ইয়াসমিন_রিমা #অসম_প্রেম #পর্ব_১৯

0
598

#ইয়াসমিন_রিমা
#অসম_প্রেম
#পর্ব_১৯

কিন্তু একটু আঁচল দিয়ে মুছা দিলাম।ফ্রেমে ছবি টি দেখে আমি স্তম্ভিত। আমার বাক শক্তি হারিয়ে গেছে।হাত থেকে ফ্রেম টা পড়ে খন্ড বিখন্ড হয়ে গেল।

ছবি তে একজন পুরুষ আর একজন মহিলা আছে। কিন্তু এগুলো কার।এনারা কারা। আদিত্যর সাথে এনাদের সম্পর্ক কি। এই বাড়িতে এনাদের কি যোগ সূত্র আছে। আমাকে জানতেই হবে। কাঁচের ভিতর থেকে ছবিটি বার করে নিলাম।

রান্নার জিনিস কমলার মা কে দিয়ে। আমি ছবি টা নিয়ে নানীর কাছে আসলাম তার রুমে। ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

, নানী ওনারা কারা। আমি store রুমে পেয়েছি।প্লিজ বলনা নানু।কারা ওনারা।
নারী পান খেতে খেতে। ছবি টা হাতে নিয়ে বললেন।চোখ দিয়ে তার পানি ঝরছে। কিন্তু কেন। অনেক আবেগ আপ্লুত হয়ে গেলেন।
, আমার মেয়ে আর জামাই। কেঁদে কেঁদে।আদি আর আলিশার মা বাবা।
,কি,,,,,ই। বললে নানু। আমি ঠাস করে বসে পরলাম।সব জেন আমার মাথার উপর দিয়ে গেল। কিন্তু ওনারা কোথায়।
, জানি না।আদি ওর মাকে অনেক খুঁজেছে পায়নি। নিখোঁজ। মনে হয় আমার মেয়েটা আর নেই। কেঁদে কেঁদে।
, কিন্তু ওর বাবা ‌
, তাকে আদি ঘৃণা করে।ওর জন্য আমার মেয়ে আজ নেই।
আমার বুক ধরফর করছে। পরবর্তী কি বলে।
, কেন নানু কি হয়ে ছিল।

, ওদের ছোট একটা সংসার ছিল। ওরা একে অপরকে ভালো বেসে বিয়ে করেছিল। আমরা ওদের সম্পর্ক মেনে নিয়েছিলাম।তাও আমার মেয়ে সুখে ছিল না।রোজ ওদের অশান্তি ঝগড়া ঝাঁকি লেগেই থাকত।ওর বাবা জু**য়া খেলে অনেক রাতে এসে মারত।রোজ গায় হাত তুলত। তখন ছোট ছোট বাচ্চা গুলো ভয় পেয়ে যেত।ওর বাবা অশান্তি তে একদিন ওর মা সব কিছু ছেড়ে ওদের ছেরে চলে যায়। শুনেছি এক্সিডেন্ট হয়ে ছিল কিন্তু খোঁজ পাওয়া যায়নি।অনেক লোক টাকা পেত ওর বাবার কাছে।ওর বাবা হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে যায়।সকল পাওনাদার বাড়ি ঘর কেরে নিয়ে ওদের বার করে দেয়। এই অসহায় দিন গুলো দেখতে হয়েছে আমার নাতি নাতনির। কেঁদে কেঁদে।

আমি স্তব্ধ হয়ে শুনছিলাম।
, ওনাদের নাম কি ছিল।
, আমার মেয়ে কল্পনা শেহ্জাহান খান। ওর বাবা অজয় মল্লিক।
,হোয়াট অজয় মল্লিক। অবাক হয়ে।
, কেন কি হয়েছে।
, কিছু না নানু। ওহ্ আমি না তোমাদের সবার পছন্দের রান্না করেছি।
নানু একটু হেসে আমার গালে হাত ছোয়ালেন।আর বললেন।
, আমার নাতি টা বুঝি খুব কষ্ট দেয় তাই না।ও আসলে ওরকম নয়।ওর বাইরে টা কঠিন কিন্তু ভেতটা একদম নরম।
,তা জানি নানু যাই আমার কাজ আছে।

