যেদিন_আমি_থাকবো_না #লেখিকা_ইভা_আক্তার এবং #লেখিকা_তাসফিয়া_জামান #পর্ব_৬

0
282

#যেদিন_আমি_থাকবো_না
#লেখিকা_ইভা_আক্তার
এবং
#লেখিকা_তাসফিয়া_জামান
#পর্ব_৬

————————————
আলো বিচ্ছিন্ন রাত প্রায় দেড়টা। তুহিন আর তানিশা কিছুক্ষণ আগেই বাসায় ফিরেছে।
তিশার এমন কথাবার্তা দেখে তুহিন তিশাকে প্রচন্ডরকমের ধমক দিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তুহিন তানিশাকে নিয়ে তাদের সামনে থেকে চলে যায়। এতোগুলো বছর পর ভাই বোন একসাথে হওয়ায় তারা একসাথে মিলে ডিনার করে তাও আবার বাইরে।
কিছুক্ষণ আগে যখন তুহিন তানিশাকে নিয়ে বাড়ি ফেরে তখন রাফসান চৌধুরি তুহিনকে নানা প্রশ্ন করলেও তুহিন তার কোনো উত্তর না দিয়ে রুমে চলে যায়।
বিছানার উপর বসে তুহিন তার ব্যাগপত্র খুলছিল। আর তার পাশেই বসে আছে তানিশা।
– ওরা কি তোকে সবসময় এভাবেই কথা শোনায়? (তুহিন)

তানিশা মাথা নাড়ালো।
তুহিনের প্রচন্ড রাগ উঠছে ওর বাবা-মার উপর। এতোই যখন ঘৃণা তানিশার প্রতি তাহলে তানিশাকে কেনো তারা এডোপ্ট নিয়েছিল? আজ যদি তিশা না হতো তাহলে হয়তো তানিশাকে ঠিক আগের মতোই ভালোবাসতো ওর বাবা -মা।
তানিশার মন খারাপ দেখে তুহিন মুচকি হেসে বললো,
– জানিস তোর জন্য কি কি এনেছি?

তানিশা আগ্রহ নিয়ে তুহিনের দিকে তাকালো । তুহিন ব্যাগ থেকে প্রায় চার থেকে পাঁচ পিস চকলেটের ইয়া বড় বড় বক্স বের করে। এসব দেখে তানিশা খুশিতে লাফিয়ে উঠে।
– এগুলো কি সব আমার জন্য এনেছো ভাইয়া?

তুহিন মাথা নাড়িয়ে তানিশার হাতে সকল চকলেটের বক্স ধরিয়ে দেয়।
– শুধু তোর জন্য। আর কারো জন্য নয়।
– তিশার জন্য?
– না আনি নি। দরকার পড়ে নি ওর। যেখানে ও যা চায় তাই পায় সেখানে ওর জন্য আনার কিছু প্রয়োজন বলে মনে হলো না।
– ও তো তোমার কাছে আইফোন চেয়েছিল।
– আমার কাছে কেনো? বাবা তে আছেই। উনিই দিক।
– তিশা তো তোমার আপন বোন।
– কি বলতে চাইছিস তুই? তুই আমার বোন না? মানে আমি তোর ভাই না সেটা বলতে চাইছিস?

তুহিন কথাটা বলেই মুখ ফুলিয়ে ব্যাগ গোছাতে লাগলো। তানিশা এবার ঝটপট করে উঠে তুহিনের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
– আরে আরে ভাইয়া কি করছো?
– চলে যাবো আমি। যে বোনের জন্য আজ বিদেশ থেকে দৌড়ে এসেছিলাম সেই বোনই যেহুতু আমাকে ভাই হিসেবে মানে না তাহলে আমি আর এখানে থেকে কি করবো?
– সরি ভাইয়া। আর হবে না। সত্যি আর এমন বলবো না। এই পরিবারে তুমি ছাড়া আমার আপন বলতে আর কে আছে বলো?

