#দ্বিতীয়_ফাগুন
#পর্বসংখ্যা_২৪
#লেখিকা_Esrat_Ety
রাশেদুজ্জামান হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তাশরিফের দিকে। রোদেলা তাশরিফকে দেখে দু’চোখ বন্ধ করে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। তাশরিফের দৃষ্টি রাশেদুজ্জামানের হাতের দিকে। রাশেদুজ্জামান কপাল কুঁচকে বলে ওঠে,”একি! তুমি এখানে! এখানে কি করছো তুমি?”
“বলছি স্যার, দাঁড়ান।”
তাশরিফ কথাটি বলেই প্রায় ছুটে এসে রাশেদুজ্জামানের হাত থেকে রোদেলার হাতের কব্জি ছাড়িয়ে নেয়। পকেট থেকে একটা টিস্যু পেপার বের করে রোদেলার কব্জি মুছে দিতে দিতে অত্যন্ত নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে,”ইশশশ! কি করলেন স্যার। দিলেন তো নোংরা করে আমার জিনিস টাকে। ধুররর স্যার। ”
রাশেদুজ্জামান চেঁচিয়ে ওঠে,”আরে কি হচ্ছে এসব! হচ্ছে টা কি এখানে।”
তাশরিফ রোদেলার হাত ছেড়ে দিয়ে রাশেদুজ্জামানের মুখোমুখি দাঁড়ায়। রাশেদুজ্জামান পাগলা কুকুরের মতো খেকিয়ে ওঠে,”ওও,সবাই মিলে একজোট হয়ে আমাকে বাঁশ দিতে চলে এসেছো তাই না? কতবড় কলিজা তোমাদের। তোমাদের দুজনের আমি এমন অবস্থা করবো!”
_জ্বি স্যার। আপনি যদি নিজে স্বাভাবিক অবস্থায় থাকেন তাহলে অবশ্যই করবেন।
_মানে?
_মানে এই যে স্যার……..
প্রচন্ড জোরে রাশেদুজ্জামানের নাক বরাবর একটা ঘুষি মেরে তাশরিফ হাসিহাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। রাশেদুজ্জামান তিনপা পিছিয়ে গিয়ে হাত দিয়ে নাক চেপে ধরে বসে পরে। রোদেলা আতংকিত হয়ে পরে। এখানে এখন মারামারি শুরু করবে নাকি এই লোকটা!
রাশেদুজ্জামান যন্ত্রনায় ছটফট করছে। মৃদু গোঙানির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। রোদেলা ভয়ার্ত কন্ঠে তাশরিফকে বলে,”মারলেন কেনো। কাজ তো হয়ে গিয়েছে!”
তাশরিফ রোদেলার দিকে তাকিয়ে তার প্রশ্নের উত্তর দেয়না। সে রাশেদুজ্জামানকে কেনো মারলো সেটা জানানোর প্রয়োজন মনে করছে না সে। গম্ভীর কন্ঠে বলে,”চলুন এখান থেকে।”
রাশেদুজ্জামান চেঁচিয়ে বলে,”তোদের দুটোকে আমি দেখে নেবো, কিচ্ছু করতে পারবি না তোরা আমার। দেখে নিস।”
তাশরিফ পেছনে ফিরে একটা হাসি দিয়ে বলে,”ঠিকাছে স্যার। আসছি।”
সিএনজিতে বসে তাশরিফের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে রোদেলা বলে,”এখন যদি লোকটা ক্ষোভের বসে আপনাকে আর আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়? মারলেন কেনো?”
তাশরিফ সামনের দিকে তাকিয়ে বলে,”দেবে না। ওর মনে ভয় ঢুকে গিয়েছে। ওর দৃষ্টি দেখে বোঝেননি?”
