ইয়াসমিন_রিমা #অসম_প্রেম #পর্ব_২০

0
359

#ইয়াসমিন_রিমা
#অসম_প্রেম
#পর্ব_২০

খাবার টেবিলে সবাই বসে আছে।আজ সবার পছন্দের খাবার রান্না করেছি। সবাই মজা করে খেল।আজ শ্রাবণের মতি গতি তেমন একটা ভালো ঠেকছে না। কেমন দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে।

অর্নব, ভাবী ‌।ওহ্ জীও ভাবী। তোমার হাতের রান্না আজ ফাটাফাটি হয়েছে।
, ধন্যবাদ
, ভাবী দেখবে একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। সবাই তোমাকে এই বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নিবে।
মামী ধমক দিয়ে বলল, খেতে বসে এত কথা কিসের হ্যা। চুপ চাপ তুমি খাও। তোমার কাজের লোকের কথা না ভাবলেও হবে।
, মামী আপনি এগুলো কি বলছেন। আপনারা সব সময় এত অপমান করেন কেন। আমি কি অপরাধ করেছি।
,এই মেয়ে তোমার সাহস তো কম নয়।আদি যে তোমাকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে। তোমার ভাগ্য ভালো তা না হলে তোমার মত মেয়েকে কে বিয়ে করে। এই তোমার বাড়ির লোক কোথায়।আদো আছে ত না নাকি নেই। তোমার বাবার নাম কি। তোমার কি কোন পৃতরি পরিচয় আছে নাকি নেই।
,মামা,হ্যা তুমি ঠিক বলেছ।দেখেত মনে হয় কোনো পৃতরি পরিচয় নেই। মনে হয় ও,,,,,
, নানী, খেতে বসে কি শুরু করলি হ্যা।
,দেখ মা আমি ঠিকই বলেছি।আদির কাছে ত শুনছি ও একা একটা বাসায় ভাড়া থাকতো ‌।কে জানে একা বাসায় কি করেছে।তিন কুলের কেউ নেই।কি রে আদি তুই একে বিয়ে করলি ওর কেউ ছিল না।
, আদিত্য, না মামা ওর কেউ নেই। এমনকি ওর বাড়ির কারোর নামই জানি না।
, আপনারা সবাই বিশ্বাস করুন আমি ওমন মেয়ে নই। আপনারা ভুল ভাবছেন।
,প্রেমা তুমি তো কারোর নামই এমনকি তোমার বাবার নাম টা পর্যন্ত আমাকে বলনি।কে তোমার বাবা।
, আমার বাবা কে তা আমি বলতে পারবো না।
হই না আমি একটু খারাপ দোষ কি তাতে।
, কেন পারবে না।
, আমি জানি না।
, মামা,দেখলি তো আদি তুই একটা জা,,,র,,,,,জ মেয়ে কে বিয়ে করেছিস।ভাবতে পারছিস কেমন মেয়ে বিয়ে করেছিস।
, মামী,এই নোংরা মেয়ে হাতে রান্না করা খাবার কিনা আমরা খাচ্ছি। ছিঃ ছিঃ

সবাই খাবার ছেড়ে উঠে গেল।
আদিত্য রেগে বললতে লাগলো, তুমি সত্যি এমন জানতাম না। তুমি এটলিস্ট গরিব হতে পারো। কিন্তু এমন নও। ছিঃ ছিঃ

সবাই আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। সবাই চলে গেল। কমলার মাকে আবার নতুন রান্না বসাতে বলল। আমার হাতের রান্না আর কোনো দিন খাবে না ‌‌তাই।

আমি আমার রুমে চলে গেলাম। আমার পিছু নিয়ে শ্রাবন আসল রুমে ওর মতলব ভালো না। রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।

, ওহ্ তুমি কত ছেলে কে নিয়ে খেলেছ হ্যা। বাজে হাসি দিয়ে।
, আপনি এখানে কেন এসেছেন চলে যান। আলিশা চলে আসবে।
, কেন কাল তো আদিত্যর সাথে ছিলে।ও ত অনেক কিছু দিয়েছে তাই না। এখন আমি একটু দেই।
বলেই ধস্তা*ধস্তি শুরু হয়ে গেল।
,ছারুন আমাকে। আদিত্য জানলে খুব খারাপ ভাববে। ছারুন।
কত গুলো চর থাপ্পড় দিয়ে বিছানায় ফেলে দিল।
, তোকে আমি ছারবো না। তুই সবাই কে সব বলেছিস না। তোর উপর আমি প্রতিশোধ নিব।হা হা হা হা।তোর উপর আমার লোভ অনেক আগে থেকেই। হা হা হা হা।

অনেক ধস্তা ধস্তি হল। আমাকে কে বাঁচাবে। চিৎকার করতে যাব তখনি মুখ চেপে ধরল।

, তুই চিৎকার করলে। সবাই কে বলব তুই আমাকে রোজ তোর খিদে মেটাতে আমাকে ডাকিস তখন কি হবে।হা হা ।

