চাইছিলাম। তুই যে হাত পা ছাড়িয়ে ঘুমাস। তাতে তোর মতো অভদ্র মেয়ের সাথে বেড শেয়ার অসম্ভব। বালিশটা নিয়ে মেঝেতে শুয়ে পর। তোকে তো বিয়ে করেছি শুধু আম্মুর কাজে হেল্প করতে। আর কিছু নয়। (প্রহর)

কথাটা বলেই উনি ভিলেন মার্কা হাসি দিলেন। আমি হাসিটা দেখেই ভয়ে কাবু। কথাটা সিরিয়াসলি বললো, নাকি ফান করে বললো? ধুর। আন্টি আমাকে কখনই কঠিনভাবে কাজ করিয়ে নিবেন না। এ বিশ্বাস আমার আছে। আমি ঢং করে বিছানা থেকে উঠে পড়লাম। অসহ্য মার্কা শাড়িটা কোনোমতে গায়ে জড়িয়ে বললাম,

-আপনি থাকেন আপনার বিছানায়। আমি আম্মির রুমে চললাম। গিয়ে বলবো, ভাইয়া আমাকে বিছানায় থাকতে দিচ্ছেনা। তাড়িয়ে দিলো। (আমি)

কথাটা বলেই দরজার দিকে পা বাড়ালাম, উনি কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। মনে হয় দৃষ্টিতেই ঘায়েল করে দিবে। ঢং করে বের হতে ধরলাম যাতে প্রহরভাই আমাকে ফিরতে বলে। কিন্তু উনি ডাকছে না তো। আরে ডাকবে না নাকি? হায় আল্লাহ। রুম থেকে বের হওয়ার আগেই যেনো ডাক দেয়। আরে ডাক দে ভাই৷ আমি তো ঢং করছিলাম। দরজায় হাত দেয়ার সাথে সাথেই উনি গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

– বেশী ভাইয়া ডাকলে কাল সকালে টিভিতে ব্রেকিং নিউজ দেখবি, ” বাসররাতে স্বামীকে ভাইয়া বলায় স্বামী হার্ট এ্যাটাকে নিহত “। এখন আমাকে যদি বাঁচাতে চাস তাহলে ভাইয়া বলে ডাকা বন্ধ করে চুপচাপ শুয়ে পর। তুই বিছানাতে’ই শুয়ে পর। আমি সোফায় ঘুমাচ্ছি। ঘুমের ভীতর কেউ নড়াচড়া করলে একদম ঘুম হয়না আমার। আজকে’ই তোকে বিয়ে করলাম তো, তাই কষ্ট দিতে চাচ্ছিনা। কাজের লোক’কে কিন্তু প্রথমদিনেই বেশী কাজ করতে দেয়া হয়না। মৌকুফ থাকে। তেমন’ই তোকে আজকে বিছানায় ঘুমাতে দিলাম। কাল থেকে মেঝেতে বা সোফাতে ঘুমাবি।
মনে থাকবে? (প্রহর)

আমি ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে রইলাম। ভাই, এটা বাসর রাত নাকি অন্যকিছু? হতাশ স্বরে বললাম,

– আম্মিকে সব বলে দেবো কিন্তু ভাইয়া। (আমি)

আমার কথা শুনে প্রহরভাই যেনো আরো হতাশ হলেন। বিছানায় ধপ করে শরীরটা এলিয়ে দিয়ে বললেন,

– যা, সব বলে দিবি যা। তাহলে কালকে টিভিতে আরেকটা হেডলাইন দেখতে পাবি, ” বাসর রাতে স্বামী কি কি করেছে। সেসব বিবরণ পরদিন সকালে শাশুড়িকে বলায় সেখানেই শাশুড়ির স্পট ডেথ। ” (প্রহরভাই)

-আপনি খুবই খারাপ প্রহরভাই। (আমি)

প্রহরভাই আর কথা বাড়ালেন না। উনার শুভ্র মুখশ্রীতে গাম্ভীর্য টেনে এনে বিছানা থেকে উঠে পরলেন। গায়ে পান্জাবী। শুভ্র বর্ণের পান্জাবীটা, শুভ্র মানুষটিকে দারুণ মানিয়েছে। একদম হিরো হিরো লাগছে। এবার কালেজে গিয়ে ভাব দেখাতে পারবো যে প্রহরভাই আমার উনি। উনি মানে হাসবেন্ড আরকি। পরনেও সাদা পাজামা উনার। একদম ফিটফাট লাগছে। অতঃপর নিজের দিকে তাকালাম একবার, আহা! এর থেকে ফকিন্নির বেশ ভালো। এই প্রহরভাই আমার কি দেখে যে বিয়ে করলেন, আল্লাহ মালুম। উনি আমার সামনেই পান্জাবীটা খুলতে ধরলেন। আমি চটপট বললাম,

– আপনার মতো লজ্জাহীন মানুষ আমি একটাও দেখিনি। আমার সামনে’ই কিনা চেন্জ করছেন। কি অসভ্য মানুষ! (আমি)

