যেদিন_আমি_থাকবো_না #লেখিকা_ইভা_আক্তার এবং #লেখিকা_তাসফিয়া_জামান #পর্ব_৪

0
162

#যেদিন_আমি_থাকবো_না
#লেখিকা_ইভা_আক্তার
এবং
#লেখিকা_তাসফিয়া_জামান
#পর্ব_৪

————————————–
সওদাগর ফ্যামিলির সকলের মনে যেনো আনন্দের জোয়ার বইছে ।সকলে অপেক্ষা করছে তাদের একমাত্র ছেলের হবু বউকে দেখার জন্য। কিছুক্ষন পর জাইমাকে নিয়ে নীল হাজির হয় । জাইমা আফিফা সওদাগরকে দেখে দৌঁড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে । অবশ্য জড়িয়ে ধরার আসল কারণ হচ্ছে তাকে নিজের দিকে নিয়ে আশা ,যাতে আফিফা সওদাগর নিজের ছেলের কথায় না নেচে জাইমার কথায় নাচে ।
– কেমন আছেন আন্টি? জানেন আপনাকে কতো মিস করেছি আমি ।
– আমিও তোমাকে অনেক মিস করেছি জাইমা । এসে বসো । তুমি অনেক ক্লান্ত বোধয় ।

ওদের মাঝে নিতু গাল ফুলিয়ে বলে ,
– হুম আর এদিকে এই ছোট্ট ননদকে বুঝি মিস কর নি তাই না ?

নিতুর কথায় জাইমা নিতুকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– তোমাকে মিস না করে পারা যায় বলো ? আমি তো সবচেয়ে বেশি মিস করেছি আমার এই পিচ্চি ননদকে।

এদিকে যে ওদের কাজে আর কথায় নীল যে প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে তা তার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে ।
– ওকে এখন আমি রুমে যাচ্ছি । খুব ক্লান্ত লাগছে । খাবার সময় হলে ডেকে নিও ।
– নীল প্লিজ শোনো না (জাইমা)

নীল বেশ বিরক্তিকর চেহারা নিয়ে বললো,
– আবার কি ?

জাইমা এবার জিহাদ সওদাগরের দিকে তাকিয়ে বলে,
– আঙ্কেল আজ রাতে আমি আর নীল ডিনারে যায় ? যদি আপনাদের কোনো প্রবলেম না থাকে তাহলে ।
– আরে না মামনি কি যে বলো না । কারো কোনো প্রব্লেম নেই । তুমি অবশ্যই যেতে পারো ।
– কিন্তু নীলের পারমিশন নেওয়া দরকার । ওর পারমিশন ছাড়া কোনো ডিসিশন নেওয়া উচিত হবে না জিহাদ (আফিফা সওদাগর)

আফিফা সওদাগরের কথায় জাইমা মনে মনে প্রচন্ড রেগে গেলো । এই মহিলা কি কখনো আমার দিক চিন্তা করবে না নাকি ? খালি নিজের ছেলের পিছে ঘুরে । কি করে এই মহিলাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে আনবো।
– এখানে পারমিশন নেওয়ার কি আছে বুঝলাম না । আচ্ছা নীল তুমি যাচ্ছো তো?(জিহাদ সওদাগর)

সিড়ি দিয়ে উপরে উঠার সময় জিহাদ সওদাগরের কথায় নীল থেমে গেলো । নীল পিছনে ঘুরে বললো,
– সরি ড্যাড। আমি আগেই বলেছি আমি খুব ক্লান্ত । আমি যেতে পারবো না । আর আশা করি পরের বার থেকে আমার পারমিশন না নিয়ে কিছু করবে না । এমনিতেই তোমাদের সম্মান রাখতে গিয়ে আমি নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাচ্ছি ।

নীলের এতগুলো কথা শুনে জিহাদ সওদাগর আর কিছু বললেন না । জাইমা জিহাদ সওদাগরকে জিজ্ঞেস করলো,
– কিসের কথা বললো নীল ? কিসের বিরুদ্ধে ও যাচ্ছে আঙ্কেল ?
– আর না মা তেমন কিছুই না । তুমি বিশ্রাম নেও ।