নিজেরে যেকোরেই হোক বাঁচাতে হবে।কেউ আসছে না এখানে। শ্রাবন কে দিলাম এক ধাক্কা। দেয়ালে বারি খেল। পাশের চেয়ার ছিলো ওটা দিয়ে দিলাম এক বারই হাঁপাতে হাঁপাতে।ও অজ্ঞান হয়ে গেল। এখন কি করি এটাকে। সোজা নিয়ে store রুমে রেখে আসি কেউ দেখেনি তো।বাবা জোর বাঁচা বেঁচে গেলাম।ওর গা থেকে অনেক রক্ত বের হচ্ছে। মেঝের সব রক্ত মুছে ফেললাম। এতক্ষণ কেউ ছিল না।
আজ অনেক বড় বিপদ থেকে বেঁচে গেলাম আল্লাহ। খোঁপা করা চুল গুলো সব খুলে গেছে। সবাই আমাকে খারাপ ভাবছে। ভাবুক না তাতে কিছু আসে যায় না।

সময় বহমান,

বেশ কিছুদিন এভাবেই কষ্ট দুঃখ অবহেলা অপমানে কেটে গেল।সব কিছু সময়ের সাথে সাথে সহ্য হয়ে গেছে।

সময়ের সাথে সাথে সবার মাঝে একটু অনুশোচনা তৈরি হচ্ছে।এর মধ্যে হঠাৎ একদিন মামা এসে sorry বলল।আর একটা নতুন শাড়ি দিল। নতুন বউের মুখ দেখে কিছু দিতে হয়। তখন ত দেইনি আজ দিলাম।তুমি এই বউ তাও তোমাকে আমরা অনেক কষ্ট দিয়েছি। তুমি অনাথ আমরা তা জেনেও সবাই দূরে সরিয়ে দিয়েছি। পারলে ক্ষমা করে দিও আমাদের।

আজ হঠাৎ করে মামী একজোড়া বালা পরিয়ে দিল। বাড়ির বউ এর হাত ফাঁকা ভালো দেখায় না।আর কখনো এই সিটিগোল্ড এর গয়না পড়বে না।
বুঝলাম না সময়ের সাথে সাথে সবার কি হল। আমার অসহায়ত্ব দেখে সবার করুনা করছে। মুচকি হেসে।

ইদানিং সবাই আর আগের মতো খারাপ ব্যবহার খুব কম করছে। আলিশা দেখলে ঠেলে সরে যেত। এখন তা করে না।
বাড়ির সবার জন্য কাপড় কিনলে আমার জন্য কেউ কিনত না। আমার সামনে দিয়ে নিয়ে যেত। তখন খারাপ লাগত। আমি এই বাড়ির কেউ না সেই পুরনো কাপড় পরেই থাকতাম।
আর এখন একটা কিছু কিনলেই আমার জন্য কিনে। শ্রাবন সেই আগের মতই রয়েছে। আলিশা খুব নজরে নজরে রাখে। আমার কাছে তেমন ঘেঁষতে পারে না। সেদিন এর জন্য রেগে আছে।খালি শুযোগ খুঁজছে কখন একা পাবে।

আদিত্যর এখন একটু বেশি আমার পিছনে পিছনে ঘুর ঘুর করে। তেমন একটা অফিস করে না। কিছু একটা বলতে চায়। আমার কাছে আসতে চায়।আমি সেই সুযোগ দেই না। এখন শোনার কোনো দরকার নেই।

আমি আশ্চর্য হচ্ছি সবার এই পরিবর্তন দেখে। হাতে বালা দুটো নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আর ভাবছি। হাতে বেশি দিন নেই।

মানুষের সাথে থাকতে থাকতে তার প্রতি ঠিক একদিন মায়া জন্মে যায়।

সবাই সন্ধ্যার সময় ড্রয়িং রুমে চায়ের আড্ডায় চলছে পাশে আমি বসে আছি। আগে কোনো কথার মাঝে আমায় গুরুত্ব দিত না। এখন একটু দেয়।
মামী চা খেতে খেতে বলল
,বউ মা
আমি চমকে গেলাম। সামনে তাকালাম অবাক হয়ে।
, মামী,এত অবাক হয়ে কি দেখছ।প্রেমা
,না মামী কিছু না।
, দেখ এখন তুমি এই বাড়ির বউ নিচে ঘরে কেন শুশছো। আদিত্য কি ভাবে হ্যা ওর তো খারাপ লাগছে তাই না।বউ থাকতে ও আমার ছেলে টা একা শোয়।

দেখলাম আদিত্য মুচকি মুচকি হাসছে।আর ফোন টিপছে। ওর মাথায় সারাক্ষণ কি ঘোরে বুঝতে পারছি। বদমাইশ। কেউ কিছু বলেনি এক সাথে থাকার ব্যাপারে।পুরো ব্যাপারটা আমাদের উপর ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু আদিত্য জোর করে নি আর করলেও আমি যাই নি ওর রুমে। সেটা আজ সবার সামনে আলোচনা হচ্ছে।

