#দ্বিতীয়_ফাগুন
#পর্বসংখ্যা_১০
#লেখিকা_Esrat_Ety
রোদেলা হাঁপাতে থাকে। এতক্ষণ ধরে চেঁচিয়ে কথা গুলো বলে খুবই ক্লান্ত হয়ে পরেছে সে।
মেঘলা রোদেলাকে ধরে রেখেছে। কিছুক্ষন সবাই চুপ করে বসে থাকে। তারপর মেঘলা বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে,”কেনো করলি এমন? একবার ও ভাবলি না এর পরিনতি কি হতে পারে?”
বৃষ্টির মুখে কোনো কথা আসছে না। এতবার করে সে বলছে সে খারাপ কিছু করে নি আজ তবুও কেউ তাকে বিশ্বাস করছে না।
রোদেলা মেঝের দিকে তাকিয়ে মেঘলাকে বলে,”আপু ওকে জিজ্ঞেস করো কতদিন ধরে চলছে এসব। আমরা যখন বাসায় থাকতাম না,ওই ছেলে কি প্রায়ই আসতো এ বাড়িতে? ওকে জিজ্ঞেস করো।”
বৃষ্টি ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায় তারপর এসে হাঁটু গেড়ে রোদেলার সামনে গিয়ে বসে পরে, রোদেলা বৃষ্টির থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
“আপু। ও কখনো আসেনি এ বাড়িতে। আজ আমি অসুস্থ ছিলাম তাই দেখতে এসেছে। তুমি বিশ্বাস করো,আমি অমন বাজে মেয়ে নই।”
রোদেলা বোনের দিকে শীতল দৃষ্টি দেয়।
“কি ভেবেছিস? যে প্রেমিকের জন্য নিজের পড়াশোনা,আমার স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিয়েছিস, উচ্ছন্নে গিয়েছিস, তোর সেই গাঁজা খোর প্রেমিক তোকে বিয়ে করবে শেষমেশ? তোর উপর থেকে মন উঠে গেলেই তোকে ছুড়ে ফেলে দেবে। এতো টুকু বোঝার বুদ্ধিমত্তা থাকলে আজ এমন কাজ করতিস না!”
_আপু ও ওই ধরনের ছেলে নয়। ও খুব ভালো ছেলে। তুমি দয়া করে বিশ্বাস করো ও আমার সাথে খারাপ কিছুই করেনি আজ।
_তুই আমাকে আপু বলে ডাকবি না ! খবরদার না।
বৃষ্টি আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বোনের দিকে। রোদেলা বলতে থাকে,”বড় আপুকে দেখেও কোনো শিক্ষা হয়নি তোর? আমাকে দেখেও কোনো শিক্ষা হয়নি তোর? নিজের আশেপাশে এতো রঙ বেরঙের পুরুষ দেখছিস তবুও শিক্ষা হয়নি তোর? সামনে তোর জীবন গড়ার সময় আর তুই!, ছিঃ ছিঃ ছিঃ।”
বৃষ্টির দুচোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরে মেজো আপুর ধিক্কার শুনে। রোদেলা উঠে গিয়ে রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। মেঘলা গিয়ে দরজা ধাক্কাতে থাকে।
“রোদেলা দরজা খোল।”
_এখান থেকে যাও আপু,আমি একটু একা থাকবো কিছুক্ষণ। যাও এখান থেকে।
মেঘলা ঘুরে বৃষ্টির দিকে তাকায়। বৃষ্টি শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
“বাসায় কিছু হয়েছে? তোর কন্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেনো?”
রুহুল আমিন উৎকণ্ঠা নিয়ে বলে রোদেলাকে। রোদেলা গলার স্বর স্বাভাবিক রেখে বলে,”ঠান্ডা লেগেছে বাবা। তোমরা কি আজ ফিরবে? ”
_তা বলা যাচ্ছে না,তোর আন্টি খুবই কান্না কাটি করছে। আচ্ছা ঠান্ডা লাগিয়ে বসে আছিস কেন সবাই? বৃষ্টিকেও দেখে এসেছি খুকখুক করে কাশছিলো খুব। ওষুধ খা। অলসতা করবি না।
রোদেলা ফোন কেটে থমথমে মুখ নিয়ে বসে থাকে। মেঘলা এসে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলে,”কোথাও যাচ্ছিস?”