_না,আমি অত মানুষের দৃষ্টি দেখে কিছু বুঝিনা,আর সবথেকে বড় কথা আমি আন্দাজে কথা কম বলি।
তাশরিফ হেসে ফেলে। তারপর গলার স্বর স্বাভাবিক রেখে বলে,”রাশেদুজ্জামান যদি কিছু করতেও চায় কিচ্ছু করতে পারবে না। আমাদের প্ল্যান বি রেডি। এমডি স্যার আপনার মেসেজ দেখেছেন?”
_হ্যা,সিন করে রেখে দিয়েছেন। কোনো জবাব দেয়নি।
_প্রয়োজন নেই। আপনাকে এখন আপনার বাড়িতে নামিয়ে দিচ্ছি।কাল অফিসে আসুন।
_কাল যেতে পারবো অফিসে?
_হুম, প্রতিদিন যেতে পারবেন।
রোদেলা চুপ করে থাকে। তাশরিফ ইতস্তত করে বলে,”অনেক রিস্কি একটা কাজ করে আসলাম। তখন টের পাইনি,এখন খুব নার্ভাস লাগছে। কি আশ্চর্য।”
তারপর রোদেলার দিকে তাকিয়ে খুবই নরম সুরে বলে,”এখন একটা সিগারেট খেলে আপনি কি রেগে যাবেন?”
রোদেলা তাশরিফের মুখের দিকে তাকায়। তাশরিফ খানিকটা ঘাবড়ে যায় রোদেলার চাহনি দেখে। কিন্তু রোদেলা তাশরিফকে অবাক করে দিয়ে বলে,”খেতে পারেন।”
তাশরিফ খুশি হয়ে পকেটে হাত দেয়। কিন্তু তার পকেটে কোথাও সিগারেট নেই। আছে শুধু লাইটার টা। সিগারেটটা কোথাও পরে গিয়েছে সম্ভবত।
রোদেলা আড়চোখে একবার তাশরিফের দিকে তাকিয়ে বলে,”এতো বড় একটা অকাজ করে এসেও কতটা স্বাভাবিক ছিলেন , কিন্তু এখন সিগারেট খুজে পাচ্ছেন না বলে আপনাকে বেশ আতংকিত লাগছে। মনে হচ্ছে সিগারেট না, আপনার বৌ মিসিং! ”
তাশরিফ লজ্জিত ভঙ্গিতে হাসে। রোদেলা বলে,”ভালো কথা! আপনি তখন রাশেদুজ্জামানের সামনে কি বলেছেন?”
_কি বলেছি?
_আমার হাতের কব্জিকে আপনি আপনার জিনিস বলেছেন কেনো?
_বলেছি,কারন ওটা আমার জিনিস তাই।
রোদেলা কয়েক মূহুর্ত চুপ করে থেকে বলে,”শুনুন তাশরিফ স্যার আপনি যদি আমাকে আজ এটা ভেবে হেল্প করে থাকেন যে আমি আপনার হেল্প পেয়ে পটে যাবো তাহলে জেনে রাখুন,আমি পটিনি।”
তাশরিফ চুপ করে থাকে। রোদেলা বলে,”আর জানেন তো? পটার কোনো সম্ভাবনাও নেই।”
তাশরিফ একটা মুচকি হাসি দেয়। তারপর বলে,”জানি। কারন আমি হচ্ছি উপন্যাসের সবথেকে ভীতু নায়ক,যার কোনো স্ট্রং পারসোনালিটি নেই, পাঠিকারা যাকে পড়লে মিনিটে মিনিটে চমকাবে না। হাততালি দেবেনা যার সংলাপ শুনলে। আমার মধ্যে প্রেমে পড়ার মতো কিছুই নেই। যাকে পড়লে পাঠিকারাও কপাল কুঁচকে ফেলে বলবে,”ধুররর এটা কোনো নায়ক হলো!!”
রোদেলা তাশরিফের দিকে তাকায়। তাশরিফ বলতে থাকে,”আমার চরিত্রে উপন্যাসের নায়কের কোনো বৈশিষ্ট্য নাই থাকতে পারে কিন্তু ভালোলাগার মানুষের প্রতি অনুভূতি সেই তথাকথিত নায়কদের মতোই,প্রখর!”
