যেদিন_আমি_থাকবো_না #লেখিকা_ইভা_আক্তার এবং #লেখিকা_তাসফিয়া_জামান #পর্ব_৫

0
164

##যেদিন_আমি_থাকবো_না
#লেখিকা_ইভা_আক্তার
এবং
#লেখিকা_তাসফিয়া_জামান
#পর্ব_৫

———————————
-এসব তুই কি বলছিস তানিশা?কই যাবো আমি?আমি কেনো তোকে ছেড়ে যাবো?
-আমি জানি৷ আমি সবই জানি৷

কথাটা বলেই তানিশা হেসে দিলো। এদিকে নীল অপলক দৃষ্টিতে তানিশাকে দেখে চলছে। কিছুক্ষণ পরই রুমে আফিফা সওদাগর হাতে লেবু পানির গ্লাস নিয়ে প্রবেশ করলেন ।
– এই যে তানিশা মামনি নেও। এই লেবু পানিটা খেলে শরীরটা ভালো লাগবে ।

আফিফা সওদাগর তানিশাকে লেবু পানি খেতে দিলে তানিশা পুরোটা খেয়ে ফেলে । সকলেই তানিশার হাবভাব বুঝার চেষ্টা করলো । হুট করেই তানিশা গলগল করে বমি করে দেয় । বমির কারণে তানিশার পুরা জামা নষ্ট হয়ে যায় ।
– মম তুমি জাইমাকে বলো তানিশার জন্য যেনো ও এক সুট জামাকাপড় নিয়ে আসে ।

আফিফা সওদাগর মাথা নাড়িয়ে সেখান থেকে চলে যায় ।
আফিফা সওদাগর জাইমার রুমে গিয়ে দেখে জাইমা মোবাইলে কিছু একটা করছে।
– জাইমা বলছিলাম যে তানিশা বমি করার কারণে ওর জমা নষ্ট হয়ে গেছে । তুমি কি ওকে তোমার এক সুট জামা দিতে পারবে ?
– ইম্পসিবল আন্টি । আমি আমার জামা করো সাথে শেয়ার করি না । যেখানে তানিশাকে আমি চিনি না জানিনা ওকে আমি আমার জামা কেনো দিতে যাবো ।

আফিফা সওদাগর জাইমার কথায় প্রচন্ড রেগে গেলেন । এত বড় হিংসুটে মেয়ে তিনি আজ পর্যন্ত দেখেননি ।
অবশেষে বাধ্য হয়ে আফিফা সওদাগর তানিশাকে নীলের একটা শার্ট পরতে দিলো । তিনি জানতেন নিতুর কাপড় ওর গায়ে ঠিকঠাক মত আটকাবে না ।
তানিশাকে জামা পরিয়ে দিয়ে আফিফা সওদাগর রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন । নীল ভিতরে ঢুকে দেখল তানিশা ঘুমে তলিয়ে গেছে । নীল ভাবতে লাগলো তানিশার বলা কথাগুলো ।হটাৎ তানিশা কেনো এসব বললো? কেনো আমি ওর কাছ থেকে দুরে সরে যাবো ?
নীল তানিশার দিকে একবার তাকিয়েই রুম থেকে চলে গেলো । রুম থেকে বের হতেই আফিফা সওদাগর তাকে বলে ,
– নীল বাবা , তানিশা যে আজ রাতে এখানেই থাকবে সেটা কি ওর বাবা মাকে বলা উচিত না ?
– তুমি তো জানোই মম ওর বাবা মা কেমন । যদি জানতে পারে ও ড্রিংক করেছে নির্ঘাত তানিশাকে আজেবাজে কথা শুনিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেবে । আর তাছাড়া তানিশা বাড়িতে না গেলে ওনারা আরো বেশি খুশি হয় । তানিশার যদি খোঁজ নাও থাকে তবুও ওনারা তানিশার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা একবারও করবেন না ।

নীল কথা গুলো বলেই গেস্ট রুমে চলে যায় । এই দুনিয়াতে যে তানিশা বড্ড একা সেটা সওদাগর ফ্যামিলির সকলেই জানে ।