রোদেলা ব্যাগের মধ্যে ফোনটা ঢুকিয়ে নেয়। বলে,”ভুলে গেলে তিনদিনের মধ্যে বাড়ি ছাড়তে হবে? জলদি একটা ফ্ল্যাট খুজে না পেলে মালামাল নিয়ে রাস্তায় থাকতে হবে।”
_তাই বলে এতো রাতে?
_রাত কোথায়,মাত্র আটটা, এখনি খুঁজতে যাবো আমি। তোমার ছোটবোন কে দয়া করে বলে দিও আজ থেকে বাসা থেকে না বের হতে। ওর ওই চুনকালি মাখা মুখটা নিয়ে বাইরে নামার প্রয়োজন নেই। বাসা চেইঞ্জ করা হয়ে গেলে ওর যা ইচ্ছা তাই করুক।
রোদেলা চলে যায় বাসা খুঁজতে। বৃষ্টি নিজের বিছানায় শুয়ে আছে। আদিল বারবার ফোন দিয়ে যাচ্ছে। সে ফোনটা রিসিভ করছে না।
কয়েক মুহূর্ত পরে সে উঠে বসে। তার বুকে অসহনীয় ব্যাথা হতে শুরু করে। দমবন্ধ হয়ে আসছে তার। হাতে ফোনটা তুলে নিয়ে আদিলকে মেসেজ লেখে সে,”আমাকে বিয়ে করবে আদিল? তোমাকে দুদিন সময় দিলাম ভাবার জন্য। ভেবে আমাকে জানাও।”
মেসেজ টা পাঠিয়ে হাঁটুতে মাথা রেখে বসে থাকে দুমিনিট। ঠিক দুমিনিট পরে ফোনের নোটিফিকেশনের টুং টুং আওয়াজে মাথা তুলে ফোন দেখে সে,
“কালকে বিকেলে তৈরি থেকো। আমি সব ব্যবস্থা করছি। গলির মাথা থেকে আমার এক শাফিন গিয়ে তোমাকে নিয়ে আসবে। ভোটার আইডি কার্ড সাথে রেখো।”
বৃষ্টি মেসেজ টা পরে ফোনটা দূরে সরিয়ে রাখে। দু’চোখ বন্ধ করে বসে থাকে নিজের বিছানায় ।
***
“এটা কিসের কাগজ?”
খলিলুর রহমান ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে কাগজ টা। তারপর রোদেলার দিকে তাকিয়ে বলে,”পাঁচ দিনের লিভ নিচ্ছো? কিন্তু কেনো? বিয়ে টিয়ে করছো নাকি?”
খলিলুর রহমানের রসিকতায় রোদেলা কিঞ্চিত বিরক্ত হয়। কিন্তু তার বিরক্তি সে প্রকাশ না করে বলে,”স্যার বাসা চেইঞ্জ করছি, সবকিছু গোছগাছ করার জন্য একটু সময় লাগবে। একদিনে সব সম্ভব না। আর এছাড়াও আমার ব্যক্তিগত কিছু কারণ আছে।”
_সে ঠিক আছে। তবে এটা আমাদের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার তাশরিফ হাসানের কাছে নিয়ে যাও। কর্মচারীদের ছুটি সংক্রান্ত বিষয়টা এখন থেকে তার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে।
দরজা ঠেলে মাথা বাড়িয়ে রোদেলা বলে,”আসতে পারি স্যার?”