হাঁটছি আর ভাবছি। নামের পদবী কেন চেন্জ করল। উনার পরিবার ত কম বড় লোক নয় তাহলে।সব ছেড়ে দিয়ে চলে এসে কি পেয়েছে।যার সাথে সম্পর্ক ছিল তার অন্য কোথায় বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের দিন বিয়ে ভাঙ্গার অনেক চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সব হতে দেয়নি একমাত্র তার বাবা প্রতাপ চৌধুরী। গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান। সমাজে সম্মান আছে সেটা খোয়াতে চাইনি। তাই নিজের সন্তানের ইচ্ছার কথা ভাবেনি।তাই তিনি সব কিছু ছেড়ে রাগে দুঃখে বহু চলে যান। সবাই তাকে খুঁজলেও যেন পায় তার জন্য নিজের পদবী পাল্টে ফেলেছেন।

হয়েছেন অজয় চৌধুরী থেকে অজয় মল্লিক। এবার আমার হাত থেকে পালাবে কোথায়। খুঁজে তো আমি বার করবই।

এদের এক একটি ভুলের জন্য দুটো বাচ্চাকে মাসুল দিতে হয়েছ। সত্যি খুব খারাপ লাগছে।

হঠাৎ সামনে ধাক্কা লাগল। সামনে দাঁড়িয়ে আছে আদিত্য।
হাতে ছবি ছিল লুকিয়ে ফেললাম।

,কি হল এত অন্য মনস্ক হয়ে কোথায় যাচ্ছ।
,কই না তো। রান্না করতে।
, তুমি তখন ফোন কাটলে কেন।
, আমার ইচ্ছা। বুঝেছেন।
, এগুলো নাও কিছু নতুন কাপড় আছে তোমার জন্য।
, এগুলোর কি দরকার ছিল।বলতো।
, সেটা তোমার না জানলেও হবে। এখন থেকে একটু সাজুগুজু করে থাকবে দেখতে ভালো লাগবে।
শখ কত হু,,,
,পারব না। আমার কাজ আছে।
, জোর করে নিয়ে যাব কিন্তু।
,সরুন কাজ আছে।

জোর করে নিজের রুমে নিয়ে গেল। অসভ্য একটা।এসেই দরজা বন্ধ করে দিল। দরকার ফাঁকে দেখলাম অর্নব। এই একটা অসভ্য যখনি দেখবে তখনি আমার পিছনে লাগবে। আল্লাহ জানে সামনে কি আছে।

, দরজা বন্ধ করলেন কেন।
,চুপ চাপ গিয়ে। শাওয়ার নিয়ে এগুলো পড়ে এসো ।
জোর করে ওয়াশ রুমে ঢুকিয়ে দিল। এখন বাধ্য হয়ে হলেও এগুলো পড়তে হবে।

ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে এলাম। বিছানায় শুয়ে ফোন স্কল করছিল। আমাকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

ভেজা চুল।টপ টপ করে পানি ঝরছে। মনে হয় আদিত্য পাগল হয়ে যাবে। জীবনে এত মেয়ে দেখেছে কিন্তু এরকম মনময়ী একজন ও নেই।সব সুন্দর্য আজ আদিত্যর চোখে ধরা দিচ্ছে। হঠাৎ করে জরিয়ে ধরলো।আর নিজেকে আটকে রাখতে পারল না প্রেমার থেকে।পরে যখন বুঝতে পারল তখনই কিছু না বলে ছেরে দিয়ে চলে গেল। রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
আদিত্য, আমি এ কি করে ফেললাম। মুচকি হেসে।মাথা চুলকিয়ে।বউ হেসে।

আমি অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।ও এটা কিভাবে করতে পারে। এটা কিছুতেই হতে পারে না। ওর আর আমার ব্যবধান অনেক। একদিন সব সত্যি সবার সামনে আসবে। আমরা সবাই এই সমাজে বসবাস করি। সমাজের কথা ভেবে চলতে হবে। কিন্তু ওর আমার সম্পর্ক এই সমাজ মেনে নিবে না। ওর থেকে দূরে দূরে থাকতে হবে। সময়ের সাথে সাথে ওর আমার প্রতি অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছে সেটা হতে দেওয়া যাবে না।

খাবার টেবিলে সবাই বসে আছে।

চলবে,
কেমন হল। গল্প আজ একটু তাড়াতাড়ি দিলাম। একটু বড় দিয়েছি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here