এ পর্যন্ত বলে রোদেলার চোখের দিকে তাকিয়ে তাশরিফ বলে,”তা আপনার নেক্সট পরিকল্পনা কি?”
_বাড়ি যাবো। আরো কিছু করতে হবে?
_না আমি সেটা বলছি না। বলতে চেয়েছি, জীবনের নেক্সট পরিকল্পনা কি? বিয়ে টিয়ে করবেন না? ডায়েরীতে যেমনটা লিখেছিলেন!
রোদেলা কয়েক মূহুর্ত নীরব থেকে জবাব দেয়,”করবো না কেনো? ওসব তো এমনিই লিখেছি। অবশ্যই করবো। সাদাফ ভাইয়া তো আমার জন্য ছেলে দেখাও শুরু করে দিয়েছে। একটা ছেলেকে আমার ছবি আর বায়োডাটা দিয়েছে। ছেলের আমাকে পছন্দ হয়েছে। আমার বয়স নিয়ে ছেলের পরিবারেরও কোনো সমস্যা নেই।”
এই মাত্র রোদেলা তাশরিফের হৃদপিন্ডের ঠিক মাঝখানটাতে ছুড়ি বসিয়েছে। রোদেলা তা জানেনা , সে জানে না তাশরিফ কতটা আহত হয়ে মাথা ঘুরিয়ে ফেলেছে।
সিএনজি এসে রোদেলাদের গলির মাথায় থামে। তাশরিফ গম্ভীর কন্ঠে বলে,”আপনি যান। কাল অফিসে যথাসময়ে উপস্থিত থাকবেন। রাশেদুজ্জামান ফোন দিলে ধরবেন না,কোনো অচেনা নাম্বার ধরবেন না।”
_আপনিও চলুন না। চা খেয়ে যাবেন। হাজার হলেও আপনি আমার কুটুম।
_আন্তরিকতার জন্য ধন্যবাদ। এখন মুড নেই।
_আচ্ছা ঠিকাছে যান তবে,আমার বিয়েতে এসে না হয় চা মিষ্টি খেয়ে যাবেন।
কথাটি বলে রোদেলা তাশরিফের দিকে তাকিয়ে তার মুখের হাবভাব লক্ষ্য করছিলো। তাশরিফ রোদেলার দিকে তাকায় না। দৃষ্টি সামনে রেখে গম্ভীর হয়ে সিএনজি ড্রাইভারকে যেতে নির্দেশ দেয়।
সিএনজি চলে গেলে রোদেলা এক মিনিট সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে। এই মাত্র এই কাজ টা সে কেনো করলো সে জানেনা! তার অবচেতন মন কেনো চাইলো তাশরিফ হাসানকে একটু ক্ষেপিয়ে দিতে। কেনো?!
***
ভীত চোখে আশেপাশে তাকিয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে রোদেলা। সবাই যে যার মতো হন্তদন্ত হয়ে ছুটছে নিজের কাজের জায়গায়। আটতলায় একাউন্টস ডিপার্টমেন্টে ঢুকেই রোদেলা থমকে যায়।
রাশেদুজ্জামান তার ডেস্কের কাছে একটা হাত ব্লেজারের পকেটে ঢুকিয়ে টানটান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যেনো সে রোদেলার জন্যই অপেক্ষা করছিলো। একাউন্টস ডিপার্টমেন্টে ভীড় জমে গিয়েছে। মনে হচ্ছে অফিসের সবাই এখানে। রাশেদুজ্জামানের পাশে দুজন পুলিশ অফিসার দাড়িয়ে আছে। রোদেলা আতংকিত হয়ে তাশরিফের দিকে তাকায়। তাশরিফ ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে চোখ দিয়ে ইশারা করে তাকে আশ্বস্ত করে।
রাশেদুজ্জামান ব্লেজারের পকেট থেকে হাত বের করে তার নাকের ওপরে ক্ষতটায় হাত বুলায়,যেটার উপরে সে নিওস্ট্রিপ ব্যান্ড লাগিয়ে রেখেছে। তারপর উচ্চস্বরে পুলিশ অফিসারকে বলে,”নিন ইন্সপেক্টর! এসে গিয়েছে নাটের গুরু। এই বদমাইশ মেয়েটাকে আগে এ্যারেস্ট করুন।”
রোদেলা কেঁপে উঠে তাশরিফের দিকে চায়। তার মুখ হাসিহাসি।আশ্চর্য! এরকম একটা পরিস্থিতিতে এই লোকটা হাসছে কেনো!
