আমৃত্যু_ভালোবাসি_তোকে #লেখনীতে_সালমা_চৌধুরী #পর্বঃ০৪

0
726

শ্বাস ঝেঁড়ে, নিজের মাথায় গাট্টা মেরে মেঘ বলে, ‘ছিঃ মেঘ ছিঃ, কি সব ভাবছিস তুই, কেউ কি তার চাচাতো ভাইয়ের উপর ক্রাশ খায়? ভালো, ভদ্র হলেও মানা যেতো, এমন গুরুগম্ভীর, বদমেজাজি আর হিটলার স্বভাবের কেউ কি কারো ক্রাশ হয়..!! যে ছেলে ১০ বছরের মেয়ের গায়ে হাত তুলতে পারে সে আর যায় হোক আমার ক্রাশ হতে পারে না। এটা ভাবতেই মেঘের বুক ভেসে আসে কষ্টে।

নিজেকে স্বাভাবিক করতে মোবাইল হাতে নিয়ে কল করে মেঘের সবচেয়ে কাছের বান্ধবী বন্যাকে। প্রথম কল দিতেই রিসিভ হয় কল..

বন্যা- আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছো বেবি?

মেঘ- ওয়ালাইকুম আসসালাম, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি, তুই কেমন আছিস?

বন্যা- হঠাৎ আমায় স্বরণ করার কোনো স্পেশাল কারণ আছে? তোর তো আবার ভাঙা ফোন ঠাসঠুস বন্ধ হয়ে যাবে।

মেঘ রাগান্বিত স্বরে একপ্রকার হুংকার দিয়ে বলে… তুই আজ কোচিং এ আসিস নি কেন? কি যে একটা জিনিস মিস করছিস

বন্যা- কি মিস করেছি বলে ফেলো বান্ধবী

মেঘ- এখন বললে কি আর সেই ফিল টা পাবি নাকি আজব

বন্যা- আরে বেবি বলো তুমি। কাল শুক্রবার কোচিং বন্ধ, আবার দেখা হবে রবিবারে ততদিন সহ্য হবে না। বলে ফেল প্লিজ।

মেঘ- আমার হাতে এখন iPhone 13 pro max

মেঘের কথা বন্যা এক বিন্দুও বিশ্বাস করে নি, হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলছে, এখন বল

‘একটু পর 14 pro max কিনতে যাচ্ছিস,যাকে তার ভাই একটা আধা ভাঙা ফোন দিয়েছে ব্যবহারের জন্য, দিনে ১০০ বার বন্ধ হয়ে যায়, তার হাতে নাকি iPhone. তুই কি ঘুম থেকে স্বপ্ন দেখে উঠলি নাকি?’

মেঘের উৎফুল্ল মেজাজ আচমকাই বিগড়ে গেলো, অভিমানী স্বরে বললো, ‘কাল আবির ভাই আসছেন বিদেশ থেকে ওনিই নিয়ে আসছেন আমার জন্য।’

বন্যা- তাই বল, নাহয় তোর যে ভাই সে তোকে এই জীবনে ফোন কিনে দিতো না, তোর বাবা দিতে চাইলেও সে আছাড় মেরে ভেঙে ফেলতো। ওয়েট ওয়েট, এই আবির ভাইটা কে রে? যে তোকে ছোট বেলা মেরেছিল, সে?

মেঘ মুখ কালো করে উত্তর দিলো, ‘হ্যাঁ আমার চাচাতো ভাই।’

বন্যা- তা তোর প্রতি এত মায়া হলো কিভাবে ওনার?

মেঘ- জানিনা। শুন তোকে কি বলি

বন্যা- হ্যাঁ বল

মেঘ- আসলে আজকে বিকালে আবির ভাইয়াকে দেখে ছোটখাটো একটা শক খেয়েছি৷

বন্যা- মানে?

মেঘ- কি সুদর্শন চেহারা,দাঁড়ানোর স্টাইল,লুক আর অগোছালো চুলদেখে আমার মনটায় এলোমেলো হয়ে গেছে, আমি মনে হয় ওনার উপর ক্রাশ খেয়েছি.