– তোর না ঘুম পাচ্ছে৷ আর নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেছিস কখনো? শাড়িটা তো গামছার মতো শরীরে পেছানো। তোর লজ্জা লাগছে না। আর লজ্জা লাগবে আমার? (প্রহর),

আমি হতাশ দৃষ্টিতে তাকালাম। নিজের দিকে আরেকবার তাকিয়ে দেখলাম, আসলেই অবস্থা খারাপ। শাড়ি তো পরতে পারিনা। তাহলে কি সিনেমার মতো উনি আমার শাড়ি পড়িয়ে দিবেন? নায়ায়ায়া! কখন’ই এটা হবে না। আর উনি কখন’ই এমন রোমান্টিক না, হু! আমি কথা না বলে নিশ্চুপ থাকলাম। উনি ব্লাক কালারের একটা টিশার্ট পড়ে বললেন,

– তুই এই মহুর্তে যেটা ভাবছিস সেটা একদম ঠিক। আমি মোটেও রোমান্টিক না বুঝলি। কথাটা বলতে বলতেই উনি ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার খুললেন, একটা সুন্দর সালোয়ার-কামিজ দেখা গেলো ভেতরে, আরো অনেক মেয়েলি কাপর-চোপর। কিন্তু এসব উনার রুমে কেনো? উনি কি রুমে মেয়ে আনে নাকি? আমি বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে চিৎকার করে বললাম,

– ভাইয়া আপনি রুমে মেয়ে আনেন প্রতিদিন? এসব জামা-কাপর কই পেলেন? (আমি)

প্রহরভাই হাতের কাপরটা দ্রুত ফেলে দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরলেন। মহুর্তের কান্ডে আমি হতবাক। উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন,

– পাগল নাকি তুই? এমনে কেউ চিৎকার করে? আমি এসব তোর জন্যই কিনে রেখেছিলাম। (প্রহর)

মহুর্তেই চকচক করলো আমার দৃষ্টি। মনে রঙ্গিন প্রজাপতি ডানা মিললো। তার মানে উনি আমাকে আগে থেকেই বিয়ে করার প্লান করে রাখছিলো? হাউ সুইট। আমি ড্রয়ার থেকে সব জামা-কাপর বের করলাম। একটা থ্রি-পিসে চোখ আটকে গেলো। ব্লাক কালারের থ্রি-পিস। আরে এটাতো ছমাস আগে বাসার ছাদ থেকে হারিয়ে গিয়েছিলো। আর এটা আমার অনেক পছন্দের। হারিয়ে যাওয়ার দুদিন পর্যন্ত আমি এই শোকে কাতর ছিলাম। খাওয়া দাওয়া অফ হয়ে গিয়েছিলো, ধুর! এটা এখানে কেনো? আমি প্রহরভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,

– এটা তো আমার প্রহরভাই। আপনি কোথায় পেলেন? (আমি)

প্রহরভাইয়ের কাশি উঠে গেলো। গম্ভীর স্বরে বললেন,

– বাসররাতে মিথ্যা বলা যায়না তাইনা? (প্রহরভাই)

-মনে হয় (আমি)

-এটা ছমাস আগে তোদের ছাদ থেকে নিয়ে আসছিলাম। এটা পরলে তোকে অনেক সুন্দর লাগে। তোর মতো পেত্নীকে বেশী সুন্দরী হলে মানায় না৷ রাস্তাঘাটেও ছেলেরা তাকিয়ে থাকে। তাই চুরি করে এনেছি। বিয়ের পর বউ পরবে তাই রেখেও দিয়েছি। কিন্তু কে জানতো, তোর মতো রণচন্ডী আমার ভাগ্যে জুটবে? (প্রহর)

উনি ফুঁস করে নিশ্বাস ছেড়ে বিছানায় বসে পরলেন। আমি আবারো চিৎকার করে বললাম,

-তার মানে আপনি চোর? আমি চোরকে বিয়ে করেছি! হে আল্লাহ। এ কার সাথে বিয়ে হলো আমার। শেষ পর্যন্ত চোরের ঘরে? (আমি)

প্রহরভাই বিরক্তির স্বরে বললেন,

-আর একটা কথাও বলবি না। তোর পছন্দের জিনিস তোকে ফেরত দিলাম, এখন সোজা ওয়াশরুমে গিয়ে চেন্জ করে আসবি। তারপর ভদ্র মেয়ের মতো ঘুমিয়ে পরবি। (প্রহর)

কথাটা বলতেই আমার হাতে সেই থ্রি-পিসটা ধরিয়ে দিলেন উনি। আমি বাধ্য মেয়ের মতো চেন্জ করে আসলাম। চেন্জ করে এসে দেখি উনি পড়তে বসেছেন। হায়রে! এটাও দেখার বাকি ছিলো? ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত ১ টা ছুঁইছুঁই। আমি ভগ্ন স্বরে বললাম,