মুখে মাস্ক পরিহিত পুলিশ ইন্সপেক্টর রোদেলার পা থেকে মাথা অব্দি দেখে। রোদেলা গুটিয়ে যায়। রাশেদুজ্জামান ধমকের সুরে বলে,”দেখছেন কি! এক্ষুনি এই জালিয়াত টাকে এ্যারেস্ট করুন আর তারপর ওই তাশরিফকে।”
পুলিশ অফিসার রোদেলাকেই দেখছে। বিরক্তিতে রোদেলা কপাল কুঁচকে ফেলে। তাশরিফ মোবাইলটা হাতে নিয়ে স্ক্রিনে কিছু দেখে। তারপর বলে ওঠে,”এখান থেকে রোদেলা আমিন বা আমি কাউকেই পুলিশ এ্যারেস্ট করবে না। কেউ যদি এ্যারেস্ট হয় তাহলে সেটা হবেন আপনি স্যার।”
_মানে ! কি বলতে চাইছো তুমি?
_মানে টা চেয়ারম্যান স্যার এসে বলবেন। একমিনিট একটু অপেক্ষা করুন।
মেহেরিন গিয়ে রোদেলার কাঁধে হাত রাখে। নিচু স্বরে বলে,”ভয় পেয়ো না। এভরিথিং ইজ ফাইন।”
রোদেলা একটা ঢোক গিলে আবারো আশেপাশে তাকায়। পুলিশ ইন্সপেক্টর তার দিকে এখনো তাকিয়ে আছে। রাগে তার গা জ্বলে যায়। ফিসফিসিয়ে মেহেরিনকে বলে,”ওই লোকটার সমস্যা কি বলেন তো। এর আগে কখনো মেয়ে দেখেনি নাকি!”
মেহেরিন ফিসফিসিয়ে বলে,”মেয়ে দেখেছে। তবে এর আগে এতো সুন্দরী অপরাধী হয়তো দেখেনি তাই চোখ ফেরাতে পারছে না।”
কোম্পানীর চেয়ারম্যান আতাউর চৌধুরী এবং তার ছোটো ভাই ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাবিউল চৌধুরী এসে গিয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সবাই তাদের একযোগে সালাম দেয়। সালামের উত্তর দিয়ে নাবিউল চৌধুরী বলে,”কি হচ্ছে এখানে?”
রাশেদুজ্জামান এগিয়ে এসে বলে,”তোমাকে মেসেজে তো সব বললামই নাবিউল। তুমি রোদেলাকে কি করবে তা তো জানি না তবে আমার ওর সাথে হিসেব চোকানো বাকি আছে। ওকে আমি পুলিশে দেবো। আর এই তাশরিফকেও।”
তাশরিফ একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। চেয়ারম্যান আতাউর চৌধুরী রাশেদুজ্জামানের দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় বলে,”তুমি রোদেলা আমিনের সাথে হিসেব চোকানোর আগে আমাদের সাথেও হিসেবটা চুকিয়ে নাও রাশেদ!”
_মানে? মানে কি আতাউর?