মুখ ফুলিয়ে শ্বাস ছেড়ে একটু ধাতস্থ হয়ে গুরুগম্ভীর স্বরে বন্যা বললো, ‘তোর মাথা ঠিক আছে মেঘ?তুই এতবছর যাবৎ বলছিস এই মানুষটা তোর শৈশব নষ্ট করে দিয়েছে, আজ কৈশোরে পা দিতেই এই মানুষটার উপর ক্রাশ খেয়ে ফেলছিস? মানুষ রঙ বদলায়, কারণে অকারণে বদলায় কথাটা এতদিন শুনেছি কিন্তু আজ তোকে দেখে মনে হচ্ছে এই কথাটা ১০০% সত্যি। না হয় যাকে এত বছর শত্রু ভেবে এসেছিস আজকে তার কথা অবলীলায় বলে যাচ্ছিস, বাহ মেঘ বাহ। ‘

মেঘের নিরবতা বুঝতে পেরে বন্যা আবার বলা শুরু করলো,
‘ এসব কোনো বিষয় না বেবি, হঠাৎ করে দেখেছিস তো তাই আহামরি সুদর্শন লেগেছে, বিষয়টা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে, আমরা না দুজন দুজনকে কথা দিয়েছিলাম, একজন বিপথে গেলে আরেকজন সামলাবো । ভুলে গেলি?’

স্পষ্ট বুঝা গেলো মেঘের বদলে যাওয়া অভিব্যক্তি। সহসা নিজেকে সামলে আচমকা প্রশ্ন করে বসলো,

‘আমি কি দেখতে সুন্দর না? আমি কি কারো ক্রাশ হওয়ার যোগ্য না?’

মেঘের আকস্মিক প্রশ্নে বন্যা কিছুটা হতভম্ব হলো এরপর
কয়েকমিনিট শুধু হেসেই গেলো.,স্বাভাবিক স্বরে বললো.. ‘অবশ্যই তুই সুন্দর, ক্রাশ খাওয়ার ও যোগ্য কিন্তু তুই ছেলেদের ক্রাশ হতে পারবি কি না সন্দেহ আছে৷ হতে পারিস রাস্তাঘাটের,গাছগাছালির, রঙচটা দেয়ালের, গরুছাগলের ও হতে পারিস।’

রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে কল কেটে দিয়েছে মেঘ আর ভাবছে,
‘আজকাল সান্ত্বনা নিতে চাইলেও মানুষ মজা নেয়’

যদিও বন্যার হাসির কারণ টা খুবই স্বাভাবিক । মেঘকে বরাবর ই চোখে চোখে রেখেছে তানভির সহ বাড়ির সকলে, 6-10 পর্যন্ত পড়েছে গার্লস স্কুলে, তারপর গার্লস কলেজ। আহারে জীবন ধূ ধূ মরুভূমির মতো কোথাও কেউ নেই। স্কুল কলেজের সামনেই বাসার গাড়ি থাকতো,বাসা টু স্কুল,স্কুল টু বাসা। কোনো ছেলে না দেখলে ক্রাশ কিভাবে খাবে! বোধশক্তি হওয়ার পর মেঘ মনে হয় ২-৩ টা বিয়ে খেয়েছে কাজিনদের।৷ যাকে বলে নামের বিয়ে খাওয়া। তানভিরের ভয়ে বিয়ে বাড়ির এক কোণে বসে থাকতো মেঘ৷ ভাইয়ের কড়া শাসন ছিল ঘর থেকে বের হতে পারবি না, বরযাত্রী আসলে তো আরও না। ঘরের ভিতরেই তারজন্য খাবার পাঠানো হতো, তানভির নিজেই বোনকে খাওয়াতো ইচ্ছে মতো। তারপর বিয়ে শেষ হলে মা বোনকে নিয়ে চলে আসতো। গায়ে হলুদে নাচা,গান গাওয়া এমনকি মেহেদীও দিতে পারে নি কখনো।। এই কষ্টে এখন আর মেঘ কারো বিয়েতেই যায় না। এতে তানভির মনে হয় হাফ ছেড়ে বেঁচেছে।৷ মেঘের এই সাদাকালো জীবনের কথা শুনলে বন্যা কেনো পৃথিবীর সব মানুষ ই হাসবে। জীবনটা তার তেজপাতা হয়ে গেছে । মাঝে মাঝে ভাবে এই বাড়িতে জন্মানো টা কি খুব দরকার ছিল…!!!