—————————
সকালে তানিশার ঘুম ভাঙতেই দেখতে পায় তানিশা নীলের একটা শার্ট গায়ে দিয়ে নীলের রুমে শুয়ে আছে । তানিশা গতকালের কথা চিন্তা করতেই তার মাথা ব্যাথা করে উঠে । কোনো রকম ওয়াশরুমে থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে তানিশা নিজের জামা গায়ে দেয় । হয়তো বা কাল রাতেই কেউ জামাটা ধুয়ে শুকাতে দিয়েছিল ।
তানিশা রুম থেকে বের হযতে যাবে এমন সময় রুমের সামনে নীল এসে পরে ।
– এখন কেমন লাগছে শরীর ?
– ভালো । নীল ।
– হু
– বিশ্বাস কর আমি ইচ্ছে করে ড্রিংক করি নি । তুই তো জানিসই যে আমি এসব পছন্দ করি না ।
– আমি জানি । আমি এটাও জানি যে তুই ইচ্ছে করে ড্রিংক করিস নি ।

তানিশা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে ছিলো । নীল ভিতরে ঢুকে আলমারি থেকে শার্ট আর প্যান্ট বের করে । তানিশার কিছু একটা মাথায় আসতেই সে দৌঁড়ে নীলের পিছে দাড়িয়ে বলে ,
– আচ্ছা নীল । কাল রাতে ড্রিংক করার পর কি আমি তোর সাথে কোনরকম বাজে ব্যবহার করেছিলাম ?

নীলের মাথায় দুষ্টু একটা বুদ্ধি চাপল । সে পিছনে ঘুরে তানিশাকে বলে ,
– না বাজে ব্যাবহার করিসনি কিন্তু ,
– কিন্তু কি ?

নীল তানিশার দিকে খানিকটা এগিয়ে বলে ,
– ধুর এসব বলা যায় নাকি ?

তানিশা চোখ বড় বড় করে বলে ,
– মানে ? আমি এমন কি করেছিলাম যে সেটা বলা যায় না ?
– তুই কি এখনও বাচ্চা নাকি তানিশা ?
– তুই কি বুঝাতে চাইছিস ?
-কাল রাতে তুই আমার কাছে এসে ,,

এতুটুকু বলেই নীল একটা চোখ টিপ মেরে ওয়াশরুমে ঢুকে যায় । আর এদিকে তানিশা যেনো চিন্তায় বিভোর হয়ে যেতে লাগলো । কি এমন করেছে তানিশা ? হায় আল্লাহ !

রুম থেকে বের হতেই আফিফা সওদাগর তানিশাকে বলে,
– কেমন আছো তানিশা ? শরীর ভালো তো ?
– জি আন্টি । আগের থেকে ভালো আছি শুধু একটু মাথা ব্যাথা আছে ।
– আচ্ছা নাস্তা করে ওষুধ খেয়ে নেও দেখবে ঠিক হয়ে গেছে ।
– না না আন্টি । আমি এখন বাসায় যাবো ।
– এসব কি বলছো তানিশা ? নাস্তা করেই চলে যাবে ? তোমার আংকেল আর নীল জানলে কিন্তু খুব রেগে যাবে ।
– কিন্তু আন্টি
– কোনো কিন্তু না । চুপচাপ খেতে এসো । এটা আমার শেষ কথা ।

তানিশা বাধ্য হয়ে অবশেষে ডাইনিং রুমে গেলো ।
এদিকে নীল ওয়াশরুম থেকে বের হতেই রুমে জাইমাকে দেখে বিরক্ত হয়ে যায় ।
– তানিশা কেমন আছে নীল ?
– এটা তুমি ওকে জিজ্ঞেস করলেই পারতে।
– ওকে রুমে পাই নি । ভাবলাম ও হয়তো ওয়াশরুমে ।
– ভালো । এত দরদ কোথায় ছিল যখন কাল রাতে সামান্য একটা জামা চাইতে মম গিয়েছিল আর তুমি সেটা দিতে নারাজ হয়েছিলে ?

জাইমা কিছু বললো না । কিছু বলার মতন আছেই বা কি ওর ? নীল ওকে এভয়েড করে সেখান থেকে চলে গেলো ।
ডাইনিং রুমে গিয়েই নীল দেখলো তানিশা সোফায় বসে টিভি দেখছে ।
নীল ডাইনিং টেবিলে খেতে বসতেই নীলের পাশে জাইমা বসে পড়ে । কিছুক্ষন পর আফিফা সওদাগর তানিশাকে ডেকে আনে । তানিশা ডাইনিং রুমে এসে আফিফা সওদাগরের পাশে বসতে নিলে নীল ওর হাত ধরে বলে,
– ওখানে বাবা বসুক । তুই আমার পাশে বস ।