ভ্রু কুঁচকে জানতে চায় রাশেদুজ্জামান। আতাউর খলিলুর রহমানের দিকে তাকাতেই খলিলুর রহমান একটা ফাইল এনে তাকে দেয়। আতাউর চৌধুরী ফাইলটা উঁচুতে তুলে ধরে বলে,”এটাই গায়েব হয়ে গিয়েছিলো তাই না? কিন্তু এটা তো তোমার আলমারিতেই পাওয়া গিয়েছে রাশেদ।”
রাশেদুজ্জামান চোখ বড়বড় করে ফেলে। সে কি তাহলে ধরা খেয়ে গেলো। আতাউর চৌধুরীর হাতের লাল ফাইলটার দিকে তাকিয়ে নিজেকে বাঁচাতে তোতলাতে তোতলাতে বলে,”মাই গড। বলো কি! দেখেছো আমি কত মন ভুলো। কি বিশ্রী একটা কান্ড হয়ে গেলো।”
আতাউর চৌধুরী রাশেদুজ্জামানের দিকে কিছু পেপার ছুড়ে মারে। তারপর বলে,”বিভিন্ন সময়ে কোম্পানির লাখ লাখ টাকাও কি তুমি ভুলবশত মেরে দিয়েছো রাশেদ?”
রাশেদুজ্জামান চমকে ওঠে আতাউর চৌধুরীর কথা শুনে। নিচ থেকে একটা কাগজ উঠিয়ে দেখে সেসব তারই অপকর্মের দলিল। সে তাশরিফের দিকে তাকায়। এখন সে বেশ বুঝতে পেরেছে পুলিশ নিয়ে আসার পরেও কেনো তাশরিফ একটুও ঘাবড়ে যায়নি। কেনো আত্মবিশ্বাসের সাথে এখানে দাঁড়িয়ে ছিলো।
রাগে, ক্ষোভে,আতংকে রাশেদুজ্জামান পাথর হয়ে গিয়েছে। আতাউর চৌধুরী বলে,”পুলিশ ডেকে এনে তুমি আমাদের উপকারই করেছো । আমাদের আর কষ্ট করে ডাকতে হবে না।”
_আতাউর। আমার কথা শোনো। চলো আমার কেবিনে যাই। আই ক্যান এক্সপ্লেইন!
আকুতির সুরে বলে রাশেদুজ্জামান। নাবিউল চৌধুরী ঠান্ডা গলায় জবাব দেয়,”ট্রাস্ট মি রাশেদ। ইউ কান্ট! তুমি কোনো ব্যখ্যা দিতে পারবে না।”
আতাউর চৌধুরী বলে,”তাশরিফ হাসান। আপনি এই মুহূর্তে এই লোকটার রেজিগনেশন লেটার রেডি করে নিয়ে আসুন। আমি সাইন করে দিচ্ছি।”
তাশরিফ মাথা ঝাঁকিয়ে নিজের কেবিনে চলে যায়। কিছুক্ষণ পরে একটা কাগজ নিয়ে এসে চেয়ারম্যান স্যারের হাতে দিতেই সে সাইন করে রাশেদুজ্জামানের দিকে ছুড়ে মারে।
রাশেদুজ্জামান দাঁড়িয়ে আছে। নাবিউল চৌধুরী বলে,”তোমার সার্ভিসের জন্য তোমাকে ধন্যবাদ রাশেদ। কোম্পানির তোমাকে আর কোনো প্রয়োজন নেই। আত্মীয় দেখে কোনো এ্যাকশন আমরা নিচ্ছি না। তুমি আসতে পারো।”
অধিক শোকে মানুষ যেমন পাথর হয়ে যায়,রাশেদুজ্জামানের অবস্থা ঠিক সেরকম। আজ একটা ভুলের জন্য তার সবকিছু শেষ হয়ে গিয়েছে। কেনো যে ওই রোদেলা নামের বদমাশ মেয়েটির মোহে পরেছিলো সে!
এক এক করে একাউন্টস ডিপার্টমেন্টে দাঁড়িয়ে থাকা প্রত্যেকটি মানুষের দিকে একবার তাকিয়ে রাশেদুজ্জামান চলে যেতে নিলে তাশরিফ তার পথ আগলে দাড়ায়। রাশেদুজ্জামান তাশরিফের দিকে তাকায়। তাশরিফ রাশেদুজ্জামানের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে রোদেলাকে ডাকে,”রোদেলা আমিন।”
রোদেলা চমকে উঠে তাকায়। তাশরিফ ঠান্ডা গলায় বলে,”ওনাকে বিদায়ী সম্ভাষণ জানাবেন না?”