কয়েকবার বন্যা কল ব্যাক করেছে, নিজের জীবনের হতাশার জন্য মেঘ আর কল রিসিভ ই করে নি, বান্ধবীকে রাগ দেখিয়ে কি হবে…! জীবন যেখানে যেমন তা মানতেই হবে।

মেঘের বেস্ট ফ্রেন্ড হওয়ার খেসারত দিতে হচ্ছে বন্যাকেও। মেঘের সাথে সাথে বন্যাকেও চোখে চোখে রাখে তানভির। কথায় আছে সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে, সঙ্গ খারাপ হলে মেঘও খারাপ হবে তাই সব সময় বন্যার পিছনে লোক লাগিয়ে রাখে। শুধু বন্যাই না আরও ২ জন বান্ধবী আছে মেঘের, একজন পাখি আরেকজন মায়া। ওদেরকেও নজরে রাখে তানভির। বোনকে সব দিক থেকে প্রটেক্ট করাই যেন তার প্রথম এবং প্রধান কাজ৷

★★★

আবির বিকাল থেকে ঘুমাচ্ছে। সন্ধ্যা ৭ টায় ঘুম ভাঙে আদির ডাকে। নিচে আবিরের আব্বু আর মেঘের আব্বু বসে আছেন, আবিরের বাইক কেনার কথা শুনেই তাড়াতাড়ি চলে এসেছেন অফিস থেকে৷ আবির ঘুম থেকে উঠে চোখেমুখে পানি দিয়ে টাওয়েল দিয়ে কোনোরকমে মুখ টা মুছে তৎক্ষনাৎ রুম থেকে বের হয় ৷ সে তার বাবাকে খুব ভালো করে চিনে ডাকার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত না হলে বাড়িতে তান্ডব শুরু করে দিবেন। আবিরের চোখে মুখে ঘুমের প্রভাব স্পষ্ট । ব্যস্তপায়ে হাঁটছে সে, আচমকা এলেমেলো পায়ে ছুটে রুম থেকে বের হয় মেঘ চুলগুলো অগোছালো। আকস্মিক ধাক্কা এড়াতে চটজলদি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকায় আবির, তৎক্ষনাৎ মোটা ভ্রুযূগল সহসা শিথিল হয়ে যায়,অমত্ত চেয়ে রইলো সে

একমুহূর্তের জন্য মস্তিষ্ক থমকে গেছে আবিরের, দৃষ্টি তার প্রখর, আচমকা হাঁটা থামাতে শ্বাস ভারি হয় আবিরের, কালো জামা পরিহিতা এক ললনার দিকে দৃষ্টি পরে, আপাদমস্তক দেখলো একবার, কালো জামাতে যাকে অপ্সরার ন্যায় লাগছে, এলোমেলো চুলগুলো তার কোমড় ছাড়িয়েছে চুল দেখে মনে হয় জীবনানন্দ দাশের বনলতাকে উদ্দেশ্য করে লেখা,

“চুল তার কবেকার অন্ধ*কার বিদিশার নিশা।”

দ্রুতগতি থামাতে গিয়ে মেঘের ছোট দেহ কম্পিত হয়,দৃষ্টি পরে ৬ ফুল লম্বা মানুষটার বুকে, মেঘ মুখ তুলে তাকায় সেই মানুষটার চেহাটার পানে, আবিরের চোখের দিকে বিস্ময়াভিভূত নয়নে তাকিয়ে আছে মেঘ, পলক ও পরছে না একটিবার, আবিরের চোখে মুখে ছিটানো পানির ঝাপটায় এলোমেলো চুলগুলো থেকে চুইয়ে চুইয়ে পানি পরছে যা তার পরনের সাদা টিশার্ট অল্পস্বল্প ভিজিয়ে দিচ্ছে সেদিকে খেয়াল নেই আবিরের,

আবির কয়েক সেকেন্ড স্তব্ধ থেকে হঠাৎ চোখ সরিয়ে পুনরায় রুদ্রমূর্তি ধারণ করে সবেগে হাঁটা দেয় সিঁড়ির দিকে, পিছন থেকে অষ্টাদশীর কোমল কন্ঠে ডাক শুনে থমকে দাঁড়ায় আবির তবে পিছনে তাকানোর প্রয়োজন মনে করে নি সে,

মেঘ ভয়ার্ত কন্ঠে বলে, ‘Thank you Abir Vai’

আবির শুনলো কি না কে জানে, এক মুহুর্ত দাঁড়িয়ে যথারীতি ব্যস্ত ভঙ্গিতে নিচে নেমে যায়।