তানিশা নীলের কথা অনুযায়ী নীলের পাশে বসে । এদিকে জাইমার মাথা খারাপের উপর খারাপ হচ্ছে । ওর মাথায় শুধু একটাই কথা নাড়া দিচ্ছে । তানিশাকে রাস্তা থেকে না সরালে নীল ওর থেকে দূরে সরে যাবে ফলে নীলের সব সম্পত্তি জাইমার হাত থেকে ছাড়া হয়ে যাবে।

—————————–
তানিশা এবং নীল দুজনে একসাথে ভার্সিটি এসেছে। এই প্রথম জাইমা ভার্সিটি আসে নি। নাহলে নীলকে ভার্সিটি যেতে দেখলেই পিছু করতো। তানিশা ক্যাম্পাসে ঢুকতেই আইরিন এবং অভি ওকে একটার পর একটা প্রশ্ন করতে থাকে। অবশেষে নীল পুরো ঘটনা ওদের বলে।

ক্লাস শেষ হতেই সকলে মিলে ক্যাম্পাসে বসে। অথচ আজ নীলকে পাওয়া যাচ্ছে না। সকলে একের পর এক নীলকে কল করে যাচ্ছে কিন্তু নীলের যেনো কোনে রেসপন্স নেই।
এদিকে নাইট ক্লাবে চিৎকার চেচামেচি আর হৈ-হুল্লোড়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে। কোনো এক ছেলে এসে একজন ওয়েটারকে আচ্ছা মতো ধোলাই দিয়েছে। পরে জানা গেলো ওয়েটারটা নাকি টাকা খেয়ে এক মেয়েকে চুপি চুপি জুসের সাথে ড্রিন্ক মিশিয়ে দিয়েছে।
আর এটা তানিশার সাথেই ঘটেছে। ক্লাস শেষ হতেই নীল গাড়ি নিয়ে ছুটে আসে নাইট ক্লাবে। আর তারপরই সে আচ্ছা মতো ধোলাই দেয় ওয়েটারটাকে। অবশেষে ওয়েটারটা মুখ খুলে বলে জাইমা নাকি ওকে টাকা দিয়েছে। আর কথাটা শুনেই নীল সেখান থেকে বেরিয়ে পড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে।

বাড়িতে পৌঁছেই নীলের চিৎকার,
– জাইমা।

নীলের চিৎকারে সকলে সেখানে হাজির হয়। আফিফা সওদাগর ছেলেকে বলে,
– কি হয়েছে নীল? এভাবে জাইমাকে কেনো ডাকছো?

নীল তার মায়ের কথার কোনো উত্তর দেয় না। সে জাইমাকে দেখতে পেয়ে ওর সামনে গিয়ে ওকে চর মারতে যাবে এমন সময় জিহাদ সওদাগরের ডাকে সে হাতটা থামায়।
– নীললল

জিহাদ সওদাগর নীলের কাছে এস বলেন,
– এসব কি হচ্ছে কি? তুমি কি ভুলে গেছো তুমি কি করতে চাইছো?কার গায়ে হাত তুলতে নিয়েছিলে তুমি?

নীল এবার গর্জে উঠে,
– ওকে জিজ্ঞেস করো তোমরা কি করেছে ও। গতকাল রাতে তানিশাকে জুসের সাথে মদ মেশানোর জন্য জাইমা ওয়েটারকে টাকা দেয়।

নীলের কথায় সকলে জাইমার দিকে তাকিয়ে রয়। আর এদিকে জাইমা ভয়ে ঘেমে যাচ্ছিল। আফিফা সওদাগর জাইমার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলেন,
– এটা কি সত্যি জাইমা?
– আন্টি আমি বুঝতে পারি নি। আমি ভাবলাম একটু আকটু ড্রিংক না করলে কি মজা হয়? একারনে ওয়েটারকে বলেছিলাম ওকে যেনো ড্রিন্ক দেয়।
– চুপ থাকো। এটা কে কি তুমি সিঙ্গাপুর পেয়েছো? এতো বড় সাহস কি করে হলো তোমার?