কথাটা বলেই জিহাদ সওদাগর নিজের রুমে চলে গেলেন ।
জাইমাকে বুঝার পর থেকে নীল প্রায় অনেক বারই জিহাদ সওদাগর এবং আফিফা সওদাগরকে বিয়েটা ভাঙতে বলেছিল । এটা নিয়ে প্রায় অনেক দিন ঝামেলাও গিয়েছিল । অবশেষে আফিফা সওদাগর তার ছেলের কথাকে প্রাধান্য দিয়ে জিহাদ সওদাগরের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করলেন । কিন্তু নিজের পরম স্নেহের বন্ধুর সাথে তিনি প্রতারণা করতে চাইছিলেন না । তার ধারণা এতে তাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাবে এবং তার প্রেজটিজ শেষ হয়ে যাবে । সবশেষে তিনি নীলের কাছে হাত জোড় করলেন । নীলও তার বাবার এমন উদারতা দেখে আর কিছু বলতে পারলো না । অবশেষে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে জাইমাকে বিয়ে করতে রাজি হলো । আফিফা সওদাগর ভালো করেই জানেন তার ছেলের মনের অবস্থা । আর এই কথাটা জাইমাও বেশ ভালো বুঝতে পারে। একারণেই জাইমা আফিফা সওদাগরকে তেমন একটা পছন্দ করে না । শুধু নিজের বশে আনার জন্য আফিফা সওদাগরের গা ঘেঁষে থাকে । জাইমার ধারণা নীল বোধয় তানিশাকে ভালোবাসে বলেই জাইমাকে পাত্তা দেয় না । আসলে নীল নিজেও জানে না সে তানিশাকে ভালোবাসে নাকি । নিজের মনের এই কঠিন অবস্থা নীল বেশ ভালো করেই জানে । নিজেকে আয়নায় দেখে বারবার জিজ্ঞেস করে ” আমি কি তানিশাকে ভালোবাসি ? ওর জন্য কি আমার মনে অন্য কোনো ফিলিংস আছে ?” কিন্তু প্রতিবারই ও ফেল হয়ে যায় । নিজের প্রশ্নের কোনো উত্তর যেনো নিজের কাছেই নেই । হয়তো বা নীলের কাছে তানিশাকে ভালো লাগে। কিন্তু ভালোলাগা আর ভালোবাসা কি এক ?

—————————————
সকাল সকাল নীল হাজির হয় জিম সেন্টারে । কিছুক্ষন তানিশার জন্য অপেক্ষা করার পর যখন নীল দেখে তানিশা আসল না তখন সে একাই চলে গেলো ভেতরে ।
নীল যখন পুষ আপ করছিলো তখনই কোথা থেকো যেনো হাজির হয় জাইমা । নীলের ঘামক্ত ফর্সা শরীরে জাইমা যেনো পাগল হয় উঠে । নীল দাড়িয়ে পাশে থাকা কাপড় দিয়ে শরীরের ঘাম মুচছিলো। এমন সময় জাইমা ওর পিঠে হাত দেয় । নীল দ্রুত সামনে ফিরে দেখে জাইমা ওর সামনে দাড়িয়ে আছে ।
– তুমি ? তুমি কি করছ এখানে ?
– নীল যেখানে থাকবে জাইমা তো সেখানে থাকবেই ।
– চলে যাও প্লিজ । ডিস্টার্ব করো না ।
– এভাবে কেনো বলছো ? যতই হোক আমি তোমার হবু বউ ।

