#ইয়াসমিন_রিমা
#অসম_প্রেম
#পর্ব_২১ স্পেশাল পার্ট
কিছু জিনিস শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায়।😢
ভোরের পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেল।
আদিত্য সকালে ঘুম থেকে উঠল।এত ভোর বেলা দেখে প্রেমা নেই।প্রেমা কোথায় গেল।ওয়াস রুমে গেল নেই।সারা বাড়ি খুঁজল কিন্তু কোথাও পেল না।গেল কোথায়।এত সকালে মেয়েটা গেল কোথায়। কাল রাতে শুধু জরিয়ে ঘুমিয়েছে।আর কিছু করেনি।পুরো রুম টা খুব সুন্দর করে সাজানো।যার জন্য সেই নেই।কত বুক ভরা আশা বেঁধেছিল প্রেমাকে নিয়ে।
এক নিমিষেই হাসি মুখটা মলিন হয়ে গেল।
আদিত্য হন্নে হয়ে খুঁজছে পাচ্ছে না। বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো। কিসের এত ভয় কাজ করছে আদিত্যর।
রুমে ডুকে দেখল বেডের সাথে ছোট্ট ড্রায়ার টেবিল এর উপর। আদিত্যর ফোনের নিচে চিরকুট। আদিত্য দৌড়ে গিয়ে দেখল । চিরকুট হাতে নিল।চিরকুট টার ভাঁজ খুলে পড়তে শুরু করল।
আদিত্য ঠাস করে বসে পরল। হাতে থাকা চিরকুট পড়ে গেল।এক নিমিষেই সব থমকে গেল।
#চিঠি,
প্রিয়, স্বামী
পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আমি আপনার জীবন থেকে চলে গেলাম।শেষ আছে বলেই শুরু করার এতো আয়োজন। মৃ/ত্যু আছে বলেই জীবনের এতো মায়া!উপসংহার আছে বলেই সবকিছু এতটা পুর্ণাঙ্গ।
সময় আমাদের কত অদ্ভুতভাবে প্রস্থানের কথা ভুলিয়ে দেয়।সব কিছু একদিন শেষ হবারি ছিল। আমি চলে যাচ্ছি বহুদূরে।আমার জন্য আপনার ও আপনার পরিবারকে অনেক অসম্মানিত হতে হয়েছে। আমি সাধারণত ঘরের মেয়ে আপনার সাথে আমার কখনই যায় না। আমি আপনার যোগ্য নই। কোথাও না কোথাও বৈষম্য থেকে যায় ।আমার জন্য আপনাদের অনেক কষ্ট পেতে হয়েছে।আমি সবার সাথে অনেক বাজে ব্যবহার করেছি যেটা কখনো উচিত হয়নি তার জন্য ক্ষমা চাইছি।আমাদের মাঝে যা ছিল যতটুকু ছিল সুন্দর ছিল। আমাদের কাটানো মুহূর্তগুলো কে ঘৃণা করবেন না।আপনি আমাকে আপনার জীবনে একটা দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যাবেন। আপনি আবার নতুন জীবন শুরু করুন।যদি পারেন তো চিরজীবনের জন্য ভুলে যান আমাকে।আমি এই ধরায় না থাকলে, কার বা আর কতটুকু কি’বা হবে?আমি না থাকলে, কারো কিছুই হবেনা। অথচ সবার জীবন নিজের মত করেই সবকিছু হবে। সবাই নিজের জীবন নিজের মত করেই গুছিয়ে নেবে।কারো জন্য কখনোই কিছু থেমে থাকে না। কখোনই না কোন কিছুই না।আপনারা সবাই ভালো থাকবেন। আপনি নিজের খেয়াল রাখবেন।
দয়া করে আমাকে খুজবেন না।
বিদায়।
ইতি,
আপনার দুই মাসের চুক্তি বউ ,
আদিত্য স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি প্রেমা এই ভাবে চলে যাবে।এত দিনে আদিত্যর মনে প্রেমার জন্য একটু একটু ভালোবাসা তৈরি হচ্ছিল। নিজেকে অপরাধী ভাবছে।কত অবহেলাই না করেছে। সবার কথায় কান দিয়ে প্রেমাকে কষ্ট দিয়েছে।
চলে যাওয়ার আগে ও প্রেমা কত সুন্দর মনের উদাহরণ দিয়ে গেল। কারোর উপর কোনো অভিযোগ নেই।এত দিন সব কষ্ট মুখ বুজে সহ্য করে গেছে তাও অভিযোগ করেনি।আজ সব ছেড়ে চলে গেছে বহু দূরে নীরবে।