মেঘ ঠায় দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে,থরথর করে কাঁপছে মেঘের হাত পা, মেঘের মনে হচ্ছে ভোঁ ভোঁ করে ঘুরছে সমগ্র পৃথিবী। কেনো জানি দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি পাচ্ছে না মেয়েটা, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে তাড়াতাড়ি দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়েছে। এতগুলো বছর পর আবিরের চোখে চোখ রাখলো মেঘ, ভেতর টা ভয়ে আঁতকে উঠছে বার বার, অন্তরা*ত্মা শুকিয়ে যাচ্ছে মেঘের৷

★★★

সোফায় বসে আছেন ২ ভাই,বাড়ির মহিলা রান্নাঘরে কাজে ব্যস্ত থাকলেও নজর তাদের এদিকে, কি হবে কে জানে

আলী আহমদ খান নিজের গাম্ভীর্যতা বজার রেখে একপ্রকার হুংকার দিয়ে প্রশ্ন করলেন, তুমি নাকি বাইক কিনেছো?

এই কথায় হুঁশ ফিরে অষ্টাদশীর, কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে ২ পা সামনে এগিয়ে বারান্দার সাইডে দাঁড়িয়ে নিচে তাকায় মেঘ, নিচে সোফায় বসা আব্বু আর বড় আব্বু, তাদের থেকে কিছুটা দূরে দুহাত ভাজ করে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আবির৷

জ্বী’, ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দেয় আবির।

‘কিন্তু কেন?’ পুনরায় হুংকার দেন তার আব্বু।

‘আমার বাইক কেনার ইচ্ছে ছিল তাই কিনেছি,’

‘তুমি জানো না এই বাড়িতে বাইক কেনা বা চালানো নিষেধ?’ এবার প্রশ্ন টা চাচ্চু মোজাম্মেল খান করেছেন।

‘হ্যাঁ জানি, ২০/৩০ বছর আগে কি ঘটে গেছে তা নিয়ে আতঙ্কে থাকার কোনো মানে হয় না, যদি কপালে খারাপ কিছু লিখা থাকে তাহলে সেটা ৭ সমুদ্র পারি দিয়ে হলেও আসবেই। সেটা আমি ঘরে বসে থাকলেও হবে আর গাড়িতে চলাচল করলেও হবে৷ ‘

‘তোমরা ২ ভাই কি নিজেদের মর্জি মতোই চলবে?’ আলী আকবর খান রাগান্বিত স্বরে প্রশ্ন করলেন।

‘বাইক কিনা যদি নিজের ইচ্ছে মতো চলা হয় তাহলে আমি দুঃখিত আব্বু৷ এই ব্যাপারে আমি নিজের মনের কথায় শুনবো।’

‘আমাদের নিজস্ব ৩ টা গাড়ি আছে, এত গাড়ি কেনো কিনলাম তোমাদের জন্যই তো’ মোজাম্মেল খান কোমল স্বরে বললেন

‘গাড়িতে চলাচল আপনাদের ইচ্ছে তাই আপনারা গাড়ি কিনেছেন, আমার গাড়িতে চলাচল করতে ভালো লাগে না তাই আমি বাইক কিনেছি এটা নিয়ে এত কথা বাড়ানোর কি আছে চাচ্চু । তোমাদের বাইক সম্পর্কিত জেরা শেষ হলে আমার তোমাদের কে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা আছে। ‘ আবির আব্বুর দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললো।

এতক্ষণ বাড়ির মহিলা রান্নাঘরে থাকলেও এবার আর থাকতে পারলেন না, এক ছুটে সবাই ড্রয়িংরুমে চলে এসেছেন । মেঘ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আবিরের দিকে। এই বাড়িতে এত বছরে কাউকে গলা উঁচু করে মুখের উপর কথা বলতে শুনেনি সে। তানভির ভাইয়া যত মেজাজ দেখিয়েছে সব মেঘের উপর, বড় আব্বু বা নিজের আব্বুর মুখের উপর কথা বলার সাহস হয় নি তার। আবির ভাই ২দিন হলো এসছে,আজই বাবার মুখের উপর নিজের মর্জি শুনাচ্ছে, এখন মেঘের মনে হচ্ছে ওনি হিট*লারের থেকেও বড়মাপের কিছু । মনোযোগ দিয়ে বাকি কথা শুনার চেষ্টা করছে মেঘ.