কথাটা বলে জাইমা নীলের বুকে হাত রাখে । আর তখনই হাজির হয় তানিশা । কালো রঙের লেগিংস আর হালকা গোলাপি রঙের টি শার্টের সাথে মাথায় উচুঁ করে ঝুঁটি করা তানিশাকে অপ্সরীর থেকে কোনো অংশে কম লাগছিল না । তানিশা যদি জানত আসলে ও কতটা সুন্দর তাহলে হয়তো ও নিজেই নিজেকে হিংসে করতো । অথচ এই মেয়ে কিনা তার সৌন্দর্য নিয়ে কখনো চিন্তায় করে নি ।
তানিশাকে এভাবে দেখে নীল হকচকিয়ে যায় । নীল দ্রুত জাইমাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয় ।
– এক্সকিউজ মি ! এটা তোমাদের বেডরুম না যে যখন যা ইচ্ছা তাই করবে (তানিশা)

কাধে থাকা ব্যাগটা রাখতে রাখতে তানিশা কথাগুলো নীল এবং জাইমার উদ্দেশ্যে বলে।
– তোমার কি তাতে ? তুমি এখানে কি করছো ?(জাইমা)
– জিমে মানুষ খেতে আসে না অবশ্যই । আর আমার তাতে কিছুই যায় আসে না । শুধু মাত্র সতর্ক করে গেলাম । বলা তো যায় না কখন কে এসে পরে তোমাদের রোমান্টিক সময়ে ( তানিশা)

জাইমা কিছু বলতে নিলে নীল ধমক দিয়ে বলে ,
– প্লীজ জাইমা । তোমাকে আমি আরো একবার ওয়ার্নি দিয়েছিলাম যে আমাকে কখনো টাচ করবে না । অথচ বারবার তুমি ভুল করে যাচ্ছো । আরেকবার যদি আমাকে টাচ করো তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না ।

নীলের ধমকে জাইমা চুপ হয়ে গেলো । তানিশা কিছু না শোনার ভান করে বক্সিং রুমে ঢুকে যায় । নীলও তানিশার পিছু পিছু সেখানে যায় ।
তানিশা নিজের রাগ সামলানোর জন্য অনবরত বক্সিং ব্যাগে পাঞ্চ মারতে থাকে । হটাৎ করে তানিশার সামনে নীল এসে বক্সিং ব্যাগটা ধরে । তানিশা সেই বক্সিং ব্যাগটাতেও পাঞ্চ মারতে থাকে । তানিশা একসময় হাপিয়ে গেলে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে শুরু করে । নীল বক্সিং ব্যাগটা ছেড়ে তানিশার সমানে আসতেই তানিশা ওর বুকে ঘুষি মারতে শুরু করে । তানিশার এমন কাজে নীল ওর হাত ধরে বলে,
– হয়েছে থাম । তিন বছরের জিম করা বডিকে ঘুষি মেরে আহত করা এত সহজ না মিস । তার জন্য আরো প্রেকটিস করতে হবে ।

তানিশা হাত ছেড়ে চলে যেতে নিলেই নীল ওর হাত ধরে ওকে হেচকা টান দেয় বলে তানিশা নিজের ভারসাম্য হারিয়ে নীলের বুকে পড়ে যায়। নীলও এতে প্রচন্ড অবাক হয়ে যায় । নীল বুঝছে কিছু একটা । হয়তো কিছু খোঁজার চেষ্টা করছে কিন্তু পাচ্ছে না । তানিশার মনের কথা কি নীল বুঝবে না ? নীল কি এভাবেই ওর থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করবে ?
বিপরীত পাশ থেকে জাইমা সব কিছু দেখছিল । জাইমার মনে রাগে পাহাড় জমা হতে শুরু করছিল । এই রাগ যেনো তানিশাকে পুড়িয়ে ফেলা পর্যন্ত শান্তি হবে না । হবু বউ হওয়া সত্বেও সামান্য স্পর্শ করলে নীল রেগে উঠে অথচ নীলের সামান্য বেস্ট ফ্রেন্ড তানিশা ওর বুকে মাথা রেখে আছে তবুও যেনো নীলের কোনো যায় আসে না । নীল যেনো এতেই সুখ খুঁজে পায় । এসব ভাবতেই জাইমা আরো রেগে উঠে।