,আলিশা,হ্যা মামী তুমি ঠিক বলেছ। দেখ প্রেমা পাড়া প্রতিবেশী কি ভাববে।এই বাড়ির একটা সম্মান আছে। দেখ মানছি ভুল আমাদের ও তোমার ও হয়েছে। এখন পুরোনো সব কিছু ভুলে যাও। আমরা সবাই তার জন্য অনুতপ্ত।
, কিন্তু আপু।
, কোনো কিন্তু নয়।আজ থেকে তুমি আদির ঘরে শুবে। আমরা কোনো অজুহাত শুনব না।
এর মধ্যেই আবার ওই অসভ্য টা জেগে উঠল।
,অর্নব, সবাই এটেনশন প্লিজ। এখানে আমার কিছু বক্তব্য আছে। সবাই মনোযোগ সহকারে শুনবেন।
, আদিত্য, তোর সমস্যা কি হ্যা।সব কথার মাঝে বা হাত না দিলে হয় না। না।
, ওহ্।ব্রো প্লিজ এটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা। ওকে।
, ওকে।বল।
, ভাবী আর দাদাভাই খুব শীঘ্রই কিন্তু নতুন অতিথি চাই।
সবাই আহাম্ভক হয়ে গেল একি বলছে। আল্লাহ।
, আলিশা, আমার ভাই জি চাই একটু মুড নিয়ে।
, মামী, আমার ও একমত তবে সেটা ছেলে হবে আমার ও কাউকে না কাউকে লাগবে ‌হেসে। বাড়িটা একটু খালি খালি লাগে।
এরি মধ্যে মামা হাজির হলেন। কিসের আসর হচ্ছে শুনি।
, কেন অর্নব এর মা আমি কি পুরনো হয়ে গেছি নাকি। তোমার নতুন কাউকে লাগবে।
, মামী,হ্যা ভেটকি মেরে।
,অর্নব,আরে বাবা তুমি এসে গেছ বাড়িতে নতুন অতিথি কে কথা বলা হচ্ছে। এখন তুমি বল কে আসবে।
, মামা, আমার মতে মেয়ে হলেই ভালো হবে।তোর মাকে বাদ দিয়ে নতুন একজন আসবে আমার জন্য।
মামী রেগে গেল।

বাড়ির সবাই তো হাসতে হাসতে শেষ। তার মাঝে একজন অধম আমি যে কি না লজ্জায় শেষ। ভাবতেই পারেনি সবাই কি শুরু করেছ। এই অসভ্য মার্কা ছেলে টার জন্য। সবাই মিলে মজা করছে।
আর এদিকে কথার ফাঁকে ফাঁকে আদিত্য শয়তানের ভংঙ্গিতে তাকাচ্ছে।ওর নজর এত খারাপ যানা ছিল না।
সবার মধ্যে একটা বাকবিতন্ডা হয়ে গেল এই ছেলে মেয়ে হবে নিয়ে।
আর বেশিক্ষণ থাকলে আমি লজ্জায় বেহুঁশ হয়ে যাব।
চলে গেলাম কিচেনে সব কাপ গুলো ধুচ্ছি । আদিত্য কানের কাছে এসে বলল,রেডি থেকো। মুচকি হেসে।
সবাই সবার মত করে ডিসিশন নিয়ে নিল।একদল ছেলের পক্ষে আর একদল মেয়ের পক্ষে। এই নিয়ে বাজিও হয়ে গেল।
ভাবতেই পারছি না এমন অদ্ভুত মানুষ এই পৃথিবীতে আছে।
রাতে সবার খাওয়ার টেবিলে এ নিয়ে ও একদফা হয়ে গেল।আর আদিত্যর কথা আর কি বলব। বেহায়া কোথাকার।আজ তার বিশাল সুযোগ। সবাই মিলে ওর জন্য বাসর ঘর ও সাজিয়ে ছে।
আমাকে জোর করে সাজিয়ে ওর রুমে ঢুকিয়ে দিল।খালি আদিত্য সুযোগ খুজছে।

, দেখুন খুব ঘুম পাচ্ছে।ঘুমব সরুন।
, কেন আজই ঘুম তে হবে।কাল ঘুমাও।
,না। একটু অসুস্থার নাটক করতে হলো। তবেই ছাড়ল।
, আচ্ছা তুমি রেস্ট নাও। ওকে।
দুজন এক বিছানায় ঘুমালাম।
,প্রেমা
, হুম।
, তুমি সবার মন জয় করে নিয়েছ।হে হে। আমার ও। এখন থেকে শুধু ফিউচার এর কথা ভাববে।
বলেই জোরিয়ে ধরল। সরিয়ে কোন লাভ হল না।

সবার মায়া কাটাতে হবে। আমি কোনো মায়ায় জরাবো না।

সরারাত কেটে গেল। ওর সাথে।

চলবে,
সবার মূল্য বান কমেন্ট গুলা দেখতে চাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here