সকাল সকাল কাঙ্খিত ব্যক্তির কন্ঠের আওয়াজ পেয়ে তাশরিফ অনেকটা খুশি হয়ে যায়। রোদেলা তার দিকে তাকিয়ে আছে তার অনুমতির অপেক্ষায়। তাশরিফ খানিকটা বিব্রতও হয় বটে। এভাবে রোদেলার মুখে স্যার ডাক শুনতেও তার ভালো লাগছে না। সে কলম দিয়ে কিছু একটা লিখছিলো,রোদেলার দিকে তাকিয়ে বলে,”আসুন।”
রোদেলা কেবিনে ঢোকে। তাশরিফ রোদেলার দিকে একপলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। জানালা থেকে রোদ এসে রোদেলার মুখের ওপর পরেছে,তাকে ভয়ঙ্কর সুন্দর লাগছে, বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায়না। রোদেলা তাশরিফের ডেস্কের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। রোদেলাকে চেয়ারে বসার নির্দেশ দিয়ে তাশরিফ বলে,”বলুন।”
রোদেলা চেয়ার টেনে বসে, তারপর বলে,”খলিলুর রহমান স্যার আপনার কাছে পাঠিয়েছেন। আমার ছুটির আবেদন টা দয়া করে মঞ্জুর করুন।”
রোদেলা আবেদন পত্র এগিয়ে দেয় তাশরিফের দিকে। তাশরিফ কাগজটি নিয়ে কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থাকে। মনে মনে ভাবে,”কি ব্যাপার মিস মেজাজি? একসাথে পাঁচ দিনের ছুটি নিচ্ছেন যে ! একটানা পাঁচ দিন আপনাকে, আপনার ওই পেঁচার মতো মুখটাকে না দেখতে পেলে যে আমার অবস্থা বেহাল হয়ে যাবে !”
তারপর মুখে বলে ওঠে,”কোনো অসুস্থতার কথা উল্লেখ করেননি। লিখেছেন ব্যক্তিগত কারন। কেউ অসুস্থ না থাকলে একটানা পাঁচদিন ছুটি নেওয়ার পেছনে যুক্তিসঙ্গত কারণ দর্শাতে হয় মিস রোদেলা।”
কথাটি বলেই তাশরিফ নিজের প্রতি নিজেই বিরক্ত হয়। এমন বস টাইপের আচরণ করলে এই পেঁচা মুখী এই জন্মে তার প্রেমে পরবে না তা সে জানে। তবু তাকে জানতেই হবে রোদেলা কেনো এতদিন ছুটি নিতে চাইছে।
রোদেলা কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে বলে ওঠে,”এই অফিসের নিয়ম অনুযায়ী একজন এম্প্লয়ি মাসে তিনটা লিভ পাবে। এ যাবত কাল আমি আমার লিভ গুলো নিইনি। অফিসের নিয়মই যদি ধরতে যাই তাহলে আমার অসংখ্য লিভ পাওনা আছে। আমি যেকোনো সময় সেগুলো নিতে পারি। আর কোনো এম্প্লয়ি তার ব্যক্তিগত কারনে লিভ নিচ্ছে নাকি অসুস্থতার জন্য লিভ নিচ্ছে নাকি বিয়ের পাত্রী দেখার জন্য লিভ নিচ্ছে সেটা এই অফিস কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের বিষয় না স্যার।”
তাশরিফ রোদেলার কথায় বিব্রত হয়। সে যে পাত্রী দেখার জন্য লিভ নিতো তা রোদেলা কিভাবে জানতে পারলো!
লজ্জিত ভঙ্গিতে হেসে ফেলে তাশরিফ। রোদেলার মুখে কোনো ভাবান্তর নেই। তাশরিফ বলে,”আপনার ছুটির আবেদন মঞ্জুর করা হলো।”
_ধন্যবাদ স্যার।
ঠান্ডা গলায় জবাব দেয় রোদেলা । তাশরিফ একবার ভাবলো রোদেলাকে বলবে যাতে সে তাশরিফকে স্যার না ডাকে কিন্তু পরে ভাবলো স্যার না ডাকলে আবারো “তাশরিফ ভাই,তাশরিফ ভাই” ডাকতে শুরু করে দিবে,তাহলে তো মহা বিপদ !
রোদেলা উঠে দাঁড়ায়। “আসছি স্যার” বলে তাশরিফের কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। তাশরিফ দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে।
মনে মনে বলতে থাকে,একদিন এই মহিলাকে সে সম্মোহিত করে বিয়ে করে আজীবনের জন্য তার একান্ত ব্যক্তিগত পিএ বানিয়ে রাখবে। যেখানে কোনো ছুটি ছাটা থাকবে না। বেতন হবে প্রতিদিন অসংখ্য অদৃশ্য চুমু। এই ভয়ংকরীকে সরাসরি এতো চুমু খাওয়ার সাহস তার নেই,তাই অদৃশ্য চুমু !