—————————————–
ক্লাস শেষে সকলে মিলে ভার্সিটির কেম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছিল । তখনই অভি নীলকে জিজ্ঞেস করে ,
– কিরে তোর হবু বউ কোথায় ? সবসময় তো তোর পিছে ঘুরতে থাকে ।আজ আসে নি ?
– আসতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি আনি নি । তাছাড়া দরকার আছে ওকে নিয়ে এসে অযথাই ঝামেলায় পড়ার ।
– কে জানে বিয়ের পর কি করে তুই ওকে সহ্য করবি ।

অভির কথায় নীল আর কিছু বললো না । যেখানে ওর কোনো ইচ্ছে নেই জাইমাকে বিয়ে করার সেখানে ওর ভবিষ্যৎ নিয়ে কল্পনাটাও বৃথা ।
– কিরে তানিশা তোর বোন আবার নীলের পিছে লাগে নি তো? যেভাবে নীলের পিছে পড়ে আছে মনে হয় কাজ হয়ে গেছে (আইরিন)
– ওর যা ইচ্ছা ও তা করুক । যেখানে ওর বাবা মাই ওর সকল কাজকে গুরুত্ব সহকারে দেখে সেখানে আমার কি কিছু করার আছে ?

আইরিন কিছু বললো না । শুধু তানিশার কাধে হাত রাখলো ।
– ওই যে দেখ এসে পড়েছে তোর বিদেশি বউ(অভি)

অভির কথায় সকলে পিছে তাকিয়ে দেখে পার্টি ড্রেস পড়ে জাইমা এদিকেই আসছে । জাইমা ওদের দিকে এসে একটা চেয়ার নিয়ে তানিশার পাশে বসে পড়লো । জাইমার এমন কাজ তানিশা প্রচুর হতভম্ব হয়ে গেলো ।
– হেই গাইছ কি খবর তোমাদের ?
– এতক্ষন ভালো ছিলাম । কিন্তু হটাৎ করে মাথা ব্যাথা শুরু হলো । এই মাথা ব্যাথাকে যে কি করে দুর করবো বুঝতে পারছি না (আইরিন)

আইরিনের কথা সকলে বেশ ভালোই বুঝতে পাড়লো কিসের মাথা ব্যাথার কথা ও বলছে । ব্যাপারটা জাইমা বুঝতে পারলেও কিছু বললো না । জাইমা আগের মতই হাসিমুখ নিয়ে বললো,
– চলো না সবাই মিলে পার্টিতে যাই । বেশ মজা হবে ।

জাইমার কথায় কেউই সায় দিলো না । নাইট ক্লাবের মতো জায়গায় আজ পর্যন্ত ওদের যাওয়া হয় নি । যাওয়া হয় নি বলা ভুল হবে কখনো যায় নি । এসব জায়গায় ওদের মত সুশালীন ঘরের ছেলে মেয়েরা কখনোই যেতে পারে না । জাইমা যেহুতু অভ্যস্ত তাই ও নিজেই সকলকে যাওয়ার জন্য উস্কাচ্ছিল । অবশেষে তানিশার কথায় সকলে রাজি হলো । কিন্তু সকলে প্রমিস করেছে কেউ ড্রিংক করবেনা । আর এভাবেই ওরা সকলে মিলে রওনা দিলো নাইট ক্লাবের উদ্দেশ্যে।
নাইট ক্লাবের পরিবেশে যেনো ওরা কেউ অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারছিলো না। জাইমার হাবভাব দেখেই বুঝা যাচ্ছে ও কতটা অভ্যস্ত এধরনের পরিবেশের সাথে । সকলে চুপচাপ বসে ছিল আর জাইমা ড্যান্স করছিলো । এক পর্যায়ে আইরিনের প্রচন্ড বিরক্ত লাগতে শুরু করে । তাই আইরিন অভিকে জোড় করে নিয়ে যায় ড্যান্স করার জন্য । কিছুক্ষন পর জাইমা এসে নীলকে বলে ,
– চলো না হানি ড্যান্স করবো । এভাবে বসে থাকলে চলে নাকি ।
– মুড নেই জাইমা । প্লিজ তুমি ইনজয় করো।
– না না তোমাকে ছেড়ে যাবো না। এসো না । জাস্ট একটু ।