আফিফা সওদাগরের কথায় জাইমা এবার কান্নার নাটক করতে থাকে। নীল বিরক্ত হয়ে নিজের রুমে চলে যায়। জিহাদ সওদাগর জািমার কাছে এসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন,
– ঠিক আছে মামনি আর কাঁদতে হবে না। বুজেছু তুমি বুল করেছো। নীলের কথায় বা কাজে মন খারাপ করো না ঠিক আছে?
– আঙ্কেল নীল তো সবসময় তানিশার পিছে ঘুরে। অথচ ও আমাকে দেখতেই পারে না।
– তানিশা নীলের বেস্ট ফ্রেন্ড। একারনেই ও ওর সাথে সবসময় থাকে। তুমি কিচুদিন থাকো দেখবে নীল তোমার সাথেই সারাটাক্ষন থাকতে চাইবে। ধৈর্য্য ধরো দেখবে ঠিক হয়ে যাবে।

জিহাদ সওদাগরের কথায় জাইমা মনে মনে বলতে লাগলো,
– কখনোই আমি তানিশাকে ক্ষমা করবো না। ওকে শেষ করে না দেওয়া পর্যন্ত আমি এইখান থেকে নড়বোই না।

————————————-
কিছুক্ষণ আগেই তানিশা বাসায় ফিরেছে। তানিশাকে বাসায় ফিরতে এখোনো কেউ দেখে নি।
কিছুক্ষণ পর তিশা বাড়িতে ঢুকেই তানিশাকে ডাকতে থাকে। আজ পর্যন্ত তিশা কখনোই তানিশাকে আপু বলে ডাকে নি। যাকে বোন বলে মানেই না তাকে আপু বলে সম্মান দিয়ে কি হবে? আর এটাই ওর চিন্তা ভাবনা।
তিশার ডাকে রোজা চৌধুরী ড্রয়ই রুমে এসে তিশাকে জিজ্ঞেস করে,
– কি হয়েছে মামনি তুমি তানিশাকে এভাবে ডাকছো কেনো?

তানিশাকে নিচে নামতে দেখে তিশা ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
– সেটা তুমি তোমার এই মেয়েকেই জিজ্ঞেস করো। গতকাল রাতে ওর কার সাথে ফষ্টিনষ্টি করে এসেছে।

তিশার কথায় রোজা চৌধূরী তানিশার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
– তিশা এসব কি বলছে তানিশা? গতকাল রাতে কোথায় ছিলে তুমি?

যতই তানিশা ঝামেলা মুক্ত জীবন কাটাতে চাচ্ছে ততই যেনো ওর জীবনে ঝামেলা এগিয়ে আসছে। তানিশা গম্ভীর কন্ঠে জবাব দিলো,
– তোমার মেয়ের কথার কি প্রমাণ আছে যে আমি ফষ্টিনষ্টি করে এসেছি?
– যা প্রশ্ন করেছি তার জবাব দাও।
– নীলের বাসায় ছিলাম।

তানিশার কথায় রোজা চৌধুরী চুপ হয়ে গেলেও তিশা রাগে জ্বলে উঠে।
– ওর বাসায় তুমি গিয়েছিলে?কিন্তু কেনো?
– এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যপার। আর আমি আমার ব্যক্তিগত ব্যপারে কাউকে নাক গলানো পছন্দ করি না। যেহুতু নীল আমার বেস্ট ফ্রেন্ড সেহুতু চাইলেই আমি ওর বাসায় যেতে পারি।
– চুপ থাকো। তোমার কোনো অধিকার নেই ওর কাছে যাওয়ার। তোমার মধ্যে এমন কি আছে যেটা দিয়ে তুমি ওকে আকৃষ্ট করতে চাও? এই বাড়ির কিছুই তোমার না। সব আমার। তুমি নিজেকে রাফসান চৌধুরির মেয়ে বলে পরিচয় দিলেও রাফসান চৌধুরি তোমার কেউ হয় না। উনি আমার বাবা। আর তুমি শুধুমাত্র এই বাড়ির একজন আশ্রিতা।

তিশার কথায় দরজার সামনে থেকে কেউ সিংহের মতো গর্জন করে চিৎকার করে বলে,
– তিশা।

সকলের চোখ যায় মেইন দরজার সামনে।
– আর একটা বার যদি তানিশাকে নিয়ে তুই বাজে কথা বলিস তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।

তুহিনের রাগী কন্ঠে চিৎকারে তিশা একদম ভেজা বেড়াল হয়ে যায়। আর এদিকে তানিশা সিড়ি থেকে নেমে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে ওঠে,
– ভাইয়া,

চলবে,,,💓

[ দুঃখিত! প্রায় ছয় দিন পর গল্পটা দেওয়ার জন্য। আসলে গল্পটার লেখিকা যেহুতু দুজন তাই দুজনকে সমানভাবে একটিভ থাকতে হয়। লেখিকা তাসফিয়া জামান আপুর এক্সামের কারণে সে একটিভ থাকতে পারে নি। এখন যেহেতু দুজনেই একটিভ আছি সেহুতু আপনারা গল্পটা নিয়মিত পাবেম ইনশাআল্লাহ। ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