আবির: আব্বু,চাচ্চু আমি অনেকদিন যাবৎ চিন্তা ভাবনা করেছি নিজে একটা কোম্পানি শুরু করার। তোমরা অনুমতি দিলে কাজ শুরু করবো

মোজাম্মেল খান ও আলী আকবর খান দুজনের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পরেছে। এতবছর ছেলেকে বাহিরে রেখে পড়াশোনা করিয়েছেন, দেশে এসে নিজের ব্যবসার হাল ধরবে, দেশে পা দিতেই নিজে কোম্পানি খোলার চিন্তা ভাবনা করছে ছেলে৷

মোজাম্মেল খান চিন্তিত কন্ঠে বললেন, আমরা তো ভেবেছিলাম তুমি পারিবারিক ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

আবির কিছু বলার আগেই আলী আকবর খান বলে উঠলেন,
‘ঠিক আছে, তুমি পড়াশোনা করে এসেছো, তোমার নিজস্ব মতামতের গুরুত্ব আমরা অবশ্যই দিবো,তোমার নতুন কোম্পানি নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই তবে আমার একটা শর্ত আছে, তুমি আমাদের কোম্পানির CEO হবে, আগামীকাল শুক্রবার অফিস ছুটি তাই তুমি শনিবারে অফিসে যাবে,তোমাকে অফিসিয়াললি CEO পদ দেওয়া হবে। তারপর তুমি আমাদের অফিস সামলে যদি নতুন কোম্পানি শুরু করে প্রতিষ্ঠিত হতে পারো তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। Best of luck my boy.

আবির যেনো আগে থেকেই জানতো এরকম কিছু হবে তাই তার মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখা গেলো না’

এতটুকু বলে সোফা থেকে উঠে রুমের দিকে হাঁটা শুরু করলেন আবিরের আব্বু, কয়েক কদম এগিয়ে আবার দাঁড়িয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে রুদ্ধ কন্ঠে বললেন,

‘আমরা কোম্পানি সামলানোর জন্য সারাজীবন থাকবো না তোমাদেরকেই দায়িত্ব নিতে হবে, তুমি না পারলে তোমার প্রাণপ্রিয় ভাই তানভিরকে বলো রাজনীতি ছেড়ে ব্যবসায় আসতে তারপর তুমি তোমার মতো নিজে কোম্পানি খুলতে থাকো।’

আবির চোয়াল শক্ত করে বাবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

‘তানভির রাজনীতিই করবে ওর মাথায় ব্যবসা ঢুকানোর কোনো দরকার নেই, শনিবারেই অফিসে আসবো আমি। আমি একায় সবদিক সামলাতে পারবো। তোমরা দয়া করে তানভিরকে মুক্তি দাও, নিজের মতো করে রাজনীতি টা করতে দাও ওকে। তোমার শর্ত যেমন আমি মেনে নিয়েছি তোমাদেরকেও আমার একটা শর্ত মানতে হবে সেটা হলো, আমি আমার মন মতো কাজ করবো, আমার যখন যেখানে প্রয়োজন হবে নিজের কাজ গুছিয়ে আমি চলে যাব তখন আমাকে কোনো প্রকার বাঁধা দিতে পারবে না কেউ। দরকার হলে ২ অফিসের কাজ শেষ করে আমি রাত ১২ টায় বা ২ টায় বাসায় ফিরবো এমনকি নাও ফিরতে পারি এতে তোমাদের যেনো মাথাব্যথা না হয়।’

একদমে কথাগুলো বলে কোনোদিকে না তাকিয়ে দ্রুতপায়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায় আবির

আলী আহমদ খান কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে কোনো কথা না বলে রুমের দিকে হাঁটা দেন।

পিনপতন নীরবতা বাড়িতে৷ সোফায় বসে আছেন মোজাম্মেল খান, কাছেই তিন ঝা একজন আরেকজনের দিকে তাকাচ্ছে বারবার, তাদের আবিরের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস আছে কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাহিরের দুনিয়া সামলাতে গিয়ে নিজের প্রতি না যত্নহীন হয়ে পরে ছেলেটা এটায় তাদের চিন্তার বিষয়।