তানিশার কথায় তুহিন থমকে গেলো। আসলেই তো! এই জীবনে তানিশাকে যতটা ভালোবাসা তুহিন দিয়েছে ততটা হয়তো কেউই ওকে ভালোবাসে নি। নিজের আপন বোনের থেকেও বেশি ভালোবেসেছে তানিশাকে। তুহিন তানিশাকে ওর পাশে বসিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
– তোর এই ভাই সবসময় তোর পাশে আছে আর থাকবে। আর সেটা যেকোনো মূল্যে হোক না কেনো।

তানিশা ওর ভাইয়ের বুকে মাথা রাখলো। এই ভাই যেনো ওর সবচেয়ে আপন।

————————–
– তুহিন কি খেতে আসবে না?

রাতের খাবারের জন্য ডাইনিং টেবিলে বসে থাকা রাফসান চৌধুরি কথাটা রোজা চৌধুরীর দিকে ছুড়ে মারলেন। রোজা চৌধুরী জবাবে বললেন,
– ডাকতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তুহিন বললো ও আর তানিশা দুজনেই নাকি বাইরে থেকে ডিনার করে এসেছে।

রোজা চৌধুরীর কথায় রাফসান চৌধুরি গম্ভীর হয়ে গেলেন। আর এদিকে নিজের মায়ের কথায় তিশা থ হয়ে গেলো। এতো বছর পরও নিজের ভাইয়ের সাথে ঘুরতে যাওয়া হলো না অথচ ওই এডোপ্ট মেয়েটাকে নিয়ে ডিনার করাও হয়ে গেছে। এসব ভাবতেই তিশা রাগে আর কষ্টে খাবার টেবিল থেকে উঠে গেলো। রোজা চৌধুরী আর রাফসান চৌধুরি দুজনেই তিশাকে ডাকলেও তিশা তাদের কথা না শুনে তুহিনের রুমে ঢুকে গেলো। তিশা ভেতরে গিয়ে দেখে তুহিন বিছানায় বসে ল্যাপটপে কি যেনো করছে। তিশা গিয়ে তুহিনের কাছে বসে বললো,
– কেমন আছো ভাইয়া? আসার পর থেকে একবারও কথা বললে না।

তিশার কথায় তুহিন ল্যাপটপের দিকে চোখ রেখে গম্ভীর গলায় বললো,
– কিছু কি আর বলার জন্য রেখেছিস তোরা? আসার পর থেকে দেখছি বাড়ির প্রত্যেকে তানিশার সাথে কিরকম বিহেভ করছে। এগুলো দেখেও কি কথা বলার ইচ্ছে জাগে?
– বিশ্বাস করে ভাইয়া। তানিশাই প্রথমে আমার সাথে ঝগড়া করেছে। ও সবসময় আমার সাথে ঝগড়া করে। হিংসে করে ও আমাকে।
– সেট আপ তিশা। আর মিথ্যে বলতে হবে না। তোর থেকে আমি তানিশাকে বেশি ভালো জানি। তুই এখন আসতে পারিস।

তিশা অবাকের উপর অবাক হয়ে যাচ্ছে
নিজের প্রাণপ্রিয় ভাইকেও অবশেষে ওই মেয়ে কেড়ে নিলো। এটা ভাবতেই তিশা রেগে গেলো। তবুও তিশা কাঁদোকাঁদো ভাব ধরে বললো,
– তুমি আমার থেকে তানিশাকে বেশি ভালোবাসো তাই না?

তিশার আশা ছিলো তুহিন হয়তো ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে। কিন্তু তিশার মন ভেঙে দিয়ে তুহিন বলে উঠলো,
– ওর মতো বোন যার আছে তাকে ভালো না বেসে পাড়া যায় না। আর তুই ঠিক তার বিপরীত।

তিশা এবার হা হয়ে গেলো তুহিনের কথায়। ওর ইচ্ছে করছে এই মুহুর্তে সবকিছু ভেঙে চুরমার করে দিতে। রাগে দুঃখে তিশা রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
তিশা রুম থেকে বের হতেই ওর চোখে পড়ে তানিশার রুম। তিশা হনহন করে তানিশার রুমে ঢুকে যায়। ওর উদ্দেশ্য তানিশাকে প্রায় একশোটা কথা শুনিয়ে তারপর নিজের মনকে শান্ত করবে। কিন্তু এ কি!
তানিশা তো রুমেই নেই। তিশা বুঝতে পারলো তানিশা ওয়াশরুমে গেছে। হতাশ হয়ে যখনই রুম থেকে বের হতে যাবে তখনই ওর চোখে পড়ে বিছানায় রাখা অনেকগুলো চকলেটের প্যাকেট। তিশার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে চকলেটগুলো কার নিয়ে আসা। তিশার চোখ থেকে রাগে দুঃখে এক ফোঁটা পানি বেরিয়ে পড়লো। তিশা ঠিক করলো এবার তানিশাকে উচিত শিক্ষা না দিলো আর হবে না। যে করেই হোক তনিশাকে বাড়ি থেকে বের করতেই হবে।