———————————
-এসব তুই কি বলছিস তানিশা?কই যাবো আমি?আমি কেনো তোকে ছেড়ে যাবো?
-আমি জানি৷ আমি সবই জানি৷

কথাটা বলেই তানিশা হেসে দিলো। এদিকে নীল অপলক দৃষ্টিতে তানিশাকে দেখে চলছে। কিছুক্ষণ পরই রুমে আফিফা সওদাগর হাতে লেবু পানির গ্লাস নিয়ে প্রবেশ করলেন ।
– এই যে তানিশা মামনি নেও। এই লেবু পানিটা খেলে শরীরটা ভালো লাগবে ।

আফিফা সওদাগর তানিশাকে লেবু পানি খেতে দিলে তানিশা পুরোটা খেয়ে ফেলে । সকলেই তানিশার হাবভাব বুঝার চেষ্টা করলো । হুট করেই তানিশা গলগল করে বমি করে দেয় । বমির কারণে তানিশার পুরা জামা নষ্ট হয়ে যায় ।
– মম তুমি জাইমাকে বলো তানিশার জন্য যেনো ও এক সুট জামাকাপড় নিয়ে আসে ।

আফিফা সওদাগর মাথা নাড়িয়ে সেখান থেকে চলে যায় ।
আফিফা সওদাগর জাইমার রুমে গিয়ে দেখে জাইমা মোবাইলে কিছু একটা করছে।
– জাইমা বলছিলাম যে তানিশা বমি করার কারণে ওর জমা নষ্ট হয়ে গেছে । তুমি কি ওকে তোমার এক সুট জামা দিতে পারবে ?
– ইম্পসিবল আন্টি । আমি আমার জামা করো সাথে শেয়ার করি না । যেখানে তানিশাকে আমি চিনি না জানিনা ওকে আমি আমার জামা কেনো দিতে যাবো ।

আফিফা সওদাগর জাইমার কথায় প্রচন্ড রেগে গেলেন । এত বড় হিংসুটে মেয়ে তিনি আজ পর্যন্ত দেখেননি ।
অবশেষে বাধ্য হয়ে আফিফা সওদাগর তানিশাকে নীলের একটা শার্ট পরতে দিলো । তিনি জানতেন নিতুর কাপড় ওর গায়ে ঠিকঠাক মত আটকাবে না ।
তানিশাকে জামা পরিয়ে দিয়ে আফিফা সওদাগর রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন । নীল ভিতরে ঢুকে দেখল তানিশা ঘুমে তলিয়ে গেছে । নীল ভাবতে লাগলো তানিশার বলা কথাগুলো ।হটাৎ তানিশা কেনো এসব বললো? কেনো আমি ওর কাছ থেকে দুরে সরে যাবো ?
নীল তানিশার দিকে একবার তাকিয়েই রুম থেকে চলে গেলো । রুম থেকে বের হতেই আফিফা সওদাগর তাকে বলে ,
– নীল বাবা , তানিশা যে আজ রাতে এখানেই থাকবে সেটা কি ওর বাবা মাকে বলা উচিত না ?
– তুমি তো জানোই মম ওর বাবা মা কেমন । যদি জানতে পারে ও ড্রিংক করেছে নির্ঘাত তানিশাকে আজেবাজে কথা শুনিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেবে । আর তাছাড়া তানিশা বাড়িতে না গেলে ওনারা আরো বেশি খুশি হয় । তানিশার যদি খোঁজ নাও থাকে তবুও ওনারা তানিশার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা একবারও করবেন না ।

নীল কথা গুলো বলেই গেস্ট রুমে চলে যায় । এই দুনিয়াতে যে তানিশা বড্ড একা সেটা সওদাগর ফ্যামিলির সকলেই জানে ।

—————————
সকালে তানিশার ঘুম ভাঙতেই দেখতে পায় তানিশা নীলের একটা শার্ট গায়ে দিয়ে নীলের রুমে শুয়ে আছে । তানিশা গতকালের কথা চিন্তা করতেই তার মাথা ব্যাথা করে উঠে । কোনো রকম ওয়াশরুমে থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে তানিশা নিজের জামা গায়ে দেয় । হয়তো বা কাল রাতেই কেউ জামাটা ধুয়ে শুকাতে দিয়েছিল ।
তানিশা রুম থেকে বের হযতে যাবে এমন সময় রুমের সামনে নীল এসে পরে ।
– এখন কেমন লাগছে শরীর ?
– ভালো । নীল ।
– হু
– বিশ্বাস কর আমি ইচ্ছে করে ড্রিংক করি নি । তুই তো জানিসই যে আমি এসব পছন্দ করি না ।
– আমি জানি । আমি এটাও জানি যে তুই ইচ্ছে করে ড্রিংক করিস নি ।