জাইমার জোরাজুরিতে অবশেষে নীল রাজি হলো ওর সাথে ড্যান্স করতে । গম্ভীর মুখে নীল যখন জাইমার সাথে ড্যান্স করছিলো তখন তানিশা যেনো রাগে ফুলে উঠছিল । ওর কাছে সব কিছুই বিষাক্ত লাগছিল । তানিশা ওয়েটারের কাছে গিয়ে এক গ্লাস জুস চায় । আর এই সুযোগেরই অপেক্ষা করছিল জাইমা । জাইমার ইশারায় ওয়েটার তানিশার জুসের মধ্যে খানিকটা ড্রিংক দিয়ে দেয় । ওয়েটার তানিশাকে জুসটা দিলে তানিশা পুরো জুসটা খেয়ে আবারো জুস অর্ডার করে । এভাবে ওয়েটার এক পর্যায়ে পুরো মদের বোতল থেকে এক গ্লাস তানিশাকে দিলে তানিশা সেটাও কমপ্লিট করে ফেলে । তানিশার চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছিলো যে তানিশা এখন পুরোই মাতাল । জাইমার প্লেন তানিশাকে এভাবে মাতাল দেখলে নীল ওকে ঘৃনা করতে শুরু করবে । কেননা নীল এসব মোটেও পছন্দ করে না । তানিশা বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে ঢলতে ঢলতে নীলের কাছে এসে জাইমাকে সরিয়ে নীলকে বলে ,
– আর কতো ওর সাথে ড্যান্স করবে তুমি হুম? এদিকে যে আমি অসহায়ের মতো বসে আছি তুমি কি দেখতে পারছো না ?

তানিশার এমন কথায় এবং চেহারায় নীল প্রচন্ড অবাক হয়ে গেলো । নীল বুঝতে পারলো তানিশা ড্রিংক করেছে ।
– কি হলো কিছু বলছো না কেনো ? এসো ড্যান্স করি ? এসো না প্লিজ ।

নীল কিছু বলার আগেই জাইমা এসে তানিশাকে বলে,
– ছিঃ তুমি ড্রিংক করেছো ? এতক্ষন তো নিজেই বলছিলে যে কেউ ড্রিংক করবে না কিন্তু , আর এখন নিজেই ছিঃ
– এই মেয়ে চুপ । তোকে কি কিছু বলেছি আমি ? আমার আর নীলের মাঝে তুই এসে সব নষ্ট করে দিচ্ছিস । চলে যা বলছি ।

তানিশা জাইমাকে ধাক্কা দিতে চাইলেও অতিরিক্ত মাতাল হওয়ার কারনে নাড়াতে পর্যন্ত পারছিলো না । জাইমা বিরক্ত হয়ে তানিশাকে ধাক্কা দিলে তানিশা হুট করে নিচে পড়ে গিয়ে ব্যাথায় ” উহঃ” করে উঠে। আর সেটা নীল দেখে জাইমাকে ধাক্কা দিয়ে বলে ,
– হাও ডেয়ার ইউ? তানিশাকে ধাক্কা দেওয়ার সাহস কি করে হলো তোমার ? বেশি লাই দিয়ে ফেলেছি বলে যা ইচ্ছে তাই করবে এটা ভাবলে ভুল করবে । ইউ ইডিয়ট গার্ল ।

নীল তানিশাকে সাবধানে উঠাতে নিলে তানিশা বলে ,
– আমাকে কোলে নিবে ? আমার না হাঁটতে ইচ্ছে করছে না ।

নীল তানিশার কথায় তানিশাকে কোলে তুলে নেয় । ওদের চিৎকারে আইরিন আর অভিও এসে পড়ে ।
– কি হয়েছে নীল ? তানিশার এই অবস্থা কি করে হলো ?(অভি)
– ড্রিংক করেছে ।
– ওয়াট? এটা কি করে সম্ভব । তানিশা তো এমন মেয়ে না।
– বলতে পারছি না । আমি ওকে বাসায় নিয়ে যাচ্ছি । তোরা থাক কেমন ?