রোদেলা কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে তাশরিফের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। পুলিশের সামনে কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলবে নাকি এই “তারছিড়া” লোকটা!
তাশরিফ রোদেলার দিকে তাকায়। রোদেলা সবার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে রাশেদুজ্জামানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। রাশেদুজ্জামানের চোখে চোখ রেখে বলে,”অফিস জয়েন করার পর থেকে একটা দিনের জন্যও একটু স্বস্তি দেননি আমাকে। মাঝে মাঝে মনে হতো মেয়ে হয়ে কেনো জন্মালাম। আক্ষেপ হতো খুব। আজ থেকে এই অফিসে আমাকে একটা ইতর, শুয়োর,বাঞ্চোদ,বাঘডাশের ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকতে হবে না। গুড বাই স্যার।”
সবাই হা হয়ে রোদেলাকে দেখে। তাশরিফ তার পেঁচা মুখীর দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে,যেন সে তার পেঁচা মুখীর মুখ থেকে বের হওয়া গালাগালের মধ্যেও মুগ্ধতা খুঁজে পাচ্ছে।
রাশেদুজ্জামান রোদেলাকে কয়েক পলক দেখে হনহন করে বেড়িয়ে যায় অফিস থেকে।
চেয়ারম্যান আতাউর চৌধুরী তাশরিফের দিকে তাকিয়ে বলে,”গ্রেট! ইয়াং জেন্টেলম্যান গ্রেট! তোমাকেই আমাদের প্রয়োজন!”
তাশরিফ লজ্জিত ভঙ্গিতে হাসে। রোদেলা তাশরিফের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। তারপর চোখ সরিয়ে নেয়। নিজের কাণ্ডে নিজেই অবাক হয়। আশ্চর্য,সে এভাবে কেনো তাকিয়ে আছে তাশরিফের দিকে?
নাবিউল চৌধুরী পুলিশ ইন্সপেক্টরকে বলে,”অফিসার। আমার মনে হচ্ছে আর কোনো সমস্যা নেই এখানে….তাই যদি!”
_শিওর স্যার।
পুলিশ ইন্সপেক্টর অত্যন্ত বিনয়ী সুরে মাথা ঝাঁকিয়ে জবাব দেয়।
_আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য সত্যিই আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
_নেভার মাইন্ড! ! কাজটা তো আপনারা কেউ করেননি।
নাবিউল চৌধুরী তারপর সব এম্প্লয়িদের উদ্দেশ্য করে বলে,”সবাইকে মিটিং রুমে আসার জন্য বলা হলো। জরুরী মিটিং ডেকেছে আমাদের চেয়ারম্যান স্যার।”
আতাউর চৌধুরী এবং নাবিউল চৌধুরী চলে যেতেই সবাই তাদের পিছু পিছু মিটিং রুমে যেতে থাকে।
তাশরিফ একবার রোদেলাকে দেখে। রোদেলাও তাশরিফের দিকে তাকায়। দুজনের চোখে চোখাচোখি হতেই রোদেলা চোখ সরিয়ে নেয়। রোদেলা বিব্রত ভঙ্গিতে হন্তদন্ত হয়ে সবার পিছু পিছু হাটা শুরু করতেই পেছন থেকে কেউ ডেকে ওঠে,”এক্সকিউজ মি!”
রোদেলা পেছনে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে ফেলে। এই লোকটা তাকে কেনো ডাকছে। অদ্ভুত তো!
মাস্ক পরিহিত সেই পুলিশ ইন্সপেক্টর রোদেলার দিকে তাকিয়ে আছে,বলে,”আপনি কি রোদেলা আমিন?”