– কাল সকালে ব্রেকিং নিউজ হবে, ” বাসররাতে বউকে বিছানায় ঘুমাতে বলে পড়তে বসায় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অর্জন করলেন বাংলাদেশের প্রহর নামক এক যুবক। এই ঘটনায় স্ত্রীর হার্ট এ্যাটাক। ” (আমি)

প্রহরভাই ফিরে তাকালেন। বিরক্ত স্বরে বললেন,

– আমার কথা আমাকেই ফেরত দিচ্ছিস। ডিস্টার্ব না করে ঘুমা গিয়ে। (প্রহর)

——🤍

পরদিন সকাল ছটায় ঘুম ভাঙ্গলো প্রেমের। বাইরে মিষ্টি সুরে কোকিল ডাকছে। আজকাল কোকিলও শহরে আছে নাকি? প্রেম বিছানা থেকে উঠে বসলো। মাথাটা হালকা ব্যাথা করছে। ঘুম কম হওয়ার কারনেই বোধহয় এই ফল। ফোনটা অন করে দেখলো সারার দশটা মিস কল। দশমিনিট আগে লাস্ট কল করেছে। এত সকালে কেউ ফোন দেয়? খুব দরকার নাকি? প্রেম ঘুমু ঘুমু চোখে ফোন লাগালো সারাকে। সাথে সাথেই রিসিভ করলো সারা,

– ঘুম ভেঙ্গেছে হিমুসাহেব? (সারা)

প্রেম বিছানায় আবারো গা এলিয়ে দিয়ে বললো,

– আমি হিমু না সারা। আমি প্রেম। এত সকালে ফোন করেছো কেনো? (প্রেম)

– ফোন দিয়েছি বলে কি তুমি আমার উপর বিরক্ত? তুমি তো রোজ সকালে উঠো। অবশ্য মাঝে মাঝে লেট করো। সারাদিনে তো ব্যস্ত থাকো। মিট করারও সময় হয়না তোমার। (সারা)

– বিষয়টা মোটেও তেমন না সারা৷ তুমি এত সকালে ফোন করেছো তাই ভাবলাম দরকার আছে বোধহয়। আর কাল ভাইয়ার বিয়ে ছিলো তাই লেট করে ঘুমাইছি। মাথাটাও ব্যাথা করছে। (প্রেম)

-কিহহহহ! তোমার ভাইয়ার বিয়ে হয়েছে! সেটা আমাকে জানালেও না। আর কালকেই তো তুমি পার্লারে চুল কাটতে গেলে। তখন অন্তত জানাতে পারতে। আমি তোমার বন্ধু হতেও পারলাম না! (সারা)

প্রেম হেসে বললো,

– আমি তখনও জানতাম না বিয়ের কথা। আচ্ছা আজ আমাদের বাসায় আসো। আড্ডা দিবা না’হয় আপু ওরফে ভাবির সাথে। (প্রেম)

– তুমি সাথে থাকলে যেখানে খুশি আমি যেতে রাজি। আচ্ছা ঘুমাও আবার। দেখা হচ্ছে। (সারা)

প্রেম মেসেজ লিস্ট চেক করলো। আবীর হোয়াটসঅ্যাপে কিছু ইনফরমেশন পাঠিয়েছে,

‘ সোনিয়া তোর ভাইকে কখনো ভালোবাসে নি। ও জাস্ট বাজি খেলছে। এই জিনিসটা মাথায় রাখ। আর যার সাথে বাজি খেলছে সেই মেয়েটা তোর ভাইয়ের এক্স। হয়তো বিশ্বাস করবি না প্রহর ভাইয়ের এক্স আছে। কিন্তু এটাই সত্যি। কাল অনেক ইনফরমেশন পেয়েছিলাম প্রায়। বাট রাফি তাড়া দেয়ায় আর আগানো যায়নি। তবে যে মেয়েটা প্রহরভাইয়ের এক্স। সে সোনিয়ার থেকেও ধুরন্ধর। তোদের পরিবারের উপরও নজর রাখছে কেনো জানি না। আমার মনে হয় আরো জটিল কোনো ইস্যু আছে। বিয়ের ঝামেলাটা মিটুক। এই নিয়ে আরো ভাবা যাবে। আজ সবাই আজকে তোদের বাসায় দাওয়াত খেতে যাচ্ছি৷ প্রহরভাইয়ের বিয়ে খাওয়া আমাদের অনেকদিনের স্বপ্ন ছিলো 💔’

প্রেমের ঘুম উবে গেলো। ফোনটা সুইচডঅফ করে ফ্রেস হয়ে নিলো সে। গায়ে একটা শাল জড়িয়ে বাইরে বেড়িয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। আজকেও খালি পায়ে হাঁটতে হবে। ভালো লাগছে না, সবকিছু ধোঁয়াটে লাগছে। এই সোনিয়ার সাথে কথা বলা খুব দরকার। কিসের বাজি খেলছে এই সোনিয়া? ওর কি টাকার অভাব? হা-হা-হা। নাকি প্রহরভাইয়ের অভাব? তবে অভাব জিনিসটাই খারাপ।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here