———————————–
ভার্সিটির ক্যাম্পাসে বসে আইরিন আর অভি অপেক্ষা করছে তানিশা এবং নীলের জন্য। অথচ এদিকে দুজনের যেনো কোনো খবরই নেই। দুজনের গাড়িই পার্ক করা আছে। তাহলে কোথায় গেলো ওরা?
হটাৎ করেই সামনে তাকিয়ে দেখে তানিশা আইসক্রিম খেতে খেতে নীলের সাথে আসছে। তানিশা এসে আইরিনের পাশে বসলো আর নীল বরাবরের মতো তানিশার পাশে। নীলের হাতে থাকা তিনটা কোকের ভেতর দুটো আইরিন এবং অভিকে দিলো।
– কোথায় ছিলি রে তোরা? ( আইরিন)
– কি গরম পড়েছে দেখেছিস? এজন্যই ঠান্ডা কিছু নিয়ে আসলাম। (নীল)
– অনেক অনেক থ্যান্কস দোস্ত। এই গরমে একটু হলেও মন প্রফুল্ল হবে(আইরিন)
– আজকে জাইমা আসে নি? (অভি)
– তোমার এতো জাইমার জন্য মন নাচছে কেনো? (আইরিন)

অভি এবার ভড়কে উঠলো। ও বুঝতে পারে নি কথাটা আইরিনের গায়ে লাগবে।
– মানে জাইমা থাকলেই কোনো না কোনো ঝামেলা হয় তাই আর কি বললাম।
– ভালো।

আইরিন চোখ বাকিয়ে কোক খাওয়ার দিকে মনোযোগ দিলো। হটাৎই ওর সামনে সবচেয়ে বিরক্তিকর মানুষকে দেখে বললো,
– নাম নিতে দেড়ি নেই চলে এসেছে।

আইরিনের কথায় সকলেই চমকে উঠলো। পেছনে তাকানোর আগেই নীলের পাশে বসে পড়লো জাইমা। নীল মনে মনে ভাবছে এরকম একটা নির্লজ্জ মেয়েই কি তাহলে ওর বউ হবে?
তবে আগের তুলনায় জাইমার মুখটা ছিলো আজ পুরোপুরিভাবে ফ্যাকাসে। এটা দেখে সকলেই অবাক হয়ে গেলো।
– কেমন আছো তোমরা?

ফ্যাকাসে মুখ নিয়ে প্রশ্ন করলো জাইমা। জাইমার কথায় তানিশা উত্তর দিলো,
– ভালো। কিন্তু তোমাকে আজ এমন দেখাচ্ছে কেনো?
– বলতে পারছি না। কাল রাত থেকেই শরীরটা খারাপ। হয়তে বা জ্বর এসেছে।

নীলের সোজাসোজি উত্তর,
– তাহলে বাসায় বিশ্রাম করলেই পারতে। অযথা এখানে এসে সমসয় নষ্ট করছো কেনো?

নীলের কথায় জাইমার মাথা নিচু হয়ে গেলো। সকলেই বুঝতে পারলো নীলের কথায় জাইমা কষ্ট পেয়েছে। তানিশা কিছু বলার আগেই বেল পড়ে যায়। ফলে আইরিন আর অভি সেখান থেকে চলে যায়। নীল দাঁড়িয়ে বলে,
– চল তানিশা। লেট হয়ে যাচ্ছে তো।
– তুই যা আমি আসছি।

তানিশার কথায় নীল যেতে না চাইলেও চলে গেলো। জাইমা মাথা নিচু করে বসে আছে। তার পাশে তানিশা এসে বসে পড়লো।
– কি হয়েছে তোমার?
– সেটা জেনে তুমি কি করবে?