***
“মেঘলা! এই মেঘলা!”
রুহুল আমিনের ডাকে দু’চোখ মেলে তাকায় সে। তাড়াহুড়ো করে উঠে বসে। কয়েক মুহূর্ত সময় নিয়ে সে বুঝতে চেষ্টা করে এখন সকাল না বিকাল। রুহুল আমিন তার দিকে চিন্তিত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে।
“কি রে? হঠাৎ জাগিয়ে দিলাম বলে ভায় পেয়েছিস?”
চোখ ডলতে ডলতে মেঘলা বলে,”না। তোমরা কখন এলে?”
_এই মাত্র। আচ্ছা দরজা এভাবে খুলে রেখে ঘুমাচ্ছিলি কেনো? আর বৃষ্টি কোথায়? কোনো বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছে?
মেঘলা হতভম্ব হয়ে রুহুল আমিনের দিকে তাকায়। ভয়ার্ত কন্ঠে বলে,”বৃষ্টি বাড়িতে নেই?”
_না,দরজা খোলা ছিলো।
ধরফরিয়ে খাট থেকে নেমে পরে মেঘলা। অসুস্থ শরীরটা সায় দিচ্ছে না তবুও প্রায় দৌড়ে গিয়ে হাতে ফোন তুলে নেয়।
রুহুল আমিন পেছন থেকে ডাকাডাকি করতে থাকে,”আরে কি হয়েছে বলবি তো? কাকে ফোন দিচ্ছিস?”
মেঘলা তার বাবার কথার কোনো উত্তর দেয়না,রোদেলাকে ফোন দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
দু’বার রিং বাজতেই ওপাশ থেকে রোদেলা কলটা রিসিভ করে।
_হ্যা আপু বলো!
খুবই ক্লান্ত রোদেলা,কন্ঠে বোঝা যাচ্ছে। মেঘলা চাপা স্বরে চেঁচিয়ে ওঠে,বলে,”রোদেলা বৃষ্টি বাড়িতে নেই।”
অফিসের কাজ শেষ করে মাত্র উঠতে যাচ্ছিলো রোদেলা। মেঘলার কথায় ধপ করে চেয়ারে বসে পরে।”
_বাড়িতে নেই মানে! কোথায় গিয়েছে? তুমি দেখোনি?
_আমি বিকেলে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম রোদেলা,বাবা এসে ডেকে বললো বাড়িতে কেউ নেই,দরজা নাকি খোলাই ছিলো,ওর ফোনটাও ফেলে রেখে গিয়েছে।
রোদেলা চোখ দুটো বন্ধ করে একটা গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,” চিন্তা করো না,বাবাকেও চিন্তা করতে নিষেধ করো। তুমি ওর যত বন্ধু বান্ধব আছে তাদের ফোন দিতে থাকো। আমি আসছি।”
অফিস থেকে নেমেই একটা সিএনজি নিয়ে নেয় সে। সিএনজিতে উঠেই প্রথমে কল করে রুবায়েত ফরাজীর কাছে। বৃষ্টি ওখানে গিয়েছে কি না তা জানতে চায়। রুবায়েত ফরাজীর থেকে “না বোধক” উত্তর পেয়ে ফোন কেটে দিয়ে চুপচাপ বসে থাকে সে। রোদেলার এই ছোট্ট বোনটা বরাবর প্রচন্ড অভিমানী। কাল ওকে মারধোর করে রোদেলা সারারাত তীব্র অনুশোচনায় ঘুমোতে পারেনি। প্রচন্ড অভিমান নিয়ে কোথায় গেলো আদরের বোনটা! ও ঠিক আছে তো! নিজের কোনো বিপদ ঘটিয়ে ফেললো না তো!
আদিল ঘামছে। হৃদস্পন্দন বেড়ে গিয়ে অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে তার। সে বিশ্বাস করতে পারছে না তার পাশে বসে থাকা মেয়েটি এখন থেকে তার “বৌ”! তার ইচ্ছে করছে চিৎকার করে পুরো দুনিয়াকে জানিয়ে দিতে,”এই দেখো সবাই! এই পুতুলের মতো সুন্দর মেয়েটি আমার বৌ!”