তানিশা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে ছিলো । নীল ভিতরে ঢুকে আলমারি থেকে শার্ট আর প্যান্ট বের করে । তানিশার কিছু একটা মাথায় আসতেই সে দৌঁড়ে নীলের পিছে দাড়িয়ে বলে ,
– আচ্ছা নীল । কাল রাতে ড্রিংক করার পর কি আমি তোর সাথে কোনরকম বাজে ব্যবহার করেছিলাম ?

নীলের মাথায় দুষ্টু একটা বুদ্ধি চাপল । সে পিছনে ঘুরে তানিশাকে বলে ,
– না বাজে ব্যাবহার করিসনি কিন্তু ,
– কিন্তু কি ?

নীল তানিশার দিকে খানিকটা এগিয়ে বলে ,
– ধুর এসব বলা যায় নাকি ?

তানিশা চোখ বড় বড় করে বলে ,
– মানে ? আমি এমন কি করেছিলাম যে সেটা বলা যায় না ?
– তুই কি এখনও বাচ্চা নাকি তানিশা ?
– তুই কি বুঝাতে চাইছিস ?
-কাল রাতে তুই আমার কাছে এসে ,,

এতুটুকু বলেই নীল একটা চোখ টিপ মেরে ওয়াশরুমে ঢুকে যায় । আর এদিকে তানিশা যেনো চিন্তায় বিভোর হয়ে যেতে লাগলো । কি এমন করেছে তানিশা ? হায় আল্লাহ !

রুম থেকে বের হতেই আফিফা সওদাগর তানিশাকে বলে,
– কেমন আছো তানিশা ? শরীর ভালো তো ?
– জি আন্টি । আগের থেকে ভালো আছি শুধু একটু মাথা ব্যাথা আছে ।
– আচ্ছা নাস্তা করে ওষুধ খেয়ে নেও দেখবে ঠিক হয়ে গেছে ।
– না না আন্টি । আমি এখন বাসায় যাবো ।
– এসব কি বলছো তানিশা ? নাস্তা করেই চলে যাবে ? তোমার আংকেল আর নীল জানলে কিন্তু খুব রেগে যাবে ।
– কিন্তু আন্টি
– কোনো কিন্তু না । চুপচাপ খেতে এসো । এটা আমার শেষ কথা ।

তানিশা বাধ্য হয়ে অবশেষে ডাইনিং রুমে গেলো ।
এদিকে নীল ওয়াশরুম থেকে বের হতেই রুমে জাইমাকে দেখে বিরক্ত হয়ে যায় ।
– তানিশা কেমন আছে নীল ?
– এটা তুমি ওকে জিজ্ঞেস করলেই পারতে।
– ওকে রুমে পাই নি । ভাবলাম ও হয়তো ওয়াশরুমে ।
– ভালো । এত দরদ কোথায় ছিল যখন কাল রাতে সামান্য একটা জামা চাইতে মম গিয়েছিল আর তুমি সেটা দিতে নারাজ হয়েছিলে ?

জাইমা কিছু বললো না । কিছু বলার মতন আছেই বা কি ওর ? নীল ওকে এভয়েড করে সেখান থেকে চলে গেলো ।
ডাইনিং রুমে গিয়েই নীল দেখলো তানিশা সোফায় বসে টিভি দেখছে ।
নীল ডাইনিং টেবিলে খেতে বসতেই নীলের পাশে জাইমা বসে পড়ে । কিছুক্ষন পর আফিফা সওদাগর তানিশাকে ডেকে আনে । তানিশা ডাইনিং রুমে এসে আফিফা সওদাগরের পাশে বসতে নিলে নীল ওর হাত ধরে বলে,
– ওখানে বাবা বসুক । তুই আমার পাশে বস ।

তানিশা নীলের কথা অনুযায়ী নীলের পাশে বসে । এদিকে জাইমার মাথা খারাপের উপর খারাপ হচ্ছে । ওর মাথায় শুধু একটাই কথা নাড়া দিচ্ছে । তানিশাকে রাস্তা থেকে না সরালে নীল ওর থেকে দূরে সরে যাবে ফলে নীলের সব সম্পত্তি জাইমার হাত থেকে ছাড়া হয়ে যাবে।