রোদেলা বিরক্ত হলেও মাথা ঝাঁকিয়ে উত্তর দেয়।
_জ্বি! কেনো বলুন তো? আমি কি আপনাকে চিনি?
লোকটা মাস্ক খুলে ফেলে। উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের একজন পুরুষ। রোদেলার লোকটাকে দেখে পুরনো দিনের একজন নায়কের কথা মনে পরে যায়। নায়কটার নাম মনে আসছে না।
লোকটি মাস্ক খুলে হাতে নিয়ে বলে,
_না,তবে খুব শীঘ্রই সম্ভবত চিনে যাবেন।
_মানে?
রোদেলা অবাক হয়ে বলে। লোকটি তার উত্তর না দিয়ে খলিলুর রহমানের সাথে কিছু ফর্মাল আলোচনা করে কনস্টেবল নিয়ে চলে যায়।
“কি কথা বলছিলেন উনি?”
তাশরিফের কথায় রোদেলা পিছু ফেরে। তাশরিফ তাকে কৌতুহলী দৃষ্টিতে দেখছে। রোদেলা মৃদু স্বরে বলে,”আমার নাম রোদেলা আমিন কি না জানতে চাইলো।”
_হু,চাহনি দেখেই বুঝেছি লোকটার,লুতুপুতু স্বভাবের পুরুষ। আসলে কখনো এতো সুন্দরী জালিয়াত দেখেনি তো তাই অতি উৎসাহী হয়ে গিয়েছে আপনার সাথে কথা বলার জন্য।
রোদেলা হাঁটতে থাকে,”ওনার কথা শুনে মনে হলো উনি আমাকে চেনেন।”
তাশরিফ বিরক্তি নিয়ে বললো,”এটা হচ্ছে পুরুষদের একটা ট্রিকস। আপনি বুঝবেন না,এরা যখন সামনে অতি সুন্দরী মেয়ে দেখে তখন এরা আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, কিভাবে কথা শুরু করবে বুঝতে পারে না তারপর এই পথ অবলম্বন করে, পরিচিত হবার ভং ধরে। ছ্যাবলা ধরনের পুরুষদের অভ্যাস এটা।”
রোদেলা তাশরিফের দিকে চায়। তারপর বলে,”আর ভালো ধরনের পুরুষদের অভ্যাস কোনটা? সুন্দরী মেয়ে দেখলেই তাকে যেচে হেল্প করতে যাওয়া? এটা?”
তাশরিফ দাঁড়িয়ে পরে। রোদেলা একটা বাকা হাসি দিয়ে চলে যায়। তাশরিফ বেশ কিছুক্ষণ ওখানে দাঁড়িয়ে থেকে এটা বোঝার চেষ্টা করতে থাকে রোদেলা আমিন এইমাত্র কি তাকে ভালো বললো নাকি অপমান করলো? কোনটা?
অফিসের গ্রাউন্ড ফ্লোরে এসে পুলিশ ইন্সপেক্টর তার ফোন বের করে একটা নাম্বার ডায়াল করে কানে ধরে ফোন। কলটা রিসিভ হতেই সে বলে ওঠে,”আসসালামুয়ালাইকুম সাদাফ ভাইয়া! আমি মিহির।”
ওপাশ থেকে সাদাফ বলে ওঠে,”হ্যা বল ভাই।”
_কিছুক্ষন আগে আমি আপনার শ্যালিকাকে দেখলাম।
_বলো কি! কিভাবে!
_আজ একটা কাজে ব্রাদার্স গ্রুপ অব কোম্পানির হেড অফিসে এসেছিলাম। আমার মনে হলো আমি আপনার শ্যালিকাকেই দেখলাম।
_হ্যা, রোদেলা তো ওখানেই জব করে। তারপর কি হলো? দেখে কেমন লাগলো!
_একটু অন্যরকম। তবে আপনার শ্যালিকা কিন্তু ছবির চেয়ে সুন্দরী ভাইয়া! আমার পছন্দ হয়েছে।
চলমান….