তারা এখন কাজী অফিসে। নগদ বিশ হাজার টাকা কাবিনে তাদের বিয়ে হয়েছে। আদিলের জমানো টাকা পুরোটাই সে দিয়ে দিয়েছে বৃষ্টির হাতে। বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপারে দুজনের সাইন করা হয়ে গেলে কাজী নববিবাহিত দম্পতির জন্য দোয়া পাঠ করতে শুরু করে। বৃষ্টি, আদিল এবং তাদের বন্ধুরা সবাই দুই হাত উঁচুতে তুলে ধরে। পেছন থেকে বৃষ্টির একজন বান্ধবী বৃষ্টির শাড়ির আঁচল টেনে তার মাথায় তুলে দেয়। নতুন বৌ, মাথায় ঘোমটা থাকতেই হবে।
বৃষ্টি পরে আছে মেরুন রঙের একটি মনিপুরী শাড়ি। বিয়ে উপলক্ষে আদিল গিয়ে কিনেছে বৃষ্টির জন্য। নিজে পরেছে একটা মেরুন রঙের পাঞ্জাবি। পাঞ্জাবি টা অবশ্য অনেক আগের কেনা।
কাজী “আমিন” বলার সাথে সাথে বৃষ্টি হঠাৎ ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করে দেয়। আদিল চিন্তিত ভঙ্গিতে তাকায়, উৎকণ্ঠা নিয়ে বলে,”কি হয়েছে বৃষ্টি? জ্বর উঠলো নাকি আবার?”
বৃষ্টি মাথা তুলে আদিলের দিকে তাকায়। কেঁদে কেঁদে বলে,”আদিল খুব বড় ভুল করে ফেলেছি। আপুরা,বাবা খুব কষ্ট পাবে আদিল।”
আদিল হতবাক হয়ে বৃষ্টির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। কি বলে এই মেয়ে! এখন আবার বিয়েটা ক্যানসেল করে দেবে নাকি! হায়রে নারী জাতি ! তোদের এতো ঘন ঘন মুড সুয়িং হয় কেনো!
বৃষ্টির পাশ থেকে শাফিন বলে ওঠে,”সারাদিন কিছু খাইনাই, কুত্তার মতো দৌড়ানি খেতে খেতে আসছি তোদের বিয়েটা দেওয়ার জন্য,এখন যদি দুজনের একজনও নাটক শুরু করো তাইলে সত্যি সত্যি তোদের দুটোকে বস্তায় ভরে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিয়ে আসবো।”
সুহানা আদিলকে বলে,”এখন কি করবি? নেক্সট স্টেপ কি? আন্টিকে কিভাবে ম্যানেজ করবি? বৃষ্টিকে কোথায় রাখবি?”
_কোথায় রাখবো মানে? আমার বৌ আমার কাছে থাকবে। আমার নেক্সট স্টেপ হচ্ছে ভাইয়াকে ফোন দেওয়া। ভাইয়া সবটা ম্যানেজ করে নেবে।
তারপর বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে,”কান্নাটা একটু বন্ধ করো প্লিজ। এই দেখো তোমার সিমেন্ট আপুকে মেসেজ করে জানিয়ে দিচ্ছি। কান্না থামিয়ে চড় খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হও।”
আদিলের আরেক বন্ধু রাফসান। সে মোবাইল টা উঁচুতে ধরে ওদের দেখিয়ে বলে,”এই দেখ। ফোন দিয়েই যাচ্ছে রোদেলা আপু। আমি তো ভাই মিথ্যা কথা বলতে পারি না,তাই ফোনই ধরছি না।”
বৃষ্টি ফুঁপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে। আদিলের ইচ্ছে করছে এখন মেয়েটাকে একটা থাপ্পর মারতে। নিজেই বিয়ের কথা বললো আর এখন এভাবে কেঁদে সিনক্রিয়েট করছে। তারপর নিজেই নিজেকে মনে মনে শাসায়,”আদিল কি হচ্ছে এসব! বেচারী ভয় পেয়ে আছে। এভাবে রাগ করিস না ওর উপর। মুখের দিকে তাকিয়ে দেখ,কত মায়া মুখটায় !”