জাইমার রাগী কন্ঠে তানিশা অবাক হয়ে গেলো। তারমানে এতোক্ষণ ধরে এই মেয়ে পুরোটাই নাটক করছিলো? জাইমা তানিশার চোখ বরাবর তাকিয়ে বললো,
– নিজেকে বেশি অভার স্মার্ট ভেবো না। যদি ভেবে থাকো এতো সহজে নীলকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নেবে তাহলে ভুল করবে। আমি জাইমা, এতো সহজে নীলকে ছাড়বো না। নীল আমার। ওর জন্য আমি তোমাকে শেষ করে দিতেও বিন্দুমাত্র ভাববো না।

তানিশা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে তাচ্ছিল্যভাব ধরে বলতো লাগলো,
– নীলকে তোমার লাগবে নাকি ওর সম্পত্তিকে?

তানিশার কথায় জাইমা অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। তানিশা এবার টেবিলের উপর হাত রেখে ঝুঁকে জাইমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– ছেড়ে দেওয়ার স্বভাব আমার বহুকাল ধরে রয়েছে। কিন্তু আমার সাথে যে শত্রুতামি করবে তাকে আমি ছেড়ে দেব না। এই দুনিয়ার প্রত্যেকটা মানুষকে আমি উচিত শিক্ষা দেব যারা কিনা আমার পুরো লাইফটাকে ছিন্নবিন্ন করে দিয়েছে। আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিয়েছে। আমি শান্ত মানে যে আজীবন চুপচাপ থাকবো এমন নয়। আমি ধ্বংস। তাদের জন্য যারা আমার লাইফটাকে ধ্বংস করেছে।

তানিশা কথাগুলো বলেই হনহন করে ক্লাসে চলে যায়। আর এদিকে জাইমা এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। তানিশাকে বুঝতে পারা জাইমার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। এই মেয়ে যেনো বহুরূপী।

—————————-

রোজা চৌধুরী আর রাফসান চৌধূরী যখন টেবিলে বসে নাস্তা করছিলেন তখনই দোতলা থেকে নেমে আসে তুহিন। রোজা চৌধুরী তুহিনকে বলে,
– এসো বসো তুহিন। আসার পর থেকে তো মায়ের সাথে একবারও কথা বলার প্রয়োজন মনে করলে না।

তুহিন রোজা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে,
– অবশ্যই মনে আছে। কেনো মনে থাকবে না। শুধু ঘৃণা জন্মে গেছে।

তুহিনের কথায় রাফসান চৌধুরি ধমক দিয়ে উঠলেন,
– এসব কি বলছো কি তুমি? ভুলে যেওনা আমরা তোমার বাবা মা।
– তোমরাও ভুলে গেছো যে তানিশা তোমাদের মেয়ে।আমার বোন ও। তিশা আর তানিশার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। দুজনেই আমাদের আপন। কেনো তোমরা তানিশার সাথে এমন বিহেভ করো? বলো।
– কারণ ও আমাদের মেয়ে না।

তুহিন হেসে উঠলো।
– কিন্তু তোমরা ওকে মেয়ে হিসেবেই এ বাড়িতে নিয়ে এসেছিলে। মনে আছে তো?
– তখনকার ব্যপার আর এখনকার ব্যপারের মধ্যে তুমুল পার্থক্য।

তুহিন এবার গলার আওয়াজ বড় করে বলে উঠলো।
– আজ যদি তিশা না হতো তাহলে কি তোমরা তানিশাকে আগের মতো ভালোবাসতে না?

রাফসান চৌধুরি আবারো ধমক দিলেন।
– আওয়াজ নিচে তুহিন। কার সামনে কিভাবে কথা বলছো জ্ঞান আছে তো?
– যেদিন তোমরা নিজেদের জ্ঞান ফিরে পাবে সেদিন তোমরাও আমার কাছ থেকে ভালো বিহেভিয়ার পাবে। আর একটা কথা মনে রাখো। আমি আর বিদেশ ফিরছি না। যদি ফিরি তাহলে তানিশাকে নিয়ে তবেই ফিরবো। এই জাহান্নাম থেকে আমি আমার বোনকে নিয়ে যাবো।

তুহিন চলে গেলো তাদের সামনে দিয়ে। রাফসান চৌধুরি আর রোজা চৌধুরী মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলেন। তানিশার জন্য আবার তারা যেনো তুহিনকে না হারিয়ে ফেলে।