—————————–
তানিশা এবং নীল দুজনে একসাথে ভার্সিটি এসেছে। এই প্রথম জাইমা ভার্সিটি আসে নি। নাহলে নীলকে ভার্সিটি যেতে দেখলেই পিছু করতো। তানিশা ক্যাম্পাসে ঢুকতেই আইরিন এবং অভি ওকে একটার পর একটা প্রশ্ন করতে থাকে। অবশেষে নীল পুরো ঘটনা ওদের বলে।

ক্লাস শেষ হতেই সকলে মিলে ক্যাম্পাসে বসে। অথচ আজ নীলকে পাওয়া যাচ্ছে না। সকলে একের পর এক নীলকে কল করে যাচ্ছে কিন্তু নীলের যেনো কোনে রেসপন্স নেই।
এদিকে নাইট ক্লাবে চিৎকার চেচামেচি আর হৈ-হুল্লোড়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে। কোনো এক ছেলে এসে একজন ওয়েটারকে আচ্ছা মতো ধোলাই দিয়েছে। পরে জানা গেলো ওয়েটারটা নাকি টাকা খেয়ে এক মেয়েকে চুপি চুপি জুসের সাথে ড্রিন্ক মিশিয়ে দিয়েছে।
আর এটা তানিশার সাথেই ঘটেছে। ক্লাস শেষ হতেই নীল গাড়ি নিয়ে ছুটে আসে নাইট ক্লাবে। আর তারপরই সে আচ্ছা মতো ধোলাই দেয় ওয়েটারটাকে। অবশেষে ওয়েটারটা মুখ খুলে বলে জাইমা নাকি ওকে টাকা দিয়েছে। আর কথাটা শুনেই নীল সেখান থেকে বেরিয়ে পড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে।

বাড়িতে পৌঁছেই নীলের চিৎকার,
– জাইমা।

নীলের চিৎকারে সকলে সেখানে হাজির হয়। আফিফা সওদাগর ছেলেকে বলে,
– কি হয়েছে নীল? এভাবে জাইমাকে কেনো ডাকছো?

নীল তার মায়ের কথার কোনো উত্তর দেয় না। সে জাইমাকে দেখতে পেয়ে ওর সামনে গিয়ে ওকে চর মারতে যাবে এমন সময় জিহাদ সওদাগরের ডাকে সে হাতটা থামায়।
– নীললল

জিহাদ সওদাগর নীলের কাছে এস বলেন,
– এসব কি হচ্ছে কি? তুমি কি ভুলে গেছো তুমি কি করতে চাইছো?কার গায়ে হাত তুলতে নিয়েছিলে তুমি?

নীল এবার গর্জে উঠে,
– ওকে জিজ্ঞেস করো তোমরা কি করেছে ও। গতকাল রাতে তানিশাকে জুসের সাথে মদ মেশানোর জন্য জাইমা ওয়েটারকে টাকা দেয়।

নীলের কথায় সকলে জাইমার দিকে তাকিয়ে রয়। আর এদিকে জাইমা ভয়ে ঘেমে যাচ্ছিল। আফিফা সওদাগর জাইমার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলেন,
– এটা কি সত্যি জাইমা?
– আন্টি আমি বুঝতে পারি নি। আমি ভাবলাম একটু আকটু ড্রিংক না করলে কি মজা হয়? একারনে ওয়েটারকে বলেছিলাম ওকে যেনো ড্রিন্ক দেয়।
– চুপ থাকো। এটা কে কি তুমি সিঙ্গাপুর পেয়েছো? এতো বড় সাহস কি করে হলো তোমার?

আফিফা সওদাগরের কথায় জাইমা এবার কান্নার নাটক করতে থাকে। নীল বিরক্ত হয়ে নিজের রুমে চলে যায়। জিহাদ সওদাগর জািমার কাছে এসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন,
– ঠিক আছে মামনি আর কাঁদতে হবে না। বুজেছু তুমি বুল করেছো। নীলের কথায় বা কাজে মন খারাপ করো না ঠিক আছে?
– আঙ্কেল নীল তো সবসময় তানিশার পিছে ঘুরে। অথচ ও আমাকে দেখতেই পারে না।
– তানিশা নীলের বেস্ট ফ্রেন্ড। একারনেই ও ওর সাথে সবসময় থাকে। তুমি কিচুদিন থাকো দেখবে নীল তোমার সাথেই সারাটাক্ষন থাকতে চাইবে। ধৈর্য্য ধরো দেখবে ঠিক হয়ে যাবে।