***
“হাই সিমেন্ট আপু,আমি আপনার ছোটো বোনের স্বামী আদিল হাসান বলছি। ঘড়ি ধরা ঠিক বিশ মিনিট আগে আপনার ছোটো বোনকে আমি বিয়ে করে নিয়েছি। আমরা এখন কাজী অফিসের বারান্দায় বসে আছি। আপনার এবং আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছি,এসে আমাদের দোয়া করে যাবেন।”
মেসেজের নিচে আদিল কাজী অফিসের ঠিকানা লিখে দেয়।
মেসেজ টা পরে রোদেলা কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থাকে। তারপর চিৎকার দিয়ে ওঠে। রুহুল আমিন,মেঘলা এবং আয়েশা সিদ্দিকা এসে রোদেলার ঘরের দরজায় এসে দাঁড়ায়।
“কিরে মা? বৃষ্টির কিছু হয়েছে? এভাবে চিৎকার দিলি কেনো?
উৎকণ্ঠা নিয়ে প্রশ্নটি করে রুহুল আমিন।
রোদেলা তার বাবার দিকে তাকায়। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,”তোমার আদরের ছোটো মেয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে বাবা।”
কাজী অফিসের সামনে সিএনজি থামিয়ে নেমে পরে রোদেলা। মেঘলা নেমে রুহুল আমিনকে ধীরে ধীরে নামায়।
সিএনজির ভাড়া মিটিয়ে ছুটতে থাকে রোদেলা। রুহুল আমিন ক্রাচে ভর দিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটছে,মেঘলা তাকে ধরে রেখেছে।
দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে রোদেলা দাঁড়িয়ে পরে। রোদেলাকে দেখা মাত্রই সবাই উঠে দাঁড়িয়ে যায়। সবার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।
সুহানা আদিলকে ফিসফিসিয়ে বলে,”এই সেরেছে। খুব তো সাহস করে মেসেজ করে দিলি, এখন একে কিভাবে সামলাবি? আমাদের সবাইকে এখন জুতাপেটা করবে।”
_চিন্তা করিস না,ভাইয়া একে সামলে নেবে। ভাইয়া খুবই বুদ্ধিমান লোক।
আদিল চাপা স্বরে বলে কথাটা। শাফিন বলে,”ভাইয়া কোথায় গেলো আবার?”
_কাজীর সাথে কথা বলছে।
রুহুল আমিন কে নিয়ে মেঘলা দাঁড়িয়ে পরে রোদেলার পেছনে।
বৃষ্টি তার বোনের দিকে তাকিয়ে আছে। আদিল তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে, বৃষ্টির একটা হাত আদিল ধরে রেখেছে। রোদেলা তাদের হাতের দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে বৃষ্টির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। বৃষ্টি আতংকে আরো গুটিয়ে যায়। ধরা গলায় বলে,”আপু আমাকে ক্ষমা করে…..”
কথাটা সম্পূর্ণ করতে পারে না বৃষ্টি। ঠাস করে রোদেলা বৃষ্টির গালে একটা চড় বসিয়ে দেয়।
চড়ের শব্দে সেখানে থাকা প্রত্যেকে কেঁপে ওঠে। আদিল হতবাক হয়ে যায়,একটা ঢোক গিলে বৃষ্টির দিকে তাকায়।
“কি হচ্ছে এখানে? আপনি একজন প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের গায়ে এভাবে হাত তুলেছেন কেনো?”
অতি পরিচিত একটা পুরুষালি কন্ঠ কানে যেতেই রোদেলা খানিকটা অবাক হয়ে পেছনে তাকায়। পেছনে তাকিয়ে সে আরো অবাক হয়ে যায়। হতভম্ব ভাব নিয়ে বলে,”আপনি?”
তাশরিফ রোদেলার মুখটা দেখতে পেয়ে চমকে ওঠে। এটা তো তার পেঁচা মুখী। এ এখানে কেনো ! সে রোদেলার থেকেও বেশি অবাক হয়ে বলে,”আপনি???”
চলমান…..