বাড়ির সবাই এত দিনে পরিবারের একজন করে নিয়েছে প্রেমাকে। কিন্তু প্রেমা কাউকে না জানিয়ে কোথায় চলে গেল হঠাৎ করে। সবাই সবার ভুল বুঝতে পেরেছে। একটা মানুষ কে এতটা কষ্ট এতটা অবহেলা করা উচিৎ হয়নি সবার। এই বাড়ির লোক অতটাও খারাপ ছিল না। যতটা খারাপ ব্যবহার প্রেমার সাথে করেছে।
বর্তমানে ড্রইং রুমে সবাই স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। কাল কত মজাই না করেছিল আজ সব শেষ হয়ে গেছে। সবাই এর জন্য নিজেদের কেই দায়ী করছে। শুধু এরকম হয়েছে এদের ব্যবহারের কারণে।
,আলিশা,আদি তুই চিন্তা করিস না প্রেমাকে ঠিক পাব আমরা।
আদি কিছু বলছে না নিশ্চুপ হয়ে আছে। বিয়ে কাউকে না জানিয়ে। নিজে করে নিয়ে এসেছে অবহেলা কষ্ট যন্তনা সব কিছু ওর জন্য ই পেয়ে।
, নানী,কি হল সবাই চুপ করে আছিস কেন।সব তোদের জন্য হয়েছে। আমি হাজার বার বারন করেছি কিন্তু তোরা শুনিসনি মেয়ে টা তিলে তিলে কষ্ট দিয়েছিস।
, মামী, আম্মা আমরা সবাই তার জন্য অনুতপ্ত। জানি শ্রাবনের সাথে ঝামেলা হয়েছে। যেখানে প্রমানিত মেয়েটা নির্দোষ। তাহলে আমাদের কি করার থাকতে পারে।
, অর্নব,কাল কত হই হুল্লোড় করেছি ভাবী এমন করবে বুঝতেই পারিনি।জানো ভাবী অনেক কষ্টে চলে গেছে ।আর কোনো দিন ফিরবে না। কেঁদে কেঁদে
সবার আজ মন খারাপ। নিজেদের ভুল চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে। তাদের ভুলের পরিনতি।
, মামা,এসব কথা না বলে। পুলিশে খবর দে ।আদির কাছে প্রেমার ছবি আছে না ওই গুলো দে। পুলিশ কে পাঠাবো।
থানার DIG কে ফোন করল।
, আছলাম,হ্যালো পুলিশ স্টেশন থেকে বলছি।
,হ্যালো অফিসার আমাদের বাড়ির একজন নিখোঁজ আছে।দয়া একটু আসবেন। দরকার আছে।
, ওকে ছবি রেডী রাখুন আসছি।
বাড়িতে পুলিশ এর লোক আসল।প্রেমার ছবি দিল DIG কে। ছবি দেখে DIG হাত কাঁপছে ।
, উ,,,নি কে হয় আপনাদের ?
, আদিত্য, আমার ওয়াইফ।
,কি,,,ই।চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল অফিসারের।
,হ্যা।
,কি ,,,ই । করতে হবে বলুন।
, আমার ওয়াইফ আজ সকাল থেকে নিখোঁজ।সব জায়গায় খোঁজ নিয়ে ছি। কিন্তু পাইনি।
,ওহ্। আমরা তদন্ত করে দেখছি।
, ঠিক আছে।
বলে চলে গেল। সবাই বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে।প্রেমা নতুন এসেছে তাই সবাই তেমন একটা চেনে না।
পুলিশ দিয়ে খুঁজছে সারা শহর দেশ। কিন্তু কেউ খোঁজ পাচ্ছে না। এমনকি সি আই ডি ও লাগিয়েছে। ইন্টারনেট এ কোনো ডকুমেন্ট পাওয়া যায়নি।প্রেমার।
আদিত্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে কিন্তু ফল শুন্য।প্রেমাকে বোধহয় আর ফিরে পাবে না।যত দিন মেয়েটা ছিল শুধু ওকে কষ্টই দিয়ে গেছে।
প্রেমা বোধহয় খুব অভিমান করে চলে গেছে।আর ফিরবে না।
আদিত্য পাগলের মত হয়ে গেছে। সবাই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু পাচ্ছে না।ও চায় নি প্রেমা চলে যাক।ও যেমনি ছিল তেমনি মেনে নিয়েছে। সম্পূর্ণ রূপে গ্রহণ করেছে স্ত্রী হিসেবে। দেখতে ভালো না হোক। স্মাট না হোক যেমন সাধা সিধে ছিল তেমনি মেনে নিয়েছে। কিন্তু সব আশা ভেঙ্গে দিল।
বাড়ির সবাই হাল ছাড়েননি। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কি পাওয়া সম্ভব।
এভাবে যে গুলো দিন কেটে গেছে।প্রতিটা রাত আদিত্যর নির্ঘুম কাটে।সব কিছু স্বপ্নের মতো ধোঁয়াশা লাগে।প্রেমা আসলে কে ওর ভ্রম না কি মরীচিকা।
চলবে,