নিচে উপস্থিত মানুষগুলোর মধ্যে চিন্তার ছাপ দেখা গেলেও উপরে দাঁড়িয়ে একপ্রকার বিনোদন উপভোগ করছিল মেঘ৷ যেই বড় আব্বুর কথার উপর কারো কথা চলে না আজ ওনার সাথে টক্কর দেয়ার মানুষ এসেছে৷ বাবা ছেলে কি শর্তটায় না দিচ্ছে৷ যেমন বাবা তেমন ছেলে এসব ভেবেই হাসি পাচ্ছে মেঘের। হঠাৎ করেই হাসিটা গায়ের হয়ে মুখটা ভারি হয়ে গেলো মেয়েটার, আর ফিসফিসিয়ে বলতে শুরু করলো, নিজে তো হি*টলার সাথে আমার ভাইটাকে বড় গু*ন্ডা বানাতে কি সুন্দর উৎসাহ দিচ্ছে । এতবছর ভাইয়ের জ্বালায় জীবন তেজপাতা এখন আবার আরেকজনের আবির্ভাব হলো। কপালটায় খারাপ আমার।

এখন নিচে যাওয়ার পরিস্থিতি নেই তাই বিড়বিড় করতে করতে রুমে ঢুকতে যাবে হঠাৎ চোখ পরে আবির ভাইয়ার রুমের দিকে এক রাশ হতাশা নিয়ে রুমে ঢুকে যায় মেঘ।

বাবা মা কে ছেড়ে আলাদা রুমে থাকলে খুব স্বাধীনতা পাবে ভেবে নিচতলা থেকে উপর তলায় চলে এসেছিল মেঘ, আবির ভাই বিদেশ যাওয়াতে কোনো চিন্তায় ছিল না। কিন্তু মেঘ আসার ১৫ দিনের মাথায় তানভির ও মেঘের পাশের রুমে চলে আসে জিনিসপত্র নিয়ে। সিঁড়ি দিয়ে সোজা উঠতেই তানভিরের রুম। বোনকে পাহারা দিতেই মূলত এই রুমে আসা। তানভির যতক্ষণ রুমে থাকে ততক্ষণ নিজের রুমের দরজা টা খুলে রাখে, মেঘ সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে উঠতে গেলেও ভাইয়ের কথা ভেবে আস্তেধীরে উঠানামা করে৷ বর্তমানে মেঘের অবস্থা নাজেহাল কারণ তার একপাশে আবির ভাই এর রুম,আরেকপাশে তানভির ভাইয়ের৷ তানভির ভাইয়ের পরের রুমটা মীমের জন্য ঠিকঠাক করা হচ্ছে কিছুদিন পর থেকে মীমও উপরে থাকবে কিন্তু তাতে কি! ভাইয়ের ঘর ডিঙিয়ে মীমের রুম পর্যন্ত যেতে পারবে কি না সন্দেহ আছে৷

★★★

রাত ১০ টার উপরে বাজে সবাই খাওয়াদাওয়া শেষ করে যার যার রুমে চলে গেছে। আবির এখনও বাড়ি ফিরে নি। মালিহা খান সোফায় বসে অপেক্ষা করছেন ছেলের জন্য । ১০-১৫ মিনিট পর বাড়িতে ঢুকলেন আবির আর তানভির, মাকে বসে থাকতে দেখে কিছুটা রাগান্বিত হলো ছেলে।

‘আম্মু তুমি আমার জন্য এভাবে রাত জেগে বসে থেকো না প্লিজ, আমি নিজের মতো করে খেয়ে নিবো।’

‘তোর বউ আসলে আমি আর অপেক্ষা করবো না তোর জন্য,’ সহসা উত্তর দিলেন মালিহা খান।

বড় আম্মুর কথা শুনে স্ব শব্দে হেসে উঠে তানভির । আবির ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় তানভিরের দিকে সঙ্গে সঙ্গে তানভির হাসি থামিয়ে ফেলে, নিঃশব্দে হাসছে সে।

তানভির বরাবর ই ভীতু প্রকৃতির, বাহিরে যতই শক্তপোক্ত থাকুক না কেন বাবা, চাচা আর ভাইয়ের সামনে সে যেনো ভেজা বিড়াল। এতদিন যত কাজ ই থাকতো ছেলেটা ৮-৯ টার মধ্যে বাড়ি এসে সবার সাথে খেতে বসতো৷ কিন্তু আবির ফেরাতে টাইম সিডিউলে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে ছেলেটার।

চলবে………

#আমৃত্যু_ভালোবাসি_তোকে
#লেখনীতে_সালমা_চৌধুরী
#পর্বঃ০৪

📌গল্প কপি করা নিষেধ, শেয়ার করলে অবশ্যই পেইজ ম্যানশন করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here