——————————–
ক্লাসের স্যার বের হতেই সকল স্টুডেন্টরাও একে একে বের হতে লাগলো। কেননা আজ আর কোনো ক্লাস নেই কারো। নীল তানিশার দিকে তাকিয়ে দেখে তানিশা বই খাতা না গুছিয়ে উল্টো বইয়ের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।
– কি হলো যাবি না?
– তুই যা। আজ যেহুতু আর ক্লাস হবে না তাই খানিকক্ষণ এখানে থেকে পড়াগুলো রেডি করবো।
– তাহলে আমিও থাকি।
-জাইমা একা। তোর ওর কাছে যাওয়া উচিত।
– প্লিজ তানিশা।

তানিশা নীলের দিকে তাকালো।
– কি? তুই কেনো ওর প্রতি এতো বিরক্ত। একদিন না একদিন তো তোকে ওর সাথেই সংসার করতে হবে।
– জাস্ট স্টপ তানিশা।

নীল কথাটা বলেই চলে গেলো। তানিশা ভাবতে লাগলো হয়তো বা একটু বেশিই বলে ফেলেছে৷ কিন্তু ভুল কি বলেছে।

কিছুক্ষণ পর তানিশা টের পেলো ওর পাশে কেউ বসেছে। তানিশা ওর পাশে তাকিয়ে দেখে তিশা ওর পাশে বসে আছি।
– তুমি?
– হুম আমি। কেনো আমাকে দেখে বুঝি ভালো লাগে নি?
– সব কথার উল্টো বুঝাটাই বোধহয় তোমার স্বভাব।
– সঠিকটা বুঝে কি হবে? উল্টো মানুষকে হতাশ করে।
– কি বলতে এসেছো তুমি?কি চাও?
– কি আর চাইবো? তোমার কাছে আর চাওয়ার আছেই বা কি? একেক করে সকলকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছো। এখন ভাইয়াকেও কেড়ে নিয়েছো। তুমি সত্যি জোস তানিশা।

তানিশা অবাক হয়ে ওর দিকে চেয়ে রইলো। তারমানে এসব বলতেই এখানে এসেছে তিশা। তানিশা ব্যাগ গুছিয়ে বের হতে যাবে এমন সময় তিশা ওর সামনে এসে পড়ে।
– রাস্তা আটকাচ্ছ কেনো?,
– চলে যাও আমার জীবন থেকে। আমি মুক্তি চাই তোমার কাছ থেকে। আচ্ছা তুমি কি মরতে পারো না? এতো মানুষ মরে তুমি কেনো মরো না।
-তোমার মতো জঘন্য আর নিকৃষ্ট মানুষ আমি আমার জীবনে আর একটাও দেখি নি।
– চুপ থাকো। আমি তোমার কাছ থেকে এডভাইস নিতে আসি নি। একটা কথা মনে রেখো তানিশা। তুমি আমার কাছ থেকে কাউকে কেড়ে নিতে পারবে না। না ভাইয়াকে না নীলকে।

তিশা কথাগুলো বলেই দরজা লাগিয়ে বাইরে চলে যায়। আর এদিকে তানিশা হতাশার শ্বাস ছাড়ে। কেনো ওর জীবনেই এতো শত্রু?কই ও তো কারো ক্ষতি করে নি। তানিশা দরজা খুলে বাইরে যেতে নিলে দেখতে পায় দরজা লাগানো। তানিশা এবার ভয় পেয়ে যায়। তানিশা ব্যাগটা রেখে দরজা খোলার চেষ্টা করে তবুও দরজা খুলতে খুলতে পারে না। তানিশার আর বুঝতে বাকি রইলো না তিশা দরজা আটকে গেছে। তানিশা চিৎকার করতে থাকে। কিন্তু কারে শব্দ পায় না। কারণ আজ কারোই কেনো ক্লাস নেই। সকলে এখন ক্যাম্পাসে নয়তো বাসার দিকে রওনা দিচ্ছে।
এদিকে তিশা যখন দরজা লাগিয়ে চলে যেতে নেয় তখন জাইমা সেটা দেখে ফেলে। জাইমাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিশা ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু অদ্ভুদ ভাবে জাইমা তিশার কাছে এসে বলে,
– তাহলে দেখি তোমার আর আমার দুজনের উদ্দেশ্যই এক। বাহ!

চলবে,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here