নীল তানিশাকে কোলে তুলে গাড়ির কাছে নিয়ে যায় । নীল ভাবতে থাকে তানিশার মতো মেয়ে আসলেই কি নিজ ইচ্ছায় ড্রিংক করেছে নাকি এটা কোনো ষড়যন্ত্র?

——————————–
গাড়ি থেকে নেমে নীল তানিশাকে আবারো কোলে তুলে নেয় । আর এটা দেখে জাইমা যেনো রেগে পুরোই আগুন হয়ে গেছে । আজ পর্যন্ত যে কিনা নিজেকে সামান্য টাচ করতে দিলেও চিৎকার করতো সে কিনা তানিশার মতো একটা মেয়েকে কোলে তুলে নিয়েছে । নীল তানিশাকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকলে আফিফা সওদাগর বলে,
– নীল কি হয়েছে তানিশার ?
– তেমন কিছু না মম। একটা পার্টিতে গিয়েছিলাম । কিন্তু সেখানে গিয়ে তানিশা ড্রিংক করেছে ।
– কি বলছিস তুই ? তানিশা ড্রিংক করেছে ?
– জানি না মম । আমার মনে হয় ও ইচ্ছে করে এটা করে নি । মম আমি তানিশাকে নিয়ে উপরে যাচ্ছি । তুমি ওর জন্য লেবু পানি নিয়ে এসো ।

কথাগুলো বলেই নীল তানিশাকে নিয়ে উপরে উঠে ওর রুমে ঢুকে যায়। আর এদিকে জাইমা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে । আজ পর্যন্ত জাইমাকে নীল ওর রমে ঢুকতে দেয় নি । জাইমা ঢুকলেই নীল রাগারাগি করতো । আর আজ কিনা বাইরের একটা মেয়েকে নীল নিজের রুমে নিয়ে গেল । এগুলো ভেবে জাইমা সেখানে দাড়িয়ে রাগে গজগজ করতে শুরু করলো ।

নীল তানিশাকে নিজের বেডে শুইয়ে পানি খাওয়ালো । তখনই নীল বলে,
– তুই ড্রিংক কেনো করলি তানিশা ? তুই তো ওরকম মেয়ে না ।
– আমি তো ড্রিংক করি নি । শুধু জুস খেয়েছি । ওই ওয়েটারটা আমাকে জুসের বদলে কি যেনো খাইয়েছে ।

তানিশার মুখ থেকে এমন কথা শুনে নীল রাগে ফেটে যায় । ওর ইচ্ছে করছে ওয়েটারটাকে ধরে এই মুহূর্তে গলা চেপে মেরে ফেলতে । নীল নিজেকে সংযত রেখে বললো,
– ঠিক আছে । বিশ্রাম কর । আমি মমকে পাঠাচ্ছি তোর ড্রেস যেনো চেঞ্জ করে দেয় ।

নীল উঠতে নিলেই তানিশা দুই হাত দিয়ে ওর গলা ধরে বলে,
– যেও না প্লিজ । আমার পাশে থাকো । তুমি চলে গেলে আমি অসহায় হয়ে যাবো ।
– আছি তো। বলো ।
– তুমি চলে যাবে । আমার কাছ থেকে অনেক দূরে চলে যাবে । আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলবো আমি জানি । কিন্তু তুমি সেদিন আফসোস করবে । যেদিন আমি থাকবো না ।

চলবে,,,,,, 💙

[প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এতদিন পর গল্প দেওয়ার জন্য । আশা করি সকলেই জানেন আমার পরীক্ষা ছিল । এবং সকল মা-দেরকে জানাই শুভ মা দিবস । সকল মা আল্লাহর রহমতে যেনো সবসময় সুস্থ থাকে সেই দোয়ায় করি ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here