জিহাদ সওদাগরের কথায় জাইমা মনে মনে বলতে লাগলো,
– কখনোই আমি তানিশাকে ক্ষমা করবো না। ওকে শেষ করে না দেওয়া পর্যন্ত আমি এইখান থেকে নড়বোই না।

————————————-
কিছুক্ষণ আগেই তানিশা বাসায় ফিরেছে। তানিশাকে বাসায় ফিরতে এখোনো কেউ দেখে নি।
কিছুক্ষণ পর তিশা বাড়িতে ঢুকেই তানিশাকে ডাকতে থাকে। আজ পর্যন্ত তিশা কখনোই তানিশাকে আপু বলে ডাকে নি। যাকে বোন বলে মানেই না তাকে আপু বলে সম্মান দিয়ে কি হবে? আর এটাই ওর চিন্তা ভাবনা।
তিশার ডাকে রোজা চৌধুরী ড্রয়ই রুমে এসে তিশাকে জিজ্ঞেস করে,
– কি হয়েছে মামনি তুমি তানিশাকে এভাবে ডাকছো কেনো?

তানিশাকে নিচে নামতে দেখে তিশা ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
– সেটা তুমি তোমার এই মেয়েকেই জিজ্ঞেস করো। গতকাল রাতে ওর কার সাথে ফষ্টিনষ্টি করে এসেছে।

তিশার কথায় রোজা চৌধূরী তানিশার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
– তিশা এসব কি বলছে তানিশা? গতকাল রাতে কোথায় ছিলে তুমি?

যতই তানিশা ঝামেলা মুক্ত জীবন কাটাতে চাচ্ছে ততই যেনো ওর জীবনে ঝামেলা এগিয়ে আসছে। তানিশা গম্ভীর কন্ঠে জবাব দিলো,
– তোমার মেয়ের কথার কি প্রমাণ আছে যে আমি ফষ্টিনষ্টি করে এসেছি?
– যা প্রশ্ন করেছি তার জবাব দাও।
– নীলের বাসায় ছিলাম।

তানিশার কথায় রোজা চৌধুরী চুপ হয়ে গেলেও তিশা রাগে জ্বলে উঠে।
– ওর বাসায় তুমি গিয়েছিলে?কিন্তু কেনো?
– এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যপার। আর আমি আমার ব্যক্তিগত ব্যপারে কাউকে নাক গলানো পছন্দ করি না। যেহুতু নীল আমার বেস্ট ফ্রেন্ড সেহুতু চাইলেই আমি ওর বাসায় যেতে পারি।
– চুপ থাকো। তোমার কোনো অধিকার নেই ওর কাছে যাওয়ার। তোমার মধ্যে এমন কি আছে যেটা দিয়ে তুমি ওকে আকৃষ্ট করতে চাও? এই বাড়ির কিছুই তোমার না। সব আমার। তুমি নিজেকে রাফসান চৌধুরির মেয়ে বলে পরিচয় দিলেও রাফসান চৌধুরি তোমার কেউ হয় না। উনি আমার বাবা। আর তুমি শুধুমাত্র এই বাড়ির একজন আশ্রিতা।

তিশার কথায় দরজার সামনে থেকে কেউ সিংহের মতো গর্জন করে চিৎকার করে বলে,
– তিশা।

সকলের চোখ যায় মেইন দরজার সামনে।
– আর একটা বার যদি তানিশাকে নিয়ে তুই বাজে কথা বলিস তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।

তুহিনের রাগী কন্ঠে চিৎকারে তিশা একদম ভেজা বেড়াল হয়ে যায়। আর এদিকে তানিশা সিড়ি থেকে নেমে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে ওঠে,
– ভাইয়া,

চলবে,,,💓

[ দুঃখিত! প্রায় ছয় দিন পর গল্পটা দেওয়ার জন্য। আসলে গল্পটার লেখিকা যেহুতু দুজন তাই দুজনকে সমানভাবে একটিভ থাকতে হয়। লেখিকা তাসফিয়া জামান আপুর এক্সামের কারণে সে একটিভ থাকতে পারে নি। এখন যেহেতু দুজনেই একটিভ আছি সেহুতু আপনারা গল্পটা নিয়মিত পাবেম ইনশাআল্লাহ। ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here